বিষাক্ত অনুরাগ শেষ পর্ব  || Asfiya Zannat Turfa

বিষাক্ত অনুরাগ শেষ পর্ব 
Asfiya Zannat Turfa

রোদ্দুর গাড়িতে উঠে তুরের পাশে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে লুকিং গ্লাসে তাকালো! হুবহু শুভ্রকে দেখে প্রশ্ন করে,
– ” স্যার আপনি এখানে? আমি কি গাড়ি থেকে নেমে যাবো? ম্যামকে আপনি নিয়ে যাবেন? ”
তুর ভ্রু কুঁচকে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। ড্রাইভার রোদ্দুরকে কিভাবে চেনে? ওকে স্যার বলে সম্বোধন করছে। কারন কি? রোদ্দুর তুরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে তুরের প্রশ্ন। তুর কিছু না বলে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দরজা খুলে দেয়।

– ” স্যার, ম্যাম! নামুন। এসে গিয়েছি আমরা। আপনারা ভেতরে যান আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি। ”
ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই তুর প্রশ্ন করে,
– ” ও আপনাকে স্যার বলছে কেন? চিনেন ওকে? ”
– ” নাহ! ভেতরে চলো, আর কাইন্ডলি আমার সাথে থাকো। ”
– ” আপনি না আসলেও পারতেন। ”
– ” এসে কি অন্যায় করে ফেলেছি? চলে যাবো? ”
– ” রাগ করছেন কেন? আমি এমনি বলেছি। চলুন যাচ্ছি আমি, আপনার হাত ধরে। ”
তুর রোদ্দুর বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেই ওদের মাথার উপর ফুলের পাপড়ি পড়তে আরম্ভ করে, রোদ্দুর চমকে তাকায়। তুরের বিরক্ত লাগছে এসবে। দুজন এগিয়ে এসে রোদ্দুরের সামনে কুর্নিশ করে বলে,



 

– ” স্যার উপরে, আপনারা আসুন আমার সঙ্গে। ”
আরেকজন বললো,
– ” আপনারা কি খাবেন? ঠান্ডাজাতীয় কিছু? নাকি গরম? ”
তুর সগতোক্তিতে উত্তর দেয়,
– ” তোমাদের স্যারের সাথে দেখা করতে চাই, কিছু খেতে আসিনি। আমাদের ডিরেকশনটা বলে দিলেই খুশি হবো।”
রোদ্দুর তুরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে। যদি সত্যি শুভ্র থাকে? শুভ্র তো ওর শুভ্রময়ীর জন্য সবকিছু করতে পারে। তুরের কথা সত্য হলে, শুভ্র নির্দোষ। রোদ্দুর ভুল করেছে শুভ্রকে মেরে! শুভ্র কি সবটা ভুলে গিয়েছে? নাকি প্রতিশোধ নিতে এসেছে? তুরকে যদি ছিনিয়ে নেয় রোদ্দুরের থেকে? তখন রোদ্দুর কি নিয়ে বাঁচবে? তুর রোদ্দুরকে নিয়ে উপরে একটা ঘরে আসে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘরের ভেতর কোনোকিছুই দেখা যাচ্ছে না। তুর ক্রোধমিশ্রিত কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

– ” কে আপনি সামনে আসুন। ”
শুভ্র লাইট জ্বালিয়ে দিলো। দেয়ালের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে শুভ্র। রোদ্দুরের মন ছটফট করছে সামনে থাকা মানুষটার মুখ দেখার জন্য। তুর আবারও বলে,
– ” মুখ দেখাচ্ছেন না কেন? ”
শুভ্র হেসে পেছনে ঘুরে দাড়ায়। শুভ্রকে দেখে তুর দু’পা পিছিয়ে যায়। রোদ্দুরের চোখ লাল হয়ে আছে রাগে। তুর একবার শুভ্র আর একবার রোদ্দুরের দিকে তাকালো। হুবহু একরকম দেখতে দুজন? এটা কিভাবে সম্ভব? তুর কিছুটা ভয় পেয়ে রোদ্দুরের পেছনে গিয়ে দাড়ায়। শুভ্র কোমরের পেছন থেকে একটা বন্দুক বের করে ট্রিগার টানতে টানতে বলে,

