প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৯ || Valobashar golpo

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৯
সুমাইয়া জাহান

—- আমায় নিয়ে পরে ভাবিস আগে আমাকে কথা দে যতো যাইহোক কখনো দুই পরিবার কে আলাদা করতে দিবি না তোরা!আর তোরাও কখনো আলাদা হবি না।সব সমস্যা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাধান করবি।সবাই কে এক সুতোই বেঁধে রাখবি তোরা।এটুকু ভরসা কি আমি তোদের উপর করতে পারি……..
নীলাশা আরো কিছু বলার আগেই তূর্য চেচিয়ে উঠলো,
—- একদম চুপ করো মা!তোমার কিচ্ছু হবে না!আমি এখুনি বাবাকে ডেকে আনছি।
কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো তূর্য। নীর তূর্যের যাওয়ার পানে একপলক তাকিয়ে নীলাশাকে বললো,

—- মনি তুমি একটু এখানে বসো আমিও তূর্য ভাইয়া সাথে সবাই ডাকতে যাচ্ছি!
নীর উঠে যেতে নিলে নীলাশা নীরের হাতটা ধরে ফেলে।নীর প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে নীলাশার দিকে তাকাতেই দুর্বল হাসি দিয়ে ইশারায় বসতে বললো।তারপর বলতে লাগলো,
—- আমার হাতে সময় খুব কম। সবাই আসতে আসতে হয়তো আর বেঁচে থাকবো না।
—- মনি চুপ করো প্লীজ! তোমার কিচ্ছু……
নীরের কথার মাঝে নীলাশা আবার বলে উঠলো,
—- আহ্ নীর!আমাকে কথা বলতে দে!সামনে অনেক বড়ো বিপদ আসছে!সেই বিপদের মোকাবিলা করতে হবে তোদের!আ আর আমি তূবাকে তোর হাতে তুলে দিলাম।ওকে সব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোর! তূর্য আর তুই থাকতে আমার মেয়েকে কেউ ছুঁয়েও দেখতে পারবে না এই বিশ্বাস আমার আছে।কিন্তু আমি তোকে ওর সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে বলছি।এখন আমার কথাগুলোর মানে না বুঝলেও পরে ঠিক বুঝবি।তু তূবার সামনে অনেক বিপদ ওকে আগলে রাখিস বাবা!আ আ র পা পা পারলে…..

—- মনি এবার প্লীজ থামো।তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে! আমি তো তোমার অনেক কথা শুনেছি। এবার আমাকে যেতে দেও!
আর এক মুহূর্তও দেরি না করে নীরও চলে গেলো।নীলাশা আরো অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু বলা হয়ে উঠলো না তার আগেই তো নীর চলে গেলো।আর সেই সাথে অজানা রয়ে গেলো সেই খুনী!
??
নীর নীলাশার রুম থেকে বেরিয়ে একটু খুঁজতেই বাবাকে পেয়ে গেলো।দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নীলাশার কথা বললো।আশরাফ শুনে চমকে যায় দ্রুত পায়ে নীলাশার রুমের সামনে যায়।নীলাশাকে এই অবস্থায় আবিষ্কার করে আরো বেশি চমকে যায়।ব্যস্ত গলায় বললো,
—- নীর তুই তাড়াতাড়ি সবাই কে ডেকে আন!আমি ভাবির কাছে আছি।
—- ওকে বাবা!
তারপর নীর চলে যায় সবাই কে ডেকে আনতে।আর আশরাফ দ্রুত নীলাশার কাছে যায়।হাঁটু গেঁড়ে নীলাশার কাছে ব্যস্ত গলায় বলে,
—- ভাবি কি হয়েছে তোমার! কে করলো এই অবস্থা তোমার?আ আর তুমি এখানেই বা কি করে এলে!
নীলাশা এখন প্রায় অচেতন অবস্থায়। তেমন একটা হুস নেই তার।তবুও খুব পরিচিত গলা পেয়ে একপলক তার পানে তাকালো।ইচ্ছে করছে অনেক কিছু বলতে কিন্তু কোনো কিছু বলার শক্তি এখন নেই। তাই শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও কিচ্ছুটি বলতে পারলো না শুধু একটা শব্দ ছাড়া।
—- ভাই!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

