Infinite Love part 71+72+73+74

Infinite Love part 71+72+73+74
Writer: Onima

কথা শেষ হবার আগেই ও আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল। অনেকবার জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাইনি। ও সোজা টেনে ছাদে নিয়ে দাড় করালো আমাকে। তারপর হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে দেখছি ওকে। ওর চোখ লাল হয়ে আছে আমি তাড়তাড়ি ওর কপালে হাত দিলাম আর ওর কপালে হাত পরতেই আমি চমকে গেলাম। প্রচন্ড গরম। এতোটা জ্বর এসছে ওর? অভ্র তো বলছিলো যে সারাদিন ছাদে ভিজেছে। আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম

– আদ্রিয়ান তোমার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তুমি..
.
আদ্রিয়ান আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে মলিন হেসে ক্লান্ত কন্ঠে বলল
.
– শুধু বাইরে দিয়ে কতোটা পুড়ছে সেটাই দেখছো তাইনা? ভেতরটা তো পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সেটা দেখছো না?
.
আমি কিছুটা অবাক হলাম ওর মুখে তুমি শুনে, পরে বুঝলাম যে এখন ও সেন্সে নেই জ্বরের ঘোরে আছে আর ও এখন সেটাই বলবে আর সেটাই করবে যেটা ওর মনে আছে। কৃত্তিম কনো অনুভূতি ও প্রকাশ করবেনা। তাই আমি কিছু বলবো তার আগেই ও বলল
.
– তা দেখবে কীকরে? তুমিতো কখনো আমার ভেতরে ঢুকতেই পারোনি তাইতো সারাজীবন শুধুহ্ শুধু বাইরেটাই দেখে এসছো।
.
বলেই একটা শ্বাস নিলো। আমি উত্তজিত হয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান তোমার খুব জ্বর শরীরে কদিন আগে সার্জারী হয়েছে প্লিজ আমার কথাটা..
.
এবারেও কথাটা শেষ করার আগেই আদ্রিয়ান বলল
.
– আমার টা ছাড়ো! এবার তুমি বলো, কেমন আছো? নিশ্চই খুব ভালো? আফটার ওল তোমার অশান্তি সব কষ্টের কারণ টাই তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছে।
.
ওর কথা শুনে বুক ফেটে যাচ্ছে, কোনোমতে নিজের কান্না আটকে বললাম
.
– আদ্রিয়ান কেনো এসব বলছো?
.
আদ্রিয়ান পুরো মাতালদের মতোই করছে। ও ভ্রু কুচকে বলল
.
– আমি কখন বললাম? এগুলো তো তুমিই বলেছো আমাকে, নইলে তো আমি জানতেই পারতাম নাহ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলাম। তারপর নিজেকে সামলে বললাম
.
– আদ্রিয়ান এখন তুমি অসুস্হ এসব কথা পরেও বলতে পারবে এখন ভেতরে চলো
.
আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– অসুস্হ? সুস্হ ছিলাম কবে যে অসুস্হ হবো?
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ কেনো এসব বলছো? আমি জানি আমি ভুল করে ফেলেছি কিন্তু…
.
ও এবার একটু জোরে বলল
.
– তুমি কোনো ভূল করোনি। তোমার জায়গায় অন্যকেউ থাকতে হয়তো এটাই করতো, আমি সেটা জানি। আর বিশ্বাস করো আমি সেটা বিশ্বাস ও করি।
.
এরপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারো তাকালো আমার দিকে তারপর বুকে হাত রেখে বলল
.
– কিন্তু এটাকে মানাতে পারছিনা। যতোবার! যতোবার মনকে বোঝাতে চেয়েছি যে এটাই স্বাভাবিক ততোবার এই মনটা আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছে যে সত্যিই কী আমি এতোটাই ঘৃণার যোগ্য ছিলাম?
.
আমি এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না কেদে দিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান তখন অবস্হাটা এরকম ছিলো যে..
.
প্রতিবারের মতো এবারেও আমাকে বলতে না দিয়ে বলল
.
– যে তোমার একবার মনে প্রশ্ন অবধি জাগল না যে এগুলো করার পেছনে কোনো কারণ থাকতে পারে কী না? একবারো মনে হলোনা যে আদ্রিয়ানকে একটা বার অন্তত জিজ্ঞেস করে দেখি? শুধু কাবার্ডে রাখা কিছু পোশাক আর গান, এটুকুই যথেষ্ট ছিলো আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস ভাঙার জন্য?
.
আমি ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, এখন ওকে আর আটকাচ্ছি না, বলুক ও আজ, নিজের মনের ভেতরের চাপা কষ্টকে লুকিয়ে রাখতে রাখতে বুক ভারী হয়ে আছে ওর। আজ এগুলো বলে হালকা হোক। ও আবার বললো

– জানো আমার ল্যাবের প্রত্যেকটা রুমে প্রত্যেকটা কোণে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো আছে? আহর্ আর তুমি যখন ল্যাবে যাচ্ছিলে আমি সেটা জানতাম, চোখের আড়াল করতাম না তো তোমাকে, তাই বসে বসে ওখানকার সিসি টিভি ফুটেজ দেখছিলাম। তুমি যখন ঐ কাবার্ড খুলে ওসব দেখে হাটু ভেঙ্গে বসে কাদছিলে খুব কষ্ট হচ্ছিলো তখন, ইচ্ছে করছিলো ছুটে গিয়ে তোমাকে বলি যে প্লিজ এভাবে কেদোনা তুমি যা ভাবছো সেটা না। কিন্তুহ্ কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম, কিন্তু একটা আশা ছিলোযে তুমি আমাকে ফোন করবে আর জিজ্ঞেস করবে যে এসব কী? এই পোশাক আমার কাছে কেনো? সবটা জানতে চাইবে আমার কাছে।
.
এটুকু বলে আবারও একটা শ্বাস নিলো তারপর বলল
.
– হ্যা আমি তখন বলতে পারতামনা ঠিকিই কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করবে। আমি ভেবেছিলাম ঐ সামান্য পোশাক আর গান আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারেনা। আধ ঘন্টা আমি শুধু এই অপেক্ষাতেই বসে ছিলাম যে তুমি আমাকে ফোন করে সবটা বলবে সবটা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু তুমি করোনি।
.
বলে ও আবারো থামলো ওর কন্ঠে কষ্টটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি তাই মাথা নিচু করে ফেললাম। আদ্রিয়ান আবার বলতে শুরু করল
.
– তবুও আমি মনকে বুঝিয়েছি যে এটাই স্বাভাবিক হঠাৎ করে এরকম কিছু দেখলে মনে প্রশ্ন তৈরী হবেই এতে তোমার দোষ নেই। তাই আমি নিজেই ফোন করলাম তোমাকে কিন্তু তুমি তবুও কিছু বললেনা আমাকে উল্টে মিথ্যে বললে যে বাড়িতে আছো। একটু খারাপ লেগেছিলো কিন্তু তবুও নিজেকে বুঝিয়েছি যে এটাই স্বাভাবিক। বাট তোমাকে সত্যিটা বলা যেতো না আর তুমিও আমাকে বিশ্বাস করছিলে নাহ তাই তোমাকে আটকে রাখতে হতো আমার কাছে তাই আমাকে বাধ্য হয়েই তোমাকে জোর করে নিজের কাছে আটকে রাখতে হয়েছে। আর ঐসময় যেই পরিস্হিতি ছিলো আর আমার প্রতি তোমার যে ধারণা ছিলো তাতে তোমাকে মিষ্টি গলায় বললে নিশ্চই আমার সাথে নাচতে নাচতে চলে যেতে না? তাই একটু রুড হতে হয়েছে আমাকে।
.
আমি ওর দিকে তাকালাম কথাটা তো সত্যিই ঐসময় ও জোর করে না করালে ওর বলা কোনো কাজই করতাম না আমি। ও কিছুক্ষণ থেমে তারপর বলল
.
– আর তুমি রাতে খাবার না খেয়ে শুয়ে পরেছিলে বলে তোমার মুখে জোর করে বাসি খাবাল ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম কেনো জানো? কারণ যাতে এরকম আর না করো। কারণ আমি ওখানে সারাক্ষণ থাকতে পারতাম নাহ। আর আমি জানতাম তুমি জেদ করে প্রায়ই না খেয়ে থাকবে। আর তাতে আরো অসুস্হ হয়ে যেতে। তাই তোমাকে জাস্ট ভয় দেখিয়েছি কিন্তু বাসি খাবারটা গিলতে দেই নি। কিন্তু তুমি যখন বারবার আমাকে স্বার্থপর, অমানুষ, ভালোবাসার অযোগ্য বলতে তখন খুব কষ্ট হতো কিন্তু তবুও তোমাকে দোষ দেইনি ভেবেছি ঐ পরিস্হিতে এটাই স্বাভাবিক।

আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল। ও হঠাৎ তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই আমি ধরতে গেলাম ওকে কিন্তু তার আগেই ও নিজেকে সামলে নিলো। আমি কান্নাজরিত কন্ঠে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ রুমে চলো ইউ নিড রেস্ট।
.
ও স্মিত হাসলো তারপর বলল
.
– তুমি যখন কেদে কেদে পরিবারের সবার সাথে কথা বলতে চাইতে তখন তোমার কান্না করা দেখে আমারও বুকটা ফেটে যেতো কিন্তু কিচ্ছু করার ছিলোনা আমার। আর আমাদের বিয়ের দিন রাতে যখন তুমি বারবার বলছিলে যে আমি তোমাকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে বিয়ে করেছি তখনও কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কষ্টের চেয়ে বেশি রাগ লেগেছে আর তাই ওইসব কথা বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু সত্যিই তো এটাই যে আমি ওইসব কখনো কল্পনাতেও আনতে পারিনি।
.
আদ্রিয়ানের গলা এবার হালকা ধরে আসছে আমারো কান্না পাচ্ছে খুব আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে হয়তো বৃষ্টি হবে এখন তাই আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান বলল
.
– জানো যেদিন তুমি বলেছিলে যে আমি না খেয়ে মরে গেলেও তোমার কিচ্ছু যায় আসে না সেদিন একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছিলাম, যে এতোটাই তুচ্ছ হয়ে গেছি অামি তোমার কাছে? কিন্তু তবুও তোমাকে দোষী ভাবিনি ভেবেছি এই মুহুর্তে এটাই হয়তো স্বাভাবিক।
.
কথাটা প্রায় কান্নামিশ্রিত গলাতেই বলেছে ওও। আমি চোখ বন্ধ করে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। আর বৃষ্টিও শুরু হলো, তবে আদ্রিয়ানের সেদিকে খেয়াল নেই। আমার মনে পরল যে ওর গায়ে জ্বর আর ও বৃষ্টিতে ভিজছে। তাই আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও বলল
.
– আমার প্রথম তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলে ভালোবেসে যেই বেসলেট টা পরিয়ে দিয়েছিলাম আমি কোনোদিন ভাবিওনি তুমি সেটাকে অপমান করবে। কিন্তু তুমি করেছো। আমার ভালোবাসাকেও ছোট করেছো। সেদিনো তোমার ওপর রাগ করিনি কিন্তু একটা চাপা কষ্ট ঠিকি পেয়েছিলাম।
.
আমি নিরবে চোখের পানি ফেলছি বৃষ্টিতে দুজনেই ভিজে চুপচুপে হয়ে যাচ্ছি। ও আবারও বলল
.
– আর তুমি যেদিন আমাকে আই হেইট ইউ বললে সেদিন আমার কেমন লেগেছিলো আমি নিজেই জানিনা। সবকিছু ফাকা লাগছিলো নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছিলো। কীকরে পারলে ওটা বলতে?
.
আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– আদ্রিয়ান আমি মন থেকে বলিনি
.
ও ঝাঝালো গলায় বলল
.
– আমি জানি সেটা! কিন্তু কথাগুলো তো আমায় আঘাত করেছে, খুব বেশিই আঘাত করেছে।

