আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৮ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৮
লিখা: জাহান আরা

সকালে ঘুম থেকে প্রলয় শবনমের রুমের দরজায় গিয়ে টোকা দিলো।
শবনম ঘুমের ঘোরে একবার জিজ্ঞেস করলো,”কে?”
কোনো জবাব দিলো না প্রলয়। আরামদায়ক কম্বল ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না শবনমের তবুও
রাহেলা বানু এসেছে ভেবে শবনম উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
এক নজর শবনমের দিকে তাকিয়ে প্রলয় অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,”কমন সেন্স নেই তোমার?

ওড়না ছাড়া এরকম ঢ্যাংঢ্যাং করে উঠে এলে কেনো?”
শবনম এক নজর নিজের দিকে তাকালো,তারপর নিজের ভুল বুঝতে পেরে হুট করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ততক্ষণে চোখ থেকে ঘুমের রেশ কেটে গেছে শবনমের।লজ্জায় শবনমের মাথা কাটা যাবার জোগাড়।
ছি!
এতোটা লজ্জা শবনম জীবনেও পায় নি।শবনমের নিজের উপর নিজের রাগ হলো। ভীষণ রকম রাগ হলো।
ওড়নার উপর একটা মোটা চাদর পরে নিলো শবনম।
ঘড়িতে সকাল সবেমাত্র ৮টা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শবনম হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো।প্রলয় সোফায় বসে সকালের নিউজ দেখছে।
শবনম বুঝতে পারছে না তাকে কেনো ডেকেছে প্রলয়।
শবনম কাছে এসে দাঁড়াতেই প্রলয় বললো,”এক কাপ চা দাও আমাকে।”
রাগে শবনমের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।প্রলয়ের সামনে এসে বললো,”পারবো না আমি চা বানাতে।”
প্রলয় শবনমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তারপর বললো,”তুমি বেশ জেদি দেখছি।”
শবনম কিছুটা অবাক হলো প্রলয়ের এরকম শান্ত ব্যবহার দেখে।
কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো শবনম।

রুমে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ। হটাৎ করে কেনো জানি একটা অপরাধবোধে জর্জরিত হয়ে গেলো শবনম। কি ক্ষতি হতো এক কাপ চা বানিয়ে দিলে?
আজকে তো আর তাকে বুয়ে বলে নি প্রলয়। উল্টো খুব শান্ত ব্যবহার করেছে।
শবনম উঠে গিয়ে চা বানিয়ে আনলো প্রলয়ের জন্য।প্রলয় চুপচাপ চা খেতে লাগলো।
রাহেলা বানু সকাল থেকে রুমে বসে আছেন।

তিনি আজ অশ্রু বিন্দু কে নিয়ে স্কুলেও যান নি।মর্জিনা নিয়ে গেছে ওদের স্কুলে।
চা খেয়ে উঠে প্রলয় বললো,”গিয়ে রেডি হয়ে নাও,আমি একটু বের হবো। একটা কাজ আছে,কাজ সেরে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।”
শবনম অন্যদিকে ফিরে বললো,”আমি যাবো না আপনার সাথে শপিং এ,কিছু লাগবে না আমার।”
মুহুর্তে প্রলয়ের চেহারা কঠোর হয়ে গেলো। শবনম ভয় পেলো কিছুটা। তারপর আপনমনে বললো,”যাচ্ছি রেডি হতে।”
সাথে সাথে প্রলয়ের চেহারার কঠোরতা বিলোপ হয়ে কোমল হয়ে গেলে। শবনম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

রুমে গিয়ে শবনম একটা সাদা শাড়ি পরলো।আয়নায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখলো।বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে আজ শবনম কে।নিজের সৌন্দর্য আরেকজনের বাড়িয়ে দিতে শবনম চোখে কাজল দিলো হালকা করে।ঘুরেফিরে নিজেকে দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর রুম থেকে বের হলো।
প্রলয় কে দেখে হালকা ধাক্কা খেলো শবনম।
প্রলয় নিজেও চেঞ্জ করে একটা সাদা পাঞ্জাবি পরেছে।সাদা পাঞ্জাবির উপর কালো সুতার কাজ করা চিকন করে।মাথায় কালো টুপি।
শবনম চোখ বন্ধ করে ফেললো টুপ করে। মনে মনে বললো,”এভাবে সামনে এলে আমি বরবাদ হয়ে যাবো যে প্রলয়।”
প্রলয়ের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে শবনম বুঝতে পারলো সে প্রেমে পড়ে গেছে।কঠিনভাবে প্রেমে পড়েছে প্রলয়ের।

শ্রাবণী বাসা থেকে বের হলো আজ তাড়াতাড়ি।এক্সট্রা ক্লাসের নাম করে বের হয়ে এলো তাড়াতাড়ি।খালার বাসার দিকে যতোই এগিয়ে এলো ততই ভয়ে ঘামতে শুরু করলো।
এক পর্যায়ে শ্রাবণীর প্রচন্ড পানির পিপাসা পেলো।আশেপাশে কোনো দোকান নেই।
বাসার সামনে এসে শ্রাবণীর যেনো দুই পা ভেঙে এলো।কিছুতেই কলিং বেল টিপ দিতে পারছে না।
এতো লজ্জা লাগছে কেনো!
শ্রাবণী বুঝতে পারছে না কেনো প্রলয় ভাইয়ের সামনে এলে তার এরকম হয় সবসময়।
সেতো প্রলয় ভাইকে বলে নি কখনো তাকে ভালোবাসে।
তবুও কেনো এতো লজ্জা!

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৭

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দরজা হঠাৎ করে খুলে গেলো।শ্রাবণী হকচকিয়ে গেলো কিছুটা।
প্রলয় শ্রাবণী কে দেখে বললো,”আরে পিচ্চিটা যে!
এসেছিস ভালো হয়েছে,যা যা মা রুমে বসে আছে একা মায়ের কাছে যা।”
শ্রাবণীর যেনো ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেলো।
ভিতরে ঢুকতে গিয়ে শ্রাবণী চমকে গেলো।প্রলয় ভাইয়ের পিছনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো সুন্দর একটা মেয়ে!
শ্রাবণী তব্ধা খেলো যেনো হঠাৎ করেই।
তবে কি প্রলয় ভাই বিয়ে করে বসে আছে?
শ্রাবণীর মনে হলো যেনো পুরো সাত আসমান তার মাথার উপর ভেঙে পড়েছে।
বুক ফেটে যাচ্ছে।

প্রলয় আর শবনম চলে গেলো। শ্রাবণী কাঁপতে কাঁপতে ভিতরে এলো।হঠাৎ করে শ্রাবণীর মনে হলো প্রলয় ভাই কি সত্যি বিয়ে করে ফেলেছে।
সেদিন ভাইয়া তো বলেছে প্রলয় ভাইয়ের বিয়ের কথা!
প্রলয় প্রথমে কবরস্থানে গেলো।একটা কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত করলো।শবনম দূরে দাঁড়িয়ে দেখলো।
কবর জিয়ারত শেষ করে প্রলয় শবনম কে নিয়ে বের হলো।প্রলয়ের কান্নাভেজা চোখ দেখে শবনমের বুকের ভিতর টা যেনো চুরমার করে ভেঙে গেলো।
কি এমন কষ্ট এই ছেলের?

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৯