জল ফড়িঙের খোঁজে শেষ পর্ব  || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

জল ফড়িঙের খোঁজে শেষ পর্ব 
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

বসার ঘরে জুড়ে পিনপতন নিরবতা। অতিথিরা সব চলে গেছে অনেক আগেই। এখন শুধু বাড়ির লোকেরাই বসে আছে ড্রয়িং রুমে। শফিক রায়হান সোফায় কোনরকম বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। বিহানের বাবা দুহাতে মুখ চেপে ধরে বসে আছে। আর বিহানের মা ইতিমধ্যে একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। বাকিরা একদম চুপ হয়ে বসে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই। বিহানের কোন প্রতিক্রিয়াই নেই ও একদম স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্য ওর এক হাত চেপে ধরে রেখে নইলে অনেক আগেই বেড়িয়ে যেতো। সকলেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। যখন কেউ জানতে পারে যে এতোগুলো দিন সে এক মস্ত বড় ভুল ধারণা নিয়ে বসে ছিল। একটা মিথ্যের ওপর নির্ভর করে এতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তখন প্রতিক্রিয়া এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেউ কিছু বলার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেনা।

একটু আগে মায়ার বাবা-মা যেই সত্যির সম্মুখীন ওদের করিয়েছে তার সম্মুখীন হওয়ার জন্যে কেউই প্রস্তুত ছিলো না। যেই অপরাধের শাস্তি ওনারা বিহানকে এতগুলো বছর ধরে দিয়ে আসছিল সেই অপরাধ আসলে বিহান করেই নি? মায়াকে রেপ করাতো দূরে থাক সেরকম কোন চেষ্টাও করেনি বিহান। বরং ভার্সিটিতে মায়াই বিহানকে নানাভাবে জ্বালাতন করেছে, কখনও কখনও সিডিউস করারও চেষ্টা করেছে। আর এগুলো মায়ার বাবা-মায়ের কথা নয় স্বয়ং মায়ার বলা। এসব শুনে আর ওনারা কেউই ঠিক থাকতে পারেন নি। আসমা তো ছলছল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। নাহারে ওনাকে ধরে সামলে নিলেন।

আমিনুর এতোটাই মানসিক আঘাত পেয়েছে যে কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাতে পারছেনা। শফিক রায়হান সোফা ধরে বসে পরেছেন। ওনার চোখের সামনে বারবার বিহানকে মারার দৃশ্যটাই ভেসে উঠছিল। সেদিন বিহানের কোন কথা না শুনেই কতটা নিষ্ঠুরভাবে মেরেছিলেন সেদিন! বিহান এসব কথা চলাকালীন-ই ওখান থেকে চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সৌহার্দ্য ওর হাত ধরে আটকে নিয়েছে। তুর্বী আর রিখিয়া মনে মনে বেশ স্বস্তি পেল যে এতোদিন পরে হলেও বিহান সবার কাছে নির্দোষ তো প্রমাণিত হল। বেশ অনেকটা সময় গম্ভীর হয়ে বসে থাকার পর আমিনুর কম্পিত কন্ঠে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” মায়া এসব করল কীকরে করল? মানে সেদিন আমরা গিয়েতো।”
মায়ার বাবা লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে বললেন,
” মায়া সেদিন বিহানের পানিতে ঘুমেল ঔষধ মিশিয়ে রেখেছিল। সেইজন্যই বিহান টের পায়নি ওর সাথে ঠিক কী হয়েছে। মায়ার এক বান্ধবীও সাহায্য করেছিল এতে।”
সবটা শুনে মায়ার তীব্র ঘৃণা আর বিতৃষ্ণায় ভরে উঠল সবার মন। একটা মেয়ে বিহানের প্রতি নিজের রাগ মেটানোর জন্যে এতো নিচে নামলো? শফিক রায়হান ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল,
” তোমার ঐ গুনধর মেয়ে কোথায়? ওকে পুলিশে দেব আমি আজ। এখানে আসেনি কেন। নির্লজ্জ মেয়ে একটা।”
আমেনা উঠে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় বললেন,
” ওকে নিজের মেয়ের মতই দেখতাম আমি। তার এই দাম দিল?”
মায়ার মা কেঁদে দিলেন। চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন,
” ওকে মেয়ে বলতেও আমাদের লজ্জা হয় আপা। তবে প্রকৃতি ওকে ছাড় দেয়নি। ওর নিজের করা কুকর্মের জ্বালেই আজকে ও ফেঁসে গেছে। জীবনটা শেষ হয়ে গেছে ওর।”
তুর্বী ভ্রু কুচকে ফেলে বলল,

