প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৮ || সুমাইয়া জাহান

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৮
সুমাইয়া জাহান

চৌধুরী বাড়ীর ড্রয়িং রুমে আজ আড্ডার আসর বসেছে।প্রায় অনেক দিন পর সবাই একসাথে হয়েছে বলে কথা!এতোদিন সবাই যে যার কাজে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে অনেক দিন কারো সাথে কারো তেমন একটা দেখা হয়ে ওঠেনি।আজ নীরের জন্মদিন উপলক্ষে আবার সবাই এক হতে পেরে এতোদিনের জমানো সব কথা একদিনে যেন একসাথে উপরে দিচ্ছে।তূর্যের দাদা আর দাদু এখনো আসেননি তারা সন্ধ্যায় একেবারে অনুষ্ঠানের সময়ই উপস্থিত হবেন।ড্রয়িং রুমের সোফায় আরমান সিকদার আর আশরাফ চৌধুরী একসাথে বসেছে।আর ওদের বরাবরই নীলিমা আর নীলাশা বসেছে।দুই বোন মিলে অনেক দিন ধরেই কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবছে।এতোদিন সবাইকে একসাথে পাইনি বলে কথাটা কাউকেই বলা হয়ে উঠেনি।আজ সময় আর সুযোগ দুইটাই পেয়েছে তাই না বলা কথাটা আজই বলবে ঠিক করেছে দুজন। কিন্তু বিপত্তি বেঁধেছে নীলাশাকে নিয়ে ও কিছুতে কথাটা বলতে পারছে না।অনেকক্ষণ ধরেই নীলিমা নীলাশাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে নীলাশা বড়ো তাই কথাটা ও বললে বেশি ভালো হবে।কিন্তু কে শোনে কার কথা নীলাশা তো মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে।যতো যাইহোক ও কিছুতেই কথাটা বলতে পারবে না।নীলিমা ওকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে একটা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে নিজেকে প্রস্তুত করতে করতে বললো,

—- ওকে তুই যখন পারবিই না তাহলে আমিই বলছি।
আরমান আশরাফের সাথে হাসি ঠাট্টা করছি।তবে নীলিমা আর নীলাশার মধ্যে যে কিছু একটা চলছি তো তা ও অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছিলো।তাই ও আগ বাড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো,
—- নীলিমা কি হয়েছে রে?এনি প্রবলেম!
—- না না না ভাইয়া কিছু হয়নি!
হঠাৎ করে আরমান প্রশ্ন করাতে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো নীলিমা। নীলিমার এমন জবাবে আরমান সিকদারের কপালের ভাজ টা আরো দৃঢ় হলো।এক ভ্রু উঁচু করে আবারও জিজ্ঞেস করলো,
—- তাহলে এমন বিহেভ করছিস কেন?তোকে তো কখনো এমন দেখিনা!
—- আব…ভাইয়া তোমায় একটা কথা বলার ছিলো!
—- আমি কি তোকে কখনো কথা বলতে বারণ করেছি?তাহলে আজ হঠাৎ অনুমতি নিচ্ছিস কেন?

