Infinite Love part 75+76+77+78

Infinite Love part 75+76+77+78
Writer: Onima

আদ্রিয়ান আর না করলো না মিষ্টিকে বেছে দিতে দিতে নিজেও খেতে লাগল। বাবা মেয়ে একসাথে বসে বাদাম খাচ্ছে আর আমি চোখ ভরে সেই দৃশ্য দেখছি। চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। এবার আমি বুঝে গেছি আমাকে কী করতে হবে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের? একবার যখন দেশে এসে পরেছো। আমি আর তোমাকে ফিরতে দিচ্ছি না। নাউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি। এসব ভাবতে ভাবতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি, দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। আদ্রিয়ান বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মিষ্টির হাতে দিচ্ছে আর মিষ্টি সেগুলো মাথা উচু করে মুখে দিচ্ছে। আর ফাকে ফাকে আদ্রিয়ান এ দুয়েকটা মুখে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল

– এবার একা একা বকবক কর আমি গেলাম।
.
মিষ্টি মুখ কালো করে বলল
.
– চলে যাবে?
.
– যেতে হবে কাজ আছে।
.
মিষ্টি মুখটি কিছুক্ষণ গোমড়া করে রেখে তারপর হালকা হেসে বলল
.
– একটু কোলে নেও!
.
আমি বুঝতে পারছি এই মেয়ে এখন কী করবে তাই হাসছি। তুমি যতোই নিজেকে অনুভূতিহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করোনা কেনো নিজের সন্তানের সংস্পর্শে এসে তুমি নিজের ভেতর তৈরী হওয়া অনুভূতিকে দমাতে পারবেনা। আদ্রিয়ান এবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল

– কেনো?
.
মিষ্টি কিউট করে বলল
.
– নাও নাহ।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকেই ওকে কোলে নিলো তারপর বলল
.
– নিলাম তোকে কোলে এবার?
.
মিষ্টি হেসে আদ্রিয়ানের গলা জরিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– বাই

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো, মিষ্টি হেসে বলল
.
– আমি আমার মাম্মাকে এভাবেই বাই বলি!
.
– তাই আমাকেও এভাবে বললি?
.
মিষ্টি মাথা দুলিয়ে বলল
.
– হুম
.
আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল
.
– আর কিছু?
.
– আরেকটা জিনিস বাকি আছে।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ঠোটে হাসি রেখে বলল
.
– সেটা কী?
.
– দেখাচ্ছি

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে, আদ্রিয়ানের মুখের রিয়াকশন দেখে বুঝলাম ও পুরো থমকে গেছে। ওর ভেতরে যে কিছু একটা কাজ করছে ওর মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছি। আমার চোখও একটা আলাদা প্রশান্তি পাচ্ছে ওদের এভাবে দেখে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিষ্টি সরতে চাইলেও আদ্রিয়ান সরতে দিলোনা দুই হাতে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল, তাই মিষ্টিও আদ্রিয়ানের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে শান্ত হয়ে রইল। আমি একটু অবাক হলাম, মিষ্টি এমনিতে সবার সাথে ফ্রি হলেও এতোটাও না, কিন্তু কী সুন্দর আদ্রিয়ানের বুকে মিশে আছে যেনো কতো চেনা ওর। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান ওকে নামিয়ে বেঞ্চের ওপর দাড় করিয়ে বলল
.
– প্রতিদিন আসিস এখানে?
.
মিষ্টি হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল
.
– আচ্ছা গেলাম আমি
.
মিষ্টি মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বেশ কয়েক কদম উল্টো হেটে তারপর ঘুরে চলে গেলো। আর মিষ্টিও হেসে ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বল নাড়তে লাগল। আদ্রিয়ান চলে যাবার পর আমি দ্রুত হেটে গেলাম মিষ্টির কাছে ওর কাছে গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও বল থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো, তাকিয়ে আমায় দেখে হেসে বলল
.
– তুমি চলে এসছো? এতো দেরী করলে কেনো?
.
আদ্রিয়ানের বেছে রেখে যাওয়া বাদাম মুখে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বললাম
.
– সরি সোনা একটু ব্যস্ত ছিলাম। তুমি কী করছিলি এতোক্ষণ?
.
মিষ্টি ফিক করে হেসে দিয়ে বলল
.
– একটা সিংহের সাথে কথা বলছিলাম।
.
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ওর কথা শুনে, বাদাম আর চিবোতে পারলাম নাহ। তাই অবাক হয়ে বললাম
.
– মানেহ?

মিষ্টি এবারেও হেসে কুটিকুটি হয়ে বলল
.
– মানে হলো লাওন লাওন
.
– হ্যা কিন্তু লাওন কে? লাওন ই কেনো?
.
মিষ্টি বাদাম মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল
.
– ভীষণ রাগী… বাপড়ে কী ধমক দিয়েছিল, লাওন এর গর্জনের মতো..তাইতো নাম দিয়েছি মিঃ লাওন
.
আমার এবার খুব বেশিই হাসি পাচ্ছে কী মেয়েরে বাবা নিজের বাপকেই লাওন বানিয়ে দিলো। যদিও ঠিকই আছে, যেমন বাবা ঠিক তার তেমনই মেয়ে। আমি হাসি আটকে সিরিয়াস মুড করে বললাম
.
– আর কী করেছে লোকটা? আর বকলো কেনো?
.
– সিগারেট ও খাচ্ছিলো লোকটা আমি ফেলে দিয়েছি
.
আমি রেগে যাওয়ার ভাব করে বললাম

– তোমায় ধমকেছে? আমার মিষ্টি সোনাকে? তারমানে লোকটা খুবই খারাপ?
.
মিষ্টি এবার খাওয়া থামিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল
.
– উমহুম একটুও খারাপ না খুব ভালো, কিন্তু একটু রাগী লাওন
.
আমি হাত ভাজ করে বললাম
.
– এমন কী করলো যে তোমার ভালো মনে হলো।
.
– আমাকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিয়েছি, যাওয়ার আগে আদর ও করে গেছে।
.
– ওহ তাই?
.
– হুম
.
– আচ্ছা এবার যাওয়া যাক?
.
– হ্যা
.
আমি হেসে ওকে কোলে করে নিয়ে চলে এলাম।

রাতে মিষ্টি ঘুমোচ্ছে আর আমি ভাবছি মিষ্টি আর আদ্রিয়ান এর কথা। প্রথম দেখাতেই কতোটা মিশে গেছে দুজনে, এবার দেখি মিঃ আদ্রিয়ান তুমি কীকরে তোমার অভিমান টিকিয়ে রাখো! তোমার আজকের বলা শেষ কথাতে যা বুঝলাম তাতে তুমি হয়তো রোজ ওই পার্কে আসবে। আর আমি আমার মেয়েকে খুব ভালো করেই চিনি ও এতো সহজে তোমাকে ছাড়বেনা। এবার ওদিকে মিষ্টি মিষ্টির কাজ করবে আর এদিকে আমি আমার কাজ।
.
আজ সন্ধ্যার পর হসপিটালে অনুষ্ঠান আছে নতুন প্রযেক্ট নিয়ে। তাই মিষ্টিকে সাথির কাছে রেখে গেলাম অনুষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে চারপাশে আদ্রিয়ানকে খুজতে লাগলাম, হঠাৎ অভ্র এসে বলল
.
– কী ম্যাম এসে গেছেন?
.
– হুম
.
– স্যারকে খুজছেন?
.
– হ্যা কোথায় ওও?
.
অভ্র হাতের ইশারায় দেখালো, আমিও ওর ইশারা করা দিকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান এক কোণায় দাড়িয়ে ড্রিংক করছে। আমি ধীর পায়ে ওর কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে না দেখার ভান করেই গ্লাসে চুমুক দিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি বললাম
.
– বাড়ির সবার সাথে কথা বলেছো?

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে গ্লাসের আরেকটা চুমুক দিয়ে বলল
.
– কোন বাড়ির?
.
– তোমার নিজের বাড়ির, তোমার বাবা মা, বন্ধুরা!
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে খানিকটা হেসে পুরো গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করল। আমি একটু চড়া গলায় বললাম
.
– আমি হাসির কী বললাম।
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চলে গেলো ওখান থেকে। খুব বিরক্ত লাগছে আমার এখন কী পেয়েছেটা কী ও? যা খুশি তাই করছে। আর এইসব কিছুতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে ও নিজেই। এভাবে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করার মানে কী? তাকিয়ে দেখলাম অভ্রের সাথে কথা বলছে ওও। আমিও এক কর্ণারে দাড়িয়ে সফ্টড্রিংক খেতে খেতে ভাবছি যে কী করবো এরপর? এরপর সারা পার্টিতে ওকে দূর থেকেই দেখে যাচ্ছি। আমি যেই পাশে থাকি ও ঠিক তার বিপরীত পাশেই থাকে। ইচ্ছে করেই ইগনোর করে চলেছে আমাকে আর সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।

হঠাৎ সবাই আদ্রিয়ানকে গান গাওয়ার জন্যে রিকোয়েস্ট করতে লাগল। কারণ হসপিটালের সবাই মোটামুটি জানে যে আদ্রিয়ান ভালো গান করে। কিন্তু আদ্রিয়ানের এককথা যে ও গান গাইবেনা। কিন্তু সবাই এমনভাবে চেপে ধরেছে যে সৌজন্যতা রক্ষার জন্যেই সবার জোরাজুরিতে বাদ্ধ হয়ে গান গাইতে রাজি হলো। অভ্রের খুশি দেখে কে? ছয় বছর পর গান করবে আদ্রিয়ান তাই ছুটে গিয়ে গিটার এনে ওর হাতে দিলো। ও গিটারটা হাতে নিয়ে নিজের মতো কিছুক্ষণ টুংটাং করলো কারণ অভ্যেস নেই অনেকদিন ধরে। বেশ কিছুক্ষণ টুংটাং করার পর আদ্রিয়ান সুর ওঠালে, এরপর শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করল
.
Mujhse kehte to the, Na Kabhi Ruthoge
Na kabhi hoge mujhse tum khafa
Aisa keya ho geya, tu kaha kho geya
Keya nehi the mere dilme wafa
hai yeh kaisi ghari jo badal ti nehi
Ho geyi duriyaan kyun be baja
Juda juda yeh huye kyun hum yeh bata
Hajoom yaadon ka huya hai har jaga
In aankoon mein mile tujhe jo apna aap to..
to aake de na mujhe bhi hausla…

আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এই মুহুর্তে এই গান কেনো গাইছে বেশ বুঝতে পারছি। এরপর আমার থেকে চোখ সরিয়ে চোখ বন্ধ করে গাইলো
.
Keya maine khoya, keya nehi paya
iska koyi mujhe gam nehi..
Tujhse jure the silsilein sare
Par hum rahe to ab hum neji
Tujhe yadoon se bhula du, mein kaise yeh saja do
Khudko yeh bata de jara
Hai yeh kaisi kami, puri hoti nehi
Peyaar tujhse kiya tha bepanha..
Juda juda se hiye kyun hum yeh bata
Hajoom yadoon ka huya hai har jaga
In ankhoon mein mile tujhe apna aap to..
Tu aake de na mujhe bhi hausla..
.
আমার চোখ এবার ছলছলে করে উঠছে, নিজে ভেতরে চেপে রাখা কষ্টাই যেন ও প্রকাশ করছে গানের মধ্যে। ও এবার গিটারে চোখ রেখে গাইলো

Khudse khafa hoon, tujhse juda hoon
Roothe huye hai sab asarein..
Har justu main karto chuka hoon
mitte nehi kyun yeh fasalein..
Tujhe khoya hoon pake, kaha dhundu main jake
Saans chalti nehi,aakhein thamti nehi
hos bhi ab huye hai la pata
Juda juda se huye kyun hum yeh bata
Hajoom yadoon ka huya hai har jaga
In ankhoon mein mile tujhe jo apna aap to…
Tu aake de na mujhe bhi hausla..
.
সবাঈ জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো আর সেই আওয়াজে আমার ঘোর কাটলো, আমি সাথেসাথেই নিজের চোখের কোনের পানিটা মুছে ফেললাম। আদ্রিয়ানের আজকের গানের প্রতিটা লাইন আমার বুকে গিয়ে লেগেছে। প্রতিটা লাইন যে আমার প্রতি ওর ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসা থেকে পাওয়া কষ্টকে চিৎকার করে প্রকাশ করছিলো সেটা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছি। এর আগেও ও ওর মনের অনুভূতিকে মিশিয়ে গান গেয়েছিলো আমার সামনে কিন্তু অবিশ্বাস আর রাগ এমনভাবে আমার হৃদয়কে ঘিরে রেখেছিলো যে সেই গান আমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। এসব ভেবেই বুকের ভেতরটা ভার হয়ে এলো। সারা পার্টিতে আমি আর ওকে জালাতে যাইনি, গানটা গাওয়ার পর ওও একদম চুপ ছিলো। ভাবলাম আজ একটু স্পেস দি ওকে।

আজকেও হসপিটাল থেকে বিকেলে মিষ্টিকে আনতে গেলাম তবে ধীর পায়ে সাবধানে। কারণ আমার সিক্স সেন্স বলছিলো যে আদ্রিয়ান এখানে আসবে, মিষ্টির টানে, যখন আদ্রিয়ান মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করলো যে, ‘ তুই এখানে রোজ আসিস?’ তখনই কিছুটা ধারণা করেছি। তবে গিয়ে দেখি মিষ্টি খেলছে কিন্তু আদ্রিয়ান আসেনি এখোনো। আমি আবারো সেই গাছে পিছে লুকিয়ে ভাবছি আজকে আসবে না নাকি? ও না আসলে তো আমি যেটা করতে চাইছি সেটা হবেনা। তবে কী আমার ধারণা ভূল ছিলো? এসব ভেবে ভেবেই সামনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে আসতে দেখে চমকে গেলাম, খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। যাক তাহলে এবার আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো। এসব ভেবেই দেখলাম আদ্রিয়ান সেই বেঞ্চে বসে একটা সিগারেট জালিয়ে টানছে। যাহ আমিতো ভাবলাম মিষ্টিকে খুজবে এটা কী হলো? যাই হোক মিষ্টিতো আছে ও না খুজলে কী হবে কিছুক্ষণের মধ্যে মিষ্টি নিজেই দেখতে পাবে ওকে। তারপর যা করার ওই করবে। এসব ভাবতে না ভাবতেই মিষ্টির চোখ পরল আদ্রিয়ানের দিকে কিন্তু আদ্রিয়ানকে দেখেই মিষ্টি কপাল কুচকে ফেললো। হয়তো আজকেও সিগারেট টানছে তাই। মিষ্টির লম্বা লম্বা পা ফেলে আদ্রিয়ানের সামনে ভ্রু কুচকে দাড়ালো। মিষ্টির দিকে চোখ পরতেই আদ্রিয়ান ঠোট থেকে সিগারেট সরিয়ে বলল
.
– আরেহ ধানিলঙ্কা?
.
– মিস্টার লাওন? আজকেও এসছো?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো হয়তো মিস্টার লাওন নামটা শুনে অবাক হয়েছে, তাই ভ্রু কুচকে বলল
.
– এই লাওন কে হ্যা?
.
– তাহলে ধানিলঙ্কা কে?
.
– কেনো তুই ছোট প্যাকেট হলে কী হবে বড় বড় ধামাকা নিয়ে হাজির হোস।
.
মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল

– তুমিও তো দেখতে এতো সুন্দর হলে কী হবে? লাওনের মতো গর্জন করতে থাকো!
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে বোকার মতো মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
.
– দেখ আজ এমিতেই মাথায় আগুন জলছে একদম জালাবিনা আমাকে। যা গিয়ে খেল।
.
মিষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল
.
– আমার ব্যাগে পানির বোতল আছে মাথায় ঢেলে দেবো।
.
আমার এবার ব্যাপক হাসি পাচ্ছে বাবা মেয়ের এই ঐতিহাসিক ঝগড়া দেখার ভাগ্য কজনের হয়? আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল
.
– কী বললি?
.
মিষ্টি মুখটা সিরিয়াস করে বলল
.
– আগুন তো পানি দিয়েই নেভায় সেইজন্যেই বলছিলাম।
.
– তুই চুপ করবি? ( ধমকে )
.
মিষ্টি সাথে সাথেই ঠোটে আঙ্গুল দিলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিষ্টি হাত বাড়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান সেটা দেখে ভ্রু কুচকে বলল
.
– বেঞ্চে বসালে দুষ্টমি করবিনা তো?

মিষ্টি ভদ্র মেয়ের মতো না বোধক মাথা নাড়লো। তারপর আদ্রিয়ান মিষ্টিকে বেঞ্চে বসিয়ে দিলো। আর তারপর নিজের মতো সিগারেট টানতে লাগল। হঠাৎ করেই মিষ্টি টান মেরে সিগারেট ফেলে দিলো। আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
– তুই কিন্তু বলেছিলি দুষ্টমি করবি নাহ
.
মিষ্টি হাসতে হাসতেই বলল
.
– আমি দুষ্টমি করবোনা বলেছি সিগারেট ফেলবোনা কখন বললাম
.
আর আমি? হাসি আটকে রাখা কতো কষ্টের সেটা এখন বুঝতে পারছি। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিষ্টির দিকে তারপর বাকা হেসে জিন্সের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে বলল
.
– গোটা প্যাকেট আছে আমার কাছে! এবার কী করবি?

মিষ্টি ওটা নিতে গেলেই আদ্রিয়ান হাত উচু করে ফেললো। মিষ্টি এবার বেঞ্চে দাড়িয়ে ওটা নিতে গেলেই আদ্রিয়ান হাত দূরে সরিয়ে নিলো। মিষ্টি শত চেষ্টা করেও আদ্রিয়ানের থেকে ওটা নিতে পারলোনা। একপর্যায়ে নাক ফুলিয়ে বসে পড়ল, আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– ধানিলঙ্কার ঝাজ শেষ?
.
মিষ্টি ভ্রু কুচকে তাকালো। আদ্রিয়ান যেই আরেকটা সিগারেট নিয়ে জালিয়ে টান দিতে যাবে মিষ্টি আবারো টেনে ফেলে দিয়ে হেসে বলল
.
– প্যাকেট নিতে না পারলে কী খেতে গেলেই ফেলে দেবো।
.
বলেই মিষ্টি একটা নাক ঘষা দিলো। আদ্রিয়ান এবার মুখ গোমরা করে বসে থেকে নিজেই জিদ করে প্যাকেটটা ফেলে দিলো। মিষ্টি বিজয়ের হাসি দিয়ে বলল
.
– এবার লাওনের গর্জনও শেষ।
.
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। মিষ্টি বার বার ঊকি দিয়ে দেখছে আদ্রিয়ানকে। তারপর আঙ্গুল দিয়ে আদ্রিয়ানের পেটে খোচা মারতেই। আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
– সমস্যা কী তোর?

– ওটা খেলে অসুখ করে ফুসফুস আর হা..কী জেনো?
.
– হার্টে?
.
– হুম ওখানে
.
আদ্রিয়ান একটু শব্দ করে হেসে বলল
.
– হার্ট থাকলেতো হার্টে অসুখ করবে
.
মিষ্টি অবাক হয়ে বলল
.
– তোমার হা হার্ হার্ট নেই?
.
– উমহুম আই এম হার্টলেস।
.
মিষ্টি চিন্তিত মুখ করে বলল
.
– কিন্তু মাম্মা যে বলে মানুষ ওটা ছাড়া বাচে না? তুমি বেচে আছো কীকরে?
.
– ভূল বলে। এই দেখ আমি দিব্বি বেচে আছি।
.
– আমার মাম্মা মিথ্যে বলেনা হুহ। তুমি জানোনা তোমারও আছে।
.
– কেনো? তোর মা কী এন্জেল?
.
– হুম তাই
.
আদ্রিয়ান হাসল। আদ্রিয়ানের কথাটা আমার বুকে তীরের মতো বিধছে। মিষ্টি নাক ফুলিয়ে বলল
.
– তুমি ওটা যদি আবার খাও না তাহলে আমি, তাহলে আমি…
.
– তাহলে আমিতে আটকে গেলি কেনো? এরপর বল?
.
মিষ্টি আবারো নাকে ঘষা মেরে বলল

– আমিহ আমি খামচি দেবো, কামড় দেবো ঘুষিও মারতে পারি।
.
– তুই আমায় মারবি? ( ভ্রু কুচকে)
.
– হ্যা
.
আদ্রিয়ান এবার হেসে দিয়ে বলল
.
– তোর সাইজ দেখ আর আমার সাইজ দেখ।
.
মিষ্টি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান বলল
.
– আর আমি জীবনে একটা মেয়েরই মার, খামচি, কামড় সহ্য করেছি বুঝলি?
.
– তাহলে আমার টাও করবে।
.
– ওই মেয়েটা আমার বউ তাই করেছি। তুই আমার কে রে যে তোরটা করব?
.
মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলল
.
– হুহ।