” মানে?”
মায়ার বাবা বললেন,
” এখান থেকে চলে গিয়ে মায়ার বিয়ে দেই আমরা। দু-বছর পর্যন্ত সব ঠিকই চলছিল। একবার আমরা দেশের বাড়ি এসছিলাম আমার মা মারা গেছিল তাই। মায়াও এসছিল ওর হাজবেন্ড আর ননদের সাথে। মায়ার ঐ ঘটনার কথা এলাকায় এমনিতেই ছড়িয়ে পরেছিল। তাই আমরা ওদের আনতে চাইনি। কিন্তু মায়ার হাজবেন্ডের জোড়াজুড়িতে আনতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু দেশে আসার পর কোনভাবে মায়ার ননদের কানে পৌঁছে যায় যে মায়া ধর্ষিতা। এর আগে ওর সাথে এরকম কিছু একটা হয়েছিল। আর সেদিনই বুঝতে পারি যে ওর হাজবেন্ডের মানসিকতা কতটা খারাপ। ও মায়াকে আর মানতে পারছিল না। এরপর থেকেই মায়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করত।

দিনরাত অত্যাচারও করত। একবছরের মাথায় তো আরেকটা বিয়েও করে নিয়ে এলো। আসলে ওসব বাহানা ছিল। আসলে ও আগে থেকেই মায়াকে ছাড়তে চাইছিল। কিন্তু কোন মাধ্যম পাচ্ছিল না। এরপর ওর ওপর অত্যাচার আরও বাড়িয়ে দেয় ওরা। মেয়েটার অবস্থা দেখে কষ্ট হতো আমাদের। বিয়ের আগে এমন ঘটনা ঘটল আর বিয়ের পরেও সুখ পেলোনা। ওকে নিয়ে আসতে চাইতাম আমরা, ও নিজেই আসতো না। কিন্তু মায়াও ছাড়ার পাত্রি ছিলোনা। ও চেয়েছিল থানায় কেস করে, ওর হাজবেন্ডকে জেল খাটাবে আর ডিবোর্স দিয়ে টাকা উসুল করে নেবে।

কিন্তু এইরকম করতে গিয়েই বিপদ ঘটল। ও যাতে কম্প্লেন করতে বাড়ির বাইরে না যায় এরজন্যে ওকে অনেক হুমকি-ধমকিও দিয়েছে, মারধর করেছে। কিন্তু ও যখন তবুও শুনছিলো না তখন ওকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল ওরা। কিন্তু ওর চিৎকারে প্রতিবেশিরা এসে আগুন নেভাতে পারলেও ওর শরীরের অনেকটা অংশই পুড়ে গেছিল। পুলিশ এসে ওর শশুর বাড়ির লোকেদের এরেস্ট করেছিল ঠিকই কিন্তু মায়া শেষ হয়ে গেছে একেবারে। এভাবে বাঁচার চেয়ে হয়তো সেদিন মরে যাওয়াও ভালো ছিল।”
সৌহার্দ্য কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল,
” এখন কোথায় আছে ও?”

” আমাদের ইন্ডিয়ার বাড়িতেই আছে। ঐ ঘটনার পর অনেকদিন চিকিৎসা চলছিল ওর। আস্তে আস্তে সুস্থ হলেও শরীরেও পোড়া দাগগুলো রয়েই গেছে। বিশেষ করে মুখটা জঘন্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। সুস্থ হওয়ার পরপরই ও আমাদের বলে দিয়েছে সব সত্যি। সেদিন প্রথম মনে হয়েছিল ওর সাথে যা হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে। তোমাদের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিলোনা। আর না দেশে আসার সুযোগ ছিল। তাই তখনই সত্যিটা জানাতে পারিনি আমরা। কিন্তু মায়া ওর করা পাপের ফল এখনো ভোগ করছে। ঘর থেকে স্বাভাবিকভাবে বেড় হতেও পারেনা এতোটাই খারাপ অবস্থা এখন ওর। সারাদিন কেঁদে ভাসায়। ও যা করেছে তার জন্যে ও যথেষ্ট অনুতপ্ত। আমরা দুজনেই ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি আপনাদের কাছে। যদি পারেন তো ওকে ক্ষমা করে দেবেন।”

