আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ২ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ২
লিখা: জাহান আরা

রুবা আর তামিমের বিয়ের ঝক্কি সামলাতে রাত হয়ে গেলো। শবনম এতোক্ষণ ওদের সাথেই ছিলো।কিন্তু ভিতরে ভিতরে চিন্তায় মরে যাচ্ছে।আজ রাতটা কোথায় কাটাবে সেটা ভেবে।মুখে যতোই সাহসী ভাব দেখাক আসলে ভিতরে ভিতরে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে শবনমের।এতো বড় পৃথিবীতে শবনম একা
কেউ নেই তার পাশে।
কোথায় যাবে শবনম এখন?
কে আশ্রয় দিবে তাকে?
রাত সাড়ে দশটায় সব কাজ শেষ করে যখন বাসায় ফিরবে তখন আবার শ্রাবণের মাথায় এলো শবনমের কথা।
আশ্চর্য তো!

মেয়েটা এখনো যায় নি কেনো?
শবনম কে জিজ্ঞেস করতেই শবনম ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।
অনেকক্ষণ ধরে প্রশ্ন করার পর জবাব দেয় শবনম তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
কথাটা শুনে শ্রাবণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেনো।
যেহেতু মেয়েটাকে সে তুলে নিয়ে এসেছে সেহেতু মেয়েটার দায়িত্ব তার উপর বর্তাবে।
কিন্তু সে কি করবে?
অনেকক্ষণ চিন্তা করে শবনম কে জিজ্ঞেস করলো শ্রাবণ,”টিউশনি করতে পারবেন?
ক্লাস থ্রি তে পড়ে আমার বোনের দুটো মেয়ে আছে,ওদের জন্য হাউজ টিউটর প্রয়োজন। আপনি যদি রাজী থাকেন তবে ওখানে আপনার একটা ছোট চাকরির ব্যবস্থা আমি করে দিতে পারি।”
নির্দ্বিধায় শবনম রাজী হয়ে গেলো এই প্রস্তাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গায়ে একটা কাশ্মিরি শাল জড়িয়ে রাহেলা বানু বসে বসে পত্রিকা পড়ছেন।রাতে ঘুমানোর আগে পুরো পত্রিকা আবার পড়া তার পুরনো অভ্যাস।সামনে এক কাপ চা রাখা।কিচেন থেকে পোলাওয়ের ঘ্রাণ আসছে।
একটু পর পর রাহেলা বেগম ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখছেন।
চেহারায় উৎকণ্ঠার চাপ ফুটে উঠেছে।
কলিং বেলের শব্দে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন তিনি।উঠে দরজা খুললেন।
শ্রাবণ শবনম কে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।শবনম সম্পর্কে তিনি আগেই জানতেন,শ্রাবণ ফোন দিয়ে আগেই সব জানিয়েছে তাকে।

লাল বেনারসি পরনে,বৌয়ের সাজে মেয়েটা জড়সড় হয়ে বসে আছে শ্রাবণের পাশে।রাহেলা বানু ভালো করে তাকালেন দুজনের দিকে।
শ্রাবণ তাকে ফোন করার পর থেকেই তিনি কিছুটা চিন্তাতে ছিলেন,প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন শ্রাবণের সাথে মেয়েটার কোনো সম্পর্ক আছে হয়তো।
শ্রাবণ তার বড় বোনের ছেলে,বোনকে বিষয় টা জানাবেন কি জানাবেন না তা ভেবেই তিনি চিন্তায় ছিলেন।কিন্তু দুজনের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলেন তার ভাবনা ভুল ছিলো।
অযথাই তিনি এতোক্ষণ চিন্তা করেছেন।
শবনম কে নিয়ে ভিতরের রুমে গেলেন রাহেলা বানু।

শবনম কে এখনো আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন,”এই ভারী শাড়ি পরে বসে থাকতে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে না মা?”
যদিও অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু শবনম চটজলদি কিছু বললো না।চুপ করে রইলো।
রাহেলা বানু আর কিছু না বলে আলমারি থেকে একটা ড্রেস বের করে শবনমের হাতে দিলো।তারপর চেঞ্জ করে ফ্রেশ হতে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ডাইনিং টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে,শ্রাবণের প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে,খাবারের ঘ্রাণ নাকে যেতেই শ্রাবণের ক্ষিধে আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো যেনো।

খালার দিকে তাকিয়ে বললো,”খালা,তুমি খাবে না-কি খাবে না জানি না,আমার পেট পুড়ে যাচ্ছে আমি খেয়ে নিচ্ছি,পেটপূজো আগে।”
বিরক্ত হয়ে রাহেলা বানু বললেন,”আচ্ছা স্বার্থপর তো তুই শ্রাবইন্না,যেই মেয়েটারে তুলে নিয়ে আসছস সেই মেয়ে খেয়েছে কি-না তা খবর না নিয়ে,নিজে খেতে চাস?”
মুখ ভোঁতা করে শ্রাবণ বললো,”খালা,আমার নাম শ্রাবইন্না না,ইটস শ্রাবণ।”
“হইছে,যেই লাউ,সেই কদু।”

