অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৯ || Ishita Rahman Sanjida

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৯
Ishita Rahman Sanjida

ইশান মীরার রুমের দরজায় জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলো। রাগে ওর শরীর কাঁপছে। মীরা সবকিছু জেনেও এই বিয়েতে রাজি হলো?? আজকে মীরাকে ওর মুখোমুখি হতে হবে আর সব বলতেই হবে। কিসের এতো রাগ ইশানের প্রতি মীরার??ভালোবাসতে সমস্যা কি?? কিছুক্ষণের মধ্যেই মীরা দরজা খুলে দিল।

ইশানকে দেখে অবাক চাহনিতে তাকালো মীরা। ইশান মীরার দিকে ক্রোধ নিয়ে তাকালো। মাত্র গোসল সেরে বের হয়েছে মীরা। চুল মুছতেছে, তোয়ালে এখনও হাতে মীরার। গায়ে একটা নীল শাড়ি জড়ানো। গোসল করায় ভেজা শরীরে শাড়িটা লেপ্টে আছে। হালকা হালকা ভিজেও গেছে শাড়িটা।
এই মুহূর্তে ইশানের মুগ্ধ হয়ে দেখার কথা। কিন্তু ইশান তা পারছে না। রাগ হচ্ছে খুব ইশানের। মীরাকে কিছু বলতে না দিয়ে ওকে ঠেলে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। একহাতে মীরার হাত চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বলল,’তুই বিয়ে করছিস??’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘হুম’ মীরার সহজ স্বীকারোক্তি। এতে ইশানের মাথায় আগুন ধরে গেল। এত সহজে মীরা কথাটা বলল কিভাবে?? ইশান রাগন্বিত স্বরে বলল,’কেন?? তুই কি কিছু বুঝতে পারছিস না??নাকি বুঝতে চাইছিস না??’
মীরা ইশানের থেকে নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,’বিয়ে করছি আমি এতে আপনার কি??বিয়ে তো করতেই হবে। এতে বোঝা বুঝির কি আছে??’

ইশান এবার দু’হাতে মীরার বাহু আঁকড়ে ধরে বলল,’বোঝাবুঝির কি আছে মানে?? তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি তোকে ভালবাসি। তোকে আমি চাই। তারপর ও তুই বিয়ে করছিস কেন??’
ইশান জোরেই মীরার বাহু চেপে ধরেছে ফলে ব্যথা পাচ্ছে মীরা। কিন্তু এসব দেখার সময় এখন না। আগে ইশানকে সরাতে হবে এখান থেকে নাহলে কোন বিপদ বাঁধিয়ে ফেলবে। মীরা বলল,’আমি চাই না আপনাকে। ভালোবাসি না। মনি’মা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে আমি তাকেই বিয়ে করবো।’
মীরার কথাগুলো ইশানের রাগ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে। চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। পানিতে টলমল করছে চোখজোড়া। মীরা আবার বলল,’জোর করে কিছু পাওয়া যায় না তাই আপনিও পাবেন না। কোন ঝামেলা করার চেষ্টা করবেন না। আমি এসব ঝামেলা চাই না।’

ইশান তার গলার স্বর নামিয়ে বলল,’তোর মনে কি আমার জন্য এতটুকু জায়গা নেই মীরা??হ্যা???’
মীরা তার চোখ নামিয়ে নিয়েছে। এর উত্তর মীরা ও ঠিকভাবে দিতে পারবে না। তবে ইশানের চোখে চোখ রাখতে পারছে না মীরা।
তাই চোখ সরিয়ে নিয়েছে। আটকে যাওয়া কন্ঠে সে বলল,’আছে। তবে এই না যে আপনাকে নিয়ে সবসময় ভাবতে হবে। আপনার জন্য মনে আলাদা করে জায়গা করতে হবে।’
ইশান ছেড়ে দিলো মীরাকে তারপর বলল, ‘আমি চাইলে তোর বিয়েটা আটকাতে পারতাম কিন্তু আমি তা করবো না। যেখানে তুই রাজি না সেখানে বাড়ির লোকদের বুঝিয়ে কি লাভ। কর তুই বিয়ে আমি কিছু বলব না। তুই যদি এভাবে সুখি থাকতে পারিস তাহলে তাই হবে।’