সবাই একদম নিরব হয়ে আছে। সত্যিই প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয়না। মায়ার সাথে যা হয়েছে সেটা হয়তো ওর কর্মফল। কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে বিচার করলে মায়ার জন্যে একটু খারাপ সবার অবশ্যই লাগছে। এমনকি বিহানেরও খারাপ লাগছে। সবটা শুনে ওও মনে মনে ভাবছে যে এতোটা জঘন্য ঘটনা মায়ার সাথে না ঘটলেও পারত। নিরব পরিবেশ বজায় রেখেই ওনারা চলে গেলেন। কেউ আটকায় নি আর ওনাদের। আটকানোর মত পরিবেশই ছিলোনা আর। আরও দীর্ঘ কিছু সময় নিরবতায় কাটল। শফিক রায়হান অসহায় দৃষ্টিতে একবার বিহানের দিকে তাকালেন। বিহান ভাবলেসহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। উনি কাঁপা গলায় ডেকে উঠলেন,

” পিচ্চু!”
বিহান হালকা নড়েচড়ে উঠল। মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো লাগতে শুরু করল। ভেতর থেকে অস্হির লাগছে। না চাইতেও চোখ ছলছল করে উঠল ওর। কিন্তু চোখের জল নিচে গড়িয়ে পরতে দিলোনা। অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাচ্ছেন শফিক। যেই ছেলের ছোট থেকে বুকে আগলে রেখে মানুষ করেছেন সেই ছেলেকে এতোটা আঘাত করেছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরপায়ে বিহানের সামনে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। বিহান সাথেসাথে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। শফিক রায়হান কিছুই বলতে পারছেন না। কিছু বলার মত অবস্থা নেই ওনার শুধু বিহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছেন। উপস্থিত সকলের চোখেই জল চলে যাচ্ছে। যেই মামা ছোটবেলা থেকে ওকে কোলেপিঠে করে যত্ন করে মানুষ করেছে তাঁর এরকম কান্না দেখে বিহান আর ঠিক থাকতে পারেনি। ও ভাঙা গলায় বলল,

” কেঁদোনা মামু। তোমার ওপর আমার কোন রাগ নেই। অভিমানের কথা জানিনা। কিন্তু আমার সময় লাগবে।”
বলে আস্তে করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে একবার ঘড়ির দেখে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে। এখন বেড় হব। রিখিয়া চল!”
শফিক রায়হান শুধু তাকিয়ে রইলেন বিহানের দিকে। আমিনুর, আসমা অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে ওকে বাড়ি ফেরার জন্যে। যদিও সত্যিটা জানার অনেক আগে থেকেই ওকে বাড়ি ফেরার জন্যে অনুরোধ করছিলেন তারা বহুবার। কিন্তু আজ তারা ভীষণভাবে অনুতপ্ত নিজেরই ছেলের জীবনটা এতোটা দুর্বিষহ করে তোলার জন্যে। কিন্তু বিহান শুধু বলেছে ওর সময় প্রয়োজন। পারবেনা আগের সবকিছু ভুলে গিয়ে একদিনেই সবাইকে আবার আগের মতো আপন করে নিতে। তাই তখনই রিখিয়ার হাত ধরে বেড়িয়ে বেড়িয়ে গেল ঐ বাড়ি থেকে। বাকিদের অসহায় দৃষ্টিতে সবকিছু দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা।

সকাল দশটা বাজে। কিন্তু বাইরে এখানো ঝাপসা অন্ধকার। তীব্র গতিতে পরতে থাকা বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুমের থাইগ্লাস অর্ধেক খোলা আছে। সেখানে থেকে আসা হালকা হাওয়ায় রুমের পর্দাগুলো নড়ছে। সৌহার্দ্য বিছানায় শুয়ে শুয়ে এতক্ষণ অর্ধেক খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে। কিন্তু মুখের ওপর হালকা কিছু চুল উড়ে পরতেই ও নিজের দৃষ্টি জানালা থেকে সরিয়ে ওর খালি বুকের ওপর শুয়ে থাকা তুর্বীর দিকে তাকাল। বাতাসের জন্যে চুলগুলো উড়ে ওর মুখের ওপরে পরছে। তুর্বীর পরনে শুধুমাত্র সৌহার্দ্যর টিশার্ট।যেটা প্রায় ওর হাটু অবধি পরে। সৌহার্দ্য আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে নরম গলায় ডাকল,