তারপর হাত ভাজ করে মুখ ঘুরিয়ে বসে পরল। আদ্রিয়ানো হাত ভাজ করে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে। দুজনেই দুজনের ওপর বেশ বিরক্ত। আর আমি হাসছি এদের দেখে। আদ্রিয়ানকেও এখন একটা বাচ্চা মনে হচ্ছে। ওদের দুজনের মধ্যকার বন্ডিংটা এক্কেবারে অন্যরকভভাবে শুরু হলো। কেউ কাউকে চেনেনা অথচো কী সুন্দর মিশে গেছে একে ওপরের সাথে। রক্তের সম্পর্কের টান হয়তো একেই বলে যাকে কোনো যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
তারপর হাত ভাজ করে মুখ ঘুরিয়ে বসে পরল। আদ্রিয়ানো হাত ভাজ করে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে। দুজনেই দুজনের ওপর বেশ বিরক্ত। আর আমি হাসছি এদের দেখে। আদ্রিয়ানকেও এখন একটা বাচ্চা মনে হচ্ছে। ওদের দুজনের মধ্যকার বন্ডিংটা এক্কেবারে অন্যরকভভাবে শুরু হলো। কেউ কাউকে চেনেনা অথচো কী সুন্দর মিশে গেছে একে ওপরের সাথে। রক্তের সম্পর্কের টান হয়তো একেই বলে যাকে কোনো যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। আমি দুজনকে গভীরভাবে লক্ষ করছি, দুজন দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলেও মাঝেমাঝে আড় চোখে দেখছে একে ওপরকে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিষ্টি ঘুরে বলল
.
– মিঃ লাওন?
.
আদ্রিয়ান ঘুরে চোখ ছোট ছোট বলল
.
– ওই একদম এসব ফালতু নামে ডাকবিনা আমাকে।
.
মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল
.
– আমিতো ডাকবোই।
.
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে বলল
.
– এইটুকু মেয়ে এতো সাহস কোথায় পাস বলতো? তোকে নিয়ে যদি এখন বেচে দেই?
.
মিষ্টি নাক ফুলিয়ে বলল

– আমি কী শাক সবজি যে বাজারে নিয়ে বেচে দেবে?
.
– হুম ধানিলঙ্কা তো। বেচাই যায়!
.
– তাহলে তোমাকে চিড়িয়াখানায় দিয়ে আসবো।
.
– চিড়িয়াখানা?
.
– হ্যা! লাওন তো চিড়িয়াখানায় থাকে। আমি দেখেছি।
.
বলেই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। অাদ্রিয়ান ও আজ আর না হেসে থাকতে পারলো না। ও হলকা হেসে দিলো। আমিও নিঃশব্দে হাসছি। এভাবেই ওরা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল মানে ঝগড়া করল। তারপর আদ্রিয়ান যাওয়ার জন্যে উঠে দাড়াতেই মিষ্টি হাত বাড়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে হেসে বলল
.
– আজকেও বাই বলবি?
.
মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলে নিতেই মিষ্টি ওর গালে একটা পাপ্পি দিয়ে গলা জরিয়ে ধরল। আদ্রিয়ান ও ওকে কিছুক্ষণ বুকে জরিয়ে রেখে তারপর নামিয়ে চলে গেলো। আর আদ্রিয়ান চলে যেতেই আমি গিয়ে মিষ্টিকে নিয়ে এলাম। সারা রাস্তাই মিষ্টি ওর মিস্টার লাওনের গুনগান করে গেছে।
.
পরেরদিন সার্জারি ছিলো তাই সার্জারি কম্প্লিট করে কেবিন একঘন্টা রেস্ট করলাম, রেস্ট করেছি বলতে বসে বসে আদ্রিয়ানকেই দেখেছি। কারণ জানালা দিয়ে ওকে দেখা যাচ্ছে, বাইরে দাড়িয়ে কাজ দেখতে দেখতে সিগারেট টানছে আর মাঝে মাঝে ক্লাইন্ড দের সাথে কথা বলছে। আমার আপাদত কোনো কাজ নেই তাই কিছুক্ষণ রেস্ট করে মাঠে গেলাম হাটতে হাটতে। গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান নতুন তৈরী হওয়া বিল্ডাংটার পাশের বড় পুকুরের পারে ইট সিমেন্ট দিয়ে টাইলস দিয়ে সাজিয়ে যেই বসার জায়গা করেছে সেখানেই বসে আছে আর সিগারেট টানছে । আমি ধীর পায়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও পাশে কাউকে বসতে দেখে তাকালো আর তাকিয়ে আমাকে দেখে আবার সামনে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

– leave me alone..
.
আমিও সামনে তাকিয়েই হালকা হেসে বললাম
.
– ছয় বছর তো একাই ছিলে আর কতো?
.
ও সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে সামনে তাকিয়েই বলল
.
– একা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর এই জীবন নিয়েই ভালো আছি।
.
– সত্যিই ভালো আছো?
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিগারেট টানতে লাগল। আমার রাগ লাগছে খুব। কিন্তু এই মুহুর্তে রাগ করে কিছুই হবে না। তাই পুকুরে ঢিল ছুড়তে ছুড়তে বললাম
.
– আবার চলে যাবে?
.
আদ্রিয়ান স্মিত হেসে বললো
.
– এখানে থাকার কোনো কারণ আছে কী?

– অবশ্যই আছে! তোমার সব আপন লোকেরা আছে এখানে, যারা মন প্রাণ দিয়ে তোমাকে চাইছে। তোমার পরিবারের সবাই তোমার ফেরার আসায় বসে আছে, তোমার বন্ধুরাও তোমার অপেক্ষায় আছে, আর..
.
– আর?
.
আমি চুপ করে রইলাম। কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে ওর শেষ হওয়া সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিসে চলে গেলো। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম।
.
আজ বিকেলে হসপিটালে কাজ থাকার কারণে মিষ্টিকে আনতে যেতে পারিনি সাথিকে বলে দিয়েছি মিষ্টিকে যাতে যায়। সন্ধ্যের পর বাড়ি ফিরে দেখি মিষ্টি সোফায় শুয়ে ট্যাবে করে গেইমস খেলছে। আমি গিয়ে ওকে ডাকতেই ও ট্যাবটা সোফায় ফেলে ছুটে এলো আমি ওকে কোলে নিতেই ও আমার গলা জরিয়ে ধরে বলল
.
– জানো মাম্মা মনি কিচ্ছু বোঝেনা।
.
বলেই গাল ফুলিয়ে রাখল। আমি হেসে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে সোফায় বসিয়ে বললাম
.
– কেনো? আজকে আবার কী করেছে সাথি?
.
মিষ্টি কিছু বলবে তার আগেই সাথি ঘাম মুছতে মুছতে এসে বলল
.
– আর বলবেন না ম্যাম। একটা অপরিচিত লোকের সাথে বসে বসে কথা বলছিলো। কথা বলছি কেনো একপ্রকার ঝগড়াই বলা চলে। কেমন না কেমন লোক।
.
মিষ্টি রেগে নাক ফুলিয়ে বলল
.
– মনি… একদম আমার মিঃ লাওন কে বাজে লোক বলবেনা ও খুব ভালো।
.
সাথি মুখ গোমড়া করে বলল

– দেখলেন ম্যাম..
.
আমি সাথিকে ইশারায় চুপ থাকতে বললাম, তারপর মিষ্টিকে বললাম
.
– সোনা তুমি ভেতরে যাও আমি আসছি ওকেহ?
.
মিষ্টি মাথা নেড়ে চলে গেলো। আর মিষ্টি যেতেই সাথি শুরু করল
.
– ম্যাম এখন দিনকাল কেমন চলছে তাতো দেখতেই পাচ্ছেন। যদিও লোকটাকে দেখে ভালো মনে হয়েছে।
.
আমি হেসে বললাম
.
– যাও আমার জন্যে কফি নিয়ে এসো।
.
সাথি আর কিছু না বলে চলে গেলো। তবে এটুকু বুঝলাম আমার এই ভাবলেশহীনতায় ও একটুও সন্তুষ্ট হয়নি। রাতে মিষ্টিকে খাওয়াচ্ছি আর মিষ্টি শুধু ওর মিঃ লাওন আজ কী করলো না করলো, ওকে কয়টা ধমক দিয়েছে, কী নিয়ে ঝগড়া করেছে সব বলল।
.
আজ হসপিটালে পেসেন্ট দেখা শেষ কর আদ্রিয়ানকে দেখতেই গেলাম প্রজেক্টের কাজের ওখানে, ও কাজের ওখানে একজনের সাথে কথা বলছে, আপাদত ওর কাছে না গিয়ে একটা গাছে হেলান দিয়ে ওকে দেখছি। কিছুক্ষণ পর অভ্র এসে দাড়ালো আমার পাশে। আমি ওকে দেখে বললাম
.
– আরে তুমি?

– হুম স্যারের সাথেই এসছি
.
– ওহ।
.
– স্যারকে দেখছেন?
.
– হ্যা এখন কী করা যায় সেটাই ভাবছি।
.
– হুমম
.
হঠাৎ আদিব ভাইয়া আর ইশরাক ভাইয়াকে দেখে থমকে গেলাম। পুরো একবছর পর দেখছি ওনাদের। ওনাদের দেখেই আমি তাড়তাড়ি ওনাদের কাছে গেলাম
.
– ভাইয়া ভালো আছেন?
.
আদিব ভাইয়া মলিন হেসে বলল
.
– এইতো আছি। তুমি?
.
– ভালো।
.
– আপনারা এখানে?
.
– এসছিলাম এদিকে কাজে ভাবলাম ওর সাথে দেখা করে যাই। কী জানি কথা বলবে কী না!
.
আমি কিছু বললাম নাহ। ইশরাক ভাইয়া বলল
.
– বাবু সাহেব কোথায়?
.
আমি আঙ্গুলো ইশারায় আদ্রিয়ানকে দেখালাম। আদ্রিয়ানকে দেখে দুজনেরই চোখ আনন্দে চিকচিক করে উঠল। যত যাই হোক, বন্ধুতের সম্পর্কের টান আলাদাই থাকে। এই একটা সম্পর্কই মানুষকে অর্জন করতে হয়। বাকি সব সম্পর্ক তো জন্মসুত্রে পাওয়া, কিন্তু বন্ধুত্ব এমন একটা সম্পর্ক যেটা অর্জন করতে হয়। আদিব ভাইয়া বলল
.
– এখোনো অভিমান করে আছে সবার ওপর তাইনা?
.
অভ্র হেসে বলল

– হুম। এবার আপনাদেরই অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করতে হবে।
.
ইশরাক ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– মিষ্টির কথা বলেছো ওকে?
.
– এখোনো সেই সময় আসেনি ভাইয়া। সময় আসুক ও নিজে থেকেই জানতে পারবে।
.
আদিব আর ইশরাক ভাইয়া এবার ওর কাছে গেলো। ও একমনে কাজ দেখছিলো। আদিব ভাইয়া পেছন থেকে বলে উঠল
.
– আদ্রিয়ান?
.
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে পেছনে তাকালো আর পেছনে তাকিয়ে আদিব আর ইশরাক ভাইয়াকে দেখে ওর চোখের দৃষ্টি স্হির হয়ে গেলো। কেনো হবেনা? যতোই অভিমান থাকনা কেনো? সত্যিতো এটাই এরা ওপরের প্রাণের চেয়েও প্রিয় বন্ধু। আদিব আর ইশরাক ভাইয়া ওর দিকে এগোতে গেলেই আদ্রিয়ান চোখ সরিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো আর সিগারেট জালিয়ে টানতে লাগল। ওরা দুজনেই এতে একটু অবাক হলো। কিন্তু তবুও গিয়ে আদ্রিয়ানের সামনে গেলো দুজন। তারপর আদিব ভাইয়া বলল
.
– আদ্রিয়ান তুই..

