Infinite Love last part 

Infinite Love last part 
Writer: Onima

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো ভেতরে আর আমি ছটফট করে যাচ্ছি। চোখ দিয়ে অবিরাম ধারায় পানি পরছে। যদি সত্যিই আজ আদ্রিয়ানের কিছু হয় আমি মরে যাবো। আধঘন্টা পর হঠাৎ চারপাশ কাপিয়ে বিস্ফোরোণ হলো। আমি জোরে একটা চিৎকার করে উঠলাম। আমার মনে হচ্ছে আমার দুনিয়া থেমে গেছে। আমি নিঃশ্বেস হয়ে গেছি। জীবণটাও থেমে গেলো, মনে হচ্ছে এখানে কোনো রং নেই, সবটাই ধূসর। আর কিচ্ছু নেই সব শেষ! সুখের দিনগলো এরকম কেনো হয়। এটা এমন একটা মরিচিকা যেটা হাতে ধরা দিয়েও দেয়না। যখন মনে হয় সব পেয়ে গেছি ঠিক তার পরের মুহূর্তেই এমন কিছু হয় তখন নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়। জীবন চক্রটাই এমন কখনও সব থেকেও কিচ্ছু নেই আবার কখনো কিছু না থেকেও সব আছে। আর সেই চক্রে সুখ, আনন্দ, ভালোবাসা, অভিমান, রাগ, অনুরাগ এই সবকিছুর পরেও মনের কোনো না কোনো কোণে থাকে কষ্ট এক বুক কষ্ট, হয়তো সেটা বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র কিন্তু এই কষ্ট নামক জিনিসটার সাধ সবাইকেই গ্রহন করতে হয়। প্রত্যেকেই কোনো কোনো কারণে শত হাসির মাঝেও গুমরে গুমরে মরে, কেউ প্রকাশ্যে কেউ নিঃস্তব্ধ রাতের গভীর অন্ধকারে। হ্যা এটাই সত্য জীবণচক্রের অতি নিষ্ঠুর আর চরম সত্য।

বেলকনির ফ্লোরে বসে বাইরে পরতে থাকা বৃষ্টির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। বর্ষার নিরব ভোরে মেঘে ঢাকা আবছা আলো আর অন্ধকারে সংমিশ্রনে ধীরগতিতে বাকা হয়ে পরতে থাকা চিকন বৃষ্টির ফোটাগুলো শব্দহীনভাবে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি ভিজিয়ে দিচ্ছে। চারপাশটা থম মেরে আছে এক অদ্ভুত নিঃস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারপাশে। আকাশ যেনো তার মেঘরূপি সমস্ত মনখারাপ গুলো বৃষ্টির রূপে ঝরিয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা? আকাশের মতো মানুষের কষ্ট গুলোও যদি এইভাবে ঝরিয়ে দিতে পারতো? মন্দ হতো না তাইনা? এসব ভেবেই বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির মগে চুমুক দিলাম। তারপর মুচকি হেসে তাকালাম আমার পাশে বসে থাকা মানুষটার দিকে। আমার জীবনের প্রত্যেকটা অনুভূতি যাকে ঘিরে, আমার ভালোবাসা, আমার জীবের এক অভিন্ন অংশ। আমার আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো উত্তরে আমিও হেসে ওর কাধে মাথা রাখলাম। ও আমাকে এক হাতে জরিয়ে নিয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– মনে আছে তোমাকে বলেছিলাম বিয়ের পর নিজের হাতে কফি বানিয়ে দুজনে ব্যালকনিতে বসে ভোর হওয়া দেখতে দেখতে কফি খাবো। আর শর্ত ছিলো তোমার মাথা আমার কাধে থাকবে?
.
– হুম প্রত্যেকটা কথাই মনে আছে।
.
– এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই আমার কাছে ভীষণ দামী জানো? তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত প্রত্যেকটা দিন আমার কাছে স্পেশাল।
.
আমি কিছু বললাম না চুপচাপ ওর কাধে মাথা রেখে চুপ করে রইলাম। ও একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– তবে একটা কথা কী জানো? আমি ভাবতে পারিনি আবার তোমাকে দেখতে পাবো, মিষ্টিকে দেখতে পাবো, পরিবারের সবার কাছে আবার ফিরতে পারবো। যখন
তোমাকে গাছটার সাথে বেধে রেখে ল্যাবের ভেতরে যাচ্ছিলাম তখন ইচ্ছে করছিলো আরেকটু দেখে নেই তোমাকে। আরেকটু সময় কাটাই তোমার সাথে। কিন্তু সেই সময়টাই তো ছিলোনা আমার কাছে। তাই যেতে হয়েছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করো যখন তোমাকে রেখে যাচ্ছিলাম বুকের ভেতরটা খালি হয়ে যাচ্ছিলো। ইচ্ছে করছিলো ছুটে ফিরে আসি তোমার কাছে। কিন্তু দায়িত্ব এরিয়ে যেতে পারিনি তাই যেতে হয়েছিলো আমাকে।
.
আমি কফির মগটা পাশে রেখে দুই হাতে ওর বাহু জরিয়ে ধরে বললাম