শ্রাবণ রাগ করতে গিয়ে ও হেসে ফেললো।খালা ও হেসে ফেললো ওর সাথে সাথে।
চেঞ্জ করে শবনম সুতি ড্রেসটা পরে নিতেই ওর মনে হলো এতোক্ষণ যেনো ওর গায়ে দশমণ ওজনের শাড়ি ছিলো,এখন কেমন পাতলা পাতলা লাগছে।বেসিনের সামনে গিয়ে ব্যাগ থেকে মেকাপ রিমুভার বের করে ঘষে ঘষে মুখের সব মেকাপ তুলে ফেললো।এক ইঞ্চি পুরু আস্তরণ ছেদ করে আস্তে আস্তে শবনমের আসল চেহারা ভেসে উঠলো।
চুলে তেল দিয়ে সময় নিয়ে আঁচড়ে চুলের জট ছাড়ালো শবনম।তারপর বিনুনি করে দুইপাশে দুইটা বিনুনি ঝুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো।

শ্রাবণ রাহেলা বানুর সাথে কথা বলছিলো,হঠাৎ করেই তার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো শবনম কে দেখে।শবনম দেখতে এতোটা সুন্দরী হবে শ্রাবণের তা ধারণাতে ছিলো না।রাহেলা বানু ও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন শবনমের দিকে।শবনম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
তবে দ্রুত অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে উঠে সাবলীলভাবে বললো,”ক্ষিধে লেগেছে খালা।”
রাহেলা বানু খুশি হলেন শবনমের এরকম স্বাভাবিক কথা শুনে।দ্রুত টেবিলে এসে খাবার সার্ভ করতে লেগে গেলেন।
চেয়ার টেনে শবনম বসলো।শ্রাবণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শবনম কে দেখছে এখনো আর ভাবছে,এতো রূপবতী ও মানুষ হয়?
ক্ষিধেয় পেট চোঁ-চোঁ করছিলো শ্রাবণের কিন্তু শবনম কে দেখার পর শ্রাবণ তা বেমালুম ভুলে গেলো।
রাহেলা বানুর মৃদু ধাক্কা খেয়ে হুঁশ ফিরে এলো তার।

খেতে খেতে শবনম জিজ্ঞেস করলো,”আমি যাদের পড়াবো,তারা কোথায় খালা?”
নিজের প্লেটে মাংস নিতে নিতে রাহেলা বানু জবাব দিলেন ওরা ঘুমাচ্ছে এখন মা,কাল সকালে পরিচয় করিয়ে দিবো।”
কিছু না বলে শবনম চুপচাপ খেতে লাগলো।খেতে খেতে হঠাৎ শবনমের দুচোখ ভিজে এলো। টুপ করে দু ফোঁটা চোখের জল খাবার প্লেটে গড়িয়ে পড়লো। রাহেলা বানু খেয়াল না করলেও শ্রাবণ ঠিকই খেয়াল করলো বিষয়টা।শ্রাবণের মনে হলো অশ্রুবিন্দু নয়,যেনো দুটো মুক্তা শবনমের গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে প্লেটে।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১

রূপকথার গল্পের রাজকন্যা কাঁদলে মুক্তা ঝরে পড়তো,বিষয়টা আজগুবি হলেও শ্রাবণের মনে হলো যদি শবনম সেই রাজকন্যা হয় তবে হয়তো কথাটা সত্যি।কিন্তু মেয়েটা কাঁদছে কেনো?
জিজ্ঞেস করবে ভেবে ও শ্রাবণ কিছু বললো না আর খালার সামনে।
খালাকে জিজ্ঞেস করলো,”খালা,প্রলয় আসবে কবে?”
রাহেলা বানু উড়িয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন,”ওর বাউন্ডুলের কথা বলে কি লাভ আছে?
ওই জানে না ও কবে কোথায় থাকে,যেদিন মন খারাপ হবে সেদিন সুড়সুড় করে আবার আমার কাছে চলে আসবে।”

“আমার ফোন ও ধরছে না হারামি,এবার আসুক শুধু খালা,দেখো ওর হাড়গোড় ভেঙ্গে দিবো আমি।”
রাহেলা বানু মুচকি হাসলেন শ্রাবণের কথা শুনে।
ঘড়ির কাঁটা ঢংঢং করে জানান দিলো রাত বারোটা বেজে গেছে। সবাইকে রুম দেখিয়ে দিয়ে রাহেলা বানু গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
তারপর কিছু একটা মনে হতেই উঠে বসলেন,সিদ্ধান্ত নিলেন বাকি রাত তিনি জেগে থেকে কাটাবেন।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৩