আদ্রিয়ান সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে বলল
.
– আমি এখন ব্যস্ত আছি কারো সাথে বারতি কথা বলার সময় নেই।
.
ইশরাক ভাইয়া বলল
.
– দেখ ভাই তুই এবার…
.
ওদের আর কিছু বলতে না দিয়েই আদ্রিয়ান চলে গেলো। আদিব আর ইশরাক ভাইয়া একে ওপরের দিকে হতাশাজনক চাহনি দিয়ে বেড়িয়ে চলে গেলো। অামি এবার আদ্রিয়ানকে খুজতে গেলাম, কিছুক্ষণ খোজার পর দেখি ও একটা গাছের সাথে দাড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে স্হির দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। আমি দ্রুত পদে ওর কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে সিগারেটের টা ফেলে দিয়ে ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললাম
.
– কী চাইছোটা কী তুমি হ্যা? কী চাইছো? কেনো এমন করছো?
.
ও আমার হাত ছাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে ভাবলেশহীনভাবে বলল
.
– কী করছি?
.
– তুমি বুঝতে পারছোনা কী করছো? শুনলাম সেদিন আঙ্কেল আন্টিও এসছিলো দেখা করতে তুমি নাকি কথাই বলোনি। আজ আদিব ভাইয়ারা এলো ইগনোর করে চলে এলে। নিজের কাছের মানুষদের এভাবে দূরে সরিয়ে কী আনন্দ পাচ্ছো বলবে?
.
আদ্রিয়ান কিছু বললোনা। একদৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি এবার কান্নামিশ্রিত গলায় বললাম

– আদ্রিয়ান সবাই কষ্ট পাচ্ছে তোমাকে ছাড়া। সবার চায় তোমাকে। প্লিজ অনেকতো হলো!
.
– কিন্তু কেনো? আমায় কী দরকার আপনাদের?
.
এবার আমি রেগে গিয়ে ওকে ঘুরিয়ে হালকা ঝাকিয়ে বললাম
.
– তুমি বুঝোনা কেনো দরকার? এতোটাই অবুঝ তুমি?
.
ও এবার আমার দুহাতের বাহু ধরে ঝাকিয়ে চেচিয়ে বলল
.
– নাহ বুঝতে পারিনা তোমাদের আমি। কী ভাবো কী নিজেদের তোমরা? তোমরা যখন যেটা চাইবে ঠিক সেটাই হবে? তোমাদের যখন ইচ্ছে যা খুশি শুনিয়ে দিয়ে দূরে সরিয়ে দেবে, আমাকে সেটা মেনে নিতে হবে। আবার যখন ইচ্ছে হবে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আমাকে কাছে টেনে নেবে, সেটাও মেনে নিতে হবে। একচুয়ালি কী ভাবো কী তোমরা আমাকে। I am a puppet?
.
এটুকু বলেই একপ্রকার ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দ্রুত পদে চলে গেলো ওখান থেকে। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। অভ্র এসে বলল
.
– মন খারাপ করবেন না ম্যাম। আপন মানুষের দেওয়া আঘাত চাইলেই এতো সহজে ভোলা যায় না। স্যারকে আর একটু সময় দিন। সব ঠিক হয়ে যাবে।

এভাবেই আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো এই কয়েকদিনে মিষ্টির সাথে আদ্রিয়ানের প্রায়ই দেখা হয়েছে আর সেই খুনশুটিময় ঝগড়া তো আছেই। আর অামার মেয়ে রোজ আমাকে সেই কাহিনী শুনিয়েছে। আর আদ্রিয়ান মিষ্টির সামনে প্রকাশ না করলেও ওর মায়ায় পরে গেছে সেটাে বেশ ভালোই বোঝা যায়।
.
আজ রাতে হঠাৎ ইমারজেন্সি কেস এসে পরায় আমাকে সার্জারী করতে যেতে হচ্ছে তাই মিষ্টিকে সাথির কাছে রেখেই গেলাম। আর সার্জারী কম্প্লিট করে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেলো। গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছি হঠাৎই খুব জোরে থেমে গেলো গাড়ি। কী হলো বুঝতে পারলাম না। কয়েকবার স্টার্ট করার পরেও গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছেনা। তাই গাড়ি থেকে বেড়িয়ে চেইক করে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। এটা এখনই হবার ছিলো? ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি বেশ রাত হয়ে গেছে। ধ্যাত ! কোনো গাড়িও নেই। কীকরে বাড়ি ফিরবো? ইচ্ছে করছে এই ডাসবিনটাকে গুড়ো করে রেখে যাই এখনি নষ্ট হবার ছিলো? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম একটু দূরে কয়েকটা ছেলে টাস খেলছে তবে তাস খেলার পাশাপাশি আমাকেও দেখছে মাঝেমাঝে আড়চোখে। এখন মাঝরাতে এরা আবার ঝামেলা করবে কী না কে জানে? পায়চারী করতে করতে দিলাম গাড়িতে এক লাথি। হঠাৎ গাড়ির আওয়াজে পেছনে তাকাতেই গাড়ির হেডলাইট চোখে পরল আমি দুহাতে চোখ ঢেকে নিলাম। গাড়ির হেডলাইট নিভতেই আমি হাত সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। আর সামনে তাকিয়ে আরো বেশি শকড হলাম কারণ গাড়ি থেকে আদ্রিয়ান বেড়িয়ে এলো। ওকে দেখে জানে পানি পেলাম। কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ করলাম না। আদ্রিয়ান হেটে আমার সামনে এসে ঝাঝালো গলায় বলল

– এতোরাতে এখানে দাড়িয়ে কী করছেন, ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া, রাস্তাটা কতো খারাপ ?
.
মেজাজটাই খারাপ হলো কিছু না জেনে এভাবে রেগে বলার কী আছে? ও এবার ধমকে বলল
.
– কী হলো বলুন? এতো রাতে রেরিয়েছেন কেনো?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বললাম
.
– মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছি।
.
– আপনার ত্যারা কথা বলার স্বভাব জীবনেও যাবেনা?
.
– নাহ যাবেনা। তুমি যদি কিছু না যেনেই এমন ষাড়ের মতো চিল্লাতে থাকো তাহলে আমিও এভাবেই কথা বলবো?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– হোয়াট? আমি ষাড়?
.
– আমি কখন বললাম এইতো আপনি নিজেই বললেন যে আপনি ষাড়।
.
– ইউ… ওয়াটএভার। আপনি দয়া করে বলবেন কী আপনি এখানে কী করছেন?
.
– সার্জারী ছিলো ইমারজেন্সি আর এখানে এসে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে
.
বলেই ভ্রু কুচকে হাত আজ করলাম। ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
.
– এই রাস্তাটা সেভ না, আপনি আমার গাড়িতে আসুন ড্রপ করে দিচ্ছি।
.
আমি কিছু বলবো তার আগেই ও আবার বলল

– যেমন উনি তেমন ওনার গাড়ি দুটোই টিউবলাইট।
.
গেলো মাথাটা গরম হয়ে। আমি টিউবলাইট? তাই মুখটা ফুলিয়ে বললাম
.
– দরকার নেই আপনার হেল্পের আমি নিজেই যেতে পারব। ইউ ক্যান গো।
.
– দেখুন জেদ করে লাভ নেই। রাস্তাটা ভালো না চলুন এখন।
.
– বললাম তো যাবোনা যান আপনি।
.
– ওকে ফাইন, এস ইউর উইস।
.
বলেই গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আমি ভাবছি যাহ বাবা এটা কী হলো? আমায় একা ফেলে চলে গেলো? যাহ খুশি করুকগে, গাড়িটা আপাদত ওখানে রেখে আমি খানিকটা হেটে এগোতে লাগলাম। কিন্তু ওই ছেলেগুলোকে দেখে বিরক্ত হলাম। এতোক্ষণ শুধু আড় চোখে আমাকে দেখলেও এখন হাসছে মাঝে মাঝে। হঠাৎই ওরা সব উঠে দাড়িয়ে গেলো আর আমার ব্যপারটা ভালো লাগলোনা। আমি তাড়াতাড়ি এগোতে গেলেই ওরা সামনে এসে দাড়লো। আমি পাশ কাটতে চাইলেই ঘিরে ধরল আমাকে। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে। ওদের মধ্যে একজন বলল
.
– কী ম্যাডাম একা একা বোর হচ্ছেন বুঝি? কম্পানি দেবার জন্যে আমরা আছি তো।
.
বলেই একসাথে হাসতে লাগল। আমি ভ্রু কুচকেই হাত ভাজ করে বললাম
.
– হয়ে গেছে? এবার যান।
.
ওদের মধ্যে আরেকজন বলল
.
– আরিব্বাস এতো আবার জান ও বলছে।

আমি দাত করমর করে তাকিয়ে আছি এদের দিকে। সেটা দেখে বলল
.
– বাপরে খুব রেগে গেছে তো। তা ম্যাম আপনার পার্টনার কই।
.
আমি এবার কিছু বলতে যাবো তার আগেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল
.
– ওর পার্টনার এইখানে।
.
আমি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান পকেটে হাত দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান কে দেখেই ওরা ভয় পেয়ে কেটে পরল। বুঝতে পারলাম এরা সবাই আদ্রিয়ানকে চেনে। আদ্রিয়ান আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল
.
– কী হলো? প্রশংসা শোনা শেষ?
.
ওর চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে রইলাম। এখন একে কিছু বললে সেটা আগুনে ঘি ঢালা হবে তাই চুপ থাকাটাই বেটার। আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল
.
– চলুন।