– তুমি যখন আমাকে বেধে রেখে ঐ ল্যাবে চলে যাচ্ছিলে প্রথমে তোমার ওপর খুব রাগ হচ্ছিলো। তারপরে আমার কপালে চুমু দিয়ে ঐসব কথা বলে যখন চলে যাচ্ছিলে তখন বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিলো। তুমি আমার থেকে যতোটা দূরে যাচ্ছিলে মনে হচ্ছিলো আমার আত্মা, আমার অস্তিত্ব, আমার সবকিছু তোমার সাথে চলে যাচ্ছে। ওখানেই ছটফট করছিলাম। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছিলো তোমার কাছে কিন্তু তুমি সেই রাস্তাও বন্ধ করে দিয়ে গেছিলে। কেমন লাগছিলো বোঝাতে পারবোনা তোমাকে। আর তারপর যখন ব্লাস্ট হলো আমার পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকার হয়ে গেছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি মরেই গেছি। কোনো অনুভূতি কাজ করছিলো না।
.
বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ান যত্ন সহকারে আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল
.
– আমি এসে তোমাকে ওভাবে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকতে দেখে আমার কী অবস্হা হয়েছিলো জানো?
.
আমি কিছু না বলে চুপচাপ ওর কাধে মাথা দিয়ে রাখলাম। কী করবো সামলাতে পারছিলামতো না নিজেকে। ব্লাস্ট হবার পর আমি শুধু আদ্রিয়ানের নাম নিয়ে জোরে একটা চিৎকার দিয়েছিলাম। আর তারপর সম্পূর্ণ পাথরের মতো দাড়িয়ে ছিলাম। আর তার পরেই পুলিশের গাড়ির সাথে অভ্র আসে আর জার্নালিস্ট রাও আসে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতো শুধু ঐ জ্বলতে থাকা ল্যাবের দিকে। অভ্র দৌড়ে আমার কাছে এসে আমার বাধন খুলতে খুলতে বলল
.
– ম্যাম আপনাকে এভাবে বেধে রেখেছে কে? আর স্যার কোথায়।

আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। কথা বলার শক্তি পাচ্ছিনা। অনেক কষ্টে কোনোরকমে আঙ্গুল দিয়ে ল্যাবের দিকে ইশারা করতেই অভ্র ধপ করে বসে পরলো। ওর চোখে জল টলমল করছে। ইতিমধ্যে আদিব আর ইশরাক ভাইয়া চলে এসছে। এই অবস্হা দেখে ওরাও স্তব্ধ হয়ে গেছে। জার্নালিস্টরা নিউস বানাচ্ছে চারপাশে হৈ হৈ। আদ্রিয়ান মারা গেছে? এটা সবাই মানতেই পারছেনা। আর এটা অবিশ্বাস করারো কোনো কারণ নেই কারণ এতো ভয়ংকর বিষ্ফোরনে ল্যাবের ভেতরে থাকলে বাচার কোনো সম্ভাবনাই নেই। অভ্র অভাবেই বসে চোখের পানি ফেলছে। আর এসব শুনে আমার শরীর অসার হয়ে আসছে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। পারবোনা আদ্রিয়ানকে ছাড়া বাচতে, আমি পরে যেতে নিলেই আদিব ভাইয়া আর ইশরাক ভাইয়া আমায় ধরে ফেলল। আদিব ভাইয়া বলল
.
– অনিমা প্লিজ নিজেকে সামলাও।
.
কিন্তু আমার মাথা আর এই ভার নিতে পারছিলোনা তাই কোনোমতে আদ্রিয়ান শব্দটা বলার পর সবকিছুই অন্ধকার হয়ে এলো আমার কাছে। এরপর আর কিছুই মনে নেই অামার।
.
এরপর যখন চোখ খুললাম তখন ঝাপসা চোখে দেখতে পেলাম কেউ আমার হাত ধরে আছে। ভালো করে দৃষ্টি পরিষ্কার করে তাকিয়ে দেখি অাদ্রিয়ান আমার হাত ধরে বসে আছে। ওকে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সত্যিই এটা আদ্রিয়ান? ও ঠিক অাছে। আমি ওর দিকে ছলছলে তাকিয়ে আছি। ও আমাকে ধরে ওঠাতেই বুঝতে পারলাম যে এটা কোনো কল্পনা না সত্যিই আমার আদ্রিয়ান। কিচ্ছু হয়নি ওর ঠিক আছে ওও একদম ঠিক আছে। আমি কেদে দিয়ে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললাম

– কেনো এমন করো তুমি সবসময়? খুব ভালোলাগে আমাকে টেনশন দিতে? আমাকে একদিন এভাবে টেনশন দিয়ে দিয়ে মেরে ফেলবে তুমি।
.
ও আমাকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– এক থাপ্পড় মারবো মরার কথা কেনো বলছো তুমি? এতো কষ্ট করে ফিরে এসছি এসব শুনতে?
.
অভ্র বললো
.
– কী ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিলেন স্যার। পুরো দুনায়াই থেমে গেছিলো।
.
আদিব আর ইশরাক ভাইয়াও একি কথা বলেছে আমি তখনও হিচকি দিয়ে কাদছি। বাবা মামনি জাবিন বাড়ির সবাই শকের মধ্যে ছিলো ঐ নিউস শুনে। মিষ্টিকে কিছু না জানালেও সবার কান্না দেখে ওও কেদেছিলো। কিন্তু আদ্রিয়ানকে ফিরে আসতে দেখে সবাই প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো। কিন্তু আমাকে অজ্ঞান দেখে টেনশনে পরে গিয়েছিলো সবাই। মিষ্টি আবারো কেদে দিয়েছিলো। মিষ্টিতো আমার আর আদ্রিয়ানের পাশ থেকে সরছিলোই না। তবে কেউ আদ্রিয়ানকে বকে নি কারণ ও যা করেছে সেটা করতে খুব কম মানুষই পারে।
.
আদ্রিয়ানের ডাকে কল্পনা থেকে ফিরে এলাম। আদ্রিয়ান বলল
.
– ওসব ভেবে আর মন খারাপ করোনা। ঠিক আছিতো আমি।
.
– হুম।

– তোমাকে ওখানে রেখে ল্যাবে ঢুকে আমার মাথায় একটা চিন্তাই ছিলো যে কাজটা করে আমাকে তোমাদের কাছে ফিরতে সবে আর সেটা যেকরেই হোক। তাই সফটওয়্যার টা ডিসেবেল করার চেষ্টা করছিলাম, প্রথম দশ মিনিট পর্যন্ত আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না। কিছুতেই কিছু করতে পারছিলাম না। ঘাম বেড়িয়ে যাচ্ছিলো আমার। কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখলাম যে আমাকে পারতে হবে পারতেই হবে। এতো মানুষের প্রাণের জন্যে হলেও পারতে হবে আমাকে। তাই আরো কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পরেই আমি সফল হতে পেরেছিলাম সফটওয়্যার টা ডিসেবেল করতে। কিন্তু বোমটা ডিফিউস হচ্ছিলোনা অনেক চেষ্টা করেও পারছিলাম না। বুঝতে পারলাম এটা ডিফিউস করা যাবেনা কিন্তু তখন মাত্র তিন মিনিট বাকি ছিলো। সামনের দরজা দিয়ে বেড়োলে বেরোতে গেলে অনেক টাইম লাগত বেড়োনোর আগেই ফেটে যেতো তাই দৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়েছিলাম আর আমি বেড়নোর দু সেকেন্ড পরেই ব্লাস্ট হয়। আর ফিরে এসে দেখি তুমি অজ্ঞান হয়ে পরে আছো। তোমাকে ওভাবে দেখে পিলে চমকে উঠেছিলো আমার। তারপর তোমাকে কোলে তুলে নেই আর বহু কষ্টে মিডিয়া পুলিশকে সামলে চলে আসি বাড়িতে।
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওকে জরিয়ে ধরে বসে রইলাম আর ওও আমাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। দুজনেই একে ওপরকে জরিয়ে ধরে এই বৃষ্টিমুখর পরিববেশটাকে ইনজয় করছি। কারণ বিষাদময় অতীতের কথা ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করা সত্যিই বোকামী ছাড়া কিচ্ছু না।

