জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৯ || রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৯
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

তুর্বী চুপচাপ বসে একটা মডেল ড্র করছে আর আড়চোখে মাঝেমাঝে সৌহার্দ্যকে দেখছে। আজ সৌহার্দ্যর কেবিনে বসে বসেই কাজ করছে এই। এই প্রজেক্টে ও নতুন তাই সৌহার্দ্যর কাছে বসেই সবটা বুঝে নিচ্ছে। বেশ অনেকটা সময় কাজ করার পর লম্বা একটা হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙল তুর্বী। সৌহার্দ্য চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। নিজের বসের সামনে বসে এমন করে কেউ? এমন কেন মেয়েটা? তুর্বীর চোখ সৌহার্দ্যর দিকে পরতেই দ্রুত ঠিকঠাক হয়ে বসল ও। লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে তাই ক্যান্টিন থেকে ও দুজনের জন্যেই খাবার আনালো সৌহার্দ্য। দুজনে একসাথেই খেতে শুরু করল। খাওয়ার মাঝে হঠাৎ করেই তুর্বী বলে উঠল,

” আচ্ছা স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
সৌহার্দ্য চামচ মুখের কাছে নিয়েও সরিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে তাকাল তুর্বীর দিকে। তুর্বী হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
” না মানে আমিতো জাস্ট এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম। এখন তো আর কাজ করছিনা তাই।”
বলতে বলতে গলার আওয়াজ কমে এল ওর। সৌহার্দ্য দুই হাতের ওপর নিজের থুতনি রেখে বলল,
” আমি তোমার বন্ধু? নাকি বেয়াই যে এসব গল্প করতে চাইছ আমার সাথে?”
তুর্বী উৎসাহিত হয়ে বলল,
” হতে সমস্যা কোথায় বলুন। দেখুন যেকোন সম্পর্কের সাথে যদি বন্ধুত্বের সম্পর্ক মিশে থাকেনা তাহলে সম্পর্কটা পারফেক্ট হয়। যেমন আপনার আর আমার মধ্যে বস এম্প্লয়ীর সম্পর্ক। এখন যদি তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কও মিশে যায় তাহলে আমাদের বস এম্প্লয়ীর সম্পর্কটাও পারফেক্ট হবে।”
সৌহার্দ্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তোমার বলা শেষ?”
” বলুননা গার্লফ্রেন্ড আছে?”
” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”
” নাহ এমনিই জানার জন্যে।”
সৌহার্দ্য আবার খাওয়া শুরু করে বলল,
” চুপচাপ খাও, লাঞ্চ টাইম শেষ হয়ে যাবে।”
” স্যার বলুন না।”
সৌহার্দ্য এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলল,
” তুর্বী চুপচাপ খাও।”
তুর্বী কোন কথা না বলে মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ খেতে শুরু করল। সৌহার্দ্যর খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। ও গালে হাত দিয়ে দেখছে তুর্বীকে দেখছে। ও জানে তুর্বী কেন এই প্রশ্ন করেছে। এখন তাহলে নিজের রিলেশনশীপের এক্সপিরিমেন্ট করতে বলির বাকরা ওকেই বানাতে চাইছে তুর্বী? ভাবতেই প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে ওর। তবুও অনেক কষ্টে হাসিটা আটকে মুখে গাম্ভীর্য রেখে দিয়েছে।

ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে মার্কেটে ঢুকেছে রিখিয়া। টুকটাক কিছু জিনিস কিনতে হবে ওকে। দোকানে ঘুরে ঘুরে জিনিস কিনছে আর নাকের নিচের ঘামটা মুছে নিচ্ছে ও। হঠাৎ করেই মাথায় কেউ টোকা মারতেই অবাক হয়ে পেছনে ফিরে তাকাল রিখিয়া। তাকিয়ে দেখে বিহান দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি মুচকি হাসছে সে। রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,
” আপনি এখানে?”
” এসছিলাম কাজে। ভাগ্যক্রমে তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল।”
বলে রিখিয়ার হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে রিখিয়া হাটতে শুরু করল, বিহানও হাটছে ওর পাশেপাশে। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভালো আছেন?”
” হুম আছিতো। তোমার কী খবর?”
” এইতো চলে যাচ্ছে।”
” তুর্বী কেমন আছে?”
” হুম ভালো।”
” কী খাবে বল?”
” না না কিছুই খাবো না।”
” সেটা বললে হবেনা । খেতে হবে। কারণ আমার এখন খিদে পেয়েছে। আর আমি আগেও বলেছি আমার একা খেতে ভালো লাগেনা।”
” পাগল আপনি?”
” হ্যাঁ ওই একটুখানি। বেশি না।”

রিখিয়া হেসে দিল, বিহানও হাসল। হাটতে হাটতে ওরা ওখানেরই একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট টাইপ দোকানে বসল। রোল আর চা ওর্ডার করল দুজনেই। রিখিয়া কিছু বলছেই না, বিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” ইউ নো তুমি অনেকটা ডাউন টু আর্থ টাইপ! আজকালকার দিনে এরকম খুব একটা দেখা যায় না। বাট ইউ নো আই লাইক ইট!”
রিখিয়া একটু হাসল। বিহান আবারও বলল,
” আচ্ছা তোমার বিএফ বা এইটাইপ কিছু আছে?”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
” কেন বলুন তো?”
” এমনিই জানতে চাইলাম। না বলতে চাইলে সমস্যা নেই আই ওন্ট মাইন্ড।”
রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,
” বলার মত তেমন কিছুই নেই। আমার ওসব নেই।”
বিহান উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,
” আমার আগেই মনে হয়েছিল আমার কাছে তুমি এমন কিছুই বলবে।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

