জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৫৫ || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৫৫
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

সৌহার্দ্য সম্পূর্ণ হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। তুর্বীর বলা কথাটা যেন ওর কানে বাজছে। ও ঠিক শুনেছে তো? তুর্বী একথা বলল? এটা হতে পারে? ভুল শোনেনি তো? হতেও তো পারে ও হ্যালুসিনেট করছে। ও অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,
” সরি?”
তুর্বী একটুও দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গেই বলল,
” আমায় বিয়ে করবে?”
সৌহার্দ্য বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ওর এখনো বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে তুর্বী একথা বলতে পারে। যেই মেয়েটা প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাসই করেনা। যে দু-বছর আগেও সৌহার্দ্যকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, বিয়ে করবেনা বলে। সৌহার্দ্যর কোন আকুতি-মিনতি যেই মেয়ের মন গলাতে পারেনি। সে আজ সোজা সৌহার্দ্যকে এসে বিয়ের কথা বলছে? এটা যেকারো পক্ষে বিশ্বাস করা কষ্টকর। এটা সত্যিই তুর্বী তো? ওর মা বলেছিল গ্রামে ভুতের উপদ্রব বেশি থাকে। এটা কোন ভুত-পেত্নী নয়তো? যে তুর্বীর ছদ্মবেশে এসছে? পরক্ষণেই নিজেই নিজেকে মনে মনে বড়সর একটা গালি দিল এরকম উদ্ভট ভাবনার জন্যে। সৌহার্দ‍্যকে চুপ থাকতে দেখে তুর্বী বলে উঠল,

” কী হলো বল? বিয়ে করবে আমাকে।”
সৌহার্দ্যর মনে হল তুর্বীর শরীর ঠিক আছেতো? সজ্ঞানে বলছে এসব? ও তুর্বীর দিকে দু-কদম এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে আর গলায় হাত রেখে কিছু বলবে তার আগেই তুর্বী বলল,
” আমার মাথা-শরীর সব ঠিক আছে। আমি পাগলও হইনি আর আমাকে ভুতেও ধরেনি। আমি সুস্থ মস্তিষ্কে, সুস্থ শরীরে, সম্পূর্ণ সজ্ঞানে জানতে চাইছি তোমার কাছে। বিয়ে করবে আমাকে?”
সৌহার্দ্য বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তুর্বীর এই কথাগুলো শুনে ওর কীভাবে রিঅ্যাক্ট করা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছেনা। ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। তুর্বী সৌহার্দ্যর হাত ধরে বলল,
” তুমিতো বলেছিলে যে তুমি ভালোবাসো আমাকে। তাহলে এতো সময় কেন নিচ্ছো? বলো?”
তুর্বীর কথাটা শুনে হঠাৎ করেই স‍‍ৌহার্দ্যর পুরোনো ঘা তাজা হয়ে উঠল। কী বলল তুর্বী? স‍ৌহার্দ্য ওকে ভালোবাসে। যখন এই একই কথা সৌহার্দ্য বারবার তুর্বীকে বলেছে তখনতো তুর্বীর কাছে তার কোন মূল্যই ছিলোনা। তবে আজ কেন? কিছু একটা ভেবে হালকা হেসে সৌহার্দ্য বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তুমি আর বিয়ে? বাহ! তা প্রেম, জেলাসীর পর এবার বিয়ে নিয়ে এক্সপিরিমেন্ট করার ইচ্ছে হল বুঝি? আই নো তোমার জন্যে কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু এই অপশনতো তোমার কাছে দু-বছর আগেই ছিলো। হঠাৎ আজ কেন? ও সরি,সরি আমিতো ভুলেই গেছিলাম যে তুমি নিজের মর্জির মালিক। কিন্তু বিয়েটা আমার কাছে কোনো ছেলেখেলা নয়। তাই অন্যকাউকে খুঁজে নাও।”
তুর্বী অবাক হয়ে গেল। সৌহার্দ্য কী বলছে এসব? এক্সপিরিমেন্ট? তাও বিয়ে নিয়ে। এরকমতো ও কোনদিন ভাবেও নি। ও কম্পিত কন্ঠে বলল,
” তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।”
” তাই? তাহলে ঠিক টা কী? তুমিই বল আমাকে? কেন বিয়ে করতে চাও আমাকে?”
তুর্বী এবার সৌহার্দ্যর চোখে চোখ রেখে বলল,
” ভালোবাসি তাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
সৌহার্দ্য থমকে গেল। তুর্বীর কথাটা শুনে ওর মস্তিষ্ক জমে গেল একপ্রকার। এটা কী বলে ফেলল তুর্বী? সত্যিই কী এটা বাস্তব? এরকমটা সত্যিই কোনদিন হওয়ার ছিল? বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে রইল ও। তুর্বী উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্যর উত্তর না পেয়ে ও বলল,