ইশান বেরিয়ে যেতে গিয়ে আবার ফিরে আসলো। মীরার দুহাত চেপে ধরে কাছে টেনে আনলো। করুন স্বরে বলল,’কিন্তু একটা কথা বলতো?? আমার প্রতি তোর এত বছর ধরে অভিমান জন্মেছে। আর আমার মনে ভালোবাসা। তোর এত বছরের অভিমানের পাহাড়কে আমার ভালোবাসা দিয়ে গুড়িয়ে দিতে পারলাম না কেন??এতে কি আমার দোষ ছিল??নাকি কোন ভুল ছিল আমার ভালোবাসায়??হয়তো কোন ভুল ছিল বলেই আমার ভালোবাসা তোর মনে পৌঁছাতে পারেনি। আমি সত্যি ব্যর্থ হয়েছি। ঠিক আব্বুর মতোই। তোর প্রিয় হয়ে উঠতে পারিনি। অপ্রিয় হয়েই রইলাম।’

ইশান মীরাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বের হয়ে গেল। মীরা নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিয়েছে। তাই সামান্য ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খায় মীরা। ব্যথা পায় না। তবুও মীরার চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু কেন??ইশানের জন্য??হয়তো তাই!! মীরা কাঁদতে কাঁদতে খাটের উপর বসে পড়েছে। জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে মীরার কিন্তু পারছে না। বাড়িতে সবাই আছে। কি ভাববে তারা?? তবুও চোখের পানি বাঁধ মানতে চাইছে না মীরার। ইশানকে ফিরিয়ে দিয়ে কি সে ভুল করছে?? এমনিতেই ওর জীবনে অনেক ভুল জমা হয়ে আছে। তবে ইশানকে ফিরিয়ে দেওয়ার যথেষ্ট কারণ ও আছে মীরার কাছে।

হাঁটু মুড়ে খাটের উপর বসে আছে মীরা।
মুহিত নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় মীরার সামনে। হঠাৎ মুহিত সামনে চলে আসায় মীরা থতমত খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,’তুই!!বস এখানে।’
মুহিত মীরার পাশে বসে বলল,’ইশান ভাইয়া চলে গেছে।’
মীরা মাথা নিচু করে বলল,’ভালো।’

‘আমি তোমার থেকে অনেক ছোট আপু। তোমার সাথে সবসময় মজা করি। বউ বলে ডাকি এতে তুমি বিরক্ত হও না। ছোট বলে স্নেহ করো। তবে ছোট হলেও আজকে একটা কথা বলি তোমাকে??’
মীরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মুহিতের দিকে। মুহিত হালকা হাসলো বললো,’ইশান ভাইয়াকে ফিরিয়ে তুমি ভালো করোনি। সে সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে। আমার মনে হয় তুমিও চাও ইশান ভাইয়াকে। তাহলে ভাইয়াকে ফিরিয়ে দিলে কেন??’

মীরা কথা বলল না চুপ করে বিছানার চাদরের দিকে তাকিয়ে রইল। মুহিত বলল,’তোমার ব্যাপারে সবই বলেছে ইশান ভাইয়া আমাকে। তোমরা খুব অল্প সময় একসাথে ছিলে। আর দীর্ঘ সময় দূরে। ইশান ভাইয়া চাইলে তোমাকে ভুলতে পারতো কিন্তু সে ভোলেনি তোমাকে নিজের মনে আলাদা একটা জায়গা দিয়েছে। কিন্তু তুমি তা করোনি। তবুও সে এত বছর পর তোমার মনে জায়গা করে নিতে চেয়েছে। কিন্তু তুমি সেটাও দিলে না। এটা কি ঠিক হলো??’
মীরা রাগন্বিত স্বরে বলল,’তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস?? ঠিক বেঠিক আমি বুঝিনা নাকি??
বের হ এখান থেকে।’