ও থেমে একটা শ্বাস নিয়ে ওর বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে উল্টে তারপর বলল
.
– আমি সেইদিন রাতে তোমার কাছে এসেছিলাম কারণ তোমার কাছে থাকলে আমার নিজেকে হালকা মনে হয়, শান্তি লাগে খুব, নিজেকে পৃথিবীতে সেরা সুখী মনে হয়। সেদিন সবার মুখে ওসব শুনে খুব বেশিই কষ্ট লেগেছিল, তারওপর তোমার ঐসব ব্যবহার, সবমিলিয়ে খুব বেশি অস্হির হয়ে গেছিলাম আমি, তাই তোমার কাছে গেছিলাম একটু শান্তির জন্যে, নিজেকে একটু শান্ত করতে, কিন্তু তুমি কী করলে? কিন্তু তুমি কী বললে? আমি..
.
এটুকু বলে ওর ঠোট কামড়ে ধরে চোখ সরিয়ে নিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– ছয় মাস আমার সাথে থেকে, তোমার এটা মনে হয়েছে যে আমি তোমার কাছে নিজের চাহিদা মেটানোর জন্যে যাচ্ছি? মানেহ্ মানে তোমার এই ছয় মাসে আমাকে সত্যিই এরকম মনে হয়েছে? এতোটাই নিচ মনে হয়েছে আমাকে? সেদিন নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিলো একটা নিকৃষ্ট জীব মনে হচ্ছিলো। তোমার মাথাটা বুকে রাখলে আমি আমার সব কষ্ট ভূলে যাই আর তুমি কত সহজে বলে দিলে আমার বুকে মাথা রাখলে তোমার কষ্ট হয় দম বন্ধ হয়ে আসে, জলন্ত লাভা মনে হয়?
.
আমি নিরবে চোখের পানি ফেলছি। আদ্রিয়ান ছলছলে চোখে আবার বললো।
.
– আমার ছয় মাসের দেয়া ভালোবাসার পর তুমি আমাকে I Love you বলেছিলে, কিন্তু আমার মাত্র ছয়দিনের দেয়া কষ্ট তোমার মুখ দিয়ে কতো সহজে I hate you বেরিয়ে গেলো।
.
– আদ্রিয়ান আমি…
.
– আমি বলেছিলাম আমার ভালোবাসাকে কখনো ছোট করোনা কিন্তু তুমি আমার দেয়া বেসলেট টা ছুড়ে ফেলে, আমার কাছে আসাটাকে ডিমান্ড বলে আমার ভালোবাসকে ছোট করেছো
আমি বলেছিলাম যাই হয়ে যাক না কেনো কখনো আমাকে দূরে সরিয়ে দিওনা কিন্তু তুমি দিয়েছো বারবার দিয়েছো।
আমি বলেছিলাম আমার বুকে আঘাত করো না কিন্তু তুমি করেছো বারবার করেছো।
.
আমি এবার আওয়াজ করেই কেদে দিলাম। কিন্তু ও সেই কান্নামিশ্রিত গলাতেই বলল
.
– আমার ছয়দিনের দেয়া কষ্ট তোমাকে আমার ছয় মাসের দেয়া ভালোবাসাকে ভূলিয়ে দিলো? এটাই ছিলো তোমার বিশ্বাস এটাই তোমার ভালোবাসার জোর ছিলো?
.
ও আবারো পরে যেতে নিলে আমি ওকে ধরে ফেললাম ও আমাকে ছাড়িয়ে বলল
.
– আমি রোজ তোমাকে খাইয়ে দিতাম, কেনো জানো? কারণ তোমার মেনটাল কন্ডিশন তখন খারাপ ছিলো, নিজের হাতে খেলে ঠিকভাবে খাবেনা তাই। আমি রোজ তোমাকে মাথায় বিলি কেটে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম কারণ তুমি যেই পরিমাণ স্ট্রেস এর মধ্যে ছিলে তাতে তোমাকে ঘুম আসতোনা সহজে তাই। যতোটা সম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করেছি তোমাকে কিন্তু তুমি বোঝনি। আর বোঝার চেষ্টাও করোনি আমাকে।

আমি এবার কাদতে কাদতে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ আর ভিজোনা ভেতরে চলো। এমনিতেই জ্বর তোমার গায়ে।
.
ও এবার দুই হাত দিয়ে চুল উল্টে নিয়ে বলল একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– তোমারা কেউ বোঝনি আমাকে কেউ না। আচ্ছা আমি কী এতোটাই অযোগ্য ছিলাম যে কারো মনে আমার জন্যে এইটুকু দৃঢ় বিশ্বাস তৈরী করতে পারিনি যে আমি কী করতে পারি আর কী না? বলোনা এতোহ্ এতোটাই খারাপ ছিলাম আমি?
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ এবার চুপ করো।
.
– তোমরা ঠিকিই বলোহ আসলেই আমি কারো ভালোবাসা পাবার যোগ্য না তাইতো কারো মনে সামান্য বিশ্বাস টুকু তৈরী করতে পারিনি আমি। না বাবা- মা না বন্ধু, আর না বউ। সত্যিই আমি কারোর যোগ্য নই কারোর যোগ্য নই।
.
এসব বলেই ও পাগলামো করতে লাগলো, ছাদের ওয়ালে নিজের হাতেই আঘাত করতে লাগল। আমি ওকে ওকে যতবার থামাতে গেছি ততোবার ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমি আর উপায় পা পেয়ে ওকে গিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। ও পর পর তিনবার আমাকে ঠেলে দূরে সরাতে চেয়েছে কিন্তু আমি ওকে ততোই নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ছিলাম একপর্যায়ে আদ্রিয়ান ও আমাকে জরিয়ে ধরল। ওর শরীরের তাপে আমার গা ও পুরে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও একটা শান্তিও লাগছে আজ কতোদিন পর আদ্রিয়ান জরিয়ে ধরল আমাকে, ও আমাকে জরিয়ে ধরেই ঘারে মুখ গুজে দিয়ে বলল
.
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জানপাখি। বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হচ্ছে। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, হৃদপিন্ডে কেউ যেনো হাতুরী দিয়ে আঘাত করছে। না বাঁচতে পারছি আর না মরতে পারছি। ইচ্ছে করছে সব ভূলে যাই কিন্তু মনকে মানাতেই পারছিনা। তোমার থেকে দূরে থাকতে পারছিনা কিন্তু তোমার কাছেও থাকতে পারছিনা। নিজেকেও নিজের কাছে বোঝা মনে হচ্ছে। প্লিজ হেল্প মি জানপাখি প্লিজ হেল্প মি।

ওর প্রত্যেকটা কথা আমার বুকে ছুড়ির মতো আঘাত করছে। কতোটা কষ্ট দিয়েছি ওকে আমি। কিন্তু ওর গায়ের উত্তাপ ফিল করে হুস এলো। যে না ওকে এই জ্বর গায়ে আর ভিজতে দেওয়া যাবেনা তাই ওকে কিছু বলবো তার আগেই ও অনেকটা গা ছেড়ে দিলো। আমি তাড়াতাড়ি শক্ত করে ধরলাম ওকে। তারপর ওর হাত নিজের কাধের ওপর নিয়ে ওকে বহু কষ্টে আমার রুমে নিয়ে এলাম। ভাগ্যিস পুরো গা ছেড়ে দেয়নি তাহলে কীকরে নিয়ে আসতাম ওকে আল্লাহ জানে। নিয়ে আসার সময় অনেক অর্স্ফুট স্বরে অনেক কথা বলেছে কিন্তু ওসব কানে নিতে পারিনি ওকে নিয়ে আসতেই শেষ আমি। ওকে খাটে বসিয়ে কী করবো ভাবছি ওর আর আমার দুজনেরই জামা পুরো ভিজে গেছে আর ওর যে পরিমাণ জ্বর গায়ে যে ভেজা জামাটা রাখা যাবেনা। ও আসাম করে বসে একা একাই বিভিন্ন প্রলাপ করে যাচ্ছে। কিছু বুঝছি কিছু বুঝছিনা। হঠাৎ কারেন্ট ও চলে গেলো, বাইরে ভীষণ বৃষ্টি আর বাজ পরছে। কিছু না ভেবেই ওর গায়ের জ্যাকেট টা আগে খুললাম, তারপর জ্যাকেটের নিচের টিশার্ট টা, ভেতরে বক্সার গেন্জিটা ভেজেনি তেমন ওটা রাখা যাবে গায়ে। কিন্তু প্যান্ট? ওটা কী করবো? আর যাই হোক এটা আমার দ্বারা পসিবল না। তাই অভ্রকে ফোন করতে গিয়ে দেখি ফোনটা সুইচড অফ। সিট! কারেন্ট ও নেই যে চার্জ দেবো! ওর জরটাও ক্রমশ বারছে। এখন আর কিছু করার নেই তাই আমি আগে চেন্জ করে নেই, তোয়ালে দিয়ে ওর গা মুছে দিলাম তারপর ওর কাছ থেকে উঠে যেতে নিলেই ও হাত টেনে ওর কোলে বসিয়ে দিয়ে গলায় মুখ গুজে অস্ফুট স্বরে বলল
.
– আজ আবার ছেড়ে চলে যাচ্ছো আমাকে। প্লিজ যেওনা আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ। প্লিজ!
.
– আদ্রিয়ান আমি জাস্ট চেন্জ করতে যাচ্ছি!
.
ও ওভাবেই মুখ গুজে রেখে বলল
.
– উমহুম! তুমি চলে যাবে আমাকে ছেড়ে
.
বুঝলাম জ্বরে আজকে এর মাথাটাই গেছে। কোনোরকমে ওকে ছাড়িয়ে চেন্জ করে এলাম। এসে দেখি ও খাটে হেলান দিয়ে বসে ঝিমছে। সারারুম অন্ধকার তাই আমি একটা মোমবাতি নিয়ে টেবিলে রেখে জালালাম জালানো শেষ হতে না হতেই কেউ পেছন আমার পেট জরিয়ে ধরে ঘারে মুখ গুজে দিলো। বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান ওর গা পুরে যাচ্ছে জ্বরে। আমি ওকে ছাড়াতে গেলে আরো গভীরভাবে জরিয়ে ধরল আমায়। একেই ওর গায়ের উত্তাপে গা পুরে যাচ্ছে আমার তার ওপর ওর স্পর্শ সব মিলিয়ে আমার অবস্হা করুন। ওকে কোনোরকমে ছাড়িয়ে এনে বেডে বসিয়ে দিলাম সাথে ওর সেই প্রলাপ একদম বাচ্চাদের মতো করছে। আমি তাড়াতাড়ি একটা থার্মোমিটার এনে বললাম

– আদ্রিয়ান হা করো!
.
ও চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আমার খিদে পায়নি। পেলেও খাবোনা তোমার হাতে! সেদিন খাইয়ে দেওনি আমাকে।
.
আমার বেশ হাসি পাচ্ছে ওর কথা শুনে যদিও এই মুহুর্তে সেটা পাওয়ার কথা না। আমি বললাম
.
– হ্যালো! খাবার বেশি হয়নি আমার যে তোমাকে খাওয়াবো। জ্বর মাপবো হা করো।
.
ও হা করে ফেললো যেনো বাধ্য ছেলে। আমি জর মেপে দেখলাম ১০৩ প্রায়। চমকে গেলাম। কী করবো বুঝতে পারছিনা। ওকে ঔষধ খাইয়ে, ওকে ধরে শুইয়ে দিলাম সেটা করতেও একপ্রকার যুদ্ধ করে হয়েছে আমাকে ও কিছুতেই শোবেনা বহু কষ্টে বুঝিয়ে শুইয়েছি। তারপর জ্বরপট্টি দিতে বাটি আর রুমাল এনে ওর বসলাম। তারপর জ্বরপট্টি দিতে লাগলাম। ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। পুরো জেগে আছে কিন্তু জ্ঞানে নেই খালি ভূলভাল বকছে। কিন্তু ওর জ্বর বেরেই চলেছে। আমার প্রায় কেদে দেবার মতো অবস্হা হয়েছে ওর অবস্হা দেখে। একপর্যায়ে কেদেই দিলাম। ও একটানে ওর বুকে নিয়ে ফেললো আমাকে তারপর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল
.
– কাদছো কেনো হুম?
.
ওকে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বললাম
.
– এমন কেউ করে? কে বলেছিল সারাদিন ভিজতে?
.
– কষ্টগুলো সব ধুয়ে নিতে চেয়েছিলাম তো

