Infinite Love part 79+80+81+82

Infinite Love part 79+80+81+82
Writer: Onima

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর চোখ সরিয়ে কিছু একটা ভেবে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো। এরপর আমার দিকে তাকালো, ওর ছলছরে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, নিচের ঠোটটা প্রচন্ড রকম কাপছে। আমি ভীত চোখে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও একবার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে তারপর প্রচন্ড রাগান্বিত চোখে অভ্রর দিকে তাকালো। জেনো চোখ দিয়েই গিলে খাবে। অভ্র একটা ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান আবার আমার দিকে তাকালো ওর ওই আবেগে জলজল করা রাগে লাল হওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না চোখ নামিয়ে নিলাম। মিষ্টি মাথা উচু করে একবার আমার দিকে তাকালো একবার আদ্রিয়ানের দিকে কী হচ্ছে হয়তো বুঝতে পারছেনা। সাথি আদ্রিয়ানকে দেখেই বুঝে গেলো দুই হাত কচলাচ্ছি নিচের দিকে তাকিয়ে। আদ্রিয়ান এবার মিষ্টির দিকে তাকালো, ওর দৃষ্টি আজ অতিরিক্ত স্হির, চোখ দিয়ে জেনো এখনি পানি গড়িয়ে পরবে। মিষ্টি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ধীর পায়ে গিয়ে মিষ্টির সামনে হাটু ভেঙ্গে বসল তারপর মিষ্টির দুইকাধে হাত রেখে বলল

– ও সত্যিই ত্ তোর মাম্মা?
.
মিষ্টি হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে আদ্রিয়ানের গালে হাত দিয়ে পানি মুছে ভ্রু কুচকে বলল
.
– তুমি কাদছো কেনো? আজকেও মন খারাপ তোমার?
.
আদ্রিয়ানে কিছু না বলে মিষ্টিকে জরিয়ে ধরে, চোখে জমে থাকা পানি ছেড়ে। মিষ্টি ও ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে আদ্রিয়ানের গলা জরিয়ে কাদোকাদো গলায় বলল
.
– কাদছো কেনো তুমি?
.
আদ্রিয়ান মিষ্টিকে ছেড়ে মিষ্টির দিকে তাকালো, মিষ্টি এবারেও ওর চোখের পানি মুছে দিলো। আদ্রিয়ান মিষ্টির দু গালে চুমু দিয়ে আবারো নিজের সাথে জরিয়ে ধরল। অনেক্ষণ ওকে বুকে জরিয়ে রেখে তারপর উঠে একবার আমার দিকে তাকালো, এরপর অভ্রর কাছে গিয়ে বলল
.
– ওর প্রত্যেকটা সেকেন্ডের ইনফরমেশন দেয়ার কথা ছিলো তোমার। এটা কেনো বলোনি?
.
অভ্র মাথা নিচু করে আছে। আমার প্রতিটা সেকেন্ডের ইনফরমেশন রাখতো ওও? আদ্রিয়ান ধমকে বলল
.
– স্পিক অাপ।
.
ওর ধমকে উপস্হিত সবাই কেপে উঠলো। আমি ভাবছি আমার জন্যেই তো বলেনি, শুধু শুধু বেচারা বকা খাচ্ছে তাই সাহস জুগিয়ে বললাম
.
– ও্ ওর কোনো দোষ ন্ নেই আমিই প্রমিস করিয়েছিলাম ও্ ওকে।

আদ্রিয়ান একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর অভ্রকে বলল
.
– তোমাকে পড়ে দেখছি আগে ওর সাথে বোঝাপড়া সেড়ে নেই।
.
তারপর ও মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলল
.
– তুই তোর অভ্র আঙ্কেলের সাথে থাক, আমি তোর মাম্মাকে নিয়ে পরে আসছি হুম?
.
মিষ্টি কিছু বুঝলো না তবুও হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। মিষ্টিকে অভ্রর কোলে দিয়েই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে হাটা দিলো। হাত এতো জোরে ধরেছে মনে হচ্ছে ভেঙ্গে যাবে, তাও আমি কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারছিনা। তবে এটুকু বুঝতে পারছি যে আজ আমার কপালে শনি, রবি, সোম, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র সব আছে শুধু মঙ্গল বাদে। ও আমাকে সোজা নিয়ে ওর গাড়ির ফ্রন্ট সিটে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করল। এতো জোরে ড্রাইভ করছে আমার মনে হচ্ছে যে এক্ষুণি এক্সিডেন্ট হবে। মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান স্পিডটা এ্ একটু কমাও ভ্ ভয় করছে আমার।
.
উত্তরে ও স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো, ভয়ে আর কিছু বললাম না। রাগে থরথর করে কাপছে ওও। আমি তবে ওর ছলছলে চোখ আর ও হঠাৎ একটা বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি থামালো, আর তারপর আমাকে টেনে বার করে ভেতরে নিয়ে গেলো, ভয়ে আমার পরাণ পাখি যায় অবস্হা, এরপর একটা এপার্টমেন্টের ভেতরে নিয়ে গিয়ে গেলো হয়তো ওর এপার্টমেন্ট। ওখানে একটা রুমে নিয়ে আমাকে দাড় করালো, আমি ওর দিকে তাকানোর সাথে সাথেই। ঠাস করে আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়টা এতোই জোরে মেরেছে যে আমি সোফায় পরে গেলাম। আওয়াজটাই বলে দিচ্ছে যে থাপ্পড়টা কতো জোরে মেরেছে। এই প্রথম আমকে মারলো ও এর আগে দুবার হাত উঠালেও মারেনি। আমি গালে বুলিয়ে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– তুমি…
.
আর কিছু বলার আগেই আবার একটা থাপ্পড় পরলো আমার গালে। এবারের টা আগের বারের চেয়েও বেশি জোরে ছিলো, আওয়াজ টা জেনো এই বন্ধ ঘরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এবার একটা রাগ লাগল আমার, আমি রেগে উঠে দাড়িয়ে বললাম
.
– দেখো তুমি কিন্তু..
.
এবারেও কথাটা শেষ করার আগেই আমার গালে আরেকটা পরল। এবারেও হুমড়ি খেয়ে সোফায় পরে গেলাম, ঠোটের কোণে রক্তও অনুভব করলাম। এবার আর কিছু না বলে গালে হাত দিয়ে ছলছলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। ও নিজের চুলগুলো নাড়ছে আর মাঝে মাঝে নাক ঘষছে, হয়তো কিছুতেই রাগ কমাতে পারছেনা, আর আমি মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে বসে আছি। ভীষণ জালা করছে, এক গালে এতো জোরে জোরে তিন তিনতে থাপ্পড় মারলে গাল অার গাল থাকে? আদ্রিয়ান হঠাৎই আমার হাত ধরে একটানে দাড় করিয়ে দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল
.
– আর কতো? আর কতোবার মারবে আমাকে? আর কতোবার? আমার নিজের একটা পাঁচ বছরের মেয়ে আছে, অথচ আমি জানিই না? আর সেটাও ইচ্ছাকৃতভাবে আমার থেকে গোপন করা হয়েছে? কেনো করলে এটা? হোয়াই?

বলেই ঝাড়া দিয়ে দূরে সরিয়ে বলল
.
– আগে যেই আঘাতগুলো করেছিলে সেগুলো কী কম ছিলো? যে এখন নতুন করে আবার আরেকটা আঘাত করলে? কী এমন অপরাধ ছিলো অামার? যে এতো বড় একটা সত্যিকে আমার আড়াল করে রাখলে? আমার নিজের সন্তানের থেকে এতোগুলো বছর আমাকে দূরে সরিয়ে রাখলে?
.
আমি চুপ করে আছি ও আবার আমার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল
.
– কী হলো বলো কেনো করলে? একজন বাবার কাছে এটা কতোটা কষ্টের সেটা বোঝো তুমি? How could you do this..
.
আমি এবার ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম
.
– কেনো বলবো তোমাকে আমি? সেই রাতের পর একবারো জানতে চেয়েছো আমি কেমন আছি? একবারো জানতে চেয়েছো আমার মনের মধ্যে কী চলছে? সেদিন রাতের ঘটনার পর একবারো বুঝতে চেয়েছো আমার মনের ওপর দিয়ে কী চলছে? বরং আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে তুমি?
.
এটুকু বলে একটা শ্বাস নিলাম, ও চুপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি চোখের পানিটা মুখে আবার বললাম

– আর সেদিনের ঘটনাটা তো তোমার কাছে একটা এক্সিডেন্ট তাইনা? খুব সুন্দরভাবেই তো আমার সানে এনাউস করে গেছিলে যে it was just an accident ! যদি সেই ঘটনাটা তোমার কাজে এক্সিডেন্ট হয় তাহলে তো মিষ্টিও তোমার কাছে একটা এক্সিডেন্ট
.
ও এবার ধমকে বলল
.
– Shut up..!
.
আমি আরো জোরে চিৎকার করে বললাম
.
– No I will not…! আজ তোমার কষ্ট হচ্ছে কারণ আমি তোমাকে আমাদের সন্তান সম্পর্কে কিছু বলিনি। আমারো কষ্ট হয়েছিলো যখন আমাদের প্রথম কাছে আসটাকে তুমি একটা এক্সিডেন্ট বলেছিলে। একজন বাবা হিসেবে তুমি যতটা কষ্ট পাচ্ছো একজন স্ত্রী হিসেবৈ ঠিক ততোটাই কষ্ট পেয়েছিলাম আমি।
.
আদ্রিয়ান এবার একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
.
– ওও তাহলে ঐ কথাটার বদলা নিয়েছো আমার থেকে?

– নাহ শুধু এটুকু বলতে চাচ্ছি যে ঐ ঘটনার পর মিষ্টির সম্পর্কে জানার কোনো অধিকার ছিলোনা তোমার।
.
আদ্রিয়ান এবার ঝাড়ি মেরে বলল
.
– হ্যা সেই! আমি মুখে কী বললাম সেটাই তো বড় তোমার কাছে। সারাজীবন আমার মুখের কথা ধরেই তো পরে ছিলে।
.
আমি কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিলাম। আদ্রিয়ান এবার ওর চুলগুলো হাত দিয়ে একটা উল্টে ধরে তারপর বলল
.
– আমার বলা ঐ একটা কথা তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলো বলে তুমি এতো বড় একটা সত্যিই আমার থেকে আড়াল করলে? আমার নিজের সন্তানের কথা আমাকে জানতে অবধি দিলেনা? এতো বড় একটা শাস্তি দিলে যার চেয়ে বড় শাস্তি একজন বাবার কাছে হতেই পারেনা। আমার নিজের সন্তানকেই আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে। তাহলে একটা কথা বলোতো? তোমরা আমাকে যেই আঘাত আমাকে করেছো, যেইসব কথা আমাকে বলেছো তারপরেও আমি তোমাদের কাছেই পরে থাকবো সেই এক্সপেক্টটেশন তুমি কীকলে করো? বলোহ?
.
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। ও আবার বলল
.
– আমার একটা কথার ধাক্কা তুমি মানতে পারোনি, ছয় বছর ধরে সেটাই নিয়ে বসে আছো। তবুও তুমি আশা করছো আমাকে যেসব বলেছো সেগুলো আমি ভূলে যাই। আমি আমাদের কাছে আসাটাকে ডিমান্ড বলেছি সেটা তোমার গায়ে লেগেছে, অথচ আমার কাছে আসাটাকে তুমি ডিমান্ড বলেছিলে, অামার ভালোবাসাকে মিথ্যে অভিনয় বলেছিলে, আমার পরানো বেসলেট টা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলে, নিজের হাতে আমার বুকে গুলি চালিয়েছিলে সেসব কিচ্ছু না?

