বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৭ || Asfiya Zannat Turfa

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৭
Asfiya Zannat Turfa

বিয়ের একমাস পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে মায়ের জোরাজুরিতে তুর রোদ্দুরের সঙ্গে রোদ্দুরের গ্রামের বাড়িতে যেতে রাজি হয়। গতদুদিন ধরে ওর ভীষন জ্বর। ভাইরাস জ্বর হওয়াও একবার জ্বর কমছে তো একবার বাড়ছে। রোদ্দুরের কথাই ফলে গিয়েছে, আগে সেবা করে রাত জেগেছিলো আর এখন সেবা নিয়ে রাত জাগছে। এই একমাস তুর রোদ্দুরের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছিলো, কারন তুরের মনে হচ্ছিলো ও রোদ্দুরকে পছন্দ করা শুরু করে। যেই অনুভূতি গভীর হলে ওর এবং রোদ্দুর দুজনেরই ক্ষতি।
সারা রাস্তায় ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তুর। যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে রোদ্দুরের বাড়িতে, বিছানায় শুয়ে আছে। এক বৃদ্ধা মহিলা তুরের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বৃদ্ধা দেখতে বেশ রূপবতী এখনও, পাশাপাশি রুহানির আদলে চেহারা। ইনি কি রুহানির কিছু হন? বাইরে রোদ্দুরের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তুর উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো,

– ” কে আপনি? ”
বৃদ্ধা হেসে বলে,
– ” শোনো দেখি মেয়ের কথা! আমাকে চিনতেই পারছে না। আমি তোমার দাদি। রোদ্দুরের দাদি ছিলাম। আজ থেকে তোমারও দাদি। ”
তুর হেসে বৃদ্ধাকে সালাম করলো, হাসি মুখে কথা বলতে বলতে দরজার দিকে তাকায় ও। রোদ্দুরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হয়তো বউ নিয়ে ব্যস্ত আছে। তুর দাদির সঙ্গে গল্প করতে করতে আবার ঘুমিয়ে যায়। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো, রোদ্দুরের দেখা নেই। রাতে রোদ্দুর আসে তুরের ঘরে। রোদ্দুরকে দেখে বেশ চমকে যায় তুর।
– ” এখানে আসলেন যে? আর রুহানি কোথায়? তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন না? ”
রোদ্দুর অবাক হয়ে বললো,
– ” রুহানি আসেনি এঘরে? ও তো বললো তোমার সাথে আলাপ করে যাবে। ”
– ” না তো। আসেনি। শুনুন আমি এখন খাবো না। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমি উঠে দাদির সাথে খেয়ে নিবো। ”
– ” রাতে খাওয়া লাগবে না। এখন স্যালাইন দিতে হবে তোমাকে, দুটো প্যাকেট একটানা দিয়ে শেষ করতে হবে। হাতে, পায়ে ব্যাথা এখনও আছে? ”
– ” হ্যাঁ। ”
– ” ঘা শুকাতে সময় লাগবে একটু। তুমি কথা না শুনে ছোটাছুটি করেছো তাই একমাসেও সাড়েনি। গুলি লাগার পরও মানুষ এতো ছুটতে পারে? ”
– ” পারে! এই যে আমি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ! ”
রোদ্দুর হাসে। তুরের হাতে ক্যানোলা লাগিয়ে ও তুরের পাশে বসে। তুরের কপালে হাত রেখে ওর কপাল টিপে দিতে দিতে বলে,

– ” তো জান! তুমি কি এখনও আমাকে বাচ্চা দিতে নারাজ? ”
– ” আমি আমার বাচ্চা কাউকে দিবো না। আপনি অন্য কাউকে দেখুন, নাহলে বলুন কোনো এতিম বাচ্চা এনে দিবো। তাকে মানুষ করবেন। ”
– ” আমি কেন অন্যের বাচ্চা পালবো? যেখানে আমার নিজের বাচ্চা হওয়ার ১০০% সম্ভাবনা আছে। ”
তুর ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অস্ফুট কন্ঠে বললো,
– ” আপনার বাচ্চা কিভাবে হবে? হলে আপনার বউ এর হবে। নাকি আপনি ”
– ” একদম বাজে বকবে না। তুমি নিজেও জানো আমি ওটাই বলতে চেয়েছি, মোট কথা আমি এবং আমার স্ত্রী যখন সুস্থ তখন নিজেদের বাচ্চার কথা না ভেবে অন্যবাচ্চার কথা কেন ভাববো? তুমি যদি চাও অন্য বাচ্চাদের দায়িত্বও আমরা নিতে পারি। তবে আমার তোমার কাছ থেকে একটা বাচ্চা চাই। ”
– ” আপনি এঘরে? আপনার বউ আসতে দিলো? ”
রোদ্দুর মৃদু হাসে। তুর মুখ ভেঙচি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রোদ্দুর তুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