মীরার ধমকে মুহিত বেরিয়ে গেল। কি আর বলবে সে মীরাকে?? মীরা নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকবে। তবে মীরাও তো এই বিয়েটা মানতে পারছে না। মুহিতের মাথায় বড়সড় গিট লেগে গেছে।
ইশান বের হয়ে বাড়িতে ফিরে গেলো। রুমে গিয়ে নিজের লাগেজ গোছাতে লাগলো। সাথে এটা ওটা ভাঙচুর ও করছে। কাজের মধ্যে যেটা সামনে আসে সেটাই ভাঙছে সে। ইশানকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে দেখে ইফাজ দ্রুত ইশানের রুমে আসে। ইশানকে নিজের ব্যাগপত্র গোছাতে থেকে অবাক হয় ইফাজ। বলে,’কি হয়েছে ইশান??লাগেজ গোছাচ্ছিস কেন??’

ইশান গোছাতে গোছাতে বলে উঠলো,’আমি লন্ডন ফিরে যাব। আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো তাড়াতাড়ি।’
ইশানের কথায় আরো অবাক হলো ইফাজ। হঠাৎ ইশানের কি হলো যে লন্ডন ফিরে যেতে চাইছে?? তবে ইশানের কিছু একটা হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে ইফাজ। ইফাজ বলল, ‘কিছু তো হয়েছে তোর। আমাকে বল কি হয়েছে??তোর মা কিছু বলেছে??’
ইশান ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমাকে কেউ কিছু বলেনি। আমি লন্ডন ফিরে যাব ব্যাস।’
‘দেখ ইশান এই মুহূর্তে লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে না। তোকে কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
ইশান চেঁচিয়ে বলল,’কিন্তু আমি পারছি না এখানে থাকতে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কিছু ভালো লাগছে না আমার।’

ইশান খাটের উপর ধপ করে বসে পড়লো। সে মীরার বিয়ে কিছুতেই দেখতে পারবে না। কিছুতেই না। তাই ও লন্ডন ব্যাক করবে। ইফাজকে ও কিছু বলল না। ইফাজ ভাবতে লাগলো ইশানের হলো কি?? সকালে তো বেশ ফুরফুরে মেজাজে বের হয়েছিল। ইশান পিহুর কাছে গিয়েছিল এটা বেশ জানে ইফাজ। ইশানের রুম থেকে বের হয়ে এসে মীরার নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু মীরার ফোন বন্ধ। পিহু বা সামিরের ফোন নাম্বার নেই ইফাজের কাছে। ইফাজের কৌতূহল বাড়ছে তাই সে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়লো।

পাত্রপক্ষ এসে গেছে। সবাইকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত পিহু আর মুক্তা। ইশান চলে গেছে শুনে পিহু অবাক হলেও আপাতত তা পাত্তা দিলো না। মীরাকে সামনে এনে বসানো হয়েছে। মাথা নিচু করে বসে আছে মীরা। ছেলের বাবা মা সহ আরো কিছু অভিভাবক এসেছে। তারা আগেই মীরাকে দেখে গিয়েছিল। পিহু অসুস্থ ছিল বিধায় তারা আর কিছু বলেনি। এখন পিহু সুস্থ তাই তারা পাকা কথা বলতে এসেছেন। মীরা এখনও চোখ তুলে তাকায়নি। দেখেওনি কার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। ইচ্ছে করছে না মীরার। শুধু ভাবছে যদি ইশান কোন ঝামেলা করে??
সবাই বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। এরমধ্যেই ইফাজ এসে হাজির। ইফাজকে এসময় দেখে পিছু অবাক হয়। হঠাৎ ইফাজ কেন এসেছে??