” অনেক আগে থেকেই বাসি। কিন্তু বড্ড স্টুপিড ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারি। আই লাভ ইউ সো মাচ।”
সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই শব্দ কর‍ে হেসে উঠল। তুর্বী ভ্রু কুচকে ফেলল সৌহার্দ্যর হাসি দেখে। কিছুক্ষণ পর সৌহার্দ্য হাসি থামিয়ে বলল,
” সিরিয়াসলি? ভালোবাসো তুমি? তাও আমাকে? তো মিস তুর্বী, ছয় মাস আমার সাথে থেকে, এরপর দুইবছর আমার থেকে দূরে থেকেও যেটা ফিল করতে পারোনি। সেটা হঠাৎ করে এখন ফিল হচ্ছে? আমেজিং! তুমি বলেছিলে না? জগতে কোনকিছুই চিরস্থায়ী নয়। ভালোবাসাও না। তাহলে আজ এসব বলার কোন মানেই হয়না।”
তুর্বী হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” মানে?”
সৌহার্দ্য এবারও তাচ্ছিল্য মাখা হাসি দিয়ে বলল,

” মানে খুব সহজ। আজ তোমার মনে হচ্ছে তুমি ভালোবাসো আমাকে। কী গ্যারান্টি আছে যে হঠাৎ কালকে তোমার এই হঠাৎ জেগে ওঠা অনুভূতি মিলিয়ে যাবেনা? সব ভালোবাসা গায়েব হয়ে যাবেনা? তখন তো তুমি আবার আমাকে ফেলে চলে যাবে। কারণ তুমি তো শুধু নিজের কথাই ভাবো।”
সৌহার্দ্যর কথাগুলো শুনে তুর্বী স্হির হয়ে গেল একদম। সৌহার্দ্যর ওর প্রতি অনেক অভিমান জমে আছে সেটা ও জানতো। কিন্তু ওকে এভাবে বলবে ও ভাবতে পারেনি। সৌহার্দ্যর প্রতিটা কথা আজ ওকে ভেতর থেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। তুর্বীর এবার কান্না পেয়ে গেল। ও কান্নামিশ্রিত চোখে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। আজ সত্যিই কিছু বলার ভাষা নেই ওর। সৌহার্দ্য আবার বলল,
” তুমি ঠিক বলেছিলে তুর্বী। তুমি সমুদ্রের ঢেউয়ের মত। একেক সময় একেক আকার, একেক গতি, একেক প্যাটার্ন। তুমি নিজেও জানোনা তুমি কী চাও। যাই হোক অনেক রাত হয়েছে। যাও গিয়ে শুয়ে পরো।”
তুর্বী শান্ত গলায় বলল,

” আমি কিন্তু আমার উত্তর এখনো পাইনি সৌহার্দ্য।”
সৌহার্দ্য তুর্বীর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” আমার পক্ষে আর পেছনে ফিরে তাকানো সম্ভব না। আ’ম সরি।”
বলে সৌহার্দ্য চলে যেতে নিলেই তুর্বী সৌহার্দ্যর হাত খামচে ধরে কেঁদে দিয়ে বলল,
” আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি সৌহার্দ্য। এরকম করোনা প্লিজ। একটা সুযোগ দাও আমাকে। আমাদের বিয়ের পর যদি তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসিনা তুমি আমাকে ছেড়ে দিও। আমি কিচ্ছু বলব না। বাট একবার সুযোগ তো দাও। ”
তুর্বীর কান্না সৌহার্দ্যকে ভীষণরকম অস্হির করে তুলল। ও দ্রুত তুর্বীর হাত ছাড়িয়ে বলল,
” বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পরো তুর্বী।”