– ” ভয় পেয়ো না শুভ্রময়ী। সম্পর্কে আমি তোমার ভাশুর হই, তোমার বরের বড় ভাই। আমার পেছনে আসো আমি তোমাদের অনামিকা এবং সেই পাঁচজনের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ”
তুর রোদ্দুরের দিকে তাকালো, রোদ্দুর চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে। শুভ্র তুরের পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই রোদ্দুর তুরের হাত টেনে ওকে নিয়ে চলে আসতে চায়। তুর বাঁধা দিয়ে বলে,
– ” এসব কি? আপনি তো আমায় কখনও বলেননি যে আপনার যমজ ভাই আছে, কেন বলেন নি? ”
শুভ্র উত্তর দেয়,
– ” ও জানতো না আমি বেঁচে আছি। নিজেদের মধ্যে রাগারাগি করো না। ”
– ” আপনি চুপ করুন। আমি আমার হাসবেন্ডকে প্রশ্ন করেছি, আপনাকে নয়। ”
শুভ্র হাসে। রোদ্দুর শুভ্র’র দিকে তেড়ে আসে ওকে মারার জন্য। শুভ্র তুরের দিকে তাকিয়ে রোদ্দুরকে বাঁধা দিলো,

– ” একবার মারতে চেয়েছিলি, মারতে পেরেছিস? শুধু শুধু কেন তুরের সামনে সেইসব স্মৃতি টেনে আনছিস? ওর কষ্ট হবে অতিত জানলে, তোর কথা জানলে। ”
রোদ্দুর শুভ্র’র কলার ধরে ঝাকি দিয়ে বললো,
– ” তুই আমাদের সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করছিস কেন শুভ্র? কেন এসেছিস ফিরে? কেন? বাবা-মা’কে মেরেও শান্তি হয়নি তোর? আমাকেও মারতে চাস্? বল কি চাস্? ”
– ” তোকে মারার হলে অনেক আগেই মারতে পারতাম। আমি এখানে শুধু আগের হওয়া ভুলগুলো ঠিক করতে এসেছি। বাবা-মায়ের আসল হত্যাকারীকে মারতে এসেছি। আর কতবার তোকে বলতে হবে রোদ্দুর? যে আহনাফ খুন করেনি, আহনাফের জন্য তুই কিংবা আমি এতিম হইনি। তুই তো তাও দাদিকে পেয়েছিলি আমি কি পেয়েছি? সারাটাজীবন একা কাটিয়েছি। আমার অভ্যাস আছে একা থাকার, আমি চাইনা তোদের একা রাখতে। তাই এসেছি তোদের পার্মানেন্ট হ্যাপিনেসের ব্যবস্থা করতে। ইট্স এনাফ ফর মি। ”