বলেই হাটতে লাগল। আমিও কথা না বাড়িয়ে ওর পিছে পিছে হাটতে লাগলাম। ও এতো জোরে হাটছে যে ওর সাথে আমাকে একপ্রকার দৌড়তে হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ানোর থুরি হাটার পর অবশেষে ওর গাড়ির কাছে এসে পৌছলাম। আমি দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আছি। ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দরজা খুলে দিতেই আমি ফ্রন্ট সিটে গিয়ে বসলাম। আদ্রিয়ান এবার ড্রাইভিং সিটে বসে নিজের সিটবেল্ট বাধল। আমি বসে আছি ও কখন আগের আমার সিটবেল্ট বেধে দেবে সেই আশায়। আদ্রিয়ান আমাকে সিটবেল্ট বাধতে না দেখে ভ্রু কুচকে বলল
.
– কী হলো সিটবেল্ট বাধছেননা কেনো?
.
আমি ওর দিকে না তাকিয়েই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম
.
– বেধে দিন। আমি বাধতে পারিনা।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আমার মাথায় কী সিল দেওয়া আছে যে আমি গাধা? যে মেয়ে নিজে কার ড্রাইভ করে যে সিটবেল্ট বাধতে জানেনা, ওয়াও!
.
আমি মিটমিটিয়ে হাসছি। আর ভাবছি যে যতো যাই বলো, সিটবেল্ট তো আমি তোমাকে দিয়েই বাধাবো। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান বলল
.
– কী হলো বাধো?
.
আমি সিটে হেলান দিয়ে বললাম
.
– পারবোনা। ইচ্ছে হলে বেধে দাও নাহলে থাক। কী আর হবে এক্সিডেন্ট হলে ক্ষতি বেশি হবে আমার। তাতে তোমার কী? তুমি গাড়ি চালাও।
.
আদ্রিয়ান দাত করমর করে আমার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে সিটবেল্ট বেধে দিলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছি। ও গাড়ি স্টার্ট করলেই আমি বললাম

– আমার গাড়ি?
.
ও সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল
.
– চুড়ি করে নিয়েছি। কাল বেচে দেবো।
.
– হুহ
.
– অভ্রকে বলে দিয়েছি লোক এসে গ্যারেজে নিয়ে যাবে।
.
আমি কিছু বললাম না। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। আদ্রিয়ান ডান দিকের রোডে যেতে নিলেই আমি বললাম
.
– আরে ডান দিক না বা দিকে।
.
ও সাথে সাথেই গাড়ি ব্রেক করে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
.
– বায়ে? বাট তোমাদের বাড়ি তো এই রোডে?
.
এইরে ভূলেই তো গেছিলাম। এখন কী হবে? না ব্যাপারটা অন্যভাবে সামলাতে হবে। নিজেকে সামলে বললাম

– আমি থাকিনা ঐ বাড়িতে।
.
আদ্রিয়ান বেশ অবাক হয়ে বলল
.
– ওদের সাথে থাকোনা মানে?
.
– মানে একা থাকি।
.
– হোয়াট একা থাকো মানে কি?
.
উফফ এই ছেলের প্রশ্নের উত্তর কীকরে দেই এখন। কোনোরকমে বললাম
.
– এক মিনিট আমি তোমাকে এতো সাফাই কেনো দিচ্ছি? হু আর ইউ? আর হঠাৎ আপনি ছেড়ে তুমিতে গেলে যে কী মতলব হ্যা?
.
আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
.
– দেখো মাথা গরম করবেনা? আলাদা থাকো মানে কী? আর কেনো?

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম
.
– বিয়ে করেছি আমি তাই হাজবেন্ডের বাসায় থাকি। বিয়ের পর নিশ্চই কেউ বাপের বাড়ি থাকেনা, নিজের হাজবেন্ডের সাথেই থাকে। সিম্পল!
.
আমার কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর আমার হাত ছেড়ে দিলো।
– বিয়ে করেছি আমি তাই হাজবেন্ডের বাসায় থাকি। বিয়ের পর নিশ্চই কেউ বাপের বাড়ি থাকেনা, নিজের হাজবেন্ডের সাথেই থাকে। সিম্পল!
.
আমার কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর আমার হাত ছেড়ে দিলো। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আমি ভাবছি যাহ বাবা হাসলো কেনো? আমি বিয়ে করেছি শুনে ওর একটুও খারাপ লাগলোনা? আদ্রিয়ান স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বলল
.
– সো আপনার হাসবেন্ডের নামটা কী?
.
এইরে এবার কী বলবো? কী নাম বলবো এখন? ধ্যাত! আমি কোনোরকম আমতা আমতা করে বললাম
.
– ন্ নাম? নাম আমার কী হ্ হবে? আর সেটা জেনে তুমি কী করবে?
.
ও অবাক ফেস করে বলল
.
– বাহ রে আমার এক্স ওয়াইফ এর প্রেসেন্ট হাসবেন্ডের নামটাও জানবো না?
.
আমার মাথায় এখন কোনো নাম আসছে না। যা আসছে তা হলো রহিম, করিম, যদু মধু টাইপ নাম। যাই হোক নিজের হাজবেন্ডের নাম এসব বলতে পারিনা। I have a prestige.. বাট কী করা যায়?
.
– কী হলো বলো?
.
আদ্রিয়ানের কথায় ধ্যান ভাঙলো। কোনোরকমে হাসার চেষ্টা করে বললাম

– ইয়ে মানে… নাম, হ্যা ওর নাম হচ্ছে.. কী জেনো?
.
আদ্রিয়ান সিটে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে বলল
.
– হাজবেন্ডের নাম ভূলে গেছো?
.
আমি অসহায়ভাবে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
.
– কোনো ব্যাপারনা মনে করো আমি ওয়েট করছি।
.
আমি এবার মুখ ভেঙচি দিয়ে সামনে তাকিয়ে সিটে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে বসলাম। হঠাৎ ও বলল
.
– আমি হেল্প করি?
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। ও হেসে বলল
.
– A থেকে Z এর মধ্যেই যেকোনো একটা ওয়ার্ড দিয়েই হবে। মনে করে দেখো।
.
বেশ বুঝতে পারলাম এ এখন টিচ করছে আমাকে তাই মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। ও এবার সিরিয়াস হয়ে কঠোর গলায় বলল
.
– ডাফার। মিথ্যেটাও আজ অবধি সাজিয়ে বলতে শেখেনি। তোমার প্রেসক্রিপশনে খুব সুন্দর করে লেখা আছে অনিমা আবরার জুহায়ের।

– আপনি সেই খবরও রেখেছেন?
.
আদ্রিয়ান শুধু একটা তাচ্ছিল্যের বাকা হাসি দিলো। তারপর আবার বলল
.
– এবার বলো, এক থাকো মানে কী?
.
আমি ভাবছি কী বলবো একে? আমি নিজে থেকে মিষ্টির কথা বলবোনা ওকে। আর একা থাকার কী কারণ বলবো ওকে? এসব ভাবতে ভাবতেই ও ধমকে বলল
.
– কী হলো বলোহ।
.
আমি এবার ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– কেনো বলবো তোমাকে আর কোন অধিকারে জানতে চাইছো ?
.
– মানে?
.
– তুমি তো আমার থেকে দূরে থাকতে চাও তাইনা? ছয় বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ও করোনি আর এখন এসেও দূরে সরিয়ে রাখছো। তাহলে আমার পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে আপনার এতো ইন্টারেস্ট দেখানোর মানে কী?
.
ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি মুচকি হেসে বললাম
.
– যেদিন সত্যিই সম্পূর্ণ অধিকারের সাথে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে জানতে চাইবেন সেদিন বলব সবটা বলবো।
.
আদ্রিয়ান স্হির চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর গাড়ি বায়ে টার্ন নিলো। সারারাস্তা আর কেউ কারো সাথে কথা বলিনি। বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি থামাতে বললাম ওকে। ও গাড়ি থামিয়ে বিল্ডিং টা দেখে বলল
.
– এখানে থাকেন আপনি?
.
– হুম

ও আর কিছু বললোনা, কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছেনা। আমি গাড়ি থেকে নামছিনা কারণ আমি চাই ও নিজেই সিটবেল্ট খুলে আমাকে গাড়ি থেকে নামাক। আমাকে গাড়িতে বসে থাকতে দেখে ও ভ্রু কুচকে বলল
.
– কী হয়েছে কী যাবেনা? নাকি গাড়িতেই থাকার ইচ্ছে আছে?
.
– তুমি সাথে থাকলে থাকতেই পারি।
.
– আপনার সাথে জোক মারার সময় নেই আমার যান।
.
আমিও ওকে অতিষ্ট করার জন্যে জোক মেরে বললাম
.
– জান? ওয়াও! আগেতো শুধু জানপাখি বলতে এখন শুধু জান। সমস্যা নেই চলবে।
.
আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাইরে এসে আমার পাশের দরজা খুলে, তারপর সিটবেল্ট খুলে টেনে নামালো। আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে ওর মুখ দেখে। তাই থুতনিতে হাত রেখে মিটমিটিয়ে হাসছি। সেটা দেখে ও বেশ রেগেই বলল
.
– খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা?
.
– আমি সাথেসাথেই মুখটা সিরিয়াস করে বললাম
.
– আমিকি হাসছি? কই নাতো? আমি যাই হ্যা? বাই

বলেই চলে এলাম, চলে এলাম বলতে কেটে পরলাম আরকি। যে পরিমাণ রেগে আছে বাপরে, এখন এর সামনে থাকা আর এনাকন্ডার সামনে খরগোস ডান্স দেওয়া একি কথা। তাই কোনোরকমে কেটে পরলাম। কিন্তু ভেতরে গিয়ে আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম। ওর গাড়িটা চলে যাওয়ার পরেই ভেতরে গেলাম।
.
এপার্টমেন্টে গিয়ে বেল বাজাতেই সাথি দরজা খুলে দিলো। আমি ভেতরে ঢুকে ওকে বললাম
.
– মিষ্টি ঘুমিয়ে গেছে?
.
– জ্বি ম্যাম?
.
– খাওয়াতে পেরেছো তো
.
– অনেক কষ্টে। কী কী না করতে হয়েছে।
.
তারপর সাথিকে খাবার বারতে বলে আমি রুমে গিয়ে মিষ্টির কপালে একটা চুমু দিলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে টেবিলে সাথি আর আমি একসাথে খেতে বসলাম। সাথি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল
.
– আজ এতো দেরী হলো যে?
.
– রাস্তায় আটকে গেছিলাম
.
সাথি আর কিছু বললোনা বাট খেয়াল করলাম যে ও কিছু একটা বলতে চাইছে, বাট কোনো কারণে বলতে পারছেনা। তাই জিজ্ঞেস করলাম
.
– কিছু বলবে সাথি?
.
ও হয়তো এই প্রশ্নটার ই অপেক্ষায় ছিলো তাই তাড়াতাড়ি বলল
.
– ম্যাম আসলে..
.
– হুম বলো