আমি মাথা উঠিয়ে বললাম
.
– তাই বলে..
.
ও আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল
.
– হুসস। আর কথা বলোনা। এখন তুমি আমার কাছে আছো তো আমার আর কিচ্ছু চাইনা।
.
বলেই আলতো করে আমার ঠোটে ওর ঠোট স্পর্শ করলো। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। ওর গায়ে যেই ব্লাংকেট দিয়েছি সেটা মধ্যেই আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুরিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো তারপর আমার দিকে এগোতেই আমি দুই হাত ওর বুকে দিয়ে আটকে বললাম
.
– আদ্রিয়ান তুমি এখন..
.
– আজকেও দূরে সরিয়ে দেবে? তোমার মধ্যে হারিয়ে যেতে চাই আজকে, সম্পূর্ণভাবে। প্লিজ…
.
আমি ওর বুক থেকে হাত সরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ওকে আজ আর বাধা দিতে ইচ্ছে করছেনা, ও তো আমার হাসবেন্ড আমার বর, ভালোবাসি ওকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি তাহলে কেনো দূরে সরাবো আমি? জানি ও এখন নিজের মধ্যে নেই, হয়তো সকালে উঠে সবটা ভূলেও যাবে, কিন্তু এই মুহুর্তটা আমি নিজের মতো করেই আপন করে নিতে চাই..।
.
আমি ওর বুক থেকে হাত সরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ওকে আজ আর বাধা দিতে ইচ্ছে করছেনা, ও তো আমার হাসবেন্ড আমার বর, ভালোবাসি ওকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি তাহলে কেনো দূরে সরাবো আমি? জানি ও এখন নিজের মধ্যে নেই, হয়তো সকালে উঠে সবটা ভূলেও যাবে, কিন্তু এই মুহুর্তটা আমি নিজের মতো করেই আপন করে নিতে চাই। ও আমার কপালে চুমু দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। আমি সাথে সাথে ওকে দুইহাতে আকরে ধরলাম। ও আরে গভীরভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আমাকে।

সকালে আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে আদ্রিয়ানের বুকে আবিস্কার করলাম। ওর লোমহীন খালিবুকে লেপ্টে শুয়ে আছি আর ও দুইহাতে জরিয়ে ধরে রেখেছে আমাকে। কয়েক সেকেন্ড লাগল ব্যাপারটা বুঝতে। কাল রাতের কথা মনে পরতেই বেশ লজ্জা পেলাম, কিন্তু ঠিক তার পরমুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ও তো এখন বেশ অভিমান আছে আমার ওপর, যেটা করেছে সেটা জ্বরের ঘোরে করেছে, এখন হয়তো ওর কিছুই মনে নেই। ওর জ্বরের কথা মনে পরতেই হাত দিয়ে চেইক করলাম, নাহ জ্বরটা নেই এখন আর। একটু নিশ্চিন্ত হলাম। ওকে ছাড়িয়ে গায়ে একটা চাদর জরিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে সাওয়ার ছেড়ে দিলাম, এখন শুধু ভাবছি এরপর কী? কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে আমার জীবন? এসব ভাবতে ভাবতেই একঘন্টারো অনেক বেশি সময় নিয়ে সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সাওয়ার নিয়ে এসে দেখি আদ্রিয়ান উঠে পরেছে, মাথা চেপে ধরে খাটে বসে আছে। ওর পরনে শুধু একটা দু কোয়াটার প্যান্ট, ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াছে মাথা তুলে গম্ভীর মুখে তাকালো আমার দিকে, আমাকে পা থেকে মাথা অবধি স্কান করে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো, তারপর আবারো মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল। ওর ভাবসাব কিছু বুঝলাম না আমি, তাই গিয়ে খাটের এক কর্ণারে বসলাম। বেশ অনেকটা সময় দুজনেই চুপ করে ছিলাম, এরমধ্যে ও দুবার আমার দিকে তাকিয়ে সাথেসাথেই চোখ নামিয়ে নিয়েছে। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম
.
– বাড়িতে কেউ নেই সবাই মলি আপুর বিয়েতে গেছে।
.
এটা শুনে ও একপলক তাকালো আমার দিকে তারপর আবারো ভ্রু কুচকে মাথা নিচু করে ফেলল। আমি ওর পোশাক এনে খাটে রেখে বললাম
.
– তোমার ড্রেস শুকিয়ে গেছে, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
.
ও কোনো কথা না বলে পোশাক নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলো একবারও তাকায়নি আমার দিকে। আমি কী বলবো বা কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। প্রায় একঘন্টা পর ও ওয়াসরুম থেকে বের হলো, গায়ে সেই বক্সার গেন্জী আর প্যান্ট। আমি ওকে দেখে উঠে দাড়ালাম। ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
.
– কাল রাতে কী হয়েছে তার কিছুই মনে নেই আমার। একচুয়ালি, কাল রাতে আমি সেন্সে ছিলাম না তাই…
.
এটুকু ও বলে থামলো। আমি ওর দিকে তাকালাম আমিতো জানতাম এটাই হবে, এটাই হবার কথা, তাহলে এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার, ওর প্রতি পাল্টা এক অভিমান কেনো কাজ করছে? নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বললাম
.
– জানি! তুমি তো আমাকে এখন এমনিতেই সহ্য করতে পারোনা, তাই কাল রাতে যা হয়েছে সেটা তুমি মন থেকে না ঘোরের মধ্যেই করেছো সেটা বুঝতে পেরেছি আমি। তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে না।
.
কথাটা বলে ওর দিকে আর তাকালাম না। কিছুক্ষণ ওর কোনো আওয়াজ পেলাম নাহ। ও খাট থেকে টি শার্ট টা হাতে নিয়ে চড়া গলায় বলল
.
– এক্সাক্টলি! যেটা হয়েছে সেটা জ্বরের ঘোরে হয়ে গেছে, ইন্টেশনালি কিছু করিনি আমি, It was just an accident. An..and I am sorry for that…।

শেষের কথাটা নরম কন্ঠেই বলল। আমি এবার অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে, চোখ দুটো ছলছল করছে আমার। ও সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর টিশার্ট পরে জ্যাকেট হাতে নিয়ে দ্রুত পদে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
.
ও বেরিয়ে যেতেই আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম, চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। এক্সিডেন্ট? কাল রাতে যা হয়েছে সেটা ওর কাছে জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট মনে হয়েছে? এটা কী করে বললো ও? যেই মুহূর্তটা আমার কাছে ওর সাথে কাটানো আমার সেরা মুহুর্ত বলে মনে হয়েছে সেটাকে ও এক্সিডেন্ট বলে চলে গেলো? গাড়ির আওয়াজ পেয়ে চোখ মুছে ছুটে গেলাম বেলকনিতে, আদ্রিয়ানের গাড়িটা গেইট দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দৌড়ে রুমে এসে বালিশে মুখ গুজে কাদতে লাগলাম। আজ ওর বলা কথাটা খুব বেশিই আঘাত করেছে আমাকে। ও হয়তো নিজেই বুঝতে পারছেনা যে ও কতোবড় আঘাত দিয়ে গেলো আমাকে।
.
পরেরদিন সবাই ফিরে এলো। ঐ দিনের পর থেকে আমি আদ্রিয়ানের সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি, অভ্রর কাছে ফোনও করিনি, তবে অভ্র রোজ ফোন করে আমার খোজ নেয়। আপি আর ইফাজ ভাইয়া এই বাড়িতেই আছে কাল চলে যাবে। বিকেলে ব্যালকনির দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছি। আপি এসে আমার পাশে বসে কফির মগটা বাড়িয়ে দিলো আমি একটু হাসার চেষ্টা চরে মগটা নিলাম হাতে। আপি একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– কতোদিন চলবে এসব?
.
– কোনসব?
.
– তোদের এই মান অভিমান?
.
অামি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। আপি বলল
.
– অনেক তো হলো এবার সব মিটিয়ে নে না?
.
আমি এবারো কিছু বললাম না একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিলাম।

এভাবেই প্রায় আরো দুইমাসের মতো কেটে গেলো, কিন্তু আমাদের অবস্হার কোনো উন্নতি হয়নি বরং একি গতিতে চলছে। আদ্রিয়ান ওর ফ্যামিলির সাথেও যোগাযোগ করেনি এখনো। এরমধ্যে একটাই ভালো খবর আছে সেটা হলো আপি প্রেগনেন্ট, অন্য সময় হলে পুরো বাড়ি মাথায় করতাম খুশিতে কিন্তু এখন সেই মানসিক অবস্হা নেই। তবে ইদানিং শরীরটা ভালো লাগছে না, কেমন একটা দূর্বল ফিল হয়, মাঝেমাঝে মাথা ঘোরে,গা টা গুলিয়ে আসে। হয়তো খাওয়া দাওয়ায় অনিয়মের কারণে এমন হচ্ছে। গত মাসে পিরিয়ড ও মিস হয়েছে কিন্তু আগেও এক বার এরকম হয়েছে তাই ওতো ভাবিনি। রাতে টেবিলে বসে পড়ছি, কিন্তু পড়াতে তেমন মনোযোগ দিতে পারছিনা। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মনোযোগ দেবার পরীক্ষা আছে সামনের মাসে। হঠাৎ ফোন এলো। ফোন তুলে দেখি অভ্র, রিসিভ করে বললাম
.
– হ্যালো?
.
– কেমন আছেন ম্যাম?
.
– এইতো আছি? তোমাদের কী খবর?
.
– তোমাদের? ( ফোড়ন কেটে )
.
– ইয়ে আসলে..
.
– স্যার ফিসিকালি ভালো আছে কিন্তু মেনটালি একদমি ঠিক নেই ম্যাম।
.
একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম কিন্তু কিছু বললাম না। ও আবার বলল
.
– স্যার ইউ কে চলে যাচ্ছেন।
.
– ওহ
.
– একেবারেই চলে যাচ্ছে
.
শুনেই বুকের ভেতরে মোচর দিয়ে উঠল। বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে আসছে। একটা চাপা আর্তনাদ বের হচ্ছে ভেতর থেকে। কোনরকমে নিজেকে সামলে বললাম

– ক্ কবে যাচ্ছে?
.
– এই শুক্রবার । যাওয়ার প্লান দুই মাস আগেই করেছে কিন্তু আমি জানতাম না। এখানে ওনার যেসব কাজ আছে সব শেষ করতে এই দুই মাস লেগেছে। আমাকে আজকেই জানালো।
.
আমি নিজের ঠোট কামড়ে ধরে কান্না আটকিয়ে বললাম
.
– ওহ।
.
– স্যারকে আটকাবেন না ম্যাম?
.
– এটা ওর ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত অভ্র, আমি আটকানোর কে?
.
– ম্যাম..
.
আমি আর কিছু না শুনে ফোন কেটে কেদে দিলাম। চলে যাচ্ছে ও? আমাকে ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা কীকরে করলো ও? আমিও আটকাবোনা ওকে। আমার একটা ভূলের ও যদি এতো বড় শাস্তি দিতে চায় তো দিক। ও যদি অামাকে ছেড়ে থাকতে পারে আমি কেনো পারবোনা? এসব ভেবে নিজেই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তুু চোখের পানিকে আটকে রাখতে পারছিনা।
.
ডিনার টেবিলে মনমরা হয়ে খাবার চামচ দিয়ে নেড়ে যাচ্ছি, সেটা দেখে আব্বু বলল
.
– কী মামনী খাচ্ছোনা?
.
আব্বুর ডাকে ধ্যান ভাঙলো কোনোরকমে নিজেকে সামলে বললাম
.
– হ্যা আব্বু খাচ্ছিতো!

আম্মু একটু ইতোস্তত করে বলল
.
– আদ্রিয়ানের কোনো খবর জানো?
.
আমি মাথা নিচু করে আছি। আব্বু বলল
.
– কী হলো অভ্র ফোন করেনি?
.
আমি মাথা নিচু করেই বললাম
.
– ও ইউ কে চলে যাচ্ছে আব্বু?
.
সবাই খাওয়া থামিয়ে দিলো। আব্বু অবাক হয়ে বলল
.
– চলে যাচ্ছে মানে?
.
– ও ইউ কে ফিরে যাচ্ছে একেবারে ( ভাবলেশহীনভাবে)
.
আম্মু বলল
.
– তুমি আটকাবে না ওকে?
.
আব্বু আম্মুকে থামিয়ে বলল
.
– কথা বলেছো ওর সাথে?