এত মানুষ দেখে ইফাজ বিব্রত বোধ করলো।
মীরাও অবাক হয়ে ইফাজের দিকে তাকালো। মীরা ভাবলো ইশান বোধ হয় ইফাজকে পাঠিয়েছে। পিহু ইফাজের দিকে এগিয়ে এসে বলল,’কি ব্যাপার তুমি এখানে???’
ইফাজ সবার দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,’মেহমান এসেছে বুঝি??আমি জানতাম না। পরে আসব।’
পিহু বাঁধা দিয়ে বলল,’এসেছো যখন কারণটা বলেই যাও।’
‘ইশান এখানে এসেছিল??’
‘হ্যা এসেছিল। কিন্তু ও তো চলে গেছে। বাড়িতে যায়নি??’

‘হ্যা গিয়েছে কিন্তু ইশান বলছে ও লন্ডন ফিরে যাবে। ইশানকে দেখে আমার ঠিক মনে হচ্ছে না। কিছু তো হয়েছে!!তাই ভাবলাম তুমি জানো হয়তো। মীরাকে ফোনে পেলাম না তাই আসতে বাধ্য হলাম।’
পিহু কপাল কুঁচকে বলল,’কি?? কিন্তু আমার সাথে তো কোন ঝামেলা হয়নি। আচ্ছা থাক। বাড়িতে মেহমান এসেছে ওনারা চলে যাক তারপর এই বিষয়ে কথা হবে।’
ইফাজের কথা শুনে মীরা ও থম মেরে গেছে।ইশান আবার লন্ডন ফিরে যাচ্ছে?? অস্বস্তি হলেও মীরা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। ইফাজ মাথা নেড়ে চলে আসতে নিলেই মুহিত বলে উঠলো,’আমি জানি ইশান ভাইয়া কেন লন্ডন ফিরতে চায়।’

সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকালো। মুহিত জানে?? মীরা পারছে না মুহিতকে চুপ করাতে। সবার সামনে তাই চুপ করেই রইল। ইফাজ বলল,’তুমি জানো??বলো তাহলে।’
মুহিত জানে সব বলে দিলে মীরা ওকে আস্ত রাখবে না। তবুও সে সাহস নিয়ে বলল,মীরা আপুর জন্য।’
পিহু বলে উঠলো,’কি???’
‘হ্যা তো। ইশান ভাইয়া চায় না মীরা আপু অন্য কাউকে বিয়ে করুক। কিন্তু মীরা আপু ইশান ভাইয়ার কথা শোনেনি। কিছুক্ষণ আগেই তো দুজনে ঝগড়া করলো। এজন্য বোধহয় ইশান ভাইয়া চলে যেতে চাইছে।’

মীরা চোখ বন্ধ করে ফেলে। এভাবে বাহিরের লোকদের সামনে না বললেই পারতো মুহিত। কোন কথা যেন পেটে আটকায় না। ইফাজ অবাক হয়ে বলে,’কিন্তু মীরার বিয়ে নিয়ে ইশানের সমস্যা কি??’
মুহিত চোখ বড়বড় করে ফেলল বলল,’বুঝতে পারছেন না আঙ্কেল??ইশান ভাইয়া তো মীরা আপুকে বিয়ে করতে চায়। ওই মানে,,,,,, ভালোবাসে আরকি।’

সবাই বড়বড় চোখে মুহিতের দিকে তাকালো। এই মুহূর্তে মুহিত নিজেকে সেলিব্রিটি হিসেবে আবিষ্কার করল। কত সুন্দর সবাই ওর দিকে অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। তবে সে জনপ্রিয় সেলিব্রিটি নয়। এর পর তার উপর ডান্টার বারি পরবে। তখনই মীরার ওপর চোখ গেল মুহিতের। গরম চোখে তাকিয়ে আছে মীরা। মুহিত শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসি দিলো।
পিহু মুহিতের দিকে এগিয়ে এসে বলল,’এসব সত্যি???’
মুহিত নিঃসংকোচে বলল,’সত্যি তো। মীরা আপুকে জিজ্ঞাসা করে দেখ।’