” মানে?”
” মানে তোমাকে দেখে সেরকম মেয়ে মনে হয়না সেটাই বললাম।”
রিখিয়া এবার কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
” আপনার জন্যে একটা জিনিস আছে।”
বিহান অবাক হয়ে বলল,
” আমার জন্যে?”
” হুম কিছু দেওয়ার ছিলতো? আমি এমনিতেও আপনার সাথে দেখা করতাম কিন্তু আজ দেখা হয়ে গেল। তাই দিয়ে দেওয়াই ভালো।”
বিহান এক্সাইটেড হয়ে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ দেখাও কী এনেছ।”
রিখিয়া ওর ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বড় প্যাকেট বাড় করে বিহানের কাছে দিল। বিহান বেশ উৎসাহ নিয়েই প্যাকেটটা খুলল। প্যাকেটটা খুলে বেশ অবাক হলো। কারণ একবক্স রঙের টিউব আর তুলি আছে। বিহানের সত্যিই খুব পছন্দের জিনিস এগুলো। ও হাসি মুখে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া বলল,
” আপনার তো পেন্টিং করতে খুব ভালোলাগে তাইনা? তাই এটা আপনার জন্যে।”
বিহান প্যাকেটটা নিজের কাছে রেখে বলল,

” থ্যাংক ইউ।”
রিখিয়া একটু আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” আচ্ছা আপনি কখনও কোন মেয়ের ছবি এঁকেছেন?”
বিহান বেশ অনেকটা সময় চিন্তা করার ভান করে বলল,
” এখনও তো না। কিন্তু যদি কোনদিন আঁকি তাহলে তোমার টাই আঁকব। প্রমিস।”
রিখিয়া একটু লাজুক হাসল। বিহান বলল,
” তবে একটা সমস্যা আছে।”
” কী সমস্যা?”
” লোকে বলবে অবশেষে আমি একটা পেত্নীর ছবি এঁকেছি।”
রিখিয়া অবাক হয়ে তাকাল বিহানের দিকে। তারপর বিহান গায়ে তিন চারটা কিল মারল। বিহান হাসছে শব্দ করে। রিখিয়াও একপর্যায়ে হেসে দিল।

দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। একয়েদিনে অনেককিছু বদলেছে। রিখিয়া আর বিহানের সম্পর্ক অনেক নরমাল হয়েছে। বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওদের। বলতে গেলে তার চেয়েও বেশি কিছু। আর ওপরদিকে তুর্বী আর সৌহার্দ্যর বস এম্প্লয়ীর সম্পর্ক না বদলালেও তুর্বী নিজের অদ্ভুত বিহেভিয়ার দিয়ে বেশ জালিয়েছে ওকে। তবে ওপর দিয়ে রেগে যাওয়ার ভান করলেও মনে মনে বেশ এঞ্জয় করে তুর্বীর এসব বিহেভিয়ার। আজ ওদের প্রজেক্টের ফার্স্ট মিটিং হচ্ছে। প্লান প্রেজেন্ট করা হয়ে গেছে সবাই মিলে সেই নিয়েই সৌহার্দ্যর সাথে ডিসকাস করছে। এরমধ্যে হঠাৎ করেই তুর্বী বলে উঠল,

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৮

” স্যার? আমার মনে হয় আমাদের প্লানে একটু চেঞ্জ অানা দরকার।”
সবাই সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। এত দক্ষ আর্কিটেক্টদের প্লানে চেঞ্জ আনতে চাইছে এই মেয়েটা? তাও এত কমদিন জয়েন করে। সৌহার্দ্যও অবাক হচ্ছে। কিন্তু বলার সুযোগ তো দিতে হবে তাই বলল,
” কীরকম চেঞ্জ?”
তুর্বী বলল,
” স্যার আমাদের অফিসের স্টাফ রুমটার যেই ডিজাইন করেছি সেটা আরেকটু কমফরটেবল করা উচিত যাতে এম্প্লয়ীরা অফিসে একটু রিল্যাক্সে কাজ করতে পারে।”
সৌহার্দ্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,
” কীরকম?”
তুর্বী এবার ওনাদের বিভিন্ন কিছুর সাথে কম্পেয়ার করে, এক্সামপল দিয়ে সবটা বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু কেউ বুঝতে পারল না। এমনকি সৌহার্দ্যও না। ওর পয়েন্ট কারো কাছেই ক্লিয়ার না। কারণ তুর্বী সব উট্কো এক্সামপশ দিচ্ছে যেমন, ওয়াসরুম, নাইট ক্লাব ইত্যাদি টাইপ। সৌহার্দ্য ভাবল এবারও হয়ত তুর্বী ফালতু টাইম ওয়েস্ট করছে এস ইউসয়াল। তাই হুট করেই ধমক দিয়ে বলল,

” স্টপ ইট!”
তুর্বী কেঁপে উঠল হালকা। সৌহার্দ্য রাগী গলায় বলল,
” এটা অফিস! তোমার মজা করার জায়গা না। কাজ করতে ইচ্ছে হলে কর নয়ত ছেড়ে দাও চাকরি। সবকিছু সবার জন্যে না। আর সবকিছু নিয়ে মজা করাও ঠিক না। এত মজা করার শখ থাকলে সার্কাস জয়েন কর। ইটস বেটার ফর ইউ।”
তুর্বী আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে ওর ওপর। তুর্বী কিছু না ফলে ওর ব্যাগ হাতে নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ২০