– ” তাহলে কেন জানকে শুভ্রময়ী ডাকিস? ওর জন্য এসেছিস? ওকে আমি কখনই তোর হতে দেবো না শুভ্র! জান শুধু আমার। শুধুমাত্র আমার, ”
– ” ওকে শুভ্রময়ী ডাকার অধিকার আমার নেই? ”
– ” নাহ। ”
– ” ঠিক আছে। ডাকবো না। আয় তোরা। ”
রোদ্দুরের কথা এতো সহজে শুভ্র মেনে নিলো? ভেবে অবাক হয় রোদ্দুর। আগে তো কখনও শুভ্র রোদ্দুরের বারন মানতো না, তাহলে আজ হঠাৎ সবটা মেনে নিলো? রোদ্দুরের প্রতি কোনো ক্রোধও শুভ্র’র কাজে প্রকাশ পাচ্ছে না। ওদিকে শুভ্র ভাবে ‘ কি লাভ তর্ক করে? যে কখনই আমার হবে না তাকে নিয়ে ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ কেন করবো?আগে যুদ্ধ করতাম কারন তখন ওদের মধ্যে কিছু ছিলো না, কিন্তু এখন? ওদের পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই আমার। ‘
একটা বন্ধ ঘরের দরজা খুলে শুভ্র প্রবেশ করে, পাঁচজনের চেহারা কালো কাপড়ে ঢাকা, অনামিকা চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছে। শুভ্র এক এক করে কাপড় সড়ালো, আবিদের মা-বাবা, আবিদের চাচা, অনন্ত’র মা-বাবা। আবিদের মা-বাবাকে দেখে তুর বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! এরা তো মারা গিয়েছিলো। আর অনন্ত’র মা-বাবাই বা এখানে কেন? শুভ্র বলতে আরম্ভ করে,

– ” ঘটনার শুরু আজ থেকে আঠারো বছর আগে! এরা পাঁচজন, আমার মা-বাবা, তুরের মা-বাবা সবাই খুব ভালো বন্ধু ছিলো। আমার আর রোদ্দুরের বয়স তখন ১৭হবে। সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়! সবাই চলে গিয়েছিলো, বাকি ছিলো আমরা এবং তুররা। তখনও কেউ জানতো না যে আমরা যমজ , কারন আমি ছোট থেকেই আমার দাদির কাছে থাকতাম এবং যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই নিজেরা নিজেদের আড়াল করতাম! এটা ছিলো শুভ্র রোদ্দুরের সিক্রেট মিস্ট্রি! আর রোদ্দুর থাকতো মা-বাবার সঙ্গে। আমি তখন প্রথম প্রথম তুরকে দেখি, ভালো লাগে পিচ্চি তুরকে। তাই সবাইকে মানা করেছিলাম যেন আমার কথা কাউকে না জানায়। বাবারা গ্রাম থেকে শহরে আসে। সবাই জানতো আহনাফ জুহারের হলো রোদ্দুর। আমিও আড়ালে থেকে সবার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে মনে খুশি হতাম। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি তখন দেখি বাবার গাড়ির নিচে একজন কিছু একটা করছে, ও চলে যেতেই আমি গাড়ির নিচে ঢুকে দেখি কি করা হয়েছে, কয়েকটা পাইপ আর তার কাটা দেখে আমি ওখান থেকে উঠে গাড়ি ঠিক করার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি আনতে যাই, রোদ্দুর হয়তো দূর থেকে দেখেছিলো আমাকে।

ফিরে এসে দেখি গাড়ি নেই, রোদ্দুর তুরদের গাড়িতে উঠছে। গাড়ি ছেড়ে দেয়, আমি পেছন থেকে চিল্লিয়ে ডাকি সবাইকে, কিন্তু কেউ সাড়া দিলো না। বিকালে জানতে পারলাম গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে। আর তুখোড় আংকেল অর্থাৎ তুরের বাবাকে গুলি করা হয়েছে। তুর তখন খুব ছোট, মাঝে মাঝে রোদ্দুর সেজে ওর সামনে যেতাম আমি, শুভ্রময়ী বলে ডাকতাম কিন্তু আফসোস! না ও আমায় চিনতো, না আমার কাছে আসতো। কিন্তু রোদ্দুর ওর কাছে গেলে ও ঠিকই রোদ্দুরের কাছে যেত। এটাই হয়তো আমার শুভ্রময়ী থেকে রোদ্দুরের জান হয়ে ওঠার ঘটনা! বাবা-মা’য়ের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর আমি সবার সামনে আসার চেষ্টা করি, রোদ্দুরের কাছে আসার চেষ্টা করি কিন্তু রোদ্দুর আমাকে ভুল বুঝে আমার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে, আমায় নদীতে ফেলে দেয়। যেটা তুর দেখেছিলো।
আমি সুস্থ হই এক সরকারি হাসপাতালে, কে বা কারা আমায় এনেছিলো, ওখানে ভর্তি করেছিলো জানি না আমি। যখন আমি ধীরে ধীরে নিজের শারিরীক উন্নতি দেখি তখন ফিরে আসি বাড়ি। ততদিনে তুরের এক্সিডেন্টসহ ওর মেমরি লস হয়ে গিয়েছিলো। রোদ্দুর চলে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়তে। খোজ নিয়ে জানতে পারি শুধু আমাদের এবং তুরদের পরিবারের সঙ্গেই এই সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর আমি আবিদের ক্লাসে ভর্তি হই! আবিদের মুখ থেকে শুনি আহনাফ মারা গিয়েছে। জুহায়ের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। সেদিন বুঝেছিলাম দাদি রোদ্দুরকেও সড়িয়ে দিয়েছে ওখান থেকে। আমি আবিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার অছিলায় সকল তথ্য জোগাড় করতে থাকি। এরপর একদিন আবিদের মা-বাবাও মারা যায়। প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম যে ওনাদের মৃত্যু সত্য। কিন্তু নয়, এটাও নাটক।