আমার চোখ দিয়ে একফোটা পানি গড়িয়ে পরল।
.
– আর কী যেনো বলছিলে? আমি তোমার খবর নেইনি তাইতো? রোজ অভ্র ফোন করে তোমার খোজ নিতো কেনো জানো? কারণ আমি বলেছি, আর ও যেই প্রশ্নগুলো তোমাকে করতো সেগুলো মূলত অামারি প্রশ্ন ছিলো। অভ্র তোমাকে বলেছিলো আমি ইউ কে চলে যাচ্ছি সেটা আমি শুনেছি। আমার মনে হয়েছিলো তুমি অামাকে আটকাবে, কিন্তু একসপ্তাহ আগে থেকে জানার পরেও তুমি আমাকে আটকানোর কোনো চেষ্টা করোনি। তুমি জানো প্লেনে ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তোমার অপেক্ষা করেছিলাম, কিন্তু তুমি আসোনি আমাকে আটকাতে। সেদিন আরো একবার হতাশ হয়েছিলাম। বিশ্বাস করো! যদি একবার আমার কাছে এসে আমাকে বলতে আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে যেওনা আমি যেতামনা সত্যিই যেতামনা কিন্তু তোমার না আশাটা আমাকে আরো বেশি কষ্ট দিয়েছে।
.
আমি নিরবে চোখের পানি ফেলছি আর চুপচাপ ওর বলা কথাগুলো শুনছি। ও আবার বললো
.
– কিন্তু তবুও মাঝেমাঝে এতোই কষ্ট হতো যে ইচ্ছে করতো ফিরে আসি তোমার কাছে কিন্তু…
.
এটুকু বলেই একটানে শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে বুকের বা পাশের সেই দাগটা দেখিয়ে বলল
.
– কিন্তু আয়নার সামনে দাড়িয়ে যতোবার এই দাগটা দেখতে পেতাম। ততোবার সেটা তোমার দেওয়া আঘাত গুলোর কথা মনে করিয়ে দিতো, পোড়াতো ভেতরটা খুব। আর সেই জলন আমাকে তোমার কাছে ফিরতে দিতোনা।
.
আমি চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলাম ও আবারো বলল

– কিন্তু আজ? আজ তুমি আবার আমাকে কষ্ট দিলে। আমার বলা জাস্ট একটা কথার জন্যে এতো বড় শাস্তি দিলে আমায়? আমিহ আমার সন্তানের আসার কথা জানতে পারার যেই খুশি সেই খুশি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তোমার পেটে কান পেতে নিজের সন্তানের উপস্হিতি অনুভব করতে পারিনি, মাঝরাতে উঠে তোমার পেতে কান পেতে নিজের সন্তানের সাথে কথা বলার পাগলমো করতে পারিনি। নিজের সদ্যজাত মেয়েকে কোলে তুলে আদর করার অনুভূতি অনুভব করতে পারিনি। ওর আদো আদো কন্ঠে বাবা ডাক শুনতে পারিনি আমি, ওর কচি কচি হাত ধরে ওকে হাটা শেখাতে পারিনি আমি। আর এই সবকিছু থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছো তুমিহ। আমার একটা কথার শাস্তি যদি এতো বড় হতে পারে তাহলে তোমারা যা যা করেছো তার পর আমি তোমাদের দূরে সরিয়ে ভুলটা কী করেছি বলোহ?
.
আমি এবার হালকা আওয়াজ করে কেদে দিলাম। ও এবার চোখের কোণে জমা পানি মুছে বললো
.
– তোমাকে ভালোবেসে সারাজীবণ শুধু কষ্টই পেয়েছি। প্রথম তিন বছর এক জ্বালায় জলেছি, এর পরের ছয় মাস আরেক জালায় জলেছি, এরপরের ছয় দিন অন্য এক জালায় জলেছি, এরপরেই ছয় বছর আরো এক জালায় জলেছি। আর অাজ ফিরে এসেও এখন এক নতুন জ্বালায় জলছি। তোমার ভালোবাসা আমাকে শুধু কষ্টই দিয়ে আর কিচ্ছু না।
.
আমি অসহায় চোখে ওর দিকে তাকালাম

– এভাবে একটু একটু করে না মেরে একবারেই মেরে ফেলো, তুমিও শান্তি পাবে আর আমিও।
.
বলেই টি টেবিল থেকে দুইটা বিয়ারের বোতল নিয়ে চলে গেলো ব্যালকনিতে, আমিও সোফায় বসে চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। ওর প্রতিটা কথা ওর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে একদম। কিন্তু আমার দিক থেকেও তো অনেক কথাই তো ওর এখোনো অজানা। এসব ভেবেই চুপচাপ চোখের পানি ফেলছি। এভাবেই ঘন্টা দুই পার হয়ে গেলো। নাহ আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে। এসব ভেবেই দৌড়ে গেলাম ব্যালকনিতে, গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান দেয়ালে হেলান দিয়ে এক পা ছড়িয়ে আরেক পা মেলে দিয়ে বিয়ার খাচ্ছে। আমি গিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসে বললাম
.
– আমার তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।
.
– Get lost..
.
– কথাগুলো তোমার জানা দরকার
.
ও বোতলে একটা চুমুক দিয়ে বলল
.
– আমার সবচেয়ে বেশি যেটা জানার দরকার ছিলো সেটাই যখন বলোনি তখন আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
.
– প্রয়োজন আছে।
.
– আমি শুনতে চাইনা।
.
গেলো মাথাটা গরম হয়ে, শুনতে চাইনা মানে কী? নিজে যা খুশি শুনিয়ে দিলো আর আমারটা শুনবে না? রাগে পাশে রাখা বিয়ারের বোতলটা হাতে তুলে ছিপনি খুলে মুখে দিয় ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম। কিন্তু খাওয়ার পরেই হলো বিপদ, জোরে জোর‍ে কাশতে লাগলাম। আমার কাশির আওয়াজে আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকালো, তাকিয়ে এই অবস্হা দেখে এক ঝটকায় আমার হাত থেকে বিয়ারের বোতলটা নিয়ে বলল
.
– What are you doing damn it! বিয়ার খাচ্ছো তুমি?

কিন্তু কাশি থামতেই আমার মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করলো, সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে। আমি ওর হাত থেকে বোতল নিয়ে আবারো ঢকঢক করে কতোখানি খেয়ে নিলাম, বেশ ভালো লাগলো তাই আবার খেতে নিলেই ও ওটা টেনে নিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। আমি নিতে গেলে ওটা দূরে সরিয়ে নিলো। আমি ঠোট ফুলিয়ে বললাম
.
– দাওনা ওটা। খুব টেষ্টি তো..
.
ও চোখ ছোট ছোট করে বলল
.
– এটা তোমার কাছে টেষ্টি মনে হলো?
.
আমি হালকা হেসে বললাম
.
– হুম দাও না।
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে হতাশভাবে তাকিয়ে বললো
.
– ব্যাস। এর হয়ে গেছে?
.
আমি চোখ পিটপিট করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– কী হয়ে গেছে?
.
আদ্রিয়ান রাগে গজগজ করতে করতে বলল
.
– কে বলেছিলো এটা খেতে?

আমার সবকিছু কেমন লাগছে আর আদ্রিয়ান ও বকছে। তাই কাদোকাদো হয়ে বললাম
.
– রাগ করে খেয়ে নিয়েছি।
.
আদ্রিয়ান ধমকি দিয়ে বলল
.
– Shut Up !
.
ওর ধমকে খুব কষ্ট লাগল, কান্না আটকাতেনা পেরে শব্দ করে বাচ্চাদের মতো কেদে দিলাম। সেটা দেখে ও অবাক হয়ে বলল
.
– আরেহ কাদছো কেনো?
.
আমি কান্না থামিয়ে ওর দিকে ঠোট ফুলিয়ে তাকিয়ে বললাম
.
– তুমি খালি আমাকে বকো।
.
আদ্রিয়ান এবার আমাকে এক হাতে বুকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– ওলেহ বাবা কাদেনা। আর বকবোনা। তবুও তোমার এই ফ্যাচফ্যাচানি থামাও প্লিজ!
.
– কী বললে? ( ভ্রু কুচকে )
.
– অ্ আই মিন কান্না থামাও প্লিজ।
.
আমিও তবুও ওর বুকে শুয়ে নাক টেনে কাদছি, ও আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
.
– এক বাচ্চার মা নিজেই বাচ্চা হয়ে গেছে।
.
এটুকু বলে আমাকে একহাতে বুকে জরিয়ে রেখে কাউকে ফোন করে বলল
.
– মিষ্টিকে আজকে তোমার কাছে রেখে দাও, বলো ওর মাম্মা কাল সকালে আসবে, আর কান্নাকাটি করলে বলো কাল ওর জন্য সারপ্রাইজ আছে।
.
এটুকু বলে ও ফোন রেখে দিলো, আমি ওর দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে ছিলাম, ও ফোন রাখতেই আমি বললাম
.
– আমি এখনি মিষ্টির কাছে যাবো।

– ওর কাছে এভাবে গেলে ও হাসবে তোমাকে নিয়ে।
.
– কেনো?
.
– চুপ!
.
আমি আবারো কেদে দিয়ে বললাম
.
– তুমি আবার বোকছো আমাকে?
.
– আচ্ছা সরি সরি আর বোকবো না কান্না থামাও
.
বলেই ওর বুকে জরিয়ে ধরল আমাকে। আমি ওর বুক দেকে মাথা সরানোর চেষ্টা করতে করতে নাক টেনে টেনে বললাম
.
– ছাড়ো তুমি আমাকে, বাসতে হবেনা ভালো আমাকে, আমাকে ভালোবেসে তো শুধু কষ্টোই পেয়েছো তাইনা? আমাকে ভালোবেসে আর কষ্ট পেতে হবেনা, ছেড়ে দাও আমায়।
.
বলে ওকে ছাড়িয়ে উঠতে গেলেই ও টেনে ওর বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল আমাকে। কিন্তু কিছু বললোনা। আমি ওর শার্টের ছেড়া বোতামগুলো নাড়তে নাড়তে বললাম
.
– জানো তুমি যখন আমাকে দূরে সরিয়ে রাখছিলে কতো কষ্ট হচ্ছিলো আমার? তোমার ওপর অভিমান থাকলেও অভ্র যখন ফোন করতো ঠিক কৌশলে তোমার খবর নিতাম আমি। তুমি যেদিন ইউকে চলে যাচ্ছিলে সেদিনি আমি জানতে পারি আমি প্রেগনেন্ট।
.
আদ্রিয়ান হাত আলগা করে বলল
.
– তবুও জানাওনি আমাকে?
.
– জানাতে চেয়েছিলাম তো, জানার পরেই আমি দৌড়ে গেছিলাম এয়ারপোর্টে, কিন্তু ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম তোমার ফ্লাইট আরো আগেই বেড়িয়ে গেছে, জানো সেদিন ওখানে বসে অনেক কেদেছিলাম, খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমার। মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু বাচ্চাটার জন্যে পারিনি। ওর জন্যে বাচতে হয়েছে আমাকে তোমাকে ছাড়াই।

আদ্রিয়ান চুপ করে রইলো, আমি অাবার বললাম
.
– তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আমিও একা থাকা শুরু করেছি। কারো সাথে থাকতাম না, কারণ আমার জন্যেই তো সবার থেকে দূরে চলে গেছিলে তুমি তাই আমিও ওদের সাথে থাকিনি। একাই থেকেছি। খুব কষ্ট হতো ঐ সময়। কিন্তু তবুও একাই থেকেছি। খুব মনে পরতো তোমার কথা
.
আদ্রিয়ান শক্ত করে আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
.
– তারপর
.
আমি নাক টেনে আবারো বললাম
.
– ডক্টর বলেছিলো কম বয়সে কনসিভ করা আর শরীর দূর্বল থাকায় নাকি আমার প্রেগনেন্সিতে প্রচুর কম্প্লিকেশন ছিলো। ডেলিভারিতেও নাকি মারাত্নক কিছু হতে পারতো। প্রেগনেন্সির ঐ সময়টাতে খুব কষ্ট হতো, নিজেকে খুব অসহায় মনে হতো কারণ তুমি ছিলেনা আমার কাছে। আর ডেলিভারির সময় নাকি আমার বাচার চান্স খুব কম ছিলো, খুব কষ্ট হচ্ছিলো তখন চোখের সামনে শুধু তোমার মুখটাই ভেসে উঠছিলো। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। আমার নাকি ব্লিডিং প্রচুর হয়েছিলো, রক্তও নাকি পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাচার চান্স নাকি ছিলোই নাহ। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসছিলাম।
.
– এসব আগে কেনো জানাওনি আমায়?
.
– অভিমান ছিলো তোমার ওপর, কেনো চলে গেছিলে আমাকে ছেড়ে? কিছু ভূল না হয় করে ফেলেছিলাম তাই বলে এভাবে ছেড়ে চলে যাবে? আমি..
.
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে ‘হুস’ বলে চুপ করিয়ে দিলো আমাকে। এরপর সোজা কোলে তুলে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো এরপর আমার পাশে শুয়ে আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– সত্যিই ভূল করেছি অামি, আমার তোমাকে এভাবে ছেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি। আমি ভেবেছিলাম আমার আর তোমার পরিবারের লোক, অভ্র ওরা সবাই মিলে ভালো রাখবে তোমাকে। কিন্তু আমিতো জানতেই পারিনি যে এখানে আমার মায়াবীনি এতোটা কষ্ট সহ্য করেছে। এতো কিছু গেছে তোমার ওপর দিয়ে। I am sorry..
সত্যিই ভূল করেছি অামি, আমার তোমাকে এভাবে ছেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি। আমি ভেবেছিলাম আমার আর তোমার পরিবারের লোক, অভ্র ওরা সবাই মিলে ভালো রাখবে তোমাকে। কিন্তু আমিতো জানতেই পারিনি যে এখানে আমার মায়াবীনি এতোটা কষ্ট সহ্য করেছে। এতো কিছু গেছে তোমার ওপর দিয়ে। I am sorry..

আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে নাক টেনে কাদতে কাদতে বললাম
.
– আমাকে ছেড়ে আবার চলে যেওনা প্লিজ। খুব কষ্ট হয় আমার। আর পারবোনা তোমাকে ছাড়া থাকতে। প্লিজ আমাকে একা ফেলে যেওনা আর।
.
আদ্রিয়ান আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল
.
– যাবোনা। আর কোনোদিন যাবোনা। একবার ছেড়ে গিয়ে যেই ভূল করেছি সেই ভূল আর কোনোদিন করবোনা। অনেক বড় শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। সত্যিই যদি তখন তোমার কিছু হয়ে যেতো? তখন নিজেকে কীকরে ক্ষমা করতাম আমি? আমার মেয়ের সামনে কীকরে দাড়াতাম? কী জবাব দিতাম ওকে? কীকরে বলতাম ওকে যখন ওর মার আমাকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিয় তখন আমি ওর কাছে ছিলাম না।
.
এইটুকু বলে ও একটা শ্বাস নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে আমাকে ওর বুকে জরিয়ে নিয়ে বলল
.
– আমার সন্তান আমার অংশকে জন্ম দিতে গিয়ে তুমি হসপিটালের বেডে পরে মৃত্যুর সাথে লড়ছিলে কিন্তু আমি? আমি তোমার পাশে থেকে তোমাকে সাহস দেয়ার পরিবর্তে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছিলাম। ঠিকি বলেছো তুমি মিষ্টির সম্পাদক জানার কোনো অধিকারই ছিলো নাহ।

ওর কথা শুনে কষ্ট লাগছে। সত্যিই বলতে তো ও ততোটাও দোষী নয় যতটা নিজেকে মনে করছে। ভূলতো আমি করেছি সামান্য একটা কারণে ওর থেকে সত্যিটা গোপন করে। কিন্তু কিছু বললাম না কেনো জানি আজ ওর কথাই শুনতে মন চাইছে। ও আমাকে বুকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল
.
– তবে তোমাকে ছাড়া একটা মিনিটও ভালো ছিলাম না। রাতে ঘুম আসতে চাইতোনা। যতটুকু সময় অবসর থাকতাম দম আটকে আসতো, একটা চাপা কষ্ট কাজ করতো, নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করতো। আর সেইজন্যেই সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকার চেষ্টা করতাম। আর যেটুকু সময় ফ্রি থাকতাম সেই সময়টা সহ্য হতোনা, তাই কষ্টটাকে কমাতেই সিগারেট, ড্রিংকস দিয়ে অবসর সময় কাটাতাম। আর ধীরে ধীরে এগুলোই অভ্যেস হয়ে গেলো।
.
আমি ওর বুকে মাথা রেখে নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি। ও বলল
.
– যেদিন দেশে এসে তোমার সাথে দেখা হলো ইচ্ছে করছিলো শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরি। কিন্তু মনে জমে থাকা অভিমানের জন্যে সেটা করতে পারিনি। তবে খুব বেশি মিস করছিলাম তোমাকে। নিজেকে আটকে রাখাটা খুব বেশিই কষ্টের ছিলো। কিন্তু গতকাল সারারাত তোমার সাথে থেকে নিজেকে আর অাটকে রাখতে পারিনি, পারিনি নিজের অভিমান আকে রাখতে। তাইতো ভেবেছিলাম আজ সব ঠিক করে নেবো। অনেক হয়েছে আর পারবোনা তোমাকে দূরে রাখতে। কিন্তু আজ তোমার সাথে কথা বলার আগেই এমন একটা কিছু জানতে পারলাম যে.. তাই রাগের মাথায় তোমার গায়ে আজ প্রথম হাত তুলেছি, তাও এতো জোরে।
.
এটুকু বলে আমার ঐ গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
.
– খুব লেগেছে না? বিশ্বাস করো আমি এভাবে মারতে চাইনি। আসলে রাগটা কন্ট্রোল করতে পারছিলাম নাহ।
.
এটুকু বলে আমার গালে পাগলের মতো চুমু দিতে লাগল। তারপর কান্নাজরিত কন্ঠে বলল
.
– আই এম সরি জানপাখি।
.
সাথে সাথেই আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। আমার সারা শরীর ঝংকার দিয়ে উঠল। আজ ছয়বছর পর আদ্রিয়ানের মুখে জানপাখি ডাকটা শুনলাম। এই অনুভূতিকে প্রকাশ করার মতো না। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না ফুপিয়ে কেদে দিলাম। আমাকে কাদতে দেখে আদ্রিয়ান উত্তেজিত হয়ে বলল
.
– প্লিজ কেদোনা জানপাখি সরি বললাম তো। আর এমন করবোনা। প্লিজ কান্নাটা থামাও।
.
আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, আজ ছয়বছর পর আবার সেই উন্মাদনা, সেই ভালোবাসা, সেই অনুভূতি দেখতে পাচ্ছি। সেই পাগল করা ভালোবাসা যেটা সবসময় আমাকেও পাগল করে ছেড়েছে। ওর এই ভালোবাসার জন্যেই তো ওকেও ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছি আমি। ও আমার গালে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল
.
– আর কখোনো আমাকে কষ্ট দেবেনা তো?
.
– মরে গেলেও না। এইভাবেই নিজের সাথে জরিয়ে রাখবো তোমাকে। কিন্তু তুমি আর আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?

– পাগল নাকি? একবারে শিক্ষা হয়ে গেছে আমার।
.
আমি শক্ত করে ওকে জরিয়ে ধরলাম আর ওও। তারপর আমার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল
.
– ভাগ্যিস তুমি বিয়ারটা খেয়েছিলে। তাইতো আজ নিজের ভূলটা বুঝতে পারলাম।
.
এটুকু বলে ও আমাকে ছেড়ে উঠতে নিলেই আমি ওর হাত ধরে আটকে দিলাম। আর কাদোকাদো মুখ করে বললাম
.
– তুমি বলেছিলে আমাকে ছেড়ে যাবেনা।
.
– আর বাবাহ যাচ্ছিনা কোথাও জাস্ট একটু শরবত করে আনছি তোমার জন্যে।
.
– দরকার নেই আমার কোনো শরবত এর তুমি যাবেনা।
.
ও আমার পাশে বসে আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল
.
– জাস্ট দু মিনিট লাগবে সোনা?
.
অামি মুখ ফুলিয়ে কাদো কাদো হয়ে বললাম
.
– নাহ।
.
– প্লিজ!
.
– তাড়তাড়ি আসবে?
.
– হ্যা হ্যা যাবো আর আসবো।
.
বলে তাড়তাড়ি চলে গেলো আর আমি খাটে আসাম করে বসে গুনগুনিয়ে গান গাইছি। একটু পরেই ও একটা গ্লাসে কীসের যেনো শরবত নিয়ে এসে আমার মুখের সামনে ধরে বলল
.
– খাও।
.
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– এটা কী?
.
– শরবত, ঝটপট খেয়ে নাও।

বলেই আমার ঘারের পেছনে হাত রেখে আমার মুখে দিতেই এক চুমুক দিয়েই আমার অবস্হা খারাপ, একদমি বাজে। আমি মাথা সরিয়ে নিয়ে মুখ ছিটকে বললাম
.
– ছিঃ কী বাজে খেতে এটা?
.
ও আমার দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে বলল
.
– একঢোকে খেয়ে নাও কিচ্ছু হবেনা।
.
– নাহ ওটা পঁচা খেতে।
.
আদ্রিয়ান বহুত কষ্টে জোর জরবদস্তি করে ওটা খাইয়ে দিলো আমাকে। ওটা খাওয়ার একটু পরেই ও বলল
.
– বমি পাচ্ছে?
.
আমি মাথা ঝাকালাম। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি আমাকে কোলে তুলে আমাকে বেসিনের সামনে নিয়ে গিয়ে নামাতে নামাতেই ওর গায়ে বমি করে দিলাম। ও আমাকে নামিয়ে ভ্রু কুচকে একবার আমার দিকে আরেকবার নিজের শার্টের দিকে তাকালো। আমিতো ভয়ে আছি না জানি কী করে। কিন্তু আমাকে অবাক করেই ও হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলল
.
– মিষ্টিকে তুমি কীকরে বড় করলে বলোতো? যে নিজেই নিজেকে সামলাতে পারেনা?

এটুকু বলেই ও আমাকে বেসিনের সামনে উবু করে পিঠে হাত বুলাতে লাগল। আরেকটু বমি করার পর ও ওর শার্টটা খুলে ওয়াসরুমে রেখে, নিজে ক্লিন হয়ে, আমাকে কোলে করে নিয়ে এলো রুমে। এখন আমার খুব দুর্বল লাগছে আর ঘুমও পাচ্ছে। আদ্রিয়ান আমাকে বেডে শুইয়ে আমার পাশে শুয়ে আমাকে টেনে ওর বুকে নিয়ে বলল
.
– এবার চুপচাপ ঘুমাও সকালে দেখবে একদম ফ্রেশ লাগছে।
.
আমি আর কিছু না বললে চুপচাপ চোখ বন্ধ করলাম। আর দুর্বল থাকায় আস্তে আস্তে ঘুমিয়েও গেলাম
.
সকালে গালে কারো ঠোটের ছোয়া আর ‘Good morning’ আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে ছিলো কিছুক্ষণ। এরপরেই মনে পড়ল আদ্রিয়ান তো রাগ করে ব্যালকনিতে চলে গেলো তারপর আমিও গেলাম ওর সাথে রাগ করে বিয়ার খেয়ে নিলাম। এরপর? এরপর কী হয়েছে। ব্রেইনে একটু চাপ দিতেই আস্তে আস্তে বাকিটাও একটু একটু করে মনে পরলো। আর সব মনে পরতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। আদ্রিয়ান আমার গালে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল
.
– মাতাল হলে তুমি আরো কিউট হয়ে যাও। জানো ইচ্ছে করছিলো খেয়ে ফেলি তোমাকে। কিন্তু মাতাল ছিলে সেইজন্যে কন্ট্রোল করতে হয়েছে নিজেকে।

আমি ওর বুকে একটা কিল মেরে বললাম
.
– এখনো সেই আগের মতোই অসভ্য আছো।
.
ও আমার গাল টেনে দিয়ে বলল
.
– নিজর বউয়ের কাছে অসভ্য না হলে কার কাছে হবো শুনি?
.
– হুহ।
.
– আচ্ছা যাও এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। মিষ্টির কাছে যাবো।
.
আমি উঠে বসে হাই তুলে বললাম
.
– কথা বলেছিলে অভ্রর সাথে?
.
– হ্যা সকালে কিছু খায়নি এখোনো মিষ্টি। তুমি গেলে তারপর খাবে
.
– ওহ।

– হুম এর আগেও ওর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু তখনতো জানতাম না ও আমারি মেয়ে। তবুও একটা আলাদা টান অনুভব করতাম। এখন বুঝতে পারছি সেটা কেনো?
.
– শুধু কী তাই দুজন মিলেতো হেব্বি ঝগড়া করতে, মিঃ লাওন আর ধানিলঙ্কা।
.
বলেই ফিক করে হেসে দিলাম। ও চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– দ্যাট মিনস তুমি দেখেছো আর জানতে সব?
.
– হ্যা জানতাম তো।
.
আদ্রিয়ান আমাকে ধরতে এসে বলল
.
– তোমাকে তো..!
.
কিন্তু আমাকে আর কে পায়? আমি একদৌড়ে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। তবে পেছন থেকে আদ্রিয়ানের হাসির আওয়াজ ঠিকি পেয়েছি।
.
আমার ফ্লাটে গিয়ে বেল বাজাতেই সাথি দরজা খুলে দিলো। আমি ভেতরে গিয়ে দেখি মিষ্টি আর অভ্র সোফায় বসে খেলছে। আমাকে দেখেই মিষ্টি দৌড়ে এলো আমার কাছে, আমার পেট জরিয়ে ধরে বলল
.
– মাম্মা কোথায় গেছিলে তুমি? কাল রাতে কেনো আসোনি?

আমি হাটু ভেঙ্গে ওর সামনে বসে বললাম
.
– একটু কাজে গেছিলাম মা। এইতো চলে এসছি আমি!
.
– অভ্র আঙ্কেল যে বলল তুমি আমার জন্যে সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে?
.
– হ্যা! এনেছিতো! তোমার জন্যে অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।
.
মিষ্টি খুশি হয়ে বলল
.
– কী সারপ্রাইজ?
.
আমি মিষ্টির দুই কাধে হাত রেখে বললাম
.
– তোমার বাবাই এর সাথে দেখা করতে চাও?
.
মিষ্টী চমকে তাকালো, তারপর প্রচন্ড এক্সাইটেড হয়ে বলল
.
– বাবাই এসছে? কোথায়।
.
– দেখবে?