বলে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল ওখান থেকে। তুর্বী ওখানেই বসে পরল আস্তে আস্তে। শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল ও। এরকমভাবে ও শেষ কেঁদেছিল যখন ওর মা মারা গেছিল। সৌহার্দ্যর এভাবে চলে যাওয়াটা ও মানতে পারছেনা কিছুতেই। সত্যিই কী সৌহার্দ্য আর চায় না ওকে? হারিয়ে ফেলবে চিরকালের মতো?অপরদিকে সৌহার্দ্যর চোখেও জল চলে এসছে। ও নিজেও জানেনা ও কেন এসব বলে এলো। আজকের দিনটার জন্যে কত অপেক্ষা করেছিল ও। তুর্বীর মুখে এই কথাগুলো শোনার জন্যে কত অস্হির হয়ে পরেছিল ও। কিন্তু আজ যখন তুর্বী ওকে কথাগুলো বলল তখন তো ওর তুর্বীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলা উচিত ছিল ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি’। কিন্তু ওর মন ওকে বলে উঠল যে, ও কী তুর্বীর হাতের পুতুল না-কি? তুর্বীর যখন মনে হবে ওকে ভালোবাসেনা, তখন ওকে ফেলে চলে যাবে। আবার দুই বছর পর হঠাৎ করে ওর মনে হল যে সৌহার্দ্যকে ভালোবাসে আর ওকে বিয়ে করতে চায়? আর সৌহার্দ্যও এককথায় মেনে নেবে সবটা? কিন্তু সেদিনতো সৌহার্দ্যর কোন অনুরোধ, কোন আকুতি তুর্বীর মন গলাতে পারেনি। সৌহার্দ্য কী এতোটাই সস্তা?

কালকে রিখিয়া আর শাফিনের বিয়ে। সকাল থেকেই পুরো বাড়িতে অনেক মানুষ আর হৈ চৈ। প্রচুর কাজও করতে হচ্ছে তাদের। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই বেশ ভোরবেলা উঠে পরেছে। আসলে দুজনের কেউই রাতে ঘুমাতে পারেনি। দুজনেই সারারাত কেঁদেছে। তবে একে ওপরের আড়ালে, নিঃশব্দে। চোখ লালচে হালকা ফুলে গেছে দুজনেরই। এই নিয়ে অনেকেই অনেক করেছিল কিন্তু ওরা কথা ঘুরিয়ে এড়িয়ে গেছে। সৌহার্দ্য আর বিহান বিকেলের দিকে এলো রিখিয়াদের বাড়িতে। এসে দেখল রিখিয়াকে মেহেদী পরাচ্ছে ওর রুমে আর পাশে তুর্বী বসে আছে। বসার ঘর থেকে ওদের দুজনকেই দেখা যাচ্ছে।

তুর্বীকে দেখে চমকে উঠল সৌহার্দ্য। কী অবস্থা করেছে নিজের? চোখ-মুখ একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এতোটা ভালো কবে থেকে বাসতে শুরু করল? মাত্র কয়েকদিনের অবহেলাই ও সহ্য করতে পারছেনা? অথচ সৌহার্দ্যতো আড়াই বছর সহ্য করেছে। তুর্বীর সাথে চোখাচোখি হতেই সৌহার্দ্য সাথেসাথেই চোখ সরিয়ে কাজে মনোযোগ দিল। তুর্বী ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল শুধু। কেন এমন করছে সৌহার্দ্য? কী হতো ওকে আরেকটা সুযোগ দিলে? একই প্রশ্ন তো ও নিজেকেও করতে পারে। কী হতো সেদিন সৌহার্দ্যকে একটা সুযোগ দিলে? মেহেদী দেওয়া মেয়েটা রিখিয়া জিজ্ঞেস করল, বরের নাম কী? রিখিয়া আনমনেই বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বিহানের নাম বলে ফেলল। তুর্বীও অন্যমনষ্ক থাকায় খেয়াল করেনি। মেহেদী দিয়ে চলে যাওয়ার পর রিখিয়া তুর্বীকে বলল,

‘ সৌহার্দ্যর সাথে আমি একবার কথা বলব? দেখি আমি বোঝাতে পারি কি-না?”
তুর্বী উদাস চাহনী দিয়ে বলল,
” না, দু-বছর আগে আমি সেটাই করেছিলাম যেটা আমার ইচ্ছে হয়েছিল। আর এবার ওও সেটাই করবে যেটা ওর ইচ্ছে হবে।”
কথা বলতে বলতেই তুর্বীর চোখ পরল রিখিয়ার হাতে। ও অবাক হয়ে বলল,
‘ এটা কী রিখু?’
রিখিয়া হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল কারণ ওখানে বিহানের নাম লেখা। তুর্বী অবাক চোখে কিছুক্ষণ হাতের রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রিখিয়া হাত দিয়ে লেপ্টে দিতে গেলেই তুর্বী হাত ধরে ফেলে বলল,
” মন থেকে মুছে ফেলতে পারবি?”
রিখিয়া করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। অসহায় গলায় বলল,
” কেউ দেখলে খুব খারাপ হবে ব্যাপারটা।”
তুর্বী মেহেদীর টিউবটা নিয়ে ‘বিহান’ নামের চারপাশ দিয়ে এমনভাবে ডিজাইন করে দিল যাতে খুব গভীরভাবে না লক্ষ্য করলে বিহান নামটা দেখা না যায়। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে দেখল যে বিহান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।