আমার সামনে বসে আবিদ, অনন্ত তুরকে নিজের প্রেমের জালে ফাঁসানোর প্লানিং করে। কলেজ লাইফে আমি ছিলাম আবিদের বেস্ট ফ্রেন্ড যেটা পুরোটাই আমার সাজানো। আমি আবিদের কাছ থেকে একটা একটা করে গোপন তথ্য জেনে নিতে শুরু করি, ও কখন, কোথায়, কার সাথে কি করবে সবটা বলতো আমায়।
বছরখানেক আগেই আবিদ আমাকে জানায় যে ওর বাবার বন্ধুরা আর চাচা আসছেন দেশে। প্রথমে অবাক না হলেও পরে কৌতুহলবশত হয়ে আমি অনন্ত’র পরিবারের খোজ নিলাম। জানতে পারলাম অনন্ত’র পরিবার এবং চাচা একই জায়গায় থাকে, এরা যদি আবিদের বাবা-মায়ের বন্ধু হয়, তাহলে সেই ট্যুরের পরিকল্পনায় তো এরাও ছিলো! বাকিটা নাহয় এরা বলুক। যে কেন এরা আমাদের সঙ্গে এমন করলো। ”

শুভ্র আবিদের বাবার মাথার চুল ধরে ঝাকি দিতেই উনি আৎকে ওঠেন। রেগে বললেন,
– ” হ্যাঁ আমরা মেরেছি ওদের। তোরাও তো মেরেছিস আমার ছেলেকে, অনন্তকে! ”
শুভ্র বন্দুক দিয়ে আবিদের বাবার গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
– ” আপনারাই যে মেরেছেন সে তথ্য আমাদের জানা আছে, নতুন কিছু বলুন। যেমন, কেন মেরেছেন? কি চান? ”
আবিদের মা ক্ষোভে ফেটে পড়ে বললেন,
– ” সম্পত্তির জন্য। ওকে ছেড়ে দাও, আমি বলছি সবটা। আমি তুখোড়ের সৎ বোন, সৎবোন হওয়ায় কখনই কোনো কিছু পাইনি! না বিয়ের আগে, না বিয়ের পরে। তুখোড় আমাদের সব চাওয়া পূরণ করতো, কিন্তু এটা তো অন্যায়। আমাদের বাবার সম্পত্তিতে তো আমাদের দুজনেরই সমান অধিকার আছে, তাহলে তুখোড় ছেলে বলে, ও কেন সবটা পাবে? ”
রোদ্দুর রেগে তেড়ে আসলো,