মিষ্টি খুশি হয়ে মাথা নাড়লো। আমি মুচকি হেসে মিষ্টির পেছনে গিয়ে ওর চোখ ধরলাম। আর তখনি আদ্রিয়ান ধীর পায়ে মিষ্টির সামনে এসে দাড়লাম। বললাম 3, 2, 1.. বলে মিষ্টির চোখ ছাড়তেই মিষ্টি খুশি হয়ে চোখ পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। ও ভ্রু কুচকেই বলল
.
– মিঃ লাওন তুমি এখানে?
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে মুখে হালকা হাসি আর ছলছলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
.
– কী হলো বলো? বাবাই কোথায়?
.
আমি মিষ্টির কাধে হাত রেখে হেসে বললাম
.
– এটাই তোমার বাবাই। ইনিই তোমার মিঃ লাওন?
.
মিষ্টি খুশি হয়ে বলল
.
– মিঃ লাওন আমার বাবাই?
.
– হুমম এবার যাও তোমার বাবাই এর কাছে।
.
মিষ্টি গিয়ে আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে দাড়াতেই আদ্রিয়ান হাটু ভেঙ্গে বসল। মিষ্টি আদ্রিয়ানের চোখের কোণের পানিটা হাত দিয়ে মুছে বলল

– তুমিই আমার বাবাই?
.
আদ্রিয়ান কান্নাজরিত চোখে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হ্যা বলল। মিষ্টি আদ্রিয়ানের গলা জরিয়ে ধরে কেদে বলল
.
– এতোদিন কেনো বলোনি তুমিই অামার বাবাই?
.
আদ্রিয়ানো মিষ্টিকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– কীকরে বলবো বল? অামিতো তোকে দেখিনি তাই বলতে পারিনি।
.
– তুমি এতোদিন কেনো আসোনি অামাদের কাছে?
.
– কাজে আটকে ছিলাম মা,তাই আসতে পারিনি।
.
মিষ্টি আদ্রিয়ানকে ছেড়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আর যাবেনা তো আমাদের ছেড়ে?
.
আদ্রিয়ান মিষ্টির গালে হাত দিয়ে বলল
.
– কোনোদিনো না।
.
– সত্যি?
.
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
.
– তিন সত্যি।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আদ্রিয়ান কাপাকাপা গলায় বলল
.
– একবার বাবাই বলে ডাকবি?
.
মিষ্টি সাথে সাথেই হেসে জোরে বলল
.
– বাবাই..
.
আদ্রিয়ান সাথে সাথেই বুকে জরিয়ে ধরল মিষ্টিকে, আমিও চোখের পানি মুছে হেসে দিলাম। অভ্র সাথি দুজনেরই চোখ ভেজা। আজ মিষ্টি ওর বাবাই পেয়েছে আর আদ্রিয়ান ও আজ সব ফিরে পেয়েছে ওর সব কষ্টের অবসান হয়েছে আজ। তাই আজ আমি খুব খুশি কারণ যেই দুজন মানুষকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তাড়া খুশি। ওদের এই হাসি মুখ ছাড়া কিচ্ছু চাইনা আমি।
আদ্রিয়ান সাথে সাথেই বুকে জরিয়ে ধরল মিষ্টিকে, আমিও চোখের পানি মুছে হেসে দিলাম। অভ্র সাথি দুজনেরই চোখ ভেজা। আজ মিষ্টি ওর বাবাই পেয়েছে আর আদ্রিয়ান ও আজ সব ফিরে পেয়েছে ওর সব কষ্টের অবসান হয়েছে আজ। তাই আজ আমি খুব খুশি কারণ যেই দুজন মানুষকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তাড়া খুশি। ওদের এই হাসি মুখ ছাড়া কিচ্ছু চাইনা আমি। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে ছেড়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বলল

– সকালে নাকি কিছুই খাস নি? খিদে পায় নি?
.
মিষ্টি দুই হাতে আদ্রিয়ানের গলা আকরে ধরে বলল
.
– আমিতো মাম্মার জন্যে ওয়েট করছিলাম। কিন্তু এখন তুমি খাইয়ে দেবে।
.
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
.
– আচ্ছা আমি খাইয়ে দেবো।
.
আমি সাথির দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই সাথি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
.
– অামি এক্ষুনি সবার জন্যে খাবার সার্ভ করছি।
.
বলেই দৌড়ে চলে গেলো। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে কোলে নিয়েই ডাইনিং টেবিলে বসল। আমি আদ্রিয়ানের বা পাশে বসলাম অার অভ্র অপজিটে। সাথি খাবার সার্ভ করার পরে ওকেও বসে পরতে বললাম। মিষ্টি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– বাবাই আমার সাথে মাম্মাকেও খাইয়ে দাও।
.
আদ্রিয়ান মিষ্টির দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো, আমিও পানি খাচ্ছিলাম একটুর জন্যে বিষম খাইনি। মিষ্টি কপাল কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– মাম্মা বাবাই খাইয়ে দিলে খাবেনা?

আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান বলল
.
– আরে টেনশন নিসনা। তোর মাম্মার আমার হাতে খাওয়ার অনেক এক্সপিরিয়েন্স আছে। অবশ্যই খাবে।
.
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিলো, অভ্র আর সাথিও মুখ টিপে হাসলো। মিষ্টি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– তুমি মাম্মাকে খাইয়ে দিতে?
.
আদ্রিয়ান হেসে মিষ্টির গালে চুমু দিয়ে বলল
.
– হুম প্রায়ই খাইয়ে দিতাম আর আজকেও দেবো। তোকেও আর তোর মাম্মাকেও।
.
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– তার দরকার নেই আমি নিজেই খেতে পারবো।
.
সেটা দেখে আদ্রিয়ান মুখ গোমড়া করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল
.
– দেখলি তোর মা আমার হাতে খাবেনা বলছে। কী করার আয় তোকেই খাইয়ে দেই।
.
মিষ্টি মুখ গোমড়া করে বলল
.
– মাম্মা তুমি বাবাই এর হাতে না খেলে আমিও খাবোনা

আমি পরলাম এখন মহা ফেসাদে। তাই আদ্রিয়ানকে চোখ রাঙিয়ে। একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
.
– মিষ্টি জেদ করেনা মা তুমি বাবাই এর হাতে খেয়ে নাও, আমি নিজের হাতেই খেতে পারব।
.
কিন্তু মিষ্টিতো নাছোড়বান্দা আর আদ্রিয়ানও সমানে মিষ্টিকে ফুসলে যাচ্ছে। অভ্র আর সাথি যেমন বাপ তার তেমন মেয়ে তাই বাদ্ধ হয়েই রাজি হলাম। সত্যি বলতে সবার সামনে ওর হাতে খেতে লজ্জা পেলেও আমারও ইচ্ছে করছে ওর হাতে খেতে। এরপর আদ্রিয়ান আমাকে আর মিষ্টিকে খাইয়ে দিলো সাথে নিজেও খেয়ে নিলো।
.
খাওয়ার পরেই মিষ্টি আর আদ্রিয়ান সোফায় বসে বিভিন্ন খুনশুটি করছে আবার খেলছেও। আর আমি সিঙ্গেল সোফায় বসে ওদের দেখছি। সাথি রান্না ঘরে রান্না করছে, আর অভ্রও কোথাও একটা গেছে। কিছুক্ষণ পর অভ্র এসে আরেকটা সিঙ্গেল সোফায় বসে ওদের বাপ বেটিকে দেখতে লাগল। হঠাৎই মিষ্টি চেচিয়ে উঠলো
.
– দাদুভাই। দিদা?
.
আমি চমকে তাকালাম আর আদ্রিয়ান ও তাকালো। তাকিয়ে দেখি বাবা আর মামনী দাড়িয়ে আছে। মিষ্টি সোফা থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেলো। বাবা মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলল
.
– আমার দিদিভাই কেমন আছে?
.
– খুব ভালো। জানো আমার বাবাই এসছে ঐ দেখো?

বলেই আদ্রিয়ানকে দেখালো। বাবা আর মামনী অসহায় চোখে তাকিয়ে অাছে আদ্রিয়ানের দিকে। আর অাদ্রিয়ান সোফায় বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অভ্রর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম যে ওই খবর এনেছে ওদের। একটু পরেই জাবিন এলো। জাবিন ঢুকতেই সবার আগে ওর চোখ অভ্রর দিকে পরল। অভ্রও তাকালো। দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো যেটা আমার চোখ এরায়নি। জাবিন মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলল
.
– কেমন আছিস পাকনী?
.
– ভালো। জানো ফুপিমনি আমার বাবাই এসছে।
.
জাবিন হেসে বলল
.
– জানিতো সোনা। তাইতো এসছি!
.
এরপর আমি ওদের সবাইকে এনে বসালাম। ওরা এটাওটা বলছে অার আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে বসে আছে। বাবা আর মামনী আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কারণ এর আগে দুবার বলতে চেয়েও পারেনি। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলে উঠল।
.
– মা..
.
সবাই চমকে তাকালাম। এতো বছর পর নিজের সন্তানের মুখে মা ডাক শুনে আন্টি আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলোনা কেদে দিলো। আদ্রিয়ান উঠে আন্টির সামনে হাটু ভেঙে বসে কোলের ওপর হাত রেখে বলল
.
– তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছিনা আমি? তোমাদের অনেক কাদিয়েছি! তোমরা ঠিকি বলেছো আমি সত্যিই অযোগ্য সন্তান।
.
আন্টি আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– তুই যদি অযোগ্য সন্তান হোস তাহলে যোগ্য কে শুনি? ভূলতো আমারা করেছি। কষ্টতো আমরা তোকে দিয়েছি, আমরা আমাদের কষ্টটা কেদে প্রকাশ করতে পারলেও তুই তো পারিসনি। তবুওতো তুই সব ভুলে আবার আমার কাছে এসছিস এটাই অনেক।
.
আদ্রিয়ানের মামনির কোলে মাথা রেখে কেদে দিলো। মামনিও ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল। হঠাৎ বাবা এসে আদ্রিয়ানের কাধে হাত রাখতেই আদ্রিয়ান দাড়িয়ে বাবার দিকে তাকালো। বাবা ছলছলে চোখে তাকিয়ে বলল
.
– শুধু মায়ের সাথেই কথা বলবি আমার সাথে বলবি না?

আদ্রিয়ান কিছু না বলে আঙ্কেলকে জরিয়ে ধরল। আঙ্কেলও দুই হাতে আকড়ে ধরল ছেলেকে। আজ এতো বছরের মান অভিমানের পালা শেষ হলো সবার মুখেই প্রশান্তির হাসি। মিষ্টি কিছু না বুঝলেও ওর মুখেও খুশির ছাপ। আজ খুব হালকা লাগছে নিজেকে। তার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই আমার বাড়ির সকলে আর ইফাজ ভাইয়া আপিরাও আসলো। ওদেরো অভ্রই ডেকেছে। আমিও বেশ খুশি হলাম ওদের দেখে। পুরো বাসায় রমরমে পরিবেশহ আজ পুরো আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে আমাদের সকলের মধ্যে। সবাই দুপুরে এখানেই লাঞ্চ করবে আর তারপর বিকেলে আদ্রিয়ানদের বাড়িতে চলে যাবো আমরা। লাঞ্চ টেবিলে সবাই বসার পরেই মিষ্টি বলল
.
– মাম্মা বাবাই তোমারা দুজন মিলে আমাকে খাইয়ে দাও। সেদিন হিয়াজকে ইফাজ আঙ্কেল আর খালামনি খাইয়ে দিয়েছিলো সেভাবে। আদ্রিয়ানের মুখটা সাথে সাথেই কালো হয়ে গেলো। আমি জানি সেটা কেনো, নিজের সন্তানের কাছে না থাকতে পারার গ্লানিবোধ। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বলল
.
– অবশ্যই! অামরা দুজনেই আমার মিষ্টিসোনাকে খাইয়ে দেবো।
.
আমিও হেসে বললাম
.
– হ্যা একদম!
.
এরপর আমরা দুজন মিলে মিষ্টিকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আর মিষ্টি হিয়াজকে একটা ভেংচি কেটে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আর হিয়াজও মুখ ফুলিয়ে খেতে লাগল। আমরা সবাই হেসে দিলাম ওদের কান্ডে।
.
বিকেলে আব্বু আম্মু আপুরা চলে সবাই চলে গেলো আর বাবা মামনির সাথে আজ আমরাও ফিরে যাচ্ছি ঐ বাড়িতে, সাথে সাথিকেও নিয়ে যাচ্ছি। আর মিষ্টিতো খুব খুশি এখন থেকে সবার সাথে থাকবে তাই। মামনিকে দেওয়া কথা রেখেছি, আদ্রিয়ানের হাত ধরেই আজ এই বাড়িতে ঢুকলাম আমি। আমার শশুর বাড়ি। সারাবাড়ি আজ আনন্দে মেতে উঠেছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো এক ঘুমন্ত নগরী হঠাৎ জেগে উঠেছে। সকল দুঃখ বেদনার রেশ কাটিয়ে সবাই আজ খুব খুশি সাথে আমিও। মিষ্টি সারাবাড়ি ছোটাছুটি করে জাবিনের সাথে দুষ্টমী করে বেড়াচ্ছে। অভ্রও আছে সাথে আদ্রিয়ান জোর করে রেখে দিয়েছে। তবে অভ্র আর জাবিনকে আমার ডাউট হচ্ছে। কুছতো চাল রাহা হ্যা ইয়ার, যেটা আমরা জানি না। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে মিষ্টিকে দেখছে।