পিহু মীরার দিকে তাকালো। মীরা নিচের দিকে তাকিয়ে তার হাত কচলাচ্ছে। বাড়ির এতো মেহমানদের সামনে কিছু বলাটা ঠিক হবে না। তাই পিহু চুপ করে গেল। কিন্তু এদের বিদায় করবে কিভাবে?? মুখের উপর তো চলে যেতে বলা যায় না। তবে পিহুর কাজটা ছেলের বাবা আরো সহজ করে দিলো। তিনি বললেন,’আপনাদের আগে মেয়ের মতামত নেওয়া দরকার ছিলো। মেয়ে যখন রাজি না তাহলে আমরা আর এগোতে চাই না। তবে এতে আপনাদের দোষ দেব না। আজকাল এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে। আমরা আসি হ্যা।’

পাত্রপক্ষ পোঁটলা পুঁটলি নিয়ে চলে গেল। ওনারা চলে যেতেই মুক্তা এসে মুহিতের কান টেনে ধরে বলল,’এতো মানুষের সামনে এসব বলার দরকার কি ছিল??সবাই যাওয়ার পর বললে কি হতো??নেহাত ওনারা ভালো মানুষ বলে কিছু বলেনি। নাহলে অপমান করে ছাড়তো।’
মুহিত মায়ের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য নড়তে লাগলো বলল,’মা ছাড়ো।’
ইফাজ মুক্তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’ওকে বকছো কেন??ও তো ঠিকই বলেছে। আর পাত্রপক্ষ একদিন না একদিন তো সব জানতোই। কিন্তু আসল কথা হলো মীরা কি চায়?? ওদের ব্যাপারে তো আমি কখনো ভেবেই দেখিনি। তবে ইশান কিন্তু খুব রেগে আছে।’

পিহু মীরাকে কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসতেই মীরা হনহনিয়ে রুমে চলে গেল। মুক্তা মীরার পিছু পিছু ওর রুমে গিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে মীরা তোর?? ইশানকে মানতে তোর সমস্যা হচ্ছে কেন?? তবে আমার মনে হয় পিহু ও মেনে নেবে তোদের ব্যাপারটা।’
মীরা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,’মানলে মানুক তবুও আমি মানব না। আন্টি তুমি যাও আমাকে একা থাকতে দাও।’
মুক্তা আবার বলল,’কেন মানবি না কারণ তো বল??’

‘আমি কিভাবে মানব সব??যেখানে মনি’মা ভালো আব্বুকে মেনে নিতে পারছে না। তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। সেখানে আমি কিভাবে তার ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াবো?? ভেবে দেখেছো সেটা একবার??যে সম্পর্ক গড়ে উঠেও শেষ হয়ে গেছে আমি সেই সম্পর্কের মাঝখানে থাকতে পারব না। এতে মনি’মায়ের কষ্ট হবে আমি তা জানি। তাই এই সম্পর্কে না জড়ানো ভালো। আমি মনি’মায়ের জন্য নিজের সব ইচ্ছা অনুভূতি কবর দিয়ে দিয়েছি।’

‘আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না আর না হবে। তুই আমার কথা এতো ভাবিস না।’
মীরা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো পিহু দাঁড়িয়ে আছে। পিহু ভেতরে এসে বলল,’তুই তোর মনের কথাই শোন।’
‘আমি আমার মনের কথাই শুনছি। আর তুমি কি বললে?? তোমার কষ্ট হচ্ছে না!!এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে??হাসালে তুমি আমায়। আমি পারবো না ইশানের সাথে থাকতে। তাহলে প্রতিনিয়ত আমার তোমার কথা মনে পড়বে। তুমি যে এখনও নিজের সুখ ফিরে পাওনি।’
মীরার কথা শুনে পিছু কি বলবে ভেবে পেলো না। মুক্তা পিহুকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো। ইফাজ সোফায় বসে আছে। পিহু আসতেই সে উঠে দাঁড়ালো বলল,’এখন কি হবে??ইশান যখন বলেছে তখন ও লন্ডন ফিরবেই।’