এই একটা শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেই যেন শতো শব্দ উচ্চারণ করার মতো আনন্দ খুঁজে পেলো মৃত প্রায় নীলাশা।এই মানুষ টাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।সবসময় নিজের বড়ো ভাই মনে করেছে।কখনো বোনের স্বামী বা নিজের স্বামীর বন্ধু মনে করেনি।শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে এই মানুষ টাকে একবার দেখতে পেয়ে বড্ড শান্তি পেলো নীলাশা।শুধু আফসোস বাকী দের সাথে শেষ দেখা টুকুও হলো না।আস্তে আস্তে সব অন্ধকার হয়ে এলো নীলাশার। একসময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।
নীলাশাকে আর কিছু বলতে না দেখে আবারও বলতে লাগলো,
—- কি হলো ভাবি কথা বলছো না কেন?এই দেখ তোমার ভাই এসেছে। তুমি কিছু বলবে না?
কথাগুলো বলতে বলতেই আশরাফের চোখ যায় নীলাশার পেটে গেতে থাকা ছুরিটার দিকে দিকে।কিছু না ভেবেই ছুরি টা বের করার চেষ্টা করলো।হাত কাঁপছে ছুরিতে হাত দিতে তবুও নিজেকে শক্ত করে চোখ বন্ধ করে ছুরিটা এক টানে বের করে আনলো।

আরমান সিকদারের ফোনে একটা মেসেজ এলো।
” তাড়াতাড়ি উপরের তিন নাম্বার রুমটায় জলদি এসো।আমি খুব বিপদের মধ্যে আছি।আমাকে বাঁচাও আমাকে যে মেরে ফেলবে!”
এইটুকুই লেখা ছিলো মেসেজটাতে। হঠাৎ এমন একটা মেসেজ পেয়ে আরমান সিকদার কপাল কুঁচকে মেসেজ টার দিকে তাকালো।পরক্ষণে যখন দেখতে পেলো মেসেজ টা নীলাশার ফোন থেকে তখন চমকে উঠলো।এক প্রকার দৌড়ে সেই রুমটার দিকে এলো।কারণ নীলাশা কখনো মজা করে এইধরনের মেসেজ দেওয়ার মেয়ে না।তারমানে সে নিশ্চয়ই কোনো বিপদে আছে।কিন্তু সেই রুমের সামনে আসতেই আরমান সিকদারের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।কেননা যখন আশরাফ নীলাশার পেট থেকে ছুরিটা এক টানে বের করছিলো তখনই আরমান এসেছিলো।আগে পরের কোনো কিছুই সে শোনেওনি আর দেখেওনি।জোরে চেঁচিয়ে বললো,

—- আশরাফ!!!!
আশরাফ ছুরিটা বের করতেই পিছন থেকে চিরচেনা কন্ঠে নিজের নাম শুনতে পেয়ে পিছনের দিকে তাকালো।আরমান কে দরজার সামনে আবিষ্কার করতেই তাঁর কাছে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে ব্যস্ত গলায় বলতে লাগলো,
—- আরমান দেখ না কে যেন ভাবি কে ছুরি ঢুকিয়ে গেছে।তুই ঠিক সময় এসেছিস তাড়াতাড়ি চল ভাবিকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।
আশরাফের এতোগুলা কথার বিনিময়ে একটা কথাও বলেনি।বলতে গেলে কথা ভাষা হারিয়ে ফেলেছে আরমান।একটু একটু করে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকা স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেলো।নীলাশার সামনে গিয়ে একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আর একমুহূর্ত দেরি না করে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো আরমান। আশরাফও পিছন পিছন গেলো।
এতোক্ষণ তূর্য আর নীর নীলিমার কাছে গিয়ে নীলাশার কথা বলতেই সেও তাড়াহুড়ো করে উপরে উঠতে নিলেই আরমান নীলাশাকে কোলে করে নিচে নামতে দেখে আর উঠলো না। আরমান নিচে নামতেই নীলাশার রক্তাক্ত শরীর দেখে কেঁদে উঠে নীলিমা।পাগলের মতো বোনের হাত ঝাঁকিয়ে বলতে থাকে,
—- আপু কি হয়েছে তোর!ত তুই এভাবে কেন?কথা বল আপু!কি হলো কথা বলছিস না কেন?আপু!আপু!আপু!কথা বল না!
নীলিমা এমন অবস্থা দেখেও কিছু বললো না আরমান। নীলিমা কে পাস কাটিয়ে চলে গেলো।পিছন থেকে আশরাফ এসে নীলিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তারপর তাঁরাও আরমানের পিছু পিছু গেলো।