” তুর?”
তুর্বী হালকা নড়ে উঠল। সৌহার্দ্য আরেকবার ডাকতেই তুর্বী ‘হুম’ বলে সাড়া দিল। সৌহার্দ্য তুর্বীর চুলে আঙুল নাড়তে নাড়তে বলল,
” ক’টা বাজে খেয়াল আছে ম্যাডাম?”
তুর্বী ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
” বাজুক! আজ ফ্রাইডে তো। আজ তো অফিস যাবোনা আমরা। আজ লাঞ্চেতো দুপুরে যাবো। আর তোমার শো তো বিকেলে তাইনা?”
সৌহার্দ্য মুচকি হাসল। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার জন্যে কম করে পঞ্চাশ বার ডাকতে হয় এই মেয়েকে। ওর সেই বাজে অভ্যাসটা আবার তৈরী হয়েছে। সৌহার্দ্য বলল,
” হ্যাঁ, কিন্তু এখন দশটা বাজে। এতক্ষণ কে ঘুমায়? দেখ বাইরে কী সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।”
” এইদিনে বৃষ্টি প্রায় রোজই হয়। হোয়াট’স নিউ?”
সৌহার্দ্য একটু বিরক্ত হয়ে বলল,

” তুর! এমন কেন তুমি? সবসময় রোমান্টিক মুডটা এভাবে নষ্ট না করলে হয়না? কালকে রাতেই ভালো ছিলে। ফুল অন রোমান্টিক মুড। সকাল হতেই আগের ফর্মে ফিরে গেলে। বিয়ের একবছর হয়ে গল, কিন্তু তুমি বদলালে না। আজ আমাদের অ‍্যানিভার্সেরি!”
তুর্বী চোখ বন্ধ রেখেই সৌহার্দ্য উন্মুক্ত বুকে মুখ গুজে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
” কে যেন বলেছিলো, আই ওয়ান্ট ব্যাক মাই মিসেস ভয়ংকরী?”
সৌহার্দ্য হেসে ফেলল। সত্যিই তো। ও তো এইরকম তুর্বীকেই ভালোবাসে। তুমি যদি তোমার জীবনসঙ্গীকে বদলানোর চেষ্টা কর, তাহলে সে তোমার ভালোবাসা নয়, কেবল ভালোলাগা। যাকে তুমি নিজের মত করে তৈরী করে নিতে চাও। কিন্তু তুমি যদি সত্যিই তাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে কখনও তাকে বদলাতে চাইবেনা, কারণ সে যেরকম তুমি তাকে সেরকমই ভালোবাসো। সৌহার্দ্য তুর্বীর মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,

” এই, ভিজবে?”
তুর্বী এবার মাথা তুলে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” সাহেব, এত্তো রোমান্টিক মুডে আছেন যে আজকাল? কাল রাতে এতো আয়োজন করে অ‍্যানিভার্সিরি পালন করে শখ মেটেনি?”
সৌহার্দ্য কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে হুট করেই তুর্বীকে কোলে তুলে নিলো। তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওকে ওভাবেই ব্যালকনিতে নিয়ে গেল।

দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে আরো দুইটি বছর। হ্যাঁ জীবনের খাতা থেকে প্রায় সাতশ দিন চলে গেছে। সময়ের সাথে সাথে আবারও নতুন কিছু পরিবর্তন এসেছে সবার জীবনে। গতবছর এই দিনেই খুব ধুমধাম করে সৌহার্দ্য আর তুর্বীর বিয়ে হয়ে গেছে। সৌহার্দ্য আবার আর.জে. SR হিসেবে ‘প্রভাতের আলো’ শো হোস্ট করা শুরু করেছে দু-বছর আগেই। তবে নিজের আসল নাম বা পরিচয় প্রকাশ করেনি এখনো। করার ইচ্ছেও নেই। তুর্বী সৌহার্দ্যদের কম্পানিতেই আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করছে এখন। এই দুই বছরে আগের সেই স্বভাবগুলো তুর্বীর মধ্যে আবার ফিরে এসছে। সেই চঞ্চলতা, বেপরোয়া ভাব। তবে হ্যাঁ একটা বিষয়ে ও ভীষণই সিরিয়াস। সেটা হচ্ছে ওর স্বামী, মানে সৌহার্দ্য। তুর্বীর ভালোবাসা দেখে এখন সৌহার্দ্যর মনে হয় যে এতোটা ভালোবাসবে বলেই হয়তো ভালোবাসতে এতোটা সময় নিয়েছিল সে। সেজন্যই এখন সৌহার্দ্যর প্রতি তুর্বীর ভালোবাসা এতোটা গাঢ় আর প্রবল।