আমি মাথা নাড়লাম। আদ্রিয়ানের যাওয়ার খবর শুনে আঙ্কেল আন্টি, আমাদের বাড়ির সবাই অনেক চেষ্টা করেছে ওর সাথে যোগাযোগ করে ওকে থামানোর। কিন্তু লাভ হয়নি।
.
এবারেও মিস হলো পিরিয়ড। এবার একটু চিন্তায় পরলাম। অসুস্হতাও বাড়ছে স্পেশালি বমিটা, কিন্তু সারাদিন ঘরবন্ধি থাকায় কেউ তেমন বুঝতে পারেনি। তবে খেয়াল করেছে কিন্তু ভেবেছে অনিয়ম আর স্ট্রেসে উইক হয়ে পরছি, তাই জোর করে খাওয়ায়। আমিও প্রথমে তাই ভেবেছি কিন্তু এখন আর সেটা ভাবতে পারছিনা। কিন্তু বাড়ির কাউকে জানাইনি ওরা এমনিতেই আমাকে নিয়ে অনেক টেনশনে আছে আর বাড়াতে চাইনা। তাই পরেরদিন মেডিকেল গিয়ে ক্লাস শেষে ওখান থেকেই চেক আপ করতে গেলাম। ম্যাম চেকাপ করে বললেন
.
– তুমি কী ম্যারিড?
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। তারপর ইতোস্তত করে বললাম
.
– জ্বী।
.
উনি আর কিছু জিজ্ঞেস না করে বললেন কাল এসে রিপোর্ট নিতে। সেদিন রাতে অভ্র ফোন করল। রিসিভ করে বললাম
.
– হুম বলো
.
– ম্যাম স্যার কালকে চলে যাচ্ছেন, সন্ধ্যায় ফ্লাইট।
.
– ওহ আচ্ছা!
.
বলেই ফোন কেটে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। শব্দ করে কাদতে লাগলাম। সবকিছু অসহ্য লাগছে এই মুহূর্তে। সব কিছু! নিজেকেই নিজের কাছে বিষাক্ত লাগছে।
.
পরেরদিন ক্লাস করে গেলাম ম্যাম এর কেবিনে। রিপোর্ট নিয়ে বেড়িয়ে দেখি অর্পি ঐশি ইশু দাড়িয়ে আছে। আমি ওদের সাথে কথা না বলেই সোজা হেটে বেড়িয়ে এলাম মেডিকেল থেকে। বাড়ি এসে দেখি আপি এসছে আমি যেতেই আপি আমাকে জরিয়ে ধরল কিন্তু আমি চেয়েও হাসতে পারলাম না। কোনোরকম ইফাজ ভাইয়া আর আপির সাথে কথা বলে উপরে রুমে গিয়ে ব্যাগটা র‍েখে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলাম। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। হঠাৎ আপি এসে কাধে হাত রাখল তাকিয়ে দেখলাম আপি অবাক হয়ে তাকিয়ে অাছে, আমি আপিকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে কেদে দিলাম। আপি অবাক হয়েই বলল

– কী হয়েছে তোর? কাদছিস কেনো?
.
– আপি..
.
আপি আমাকে ছাড়িয়ে বলল
.
– কী হয়েছে বলবিতো?
.
আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– I am pregnant…
.
আপি যেনো আকাশ থেকে পরল অবাক হয়ে বলল
.
– মানেহ?
.
তারপর আপিকে বললাম আজকে ম্যামের কেবিনে গিয়ে কী হলো সেটা:
.
ম্যামের কেবিনে ঢুকতেই ম্যাম আমাকে দেখে বলল
.
– বসো..
.
আমি বসে জিজ্ঞেস করলাম
.
– anything serious ma’am?
.
– Yeah it is..
.
আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম। ম্যাম বললেন
.
– তোমার হাসবেন্ড কোথায়?

ম্যামের কথায় একটু ইতোস্তত হয়ে বললাম
.
– উনি একটু ব্যাস্ত আছে।
.
ম্যাম এবার টেবিলে দুহাত রেখে আঙ্গুল এক করে বলল
.
– অনিমা তুমি এখোনো ছোট, উনিশ বছর ও হয়নি তোমার এখোনো। বিয়ে হয়েছে ঠিক আছে বাট এতো তাড়হুড়োর কী দরকার ছিলো?
.
ম্যামের কথা বুঝলাম না তাই বললাম
.
– মানে?
.
– মানে তুমি প্রেগনেন্ট।
.
ম্যামের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি খুশি হবো নাকি কষ্ট পাবো বুঝতে পারছিনা। ম্যাম বলল

– দেখো এটা তোমাদের ইচ্ছাকৃত নাকি না সেটা জানিনা তবে এতো তাড়াতাড়ি এটা ঠিক হয়নি। ডেলিভারির সময় বিপদ হতে পারে। তাছাড়া তোমার ফিসিকাল কন্ডিশন ও ভালো নেই তাই কী করবে সেটা তোমার আর তোমার হাসবেন্ডের ব্যাপার
.
আমি নিজেকে সামলে বললাম
.
– Thank you ma’am
.
এটুকু বলে বেড়িয়ে এলাম। সারা রাস্তা শুধু ভেবেছি যে কী করবো আমি? আর সবার মতো আমার ম্যারিড লাইফ যদি নরমাল হতো তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হতোনা কিন্তু ওই রাতের ঘটনাকে তো ও একটা এক্সিডেন্ট বলেছে। আর আজ একটু পরেই ওর ফ্লাইট। কী করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম নাহ।
.
সবটা শুনে আপি অবাক হয়েই বলল
.
– কিন্তু এটা কীভাবে হলো?

আমি কিছু না বলে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। আপি বলল
.
– তারমানে যেই একসপ্তাহ ওর সাথে ছিলি তখন ও তোর সাথে..
.
আমি ছলছলে চোখে মাথা নাড়ালাম অর্থাৎ না। আপি বলল
.
– তাহলে?
.
তারপর আপিকে ঐরাতের কথা বললাম। সবটা শুনে আপি বলল
.
– আদ্রিয়ানকে বলবিনা?
.
– একটু পরে ওর ফ্লাইট আপি।
.
– কীহ? আর তুই এখোনো বসে আছিস এখানে? তাড়াতাড়ি যা এয়ারপোর্ট।
.
– কেনো যাবো? আর কেনো বলব? তুমি শুনলেনা ও কী বলেছিলো?

– অনি এটা মান অভিমানের সময় না ! একটা বাচ্চার ভবিষ্যতের প্রশ্ন। আর আদ্রিয়ান যদি একবার জানতে পারে ও বাবা হতে চলেছে, ও ওর সব কষ্ট সব অভিমান ভুলে ছুটে আসবে তোর কাছে
.
– কিন্তু আপি..
.
– সময় নেই অনি যা তুই।
.
আমি ভেবে দেখলাম আপির কথাগুলো ঠিক। সত্যিই তো এটা আমার বেবির ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তাই আর কিছু না ভেবে ছুটে বেড়িয়ে গেলাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে, বাড়ির সবাই আমাকে বেড়োতে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই বেরিয়ে গেছি। রাস্তায় অভ্র আদ্রিয়ান দুজনকেই বারবার ফোন করেছি কিন্তু ওদের ফোন বন্ধ। এয়ারপোর্টে পৌছে একপ্রকার দৌড়ে ঢুকলাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে যা জানতে পারলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। আদ্রিয়ানের ফ্লাইট আর পাচঁ মিনিট আগেই টেইক অফ করে ফেলেছে।
নিজের পেটে হাত দিয়ে ওখানেই দেয়াল ঘেসে বসে পরলাম। কী করলে তুমি এটা আদ্রিয়ান? তুমি তো জানতেই পারলেনা এখানে তুমি কী রেখে গেলে। কিন্তু আমিও আর তোমাকে জানাবোনা, নিজে থেকে যেদিন জানতে পারবে সেদিনি সত্যিটা তোমার সামনে আসবে এর আগে না। কখনোই নাহ। বাড়ি ফিরে দেখি আপি সবাইকে বলেছে ব্যাপারটা। আমি কারো সাথে কোনো কথা না বলে রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে সাওয়ার ছেড়ে কাদতে লাগলাম। প্রচুর কান্না পাচ্ছিলো আমার।

ঐদিনের পর আমি সবার থেকে আলাদা থাকতে শুরু করলাম। কারণ আমার জন্যেই আদ্রিয়ান নিজের পরিবার সবার থেকে দূরে চলে গেছে তাহলে আমি কীকরে পরিবারে থাকার সুখ ভোগ করবো? তাই সবার এতো নিষেধ বারণ সত্যেও আমি কারো কথা শুনিনি। আব্বু আমার নামের যেই ডিপোসিট করেছিলো সেটা দিয়েই এপার্টমেন্ট নিয়েছি। তবে আমার প্রেগনেন্সিতে কম্লিকেশন ছিলো বলে সবাই খুব টেনশনে ছিলো। তবে আমি নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিলাম আমার বেবির জন্যে। আর এইসবকিছুতে অামাকে সাহায্য করেছিল অভ্র। অভ্রই সাথিকে এনে রেখেছিলো আমার কাছে খেয়াল রাখার জন্যে। তবে অদ্রিয়ানের সাথে একমাত্র অভ্রের যোগাযোগ আছে। তাই আমি অভ্রকে দিয়ে প্রমিস করিয়েছিলাম যাতে আদ্রিয়ানকে বেবির পেপারে কিচ্ছু না বলে আর আমি একা থাকি সেটাও না বলে, ওও সেটা মেনে নেয়। এভাবেই দিন কাটতে থাকে এরপর মিষ্টি হয়, পড়া শেষ করে আমিও একজন হার্ট সার্জন হয়ে উঠি। কেটে যায় ছয় বছর তবে এই ছয়বছর অভ্র ছায়ার মতো আমার পাশে ছিলো। ভাইয়ের মতোই আগলে রেখেছে আমায়। কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলতো কাউকে কথা দিয়েছি তো। আর সেই কেউ টা কে? সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি। তবে এই ছয় বছরে এমন একটা রাতও কাটেনি যেদিন রাতে আদ্রিয়ানের কথা ভেবে আমি চোখের পানি ফেলিনি।

অতীতের সেই স্মৃতি থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের চোখের পানি মুছে নিলাম। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। কেনো আদ্রিয়ান? আমার করা ভুলের এতোবড় শাস্তি কেনো দিলে? আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গেলে এভাবে? একবারো কী তোমার আমার কথা মনে পরেনা? ইচ্ছে করে না আমাকে দেখতে? আমি কেমন আছি জানতে? এসব চিন্তা বাদ দিয়ে উঠে রুমে গিয়ে মিষ্টিকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলাম।
.
এভাবেই কয়েকটা দিন পার হয়ে গেলো। আজ হসপিটাল থেকে এসে দেখি মিষ্টি পার্কে যায়নি। সোফায় বসে জোরে জোরে কাদছে, স্কুল ড্রেসটাও চেন্জ করেনি। আর সাথি সামলানোর চেষ্টা করছে। ওকে এভাবে কাদতে দেখে আমি ওখানেই ব্যাগ ফেলে ছুটে গিয়ে সোফায় বসে ওকে বুকে জরিয়ে ধরলাম। কিন্তু ও আমাকে জরিয়ে ধরে কেদেই যাচ্ছে। আমি সাথিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? ও মাথা নাড়িয়ে বোঝালো জানেনা। আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম
.
– কী হয়েছে সোনা? কেউ মেরেছে?
.
ও মাথা নাড়লো! আমি বললাম
.
– কেউ বকেছে তাহলে?
.
ও এবারেও মাথা নাড়ল। আর আরো জোরে কাদতে লাগল। আমি বললাম
.
– তাহলে কাদছো কেনো মা? কী হয়েছে বলো?
.
ও কাদতে কাদতেই বলল
.
– মাম্মা আমার বাবা কী তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে?