হসপিটালে গিয়েও কাজ হলো না।হসপিটালে নেওয়ার সাথে সাথেই ডক্টর নীলাশাকে মৃত ঘোষণা করলো।আরমান নিলাশাকে নিয়ে আবার সিকদার বাড়ী চলে আসলো।সিকদার বাড়ীর মেইন ফটক খুলতেই দুজন মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করলো আরমান। সেই দুই জন মানুষ আর কেউই না তারা হলো আরমানের বাবা মা।মৃত স্ত্রী কে কোলে নিয়ে যদি বাবা-মা লাশ দেখতে পায় কোনো ছেলে তখন তার দুনিয়াটাই উল্টে যায়।আরমান এতো কিছু একসাথে দেখে পাথর হয়ে গেলো।নীলাশাকে একটা জায়গায় শুইয়ে দিয়ে বাবা-মার কাছে গেলো।চারিদিকে রক্তে ভেসে রয়েছে।তাদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। পরক্ষণেই মায়ের পাশে নজর গেলো আরমানের!সেখানে রক্ত দিয়ে বড়ো বড়ো করে লেখা আছে “আশরাফ”। এতোক্ষণ বাকিরাও এসে পরেছে সিকদার বাড়িতে ভেতরে এমন পরিস্থিতি দেখে নীলিমা তূর্যকে বললো,

—– তুর তুই ওদের নিয়ে ভিতরে যা!
এইটুকু কথা নীলিমা খুব কষ্ট করে বললো।গলা ধরে আসছে তার।একসাথে এতোকিছু সহ্য করতে পারছে না।শুধু নীলিমা কেন সবারই একই অবস্থা এখন।তূর্য ছোট্ট বোনটার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুব কষ্টে সামলাচ্ছে।নীলিমার কথা মতো তূবা আর নীরকে নিয়ে ভিতরের ঘরে চলে গেলো।ওরা যাওয়ার পরই নীলিমা আর আশরাফ আরমানের কাছে ছুটে আসলো।ওদের সাথে আরো একজন প্রবেশ করলো। আরমানের এক দূরসম্পর্কের ভাই তিনি।আরমান দের গ্রামের জমিজমা দেখাশোনা করে। এখন আরমান পাশে এসে দাড়িয়ে এমন অবস্থা দেখে মরা কান্না জুড়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
—- কাকা কাকির এমন অবস্থা হলো কি করে?কতো ভালো মানুষ ছিলেন তাঁরা!তাদের এমন অবস্থা করলো কে?আর ভাবিরই বা এমন অবস্থা করলো কে?
একটু চোখ বোলাতেই দেখতে পেলো রক্ত দিয়ে লেখা আশরাফের নামটা।সাথে সাথেই বিস্ফোরিত চোখে আশরাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
—- আশরাফ ভাই আপনি এমনটা কি করে করতে পাারলেন?কাকা কাকি তো আপনাকে আরমান ভাইয়ের মতো দেখেতেন।তাদের এতো ভালোবাসা পেয়েও আপনি তাদের খুন করতে পারলেন?
আশরাফ কথাটা শুনে অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলো।নীলিমারও একই অবস্থা। আশরাফ রেগে বললো,