আজ অভ্র আর জাবিনের বিয়ে। এই কয়েকদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে বিয়ের নানারকম আয়োজন নিয়ে। মিষ্টিতো হিয়াজ তিথিদের সাথে ছুটাছুটি করে খেলে বেড়াচ্ছে। আত্নীয় সজনে বাড়ি মম করছে। খুব ধুমধাম করেই বিয়েটা হয়ে গেলো। বিদায়ের সময় জাবিন আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে অনেক কেদেছে আমারো খারাপ লেগেছে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিলো জাবিন আর আমার। তবুও মেয়ে তো বিদায় তো দিতেই হবে এটাই তো সমাজের নিষ্ঠুর নিয়ম।
.
রাতে বিয়েতে পরা শাড়িটা খুলছি রুমে। মিষ্টি আপির কাছে থাকবে আজ হিয়াজ তিথির সাথে খেলার জন্যে। আমি শাড়ি খুলছি হঠাৎ আদ্রিয়ান এলো। ওকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি শাড়িটা গায়ে জরিয়ে নিলাম। আর রেগে বললাম
.
– দেখছোনা চেন্জ করছি? যাও এখান থেকে!
.
আদ্রিয়ান দুষ্টু হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল আর আমি পেছাতে লাগলাম। আর ওও আসতে আসতে এগোচ্ছে একপর্যায়ে কাবার্ডে লেগে গেলাম। আদ্রিয়ান কাবার্ডের দুপাশে হাত রেখে হালকা ঝুকে বলল

– আমিই তো। সবকিছুই তো দেখা নতুন করে কিছু দেখার ইচ্ছে নেই। তবে অন্যকিছু করতে ইচ্ছে করছে।
.
– আদ্রিয়ান একদম না। এখন আমার ঘুম পাচ্ছে।
.
ও আমাকে কাবার্ডের সাথে চেপে ধরে গলায় মুখ গুজে বলল
.
– আজকেতো ঘুমোতে দেবোনা জানপাখি।
.
আমি কোনোরকমে নিজেকে সামলে ওকে ছাড়িয়ে যেতে নিলেই ও আমার হাত ধরে একটানে ওর সাথে মিশিয়ে নিয়ে নিলো।
.
– আদ্রিয়ান ছাড়ো প্লিজ।
.
– সরি বেবি আজ পারবোনা।

বলেই আমার শরীর থেকে শাড়িটা আস্তে করে সরিয়ে ফেলে দিল। তারপর আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি চোখ বন্ধ করে আকড়ে ধরলাম ওকে। ওর প্রতিটা ভালোবাসাপূর্ণ স্পর্শে কেপে উঠছি আমি। হারিয়ে যাচ্ছি কনো এক অজানা জগতে।
.
একদিন সকালে কারো সুরসুরিতে ঝট করে জেগে উঠলাম। ব্যাপারটা কী হলো বুঝতে পারলাম না। তাই চোখ ডলে ঘুম মুম চোখে ঘুরে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আর মিষ্টি দুজনে জোরে জোরে হাসছে। আমি ভ্রু কুচকে উঠে বসে বললাম
.
– এটা কী হলো?
.
মিষ্টি ভ্রু কুচকে বলল