আমি থমকে গেলাম ওর কথায়। আদ্রিয়ানের ব্যাপারে তো আমি ওকে কিছু বলিনি, সাথি বা অভ্র এসব কখনোই বলবেনা। ও তো জানেইনা ওর বাবা আদোও আছে, তাহলে ওকে এসব কথা কে বলল? এখন কীভাবে সামলাবো ওকে আমি?
আমি থমকে গেলাম ওর কথায়। আদ্রিয়ানের ব্যাপারে তো আমি ওকে কিছু বলিনি, সাথি বা অভ্র এসব কখনোই বলবেনা। ও তো জানেইনা ওর বাবা আদোও আছে, তাহলে ওকে এসব কথা কে বলল? এখন কীভাবে সামলাবো ওকে আমি? আমি কোনোরকমে নিজেকে সামলে বললাম
.
– তোমাকে এসব কে বলেছে সোনা ?
.
মিষ্টি কাদতে কাদতেই বলল
.
– তুমি বলোনা সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে বাবা?
.
– আগে তুমি বলো কে বলেছে এসব তোমাকে?
.
ও ঠোট ফুলিয়ে হাতের আঙ্গুল উচু করে পেছনের দিকে করে বলল
.
– ঐ ঐ দুই আন্টি বলছিলো, আমার নাকি বাবা আছে, আর বাবা নাকি তোমাকে আমাকে রেখে চলে গেছে।

আমি নিজেকে সামলে বললাম
.
– আসলে ওনারা ভূল করে বলেছে সোনা। ওরা দেখেছে যে তোমার বাবা নেই তাই হয়তো ভেবেছে তোমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
.
আমি জানি ও যতই দুষ্টু হোক কিন্তু আমি যেটা বলবো সেটাই ওর কাছে চিরন্তন সত্য, এতে যে যাই বলুক। ও কাদোকাদো কন্ঠেই বললো
.
– ওরা খুব পঁচা মিথ্যে কথা বলে।
.
আমি ওর গালে চুমু দিয়ে বললাম।
.
– নাহ মা এভাবে বলে না। ওনারা তো জানতোনা তাই বলে ফেলেছে।
.
ও চোখ ডলতে ডলতে বলল
.
– হুম।
.
তারপর আমি ওকে কোলে নিয়ে রুমে গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে দিলাম। ও এখোনো হালকা কাদছে। তাই ওকে নিয়ে শুয়ে ওকে বুকে জরিয়ে ধরে শান্ত করে ঘুম পারিয়ে দিলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসে মাথায় হাত রেখে সাথিকে বললাম
.
– একটু কফি নিয়ে এসো না প্লিজ। মাথাটা ব্যাথা করছে।
.
সাথি কফি করে এনে আমার হাতে দিয়ে বলল
.
– ম্যাম মন খারাপ করবেন না, লোকজন এমনি অন্যের সুখে জ্বলবে আর অন্যের কষ্টের কথা বাড়িয়ে বলে সমালোচনা করবে।
.
আমি কফিটা নিয়ে চুমুক দিয়ে ভাবলাম
.
– আমি ওসব নিয়ে ভাবছিনা সাথি! আমি ভাবছি মিষ্টির কথা।

– হ্যা তাও ঠিক। যেভাবে আজ কাদছিলো।
.
– আর কতোদিন? খুব তাড়াতাড়ি ও নিজেই বুঝতে পারবে ওর বাবা আছে। তবে যদি কোনোদিন ওর বাবা ওর মুখোমুখি হয় তবে আমি অবশ্যই একটা চেষ্টা করব।
.
– ছয় বছর হয়ে গেছে, যদি স্যার এতোদিনে আরেকটা বিয়ে করে থাকে?
.
সাথির কথায় হেসে দিলাম আমি। আমাকে হাসতে দেখে বলল
.
– কী হলো ম্যাম?
.
– বসো তোমাকে একটা গল্প বলছি।
.
সাথি ইতোস্তত করে বসলো তারপর বলল

– গল্প?
.
– হুম প্রেমের গল্প।
.
– কিন্তু এইসময়?
.
– আরে শোনোই না।
.
এরপর সাথিকে আমাদের কাহিনীটা খুলে বললাম তবে কারো নাম বলিনি। সবটা শুনে সাথি অবাক হয়ে বলল
.
– একটা ছেলে একটা মেয়েকে এতোটা ভালোবাসতে পারে? এতোটা ভালোবাসা সম্ভব? সত্যিই মেয়েটা খুব লাকি!
.
– আর সেই লাকি মেয়েটা তোমার সামনে বসে আছে।
.
সাথি পুরো অবাক হয়ে দাড়িয়ে গেলো। আর অবাক মুখ করে বলল
.
– আর ছেলেটা স্যার?
.
আমি মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম
.
– হুম। এবার বলো তোমার মনে হয় ঐ ছেলেটার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব? ও তিলে তিল শেষ হয়ে যাবে, নিজেকে শেষ করে দেবে কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে কল্পনাও করবেনা।
.
সাথি মুচকি হেসে বলল
.
– একটা কথা বলবো ম্যাম?
.
– হুম
.
– স্যারের সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করে নিন না, মিষ্টির জন্যে?

আমি কিছু না বলে কফিতে চুমুক দিতে থাকলাম। সাথি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চলে গেলো আর আমি ভাবছি যে কীকরে ঠিক করব সব? আদ্রিয়ান তো নেই এখানে ! ও তো ইউ কে চলে গেছে চিরকালের মতো। ও কী ফিরে আসবে? আর যদি ফিরে আসেও ওর রাগ কী একটুও কমেছে আমার ওপর থেকে? আচ্ছা মিষ্টির কথা ওকে জানাতে বারণ করে কোনো ভূল করিনি তো আমি? দুইহাতে নিজের মাথা চেপে ধরলাম আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা
.
রাতে মিষ্টি ঘুমিয়ে গেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের কথা ভাবছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠল, স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম আপি। আমি রিসিভ করে বললাম
.
– কেমন আছো?
.
– ভালো..তুই?
.
– এইতো!
.
আপি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
.
– মিষ্টি কেমন আছে?
.
– ভালো। ইফাজ ভাইয়া আর হিয়াজ কেমন আছে?

– ভালোই। মিষ্টি কী করছে
.
– ঘুমোচ্ছে। কেদেছে আজকে অনেক।
.
– কেনো?
.
তারপর আপিকে সবটা বললাম, সবটা শুনে আপি বলল
.
– অনি প্লিজ এবার আদ্রিয়ানকে জানা।
.
– নাহ আপি। আমি চাইনা ও শুধু এটার জন্যে আমার কাছে ফিরে আসুক কারণ ওর সন্তানের মা আমি। ওর অভিমান ভূলে যেদিন ও নিজেই ফিরে আসবে সেদিন বলব ওকে।
.
– ও যেদিন জানবে সেদিন কিন্তু আবার রাগ করবে অনি।
.
– সেটাইতো পারে শুধু নিজের কষ্টটাইতো ওর কাছে বড়। বাকি সব জাহান্নামে যাক ওর তাতে কী?
.
বলেই ফোনটা রেখে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। খুব বেশি মনে পরে তোমায় আদ্রিয়ান? কোথায় তুমি? প্লিজ একবার ফিরে এসো। আমি আর পারছিনা ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি। আর সম্ভব নাহ আমার পক্ষে। একদিন তোমার বুককে জলন্ত লাভা বলেছিলাম আমি কিন্তু ছয় বছর ধরে সেই বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্যে ছটফট করছি। প্লিজ কাম ব্যাক আদ্রিয়ান প্লিজ!

আজ মেডিকেলে ক্লাস নিতে গিয়ে একটু লেইট হয়ে গেছে। বাড়ি এসে চেন্জ করে পার্কে চলে গেলাম মিষ্টির কাছে কিন্তু গিয়ে দেখি ও মুখ ফুলিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছে বেঞ্চে, আর হাত দিয়ে বল নাড়ছে। আমি ভাবছি এই মেয়ের আবারও কী হলো? এরকম করে গাল ফুলিয়ে আছে কেনো? ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম ও বারবার একদিকে তাকাচ্ছে আমি ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম। একজন লোক একটা বাচ্চা ছেলের সাথে বাস্কেটবল খেলছে আর বিভিন্নভাবে মজা করছে। আমি এবার বুঝলাম ওর মন খারাপ হবার কারণ তাই আমিও গিয়ে ওর পাশে বসলাম ও আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলল। আমিও কিছু বললাম না ও আমার দিকে আরেকবার তাকাতেই আমি ভ্রু নাচালাম যে কী হয়েছে? ও মাথা নাড়িয়ে বোঝালে যে কিছুই না। আমি এবার মুখ খুলে বললাম
.
– মন খারাপ?
.
ও এবারেও মাথা নাড়ালো। আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম
.
– বল দিয়ে খেলবে আমার সাথে?
.
ওর এবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। এমনিতে ছোট বেলা থেকেই আমি বাস্কেটবলে ভালো খুব। আমি ওর হাত থেকে বল নিয়ে বললাম
.
– চলো তাহলে?
.
ও উল্লাসিত হয়ে চেচিয়ে উঠল
.
– ইয়েহ…।

এরপর ওর সাথে বল দিয়ে অনেকক্ষণ খেললাম, মজা করলাম। এক পর্যায়ে আমি ক্লান্ত হয়ে বেঞ্চে গিয়ে পানি খেতে লাগলাম। মিষ্টি এখোনো খেলছে। হঠাৎ আমার পাশে অভ্র এসে বসল। আমি ওকে দেখে হেসে বললাম
.
– তুমি কখন এলে?
.
– যখন আপনারা দুজন খেলছিলেন।
.
– ওহ।
.
– এভাবে আর কতোদিন একসাথে দুটো মানুষের দ্বায়িত্য পালন করবেন ম্যাম?
.
– যতোদিন তোমার স্যার নিজে থেকে আমাদের কাছে ফিরে না আসবে ততোদিন।
.
– যদি কোনোদিন না আসে?
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম
.
– তাহলে সারাজীবন এভাবেই দুজনের দ্বায়িত্য পালন করে যাবো।
.
অভ্র কিছু বললোনা। আমি এবার বললাম
.
– ঊনত্রিশ পেরিয়ে তো ত্রিশে গিয়ে পরলে এবারে বিয়েটা করে নাও। নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে?
.
ও একটু চমকে গিয়ে ইতোস্তত করে বলল
.
– ইয়ে ম্ মানে ম্যাম ওসব কিছু নেই।
.
আমি ঠোট কামড়ে তাকালাম ওর দিকে বেশ বুঝতে পারলাম যে কোনো না কোনো ঘাপলা করে রেখেছে নিশ্চই, এখন সি আই ডি এর এসিপি প্রদ্যুমান এর মতো বলতে ইচ্ছে করছে ‘ দয়া পাতা লাগাও’ কিন্তু এক ড্রাম আফসোস যে আমার কাছে কোনো দয়া নেই। তাই যা পাতা লাগানোর আমাকেই লাগাতে হবে।

অভ্রর দিকে চোখ পড়তেই মিষ্টি ছুটে এলো অভ্রর কাছে, অভ্রও ওকে কোলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে বলল
.
– কেমন আছেন প্রিন্সেস?
.
– চকলেট আইস্ক্রীম এর মতো ভালো
.
অভ্র একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো পরক্ষণেই মনে পরলো এটা কে? তাই হেসে দিয়ে বলল
.
– ও তাই
.
– হুম।
.
– তা মিষ্টি সোনা এখন কী খাবেন?
.
– বাদাম।
.
– দুই মিনিট বসো এখানে আমি পাঁচ মিনিটে বাদাম নিয়ে আসছি।
.
আমি হেসে দিলাম অভ্রের কথায়। ও চলে গেলো বাদাম আনতে। তিনজনে মিলে পার্কে বাদাম খেয়ে অনেকক্ষণ গল্প করে মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি চলে এলাম
.
আরো একসপ্তাহ কেটে গেছে এভাবে। আজ শুক্রবার আমি বসে ল্যাপটপে কাজ করছি আর মিষ্টি বল নিয়ে সারাঘর ছোটাছুটি করে খেলে বেড়াচ্ছে। আমি একবার ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– মিষ্টি সিড়ি দিয়ে ছুটো না পরে ব্যাথা পাবে।
.
বলে আবার ল্যাপটপে চোখ দিলাম একটু পর কিছু পরার অওয়াজে চমকে তাকিয়ে দেখি মিষ্টি হাটু ধরে বসে কাদছে, আমি ল্যাপটপ রেখে ছুটে গেলাম ওর কাছে তারপর ওর হাটু আমার সামনে এনে বললাম

– একটা কথা যদি শুনতে মিষ্টি। বললাম সিড়ি দিয়ে ছোটাছুটি করোনা কিন্তু তুমি..
.
তাকিয়ে দেখলাম কাটে ছেড়েনি শুধু ব্যাথা পেয়েছে। আমি সাথিকে বরফ আনতে বললাম তারপর বরফ ওর পায়ে ঘষতে ঘষতে বললাম
.
– কখনো মাম্মার কথা শোনোনা তুমি। পায়ে ব্যাথা পেয়েছো এবার হ্যাপি তো?
.
ও কান্না মিশ্রিত গলাতে চোখ ডলে বলল
.
– তুমি হ্যাপি?
.
আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম তারপর বললাম
.
– হ্যা খুব হ্যাপি আমি
.
ও এবার একি গলাতে বলল
.
– তাহলে আমি কীকরে হ্যাপি হই?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে সোজা বুকে জরিয়ে ধরলাম আমি। কারণ আমিই এসব কথা ওকে শিখিয়েছে। আদ্রিয়ানে সাথে বলে বলে অভ্যেস হয়ে গেছিলো। একদিন আদ্রিয়ান আর আমি একসাথে বসে কুছকুছ হোতাহ্যা মুভি দেখেছিলাম তারপর থেকেই দুজন আদ্রিয়ান আর আমি মাঝেমাঝেই ঐ মুভির এইডায়লগটা ইউস করতাম। মিষ্টিকে বুকে জরিয়ে ধরেই আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো এক মুহুর্তের কথা মনে পড়ল
.
[ – জানপাখি বোঝার চেষ্টকরো ইটস আর্জেন্ট।

