আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৭ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৭
লিখা: জাহান আরা

শ্রাবণী অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে এতোক্ষণ ভাইয়ের জন্য।কখন শ্রাবণ আসবে বাসায় আর শ্রাবণী প্রলয় ভাইয়ের কথা জানতে পারবে।
শ্রাবণ বাসায় ফিরলো মিষ্টি নিয়ে।
শফিক সাহেব একটা ম্যাগাজিন পড়ছেন বসে বসে,রাবেয়া বানু আর বাসার হেল্পিং হ্যান্ড রেশমা বসে বসে সিরিয়াল দেখছে।
ইতোমধ্যে সিরিয়ালে বউ শাশুড়ির ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে।শাশুড়ি অযথাই বউটাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে।বউয়ের কান্না দেখে রাবেয়া বানু নিজেও কেঁদে উঠলেন।
শফিক সাহেব শীতল দৃষ্টিতে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন।তার তাকানোর মানেটা ছিলো রাবেয়া বানুকে বুঝনো
“হাউ ষ্টুপিড ইউ আর ওল্ড লেডি”
আশ্চর্য!

রাবেয়া বানু বুঝে গেলেন স্বামীর মনোভাব। সাথে সাথে মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন,”খবরদার তোমার ওসব ইংরেজি গালি আমাকে দিবে না।একেবারে ইংরেজি জেনে এমন ভাব নিচ্ছো যেনো তুমি ইংলিশ ম্যান।”
শফিক সাহেব অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন স্ত্রী তার মনের কথা বুঝে গেছে ভেবে।
কলিং বেলের শব্দ শুনে রেশমা উঠে দরজা খুলে দিলো।শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে।
ছেলেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আসতে দেখে রাবেয়া বানু কিছুটা অবাক হলেন।
শ্রাবণ প্যাকেট খুলে একটা মিষ্টি নিয়ে আগে বাবাকে খাওয়ালো,তারপর মা’কে।
রাবেয়া বানু ছেলের দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন।তারপর বললেন,”হঠাৎ মিষ্টি কেনো?
বিয়েসাদী কি সেরে ফেললি না-কি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

খবরদার,আমাকে না জানিয়ে যদি বিয়ে করে বসে থাকিস তবে খুব খারাপ হবে।
আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছেলের বিয়েতে পার্লারে যাবো।ইচ্ছেমতো সাজবো।”
লজুক নয়নে মায়ের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ বললো,”মা যে কি বলো না,তোমাকে না জানিয়ে কেনো বিয়ে করবো।এমনিই আজকে হাতে কিছু টাকা এলো,ভাবলাম তোমাদের জন্য মিষ্টি নিয়ে আসি।আব্বার তো আবার ক্ষীরভোগ মিষ্টি ভীষণ প্রিয়।”
শ্রাবণী মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,”আমার টাকা দিয়ে আসছে বিলাসিতা দেখাতে,ফকিন্নি একটা। ”
শ্রাবণ মিষ্টি নিয়ে বোনের সামনে গেলো।তারপর ফিসফিস করে বললো,”শ্রাবণী রে তোর ভাবী তো পেয়ে গেছি,এটা সেই খুশির মিষ্টি।”

ভাইয়ের কথা শুনে শ্রাবণী মুখ ঝামটা মেরে উঠে। তারপর বলে,”হু, চাপা আরকি!
তোর মতো বস্তির সাথে কে রে প্রেম করবে?”
“একবার শুধু সেটিং করে নিই,তারপর তোকে দেখাবো।”
খাওয়া দাওয়ার পর শ্রাবণী ভাইয়ের রুমে গেলো।শ্রাবণ তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে গ্রুপ মেসেজে।
শ্রাবণী গেলো শ্রাবণের জন্য এক কাপ চা নিয়ে।লজ্জায় প্রলয়ের কথা জিজ্ঞেস করতে পারলো না।
কিছুক্ষণ উসখুস করতে করতে এদিক ওদিক তাকালো।শ্রাবণের একটা পা কোলে নিয়ে টিপে দিতে লাগলো।এক চুমুকে সবটা চা খেয়ে খেঁকিয়ে উঠে শ্রাবণ বললো,”যা ভাগ এখান থেকে,খাই না তোর চা,আমার এতো সেবা করতে হবে না।আমার পা ব্যথা নেই।”