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আরমানের কথায় আশরাফও নীলিমার দিকে তাকালো।বলতে গেলে এখন সবার দৃষ্টি নীলিমার উপর।যে কখনো কারো তোয়াক্কা করে না সেই মেয়ে আজ হঠাৎ অনুমতি নিচ্ছি একটা কথা বলার জন্য। তাও আবার কার কাছ থেকে অনুমতি নিচ্ছে যার কাছে কিনা নীলিমা সব আবদার করে।তাই সবাই অতি আগ্রহ নিয়েই নীলিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।নীলিমা সবার এমন আগ্রহ ভরা মুখ দেখে একটা শুকনো হাসি দিলো।নিজেকে প্রস্তুত করে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলো,
—- আসলে ভাইয়া আমি আর আপু অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম।নীর আর তূবা কে নিয়ে।আমরা চাই ওরা বড়ো হলে ওদের চার হাত এক করে দিতে।তূবা মনি কে আমি তোমার কাছে চাই!
কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই চোখ বন্ধ করে নিলো নীলিমা। পুরো ঘর জুড়ে নীরবতা ছেঁয়ে গেলো।আরমান সিকদার মুখটা বেশ গম্ভীর করে নিলেন।আরমান সিকদারের এমন গম্ভীরতা দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো।আশরাফ চৌধুরীও তার বাইরে গেলো না।কারণ আরমান সিকদারকে এতোটা গম্ভীর কখনো দেখেনি আশরাফ। তবে কি এখন না বলে দেবে আরমান সিকদার?সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন।নীলিমা চোখ বন্ধ করে আছে আশেপাশে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ গুললো।আরমান সিকদারের গম্ভীর মুখটা দেখে নীলিমা চুপসে গেলো।মাথা নিচু করে ফেললো সাথে সাথেই এই ভেবেই হয়তো আজ ভুল কিছু চেয়ে ফেলেছে।

হঠাৎ কারো অট্টহাসি হাসির শব্দে সবাই চমকালো।যখন আবিষ্কার করো সেই হাসিটা আরমান সিকদারের ছিলো তখন আরো বেশি অবাক হয়ে তাকালো আরমান সিকদারের দিকে।তবে চমকালো না আশরাফ চৌধুরী কারণ সে বুঝে গেছে এই গম্ভীরতা আর হাসির মানে কি!তাই সে বেশ শান্ত ভঙ্গিতেই তার অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকা স্ত্রী পানে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।নীলিমার নিচু করে থাকা মুখটা আরমান সিকদারের হাসির সাথে সাথেই অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।আরমান সিকদার হাসতে হাসতে সবার দিকে একবার তাকিয়ে নীলিমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

—- বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় কোনো ভাই বোন ছিলো না।একদিন আশরাফ কে আমার বন্ধু রুপে পেয়ে আমার ভাই না থাকার অভাব টা পুরোন হলো।কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার একটা ছোট্ট বোন থাকুক যে আমার কাছে সব সময় কোনো না কোনো বায়না করুক। যেদিন আমি তোকে নীলাশার সাথে প্রথম দেখি তোর সাথে কথা বলি সেদিন থেকেই তোকে আমি নিজের বোনের থেকেই বেশি কিছু থাকলে সেই জায়গাটা দিয়ে দিছি।তুইও আমার ইচ্ছে গুলো পুরোন করেছিস।তোর সব আবদার তুই শুধু আমার কাছেই করেছিস।আর আজ আমার সেই ছোট্ট বোনটা একটা আবদার করলো আর আমি রাখবো না!তাকি কখনো হয়!তার থেকেও বড়ো কথা তূূবা আর তূর্যের মামনী তুই! নীর যেমন তোর ছেলে তূবা আর তূর্যকেও তো তুই সেই ভাবেই দেখিস।তাহলে নিজের মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চাস এতে এতো দ্বিধা দ্বন্দ্বের কি আছে!যা আজ থেকে তোর মেয়েকে তোকেই দিয়ে দিলাম।

আরমান সিকদারের কথায় নীলিমার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।নীলিমারও কোনো ভাই ছিলো না।ওরও খুব ইচ্ছে ছিলো একজন বড়ো ভাইের।যার কাছে পৃথিবীর সব কথা বলা যায় যার কাছে সব আবদার করা যায়।ঠিক তেমনই একটা ভাই আল্লাহ তাকে মিলিয়ে দিলো।