হঠাৎই আদিব আর ইশরাক ভাইয়া বাড়িতে এলো। ওদের দেখেই আদ্রিয়ান হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখ করে বসে রইলো। আমি আদ্রিয়ানকে কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। আদিব ভাইয়া করুণ গলায় বলল
.
– কীরে ভাই আজকেও কথা বলবিনা আমাদের সাথে?
.
ইশরাক ভাইয়া বলল
.
– সবাইকে মাফ করে দিলি আমরা দুই গাধা কী দোষ করলাম বলতো?
.
আদ্রিয়ান মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। আদিব ভাইয়া আর ইশরাক ভাইয়া নানা কথা বলছে কিন্তু আদ্রিয়ান চুপ। আমিও বিরক্ত হচ্ছি এবার চুপ করে আছে কেনো? হঠাৎ অাদিব ভাইয়া বলল
.
– বুঝেছি কথা বলতে চাস না আমাদের সাথে। ঠিকাছে চলে যাচ্ছি অামরা। চল ইশরাক।
.
এটুকু বলে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল
.
– ওয়ে ড্রামাবাজস? চল আয়।
.
বলেই হেসে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। আদিব আর ইশরাক ভাইয়ার খুশি দেখে কে? দুজনেই একসাথে এসে জরিয়ে ধরল। আমরাও সবাই হেসে দিলাম। যাক এদিকেও সব ঠিক হয়ে গেছে
.
মামনী নানারকম রান্না করতে ব্যাস্ত। আর বাবা রুমে রেস্ট করছে। আদ্রিয়ান আদিব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, অভ্র ছাদে গল্প করছে। তাই আমি আদ্রিয়ানের মানে আমার রুমের ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে শান্তিতে নিশ্বাঃস নিচ্ছি আজ সব আবার আগের মতো হয়ে গেছে। সবাই কতো খুশি। এটাই তো চেয়েছিলাম আমি সবার মুখের হাসি। আজ সেটাই পেয়েছি। আজ সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ আমি। নিজেকে খুব হালকা লাগছে। হঠাৎই আমাকে কেউ পেছন থেকে জরিয়ে ধরল, সাথেসাথেই বুঝতে পারলাম এটা আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান আমার কাধে নিজের থুতনি রেখে বলল

– কী ভাবছো?
.
– আজ খুব শান্তি লাগছে জানো? এতোদিন আমার জন্যেই সবকিছু..
.
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান আমার ঘারে একটা কিস করে বলল
.
– এসব বলোনা। তোমার কোনো দোষ ছিলোনা। ইনফ্যাক্ট কারোরই দোষ ছিলোনা। পরিস্হিতিটাই এমন ছিলো। তবে যা হয় ভালোর জন্যেই হয়। দূরত্ব তৈরী হয়েছিলো বলেই তো আমরা আমাদের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারলাম।
.
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে। ও মুচকি হেসে বলল
.
– ভেবে দেখো, ঐ ঘটনার পর মনের কোনে একটা ক্ষোভ রেখেও যদি আমরা একসাথে থাকতাম তাহলে আমাদের সম্পর্কে আমরা না চাইতেও ধীরে ধীরে তিক্ততা আসতো, আস্তে আস্তে সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যেতো। কারণ আর যাই হোক মনে দ্বিধা নিয়ে কোনো সম্পর্ক বয়ে নেয়া যায়না। আর এখন এই দূরত্বের কারণেই আমারা একে ওপরের গুরত্ব বুঝতে পেরেছি। নিজেদের মনের সব ক্ষোভ দ্বিদধাকে কাটিয়ে এক হতে পেরেছি। তাই আমাদের এই বন্ধনটা এখন অটুট। আর সেই বন্ধনকে আরো অনেক বেশি দৃঢ় করে রেখেছে আমাদের মেয়ে মিষ্টি।
.
আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম ওর কথা। ঠিকই বলেছে ও দূরত্ব ছিলো বলেই আজ আমাদের বন্ধন এতো দৃঢ় হয়েছে। হয়তো একটু সময় কষ্ট পেয়েছি কিন্তু এখন সারাজীবন এক হয়ে থাকার শান্তিটা পাবো। এসব ভেবে মুচকি হেসে ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ওর ফোনে একটা মেসেজ এলো। ও ভ্রু কুচকে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখার পর ওর মুখের মুচকি হাসি মিলিয়ে গেলো। ফোনটা পকেটে রেখে চিন্তিত মুখ করে রেলিং এ ভর দিয়ে দাড়িয়ে কিছু ভাবতে লাগল। আমি ওর কাধে হাত রেখে বললাম

– কিছু হয়েছে?
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– শহরে অাবার ব্লাস্ট হয়েছে?
.
শুনেই বুক ছ্যাত করে উঠলো আমার। আমাকে ভয় পেতে দেখে অাদ্রিয়ান আমার দুই বাহু ধরে বলল
.
– ভয় পেয়োনা। এটা খুবই ছোট একটা গ্যাং একদিনে ধরে ফেলা যাবে। জাস্ট একটা ফুল প্রুভ প্লান লাগবে।
.
– এতোদিনতো সব ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ?
.
আদ্রিয়ান আমাকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– ভয় পাচ্ছো কেনো আমি আছিতো? আর তাছাড়া এই গ্যাং এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তোমার সেইক্ষেত্রে তুমি সেভ।
.
– আর তুমি?
.
– আমাকে নিয়ে ভেবোনা কিচ্ছু হবেনা আমার।
.
বলেই আমার কপালে একটা কিস করলো। হঠাৎ কোথা থেকে মিষ্টি এসে ভ্রু বললো
.
– তুমিও পাপ্পি দিচ্ছো বাবাই।

আদ্রিয়ান আর আমি দুজনেই ভ্রু কুচকে তাকালাম। মিষ্টি বলল
.
– আজকে সবাই সবাইকে পাপ্পি কেনো দিচ্ছে?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– আর কে কাকে পাপ্পি দিয়েছে?
.
– অভ্র আঙ্কেলকেও ফুপিমনিকে পাপ্পি দিয়েছে।
.
আদ্রিয়ান আর আমি দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ থমকে থেকে চমকে উঠলাম এবার বুঝতে পারলাম অভ্রের ‘জান না মানে জাবিনের’ রহস্য। তলে তলে এতোকিছু? বাট প্রশ্ন একটাই? আমার এই সিংহ মার্কা হাজবেন্ডটা মানবে তো?
আদ্রিয়ান আর আমি দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ থমকে থেকে চমকে উঠলাম এবার বুঝতে পারলাম অভ্রের ‘জান না মানে জাবিনের’ রহস্য। তলে তলে এতোকিছু? বাট প্রশ্ন একটাই? আমার এই সিংহ মার্কা হাজবেন্ডটা মানবে তো? আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মিষ্টির দিকে। আমি ভাবছি আদ্রিয়ান কীভাবে রিয়াক্ট করবে ব্যপাটায়? ও মিষ্টিকে কোলে নিয়ে রুমে গেলো, আমিও গেলাম পেছন পেছন। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে বেডে বসিয়ে নিজের ওর সামনে বসে বলল
.
– এবার বল তো কী দেখেছিস?
.
মিষ্টি সোজাসাপ্টাভাবে উত্তর দিলো
.
– অভ্র আঙ্কেল ফুপিমনির গালে পাপ্পি দিয়েছে।
.
– ঠিক দেখেছো তো?

– হ্যা। আমি এখানে আসার সময় দেখেছি।
.
আমি খাটের এক কোনায় বসে ভাবছি যে আদ্রিয়ান ব্যাপারটা কীভাবে নেবে কে জানে? আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বললো
.
– সারাদিন অনেক ছোটছুটি করেছেন, এবার তো একটু ঘুমাতে হবে।
.
মিষ্টি মাথা নেড়ে বলল
.
– নাহ।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– কেনো?
.
– এইসময় ঘুমোতে ভালো লাগে না।
.
সেটা শুনে আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– ও বিকেলে ঘুমায় না?

আমি মাথা নাড়লাম। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে নিজে শুয়ে মিষ্টিকে ওর বুকের ওপর শুইয়ে বলল
.
– আচ্ছা ঘুমোতে হবেনা। স্টোরি শুনতে ভালো লাগে?
.
মিষ্টি হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– ওকে তাহলে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে গল্প শোনো ঠিকাছে?
.
মিষ্টি আদ্রিয়ানের বুক থেকে মাথাটা হালকা ওপরে তুলে বলল
.
– তুমি স্টোরিও বলতে পারো?
.
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
.
– কেনো না পারার কী আছে হুম?
.
– আমার তো মনে হতো শুধু গর্জন করতেই পারো।
.
বলেই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বলল
.
– কী বললি?
.
মিষ্টি হাসি থামিয়ে বলল
.
– ঐ যে চিড়িয়াখানায় একটা সিংহ দেখেছিলাম। ঐটা খুব বেশিই গর্জন করে।
.
আমি মুখ টিপে হাসছি। যেমন বাপ ঠিক তার তেমনি মেয়ে। আদ্রিয়ান রাগী লুক দিয়ে বলল
.
– দাড়া দেখাচ্ছি তোকে পাজি মেয়ে…
.
মিষ্টি এবারেও হেসে দিয়ে বলল
.
– তোমারিতো।

আদ্রিয়ান ওর দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো। কারণ আদ্রিয়ান নিজেও এই কথাটা বলে। আমিও হাসছি নিঃশব্দে। আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে মিষ্টির মাথাটা আবার বুকে চেপে রেখে বলল
.
– আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার চুপচাপ গল্প শোনেন।
.
– আচ্ছা।
.
আমিতো অবাকের শেষ প্রান্তে। আমার মেয়েটা এতো ভদ্র হলো কবে থেকে? বাহ বাপের কাছে একদম ভদ্র হয়ে গেছে। কথায় আছেনা লোহাকে লোহাই কাটতে পারে। বাপ মেয়ে দুজনেই একরকম। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে গল্প শোনাচ্ছে আর আমি চুপ করে ওদের পাশে শুয়ে ওদের দেখছি। কারণ ওদের এই সময়টাতে আপাদত ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনা আমি। মিষ্টি গল্পের মধ্যে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আর আদ্রিয়ান এক হাতে আলতো ভাবে মিষ্টির পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে আর আরেকহাতে ওর চুল নাড়তে নাড়তে খুবি সুন্দরভাবে ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। একপর্যায়ে গল্প শুনতে শুনতে মিষ্টি ঘুমিয়ে পরলো। মিষ্টি ঘুমিয়ে পরেছে বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান খুব সাবধানে ওকে বুক থেকে নামিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো। তারপর আমাকে বলল
.
– আমার জন্যে কফি নিয়ে ব্যালকনিতে এসো।
.
বলে ও ব্যালকনিতে চলে গেলো। আমি উঠে নিচে চলে গেলাম কফি আনতে। কফি নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি ও সোফায় বসে আছে আমিও ওর পাশে গিয়ে বসে ওর দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললাম
.
– আরে বাহ। এতো সুন্দরভাবে বাচ্চা সামলানো কোথা থেকে শিখলে হুম?
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মগটা নিয়ে বলল
.
– ছয় মাস একটা বাচ্চাকে সামলেছিলাম তো? তাই অভ্যেস আছে।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– By any chance.. তুমিকি আমাকে মিন করে কিছু বললে?
.
আদ্রিয়ান এবারেও হেসে দিয়ে বলল
.
– বুদ্ধিমানের জন্যে ইশারাই যথেষ্ট।
.
– হুহ।
.
– কী হুহ? কী করিনি বলো? খাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে ঘুম পারানো সবই করেছি শুধু গোসল করানোটাই বাকি ছিলো।
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম ওর দিকে। বদলে ও দুষ্টু হেসে বলল
.
– করালে খারাপ হতোনা তাইনা?
.
আমি কিছু পা বলে ওর বাহুর ওপরে একটা কিল মারলাম। ও সামনের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। তারপর হাসি থামিয়ে বলল
.
– মিষ্টির বিকেলে ঘুমানোর অভ্যেস করাও নি কেনো? একজন ডক্টর হয়ে এটা জানোনা। বিকেলে এই রেস্ট টা বাচ্চাদের দরকার?
.
আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
.
– মেয়েটা তোমার তাইনা? একদম তোমারি মতো হয়েছে। নিজেরটা ছাড়া কারো কথা শোনে?
.
উত্তরে আদ্রিয়ান হালকা হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল
.
– একজন বাবা হওয়ার যে কতো আনন্দ সেটা আজ বুঝতে পারছি। সত্যিই এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। জানো ওকে যখন বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম এমন মনে হচ্ছিলো যে আমিই দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তি।
.
আমি এক হাতে ওর বাহু জরিয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বললাম
.
– আমারো একি অনুভুতি হয়েছিলো যখন আমি ওকে প্রথম কোলে নিয়েছিলাম
.
হঠাৎই কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান বলল
.
– ওয়ান মিনিট। অভ্র আর জাবিনের ব্যপারটা বুঝতে পারলাম না। অভ্র জিবিনকে কিস করেছে?
.
বলেই দাত দিয়ে নিচের ঠোটটা কামড়ে ধরে কিছু ভাবল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললাম
.
– তুমি আমাকে কিস কেনো করতে?

