জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৭ || রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৭
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

তুর্বী অবাক হয়ে দেখছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিকে আর ভাবছে এই লোকটা এখানে কীকরে এল? কারণ ওর সামনে সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্যর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই ওর হাত ধরে উঠে দাঁড়াল তুর্বী। ও হা করে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। তুর্বী মুখ এক ইঞ্চি ফাঁক করে হা করে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য ওর মুখের সামনে তুরি বাজাতেই তুর্বী হকচকিয়ে গেল। সৌহার্দ্য ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” সবসময় এভাবে দৌড়দৌড়ি, লাফালাফি না করে চলতে পারোটা?”
তুর্বী গলা ঝেড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” আপনি এখানে? এই কেবিনে কী করছেন? এই আমি যেখানে যাই সেখানেই আপনাকে থাকতে হয়? ফলো করছেন নাকি আমাকে? দেখুন আপনি যদি সেটা চিন্তাও করে থাকেন তো ভুলে যান। কারণ আপনি চেনেন না আমাকে। আমি রেগে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনি জানেন না আমি কী করতে পারি? তো আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করুন হ্যাঁ?”
সৌহার্দ্য এতক্ষণ হাত ভাজ করে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে শুনছিল। তুর্বীর কথা শেষ হতেই সৌহার্দ্য নিজের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” তোমার বলা শেষ?”
তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে, এরপর বলল,
” হ্যাঁ শেষ। এবার বলুন আপনি এখানে কেন? আর স্যার কোথায়”
সৌহার্দ্য একটু হাসল। তারপর নিজের নাক স্লাইড করে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমার স্যার ব্যাঙ্গালর আছেন আর আমি আজ থেকে আপনার বস, মানে স্যার।”
তুর্বী অবাক হয়ে বলল,
” আমার বসের তো আরো কিছুদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। আর আপনি আমার স্যার কীকরে.. মানে আপনিই ওনার ছেলে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সৌহার্দ্য মেকি একটা হাসি দিয়ে বলল,
” জি। সৌহার্দ্য রায়হান, সান অফ শফিক রায়হান।”
কথাটা শুনেই তুর্বী একটু ঘাবড়ে গেল। বসের ছেলের সাথে মানে ওর বর্তমান বসের সাথে এভাবে কথা বলল? আর এর আগেও তো যতবার কথা হয়েছে ততবার এমন উট্কো ব্যবহার করেছে। এখন ওর কী হবে? এসবের জন্যে ওকে ফায়ার করে দেবে না তো? এসব ভেবে তুর্বী জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,
” সরি স্যার। আসলে আমি..”
এটুকু বলে মাথা নিচু করে রইল। কী আর বলবে? সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” ইটস ওকে। আসুন জরুরী কথাটা সেড়ে নেই?”

তুর্বী মনে মনে স্বস্তি পেল। যাক কোন ঝামেলা অন্তত হল না। সৌহার্দ্য নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। তুর্বীর মেজাজ ভীষণ খারাপ হল। এই লোকটাকেই ওর বস হতে হল? দুনিয়াতে কী বসের অভাব পরেছিল? এখন কী হবে কে জানে? সৌহার্দ্য বসতে বললেই তুর্বী গিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসল। সৌহার্দ্য ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রেখে বলল,
” আমি কাল রাতে তোমার মেইলটা ভালোভাবে রিড করেছি। ইট ওয়াস গুড! ইন ফ্যাক্ট ভেরী গুড। বেশ নতুনত্ব আছে। অনেক ইম্পর্টেন্ট আর ইউনিক ডিজাইন পেয়েছি। আমার ভালো লাগল তাই এপ্রুভ করলাম। ইউ আর সিলেক্টেড ফর আওয়ার নিউ প্রজেক্ট, ওয়েলকাম টু দা টিম।”
তুর্বী খুশি হয়ে হেসে দিয়ে বলল,
” থ্যাংকিউ স্যার। থ্যাংকস আ লট।”
” খুব তাড়াতাড়ি এই প্রজেক্ট নিয়ে মিটিং হবে। গ্রুপের সবাই যার যার প্লান বলবে। নেক্সট বিল্ডিং টা একটা অফিস রুমের জন্যে হবে। বিজনেস অফিস হবে। একটা ফাইল পাঠাচ্ছি তোমাকে ওটা পড়ে নিয়ে নিজের মত করে ডিজাইন করে নাও। ”

” ওকে স্যার।”
” হুম। বাট তোমার মেইল কোয়ালিটিতে বেশ গন্ডগোল আছে।”
তুর্বীর মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। ও ভয়ে ভয়ে বলল,
” কেন স্যার? কোন কিছু ভুল লিখেছি? আই মিন উল্টোপাল্টা কিছু?”
সৌহার্দ্য মাথা নেড়ে বলল,
” নাহ তেমন কিছুই না। কিন্তু লেখাগুলো বেশ ইনফরমাল ছিল। এটা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে যে তুমি অফিসে তোমার সিনিয়রদের কাছে মেইল পাঠাচ্ছো, তোমার কোন বন্ধুকে হোয়াটসঅ‍্যাপে মেসেজ না। সো এতো ইনফরমাল। তাই ওয়ার্ড সিলেকশনে একটু সতর্ক হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ এতো কুল টাইপেরনা করে যথেষ্ট ফরমাল করবে। ক্লিয়ার?”
তুর্বী মাথা নেড়ে বলল,
” ওকে স্যার!”
” এন্ড ইয়েস! নট অনলি ওয়ার্ড সিলিকশন।”