– আমি কখন বারণ করলাম যাও না যাও আমার কী?
.
আদ্রিয়ান আমার কোমর জরিয়ে ধরে ওর কাছে নিয়ে বলল
.
– প্লিজ এরকম করে বলেনা। আমার মায়াবিনীর মায়াভরা মুখটা যদি এরকম মলিন হয়ে থাকলে আমি কীকরে যাই?
.
আমি ওকে ছাড়িয়ে হাত ভাজ করে বসলাম। ও আবার একহাতে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আমি না গেলে অনেক বড় লস হয়ে যাবে বোঝার চেষ্টা করোনা বেইবি?
.
আমিও এবার ওকে আকড়ে ধরে কান্নামিশ্রিত গলায় বললাম
.
– এক সপ্তাহ আদ্রিয়ান? এতোদিন তোমাকে না দেখে কীকরে থাকবো বলোতো?
.
ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– কষ্টতো আমারও হবে কিন্তু কাজ আছে যেতে তো হবেই না?
.
– হুম
.
বলেই ছাড়িয়ে নিলাম। ও এবার বলল
.
– আরেহ আবার রাগ করে। আচ্ছা প্রজেক্ট লঞ্চ না হলে আমার লস হয়ে যাবে তো। তাহলে খুশি হবে?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– তুমি খুশি হবে?
.
– হুম খুব খুশি হবো
.
আমি ওর বুকে মাথা রেখে জরিয়ে ধরে বললাম
.
– তাহলে আমি কীকরে খুশি হই?
.
ওও হেসে দিয়ে জরিয়ে ধরল আমাকে।]

সাথির ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। মিষ্টি কাদছে এখোনো আমি নিজেকে সামলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম
.
– কাদেনা সোনা ব্যাথা করছে খুব?
.
আমি ওকে কোলে নিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলাম। এই মেয়েটার প্রত্যেকটা কথাই আমায় আদ্রিয়ানকে মনে করাতে থাকে।
.
আজ তাড়াতাড়ি যেতে হবে হসপিটালে, মিটিং আছে, এবরোট থেকে কিছু লোক আসবে হসপিটালেরই প্রযেক্ট এর কাজে, কোন মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির এম ডি আসবে। কিন্তু আজকেও লেইট উঠেছি। তাই মিষ্টিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে গেলাম।
.
তাড়হুড়ো করেই হসপিটালে ঢুকলাম। লিফ্ট ভিজি আর দেরী হয়ে গেছে তাই সিড়ি দিয়েই ওঠা শুরু করলাম। আশেপাশে খেয়াল না করেই দ্রুত গতিতে উঠছি। কিন্তু একটা সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলাম। কিন্তু এবার পরে গিয়ে ব্যথার চেয়ে বেশি অবাক হলাম কারণ ছয় বছর আগের সেই একি ঘটনা, যখন আদ্রিয়ানের সাথে প্রথম দেখা হয় আমার। সেদিন তাকিয়ে তো আদ্রিয়ানকে দেখেছিলাম, আজ কাকে দেখবো? কিন্তু কিছু একটা ফিল করছি আমি, হার্ট খুফ জোরে বিট করছে, যেটা ভাবছি তাকিয়ে যদি সেটাই দেখি নিতে পারবো তো আমি? এসব ভেবেই আস্তে আস্তে চুল সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম আর সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে পুরো থমকে গেলাম আমি। এতোটাই অবাক হয়েছি যা প্রকাশ করার করার মতো না। বারবার মনে হচ্ছিলো এটা নিশ্চই কোনো সপ্ন কিন্তু এটা সপ্ন ছিলোনা বাস্তব ছিলো। মন বলছিলো এটা কীকরে সম্ভব? যাকে দেখার জন্য ছয় বছর ধরে ছটফট করছি আমি সে আমার সামনে? যার ঐ মুখটা মনে করে প্রতিরাতে বালিশ ভেজাই সে আজ আমার এতো কাছে? নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা অজান্তেই মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এলো
.
– আদ্রিয়ান..

ও এবার নিচে তাকিয়ে থমকে গেলো, ওর দ্রুত গতিতে চলতে থাকা পা ধীর হয়ে গেলো, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমিও স্তব্ধ হয়ে দেখছি ওকে দেখে। যতটানা ওকে দেখে অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি ওর লুক দেখে। এই সেই আদ্রিয়ান? ও পুরো ফরমাল গেট আপ এ আছে, পুরো ব্লাক পরে আছে সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো ওর চুলগুলো আগের মতো কিউট স্টাইলে কপালে পরে নেই স্টাইলিস্টভাবে হালকা উচু করে রাখা, চোখে মুখে সেই দুষ্টুমির ভাব নেই আছে একরাশ গাম্ভীর্যতা। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক করা ছিলো ওর হাতের জলন্ত সিগারেট। ও তো সিগারেট টাচ ও করতোনা বরং স্মোকিং ভীষণভাবে অপছন্দ করতো। ও একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে নামছে সিড়ি দিয়ে আমিও তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এমন মনে হচ্ছে যেনো সময় ওখানেই থেমে গেছে আমাদের, এখন একটাই কাজ দুজন দুজনকে দেখা। ও ধীরপায়ে আমার সামনে এসে ওর হাত বাড়িয়ে দিলো আমিও ঘোরের মধ্যেই ওর হাত ধরলাম। ও টেনে দাড় করালো আমাকে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি, কারো মুখে কোনো কথা নেই। এভাবে কতোক্ষণ ছিলাম জানিনা তবে ওর গলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো। ও গম্ভীর মুখেই বলল
.
– ছয় বছর হয়ে গেছে এখোনো ছোটাছুটির অভ্যেস যায়নি আপনার?
.
আমি কী বলবো আমিতো ওকেই দেখে যাচ্ছি এমন মনে হচ্ছে যেনো কথা সব গলাতে আটকে যাচ্ছে। আমার চোখ ছলছল করে উঠলো ওকে দেখে। নিজেকে সামলাতে না পেরে কেদেই দিলাম। সেটা দেখে ও বলল
.
– বাহ! কথায় কথায় কেদে দেবার অভ্যাসটাও দেখছি বদলাতে পারেন নি।
.
আমি এক হাত দিয়ে ওকে ছুতে গেলেই ও পিছিয়ে গেলো। বুঝতে পারলাম এই ছয় বছরে অভিমানের পাহাড় একচুল ও কমেনি। এবার আমি কান্নামিশ্রিত গলায় বললাম
.
– আদ্রিয়ান তুমি…
.
ও হেসে বলল
.
– এখন কথা বলার সময় নেই আপনার মিটিং এ লেইট হয়ে যাচ্ছে

বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে চলে গেলো। আমি পুরো থমকে গেলাম। এই আদ্রিয়ানের সাথে ছয় বছর আগের আদ্রিয়ানকে মেলাতে পারছিনা আমি। ও তো ইউকে তে ছিলো কবে এলো দেশে? আর এই হসপিটালেই বা কী করছে? আর এই ছয় বছরে এতোটা নিজেকে বদলে ফেললো ও? এসব ভাবতে ভাবতেই মিটিং রুমে ঢুকলাম। গিয়ে বসতেই সবাই বলল। সবাই ওয়েট করছে এমডি আসার আমিও বসে আছি। কিন্তু কম্পানির নাম শুনে আমি চমকে গেলাম। AD group of company? কিন্তু.. আর কিছু ভাববো তার আগেই হঠাৎ রুমে আদ্রিয়ান ঢুকলো ওর দুপাশে দুজন আছে। ও ঢুকতেই সবাই সম্মানার্থে দাড়িয়ে গেলো আমিও দাড়ালাম তবে সম্মানার্থে না অবাক হয়ে। ও কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা চেয়ারে বসল। সবাই বসে পরল কিন্তু আমি অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছি। ও এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– এক্সকিউস মি মেডাম? ইউ ক্যান সিট।
.
ওর কথায় ধ্যান ফিরলো এদিক ওদিকে তাকিয়ে বসে পরলাম। আদ্রিয়ান এর সামনে হসপিটার অথিউরিটি নিজেদের প্লান বলল সেটা নিয়ে আদ্রিয়ান ও ওর পজেক্ট সম্পর্কে সবাইকে ক্লিয়ার করলো তারপর ডিল সাইন করলো। আমি শুধু আদ্রিয়ানকেই দেখছি একটা মানুষ এতোটা বদলাতে পারে? যেই ছেলেটা কথা বলার সময় ঠোটে একটা মুচকি হাসি থাকতো সবসময় সেই ছেলেটা এতোক্ষণ কথা বলল একটু একটুও হাসলোনা? যেনো হাসিটা ওর কাছে বিষ। আর ও নিজের মালটিন্যাশনাল কম্পানিও করেছে?

আমি কেবিনে বসে আদ্রিয়ানকে দেখছি দুই ঘন্টা ধরে, আমার কেবিনের জানালা দিয়ে ওকে দেখা যাচ্ছে ও ব্যালকনিতে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। এই দুই ঘন্টায় বেশ কয়েকটা সিগারেট শেষ করেছে। আমার ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে ওকে দেখে! এটা কীকরে হয় যেই ছেলে সিগারেটের গন্ধও সহ্য করতে পারতোনা সে? এসবের জন্যে কী আমিই দায়ী? এই ছেলেটার এতো কষ্টের কারণ আমি? ওর সাথে যে কথা বলতে যাবো তখনি পুরোনো অভিমান মাথায় চাড়া দিয়ে উঠল। কেনো যাবো ওর কাছে? এই ছয় বছর যে আমার কথা ভাবেও নি! আর এখন এসেও এমন বিহেভ করছে যেনো চেনেই না আমাকে তাহলে আমি কেনো যেচে যাবো? যাবোনা আমি! দেখি ও আমাকে আর কতো দূরে সরাতে পারে।
.
হসপিটালের কাজ সেরে বেরোনোর সময় গেইটের সিড়ি দিয়ে নামছি তখন দেখি আদ্রিয়ান সিগারেট টানতে টানতে ওপরে উঠছে আমি ওকে দেখে থেমে গেলাম আর ওও। আমি ওর হাতের সিগারেট এর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– এই অভ্যাস কবে থেকে করলে?
.
ও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
.
– কিছু খারাপ অভ্যাস থাকা ভালো।
.
– তুমিতো এসব সহ্যই করতে পারতে না।

– অনেক ভালোলাগা থেকে সরে এসছি তো তাই খারাপলাগা গুলোকে আপন করে নিয়েছি।
.
– ওহ তা ভালো আছো?
.
ও এবারেও সেই হাসি দিয়ে বলল
.
– তুমি ভালো আছো?
.
আমার খুব কান্না পাচ্ছে এবার তবুও নিজেকে শক্ত করে বললাম
.
– খুব ভালো আছি।
.
এটুকু বলে দুটো সিড়ি নামতেই ও পেছন থেকে বলে উঠলো
.
– তাহলে আমি কীকরে ভালো থাকি?
.
আমি চমকে তাকালাম ওর দিকে। ও স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর মনে আছে এগুলো? এখন এটা বলে ওকী সেটাই বোঝাতে চাইলো যেটা ছয়বছর আগে বোঝাতো?
আমি চমকে তাকালাম ওর দিকে। ও স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর মনে আছে এগুলো? এখন এটা বলে ওকী সেটাই বোঝাতে চাইলো যেটা ছয়বছর আগে বোঝাতো? আমি অবাক হয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছি আর ও শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ওকে কিছু বলবো তার আগেই ও সিগারেটে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে ভেতরে চলে গেলো। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ওর কথা ভাবছি। এই ছেলেটাকে কখনোই বুঝতে পারিনা আমি। আর এখন তো নিজেকে পুরো 360° চেন্জ করে ফেলেছে। সারারাস্তা এসব ভাবতে ভাবতেই ড্রাইভ করেছি।

বাড়ি এসে দেখি মিষ্টি আর অভ্র সোফায় বসে দুষ্টুমী করছে। এই সময় অভ্রকে দেখে একটু অবাক হলাম। আমাকে দেখেই মিষ্টি ছুটে এলো আমিও হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম
.
– কী করছে আমার সোনা?
.
ও আমার গালে চুমু দিয়ে বলল
.
– অভ্র আঙ্কেলের সাথে খেলছিলাম।
.
– লাঞ্চ করেছো তো?
.
– হুম
.
এরপর অভ্রর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে ও কিছু বলতে চায় আমাকে কিন্তু মিষ্টির সামনে বলতে পারবেনা। তাই আমি মিষ্টিকে বললাম

– নিচে তৌশিলরা খেলছে, তোমাকে খুজছিলো খেলার জন্যে। যাও ওদের সাথে খেলে আসো।
.
তারপর ওকে নামিয়ে দিতেই ও বল নিয়ে নিচে দৌড়ে চলে গেলো নিচে। তারপর অভ্রকে বললাম দুই মিনিট বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। অভ্র মাথা নাড়ল। এরপর ওপর থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আমি সোফায় গিয়ে বসে সাথিকে ডেকে দুইকাপ কফি আনতে বললাম। এবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– কিছু বলবে?
.
– স্যার দেশে ফিরে এসছে ম্যাম।
.
আমি এবার মলিন হেসে বললাম
.
– আমি জানি অভ্র।
.
অভ্রর ফেস রিয়াকশন দেখে বুঝলাম ও অবাক হয়নি হয়তো জানে। অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– হুম আজ আপনাদের হসপিটালেই মিটিং ছিলো তাইতো?