—- কি বলছো কি রঞ্জন?তোমার মাথা ঠিক আছে?আমি কেন ওদের মারতে যাবো?ওরা আমার কাছে আমার মা বাবার মতো ছিলো।
—- চিৎকার দিবেন না আশরাফ চৌধুরী! আমিও আপনার কাছে এই প্রশ্নের উত্তরই চাই! কেন মারলেন আমার পরিবারকে? কেন মারলেন আমার বাবা-মাকে? কেন মারলেন আমার স্ত্রীকে?
আরমান উঠে দাড়িয়ে গম্ভীরভাবে আশরাফের দিকে প্রশ্ন গুলো ছুরে দিলো।আরমানের প্রতিটা কথাই তীরে মতো ঘাতলো আশরাফের বুকে।আর যাইহোক ভাইয়ের মতো বন্ধুর থেকে কোনোদিন এমন কথা আশা করেনি।শান্ত গলায় বললো,
—- তুই সত্যি বিশ্বাস করিস আমি সবাইকে খুন করেছি?
আরমান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,

—- যখন আপনাকে নীলাশার পেট থেকে ছুরিটা বের করতে দেখলাম তখনও বিশ্বাস করিনি আমি আমি খুন করতে পারেন।কিন্তু এখানে জলজ্যান্ত প্রমাণ কে আমি কি করে অশিকার করবো।(রক্ত দিয়ে লেখাটা দেখিয়ে)আপনি আমার বন্ধু ছিলেন তাই আপনাকে আমি যাই করি না কেন পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই প্লীজ চলে যান এখান থেকে। আর নীলিমা তুই যদি চাস নিজের বোনের হত্যাকারীর সাথে থাকতে না চাইলে এবাড়িতে থাকতে পারিস!আফটার অল কোনো খুনীর সাথে তো নিজের জীবন কাটানো যায় না!
— ব্যস আরমান সিকদার! ব্যস!আপনি আপনার বন্ধুকে বিশ্বাস না করতে পারলেও আমি আমার স্বামীকে সম্পূর্ন রুপে বিশ্বাস করি।একটা লেখার জন্য আমি আমার স্বামীকে আপনার মতো খুনী বলতে পারবো না।আর কি যেন বললেন আপনার বাড়িতে থাকতে!ভুলে যাবেন না আমি এখন আশরাফ চৌধুরীর বিবাহিত স্ত্রী! চৌধুরী বাড়ীই এখন আমার আসল বাড়ি!তাই আপনার দয়া আমার বা আমার পরিবারের কারো লাগবে না।ভালো থাবেন।

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে নীলিমা থামলো।এতো ছেলেমানুষী করা একটা মেয়ে আজ একসাথে এতো ধাক্কা খেয়ে এমনভাবে কথা বলতে পারে তা জানা নেই আশরাফের।সে শুধু নীলিমার দিকে তাকিয়ে রইলো পৃথিবীর সবাই এমকি প্রাণ প্রিয় বন্ধুও যখন অবিশ্বাস করলো তখন তার ছেলেমানুষী করা স্ত্রীটি তাকে অবিশ্বাস না করে শক্ত হাতে জবাব দিলো। নীলিমা কয়েক সেকেন্ড জোরে জোরে শ্বাস ফেলে আশরাফের হাত ধরে ছোট্ট করে “চলো” বলে হাঁটা ধরলো।একবার নীলাশার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কয়েক ফোঁটা জল ফেলে নীরকে ভিতর থেকে ডেকে নিয়ে এসে বাড়িয়ে গেলো সিকদার বাড়ি থেকে।এসব দেখে একজনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে আর কেউ নয় রঞ্জন।তার এতোদিনের ইচ্ছা আজ পুরোন হলো।