নীর আধা ঘণ্টা যাবত দুই কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার সামনে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তূবা। তূবাকে তখন ধরে ফেলার এটা তার শাস্তি।তূবার পাশেই দাঁড়িয়ে তূর্য মুখ টিপেটিপে হাসছে।আর নীর আসহায় ফেস করে তূবার দিকে তাকিয়ে আছে।
—- বলছি তো আর কখনো তোকে ধরিয়ে দিবো না।আর তখন তোকে যদি আমি না ধরতাম তাহলে তুই পরে গিয়ে ব্যাথা পেতি।এবারের মতো ক্ষমা করে দে না প্লীজ!
এই নিয়ে পনেরো বার ক্ষমা চাওয়া শেষ নীরের।কিন্তু তূবা তো তূবাই সে কিছুতেই এতো বড়ো একটা অপরাধের ক্ষমা করবে না মানে না।একে তো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নীরের পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তার উপর আবার তূর্যের গাঁ জ্বালানো হাসি।খুব রেগে দাঁতে দাঁত চেপে তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- তূর্য ভাইয়া খুব খারাপ হচ্ছে কিন্তু! আমি তোমার জন্যই কিন্তু তূবাকে তখন ধরেছিলাম।আর তুমিই আমার সাথে এমন করছো?

—– আমি কখন বললাম পরীকে ধরতে? তুই তো নিজেই আগ বাড়িয়েই ধরেছিস।অপরাধ যখন করেই ফেলেছিস তখন তো শাস্তি ভোগ করতেই হবে!
তূর্যের এমন দায়সারা ভাব নিয়ে কথায় নীর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।কিছু একটা বলতে যাবে হাঠাৎ করে একটা জোরে আওয়াজ হলো।যার দরুন নীরের আর কিছু বলা হয়ে উঠলো না।আওয়াজ টা একটু জোরেই ছিলো তাই ছোট্ট তূবা ভয় পেয়ে গেলো।তূর্য আর নীর দুজনেই দ্রুত তূবাকে আগলে ধরলো।এতে তূবা ভয়টা অনেক টা কমে গেলো।তূবাকে একটা সেইভ জায়গায় রেখে তূর্য আর নীর ছুটলো সেই আওয়াজের অনুসন্ধানে।
??
বাড়িতে গেস্টরা আসতে শুরু করেছে তাই সবাই যে যার কাছে লেগে পরলো।নীলিমা আর নীলাশা ছুটলো রান্না ঘরের দিকে। সেখানে আজকের অনুষ্ঠানের জন্য সব আয়োজন করা হচ্ছে। সব কিছু সার্ভেন্টরা করলেও গাজরের হালুয়া টা নীলাশা করবে কারণ নীর নীলাশার হাতের গাজরের হালুয়া খেতে খুব ভালোবাসে।সক্কাল বেলাতেই নীর নীলাশাকে হুমকি দিয়ে রেখেছে “মনি আজ তুমি গাজরের হালুয়া না বানালে কিন্তু আমি কেক কাটবোই না হুম!” অবশ্য এটা নতুন না নীরের প্রত্যেক জন্মদিনেই তার মনির হাতের গাজরের হালুয়া চাই চাই!নীলাশা হালুয়া বানাতে বানাতে নীরের কথাগুলো ভাবতেই মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

—- পাগল একটা!
হালুয়া রান্না প্রায় শেষের দিকে তখনই একটা মেয়ে সার্ভেন্ট এসে নীলাশাকে বললো,
—- ম্যডাম আপনাকে স্যার ডাকছেন।উনি উপরের তিন নাম্বার রুমে আছেন।আর আপনাকে বলতে বলেছেন তাড়াতাড়ি যেতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
—- আরমান!
খুন্তি দিয়ে হালুয়া নাড়তে নাড়তেই সার্ভেন্টের দিকে প্রশ্ন টা ছুড়লো নীলাশা।মেয়েটা মাথা নেরে বললো,
—- জী ম্যডাম।
আরমান যেহেতু ডেকেছে খুব দরকারি কথার জন্যই হবে হয়তো। আর হালুয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই আর কিছু না ভেবেই নীলিমাকে ডাক দিলো,
—- নীলিমা এদিকে আয় তোর ভাইয়া ডাকছে।হালুয়া নাড়তে তাক আমি একটু তোর ভাইয়ার কথা শুনে আসছি।
নীলিমা এতোক্ষণ সার্ভেন্টের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলো নীলাশার ডাকে তাড়াতাড়ি রান্না কাছে এলো।নীলাশার থেকে খুন্তি টা নিয়ে বললো,
—- যাও আপু আমি আছি তুমি ভাইয়ার কথা শুনে আসো।