সৌহার্দ্য তুর্বীকে কোলে করেই ব্যালকনিতে নিয়ে দাঁড়াল। যদিও এটাকে ব্যালকনি না ছোটখাটো ছাদই না বলা যায়। বেশ বড় আর ওপরে ছাদ না থাকায় বৃষ্টিতে ভেজাও যায়। তাই ওখানে দাঁড়াতেই দুজনেই ভিজে গেল। বৃষ্টির গতি বেশি থাকায় অল্প সময়েল মধ্যেই দুজনে ভিজে চুবচুবে হয়ে গেল। সৌহার্দ্য তুর্বীকে কোল থেকে নামিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
” কাল রাতের ফর্মে আবার ব্যাক করোনা। এমনিতে আমি আমার মিস ভয়ংকরীকেই বেশি পছন্দ করি। কিন্তু রোমান্টিক তুর্বীকেও আমার যথেষ্ট পছন্দ।”
তুর্বী মুচকি হেসে সৌহার্দ্য চোখে চোখ রেখে বলল,
” রংধনু রোজ রোজ ওঠেনা।”
” জানিতো। রোজ উঠতে কে বলেছে? শুধু আজকের জন্যে আকাশে একটু রংধনুর দেখা পেলে ক্ষতি কী? রংধনুর সাত রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেই?”
তুর্বী এখনো সৌহার্দ্যর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য আরও গভীর স্পর্শে তুর্বীকে কাছে টেনে নিল। হঠাৎ করেই তুর্বী বেশ লজ্জা পেল। আপনাআপনি চিবুক নেমে গেল ওর। এটা তুর্বীর স্বাভাবিক স্বভাব না। কিন্তু প্রকৃতিও মাঝে মাঝে নিয়ম বিরুদ্ধ আচরণ করে, আর মানুষতো সেই প্রকৃতির সবচেয়ে বিচিত্র জীব।

রান্নাঘরে রিখিয়া অাটা মাখছে। বেশ বেলা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ির সবাইকে খাবার দিতে হবে। কাল বেশ রাত অবধি জেগে থাকতে হয়েছিল। আজ ওর আর বিহানের সেকেন্ড ম্যারেজ অ‍্যানিভার্সেরি। কিন্তু রাতে বিহানের কান্ড দেখে মনে হচ্ছিলো এবারই প্রথম অ‍্যানিভার্সিরি। বিহানের সেসব মনে করতে করতে মুচকি মুচকি হাসছে রিখিয়া। একসময় ওর সর্বস্ব দিয়ে ও ভালোবেসেছিল বিহানকে। কিন্তু কখনও ভাবেও নি যে বিহানের কাছ থেকেও কখনও এতোটা ভালোবাসা পাবে। তখন কেউ একজন পেছন থেকে রিখিয়ার দুই কুনুই থেকে স্লাইড করে হাতের ওপর হাত রাখল। রিখিয়া পাত্তা না দিয়ে হাত সরিয়ে কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল,

” দেখুন এখন একদম বিরক্ত করবেন না। আমি বেস ব্যস্ত।”
বিহান দুহাতে রিখিয়ার পেট জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে বলল,
” আমি তোমাকে কাজ করতে বারণ করেছি না-কি?”
” বিহান এটা কিচেন। মা চলে আসবে।”
” আসবে না। মা দেখেছে আমায় কিচেনে ঢুকতে তাই ছেলে-বউমার স্পয়েল করতে একদমই আসবে না সে। আমার মায়ের বেশ বুদ্ধি। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
” এতো কষ্ট করে আপনার সবদিক শুধরে দিয়েছি। কিন্তু এই নির্লজ্জতা নিয়ে কিছুই করা গেলোনা। দিন দিন মাত্রা বেড়েই চলেছে।”
বিহান হেসে দিয়ে বলল,

” নিজের বউয়ের কাছে নির্লজ্জ হবোনা তো কী পাশের বাড়ির জরিনার কাছে হব?”
রিখিয়াও উত্তরে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,
” একসময় তো হতেন। জরিনা-করিমা, রিংকি-মিংকি সবার সামনেই নির্লজ্জ হতেন।-
” এখন তো হইনা। এটা হচ্ছে বউ কাছে থাকার সাইডএফেক্ট বুঝলে?”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে আটা মাখায় মনোযোগ দিলো। এর সাথে এখন কথা বলে কোন লাভ নেই। কিন্তু বিহান ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছেলে নয়। সে নানাভাবে রিখিয়াকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করল। কখনো পেটে সুরসুরি দিয়ে, কখনও কানে ফু দিয়ে। রিখিয়া মাঝেমাঝে কটমটে চোখে তাকালে আবার ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একই কাজ করছে। রিখিয়া এবার সব রেখে কোমরে হাত দিয়ে পেছনে ঘুরে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনি কী আমায় কাজ করতে দেবেন? বিহান বেলা হয়েছে অনেক। দুপুরে লাঞ্চে যেতে হবে ভুলে গেছেন? সৌহার্দ্য আর তুরকে কিন্তু বলে রেখেছি।”

