আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১০ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১০
লিখা: জাহান আরা

বন্যার মৃত্যুর কথা শুনতে শুনতে শবনমের চোখে জল চলে এলো।
ইশশ,কি কষ্ট এই ছেলেটার!
শবনম মনে মনে বললো,”আমি ভালোবেসে তোমার মনের সব জ্বালা দূর করে দিবো।”
প্রলয় আর শবনম বাসায় ফিরলো দুপুরে।রাহেলা বানু ততক্ষণে মেয়ের শোক কিছুটা সামলে নিয়েছেন।
শ্রাবণীর সাথে বসে কথা বলছেন।
প্রলয় বাসায় ঢুকেই একটা ব্যাগ শ্রাবণীর দিকে ছুঁড়ে মেরে বললো,”শাড়ি পরে ভাইরে একটা সালাম দিয়ে যা তো পিচ্চি”
শ্রাবণীর মন খারাপ হয়ে গেলো।প্রলয় ভাই কখনো বুঝতেই চায় না কেনো জানি শ্রাবণী এখন আর পিচ্চি নেই,বড় হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় যায় এখন শ্রাবণী।
মাঝে মাঝে শ্রাবণীর মনে হয় প্রলয় ভাই সব জানে,সব বুঝে তবুও ভান করে না বুঝার।
আবার মাঝে মাঝে মনে হয় প্রলয় ভাই তাকে বোনের চোখে দেখে।
শ্রাবণী জানে শ্রাবণী ভুল করেছে প্রলয় ভাই কে এরকম ভালোবেসে কিন্তু এ ও জানে ভুল না করেছে বলেই সেটা ভালোবাসা।

ভালোবাসা সব সময়,সব যুগেই ভুল ছিলো সবার জন্য।
শবনম রুমে যেতেই শ্রাবণী জিজ্ঞেস করলো,”উনি কে খালা?”
রাহেলা বানু জবাব দিলেন,”ও তো শবনম,অশ্রু বিন্দুর টিচার।”
শ্রাবণীর মনে হলো সে যেনো ভারমুক্ত হলো কথাটা শুনে।প্রলয় ভাই বিয়ে করে নি এর চাইতে খুশির খবর আর কি হতে পারে শ্রাবণীর জন্য।
খুশির চোটে খালার গালে একটা চুমু খেলো শ্রাবণী।
তারপর খালার রুমে চলে গেলো শাড়ি পরতে।
জলপাই রঙের একটা জামদানি শাড়ি আর আরেকটা লাল রঙের জামদানি।
শ্রাবণী জলপাই রঙের জামদানি শাড়িটি পরলো।
চুল ছেড়ে দিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে রুম থেকে বের হলো।
দুপুরে শীত কিছুটা কম।শবনম ঠিক করলো আজকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শাওয়ার ছেড়ে শবনম ভিজতে লাগলো।
ঠান্ডায় দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে কিন্তু শবনমের সেদিকে খেয়াল নেই।
মন মতো ভেজার পর শবনম গোসল সেরে বের হলো।
ভেজা চুল পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়ে শবনম আয়নার সামনে বসে চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো।কপালে নীল টিপ।
শবনম বুঝে গেছে প্রলয় সাজগোজ পছন্দ করে না।
হাফ সিল্কের আকাশীরং শাড়িটি পারলো শবনম।
তারপর রুম থেকে বের হলো।
ক্ষিধে পেয়েছে ভীষণ শবনমের।
শবনম গিয়ে প্রলয়ের পাশের চেয়ারে বসলো। শ্রাবণী বসেছে প্রলয়ের বিপরীতে।
খাবার টেবিলে বসে শ্রাবণী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শবনমের দিকে।
এই মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো?