– হুম। তুমি আমাকে বলোনি কেনো ও আসছে?
.
– আমি নিজেই জানতাম না আজ সকালে স্যার বলল আমায়।
.
– ওহ।
.
অভ্র খানিক্ষণ চুপ থেকে বলল
.
– কথা হয়েছে আপনাদের?
.
– হয়েছে না হওয়ার মতোই। ও এখোনো ওর সেই আগের অভিমান নিয়েই পরে আছে। ওর কাছে ওর কষ্টটাই বড় বাকিদের দেখার সময় নেই।
.
– সত্যিই কী তাই?

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম অভ্রের দিকে। তারপর বললাম
.
– তাই তো!
.
অভ্র আর কিছু বললোনা নিরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম
.
– এতোবছর পর দেশে ফিরতে মন চাইলো কেনো ওর?
.
– আসলে এই প্রজেক্টটার জন্যেই এসছেন উনি।
.
– নিজের এতো বড় একটা কম্পানি করে ফেলেছে এই ছয় বছরে?
.
– ওখানে গিয়েই স্টার্ট করেছে।

আমি একটা শ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম তারপর বললাম
.
– ও অনেক বদলে গেছে অভ্র। ও স্মোকিং পর্যন্ত শুরু করে দিয়েছে!
.
অভ্র এতোক্ষণ মাথা নিচু করে ছিলো এবার আমার কথা শুনে মাথাটা উচু করে বলল
.
– পরিস্হিতি মানুষকে বদলে দেয় ম্যাম। এই ছয় বছরে স্যার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। এখন উনি আর উনি নেই। শ্বাস নিতে হয় তাই শ্বাস নেয়। বাঁচতে হয় তাই বেঁচে আছে।
.
– মানেহ?
.
– স্যার ইউকে যাওয়ার পর ইন্জিনিয়ারিং আর রিসার্চ এর সাথে নিজের একটা কম্পানি শুরু করে। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যে এমনিতেই এতো ব্যস্ত থাকে উনি তার ওপর কম্পানি কীকরে সামলাবেন? আমি স্যারকে বলেছিলাম যে স্যার আপনি কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময়টাও পাবেননা, কিন্তু উত্তরে স্যার কী বলেছিলেন জানেন?
.
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। অভ্র মলিন হেসে বলল

– “ঘুমটাই তো আসবেনা অভ্র, তাই ওই সময়টা নষ্ট না করে কাজে লাগানোই ভালো”
.
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
.
– এরপর থেকেই স্যার নিজেকে সম্পূর্ণ কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা শুরু করল। দিন রাত এক করে শুধু কাজই করে। সারাক্ষণ ব্যাস্ত রাখে নিজেকে। ওনার নিজের জন্যেই এখন সময় নেই ওনার কাছে। নিজেকে একটা রোবট তৈরী করে ফেলেছে। যার না আছে কোনো ক্লান্তি, না আনন্দ আর না অনুভূতি।
.
আমি মনোযোগ দিয়ে অভ্রর কথা শুনছি, সত্যিই এরকম তৈরী হয়ে গেছে ও? এইজন্যেই ও আজকে মিটিং একবার ও হাসে নি। আর ওর কথাগুলোতে মনে হচ্ছিলো কোনো রোবট, কোনো অনুভৃতি মিশ্রিত ছিলোনা ওর কথায়। অভ্র আবার বলল
.
– তবে স্যারের এসব কিছুর মধ্যে যেটুকু সময় অবসর পায় তখন স্যারের সেই একাকিত্বের সঙ্গি হয় সিগারেট আর বিভিন্ন হার্ড ড্রিংক।
.
অামি অবাক হয়ে তাকালাম অভ্রের দিকে, অবাক হয়েই বললাম

– সিগারেট খেতে দেখেছি ওকে কিন্তু ও ড্রিংক ও করে?
.
– হুম। ইউকে তে ওনার এপার্টমেন্টে সার্ভেন্ট ছাড়া কেউ নেই। ইউ কে যাবার প্রথম ছয়মাস এসবের কাছে যায়নি। কিন্তু সারাদিন হারভাঙা পরিশ্রমে করে রাতে একা নিস্তব্ধ রুমে একা পরে থাকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্যেই হয়তো এগুলোকে নিজের রাত জাগার সঙ্গী করে নিয়েছিলো।
.
অামি দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে সোফায় উবু হয়ে বসে আছি। যেই ছেলেটা সিগারেট এর ধোয়া নাকে গেলেও কাশতো, কোনো পার্টিতেও হার্ডড্রিংক ছুতোও না। সে এখন নিয়মিত ড্রিংক করে? সারাক্ষণ স্মোকিং করে? কী হচ্ছে? কীকরে হচ্ছে? কেনো হচ্ছে কিচ্ছু মেলাতে পারছিনা। কেনো হলো এগুলো? সবকিছু এভাবে এলোমেলো হবার খুব দরকার ছিলো? আদ্রিয়ান যে একদমি ভালো নেই সেটা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি কী করবো এখন? কী করা উচিত আমার? আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে অভ্র বলল
.
– ম্যাম স্যারকে আগের মতো করতে একমাত্র আপনি পারবেন।
.
ওর কথায় অবাক হয়েই বললাম

– আমি?
.
– হ্যা ম্যাম এবার আর স্যারকে যেতে দেবেননা প্লিজ। উনি যেভাবে বেচে আছে সেটাকে বাচা বলেনা ম্যাম
.
আমি কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। অভ্রূ উঠে দাড়িয়ে বলল
.
– আমায় যেতে হবে ম্যাম। স্যার ডেকেছে সন্ধ্যের পর।
.
– হুম।
.
অভ্র উঠে চলে গেলো। আমি বসে বসে অভ্রের বলা কথাগুলো ভাবছি। মাথা ব্যাথা করছে খুব। কী করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।

হঠাৎই মিষ্টি নাক ফুলিয়ে ওর ছোট ছোট পায়ে লম্বা লম্বা কদম ফেলে সোফায় এসে আমার পাশে ধরাম করে বসে পরলো। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওর দিকে কিন্তু ও ওর মুখটা ফুলিয়েই বসে আছে। আমি এবার হালকা কাশি দিলাম এবার ও আমার দিকে তাকালো। আমি হালকা হেসে বললাম
.
– আজ আবার কী হয়েছে?
.
ও নাকে একটা টান ঘষা মেরে বলল
.
– মাম্মা তুমি বলেছিলেনা সিগারেট খাওয়া খারাপ? ফুসফুস হাটের ক্ষতি হয়?
.
আমি হেসে ওকে কোলে তুলে বললাম

– ওটা হাট না সোনা হার্ট। হ্যা ক্ষতি হয় তো কেনো?
.
– নিচে একজন বসে খাচ্ছিলো তো। আমি বারণ করল শুনলোনা।
.
– ও তাহলে এইজন্যেই আমার মিষ্টি সোনার মন খারাপ?
.
– হুম
.
– আচ্ছা চলো আজ দুজনে চকলেট ড্রিংক খেতে খেতে গল্প করবো তাহলে মন ভালো হবে?

মিষ্টি হেসে দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলাম আমিও জরিয়ে ধরলাম।
.
আজকে হসপিটালে গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ও এসছে সাইডে প্রজেক্টের কাজ দেখছে হেটে হেটে আর সিগারেট টানছে। কিন্তু আমার এখন চেম্বারে বসতে হবে তাই ওদিকে না তাকিয়ে চলে গেলাম চেম্বারে। পেসেন্ট দেখা শেষ করে গেলাম সেখানে যেখানে প্রযেক্টের কাজ চলছে। গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান একটা নিরিবিলি জায়গায় গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে একমনে সিগারেট টেনে যাচ্ছে, আর দূর থেকে প্রজেক্টের কাজ দেখছে। আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো এতো সিগারেট খাওয়ার কী আছে? কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে ওর পাশে গিয়ে হাত ভাজ করে দাড়ালাম। পাশে কারো উপস্হিতি অনুভব করে আদ্রিয়ান তাকিয়ে চোখ সরিয়ে আবারো তাকালো, তারপর অবাক চেহারা করে বলল
.
– আরেহ ডক্টর অনিমা কোতোয়াল?
.
বলে সামনে তাকিয়ে সিগারেটে টান দিলো। আমি হালকা হেসে বললাম

– উমহুম। ডক্টর অনিমা আবরার জুহায়ের।
.
ও বাকা হেসে সামনে তাকিয়েই বলল
.
– আমার ওপর এতো দয়া হওয়ার কারণ?
.
– তোমার এটাকে দয়া ভাবার কারণটাও তো বুঝতে পারছিনা
.
– আপনি আবার কবে কখন আমায় বুঝতে শুরু করলেন?
.
আমি শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে তারপর সামনে তাকালাম। দুজনেই বেশ অনেক্ষণ চুপ ছিলাম। হঠাৎ আদ্রিয়ান নিজেই বলল
.
– এখন তো নিজের পায়ে দাড়িয়ে গেছেন। বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে করতে পারেন। সবেতো চব্বিশ বছর হলো, সময় চলে যায়নি। আমাকে বাধা ভাববেন না। আপনার সুখের পথে কোনোদিন বাধা হইনি আর না কোনোদিন হবো।
.
আমার বেশ রাগ লাগল ওর কথায়। মহান সাজছে। ইচ্ছে করেই যে খোচাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছি। তাই ওকে একটু পিঞ্চ করে বললাম

– কীকরে করবো? সেই রাস্তা কী খোলা রেখে গেছো?
.
ও এবার সিগারেট ঠোট থেকে সরিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে তারপর বলল
.
– মানে?
.
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
.
– বাহ! সেই রাতের কথা ভূলে গেলে? যদিও ওটা তোমার কাছে এক্সিডেন্ট ছিলো। আর এক্সিডেন্টকে কেই বা মনে রাখতে চায়? সব পুরুষ ই এক।
.
বলেই হাত ভাজ করলাম। ও চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল

– দেখুন সেদিন রাতে আমি…ওয়াটএভার
.
বলেই আবার সিগারেট টানতে শুরু করল। আমি এবার বললাম
.
– আমি নাহয় বিয়ে করিনি তুমি কেনো করোনি? তোমারোতো সবে ত্রিশ পেরোলো চাইলেই বিয়ে করতে পারতে।
.
ও কিছু না বলে একটু হেসে সিগারেট টান দিয়ে চলে গেলো। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম আর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখের কোনের পানিটা মুছে চলে গেলাম বাড়িতে
.
রাতে বিছানাতে বসে কোলে ল্যাপটপে কাজ করছি আর মিষ্টি চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে ফোনে গেমস খেলছে। আমি একটু পর পর আড় চোখে ওকে দেখছি কারণ বিকেল থেকেই ওর মনটা কোনোকারণে খারাপ কিন্তু বলেনি কিছু আমিও জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু খেয়াল করছি ও গেইমস ও মন দিয়ে খেলছেনা। আর বিকেল থেকে হাসেও নি মেয়েটা। হাতের কাজ করে এবার ওকে উঠিয়ে বসালাম, তারপর বললাম

– মুখটা গোমড়া করে রেখেছো কেনো? কী হয়েছে?
.
ও মুখটা ছোট করেই না বোধক মাথা নাড়লো। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম
.
– মাম্মাকেও বলবেনা?
.
ও এবার কাদোকাদো মুখ করে বলল
.
– আমার বাবাই কেনো নেই মাম্মা?
.
আমি বুকে ধক করে উঠল, সাথে সাথেই ওকে বুকে জরিয়ে ধরে বললাম
.
– হঠাৎ এই কথা কেনো মনে হলো?
.
ও কান্নাজরিত গলাতেই বলল

– সবার বাবা আছে। পার্কে ওদের কাধে নিয়ে ঘোরে, স্কুলের কম্পিটিশনে ওদের বাবারা পার্টিসিপেট করে ওদের প্রাইজ এনে দেয় কত্তো ভালোবাসে!
.
ওর এইসব কথায় আমার বুকের ভেতরটা ছিড়ে যাচ্ছে। নিজেকে কোনোমতে সামলে বললাম
.
– তোমার মাম্মা কী তোমাকে কম ভালোবাসে?
.
ও না বোধক মাথা নাড়ল।
.
– তোমার স্কুলে কম্পিটিশনে এটেন্ড করে প্রাইজ এনে দেই না? তোমার সাথে খেলিনা?
.
ও হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম
.
– তাহলে?