– ” এঘরে না আসলে, কাছাকাছি না থাকলে বাচ্চা কি আসমান থেকে পড়বে? আমার রুহানি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী তাই ও আগেভাগেই এঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে আমায়। তুমি অসুস্থ বলে চাইলেও কিছু করতে পারছি না। তুমি আসলেই একটা আনরোম্যান্টিক পিলার, যার কোনো অনুভূতি নেই, হুহ। ”
– ” হুহ, ফুঁ এরপর থু! যা ইচ্ছা দেন তবে সেটা বাইরে। কানের কাছে এসব কি হ্যাঁ? ”
তুরের রাগে সারা শরীর জ্বলছে। না রুহানির সামনে পড়া যাবে না। তাহলে ও রাগের বশে কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে যেটা ও কখনই চায় না। তুর ঘুমিয়ে যায়! রোদ্দুর তুরের ঘুমন্ত চেহারায় চোখ বুলিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তুর ঘাড় ঘুরিয়ে পুরো ঘর দেখলো। হাতের ক্যানোলা। স্যালাইনের বোতল এখনও অর্ধেক পূর্ণ। তুর বাথরুমে যাবে, স্যালাইনের বোতল একহাতে ধরে সে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে আসে। বাথরুম কোনদিকে, ও কোনদিকে যাবে বুঝে উঠতে পারছে না তুর। উঠানে রোদ্দুর দাড়িয়ে আছে ব্রাশ হাতে। তুর রোদ্দুরকে ডাকলো,

– ” শুনুন। ”
রোদ্দুর পেছনে তাকিয়ে তুরকে দেখে খানিক চমকালো। এরপর দ্রুতপায়ে হেটে এসে তুরের হাত থেকে স্যালাইনের বোতল নিলো।
– ” আমাকে ডাকো নি কেন আগে? একা একা এসেছো কেন? ”
– ” আমি বাড়ি যাবো। ”
– ” কেন? সমস্যা হচ্ছে? তাহলে আমাকে বলো। কি লাগবে তোমার? ”
– ” কিছু না। ”
তুরকে বাথরুমে ঢুকিয়ে রোদ্দুর বাইরে দাড়িয়ে রইলো। ভেতর থেকে এক অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই হকচকিয়ে যায় রোদ্দুর। অস্থির চিত্তে পাইচারি করে উঠানে। তুর বের হয়! একদম স্বাভাবিক তুরের চেহারা। তবে চুলগুলো এলোমেলো এবং হাতের ক্যানোলা খোলা। রোদ্দুর এটা দেখে রাগি চোখে তুরের দিকে তাকাতেই তুর ওকে ইগনোর করে ঘরে চলে যায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিলো এক এক করে। রোদ্দুর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

– ” এসবের মানে কি জান? ”
– ” আমি ফিরে যাচ্ছি। ”
– ” কারন? ”
– ” জান কাউকে কৈফিয়ত দেয় না। আর পাঁচমাস এরপর আপনার কাছে ডিভোর্স পেপার চলে আসবে। দয়া করে আমাদের বাড়িতেও আর আসবেন না। ”
– ” এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারন কি জানতে পারি? ”
– ” নাহ। ”
রোদ্দুরের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এই মেয়ে কখনও কিছু বলে না, একা থাকে, চুপ থাকে, প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়না, কিসের এতো অহংকার? কিসের? অহংকার নাকি অনুরাগ? এই মেয়ে তো সেটাও বলে না। রোদ্দুর আড়চোখে তুরের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সুচটাও বের করেনি ও, ক্যানোলা বোধহয় টেনে ছিড়েছে।