শ্রাবণীর বুকের ভিতর ধক করে জ্বলে উঠলো যেনো।
প্রলয় যদি শবনমের প্রেমে পড়ে যায়!
হাতের কাছে আগুনের মতো রূপসী থাকলে পুরুষের হাত তো পুড়বেই যদি সে মহাপুরুষ না হয়।
প্রলয় কি মহাপুরুষ?
কান্না দলা পাকিয়ে শ্রাবণীর গলার কাছে এসে আটকে রইলো।
শ্রাবণী বুঝতে পেরেছে খুব দ্রুত প্রলয় কে বলে দিতে হবে সে প্রলয় কে ভালোবাসে,ভীষণ রকম ভালোবাসে।
প্রলয় খাবার মাঝে এক বার শবনমের দিকে তাকালো।
তারপর বাম হাত দিয়ে শবনমের কপালের টিপ খুলে ফেললো।
পুরো ব্যাপার টা শ্রাবণী লক্ষ্য করলো।
কিন্তু কিছুই করার নেই শ্রাবণীর।
খাওয়ার পর শবনমের উদ্দেশ্যে প্রলয় বললো,”ইসলামে মেয়েদের কপালে টিপ পরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে জানো তুমি?

হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ যখন একটি ১৮ মাইলের বিশাল অগ্নিকুণ্ড নির্মাণ করে তখন সেটি এত বড় ও ভয়াবহ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, কোনো মানুষের পক্ষে হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) সেখানে নিয়ে নিক্ষেপ করা সম্ভব হলো না।
নমরুদের নির্দেশে একটি চরকা বানানো হলো। যার মাধ্যমে হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। আল্লাহ তায়ালার কুদরতি নির্দেশে রহমতের ফেরেশতারা চরকার একপাশে ভর করে থাকায় সেটি ঘুরানো যাচ্ছিল না। তখন শয়তান নমরুদকে কুবুদ্ধি দিল- কিছু নগ্ন মেয়ে (পতিতা) এনে চরকার সামনে বসিয়ে দিতে।কারণ এমন জঘন্য পরিবেশে ফেরেশতারা থাকতে পারেন না।

নমরুদ তাই করল। তখন ফেরেশতারা চরকা ছেড়ে চলে গেল,আর হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) আগুনে নিক্ষেপ করা সম্ভব হলো। এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে ওই মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হলো এবং তাদের মাথায় তিলক পরানো হলো। যেটা বর্তমানে আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত।
মুসলিম মেয়েদের জন্য এজন্য টিপ পরা জায়েজ না।”
শবনম অবাক হলো,ভীষণ রকমের অবাক হলো প্রলয়ের কথা শুনে।
কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৯

সাহস করে আজকে মা’কে ফোন দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।মা’কে ফোন দিয়ে বলবে সেদিন এভাবে চলে না আসলে আজকে এরকম একজন চমৎকার মানুষের খোঁজ পেতো না শবনম।
দুইবার রিং হবার পর তিনবারের সময় শবনমের মা ফোন রিসিভ করলো।
এক অদ্ভুত রকমের জড়তা শবনম কে পেয়ে বসলো।ভয়ে,লজ্জায়,অনুতাপে কথা বলতে পারছে না।
মা মেয়ের এই অদ্ভুত মৌনতার পিছনে জমে থাকা কষ্ট কেউ জানে না।
দুজনের কেউই জানে না অপরজন ও যে তার মতো নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
শবনম ফোন কেটে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আবার কল দিলো।
এবার আর চুপ না থেকে মা’কে জিজ্ঞেস করলো,”কেমন আছো মা?”
ওপাশ থেকে ফোঁপানি ছাড়া কোনো শব্দ এলো না।
শবনম কেঁদে দিলো।

শবনমের কান্না থামার পর শবনমের মা বললো,”আমাকে ক্ষমা করে দিস,আমি অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম রে শবনম। ৫লক্ষ টাকার জন্য তোকে বিয়ে দিতে চেয়েছি ওরকম একটা লোকের সাথে।তুই চলে যাওয়ার পর জানতে পারি ওই লোকটা এভাবে বিয়ে করে মেয়েদেরকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করায়।”
শবনম মা’কে বললো,”এভাবে চলে না আসলে আমি জানতাম না মা পৃথিবীতে কতো ভালো মানুষ ও আছে।তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১১