নীলাশা খুশিমনে বোনের হাতে খুন্তি টা দিয়ে বেসিনে গিয়ে হাত পরিষ্কার করে উপরের সেই তিন নাম্বার রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো। এই রুমটা সব ঘরের থেকে একটা আলাদা এখাননে কোনো লোকজনও আসা যাওয়া করে না।আরমান নিরিবিলি পছন্দ করে বলে হয়তো এই রুমে এসেছে এই ভেবেই সামনে এগোলো।রুমে ডুকে আরমান কে দেখতে পেলো না বরং অন্য একটা লোককে দেখতে পেলো মাস্ক পড়া।লোকটাকে দেখেই আর ভিতরে ডুকলো না নীলাশা। দরজার সামনে দাড়িয়েই লোকটার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
—– কে?কে আপনি?আর আমাকে মিথ্যে বলে ডেকে আনলেন কেন?
লোকটা নীলাশার কথা শুনে এমন একটা অভিনয় করলো মনে লোকটা সত্যি অবাক হয়েছে লীলাশার কথায়!মুখের মাস্কটা থুতনির নিচে নামিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,
—- ভাবি আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না!আর মিথ্যে বলে আনবো কেন?একটা সার্ভেন্টকে বললাম আপনাকে ডেকে দিতে।এখানে মিথ্যের কি আছে?
নীলাশা চেনা মুখ দেখে মুচকি হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।আর বললো,
—- সার্ভেন্ট টা হয়তো আপনার নাম ভালো ভাবে জানতো না তাই ভুল বলেছে।কিন্তু ভাইসাব আপনি মুখে মাস্ক পরে থাকলে আমি কেন কেউই তো আপনাকে চিনবে না।
—- আসলে ভাবি খুব কাসি হচ্ছে তাই মাস্ক টা পরে আছি।
মুখের মাস্কটা উঠাতে উঠাতে বললো লোকটা।আর সঙ্গে একটু মিথ্যে কাসিও দিলো নীলাশাকে দেখানোর জন্য। লোক আবার বলতে লাগলো,

—- প্রথমে আপনাদের বাড়িই গিয়েছিলাম তারপর জানতে পারলাম আপনারা সবাই আজ এই বাড়ি এসেছেন তাই আমিও চলে এলাম।
—- তা ভালোই করেছেন!এইবার কিন্তু দুই একদিন থাকলে চলবে না অনেক দিন থাকতে হবে!
—- অনেক দিন কেনো এখন থেকে তো সারাজীবনই এখানেই থাকবো।শুধু থাকতে পাারলেন ভাবি আপনি!
শেষের কথাটা বেশ ইনোসেন্ট করেই বললো লোকটা।নীলাশা প্রথমে চমকালেও পরে মজা ভেবে নিয়ে একটু হেসে বললো,
—- ভাইসাব আপনি কিন্তু ভালো মজার করতে পারেন!
—- তা একটু না পারলে কি এতোদিন আপনাদের সাথে এতো ভালোভাবে থাকতে পারতাম।কিন্তু জানেন আপনাকে মারতে আমার খুব কষ্ট হবে।আপনি আমাকে কতো ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াতেন এগুলো খুব মিস করবো।কিন্তু কষ্ট হলেও আপনাকে তো মারতে হবেই! আপনাকে না মারলে যে এই দুই পরিবার কে আলাদা করতে পারবো না।আর আলাদা না করতে পারলে যে সিকদার বাড়ির সব সম্পত্তি আমার হাতে আসবে না।সারাজীবন তো আর ওই বাড়ির চাকরের মতো থাকা যায় না!
লোকটার কথা গুলো বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।নীলাশার তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।তাহলে আরমান ওর ব্যাপারে যা বলতো তাই সত্যি!আরমানের কথা না শুনে লোকটাকে ভাইয়ের আসনে বসিয়ে তাহলে কি দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুশেছিলো এতোদিন!আর কিছু ভাবার সুযোগ পেলো না নীলাশা তার আগেই লোকটা ওর পেটে একটা ছুড়ি ডুকিয়ে দিলো।আহ্ করে মৃদু চিৎকার দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৭