আদ্রিয়ান দাত থেকে নিজের ঠোট টা ছেড়ে দিয়ে জিব দিয়ে হালকা ভিজিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল
.
– That means they are in relationship?
.
– মনে তো সেটাই হচ্ছে।
.
– কিন্তু এসব কবে কীভাবে হলো?
.
– সেটাতো আমিও বুঝতে পারছিনা।
.
আদ্রিয়ান চোয়াল শক্ত করে বলল
.
– যদি সত্যিই সত্যিই এরকম কিছু হয় তাহলে..
.
ওর কথায় ভয় পেয়ে গেলাম। ওকি সত্যিই বাংলা সিনেমার ভিলেন ভাইদের মতো বেগড়া হয়ে দাড়াবে নাকি? নাহ আমাকেই একে বোঝাতে হবে। আমি ইতোস্তত করে বললাম
.
– আদ্রিয়ান দেখো ওরা যদি একে ওপরকে ভালোবেসেও থাকে এতে দোষ কোথায়?
.
ও গম্ভীর মুখে বলল
.
– এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলার দরকার নেই। যা ভাবার আমি ভেবে দেখবো।
.
আমি আর কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম তবে একটা চাপা টেনশন ঠিকি হচ্ছে যে এ আবার কী করে ? আদ্রিয়ানকে যতোটুকু চিনি ও আবেগের বসে কিছু করেনা। সেক্ষেত্রে অভ্রকে তো ওও সবথেকে ভালো চেনে। মনেতো হয়না নেগেটিভ কিছু করবে তবুও একে চেনা মুসকিল।
.
সন্ধ্যে বেলা সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছি মিষ্টিও উঠে গেছে ঘুম থেকে। আপি, ইফাজ ভাইয়া, সজীব ভাইয়া, ভাবী, অর্ণব ভাইয়া, কাব্য সবাই এসছে। নিচে ওদের দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম কিন্তু পরে জানতে পারলাম যে আদ্রিয়ানই ডেকেছে ওদের আজ রাতে এখানেই থাকবে। মানে বাড়িতে এখন একটা আড্ডামুখর পরিবেশ কারণ ওদের সাথে আদিব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, জাবিন ওরাতো আছে। মিষ্টি, হিয়াদের সাথে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। আর আমরা সবাই মিলে স্নাক্স খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ অভ্রকে উদ্দেশ্য করে আদ্রিয়ান বলল

– অভ্র ত্রিশ বছর তো হয়ে গেলো এখন বিয়েটা করেই নাও।
.
অভ্র চা মুখে দিয়েছিলো, আদ্রিয়ানের কথা শুনে বিষম খেয়ে গেলো। আমি জাবিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম জাবিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আদ্রিয়ান ভাবলেশহীনভাবে কাপে চুমুক দিলো। আদিব ভাইয়া হেসে বলল
.
– আরে অভ্র বিষম খাওয়ার কী হলো? সত্যিই ভাই এবার বিয়েটা করেই নাও। অভ্র ইতোস্তত করে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– ইয়ে মানে স্যার..
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
.
– আরে এতে ইয়ে মানে করার কী আছে? পছন্দের কেউ আছে নাকি?
.
অভ্র কিছু না বলে চুপ করে আছে। মৌনতা যে সম্মতির লক্ষণ সেটাতো সবাই খুব ভালো করেই জানে! কিন্তু আদ্রিয়ান নাছোড়বান্দা তাই আবার জিজ্ঞেস করল
.
– বলো?

অভ্র চুপ করে আছে আদ্রিয়ান এবার কাপটা টি-টেবিলে রেখে সবার সামনেই, অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল
.
– তোমার মাত্র এক বছরের বড় হবার পরেও বড় ভাই বলো আমাকে তাইনা। যদি সত্যিই বড় ভাই মেনে থাকো তাহলে বলতে পারো।
.
সজীব ভাইয়া বলল
.
– থাকনা? এভাবে প্রেশার কেনো দিচ্ছো? পরে আলাদা ভাবে না হয়।
.
আদ্রিয়ান সজীব ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল
.
– নাহ। ওর যদি কিছু বলার থাকে তাহলে এখন এইমুহুর্তে আর এখানেই বলবে।
.
বাবা ভ্রু কুচকে বলল
.
– কী শুরু করলি বলতো?
.
– বাবা আমি যা বলছি ভেবেই বলছি। আমাকে আটকিয়ো না।
.
আদ্রিয়ানের এই রুপে সবাই চুপ করে আছে। জাবিন কাদো কাদো মুখ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। এরপর অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– কী হলো বলবে কিছু?
.
অভ্র কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে হঠাৎ করেই উঠে দাড়িয়ে আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর বলল
.
– স্যার আপনি জিজ্ঞেস করছিলেন আমার পছন্দের কোনো মানুষ আছে কীনা? না আমার শুধু পছন্দের কোনো মানুষ নেই।

আমি একটু অবাক হলাম যে কী বলছে অভ্র? আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই অভ্র বলল
.
– কিন্তু ভালোবাসার মানুষ আছে। হ্যা খুব ভালোবাসি আমি ওকে খুব বেশি ভালোবাসি আর সেই ভালোবাসার মানুষটা আর কেউ না আপনার বোন জাবিন।
.
সবাই চমকে গেলো। আমি আর আদ্রিয়ান বাদে। কেউ এটা ভাবতেও পারেনি হয়তো। অভ্র আবার বলল
.
– আর আমরা একে ওপরকে ভালোবাসি।
.
আদ্রিয়ান এবার জাবিনের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– এটা সত্যি?
.
জাবিন মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। আদ্রিয়ান ধমকের সুরে বলল
.
– কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি।
.
জাবিন ছলছলে চোখ নিয়ে মাথা নাড়ল। এবার আদ্রিয়ান আবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল
.
– কতোদিন ধরে চলছে এসব?
.
অভ্র মাথা নিচু করেই বলল

– এক বছর। ম্যামের কাছে আসা যাওয়া থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। ওকে তো প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগেছিলো কিন্তু সেটা ভালোবাসা কি না বুঝতে পারিনি। কিন্তু একসাথে কিছুদিন বন্ধু হিসেবে থাকার পর আমি বুঝতে পারি যে ওকে আমি ভালোবাসি আর ওও আমার প্রতি দুর্বল। আর তাই একবছর আগে প্রপোজ করি ওকে আর ওও একসেপ্ট করে নেয়।
.
এটুকু বলে একটা শ্বাস নেয় অভ্র। তারপর অাদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– স্যার আপনার চেয়ে ভালো আমাকে কেউ চেনেনা। আমার বাবা মা কেও জানিয়েছি। ওনাদের আপত্তি নেই। তবে আমার কাছে আপনিই সবার আগে তাই আপনি যেটা বলবেন আমি সেটাই করবো।
.
এটুকু বলে অভ্র মাথা নিচু করে ফেলল। জাবিনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে, বাবা এর মামনি দুজনেই অভ্রকে একয়দিনে বেশ ভালোভাবে চিনে নিয়েছে। তাই ওনারা বলল ওনারা রাজি। কিন্তু জাবিন বলে উঠলো
.
– আজ পর্যন্ত ভাইয়া যা বলেছে তাই করেছি তাই আজকেও সেটাই হবে যেটা ভাইয়া চায়।
.
আদ্রিয়ান চুপ করে বসে আছে। আমি এবার আদ্রিয়ানের পাশে বসে বললাম
.
– দেখো আদ্রিয়ান অভ্র ভালো ছেলে আর সবাই রাজি, প্লিজ ওদের বিয়ের জন্যে হ্যা বলে দাও।
.
আদ্রিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো
.
– নাহ।
.
সবার মুখ কালো হয়ে গেলো। জাবিন কেদেই দিলো আর অভ্রও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা পর আদ্রিয়ান সবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
.
– হোয়াট? সবাই এতো সেন্টি হয়ে গেলো কেনো? না মানে আজকে না।

তারপর অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল
.
– অভ্র কালকে তোমার বাবা মা কে নিয়ে এসো। কালকেই বিয়ের ডেট ফিক্সট করবো।
.
বলেই হেসে দিলো। অভ্র অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে জরিয়ে ধরলো ওকে।
.
– তোমরা একে ওপরকে ভালোবাসো এটাই আসল কথা। এরচেয়ে বেশি কিছু আমার দরকার নেই।
.
তারপর জাবিনের কাছে যেতেই জাবিন জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান জাবিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– তোর খুশিই আমার কাছে সব। তুই ভাবলি কিকরে যে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবো আমি যাতে তুই কষ্ট পাশ।
.
এরপর জাবিনের হাত ধরে অভ্রের হাতের সাথে মিলিয়ে দিয়ে বলল
.
– তোমরা একসাথে যদি ভালো থাকতে পারো সেটাই অনেক তবে সারাজীবন একে ওপরের হাত এভাবেই ধরে রেখো।
.
অভ্র হেসে বলল
.
– আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা সারাজীবন রাখব স্যার।
.
জাবিন লজ্জামাখা একটা হাসি নিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। সারাবাড়িতে আজ খুশির আমেজ। আমাদের ফিরে আসার খুশির সাথে আরেক খুশি যুক্ত হলো। মিষ্টিও ভীষণ খুশি। কারণ এই পরিবারের এই আনন্দমুখর পরিবেশের সাথে পরিচিত হলো ওও।

রাতে হলো আরেকজালা। কারণ বাড়িতে সব বিচ্ছু বাহিনী আছে না? তাদের সবার এইমত যে বিয়ের পর এটাই আমার এই বাড়িতে আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো প্রথম রাত, তাই যেনো আমাদের রুমটা বাসর ঘরের মতো নাকি সাজানো হচ্ছে। আর এখানে আমাকে সাজানো হচ্ছে। আপি, জাবিন, ভাবী সাজাচ্ছে। আদ্রিয়ান আমি অনেক বারণ করেছি এসব করতে। কিন্তু ওরা সবাই নাছোড় বান্দা। বিয়ের ছয় বছর পর এসবের মানে হয়? মিষ্টি এসে জিজ্ঞেস করছিলো সাজাচ্ছে কেনো? কিন্তু জাবিন কোনোমতে ওকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাকে সাজিয়ে আদ্রিয়ানের রুমে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো। মিষ্টিকে জাবিন বুঝিয়ে নিয়ে গেছে নিজের রুমে। হিয়াজ ওরা থাকায় আর আপত্তি করে নি মিষ্টি। তবে রুম ত্যাগ করার আগে বেশ জালিয়ে গেছে আমায় ওরা।
.
চুপচাপ বসে আছি। রুমটা বেশ সুন্দর করে সাজানো, খাটটা ফুল দিয়ে, আর চারপাশটা বিভিন্ন রকম ক্যান্ডেল দিয়ে। বেশি সাজায়নি আজ আমাকে। জাস্ট একটা বেনারসি শাড়ি, সাইডে সিথি করে চুল খোপা করে দিয়েছে বেলি ফুল দিয়ে, আর হালকা কিছু গহনা আর হালকা সাজ, ঘোমটা দেইনি। খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে, যদিও ছয় বছর আগেও আদ্রিয়ান একবার কাছে এসেছিলো আমার কিন্তু সেটাতো ওদের আগে। ওইদিনের পর তো আর সেভাবে কাছাকাছি আসা হয়নি, সেদিন আদ্রিয়ান সেন্সে না থাকলেও আজতো তা নয়। হঠাৎ দরজা লাগানোর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো, না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান এসছে। তাই বিছানার চাদরে নখ ঘসছি। ও ধীর পায়ে এসে আমার সামনে বসল। আমি মাথা নিচু করেই আছি। ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার থুতনি ধরে মুখটা উচু করে ধরে বলল

– বিয়ের ছয় বছর কেটে যাবার পরেও এতো লজ্জা? যদিও আমার কিছু মনে নেই কিন্তু..
.
আমি ওর হাত সরিয়ে উঠে দাড়িয়ে গেলাম। ও এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– জানো এখানে আসতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে আমাকে !
.
– পঞ্চাশ হাজার?
.
– হুমম.. কী অবস্হা বলোতো? দরজার বাইরে সবগুলো ধরেছিলো ঢুকতে গেলে ওদের পাওনা দিতে হবে। ওদের বললাম কী শুরু করেছিস তোরা আমার একটা মেয়েও আছে ভাই আর তোরা? কিন্তু ওরাতো ওরাই। তবে একদিক দিয়ে ভালোই হলো বলো? প্রথম কাছে আসাটাতো ফিল করতেই পারিনি তাই আজ..
.
বলেই আমার ঘারে একটা কিস করতেই ওকে ছাড়িয়ে হালকা দূরে সরে দাড়লাম আমি। ও এসে একটানে আমার চুলের খোপা খুলে দিলো। তারপর পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল
.
– আজ পালাতে দেবোনা জানপাখি। আজ সজ্ঞানেও আছি, মনে অনুভূতিও আছে আর অফুরন্ত ভালোবাসাও আছে। সেদিন তোমার অনুমতি নিয়েছিলাম কি না জানিনা। তবে আজ চাইছি। তোমাকে নিজের জ্ঞানে নিজের অনুভূতির সাথে নিজের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে চাই। So..may I?