– ” আমার বাবা-মা কি দোষ করেছিলো? ”
আবিদের মা বললেন,
– ” দোষ তো করেছেই, তোমার বাবা আর তুখোড় দুজনই ছিলো আর্মি! তোমার মা উকিল। তুখোড়ের সব সম্পত্তির দায়িত্ব ছিলো আমাদের, কিন্তু একদিন আরহাম আমাদের সব কথা শুনে ফেলে, ও আমাদের হুমকি দেয় যে আমরা যদি সঠিক পথে না আসি তাহলে ও সবটা তুখোড়কে বলে দেবে। তোমাদের মায়ের কোনো দোষ ছিলো না, সে আরহামের সঙ্গে ছিলো বলেই তাকে মরতে হয়েছিলো। ”
তুর এসে নিজের ফুপির গালে চর বসিয়ে দেয়, রাগে সারা শরীরে জ্বলনের অনুভব হচ্ছে। তুর চেঁচিয়ে বলে,
– ” সামান্য কিছু সম্পত্তির জন্য তোমরা আমার বাবাকে মেরে ফেললে ফুপি? একবার বাবাকে বলে দেখতে পারতে। আংকেল তো তোমাদের সঠিক পথে আসতে বলেছিলো, দাবি ছাড়তে তো বলেনি। শুধু শুধু তোমরা তিনটা জীবন শেষ করলে, এর সঙ্গে নষ্ট করলে আরও পাঁচজনের জীবন। আমি, আম্মু, শুভ্র, রোদ্দুর, দাদি! আমরা কি দোষ করেছিলাম? কি ভুল করেছিলাম? টাকার লোভে এই, এতোগুলো জীবন কি তোমাদের চোখে পড়েনি? ”
শুভ্র মিহিকন্ঠে বলে,

– ” রোদ্দুর তুরকে ওদের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে নিয়ে আয়। ওদের হিসাবের খাতা তো আমি বন্ধ করবো। অনন্ত’র মা-বাবার কাহিনি শুনবি না? এরা চেয়েছিলো সবাইকে শেষ করে শুধু নিজেরা রাজত্ব করতে, মানে যার টা খাবে তার পেটেই পরে লাথি মারবে।ইট্স নট এ বিগ ডিল! & চাচা, চাচা অবশ্য নিজের পরিবারের কথাই ভেবেছেন, অনামিকা আবিদ, নিজের ভাই ভাবির কথা ভেবেছেন তাই তার জন্য কম কষ্টের মৃত্যু ঠিক করেছি। ”
ওদিকে অনামিকা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! শুভ্র আবিদের বাবার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে, যেভাবে রোদ্দুর ওর মাথায় আঘাত করেছিলো! তুর ক্ষোভে চোখ বুজে আছে। কিছুক্ষণ পর চিৎকার দিয়ে বলে,
– ” এভাবে নয়! একেবারে মারুন ওদের। ওদের শ্বাস যতবার বাতাসে মিশছে বাতাস তত দূষিত হচ্ছে। এইসব স্বার্থপর, লোভি, হত্যাকারীদের এতোক্ষণ বেঁচে থাকার অধিকার নেই।”
শুভ্র পেছন ঘুরে তুরের দিকে তাকায়, তুর হাত মুঠো করে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র স্মিত হেসে সবারইকে গুলি করে। অনামিকা ততক্ষণে নিজের হাত ছাড়িয়ে ফেলেছে, ও পাশ থেকে বন্দুক উঠিয়ে তুরের দিকে তাক করে,