বিহান কিছু বলবে তার আগেই আমিনুর ডেকে উঠল বিহানকে। শফিক রায়হান এসছেন দেখা করতে। বিহান রিখিয়াকে ইশারা করে বাই বলে চলে গেল ড্রয়িং রুমে। এই দুই বছরে ওদের পারিবারিক সম্পর্কটাও ঠিক হয়ে গেছে। ছয়-মাস আগেই বিহান ফিরে এসছে এই বাড়িতে। কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি সবাইকে বিহানকে আবার মতো স্বাভাবিক করতে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রিখিয়ার ছিল। রিখিয়াই রোজ জোর করে কথা বলাতো ওনাদের সাথে। ওনারাও মাঝেমাঝে এসে দেখে যেতেন রিখিয়া আর বিহানকে। এভাবেই প্রায় দেড় বছর কেটে যায়। বিহানও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠল। কিন্তু তখনও সবার থেকে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে রেখেছিল।

কিন্তু হঠাৎ করে একদিন আসমা বেশ অসুস্থ হয়ে পরলেন। ওনাকে হসপিটালাইজড করা হল। সেদিন আর বিহানের পক্ষে সম্ভব হয়নি নিজেকে আটকে রাখতে। ঠিকই ছুটে গিয়েছিল। আসমা সুস্থ হওয়ার পরে সে নিজে আর ওর পরিবারও ওকে বরাবরের মত একটাই অনুরোধ করেছে ফিরে আসতে। সেদিন আর মায়ের কথা, নিজের পরিবারের কথা ফেলতে পারেনি। কী দরকার জীবনকে আরও তিক্ত করে। ক্ষমা হয়তো অতীতকে ভুলিয়ে দিতে পারেনা, কিন্তু ভবিষ্যতকে সুখকর করতে পারে। তবে এরমধ্যে মায়া নিজে একবার ফোন করেছিল বিহানকে। নিজের করা কাজের জন্যে বারবার ক্ষমা চেয়েছে। বিহান কোন উত্তর দেয়নি শুধু শুনেছে। ক্ষমা ও করে দিয়েছে। কারণ মায়া যে শাস্তি পেয়েছে তা ওকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলার কোন রুচি ওর নেই। তবে একটা কথা ঠিক মায়ার মত একজন ওর জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়ে বলেই তো রিখিয়ার মত কাউকে ও জীবনে পেয়েছে। যে ওর জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়েছে।

দুপুরের দিকে সৌহার্দ্য-তুর্বী, রিখিয়া-বিহান একটা রেষ্টুরেন্টে এসছে লাঞ্চ করতে। আজ অ‍্যানিভার্সেরি উপলক্ষ্যেই এই আয়োজন। নানারকম হাসিমজায় আর খুনশুটির মধ্যে হঠাৎ করে বিহানের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শাফিন। বিহান হেসে বলল,
” দেখ, ওকেই ফোন করার কথা বলছিলাম। নিজেই করে দিল।”
ফোনটা রিসিভ করে লাউডে দিয়ে টেবিলে রাখল বিহান। ওপাশ থেকে শাফিন বলল,
” হ্যাপি ম্যারিজ অ‍্যানিভার্সেরি গাইস।”
ওরা চারজনেই থ্যাংকস বলল। শাফিন বলল,
” তো? ইনজয় করছ?”
বিহান বলল,
” তুমি থাকলে আরও ভালো লাগত। দেশে কেন আসছো না?”
সৌহার্দ্যও বলল,
” হ্যাঁ, দেশে চলে এসোনা। কান্তাকেও তো দেখা হয়নি আমাদের।”
শাফিন হেসে বলল,