ওর ধীরকন্ঠে বলা প্রতিটা শব্দ আমাকে কাপিয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট ছিলো। সারা শরীর জমে আছে আমার, কথা সব গলায় আটকে আছে। তাই আমি কিছু না বলে উল্টো ঘুরে ওকে জরিয়ে ধরলাম। আর এতেই ও ওর উত্তর পেয়ে গেছে। তাই আমাকে কোলে তুলে নিলো। আর আমি মাথা নিচু করে আছি মাথা তুলে তাকাতে পারছিনা। ও ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে লাগল আর আমি ওর সেরওয়ানী শক্ত করে ধরে আছি।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ওর উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। আমি ভ্রু নাচাতেই ও আমার নাকে নাক ঘষে বললো
.
– ঘুম কেমন হলো জানপাখি?
.
ওর কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম আবার। ও মুচকি হেসে বলল
.
– এতো লজ্জা কোথায় পাও বলোতো? কালকে রাতে তো..
.
ও আর কিছু বলার আগেই আমি ওর মুখ চেপে ধরে বললাম
.
– অসভ্য।
.
ও আমার হাতের তালুতেই কিস করতে লাগল। আমি সাথে সাথেই হাত সরিয়ে উঠতে নিলেই ও টেনে ওর বুকে ফেলে গালে ঠোট ছুইয়ে বলল
.
– একটু পরে যাওনা?
.
– থামোতো তুমি। অনেক বেলা হয়েছে ছাড়ো।
.
ও বেবি ফেস করে বলল
.
– আচ্ছা একটা কিস দাও!
.
– ছাড়বে তুমি?
.
– নাহ দিলে ছাড়বোনা।
.
কী আর করার না দিলে যে ছাড়বেনা তা আমিও জানি তাই বাধ্য হয়েই ওর গালে একটা কিস করে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। লং একটা সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বেড়তেই দেখি ও গম্ভীর মুখে খাটে বসে আছে। কিছু না বলেই ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। কিছুক্ষণ পর বেড়িয়ে এসে দ্রুত রেডি হতে লাগল। আমি অবাক হলাম। ওকে জিজ্ঞেস করবো কিছু কিন্তু ওর তাড়হুরো দেখে পারছিনা। ও এসে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– মিষ্টির খেয়াল রেখো আর আমি কখন ফিরবো জানিনা তাই টেনশন করোনা আর হ্যা ফোনে না পেলেও চিন্তা করবেনা বন্ধ থাকতে পারে।

এটুকু বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর যাওয়ার দিকে। এইভাবে কোথায় গেলো ওও? আবার কী হলো?
এটুকু বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর যাওয়ার দিকে। এইভাবে কোথায় গেলো ওও? আবার কী হলো? অনেক কষ্টে সবকিছু ঠিক হয়েছে, এখন নতুন করে আর যেনো কোনো বিপদ না হয় আল্লাহ। আবার নতুন করে কিছু হারানোর মতো শক্তি আমার নেই। খুব অসস্হি লাগছে মনে হচ্ছে আবার কিছু একটা হবে। কিন্তু সেটা কী? সেটাই বুঝতে পারছিনা। কিছুক্ষণ এসব নিয়ে চিন্তা করে তারপর উঠে চুলটা শুকিয়ে নিয়ে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে দেখি মিষ্টি,হিয়াজ, তিথি খেলছে। আর ভাইয়া আপিরা সবাই ওরা সবাই সোফায় বসে গল্প করছে। মিষ্টি আমাকে দেখেই ছুটে এলো আমি হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম
.
– বাহবা ভাই বোনদের পেয়ে মাম্মাকেই ভূলে গেছো?
.
মিষ্টি না বোধক মাথা নাড়ল। তারপর বলল
.
– বাবাই কোথায় গেলো?
.
– আসলে তোমার বাবাই এর একটু কাজ পরে গেছে। কাজ সেড়েই চলে আসবে। তুমি ওদের সাথে খেলো যাও।
.
আমি মিষ্টিকে নামিয়ে দিতেই ও ছুটে চলে গেলো খেলতে। আমি গিয়ে সোফায় ওদের কাছে বসতেই ওরা সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগল। সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– কী?
.
আমার কথা শুনে সবাই হাসি থামিয়ে সিরিয়াস মুখ করে একসাথে বলল
.
– নাথিং।
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। ওরা আবারো মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। আমার এবার একটু রাগ লাগল তাই রাগী লুক নিয়ে তাকালাম ওদের দিকে। হঠাৎ আপি আর জাবিন এসে ধপ করে আমার পাশে বসে পরল, আপি কানের কাছে বলল
.
– সো বেইবি কালকে কী কী হলো?
.
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম আপির দিকে। জাবিন দ্বীগুন উৎসাহ নিয়ে বলল
.
– ভাবী বলোনা কী হয়েছে?
.
আমি এবার একটা মেকী হাসি দিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– একটা কাজ করলেই পারতে! বেডরুমে সি সি ক্যামেরা লাগিয়ে নিতে। তাহলে কষ্ট করে আর আমাকে জিজ্ঞেস করতে হতোনা তাইনা?

দুজনেই থতমত খেয়ে গেলো, জাবিন আমতা করে বলল
.
– ছি ছি আমাদের ওসব দেখার সখ নেই। তাইনা হিয়া আপু?
.
আপিও জাবিনে সাথে তাল মিলিয়ে বললো
.
– হ্যা তাইতো।
.
আমি এবার দুজনের দিকে তাকিয়েই বললাম
.
– তাহলে শোনার শখ আছে তাইনা?
.
ওর দুজনেই একসাথে আমার দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে কফিতে কনসিনক্রিয়েট করলো।
.
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে কফিতে কনসিনক্রিয়েট করতে গেলেই আদিব ভাইয়া বলল
.
– আদ্রিয়ান কোথায় গেলো বলোতো? তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে গেলো কিছু না বলেই?
.
– জানিনা ভাইয়া। কিছু বলেনি আমাকে। বললো কাজ আছে। আর টেনশন করতেও বারণ করলো, ফোন বন্ধও থাকতে পারে।
.
অভ্র চিন্তিত মুখ করে বলল
.
– কিন্তু হঠাৎ কোথায় গেলো? আমি যেতে চাইলাম আমাকেও নিলোনা?
.
– জানিনা তো। আসলে জিজ্ঞেস করে দেখা যাবে।
.
এরপর সবাই মিলে নানা বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলাম। ব্রেকফাস্ট টেবিলেও বাবা মামনি জিজ্ঞেস করেছে আদ্রিয়ানের ব্যাপারে। আমি একি উত্তর দিয়েছি। আর মিষ্টিতো সারাদিনি ঘুরে ঘুরে জিজ্ঞেস করছে যে বাবাই কোথায়। আমি ওকে কোনোমতে সামলে নিচ্ছি। দুপুর বারোটা বাজে আদ্রিয়ানকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন সুইচড অফ। কয়েকবার কল দেবার পরেও ফোন বন্ধ পেলাম। যদিও ও বলেছিলো যে ফোন বন্ধ থাকতে পারে তবুও মনের দিক দিয়ে শান্তি পাচ্ছি না। লাঞ্চ টাইম হবে যাবার পরেও ও এলোনা। ও বলে গেছে দেরী হবে তাই কেউ টেনশন না করলেও আমার মন কেমন যেনো করছে আর সেটা কেনো তা বুঝতে পারছিনা। তাছাড়া সন্ধ্যার পর অভ্রর বাবা আসবে। আর এখন বিকেল হতে চললো ওর কোনো পাত্তাই নেই? ওরা সবাই ওপরে বসে কথা বলছে আন্টি ওনাদের কীকরে আপ্যায়ন করবে সেই ব্যবস্হা করছে। আমি সোফায় মুখ চেপে ধরে সোফায় বসে আছি।

বিকেলে আদ্রিয়ান ফিরলো। আদ্রিয়ানকে ফিরতে দেখে আমি যেনো জানে পানি পেলাম। আর মিষ্টি দৌড়ে গেলো আদ্রিয়ান মিষ্টিকে দৌড়ে আসতে দেখেই আদ্রিয়ান মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো। মিষ্টি আদ্রিয়ানের গলা জরিয়ে ধরে ভ্রু কুচকে বললো
.
– বাবাই কোথায় গেছিলে তুমি? জানো এত্তোগুলা মিস করেছি।
.
আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– তাই? আমিও তো আমার মা টাকে এত্তো এত্তো গুলা মিস করেছি। তাইতো কাজ করে তাড়াতাড়ি চলে এলাম।
.
এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– সবাইকে বলে, রুমে এসো একটু ?
.
এটুকু বলেই মিষ্টিকে কোলে করে রুমে চলে গেলো। আমিও সবাইকে আদ্রিয়ান চলে এসছে সেটা বলে রুমে গেলাম। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। আমি ঢুকতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– ড্রেসটা একটু বেড় করে দাও তো ফ্রেশ হবো।
.
আমি কাবার্ড থেকে টিশার্ট আর থ্রি কোয়াটার একটা প্যান্ট বের করে দিয়ে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। ও মিষ্টিকে কোল থেকে নামিয়ে বলল

– তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
মিষ্টি মাথা নাড়ল আর আদ্রিয়ান ওয়াসরুমে ঢুকতেই আমি মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বসলাম। কিছক্ষণ পর আদ্রিয়ান এসে মিষ্টিকে নিয়ে ওর কোলে বসালো। মিষ্টি বলল
.
– এখন আর কোথাও যাবেনা আমাকে গল্প শোনাবে?
.
আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম
.
– মিষ্টি বাবাই কাজ করে ক্লান্ত হয়ে এসছে একটু রেস্ট করতে দাও?
.
আদ্রিয়ান হেসে মিষ্টির গালে চুমু দিয়ে বলল
.
– আমার মেয়ের সাথে থাকলে আমার কোনো রেস্টের দরকার নেই বুঝলে?
.
মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল
.
– ইয়েস। মাম্মা কিছু বোঝেনা।
.
– হ্যা তোর মাম্মা আসলেই কিছু বোঝেনা।
.
বলে দুজনেই হাইফাইভ করলো আর হাসতে লাগল। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওদের দিকে। তারপর রেগে গিয়ে বললাম
.
– কী বললে তোমরা? আমি কিছু বুঝিনা। মানে ইনডিরেক্টলি আমাকে বোকা বললে?
.
দুজনেই হাসি থামিয়ে অবাক মুখ করে একে অপরের দিকে তাকালো তারপর একসাথে আমার দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল

– কই নাতো? আমরা কখন তোমাকে বোকা বললাম? আমিতো বোকা মিষ্টির মাম্মাকে বলেছি তাইনা মিষ্টি?
.
মিষ্টিও তাল মিলিয়ে বলল
.
– হ্যা তাইতো
.
আদ্রিয়ান দাত বাড় করে হাসি দিয়ে বললো
.
– দেখলে? তোমাকে বলিনি।
.
– ওহ আচ্ছা!
.
পরক্ষণেই হুস এলো মিষ্টির মাম্মাতো আমিই। বাপ বেটি মিলে বোকা বানাচ্ছে আমাকে? আমি ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলো। পারলে হেসে কুটিকুটি হতো। আমি রেগে চেচিয়ে বললাম
.
– চুপপপপ।
.
দুজনেই এক্কেবারে হয়ে সিরিয়াস হয়ে বসে রইলো।
.
– বাহ বাহ। আমে দুধে মিশে গেলো আর আমি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি। থাকো তোমরা বাপ বেটি মিলে আমি গেলাম। হুহ।
.
বলে রুম থেকে বেড়োতে না বেড়োতেই দুজনের অট্টহাসির শব্দ পেলাম। সেই শব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলাম। তবে এক প্রশান্তি আছে অদ্ভুত প্রশান্তি। যেখানে হেরেও জিতে যাওয়ার এক অব্যাক্ত আনন্দ।
.
সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছি। সবার মধ্যেই একটা আনন্দ মুখর ভাব। কারণ অভ্রর বাবা মা এসেছে। আর আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলার পর সামনের মাসে বিয়ের ডেট ও ফিক্সট হয়ে গেছে। জাবিন লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। আর অভ্র দুই হাত এক করে দাড়িয়ে আছে। এবার ওনাদের বিদায় দেবার পালা। আমরা সবাই ওনাদের থাকতে বলেছি কিন্তু ওনারা থাকবেনা। আঙ্কেল আন্টি বেড়িয়ে যাবার পর অভ্র এসে জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে আর বলল
.
– থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার।

আদ্রিয়ান কিছু না বলে মুচকি হেসে অভ্রকে জরিয়ে ধরল। তারপর আদ্রিয়ানকে ছেড়ে জাবিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, জাবিন চোখ নামিয়ে নিলো। ওরা সবাই চলে যেতেই জাবিন আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– লাভ ইউ সো মাচ ভাইয়া।
.
– লাভ ইউ টু মাই পুটি।
.
সবাই আজ ভীষণ খুশি। আমি হাত ভাজ করে দাড়িয়ে দেখছি আমার এই পরিপূর্ণ পরিবারকে। হঠাৎ পেছন থেকে মামনি আমার কাধে হাত রাখল। আমি হেসে মামনিকে এক হাতে জরিয়ে ধরলাম। মামনি বলল
.
– আমি বলেছিলাম না তুই আমার পরিবারের সৌভাগ্য। দেখ তুই বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথেই সব কিছুই শুভ হচ্ছে।
.
আমি কিছু না বলে মামনিকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে রইলাম। আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছি। ওর আর মিষ্টির মুখের ওই হাসি দেখেই আমি আমার সারাজীবণ পার করে দিতে পারবো।
.
রাতে শুতে যাবো। মিষ্টির বায়না আজ আদ্রিয়ানের পাশে শোবে। তাই আমি ইচ্ছে করেই মুখ গোমড়া বললাম
.
– ওহ এখন বাবাইকে পেয়ে আমায় ভূলে গেলে নাকি?
.
মিষ্টি চিন্তিত মুখ করে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
.
– একদিন বাবাইর কাছে শোবো? একদিন তোমার কাছে। আর আরেকদিন দুজনের মাঝখানে।