– মাম্মা হসপিটালে যাবেনা তুমি?
.
– হ্যা তো এভাবে ওঠানোর কী ছিলো? ভালো করে ডাকলেই তো হতো নাকি?
.
আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে বলল
.
– ভালো ভাবেই ডেকেছিলাম ম্যাডাম। কিন্তু আপনি যেই চমৎকার লেভেলের ঘুম কুমারী। তাই ওঠাতে ব্যার্থ হয়েই দুজন মিলে আপনাকে ঘুম থেকে ওঠানোর সেই নিঞ্জা টেকনিক টা ইউস করতে বাধ্য হলাম। আর আমার মেয়েটাও তো এই টেকনিক টা জানতোনা তাই ওকে শিখিয়ে দিলাম আরকি। তাইনা মা?
.
মিষ্টিও হাসতে হাসতে তাল মিলিয়ে বলল
.
– হুম আইডিয়া টা খুব ভালো। মাই বাবাই ইজ দ্যা বেষ্ট।
.
– ইয়াহ।
.
বলেই বরাবরের মতো দুজনে হাইফাইভ করলো। আর আমি অবাক হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললাম

– বাহ বাহ। এখন বাবাই বেস্ট হয়ে গেলো আর মাম্মা কিছুই না?
.
দুজনেই আসাম করে বসে মিটমিটিয়ে হাসছে। সেটা দেখে আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম
.
– হ্যা হ্যা এখন তো বাবা মেয়ে একটা টিম হয়ে গেছো তাইনা? আমাকে তো কেউ ভালোই বাসেনা হুহ।
.
বলেই উল্টো দিকে ঘুরে বসে পরলাম। কিছুক্ষণ পর মিষ্টি পেছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরল, আমি মুচকি হাসলেও সেটা ওদের না দেখিয়ে ছাড়াতে গেলেই মিষ্টি বলল
.
– আমি আমার মাম্মাকে খুব ভালোবাসি।
.
বলে আমার গালে চুমু দিলো। আমি হেসে মিষ্টিয়ে ঘুরিয়ে নিজের কোলে এনে বসিয়ে ওর গালে চুমু খেলাম। আদ্রিয়ান
ও আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আমিও মিষ্টির মাম্মাকে খুব ভালোবাসি।

বলে ওও আমার গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো, তবে সেটা মিষ্টির দৃষ্টির অগচরে। আমি চোখ রাঙাতেই ও চোখ টিপ মারলো আর আমি হেসে দিলাম। হঠাৎ মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলল
.
– আমাকে কেউ ভালোবাসেনা।
.
আমি আর আদ্রিয়ান অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে একসাথে বললাম
.
– আমরাওতো আমার মিষ্টি সোনাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
.
বলেই দুজনেই একসাথে মিষ্টির দুই গালে চুমু দিলাম। এরপর তিনজনেই ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে গেলাম। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে স্কুলে, আর আমাকে হসপিটালে ছেড়ে দিয়ে নিজে অফিসে চলে গেলো।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। আমাদের এতো সুন্দর সুখী পরিবার, হাসি মজা। আদ্রিয়ান মিষ্টির খুনশুটি। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর সময় পার করছি

আমি আর আদ্রিয়ান পার্কে বসে বাদাম চিবোচ্ছি। মিষ্টি খেলছে আমাদের দৃষ্টি মিষ্টির দিকেই। আমি মিষ্টির দিকে তাকিয়েই আদ্রিয়ান এর বাহু জরিয়ে ধরে বললাম
.
– এতোকিছু ঘটে যাবার পর অবশেষে আমরা শান্তি পেলাম। এই সামান্য শান্তিটুকুই তো খুজছিলাম এতো বছর ধরে।

– হ্যা আজ সত্যিই শান্তি লাগছে খুব। আমার জানপাখি আমার কাছে আছে আমার মেয়ে আমার কাছে, আমার পরিবার আমার কাছে আছে সত্যিই শান্তি লাগছে। খুব ভালোবাসি তোমাকে নিজের চেয়েও বেশি।
.
– আচ্ছা আদ্রিয়ান একটা প্রশ্ন আমার মনে সবসময়ই এসছে যদিও জিজ্ঞেস করা হয়নি। তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো, আমাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারোনা তবুও আমাকে ক্ষমা করতে না পেরে ছয় ছয়টা বছর আমার থেকে দূরে ছিলে? এতোটাই অভিমান ছিলো আমার ওপর?
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল

– তোমার কী মনে হয় অনি? আমি সত্যিই শুধুমাত্র তোমার ওপর অভিমান করে এতোগুলো বছর দূরে ছিলাম? যার থেকে এক দিন দূরে থাকলে আমার এতো কষ্ট হয়? অাদ্রিয়ান কোনোদিনো অনিমাকে চিরদিনের মতো ছেড়ে থাকার কথা ভাবেনি আর না ভবিষ্যতে ভাববে।
.
– তাহলে?