– কিন্তু আমার বাবাই চাই। সবার মতো আমারও বাবাই চাই মাম্মা। তাহলে ওরা আর বলবেনা যে আমার বাবাই নেই। কেউ বলবে পারবেনা। প্লিজ মাম্মা আমার বাবাই চাই।
.
বলেই ফুপিয়ে কেদে দিলো। আমি কিছু না বলে দুই হাতে ওকে শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরে ওকে নিয়ে শুয়ে পরলাম। ও কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরল। এবার আমার চোখ দিয়েও পানি পরছে। মিষ্টিকে বুকে জরিয়ে রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সবকিছু গভীরভাবে ভাবতে লাগলাম। নাহ অনেক হয়েছে, সময় এসে গেছে মিষ্টিকে ওর বাবাই এর পরিচয় দেবার। কিন্তু এবার কী করে কী করবো? এখনি আদ্রিয়ানকে মিষ্টির বেপারে বলা যাবেনা, তাহলে হীতে বিপরীত হবে। কী করা উচিত এখন আমার।
.
দুই দিন হয়ে গেছে, আদ্রিয়ান আর আমার বাড়ির সবাই জেনে গেছে আদ্রিয়ান এসছে। ওরা সবাই খুব খুশি হয়েছে, কিন্তু আদ্রিয়ানের সাথে যোগাযোগ রাখার সুযোগ আর কারোরই হইনি। আমার সাথে হসপিটালে আদ্রিয়ানের দেখা হলেও ও ইগনোর করেছে আমায়।

আজ বিকেলে হসপিটাল থেকে ফিরে মিষ্টিকে আনতে গেলাম পার্কে। ওখানে গিয়ে মিষ্টির কাছে যাবো কিন্তু একটা বেঞ্চে তাকিয়ে আমি থমকে গেলাম। আদ্রিয়ান বেঞ্চে বসে সিগারেট টানছে। আর ঠিক ওর একটু দূরেই মিষ্টি বল নিয়ে খেলছে। আদ্রিয়ান সামনে তাকানোর আগেই আমি একটা মোটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। গাছটা ওদের খুবই কাছে কিন্তু এপাশে না এলে দেখতে পাবেনা। সিট! আদ্রিয়ান এখানে কীকরে এলো? এলো তো এলো এখানেই এলো? এখন আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে মিষ্টিকে আনতে পারবোনা তাই আদ্রিয়ান চলে যাবার আগ পর্যন্ত এখানেই ওয়েট করতে হবে। হঠাৎ দেখলাম মিষ্টি ভ্রু কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবছি এই মেয়ের আবার কী হলো? বাপকে চিনতে পেরে গেলো নাকি? দূর আমি কী ভাবছি ও কখনো আদ্রিয়ানকে দেখতেই পায়নি তাহলে চিনবে কীকরে? হঠাৎ মনে পড়লো সিগিরেট? ওহ সিট! এই মেয়ে নির্ঘাত এখন নিজেরই বাপের ক্লাস নেবে। বাট এখন আদ্রিয়ান যা এগ্রেসিভ হয়ে গেছে, তাতে কী হবে কে জানে? খেয়াল করলাম মিষ্টি আদ্রিয়ান এর কাছে আসছে। আমি মনে মনে বলছি রুক যা মেরে বাচ্চে রুক যা। কিন্তু আমার মেয়েকী আর থামার মেয়ে? পরে ভাবলাম যে না থাক। দেখি কী হয়! তাই চুপচাপ দেখতে লাগলাম।

মিষ্টি ধীর পায়ে এসে আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে দাড়ালো। আদ্রিয়ান একমনে সিগারেট টানছিলো কিন্তু সামনে একটা মেয়েকে ওভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোট থেকে সিগারেট নামিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো, কিন্তু মিষ্টির দিকে তাকিয়ে ভ্রুটা আর কুচকে রাখতে পারলোনা, স্হির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিষ্টির দিকে। তারপর চোখ সরিয়ে নিজের সিগারেট টানতে লাগল। আমি ভাবলাম কতোটা পাল্টে গেছে ও ছয় বছর আগের আদ্রিয়ান হলে একটা বাচ্চাকে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নির্ঘাত কোলে তুলে নিয়ে আদর করতো। এসব ভেবে তাকালাম ওদের দিকে। আদ্রিয়ান সিগারেটে একটা টান দিয়ে হাত নিচে নামাতেই মিষ্টি টান মেরে সিগারেট টা ফেলে দিলো। সেটা দেখে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকলো মিষ্টির দিকে তারপর হালকা ধমক দিয়ে বলল

– ওয়ে! এটা কী হলো?
.
অাদ্রিয়ানের কথা বলার ধরণটাও অবাক করল আমাকে। মিষ্টি নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে কোমরে হাত রেখেই বলল
.
– এই পচা জিনিস খাও কেনো হুম? জানোনা শরীর খারাপ হয়?
.
আদ্রিয়ান এবার ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে বলল
.
– আচ্ছা? তা কে বললো তোকে যে এটা পচা?
.
মিষ্টি ওভাবেই থেকে বলল
.
– আমার মাম্মা বলেছে
.
– খুব ভালো বলা শেষ? এবার যা এখান থেকে।

বলেই প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেটের হাতে নিয়ে লাইটার দিয়ে জালিয়ে টানতে লাগল। মিষ্টি নাক ফুলিয়ে আদ্রিয়ান যেই বেঞ্চে বসে আছে সেই বেঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছে কিন্তু বেঞ্চটা উচু হওয়াতে উঠতে পারছেনা। আদ্রিয়ান দুবার আড়চোখে ওকে দেখলো। মিষ্টি কয়েকবার চেষ্টা করে উঠতে না পেরে মুখ ফুলিয়ে হাত ভাজ করে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ান এবার হুট করেই মিষ্টির এক হাত ধরে উচু করে বেঞ্চে বসিয়ে দিলো। মিষ্টি হেসে বলল
.
– থ্যাংক ইউ!
.
আদ্রিয়ান মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে সিগারেটে টান দিলো কিন্তু কিছু বললোনা। মিষ্টি এতে একটু বিরক্ত হলো, তাই হুট করেই আদ্রিয়ান হাত থেকে সিগারেট নিয়ে আবার ফেলে দিলো। আদ্রিয়ান এবার চোখ কটমট করে তাকালো, কিন্তু মিষ্টির মধ্যে ভয়ের ভ ও নেই। আদ্রিয়ান রেগে বলল

– ওই তোর সাহস তো কম না?
.
মিষ্টি কপাল কুচকে রাগী গলায় বলল
.
– বললাম না এই পচা জিনিসটা খাবেনা?
.
আদ্রিয়ান এবার দীগুন রেগে বলল
.
– একশো বার খাবো কী করবি হ্যা? পাচ আঙ্গুলে মেয়ে আমায় জ্ঞান দিচ্ছে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরকে।
.
বলেই যেই পাশে রাখা সিগারেটের প্যাকেট টা নিতে যাবে মিষ্টি পুরো প্যাকেটটাই নিয়ে ফেলে দিলো। আমি এবার হাসছি মিটমিটিয়ে। তুমি যদি আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের হও ওও তোমার মেয়ে আদ্রিমা আবরার। আদ্রিয়ান এবার রেগে বলল
.
– তোকে তো…

মিষ্টি খিলখিলিয়ে হেসে দিলো আর ওর হাসির দেখে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজেকে সামলে বলল
.
– ওই একদম এভাবে হাসবিনা
.
– কেনো? ( কৌতুহল নিয়ে )
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল

– তোকে বলতে যাবো কেনো রে?
.
– তাহলে আমি তোমার কথা শুনে হাসি থামাবো কেনো?
.
আদ্রিয়ান এবার হতাশভাবে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে দাত করমর করেআশেপাশে তাকিয়ে বলল
.
– এটা কার মেয়ে রে? এখান থেকে নিয়ে উদ্ধার করুন আমায়।
.
মিষ্টি আবারো হাসলো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল

– হাসছিস কেনো?
.
– মাম্মা আসে নি এখোনো তাই তোমার কথা শুনবেনা।
.
– রোজ তোর মাম্মা ই নিতে আসে?
.
– হুম

– কেনো তোর বাবা কোথায়?
.
মিষ্টি মাথা নিচু করে বলল
.
– নেই তো।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো মিষ্টির দিকে তারপর কিছু বললোনা। দুজনেই কীছুক্ষণ চুপ ছিলো। আদ্রিয়ান নিজেই বলল
.
– কী নাম তোর?
.
– মিষ্টি ( হেসে দিয়ে )
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকিয়ে বলল
.
– তোর নাম মিষ্টি?
.
– হুম
.
– কোন হাদার তোকে দেখে মিষ্টি মনে হলো? তোর নাম তো ধানিলঙ্কা হওয়া উচিত ছিলো।
.
মিষ্টি নাকটা ফুলিয়ে বলল
.
– এই একদম আমার মাম্মাকে হাদা বলবেনা
.
– ওও নামটা তোর মাম্মা রেখেছে? তাহলে তো সত্যিই ভূল করেছি ওটা হাদা না হাদি হবে।

Infinite Love part 66+67+68+69+70

মিষ্টি কপাল কুচকে নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে, আমার ও রাগ লাগছে আমাকে হাদি বলা? মিষ্টি কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান ও গম্ভীরভাবে বসে আছে মিষ্টি আঙ্গুল দিয়ে একটি খোচা মারল। আদ্রিয়ান ভ্রু নাচিয়ে বোঝালো কী? মিষ্টি বলল
.
– তোমার সিগারেট ফেলেছি বলে রাগ করেছো?
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছূ না বলেই সামনে তাকালো। মিষ্টি এবার ওর হাতের বাদামের কাগজ খুলে বেঞ্চে রেখে বলল
.
– সরি!
.
এটা শুনে আদ্রিয়ান তাকালো। মিষ্টি হেসে বলল
.
– সিগারেট পচা জিনিস এটা খাও বুদ্ধি হবে।
.
আদ্রিয়ান এবার মুচকি হেসে বলল
.
– এটাও কী তোর মাম্মা বলেছে?

মিষ্টি হেসে মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান বলল
.
– তুই খা আমার যা বুদ্ধি আছে তাতেই হবে
.
মিষ্টি মুখ কালো করে বলল
.
– আমি খোসা ছাড়াতে পারিনা তো।
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বলল
.
– শুধু পাকা পাকা কথাই বলতে পারিস?
.
এটুকু বলে কাগজ টা হাতে নিয়ে একটা বাদাম বেছে মিষ্টির হাতে দিলো। মিষ্টি খুশি হয়ে সেটা নিয়ে খেতে লাগল। তারপর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
.
– তুমিও খাও।
.
আদ্রিয়ান আর না করলো না মিষ্টিকে বেছে দিতে দিতে নিজেও খেতে লাগল। বাবা মেয়ে একসাথে বসে বাদাম খাচ্ছে আর আমি চোখ ভরে সেই দৃশ্য দেখছি। চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। এবার আমি বুঝে গেছি আমাকে কী করতে হবে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের? একবার যখন দেশে এসে পরেছো। আমি আর তোমাকে ফিরতে দিচ্ছি না। নাউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।

Infinite Love part 75+76+77+78