আমি আর আদ্রিয়ান একে ওপরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলাম। তাই আদ্রিয়ান মাঝখানে আর আমরা দুজনেই ওর দুপাশে শুয়ে পরলাম আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমাদের দুজনকে ওর বুকের দুপাশে নিয়ে জরিয়ে ধরল। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম। এতোরাতে কোথায় গেলো? আমি উঠে ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম লাইট অফ মানে ওখানে যায়নি। তাই উঠে ব্যালকনিতে তাকিয়ে চমকে গেলাম। আদ্রিয়ান রেলিং ধরে অাকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– উঠলে কেনো?
.
– কী হয়েছে তোমার?
.
– খুব তাড়তাড়িই নেক্সট অপারেশন জয়েন করতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি।
.
– ঐ গ্যাং টাকে ধরার জন্যে?
.
– ঐ ফাইলটা ওদের হাতে এসে গেছে।
.
ওই কথা শুনে চমকে গেলাম অামি। অবাক হয়ে বললাম
.
– মানে?
.
– মানে পাচ বছর আগে পুলিলকে টাকা খাইয়ে ফাইলটা হাত করেছে।
.
– সিট!
.
– ভূলটা আমারি ছয় বছর আগেই সফটওয়্যার টা ডিসএবল করেই যাওয়া উচিত ছিলো আমার বাট ঐসব ঘটনার চক্করে ভূলেই গেছিলাম
.
– বাদ দাও যা হয়েছে সেটা বদলানো যাবেনা।
.
– হুম। ওরা নেক্সট ব্লাস্ট যেদিন যেখানে করবে সেদিনি সেখানে হবে অপারেশন।
.
– তোমার কী দরকার যাওয়ার? তুমিতো আর অফিসিয়াল কোনো অফিসার নও। তুমি অফিসারদের জাস্ট একটা প্লান বানিয়ে দিয়ে দাও।
.
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আমার জানপাখি এই কথা বলছে? যে কী না মাত্র পনেরো বছর বয়সেই নিজের প্রাণের কথা না ভেবে সাধারণ জনগনের প্রাণের কথা ভেবেছে?
.
– ভয় হচ্ছে আদ্রিয়ান। নতুন করে আবার তোমাকে হারাতে পারবোনা আমি।সেই শক্তি আমার আর নেই আদ্রিয়ান।
.
– সত্যিই কথা বলতে কী জানো? এবারে আমারো ভয় লাগছে। এতোবছর পর তোমাদের কাছে পেলাম। মিষ্টিকে পেলাম। জানো মিষ্টির বাবাই ডাকটা শুনলে কতো আনন্দ হয় আমার। এগুলো আবার হারিয়ে ফেলতে চাইনা আমি।
.
আমি ঘুরে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বললাম

– আদ্রিয়ান এভাবে বলো না প্লিজ।
.
– ভয় পেয়োনা! যেটা হবার সেটাই হবে। তবে একটা কথা দেও আমাকে?
.
– কী কথা?
.
– যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি শক্ত থাকবে সকলকে সামলাবে। উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথাতেও আনবেনা? তোমাকে মিষ্টির জন্যে হলেও তো বাচতে হবে তাইনা?
.
আমি ছলছলে চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান তুমি..
.
– প্রমিস?
.
– আমি..
.
– প্রমিস?
.
আমি একটা শ্বাস নিয়ে চোখে পানি ফেলে বললাম
.
– হুম প্রমিস।
.
আদ্রিয়ান আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরল।

এভাবেই একসপ্তাহের মতো কেটে গেলো জাবিনের বিয়ের তোরজোর। আদ্রিয়ান আর জাবিনের দুষ্টুমি। পরিবারের সবার হাসি মজা আর আনন্দের সাথে। তবে সারাদিন আদ্রিয়ান সবার সাথে হাসি আর আনন্দের সাথে কাটালেও রাতে ওর ভেতরে চাপা টেনশনটা ঠিকি কাজ করে।
.
আজ রাতে আদ্রিয়ান রুমে এসে বলল
.
– অনি ব্যালকনিতে এসো কথা আছে।
.
আমি ব্যালকনিতে গিয়ে ওর পাশে দাড়তেই ও গম্ভীর মুখে বলল
.
– অপারেশন টা কাল হবে। আর কোথায় হবে জানো?
.
– কোথায়?
.
– তোমাদের হসপিটালে।
.
– হোয়াট? বাট এতো জায়গা থাকতে আমাদের হসপিটালই কেনো?
.
– ঐ টিমের বস কে জানো?
.
– কে?
.
– রিকের ছোট ভাই।
.
– কিন্তু পুরো টিমকে তো তুমি ধরে ফেলেছিলে?
.
– ও তখন ছিলোনা টিমে। কিন্তু পরে এই ছোট একটা টিম তৈরী করেছে।
.
– বদলা নিতে চায়?
.
– হয়তো।
.
– প্লান কী এবারের?
.
– তোমরা স্বাভাবিক ভাবেই হসপিটালে যাবে ওকে? এরপর কী করতে হবে আমিই তোমাকে বলব। আর অভ্রকেও বলে রেখেছি কী করতে হবে।
.
– হুম।
.
ও আমাকে জরিয়ে ধরে বলল

– ভয় পেয়োনা। আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। কালকে একটাও নিরীহ মানুষকে মরতে দেবোনা আমি। প্রয়োজনে নিজের জীবণ দিয়ে সবাইকে বাচাবো।
.
– আদ্রিয়ান?
.
– ব্যাস। এবার আর কোনো কথানা চলো ঘুমাতে যাবো। কালকে অনেক বসে আছি।
.
হসপিটালে কেবিনে বসে পেসেন্ট দেখছি। আর আদ্রিয়ানের ইনস্ট্রাকশনের জন্যে ওয়েট করছি। কিন্তু মনের ভেতর প্রচন্ড ভয় কাজ করছে কী হবে আজ? আদ্রিয়ান আজ আসার সময় মিষ্টিকে অনেক আদর করে এসছে। আর আন্টির হাতে খেয়ে এসছে। আন্টি বেশ অবাক হয়েছে ওর এই আবদারে। কিন্তু ওর এই আচরণ আমার ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। নেক্সট পেসেন্ট ঢোকার জন্যে অপেক্ষা করবো তার আগেই আদ্রিয়ান আমার কেবিনে ঢুকলো। আমি ওকে দেখে দাড়াতেই ও এসে আমার হাত ধরে হাটা দিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
.
– চুপচাপ চলো।
.
বলেই আমাকে একটা রুমে নিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো
.
– এইখানেই চুপচাপ বসে থাকো, কেউ নক করলেও দরজা খুলবেনা আর সাড়াও দেবেনা। আমি এলে নিজেই ডাকবো তোমায়, সো ডোন্ট মুভ ওকে?
.
– কিন্তু…

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ও চলে গেলো। আমি ওখানে বসে আছি বাইরে কিছু হচ্ছে বুঝতে পারছি কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছে খুব। হঠাৎই কেউ জোরে জোরে দরজায় আঘাত করছে হয়তো ভাঙার আওয়াজ। আমি ভয়ে এক কোণায় গুটিশুটি মেরে বসে আছি। না জানি কী হয়। হঠাৎ দরজা ভেঙ্গে কিছু লোক ঢুকলো ওনাদের দেখে ভয়ে গুটিয়ে গেলাম আমি। আমি দৌড়ে পালাতে গেলে ওদের মধ্যে একজন আমার হাত ধরে ফেলল। এরপর দুজন আমার দুহাত ধরে রেখেছে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
.
– কারা আপনারা? আর আমাকে কেনো ধরে রেখেছেন।
.
একটা লোক বলল
.
– তুমিই ঐ আদ্রিয়ানের বউ তাইনা? ওর কলিজার টুকরা?
.
এটুকু বলেই একটা মাঝারি সাইজের বোম বের করে আমার আমার পেটে জোর করে কী দিয়ে যেনো বেধে দিলো। তারপর অট্টোহাসি দিয়ে বলল
.
– এবার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের বুঝবে। আপন কাউকে হারানোর যন্ত্রোণা কতো!
.
বলেই আমাকে ওখানে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গেলো। অামি বোমটার দিকে দেখলাম মাত্র এক ঘন্টা বত্রিশ মিনিট বাকি। সময় যথেষ্ট থাকলেও আমি নিরাপদ নই। ভয়ে হাত পা কাপছে অামার এবার খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারলাম না। বেশ দশ মিনিট পর আদ্রিয়ানরা ছুটে এসে আমার গায়ে বোম বাধা দেখে বলল
.
– ও সিট যেই ভয়টা করেছিলাম সেটাই হলো।
.
আমি হিচকি দিয়ে কাদছি ও এসে আমার হাত ধরে উঠিয়ে বলল
.
– ভয় পেয়োনা কিচ্ছু হবেনা এখোনো এক ঘন্টা পচিশ মিনিট আছে।

অভ্র: স্যার বম ডিফিউস করতে হবে।
.
আদ্রিয়ান: এতো সহজ নয় অভ্র এটা সেই সফটওয়্যার এর বম একে কেবল কম্পিউটার এর মাধ্যমেই ডিফিউস করতে হবার।
.
– কিন্তু স্যার?
.
– অভ্র এখান থেকে সবচেয়ে কাছে বিশাল মাঠযুক্ত এরিয়া নিয়ে কম্পিউটার ল্যাব কোথায় আছে?
.
– স্যার কুড়ি মিনিট লাগবে যেতে। ICR LAB
.
– ল্যাবটা দুই মিনিটে খালি করতে বলো আমি ওখানে যাবো। মাঠেও যেনো কেউ না থাকে।
.
– ও্ ওকে
.
– আর তোমারা ওদের নিয়ে পুলিশ স্টেশনে চলে যাও।
.
– কিন্তু স্যার আপনি…
.
– যেটা বলছি সেটাই করো।

Infinite Love part 75+76+77+78

আর কিছু না বলে আমার হাত ধরে বাইরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ফাইলটাও ওর কাছে। ল্যাবের কাছে এসে গাড়ি থামতেই আমার দিকে তাকিয়ে দেখল আমি কাপছি আমার হাত ধরে বলল
.
– বিশ্বাস করো আমাকে?
.
– হ্ হুম
.
ও আমাকে নিয়ে ল্যাবে ঢুকে একটা চেয়ারে বসালো আমাকে তারপর চারপাশে খুজে প্লাস জাতীয় কিন্তু প্লাস না, সেটা দিয়ে আমার সাথে যেটা দিয়ে বোম বেধেছে সেটা কেটে বমটা সরিয়ে ফেলল। মাত্র 45 মিনিট আছে। আমি ওর হাত ধরে বললাম
.
– চলো এখান থেকে।
.
– নাহ। আমাকে সফটওয়্যার টা ডিসট্রয় করতে হবে কারণ এটা আজ ছেড়ে দিলে কাল আবার কেউ মরবে।
.
– আদ্রিয়ান পাগল হয়ে গেছো? মাত্র বেয়াল্লিশ মিনিট আছে।
.
– আই নো বাট আই কান্ট কম্প্রোমাইস।
.
– ওকেহ তাহলে আমিও থাকবো।
.
– পাগলামো করোনা যাও।
.
– আমি যাবোনা।

– অনি প্লিজ মিষ্টির কথাটা ভাবো।
.
– তোমাকে এখানে একা ফেলে যেতে পারবোনা আমি।
.
আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– সরি।
.
বলেই একটা ওখান থেকে একটা আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি চিৎকার করে বলছি আমাকে নামানোর জন্যে কিন্তু ও আমাকে গেটের বাইরে একটা গাছের সামনে নামিয়ে জোর করে বেধে দিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– মিষ্টিকে দেখে রেখো। ওকে বলো ওর বাবাই ওকে খুব ভালোবাসে আর ওর সাথেই থাকবে। বাড়ির সবাইকে সামলে রেখো
.
আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– প্লিজ আদ্রিয়ান..

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো ভেতরে আর আমি ছটফট করে যাচ্ছি। চোখ দিয়ে অবিরাম ধারায় পানি পরছে। যদি সত্যিই আজ আদ্রিয়ানের কিছু হয় আমি মরে যাবো। আধঘন্টা পর হঠাৎ চারপাশ কাপিয়ে বিস্ফোরোণ হলো। আমি জোরে একটা চিৎকার করে উঠলাম। আমার মনে হচ্ছে আমার দুনিয়া থেমে গেছে। আমি নিঃশ্বেস হয়ে গেছি। জীবণটাও থেমে গেলো, মনে হচ্ছে এখানে কোনো রং নেই, সবটাই ধূসর। আর কিচ্ছু নেই সব শেষ!!

Infinite Love last part