– ” তোমার এখান থেকে যাওয়া হবে না। তাই বৃথা এসব কাজ করে নিজের হাতের ক্ষতি করো না। ”
– ” আমার ভালোটা আমি বুঝি! সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ”
– ” তো কে ভাববে? ”
– ” কারোর ভাবার প্রয়োজন নেই, আমি কারোর কিছু হই? যে আমাকে নিয়ে কেউ ভাববে। ”
তুরের কন্ঠ ভারি হয়ে আসে। রোদ্দুর চমকায়! এই আচরণ তুরের অহংকার কিংবা অনুরাগ নয়! এটা অভিমান, অভিমানিনী তুরকে এই প্রথম দেখলো রোদ্দুর। কিন্তু হঠাৎ কি কারনে তাই এই অভিমান? রোদ্দুর প্রশ্ন করে,
– ” আমি তো ভাবি! সেটা কি তুমি জানো না? ”

তুর এবার কেঁদে ফেললো। নিজেকে আর আটকানো সম্ভব হচ্ছে না ওর পক্ষে। রোদ্দুর হতভম্ব হয়ে যায় ওর এমন হঠাৎ কান্নায়। রোদ্দুর এসে তুরের পাশে বসতেই তুর রোদ্দুরকে জড়িয়ে ধরে। রোদ্দুর এবার আরেক দফা বিষ্মিত হয়। যেই মেয়ে ওকে নিজের ধারে কাছে ঘেসতে দেয় না সেই মেয়ে আজ নিজ থেকে ওকে জড়িয়ে ধরেছে। রোদ্দুর তুরকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে রইলো, খানিকক্ষণ বাদে তুর উঠে তাড়াহুড়ো করে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে, তড়িঘড়ি করে ব্যাগ গুছিয়ে সেটা নিয়ে বাইরে আসার জন্য পা বাড়াতেই রোদ্দুর ওকে ধরে ফেলে।

– ” তুমি যাবে না।”
– ” হাত ছাড়ুন। আমি যাবো। থাকবো না এখানে। ”
– ” এমন কেন করছো? ”
– ” শুনতে চান? জানতে চান কেন করছি এমন? কারন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, শুধু মাত্র একটা বাচ্চার জন্য আমার খেয়াল রাখেন, আমার যত্ন নেন, আমার সেবা করেন, আমাকে ভালোবেসে করেন নি এগুলো, যদি ভালোবেসে করতেন তাহলে আমাকে অসুস্থ শরীরে এই অপরিচিত জায়গায়, রাতে একা ফেলে বউ এর কাছে যেতেন না। আমার কষ্ট হচ্ছে তাই চলে যাচ্ছি আমি। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। ”
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
– ” তো তুমি কবে থেকে আমার ভালোবাসা আশা করছো? আমাকে একবারও বলেছো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো? আর বাসোই বা কেন? যেখানে আমার আগের একটা বউ আছে। ”
– ” হ্যাঁ সেটাই। এজন্যই তো চলে যাচ্ছি। ”
– ” কি সেটাই? ভালোবাসো কিনা বললেও না। ”
– ” বলেছিলাম না আমার অনুরাগ ভিন্ন! আমি আপনাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় কোনো ভুল কাজ করতে চাইনা। সুতরাং নিজের মন আমি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। আমি না চাই আপনাকে আর না চাই আপনার যত্ন। ”

– ” তো যাচ্ছো যখন তখন রুহানির সাথে দেখা করে যাও। ওই মেয়েটা কি দোষ করেছে? ও তো একটা সন্তান আশা করে আছে। এতোগুলো বছর আমি ওকে বাচ্চার স্বপ্ন দেখালাম, এই একমাস ধরে তুমিও সে স্বপ্ন দেখিয়েছো ওকে। এখন মাঝপথে চলে যাচ্ছো? একবারও ওর কথা ভাবছো না? ”
– ” ওর কথা ভাবার জন্য তো আপনি আছেন। দাদি আছে। ”
রোদ্দুর তুরের হাত টেনে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
– ” সেটা বললে কি করে হয়? আমাকে না হোক রুহানিকে তোমায় কৈফিয়ত দিতেই হবে। ”
একটা ঘরে গিয়ে রোদ্দুর তুরকে নিয়ে হাজির হয়। দাদি রোদ্দুরকে এভাবে দেখে ঘাবড়ে যান। তুরের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে, তুর সেদিকে খেয়াল না করে কাঠের মতো শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। দাদি ধমকের সুরে বললেন,