তূর্য অনেক বার আরমান কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে তার মায়ের খুনী আশরাফ না।কিন্তু ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো কারণ রঞ্জন আরমানের মন বিষিয়ে দিয়েছিলো আশরাফের বিরুদ্ধে। সেই দিন রঞ্জনই ছিলো নীলাশার সাথে।নীলাশা মোবাইল টা আগে কারসাজি করে নিজের কাছে নিয়ে আসে।তারপর এমন সময় নীলাশার ফোন থেকে আরমান কে মেসেজ করে যখন বোঝা যায় আশরাফই খুনটা করে।তারপর আবার আরমানের মা-বাবাকে খুন করে আশরাফের নাম লিখা রাখে যাতে পুরো সন্দেহর তীরটা আশরাফের উপর পরে।আর ওদের সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে যায়।আরমান সিকদার কে পুরোপুরি একলা করে দিয়ে সব সম্পত্তি তার হাতে আসে।আরমান সিকদার কে দুর্বল করে একটু একটু রে নিজের রাজত্ব গড়তে থাকে রঞ্জন।এই সব কিছুই একদিন তূর্য আড়াল থেকে শুনে ফেলে।কিন্তু ওদের বুঝতে দেয় না।
এইভাবেই কেটে যায় বহু বছর।একদিন আশরাফ কোনো একভাবে এসব কিছু জানতে পারে।বন্ধু এতো বড়ো বিপদের মধ্যে রয়েছে জেনেই বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য তাড়াহুড়ো করে ছুটে আসে সিকদার বাড়ির উদ্দেশ্য! কিন্তু এসে আর পৌঁছাতে পারে না।পথেই আশরাফের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে দেয় রঞ্জনের লোকেরা।

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৮

বর্তমানে…….
তূর্যের সেই ভয়ংকর অতীতের কথা গুলো বলতে গিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেইসব দৃশ্য। একটা দীর্ঘ শ্বাস আবারও বলতে লাগলো,
—- সেই কাকুর এক্সিডেন্ট পর থেকেই আমরা বুঝে গেছি ওদের মোকাবিলা করতে হলে ওদের মতো শক্তির প্রয়োজন তাই নীর আর আমি মিলে আস্তে আস্তে ওদের মতো শক্তি অর্জন করতে লাগলাম।আমরা চাইলে ওদের একমুহূর্তেই শেষ করে দিতে পারি কিন্তু বাবার সামনে সব সত্যি টা আনার জন্য আমরা এখনো চুপ করে আছি।শুধু একটা প্রমাণ হাতে পেলেই ওদের শেষ করে দেবো।তাইবলে ওদের আমরা ছেড়ে দেইনি ওদের কে আমরা ধীরে ধীরে শেষ করছি।ওদের সমস্ত প্ল্যান নষ্ট করে দিচ্ছি। ওরা তোকে টার্গেট করেছিলো।তুই জানিস রাতুল কে?
আমি মাথা নেরে বললাম না।আমি এখন এতোটাই শকডের মধ্যে আছি যে কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি।ভাইয়ু আমার উত্তর পেয়ে মুচকি হেসে আবার বলতে লাগলো,

—- রাতুল রঞ্জন কাকুর ছেলে।রঞ্জন কাকু নিজের ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে আমাদের সব সম্পত্তি নিজের নামে করতে চেয়েছিলো।কারণ তিনি খুব ভালো করেই যানে আমাদের সবার দুর্বলতা তুই! তাই আমি আর নীর প্লান করে একবছর আগেই তোর বিয়ে নীরের সাথে করিয়ে নিয়েছি।ওরা সবাই এখনো জানেনা আমিও সব জানি ইভেন ওরা তো এটাও জানে না ওদের পিছনে আমি কলকাঠি নাড়ছি। ওরা শুধু জানে নীর ওর বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এতোকিছু করছে।
আমি এতো আপনজনদের মৃত্যুর কথা শুনে খুব কেঁদেছিলাম।কিন্তু না আমি আর কাঁদবো না।এতোক্ষণ আমি একজায়গায় চুপটি মেরে বসে ভাইয়ুর কথাগুলো শুনছিলাম।নীর খাটের এককোনায় বসে আছে নিচের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।এতোক্ষণে একটা কথাও বলেনি।আর ভাইয়ুর ওর পাশেই বসে আছে।আমি ছিলাম ওদের উল্টো দিক।নিজের চোখের পানি গুলো মুছে নিয়ে ওদের দুজনের সামনে দাঁড়ালাম।

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ২০