কথাটা বলে সৌহার্দ্য তুর্বীর টিশার্টের দিকে তাকাল যেটাতে একটা কার্টুন দেওয়া। সৌহার্দ্যর দৃষ্টি অনুসরণ করে তুর্বীও তাকাল তাকিয়ে দেখল কার্টুনটা। ও বুঝে গেল সৌহার্দ্য কী বলতে চাইছে। ও অসহায় দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যর দিকে তাকাতেই সৌহার্দ্য মুচকি হেসে বলল,
” দিস ইজ আ ওয়ার্কপ্লেস। লেটস রেসপেক্ট দ্যা ওয়ার্ক প্লেস।”
তুর্বী জোরপূর্বক এক হাসি দিয়ে বলল,
” ওকে স্যার।”
বলে কোনরকমে কেবিন থেকে দৌড়ে পালাল তুর্বী। সৌহার্দ্য তুর্বীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল আর মনে মনে ভাবল, ‘ অবশেষে ভাগ্য আমাদের আবার দেখা করালো, কালকে মেইল চেইক করতে গিয়ে তোমার মেইল পরেই তোমাকে চিনে ফেলেছিলাম। আর তোমাকে সোজা করতে একমাত্র আমিই পারব। নাও জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।’

বিহান আর রিখিয়া একে ওপরে মুখোমুখি বসে আছে একটা কফিশপে। রিখিয়া দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আর বিহান গালে হাত দিয়ে দেখছে রিখিয়াকে। মেয়েটা একটু বেশিই লাজুক। অথচ এই লাজুকতাতেই বিহান না চাইতেই বারবার ঘায়েল হয়ে চলেছে। কিছুতেই বেড়োতে পারছেনা এই অনুভূতির জ্বাল থেকে। এদিকে রিখিয়া মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে, কেমন একটা লাগছে ওর। নিরবতা ভেঙ্গে বিহান বলল,
” তো মিস, কফিতো অর্ডার করো? কোনটা খাবে?”
রিখিয়া নিচু কন্ঠে বলল,
” আপনি যেটা অর্ডার করেন।”
” এটা কোন কথা? তোমার তো পছন্দ আছে নাকি? ”
রিখিয়া আর কোন উপায় দেখতে না পেয়ে বলল,
” নরমাল মিল্ক কফি হলেই হবে।”
” শিওর তুমি?”
” হুম শিওর।”

বিহান ওয়েটারকে ডেকে নিজের জন্যে ব্লাক কফি আর রিখিয়ার জন্যে মিল্ক কফি ওর্ডার করে নিল। এরপর রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর হাতের ওপর হাত রাখল। সাথেসাথেই একটু নড়ে উঠল রিখিয়া, অবাক দৃষ্টিতে তাকাল বিহানের দিকে। বিহান মুচকি হেসে বলল,
” তুমি কী আনইজি ফিল করছ?”
রিখিয়া কী বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা। ওর সত্যিই এবার অস্বস্তি হচ্ছে একটু কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। বিহান রিখিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
” দেখ আমার সামনে এত হেজিটেশনের কিছু নেই। আমাকে নিজের বন্ধু ভাবতে পারো।”
রিখিয়া এবার চোখ তুলে ভালোভাবে তাকালো বিহানের দিকে। বিহান আবারও বলল,
” আমি এতোটাও খারাপ নই যে আমার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবেনা। কী বল?”
রিখিয়া এখনও কিছু বলছেনা শুধু হাত কচলে যাচ্ছে। কী বলবে কী করবে বুঝতে পারছেনা। বিহান বলল,
” তুমি কী এখনও ভাবছ যে আমি ঐরকম ক্যারেক্টারলেস, বাজে টাইপের ছেলে।”
রিখিয়া হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৬

” এ মা ন্ না। আমি এরকম কিছুই ভাবছি না। আসলে..”
বিহান ভ্রু কুচকে বলল,
” আসলে?”
” আসলে আমি এর আগে তুর ছাড়া কারো সাথেই এরকমভাবে ফ্রি হয়ে মিশিনি তো তাই।”
বিহান দুইহাতের ওপর থুতনি রেখে বলল,
” হুম তো কী হয়েছে? আজ থেকে আমার সাথে মিশবে?”
রিখিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। এরমধ্যেই কফী চলে এল। বিহান আবার বলল,
” আচ্ছা সমস্যা নেই। কফি চলে এসছে। এবার তুমি কফি খেতে খেতে ভাবো যে আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করা যায় কি-না। কফি শেষ হলে ডিসিশন জানিও।”

কথাটা বলে বিহান কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিল। রিখিয়া মগ হতে নিয়ে ভাবছে বিহানের কথা। কী করা উচিতওর সেটাই ভাবছে। ছেলেটাযে খারাপ না সেটি ও একদিনে বুঝে গেছে। এখন প্রশ্ন হল ফ্রেন্ডশীপ করবে কী না? এসব ভাবতে ভাবতে কফি খাওয়া শেষ হয়ে গেল। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকাল। বিহান মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
” ফ্রেন্ডস?”
রিখিয়া ভাবছে ও কী করবে? হাত বাড়াবে? না-কি না? কোনটা ঠিক হবে?

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৮