কি করবে বুঝতে না পেরে উঠে গিয়ে আলতো হাতে ভাইয়ের চুল টেনে দিতে লাগলো। লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না ভাইকে।
কিছুক্ষণ চুল টানার পর আরামে শ্রাবণের চোখ লেগে এলো।ফোন হাত থেকে রেখে শুয়ে পড়লো শ্রাবণ।
শ্রাবণী কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না।দুরু দুরু বুক কাঁপছে শ্রাবণীর।
শ্রাবণ ঘুমিয়ে যেতেই শ্রাবণী ভাইয়ের পাশে বসে তাকিয়ে রইলো।তারপর ভাইয়ের কপালে হাত রেখে বিড়বিড় করে বললো ,”আমার এই রাজকুমারের মতো ভাইটার কপালে একটা রাজকুমারী জুটিয়ে দিও আল্লাহ।সে যেই মেয়েকে
ভালোবাসবে,সেই মেয়ের জীবন ধন্য হয়ে যাবে আমি জানি।
এই পাগলটা যেনো একটা সত্যিকারের ভালো মানুষ পায়।খারাপ কেউ হলে যে আমার ভাই সহ্য করতে পারবে না।ওর মনটা ভীষণ নরম,অল্পতেই ও ভেঙে পড়বে।”

শ্রাবণী উঠে চলে যেতেই শ্রাবণের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উটলো।ভাইবোনের সম্পর্কের মতো নিষ্পাপ আর মধুর সম্পর্ক পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।
রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই শ্রাবণী অবাক হয়ে গেলো। শ্রাবণ মেসেজ দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
“চা একেবারে বাজে হয়েছে,এরচেয়ে ভালো চা বানাতে পারে তোর ভাবী।শুধু চা পাতা,দুধ,চিনি মেশালেই চা হয় না।ও আসলে তোকে বলবো টানা তিন মাস চা বানানো শিখাতে।অবশ্য চা বানানোর মতো একটা আর্ট তোর মতো গাঁধি রপ্ত করতে পারবে কিনা কে জানে!
রাগ করছিস মনে হয়?
তাহলে একটা খুশির খবর শোনাই এবার।
প্রলয় বাসায় এসেছে।”

অন্য সময় হলে শ্রাবণী ভীষণ রেগে যেতো।কিন্তু আজকে রাগলো না।কেমন আনন্দ লাগছে শ্রাবণীর হঠাৎ করে। নিজেকে মনে হচ্ছে মুক্ত বিহঙ্গের মতো।
প্রলয় ভাই এসেছে!
কালই শ্রাবণী খালার বাসায় হাজির হবে গিয়ে।
ইশশ,ভাবতেই লজ্জা লাগছে শ্রাবণীর।প্রলয় ভাইকে কাল দেখবে,কতো দিন দেখে নি।কাল মনে ভরে দেখে নিবে।
বাকী রাত শ্রাবণী আর ঘুমাতে পারলো না।উত্তেজনায় ঘুম আসছে না শ্রাবণীর।
ঘুম এলো শেষ রাতের দিকে।তখনই শ্রাবণী স্বপ্নটা দেখলো।

দেখলো সে হেটে যাচ্ছে প্রলয়ের পিছন পিছন। হঠাৎ করে একটা কালো ছায়া এসে প্রলয় কে গ্রাস করে ফেলছে,শ্রাবণী বুঝতে পারছে এই ছায়া পুরোপুরি প্রলয় কে ডেকে ফেললে প্রলয় মারা যাবে,কিন্তু শ্রাবণী কিছু করতে পারছে না।
পাশ থেকে কে যেনো ভীষণ চেষ্টা করছে প্রলয় কে মুক্ত করতে,কিন্ত পারছে না।মেয়েটার গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে শ্রাবণী। কিন্তু দেখছে তাকে।শুধু অনুভব করতে পারছে একটা মেয়ে আছে সেখানে।আর শ্রাবণীর হাত পা সব কিছুতে জড়তা এসে গেছে।শ্রাবণী কিছুতেই হাত পা নাড়াতে পারছে না,প্রলয়কে বাঁচানোর চেষ্টা করবে তো পরের কথা সেটা।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৬

অচেনা সেই মেয়েটার আহাজারি শোনা যাচ্ছে,কি ভীষণ অস্থির হয়ে কাঁদছে মেয়েটা।
অথচ শ্রাবণী কাঁদতে ও পারছে না।
শুধু বুঝতে পারছে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।ভীষণ,ভীষণ,ভীষণ কষ্ট!
ঘুম ভাঙতেই শ্রাবণী দেখতে পেলো ঘামে পুরো শরীর ভিজে আছে ওর।
এই শীতে ও শ্রাবণী ভিজে জবজবে। কি ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখেছে সে এটা!
কি মানে এই স্বপ্নের!

দ্রুত গিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেলো শ্রাবণী। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।অন্ধকার কেটে আলো হতে শুরু করেছে আস্তে আস্তে।
বিষন্ন মন নিয়ে শ্রাবণী দেখতে লাগলো সকাল হওয়া।
তার জীবনে এরকম আলোমাখা সকাল কবে আসবে?

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৮