” আসব। কিন্তু শুধু বউনা সাথে বাচ্চা নিয়েও আসব। কান্তা প্রেগনেন্ট।”
ওরা চারজনেই বেশ বড়সর ঝটকা গেল। কী বলে এই ছেলে? রিখিয়া হেসে বলল,
” কনগ্রাচ! কান্তা কোথায়?”
” আসলে আমি বাইরে আছিতো। বাড়ি ফিরে কথা বলিয়ে দেব।”
এরপর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল শাফিন। শাফিনেরও বিয়ে হয়ে গেছে সাতমাস আগে। আসলে প্রায় দেড়বছর সময় নিয়েছিলো মনকে প্রিপার্ড করার জন্যে। বিয়ে করে ফেলাটাই সবচেয়ে ভালো সলুউশ ছিল রিখিয়াকে ভুলে মুভ অন করার। বিহান হতাশ হয়ে বলল,
” এই ব্যাটা সাতমাস আগে বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হয়ে যাচ্ছে। আর আমি দুইবছরে কী করলাম?”
রিখিয়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল বিহানের দিকে। এভাবে এখানে এরকম বেফাঁস কথা বলার মানে হয়? সৌহার্দ্য কোলড্রিংকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
” সমস্যা নেই। পরের কাকা ডাক শুনিয়ে দিস। তাহলেই হবে।”
” আর তুই?”
সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কী মিসেস ভয়ংকরী?”
তুর্বী একটা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। সৌহার্দ্য আর বিহান হেসে ফেলল এদের অবস্থা দেখে।

রিখিয়া আর বিহান বিছানায় হেলান দিয়ে পাশাপাশি বসে আছে। রিখিয়াকে বিহান একহাতে জড়িয়ে রেখেছে। একটা ইয়ারফোন
দুজনে শেয়ার করে কানে লাগিয়েছে। দুজনেই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। বিহান কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,
” তোমার কী মনে হয়? আজ কল করবে? আমার তো মনে হচ্ছে আজ করবেই করবে।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপধি এখনো মনে হওয়াতেই আটকে আছেন? আমিতো শিওর যে ও করবেই।”

এরপর কেউ কিছু না বলে দুজনেই কথা শোনায় মনোযোগ দিল। কিছুক্ষণ পরেই ওপাশ থেকে ভেসে এল,
” গুড ইভিনিং ঢাকা। কেমন আছেন সবাই। বর্ষার অবিরাম ধারা, সাথে গরম গরম চা আর হালকা স্নাকস্ বিকেলের আড্ডাটা জমিয়ে দিতে যথেষ্ট। আজ নিয়মমতো আমার কোন শো নেই। কিন্তু আপনাদের কথা দিয়েছিলাম আজ একটা স্পেশাল আড্ডা হবে। আর সেই কথা রাখতে আমি আর.জে SR. নিয়ে এসছি আপনাদের সবার প্রিয় শো __ উমহুম! প্রভাতের আলো নয়। ওটাতো সকালে আসে। যাই হোক! আজ স্পেশাল কী আছে? বিশেষ কিছুই না। আপনাদের আর.জের ফার্স্ট ম্যারেজ অ‍্যানেভার্সিরি। সো, আজকের টপিকটা হল আমিই। আপনাদের রোজকার মতই এখানে কল করতে পারেন আর জেনে নিতে পারেন আমার সম্পর্কে না জানা কথাগুলো। সো বেশি কথা না বাড়িয়ে লেটস্ স্টার্ট ইট।”

সকলে কল করে সৌহার্দ্যর সম্পর্কে সবকিছু জিজ্ঞেস করছে আর ও উত্তর দিচ্ছে। অনেকেই ওর আসল নাম জানতে চেয়েছে কিন্তু ও বলেনি। পরের কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে কেউ মিষ্টি স্বরে বলে উঠল,
” হাই SR. হ্যাপি অ‍্যানিভার্সেরি”
কন্ঠ শুনে স‍ৌহার্দ্য সাথে সাথেই বুঝে ফেলল এটা তুর্বী। বিহান আর রিখিয়াও হেসে ফেলল কারণ ওরাও চিনে ফেলেছে। ও মুচকি হেসে বলল,
” থ্যাংকস। আপনার নাম?”
” মিসেস ভয়ংকরী।”
” আরে বাহ! দারুণ নাম আপনার। তো মিসেস ভয়ংকরী, কী জানতে চান আপনি আমার ব্যাপারে?”
তুর্বী একটু ঠোঁট চেপে হাসল। এরপর বলল,
” আপনার কাছে জীবন, স্বপ্ন, ভালোবাসা এগুলো কী? কীভাবে দেখেন আপনি?”
সৌহার্দ্য মুচকি হাসল। এরপর গলা ঝেড়ে বলল,