রাতে রিখিয়ার হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হল। স্টেজে একে একে সবাই ওকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। খানিকটা দূরে সৌহার্দ্য আর বিহান দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের। বিহান আজ হলুদ শাড়ি আর ফুলের সাজে নিজের ভালোবাসাকে প্রাণভরে দেখে নিচ্ছে। তুর্বীও আজ শাড়ি পরেছে।সৌহার্দ্যর চোখ আজ সরতেই চাইছেনা তুর্বীর থেকে। তুর্বীর মাঝেমাঝে এদিকেই তাকাচ্ছে ফলসরূপ চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। বিহান ব্যাপারটা খেয়াল করে বলল,
” এটা কেন করলি বলতো? সবচেয়ে বেশি কষ্ট তো তুই-ই পাচ্ছিস।”
সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” সব কেনোর উত্তর দেওয়া যায়না।”
বিহান কিছু বলল না। কী আর বলবে? কাল সারারাত অনেক বুঝেয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বিহান রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” আজ খুব সুন্দর লাগছে ওকে।”
সৌহার্দ্য কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিখিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা একদম অনুভূতিহীনভাবে বসে আছে। এমন মনে হচ্ছে একটা পুতুলকে সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ওরা হয়তো একে ওপরের ভাগ্যেই ছিলোনা। বুকে পাথর চেপে হলেও এই সত্যি সবাইকে মেনে নিতে হবে।
আজ বিয়ের আনন্দে সারাবাড়ি মেতে উঠলেও চারটি ভাঙা, বিদ্ধস্ত মন যে নিরবে ধুকে ধুকে মরছে সে খবর সবারই অজানা।

রিখিয়া হলুদের অনুষ্ঠান অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। অনেক রাত হয়েছে এখন। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু রিখিয়ার বাড়ির সামনের মাটির রাস্তাটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। একদৃষ্টিতে মুক্ত আকাশটা দেখছে। মন বারবার একটাই প্রশ্ন করছে। ওর সাথেই এরকম কেন হল? ওকেই কেন এই পরিস্থিতিতে পরতে হল? তখন পেছন থেকে ওর নাম ধরে কেউ ডাকতেই হালকা চমক উঠল রিখিয়া। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল বিহান দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, নাক আর চোখে লালচে ভাব। একদম বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ও অবাক কন্ঠে বলল,
” আপনি এখানে?”
বিহান ভ্রু কুচকে বলল,
” এতো রাতে বাইরে কী করছ?”
রিখিয়া উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” ঘরে দম আটকে আসছিল। মরে যাচ্ছিলাম আমি।”
বিহান রিখিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৫৪

” তোমাকে একবার দেখার আশায় এসছিলাম। ভাবিনি এভাবে দেখা পেয়ে যাবো। কালকের পর হয়তো আর..”
বিহান আর কিছু বলতে পারল না। ওর গলা ধরে আসছে। রিখিয়া কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর চোখ দিয়ে নিরবে জল পরছে। বিহান বলল,
” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছিল?”
” সাজটা অন্যকারো জন্যে ছিলো?”
” কিন্তু আমিতো তোমারই।”
রিখিয়ার ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠছে। দ্রুত ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রাখতে চাইছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। ভেতরট জ্বলে যাচ্ছে ওর। বিহান কম্পিত কন্ঠে বলল,
” ভালো থেকো রিখিয়া।”
বলতে বলতে নিঃশব্দে কেঁদে দিল বিহান। রিখিয়া আর পারল না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফেলল বিহানকে। এরপর আওয়াজ করে কেঁদে দিল। বিহান চমকে গেল রিখিয়ার কান্না শুনে। ও রিখিয়ার পিঠে হাত রেখে বলল,
” রিখিয়া কান্না থামাও। সামলাও নিজেকে। কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
রিখিয়া হিঁচকি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” কেন এমন করলেন? কেন? কেন অন্যকারো অন্যায়ের শাস্তি আমায় দিলেন আপনি? আমিতো নিজের সবটুকু দিয়ে আপনাকেই ভালোবেসেছি,তার বদলে একটু ভালোবাসলে কী হত? আর তখন যখন বাসতে পারেন নি, এখন কেন বাসলেন? আমি নিজের কষ্ট করতে পারলেও আপনার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে মেরে ফেলুন প্লিজ। আমি আর পারছিনা সহ্য করতে। আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি।”
বিহানও রিখিয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। ভাগ্য এতো অদ্ভুত খেলা কেন খেলল ওদের সাথে? একটুও দয়া করা যেতোনা ওদের ওপর? একটুও না?

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৫৬