—- তুই কি ভেবেছিস আমাকে মেরে ফেললেই এই দুই পরিবারকে আলাদা করতে পারবি।আমি আসার অনেক আগেই এই দুই পরিবারের সম্পর্ক! এই সম্পর্ক এতো ঢুমকো নয় যে এতো সহজে ভেঙ্গে যাবে।আর রইলো সিকদার বাড়ির সম্পত্তির কথা ওই স্বপ্ন তোর কোনোদিনও পুরোন হবে না!
লোকটা নীলাশার এতো আত্মবিশ্বাস দেখে রেগে গেলো।নীলাশার মুখ টিপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দিলো।সুযোগ বুঝে নীলাশা একটা ফুলদানি ফেলে দিলো এতে অনেক টা আওয়াজ হলো।লোকটার সেই দিকে খেয়াল নেই।রেগে বললো,
—- তোর মৃত্যু নাটক দিয়ে কিভাবে দুই পরিবারের সম্পর্ক ভাঙ্গতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।এর জন্য যতজন কে মারা লাগবে মারবো।আর কি যেন বললি সম্পত্তির কথা না!তার জন্য তো তোর মেয়ে আছে!
কথাটা বলেই নোংরা হাসিতে ফেটে পরলো লোকটা।কারো পায়ের শব্দ পেয়ে দ্রুত নীলাশাকে ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে মাস্ক টা মুখে দিয়ে বাড়িয়ে গেলো লোকটা।লোকটা নীলাশাকে ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই নীলাশা নিচে পরে গেলো।

নীর আর তূর্য আসছিলো সেই শব্দ টার অনুসন্ধানে।একটু এগোতেই দেখলো একটা মাস্ক পড়া লোক কোনার রুমটা থেকে বেরিয়ে গেলো।লোকটাকে তূর্যের একটু চেনাচেনা লাগলো।এখন আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি রুমটার দিকে গেলো ওরা।কেন লোকটা ওইভাবে চোরের মতো পালিয়ে গেলো তার উত্তর খুঁজতে।নীর আর তূর্য রুমে ডুকতেই চমকে গেলো।নীলাশাকে মাটিতে পরে আছে পেটে একটা ছুরি ডুকানো যেখান থেকে রক্ত বেরিয়ে মাটিতে উপচে পরছে।মাকে এমন অবস্থা দেখে তূর্য মাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

—– মা তোমার কি হয়েছে তুমি এভাবে শুয়ে আছো কেন?আর আর এ এটা কি?
—- মনি বলো না কি হয়েছে?তোমার কি হয়েছে?
নীরও নীলাশাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।নীলাশা ওদের দেখে একটু ভরসা পেলো।ওদের দুজেনের মুখ নিজের দুর্বল হাতটা ছুইয়ে একটু শুকনো হাসি দিয়ে দুর্বল কন্ঠে বললো,
—- আমায় নিয়ে পরে ভাবিস আগে আমাকে কথা দে যতো যাইহোক কখনো দুই পরিবার কে আলাদা করতে দিবি না তোরা!আর তোরাও কখনো আলাদা হবি না।সব সমস্যা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাধান করবি।সবাই কে এক সুতোই বেঁধে রাখবি তোরা।এটুকু ভরসা কি আমি তোদের উপর করতে পারি……..

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৯