– ” এসব কি রোদ্দুর? তুরের হাত এভাবে ধরেছো কেন? রক্ত পড়ছে তো। ”
রোদ্দুর ভারি কন্ঠে বলে,
– ” তুর রুহানিকে দেখতে এসেছে। ওর সাথে নাকি তুরের আলাপ হয়নি। ”
দাদি মৃদু হেসে বললেন,
– ” আলাপ পরে হবে। যাও ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দাও।”
– ” তুর চলে যাবে এখন। ও এই বাড়িতে আমার সঙ্গে থাকবে না। কারনটা হলো রুহানি। ”
– ” রুহানি? কেন? ”
তুর নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
– ” নাহ দাদি রুহানি না। আমি এমনিই চলে যাবো। ভালো লাগছে না, তাছাড়া কলেজেও যেতে হবে। অনেকদিন হলো কলেজে যাইনি। ”
দাদি একনজর তুরের দিকে তাকিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালেন। রোদ্দুর রাগি চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে আছে। দাদি হেসে বললেন,

– ” সেটা বললে কি করে চলে? সমস্যা যখন আমাকে নিয়ে তখন সমাধানও আমাকেই করতে হবে। রোদ্দুর শুধু নামমাত্র আমায় বউ বলে ডাকে, ওর দাদা রোদ্দুরের জন্মের আগেই মারা যান, রোদ্দুর যখন বুঝতে শিখেছে ও তখন থেকেই আমাকে বউ বলে ডাকে। তখন ও আধোবুলিতে বলতো ‘ আমার বউ সবথেকে বেশি সুন্দর, রূপসী’ আমি তখন দেখতে বেশ ছিলাম। রোদ্দুরের ফোনে আমার তখনকার বেশকিছু ছবি আছে দেখতে পারো। তখন আমার বয়স ৪০এর কিছুটা বেশি বোধ হয়। ভাবতে পারো বয়স কেন এতে কম? কারন আমার অনেক ছোট থাকতে বিয়ে হয়েছিলো, মাসিক হবার পরপরই! আর রোদ্দুরের বাবাও বিশ বছরে পা দেওয়ার সাথে সাথেই বিয়ে করে। আমি শুধু রোদ্দুরের বাচ্চার সাথে খেলার স্বপ্ন দেখে এসেছি। তুমি এভাবে আমায় মাঝপথে ফেলে দিয়ে যেতে পারো না জান। তোমাকে রোদ্দুর কি বলেছে? আমি বাচ্চার মুখ তাড়াতাড়ি দেখতে চাই? আরে না আমি অসুস্থ তাই হয়তো ও তাড়া দিচ্ছে। তোমরা তোমাদের সময়মত বাচ্চা নিও। এ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি কিংবা অভিযোগ নেই। ”

দাদির এই অর্ধেক কথা শুনেই তুরের মগজের সব জট খুলতে শুরু করে। তাহলে এজন্যই ও রুহানির চেহারার সঙ্গে দাদির চেহারার মিল পেয়েছে। দাদি অসুস্থ বলে রোদ্দুর বাচ্চার কথা রিপিট করেছে। এতোদিন ধরে ওকে বোকা বানিয়েছে? তুর এবার রোদ্দুরের দিকে একনজর তাকিয়ে দাদিকে বললো,
– ” দাদি তেমন কিছু না। আমি তো যাস্ট কলেজের জন্য বলছিলাম। তুমি যখন চাইছো তখন আমি থাকবো এখানে। আর এবার আমরা একা নই, তোমাকেও নিয়ে যাবো। এখানে একা থাকতে কষ্ট হয় না বুঝি? ”
– ” হ্যাঁ! এবার যাবো। আমার রোদ্দুরের বাচ্চার জন্য হলেও যেতে হবে। খেলা করতে হবে না? ওকে বড় হতে দেখতে হবে না? ”
তুর হেসে রোদ্দুরের দিকে তাকায়,
– ” রোদ্দুর ঘরে এসো। ”