” জলফড়িং। আমার কাছে এসবই জলফড়িং এর মত। ভালো একটা জীবন পেতে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে, পার্ফেক্ট ভালোবাসার মানুষ পেতে সবাই চায়। কিন্তু! অধিকাংশই এক্ষেত্রে বারংবার হোচট খায়। এর মূল কারণ হচ্ছে একটা শব্দ। ‘অতিরিক্ত’। এই জিনিসটাই আমাদেরকে এসবের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। যেমন জলফড়িং। জলফড়িং খুঁজতে যাও বা ধরতে যাও। যদি অতিরিক্ত চঞ্চলতা দেখাও ধরতে নিলেই সে উড়ে যাবে। যদি অতিরিক্ত শান্ত ভাবে এগিয়ে যাও তাহলে য় পৌঁছনোর আগেই সে জায়গা পরিবর্তন করে ফেলবে। যদি অতিরিক্ত মনোযোগ দাও তাহলে শেষ মুহূর্তে অবশ্যই লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে। যদি অতিরিক্ত বেখেয়ালি থাকো তাহলে দেখতেই পাবেনা। তোমাকে সবকিছুর সামঞ্জস্য রেখে এগোতে হবে। তেমনই জীবন থেকে এই ‘অতিরিক্ত’ শব্দটা বাদ দিতে পারলে জীবন, স্বপ্ন, ভালোবাসা তিনতে জিনিসকেই সাজিয়ে তোলা আমাদের জন্যে সহজ হয়ে যাবে।”

তুর্বী আর বিহান-রিখিয়া এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো সৌহার্দ্যর কথা। তুর্বী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
” ওয়াও। তো স্যার, এবার আপনার ফ্যাবরিট একটা গান আমাদেরকে শুনিয়ে দিন। বিকেলটাই জমে যাবে।”
সৌহার্দ্য বলল,
” ওকে হ কিন্তু এটা শুধু আমার না। আমার ওয়াইফ এবং আমার আরও দুজন বন্ধুরও খুব পছন্দের গান।”
বলে সৌহার্দ্য চালিয়ে দিল। গানটার টিউন শুনেই রিখিয়া হেসে দিয়ে বিহানের বুকের ওপর মাথা রেখে দিল, বিহান ঠোঁট কামড়ে হাসল। আর ওদিকে তুর্বী বালিশ কোলে নিয়ে হেসে দিয়ে শুয়ে পরল বিছানায়। আর সৌহার্দ্য মুচকি হেসে দুহাত মাথার পেছনে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আর সামনে বাজতে লাগল-

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৫৭

তুই চিরদিন
তোর দরজা খুলে থাকিস,
অবাধ আনাগোনার
হিসেব কেন রাখিস?
সাক্ষাৎ আলাদিন
তোর প্রদীপ ভরা জ্বীনে,
কেন‌ খুঁজতে যাস আমায়
সাজানো ম্যাগাজিনে?
কোন বালিশে ঘুম
কোন দেওয়ালে মশারী,
কোন ফেনায় কম সাবান
কোন ছুরিতে তরকারী।
যাচ্ছে চলে যাক
তবু ময়লা পেল কলার,
আলতো রাখছে হাত
হয়তো অন্য কথা বলার।
তোর এ সকাল ঘুম ভেঙে দিতে পারি
তোর এ বিকেল ঘুড়ি ছিঁড়ে দিতে পারি,
তোকে আলোর আলপিন দিতে পারি
তোকে বসন্তের দিন দিতে পারি,
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং।
ভেজা রেলগাড়ি
হয়তো সবুজ ছুঁয়ে ফেলে,
আর সারাটা পথ
ভীষন খামখেয়ালে চলে,
তারপর বেরোয় মেঘ
আর তারায় ভরা স্টেশান,
একটু থামতে চায়
প্রেমিকের ইন্সপিরেশন।
তোর এ সকাল ঘুম ভেঙে দিতে পারি পারি
তোর এ বিকেল ঘুড়ি ছিঁড়ে দিতে পারি,
তোকে আলোর আলপিন দিতে পারি
তোকে বসন্তের দিন দিতে পারি,
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং।

সমাপ্ত

1 COMMENT

  1. Kalk theke akbare সম্পূর্ণ golpo ta pore gechi majhe akbaro comment korini kono
    But just osm
    Khub i sundor hoeache golpo ta
    Khub i valo legeche mon chuea geche just osm

Comments are closed.