– মিষ্টি কিন্তু ঐ অপরিচিত লোকটার সাথে একটু বেশিই মিশছে। যদিও মিষ্টি নিজেই যায়। কিন্তু এখন দিনকাল কেমন চলছে তাতো জানেনি তাইনা?
.
আমি মুখে হেসে বললাম
.
– দেখে তো মনে হয় খুব বড়লোক, মানুষ
ও ভালো, কিন্তু চেহারা দেখে কী কিছু বোঝা যায়?
.
আমি এবার হেসে দিয়ে বললাম
.
– লোকটা মিষ্টির বাবা
.
এটা শুনে সাথে আনমনে বলল
.
– তবুও..
.
কিন্তু পরক্ষণেই হুস এলো হয়তো যে আমি কী বলেছি। তাই ওর হাত থেকে চামচ পরে গেলো আর অবাক হয়ে বলল
.
– কীহ? কিন্তু ম্যাম
.
এরপর সাথিকে সবটা খুলে বললাম আর সবটা শোনার পর ও খুশি হয়ে বলল

– আমি তো ভাবতেই পারছিনা এতো সুন্দর একটা ছেলে মিষ্টির বাবা? আমার তো দেখে মনে হয়েছিল ওনার চব্বিশ-পচিশ বছর হবে। দেখে মনেই হয়না ত্রিশ বছর হয়ে গেছে
.
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম সাথির দিকে সাথি থতোমতো খেয়ে গিয়ে বলল
.
– মানে ম্যাম আমি ওসব কিছু মিন করে কিছু বলিনি।
.
আমি ফিক করে হেসে দিলাম সাথির ফেস দেখে, সাথিও হেসে দিলো।
.
হসপিটাল থেকে বিকেলে বেরোতে গিয়ে দেখি অভ্র গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। আমি গিয়ে বললাম
.
– কী হয়েছে?
.
আজকে আবার স্যারের বাবা মা আর জান এসছিলো!
.
– জান?
.
– অব্ বব্ মানে জাবিন
.
আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম। তারপর বললাম
.
– হ্যা তারপর?
.
– স্যার জাবিন ছাড়া কারো সাথে কথা বলেনি, জাবিনের সাথেও বাইরে দাড়িয়ে কোনোরকম কথা বলে কেবিনে গিয়ে দরজাটা লক করে দিয়েছে।
.
আমার এবার মেজাজটা বেশি রকমের খারাপ হলো কী পেয়েছেটা কী এই লোকটা? যা হচ্ছে এবার রীতিমতো বাড়াবাড়ি হচ্ছে। তাই কিছু না বলে হনহনে পায়ে আবার ভতরে ঢুকে গেলাম আদ্রিয়ানের কেবিনে। গিয়ে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ও বলল
.
– আরেহ ডক্টর অনিমা? কেবিনে ঢুকতে গেলে যে নক করে ঢুকতে হয় এই সামন্য ভদ্রতা বোধ নেই?

আমি হাত ভাজ করে বললাম
.
– ওহ তা ভদ্রতাবোধ বুঝি আপনার আছে।
.
ও এবার ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
.
– মানে?
.
– মানে যেই লোকটা নিজের বাবা মায়ের সাথে ভদ্র ব্যবহার করতে জানেনা সে আমাকে ভদ্রতা শেখাচ্ছে?
.
– কী বলতে চাইছো? ক্লিয়ার করে বলো?
.
– আমি এটাই বলতে চাইছি যে এই ছয় বছরে আপনি আপনার ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ সবকিছুই শেষ করে দিয়েছেন।
.
ও এবার চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলল
.
– হোয়াট ডু ইউ মিন?
.
– অহংকার তৈরী হয়ে গেছে আপনার তাইনা? নিজের এতো বড় মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি তৈরী করেছেন, ইউ কে এর বেষ্ট ইন্জিনিয়ার, আর নামকরা একজন সাইনটিস্ট। এতো এতো নাম, খ্যাতি, ফেম সবকিছুর অহংকারে অন্ধ হয়ে গেছেন আপনি। এতোটাই অন্ধ হয়ে গেছেন নিজের সামান্য শিষ্টাচার বোধ ও নেই আপনার মধ্যে
.
আদ্রিয়ান এবার চেচিয়ে বলল
.
– অনি…
.
ছয় বছর পর ও আমাকে অনি বলে ডাকল, বুকের ভেতর ধক করে উঠল,কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমি হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললাম

– চিৎকার করবেন না। ভূল কিচ্ছু বলিনি আমি। সেদিন নিজের বন্ধুদেয কষ্ট দিলেন আর আজ আপনার বাবা মা আপনার সাথে দেখা করতে এসে চোখে পানি নিয়ে ফিরে গেছে। লজ্জা করেনা আপনার নিজের বাবা মায়ের কাদার কারণ হতে?
.
আদ্রিয়ান চুপ করে হাত মুঠো করে দাড়িয়ে আছে। আমি আবার চেচিয়ে বললাম
.
– ছয় বছর আগে আপনি নিঃস্বার্থভাবে সবার জন্যে করেছিলেন ঠিকি কিন্তু আজ আপনি স্বার্থপর হয়ে গেছেন নিজেরটা ছাড়া কারোরটা ভাবছেন না। ছয় বছর আগের একটা ঘটনাকে নিয়ে পরে আছেন এখোনো। সেলফিস হয়ে গেছেন আপনি।
.
আদ্রিয়ান এবার টেবিলের সবকিছু বারি মেরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল
.
– হ্যা হ্যা স্বার্থপর হয়ে গেছি আমি। কেনো হবোনা? তোমারা কী অাশা করো আমার থেকে? না না বলো কী এক্সপেক্ট করো? তোমরা যাই করোনা কেনো আমি সারাজীবন তোমাদের জন্য করেই যাবো? নিজের কথা না ভেবে শুধু তোমাদের জন্যেই করব? করেছিলাম তো নিজের কথা না ভেবে নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ে তোমাদের জন্যেই তো করেছিলাম সব। কিন্তু তার পরিবর্তে কী দিয়েছো তোমরা আমাকে?
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম
.
– আর হ্যাঁ। কী জেনো বলছিলে? সবাইকে কষ্ট দিয়েছি? কেনো? সেই অধিকার শুধু তোমাদের ই আছে? ওরা ওদের কষ্টটা কেদে প্রকাশ করতে পেরেছে তাই সেটা তোমাদের চোখে পরছে তাইনা? কিন্তু আমিতো পারিনি, চিৎকার করে কেদে বলতে পারিনি যে আমারও কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই হয়তো আমার কষ্টটা তোমাদের চোখেই পরেনি।
.
আমি ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছি ওর দিকে ও অাবার বলল
.
– আর হ্যা ছয় বছর আগের ঐ ঘটনাটা তোমার কাছে যতোটা সহজ মনে হচ্ছে না আমার কাছে ঠিক ততোটাই কঠিন। কী যেনো বলো যে অামি বাড়াবাড়ি করছি তাইতো? একটা কথা বলোতো? নিজের মায়ের মুখে নিজের মৃত্যু কামনা শুনেছো কনোদিন?
.
আমি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও আবার বলল
.
– কীহলো বলো? শুনেছো? তোমার নিজের বাবা তোমাকে কোনোদিন বলেছে যে তোমাকে ছুলে তার হাত নোংরা হয়ে যাবে? তোমার সেই বন্ধু যাদের তুমি নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশি মনে করো তাদের মুখেই শুনেছো? যে তোমাকে শত্রু ভাবতেও নাকি তদের লজ্জা করে। আমার কাছ থেকে একটা শব্দ শোনারো প্রয়োজন মনে করে করেনি। একপলক যা দেখেছে তার ওপর ভিত্তি করেই তারা আমার প্রতি তাদের ব্যক্ত করেছে। আর তোমার কথা নতুন করে নাই বা বললাম

আমি মাথা নিচু করে নিলাম। এবার ও বলল
.
– আসলে কী বলোতো? তোমরা আমাকে একটা রোবট মনে করো। তোমরা যা খুশি তাই করতে পারো কিন্তু আমি? আমি কিছু করতে পারবোনা সেই অধিকারই নেই আমার। আমার একটাই কাজ তোমাদের জন্যে করে যাওয়া। আর সেটা না করলেই আমি খারাপ, স্বার্থপর এন্ড ওল
.
আমি চুপ করে আছি। আদ্রিয়ান এবার বলল
.
– আসলে কী বলোতো? আমি তোমাদের মতো আমার কষ্টকে চোখের জল ফেলে প্রকাশ করতে পারিনা। তাই হয়তো সবার কষ্ট চোখে পরলেও আমার কষ্টটা তোমাদের চোখে পরেনা
.
এটা বলেই ও হনহনিয়ে চলে গেলো। আমি ওখানেই বসে পরলাম। সত্যিই তো ওর দিক দিয়ে ভেবে দেখিনি আমরা। হ্যা শুধু এটুকু বুঝেছি যে ও কষ্টে আছে কিন্তু সেই কষ্টের গভীরতা কতোটা তা বুঝতে পারিনি। এসব ভেবে নিজের চোখের পানি মুছে বেরিয়ে গেলাম হসপিটাল থেকে।
.
হসপিটাল থেকে সরাসরি চলে গেলাম মিষ্টিকে আনতে। ভাবছি আজকেও কী আদ্রিয়ান যাবে ঐ পার্কে? ওর তো মুড ঠিক নেই তাহলে? এসব ভেবেই গিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান গিয়ে বসল ঐ বেঞ্চে গিয়ে বসে একটা সিগারেট জালিয়ে টানা শুরু করলো। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মিষ্টি খেলছে, আদ্রিয়ানের দিকে চোখ পরতেই ও খুশি হয়ে ছুটে গেলো। গিয়ে বলল
.
– মিঃ লাওন? তুমি আজকেও এই পচা জিনিসটা খাচ্ছো?
.
আদ্রিয়ান ওর দিকে না তাকিয়ে বলল
.
– দেখ এখন আমাকে একদম বিরক্ত করবিনা যাহ এখান থেকে
.
মিষ্টি নাক ফুলিয়ে বলল
.
– নাহ যাবোনা। তুমি ওটা ফেলো!
.
আদ্রিয়ান এবারেও ওর দিকে না তাকিয়ে বলল
.
– আমি যেতে বলেছি তোকে
.
– আমি যাবোনা মানে যবোনা ! ওটা ফেলো।