তুর ঘরে চলে আসে। রোদ্দুরও আসে। রোদ্দুর ঘরে ঢুকতেই তুর দরজা লাগিয়ে দেয়। রোদ্দুর খাটে বসে তুরের দিকে চেয়ে থাকে। তুর জামার হাতা গুটিয়ে পাশ থেকে একটা বড় চামচ তুলে নেয়। রোদ্দুরের সামনে গিয়েই তুর রোদ্দুরের হাতে বারি দিলো। রোদ্দুর মুচকি হেসে ব্যাথা জায়গায় হাত বুলায়।
– ” আহা! এতো জোরে কেউ মারে? ”
– ” আপনাকে তো মেরে ফেলাই উচিত। ”
– ” আচ্ছা? তাহলে মারো। এই উচিত কাজটা নাহয় তোমার হাতেই সম্পন্ন হোক। কিন্তু আফসোস থেকে যাবে একটা। বাচ্চার বাবা হতে পারলাম না। ”
– ” আবার বাচ্চা? ”
– ” তুমি এভাবে বলতে পারো না জান। আমার কতদিনের ইচ্ছা বাবা হবো, বাচ্চাটাকে বড় করবো, স্কুলে নিয়ে যাবো, খাওয়াবো, গোসল করাবো, ঘুম পাড়িয়ে দিবো। তুমি আমার ইচ্ছাটাকে এভাবে অবহেলা করতে পারো না। ”

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৬

– ” মিথ্যা বলার অপরাধে শাস্তি তো দিতে পারি? ”
– ” হ্যাঁ! তা অবশ্য দিতে পারো। আমি বাঁধা দেওয়ার কে? তোমার বর তুমি শাস্তি দিচ্ছো। আমি অত্যন্ত ভালো ছেলে, কারোর মতে হস্তক্ষেপ করি না।”
তুর মৃদু হেসে রোদ্দুরের দুগাল টেনে বলে,
– ” ওরে আমার ভালো স্বামী! আজ থেকে ঠিক একবছর আমাকে তুমি আদর করতে পারবে না। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কোনো মিলন হবে না। ”
রোদ্দুর চমকে তাকালো তুরের দিকে। তুর নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
– ” যদি নিজের ওপর কন্ট্রোল করতে পারেন তবেই আমার সঙ্গে থাকবেন। নতুবা না। আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি এই একমাস আপনাকেও পেতে হবে। ”

– ” একমাসের কষ্ট = এক বছরের শাস্তি? এটা কেমন হিসাব? এ হিসাব মানি না সময় কমাও।”
– ” আচ্ছা ১০মাস। ”
– ” আরও কমাও।”
– ” ন’মাস। ”
– ” না। ”
– ” সাতমাস। ”
– ” না। ”
– ” পাঁচমাস। এর থেকে একঘন্টাও কমাবো না। ব্যাস ”
– ” আচ্ছা তাহলে। আমি তোমাকে আদর করতে পারবো আমাদের বিয়ের ঠিক ছমাস পূর্ণ হবার দুদিন পর। ”
– ” ইয়াহ! এন্ড লিসেন ‘ আদর,চুঁমু,বাচ্চা ‘ এগুলোও আর উচ্চারণ করবেন না। আগে বিরক্তি লাগতো এখন অদ্ভুত লাগে।”

রোদ্দুর হেসে বাইরে বেড়িয়ে যায়। তুর হাত থেকে সুচ খুলে ফেলে দিলো। একটু তুলো দিয়ে হাত চেপে ধরে, ও ল্যাপটপের সামনে বসে। কিছু একটা দেখে ওর ঠোটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
– ” পাঁচমাস! এর মধ্যে অনেক কিছু পাল্টে যাবে আবিদ। যে পরিকল্পনা তুই করেছিস সেটা নষ্ট করার জন্য জান আসছে। বি রেডি ফর দ্যাট। ”

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৮