– ” আমরা কেউ না থাকলে তুই’ও থাকবি না জান! তোকে শেষ করার অসমাপ্ত কাজ আমি সমাপ্ত করবো।”
শুভ্র অনামিকার দিকে তাকিয়ে তুরের দিকে তাকালো। অনামিকা ট্রিগার টানছে, তুর রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুর তুরকে নিজের আড়ালে রেখে ওকে আগলে রেখেছে। অনামিকা উচ্চস্বরে, ভয়ংকর রূপে হাসে।
– ” জানের জন্য নিজের জান দেওয়ার খুব ইচ্ছা তোমার তাইনা রোদ্দুর? তবে তোমার ইচ্ছাই পূরণ হোক। আজ শুধু জান নয়, রোদ্দুরও মরবে। ”
অনামিকা ট্রিগার টানা মাত্র শুভ্র ছুটে এসে রোদ্দুরকে ধাক্কা দেয়। রোদ্দুর, তুর দেয়ালের ওপর ছিটকে পড়ে। শুভ্রর বুকে গুলি লাগে। অনামিকা আরও দুটো গুলি করে শুভ্রর পেটে, বুকে! শুভ্র’র হাত থেকে বন্দুক পড়ে যায়! মেঝে থেকে বন্দুক উঠিয়ে চটজলদি ও অনামিকার কপালের মাঝ বরাবর গুলি করে। অনামিকা তুরকে মারার জন্য আবার বন্দুক উঠালেও হাত থেকে বন্দুক পড়ে যায়। তুর রোদ্দুরকে উঠতে সাহায্য করে, শুভ্র’র কাছে যায়! শুভ্র মেঝেতে শুয়ে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। ব্যাথা, যন্ত্রনার কোনো কষ্ট ওর মাঝে নেই। তুর এসে শুভ্র’র মাথা নিজের কোলে রেখে বসে। শুভ্র অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৯

– ” এটা জেনে খুশি হলাম যে আমি আমার শুভ্রময়ীর কোলে মাথা রেখে মরতে পারছি! শুভ্রময়ী আমার একটা অনুরোধ রাখবে? তোমার এই বিষাক্ত অনুরাগের কারন যখন শেষ তখন এটাকে শুভ্রময় অনুরাগে পরিনত করবে? আর তোমাদের প্রথম সন্তান যদি ছেলে হয় ওর নাম শুভ্রব জুহায়ের রেখো আর মেয়ে হলে, শুভ্রা ইবনাত রোজা! রোদ্দুর আর জানের মেয়ে রোজা! আমি তোমাকে পেলাম না, কিন্তু নিজের কিছু স্মৃতি তো তোমাদের মাঝে রাখতে পারি! তাইনা? রোদ্দুর তোর জানকে নিয়ে ভালো থাকিস! তোর ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই, দাদিকে নতুন করে আমার কথা বলার দরকার নেই, তোদের জীবনে, অতিত , ভবিষ্যৎ কিংবা বর্তমান, কোথাও শুভ্র ছিলো না, আর থাকবেও না। আল্লাহ হাফেজ! ”

তিনবছর পর! অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে রোদ্দুর! ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসতেই রোদ্দুর অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ঢুকে যায়। নার্স হেসে বলে,
– ” ডক্টর রোদ্দুর! আপনার যমজ সন্তান হয়েছে, একটা ছেলে একটা মেয়ে! ছেলে বড়, এবং মেয়ে ছোট। আপনি ম্যামের কাছে থাকুন আমরা বেবিকে গোসল করিয়ে তারপর দিচ্ছি। ”

তুর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। রোদ্দুর তুরের কপালে চুঁমু দিয়ে বাচ্চাদের দিকে তাকালো। সত্যিই কালো ঘনঘটা সড়িয়ে শুভ্র তার প্রকাশ ঘটিয়ে গিয়েছে। বিষাক্ত কালো অনুরাগ সড়িয়ে শুভ্র ভালোবাসার সৃষ্টি করেছে! এক’টা বছরে শুভ্র নিজেকে প্রমাণ করেছে, ওর শুভ্রময়ীর খেয়াল রেখেছে, নিজের পরিবারের খেয়াল রেখেছে! নিজের জীবনের বদলে ওদের ভালো থাকার সুযোগ করে দিয়েছে! তাই শুভ্র’র এই উপহারেই তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের পাতা লিখিত হবে, রোজা, শুভ্রবের আগমনে পুরানো স্মৃতির বিসর্জন হবে।

সমাপ্ত!