আদ্রিয়ান ধমকে বলল
.
– ওই! বললাম না যা এখান থেকে?
.
আদ্রিয়ানের ধমকে মিষ্টি একটু কেপে উঠলো। আদ্রিয়ান চোখ সরিয়ে নিলো। তবুও কাদো কাদো গলায় বলল
.
– তুমি ওটা না ফেললে আমি যাবো না
.
বলেই আদ্রিয়ানের হাত ধরতেই আদ্রিয়ান হাত ঝাড়া দিয়ে বলল
.
– বললাম না যা এখান থেকে!
.
কিন্তু ওর ধাক্কায় মিষ্টি নিচে পরে গেলো। আমি আতকে উঠলাম, যেতে নিয়েও থেমে গেলাম। আদ্রিয়ান মিষ্টির পরে যাওয়ার আওয়াজে তাকিয়ে মিষ্টিকে পরে থাকতে দেখে হাত থেকে সিগারেট ফেলে তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেঞ্চে বসে বলল
.
– কথা শুনিস না কেনো তুই? বললাম এখন আমার কাছে আসিস না। কতোটা লেগেছে এবার খুশি তো?
.
মিষ্টি এবার কাদোকাদো গলায় বলল
.
– তুমি খুশি হয়েছো?
.
আদ্রিয়ান মিষ্টির কোথাও লেগেছে কী না করতে করতে বলল।
.
– হ্যা এটাতো খুশি হওয়ারো ব্যপার তাইনা? খুব খুশি আমি
.
– তাহলে আমি কীকরে খুশি হই?
.
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকালো। আমি জানি সেটা কেনো? আদ্রিয়ান মিষ্টির বেঞ্চে বসিয়ে বলল
.
– অার কোথাও লেগেছে?
.
মিষ্টি মাথা নেড়ে না করল। আদ্রিয়ান মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল

– তোকে ব্যথা দিলাম রাগ হয়না আমার ওপর?
.
মিষ্টি এবারেও মাথা নাড়ল সেটা দেখে আদ্রিয়ান বলল
.
– কেনো?
.
– তুমিতো রোজ আমাকে ব্যথা দাওনা, রোজ আদর করো, আজকে তোমার মন খারাপ তাই না?
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে কোলে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরল। ওর চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা আমার চোখের আড়াল হয়নি। সত্যিই ওর মেয়ে বাকি সবার মতো ওর শুধু বাইরেটা দেখে ওকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। আমাদের মতো ওকে না বুঝে অকৃতজ্ঞের মতো কাজ করেনি। সত্যিই ও আদ্রিয়ানের যোগ্য সন্তান
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে কোলে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরল। ওর চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা আমার চোখের আড়াল হয়নি। সত্যিই ওর মেয়ে বাকি সবার মতো ওর শুধু বাইরেটা দেখে ওকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। আমাদের মতো ওকে না বুঝে অকৃতজ্ঞের মতো কাজ করেনি। সত্যিই ও আদ্রিয়ানের যোগ্য সন্তান। এসব ভেবেই নিরবে কাদছি। আদ্রিয়ান আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ মিষ্টিকে বুকে জরিয়ে রেখে বসে ছিলো। ওর চোখ দিয়ে খুব একটা পানি না পরলেও চোখ ঠিকি ভেজা ছিলো। আর আশ্চর্যজনকভাবে মিষ্টিও একদম শান্ত হয়ে আদ্রিয়ানের বুকে শুয়ে ছিলো। আদ্রিয়ান চলে যেতেই আমি গিয়ে মিষ্টিকে নিয়ে চলে আসি।
.
রাতে মিষ্টি চুপচাপ শুয়ে আছে তাই আমি ওকে জরিয়ে ধরে বললাম
.
– কী হয়েছে?
.
মিষ্টি কাদোকাদো গলায় বলল
.
– মাম্মা আজকে না মিঃ লাওনের মন খুব খারাপ ছিলো।
.
আমি মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম
.
– ওহ তাই আমার মিষ্টি সোনার ও মন খারাপ?
.
মিষ্টির প্রায় কেদে দিয়েই বলল
.
– হুম, ওতো খুব ভালো। তাহলে ও কেনো কষ্ট পাচ্ছে?
.
আমি কিছু না বলে মিষ্টিকে বুকে জরিয়ে ধরলাম। ওকে কীকরে বলব? যে ওর বাবা এতো ভালো বলেই তো সবাই ওকে কষ্ট দিতে পারে। ওর মিঃ লাওনের এতো কষ্টে থাকার কারণ একটাই ও খুব ভালো, একটু বেশিই ভালো। কিন্তু অনেক হয়েছে আর না এবার ওকে ওর সব কষ্ট থেকে মুক্তি দেবার। কিন্তু কীভাবে বলব সেটাই ভাবছি। কিছু একটা ভেবে মিষ্টিকে বললাম
.
– আচ্ছা মিষ্টি তুমি তো একটা বাবাই চাইছিলে তাইনা?
.
মিষ্টি এবার মাথা তুলে বলল।
.
– হুম আমারো একটা বাবাই চাই। কিন্তু আমার তো বাবাই নেই।
.
বলেই মন খারাপ করে মাথা নুইয়ে রইলো। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম
.
– যদি বলি তোমার বাবাই আছে তাহলে?
.
মিষ্টি লাফিয়ে উঠে বসে পড়ল। তারপর বলল

– সত্যিই আমার বাবাই আছে?
.
আমি উঠে ওর সামনে আসাম করে বসে বললাম
.
– হুম আছেতো!
.
– তাহলে আমাদের কাছে থাকেনা কেনো? সবার বাবাই তো ওদের কাছে থাকে।
.
আমি ওকে কোলে তুলে বললাম
.
– তোমার বাবাই একটা কাজে বাইরে গেছে। দুই একদিনের মধ্যেই তোমার কাছে চলে আসবে।
.
– তাহলে তুমি কেনো বলেছিলে যে অামার বাবাই নেই?
.
– যদি তখন তোমাকে বলতাম তাহলে তো তুমি তোমার বাবাইকে খুব মিস করতে তাইনা? আর কষ্ট ও পেতে। তাই বলিনি। কিন্তু এখনতো তোমার বাবাই চলে এসছে তাই বললাম।
.
– বাবাই এসে গেছে?

– হ্যা আর তাড়তাড়ি তোমার কাছেও আসবে।
.
মিষ্টি খুশি হয়ে বলল
.
– তাহলে আমারও সবার মতো বাবাই থাকবে?
.
– হুম থাকবেতো।
.
– সত্যিই?
.
– তিন সত্যিই।
.
মিষ্টি হঠাৎই মুখটা গোমরা করে বলল
.
– আচ্ছা আমার বাবাই কী মিঃ লাওনের মতো হবে?
.
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– তোমার মিঃ লাওন কীরকম?
.
মিষ্টি হেসে বলল
.
– একদম কিউট..রাগী, আর ভালো ও।
.
– কিন্তু তোমার মিঃ লাওন তো খালি গর্জন করে!
.
মিষ্টি কিটকিটিয়ে হেসে বলল
.
– গর্জনটাই তো ভালোলাগে।
.
আমি হেসে দিয়ে মিষ্টিকে জরিয়ে ধরলাম। যাক বাপটা ওর মনমতোই আছে। এদিক দিয়ে প্রবলেম সলভড। এবার মিঃ লাওন থুরি মিঃ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের এবার তোমার পালা।

আজকে সকাল থেকেই মিষ্টির ধুম জ্বর তাই আজ সারাদিন বাড়িতে ছিলাম আমি হসপিটালে যাইনি। বিকেল বেলা মিষ্টিকে সাথির কাছে রেখে আমি পার্কে গেলাম কারণ আমি জানি আদ্রিয়ান আজকেও আসবে। ওর সাথে কথা বলা দরকার আমার। পার্কে গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান বেঞ্চে বসে আশেপাশে তাকাচ্ছে বারবার। বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলাম যে ও মিষ্টিকে খুজছে। আমি গিয়ে চুপচাপ ওর পাশে বসে বাদাম চিবোতে লাগলাম। ও তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেয়ে বলল
.
– একি আপনি?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– এটা পাবলিক প্লেস, যে কেউ আসতে পারে, তোমার কেবিন না যে পার্মিশন নিয়ে ঢুকতে হবে!
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে তারপর সামনে তাকিয়ে বলল
.
– রাইট ইউ আর।
.
বলে উঠে যেতে নিলেই আমি ওর হাত ধরে বসিয়ে বললাম
.
– আমাকে এতো ভয় পান আপনি?

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– আমি ভয় পাই তাও আপনাকে?
.
আমি বাদাম চিবোতে চিবোতে বললাম
.
– তাহলে আমাকে দেখেই পালাতে চান কেনো?
.
– আমি কারো কাছ থেকে পালাইনা।
.
– তাহলে উঠতো কেনো?
.
ও কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো আর আবারো আশেপাশে দেখতে লাগল। আমিও ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে আশেপাশে তাকিয়ে বললাম
.
– কাউকে খুজছো?
.
ও আনমনেই আশেপাশে দেখতে দেখতে বলল
.
– একটা বাচ্চা মেয়ে আসে প্রতিদিন, আজ এলোনা কেনো?
.
আমি মুচকি হেসে বললাম
.
– হয়তো অসুস্হ আছে।
.
হঠাৎই আদ্রিয়ান রাগী গলায় বলল
.
– অসুস্হ মানে কী? এইটুকু বাচ্চার অসুখ করে কীকরে? পরিবারের লোকেরা কী করে?
.
আমি অবাক মুখ করে বললাম
.
– আজব! এমনভাবে বলছো জেনো দশ বারোটা বাচ্চা পালার অভিজ্ঞতা আছে তোমার?
.
– তা নেই। তাই বলে একটা বাচ্চার খেয়াল রাখবে না?
.
– একটা অচেনা বাচ্চার জন্যে এতো মায়া?
.
– কেনো তৈরী হতে পারেনা?
.
– হতেই পারে।
.
ও চুপ করে আছে। আমি নিজেই বললাম
.
– সব ঠিক থাকলে আমাদের ও এমন একটা বাচ্চা থাকতো তাইনা?
.
আদ্রিয়ান এবারেও সামনে তাকিয়ে আনমনে হেসে বলল
.
– উমহুম আরো ছোট হতো। কারণ তোমার বিশ বছর পার হবার আগে ওসব কিছু ভাবতাম না
.
আমি হাসলাম, আমার হাসির আওয়াজে ওর হুস এলো যে ও কী বলছে। তাই উঠে চলে গেলো। আর আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনেই হেসে দিলাম।
পরেরদিন শুক্রবার, আর তাই আমি অাজকে ঐ গ্রামের দাদুর কাছে যাবো, আমি মাঝেমাঝেই যাই সময় পেলে, তবে আজকে মিষ্টির শরীর খারাপ হওয়ার জন্যে সন্ধ্যার আগ দিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে তারপর বেড়োলাম। কেনো জানিনা আজ ঐ দাদুর কাছে যেতে ইচ্ছে করছে খুব তাই লেইট হয়ে গেছে তবুও বেরোলাম। আর সাথিকে বলে দিয়েছি রাতে নাও ফিরতে পারি তাই মিষ্টিকে দেখে রাখতে। ড্রাইভিং করে যেতে যেতে রাত হয়ে গেলো, রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্রামের রাস্তায় ঢুকলাম, আকাশের অবস্হাও ততো ভালো না। কিন্তু আমার চোখ আটকে গেলো পাশের মাঠে। সাথে সাথেই চমকে উঠলাম আমি। কারণ মাঠে গাড়ির উপরে বসে একটা বোতল নিয়ে বসে চুপচাপ ড্রিংক করছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে ভালোকরে তাকিয়ে সিওর হলাম যে এটাই আদ্রিয়ান। তাই ধীরপায়ে ওর কাছে গেলাম। কিন্তু ওর সেদিকে হুস নেই ও একমনে বোতলে চুমুক দিয়ে ড্রিংক করছে। আমিও গিয়ে ওর গাড়ির ওপরে উঠে বসলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসল তারপর বলল
.
– আরেহ বারবার কল্পনায় এসে কেনো বুকে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যাও বলোতো? কষ্ট হয়তো আমার! প্লিজ গো..
.
বুঝতে পারলাম এ আমাকে তার কল্পনা ভাবছে। মানে রোজই আমাকে কল্পনায় দেখে। বাহ ! তবুও আমার কাছে আসবে না? মানে ভাঙবে তবু মচকাবে না। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– যাওনা প্লিজ।
.
আমি ওর এক হাতের বাহু জরিয়ে ধরে বললাম
.
– আমাকে তোমার সত্যিই কল্পনা মনে হয়।
.
– কল্পনাই তো।
.
আমি এবার ওর হাতে একটা চিমটি কেটে বললাম
.
– এবার?
.
ও ওর বাহুতে হাত বুলিয়ে বলল
.
– আউচ! এখন কল্পনাতেও চিমটি কাটছো?
.
– আরে আমি সত্যিই এসছি।
.
ও এবার আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে একটা চোখ ঝাপটা দিলো তারপর বলল
.
– আপনি? এখানে? এখানে কী করছেন?
.
– Same question…
.
– প্রশ্নটা আমি আগে করেছি?
.
– কিন্তু উত্তরটা আমার আগে চাই।