মুক্তা বলল,’পিহু মীরা আর ইশানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করিস না। শুনলি তো মীরা কি বললো?? তোকে সুখি দেখতে চায় ও।’
পিছু কঠোর স্বরে বলল,’কি বলতে চাইছিস তুই??আর মীরা আমাকে ইফাজের কাছে ফিরে যেতেও বলেনি। সেটা সম্পূর্ণ আমার সিদ্ধান্ত।’
ইফাজ বলল,’তা না হয় মানলাম। কিন্তু নিজের ছেলেকে তো খুশি দেখতে চাও?? তাহলে মীরাকে বোঝাও। তবে আমার মনে হয় না মীরা বুঝবে।’
পিহু এবার চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যি মীরা এখন কিছু বুঝবে না। পিহু চিন্তিত হয়ে বলল, ‘তাহলে এখন উপায় কি হবে??’

ইফাজ সহজ ভাবে বলল,’তুমি তো আমার কাছে ফিরবে না। কিন্তু মীরাকে এটা বোঝাতে হবে যে আমাদের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে।’
পিহু সন্দেহের দৃষ্টিতে ইফাজের দিকে তাকাতেই সে বলল,’আমি ওভাবে বলতে চাইনি। তবে আমার কথাটা ভালো না লাগলে অন্য ব্যবস্থা করতে পারো।’

মুহিত এতোক্ষণ সবার কথা শুনছিল এবার সে মুখ খুলল,’মীরা আপু ও ইশান ভাইয়াকে পছন্দ করে। তাই তো ইশান ভাইয়াকে ফিরিয়ে দিয়ে কাঁদছিল। আমার মনে হয় আঙ্কেলের কথা শোনা উচিত।’
পিহু এবার সব গুলিয়ে ফেলছে কার কথা শুনবে সে??মন তো কত কথাই বলছে।কি করবে তা পিহু ভেবে পাচ্ছে না। তাই আপাতত সে সিদ্ধান্ত নিলো যে মীরা আর ইশানকে মুখোমুখি প্রশ্ন করবে। তাই পিহু ইফাজকে বলল ইশানকে কল করে এখানে আসতে।

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৮

ইশান নিজের রুমে পায়চারি করছে। ভাঙচুর তার শেষ হচ্ছেই না। ওর ইচ্ছে করছে মীরাকে ধরে আছাড় মারতে। এতোবড় সাহস যে ইশানকে রিজেক্ট করে। তখন ধরে কানের নিচে দুটো লাগালেই ঠিক হয়ে যেতো। মীরার প্রতি রাগ তরতর করে বাড়ছে ইশানের। এই মুহূর্তে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে মীরাকে। আর একটু সময় ওখানে থাকলেই সে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে ছাড়তো। চলে এসে ভালোই করেছে ইশান।
রাগে ফুঁসছে ইশান তখনই ইফাজের ফোন এলো। ইফাজ তাকে পিহুর বাড়িতে যেতে বলছে। ইশান কয়েকবার বারণ করলেও শেষ মেষ সে রাজি হয়।

সবাই ইশানের জন্য ওয়েট করছে। মীরা এখনও তার রুমে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশান এসে হাজির। রাগটা তার একটুও কমেনি। পিহু ইশানকে নিজের পাশে বসিয়ে মুহিতকে বলল,’মুহিত মীরাকে ডেকে নিয়ে আয়।’

মুহিতের কলিজার পানি শুকিয়ে গেল। না জানি মীরার রুমে ঢুকলে আর বেরুতে পারে নাকি??এই মুহূর্তে মীরার রুমটা চল্লিশ চোরের গুহার মতো মনে হচ্ছে। আর নিজেকে আলিবাবা। কিন্তু মুহিতের আলিবাবার মতো সাহস নেই যে চল্লিশ চোরের বিরুদ্ধে লড়বে। তবে চল্লিশ চোর বলতে সে মীরাকেই বুঝেছে। মীরা চল্লিশ চোরের থেকেও কম নয়। মুহিত বুকে থুতু দিয়ে মীরার রুমে গেল। মনে মনে বলল,’চিচিং ফা,,,,,’ বলতে বলতে দরজা খুলল। গুহার দরজা তো খুলে গেল এখন কি হবে????

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ২০