Infinite Love part 79+80+81+82

– সব প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরী নয়। কারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দশটা নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয় আর সেই দশটা প্রশ্নের উত্তর আরো একশোটা প্রশ্নের। সব শেষে কেনো শব্দটা থেকেই যায়। তাই সেইসব প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো। তাতেই সবার মঙ্গল।
.
আমি ওর কথার মানে বুঝলাম না কিন্তু এটুকু বুঝলাম ও উত্তর দেবেনা তাই সেসব বাদ দিয়ে বললাম
.
– তবে যাই হোক এখন তো তুমি আমার পাশে আছো তাতেই হবে আমার আর কিচ্ছু চাইনা। আর তাছাড়া এখন তো আর কোনো বিপদ নেই, সব বিপদ এখন শেষ।
.
আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়েই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল

– শেষ এর মধ্যন্হ ষ এর পরেই কিন্তু সূচনার দন্ত্য স থাকে।
.
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম

– মানে?
.
ও আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল
.
– কিছু না। তবে এটা মনে রেখো আমি তোমার সাথেই থাকব সারাজীবণ। কোনোদিন ছেড়ে যাবোনা তোমাকে।
.
আমিও মুচকি হাসি দিয়ে বললাম
.
– আমি জানি।

ও আমাকে ছেড়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে ওর সাথে বল খেলতে লাগল। আমি হাত ভাজ করে ওদের দেখে মুচকি হাসছি। বাবা মেয়ে হাসতে হাসতে কী সুন্দর দুষ্টমী করতে করতে খেলছে। দেখলেই চোখ জুরিয়ে যায়। আদ্রিয়ানকে বোঝা আমার সামর্থের মধ্যে নেই। ও কী বলে কেনো বলে আর কী করতে চলেছে সেটা ও ছাড়া কেউ জানেনা। তবুও আমি ভাবছিনা এসব নিয়ে কারণ আমি জানি ও আমাকে আর মিষ্টিকে সারাজীবণ আগলে রাখবে। খারাপ কিচ্ছু হতেই দেবেনা ও। খুব ভালোবাসি আমি ওকে আর এটাও জানি ওও আমাকে আর মিষ্টিকে সীমাহীন ভালোবাসে। আর আমার প্রতি ওর ভালোবাসাটা শুরু থেকেই সীমাহীন ছিলো আর আছে। আমি এটুকুতেই খুশি যে একটু রহস্যঘেরা হলেও His love is Infinite Love.

সমাপ্ত

6 COMMENTS

  1. golpota pore jemon hasci temon kanna o korci kico kico part ato emotional celo j nejer ojantey cok dea pani cole ace … golpota ses hoia jauai kob karap lagtace..
    . favorite golpogulor modde akta …. apner next golper opekkay roilam…..☺☺☺☺☺☺

  2. Just osm sotti bolar moto kichu khuje পাচ্ছি na ki bolbo atto valo legeche golpo ta r khub interesting golpo chilo khub khub khub khub khub sundor golpo

  3. Sotti story ta niye r kichu bolar nei ek kothai osadharon lekhikake amr torof theke dhonno badh , bhalobasha o srodha please erokom aro ekta golpo please ? golpo ta pray 3,4 , bar porechi ok tobe sob seshe bolbo . Darun bhalo thakben sobai .

  4. koekta spelling bhul ache kintu . Khub Sundor hoeche story ta prothom ta happy maj Khanta sad abar Jokhon sobta thik hoe galo tokhon khub bhalo laglo . R sob sesh e Happy Ending tao khubi sundor chilo . Khub bhalo laglo story ta…❤???

Comments are closed.