– বলবোনা।
.
– তাহলে আমিও বলবোনা।
.
সেটা শুনে ও আর কিছু না বলে বোতলে চুমুক দিলো। আর আমিও চুপ করে বসে আসি। হঠাৎ করেই দুজনে একসাথে বলে উঠলাম
.
– দাদুর সাথে দেখা করতে এসছি।
.
এবার আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– হঠাৎ?
.
– প্রায় আসি।
.
– কিন্তু কেনো?
.
আমি হালকা হেসে বললাম
.
– তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেক স্মৃতি বয়ে বেড়িয়েছি এই ছয় বছর।
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে আবার সামনের দিকে তাকালো। অামি এবার ওর কাধে মাথা রাখলাম। ওও কিছু বললোনা। কিছুক্ষণ পর ও নিজেই বলল
.
– ওখানে না গিয়ে এদিকে এলে কেনো?
.
– তোমাকে দেখতে পেয়ে চলে এলাম।

– কেনো?
.
– সব কেনোর উত্তর কী তোমাকে বলে দিতে হবে?
.
ও এবারেও চুপ করে রইলো। হঠাৎ করেই বলল
.
– এখোনো ভালোবাসো আমাকে?
.
আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ অবাক তাকিয়ে থেকে তারপর মুচকি হেসে বললাম
.
– নিজের চেয়েও বেশি !
.
– কিন্তু কেনো? এই ছয়বছরে চাইলেই জীবনটা নতুনভাবে শুরু করতে পারতে, ইনফ্যাক্ট এখোনো পারো। নাকি তোমার প্রাণ বাচাতে নিজের জীবন বাচিয়েছি তাই ঋণ শোধ করছো?
.
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
.
– তোমার ঋণ শোধ করার সামর্থ আমার নেই আদ্রিয়ান। আর তোমার চেয়ে ভালো আমাকে কে বোঝে?

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আমি এবার ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– অনেক তো হলো আদ্রিয়ান, এবার সব ভোলার একটা চেষ্টা করো। আমরা সবাই তোমার অপেক্ষায় আছি। প্লিজ!
.
ও আমার হাত ছাড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো, আমিও রাগ করে অন্যদিকে মুখ করে বসে আছি। দুজনের মধ্যেই বেশ নিরবতা বিরাজ করছে। হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো আর বৃষ্টির বেগ এতোই বেশি ছিলো যে আমরা সাথে সাথেই ভিজে গেলাম। আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে বলল
.
– তাড়াতাড়ি দাদুর বাসায় চলো, ভিজে গেছি গাড়িয়ে থাকা যাবেনা।
.
বলেই গাড়ি থেকে ওর ব্যাগ টা বেড় করলো। কিন্তু আমাকে গাড়ির ওপরে ঠায় বসে থাকতে দেখে বলল
.
– আরেহ? চলো? ভিজে গেছো পুরো।
.
কিন্তু আমি তবুও বসে আছি, ও এবার আমার হাত ধরে টেনে গাড়ির ওপর থেকে নামিয়ে বলল
.
– সমস্যা কী তোমার? ওমন ঘার বাকার মতো বসে ছিলে কেনো?

আমি ওর হাত ছাড়িয়ে হাত ভাজ করে বললাম
.
– যাবোনা আমি তোমার সাথে।
.
আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– একটাও বারতি কথা না বলে চুপচাপ চলো।
.
– কেনো যাবো? আর আমার যা খুশি হোক তাতে তোমার কী? তোমার কাছে তো আমার কোনো গুরত্বই নেই তাইনা? তাহলে
.
আদ্রিয়ান এবার নিজের কপালে আঙ্গুল স্লাইড করে বলল
.
– তুমি কী যাবে নাকি না?
.
– নাহ।
.
আদ্রিয়ান আর কিচ্ছু না বলে সোজা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
.
– সোজা কথায় কোনোদিনও শোনোনা তুমি। বছর ছয়টা পার হয়ে গেলেও মানুষটা আমি একই আছি
.
বলেই আমাকে কোলে করে নিয়ে হাটতে লাগল। হাটতে হাটতে দাদুর দোকানের যার সাথে জোরা লাগিয়ে তার থাকার চালাঘর আছে সেখানে গিয়ে আমাকে কোলে নায়েই দাদুকে ডাকতে লাগল। দাদু এসে আমাদের দেখে খুশি হয়ে বলল
.
– আরেহ আদর দাদুভাই তোমরা এতো রাতে?
.
আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– তোমার সাথে দেখা করতে এসে ভিজে গেছি। এবার ভেতরে তো যেতে দাও
.
এরপর আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলো, কথা বলতে বলতে চা পাউরুটি খাইয়ে তারপর আমাদের ভেতরের চালা ঘরে থাকতে দিয়ে, উনি দোকানে শুতে চলে গেলো। আমি কোনো পোশাক না আনলেও আদ্রিয়ান জিন্স আর শার্ট এক্সট্রা এনেছিলো রাতে থাকবে বলে। তাই ও নিজে শুধু জিন্স টা পরে আমাকে শার্ট টা পরতে দিলো। বহুত ইতোস্তত করে শার্ট টা পরলাম। প্রায় হাটু অবধি আমার, ওর সামনে এসে টানাটানি শুরু করতেই ও আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল

Infinite Love part 71+72+73+74

– এমনভাবে টানলে এটা বড় হয়ে যাবেনা। আর এইভাবে তো তোমাকে আমি প্রথম দেখছি না তাইনা?
.
– অসভ্য
.
বলেই আমি নিচে বেছানো তোষকে বসে পরলাম
.
কিন্তু জানালার ধারে গিয়ে আদ্রিয়ান সিগারেট টানতে লাগল। আমি গিয়ে সেটা ফেলে দিলাম। ও ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো, তারপর আরেকটা জালালে আমি সেটাও ফেললাম, তার সাথে প্যাকেট ও বাইরে ফেলে দিলাম, ও রাগে গজগজ করতে করতে তোষকের ওপর শুয়ে পরল, আমি কিছুক্ষণ মিটমিটিয়ে হেসে গিয়ে ওর বুকের ওপর শুয়ে পরলাম। ও কয়েকবার চেষ্টা করেছে সরানোর অামি ততোই জোরে জরিয়ে ধরেছি। ও আর কিছু বলেনি। তবে মাঝরাতে ঘুমের ঘোরের ফিল করেছি ও আমার গালে কপালে চুমু দিয়ে বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কিছু বলছে, কিন্তু কি বলছে বুঝতে পারছিনা। তাই ঘুমের ঘোরেই ওকে জরিয়ে ধরে আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
.
পরেরদিন দাদুর ওখান থেকে ওর সাথেই হসপিটালে গেলাম। আমার গাড়ির দায়িত্য এবারেও অভ্রকে দিয়েছে ও। কিন্তু সারা রাস্তা কেউ কারোর সাথে কথা বলিনি দুজন দুজনকে আড় চোখে দেখেছি। হসপিটালে গিয়েও দুজন দুজনের মতো কাজে চলে গেলাম। হসপিটালে কাজ থাকায় প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো বেড়োতে বেড়োতে, হসপিটাল থেকে বেড়োতে গিয়ে দেখি অভ্র আর আদ্রিয়ান দাড়িয়ে কথা বলছে। আমাকে দেখে অভ্র কিছু বলবে তার আগেই কোথা থেকে মিষ্টি ছুটে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– মাম্মা কাল রাত থেকে কোথায় ছিলে তুমি হ্যা? সকালে শুধু একটুখানি কথা বলেছো সারাদিনেই ফোন করোনি কতো মিস করেছি জানো?
.
আমি মিষ্টির এই হঠাৎ আগমনের জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না, পুরো হতোভম্ব হয়ে গেছি। মিষ্টি আবার বলল

– কীহলো মাম্মা বলো?
.
এরমধ্যেই পেছন পেছন সাথি এসে বলল
.
– দেখুন না ম্যাম এতো বায়না করছিলো আসার জন্যে শেষমেস আসতেই হলো।
.
আমি একবার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে ভীত চোখে সামনে দাড়িয়ে থাকা আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি পেছনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখে বলল
.
– আরেহ মিঃ লাওন? তুমিও এখানে আছো? তোমাকে বলেছিনা আমার মাম্মার সাথে দেখা করিয়ে দেবো এটাই আমার মাম্মা।

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর চোখ সরিয়ে কিছু একটা ভেবে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো। এরপর আমার দিকে তাকালো, ওর ছলছরে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, নিচের ঠোটটা প্রচন্ড রকম কাপছে। আমি ভীত চোখে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও একবার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে তারপর প্রচন্ড রাগান্বিত চোখে অভ্রর দিকে তাকালো…

Infinite Love part 79+80+81+82