প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৪ || Golpo Bazar

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৪
সুমাইয়া জাহান

দুদিন ধরেই মনটা ভিষণ খারাপ ছিলো।অনেকটা অপরাধ বোধও কাজ করছে।সেই দিন নীর খুব বেশিই ব্যাথা পেয়েছিলো।যার জন্য টানা দুই দিনই বেড রেস্টে থাকতে হয়েছে।আমি ওর সামনে আর যাইনি কিন্তু আড়াল থেকে মাঝে মাঝেই দেখে আসতাম। ওর সামনে যেতে গেলেই নিজেকে খুব অপরাধী লাগতো।একটু সামান্য পা টিপে দিতেই তো বলেছিলো তাই বলে এতো বড়ো একটা শাস্তি দেওয়া আমার একদম উচিৎ হয়নি।যা করার তা তো করেই ফেলেছি সেগুলো ভেবে তো আর কোনো কিছু হবে না!তাই ঠিক করেছি ভুল যখন করেই ফেলেছি একবার ক্ষমা চেয়ে নিবো।এই দুই দিন বেড রেস্ট করে এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেকটাই সুস্থ নীর।একটু আগে এসে আমাকে বলে গেছে ভার্সিটির জন্য রেডি হতে।আমিও ভাবলাম এটাই সু্যোগ ক্ষমা চাওয়ার।সুযোগ বুঝে ক্ষমাটা চাইতে পারলেই অপরাধ বোধের বোঝাটা একটু হলেও হালকা হবে।

রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই মামনী আমাকে দেখে ডাক দিলো,
—- তূূবা তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করতে আয় নীর তোর জন্য বাইরে অপেক্ষা করে আছে।
মামনীর কথায় থেমে একবার ব্রেকফাস্ট টেবিলের দিকে তাকাতেই সব খাবারের মাঝে দুধের গ্লাস টা চোখের সামনে আসতেই শুকনো একটা ঢোক গিলে মামনী কে তাড়া দিয়ে বললাম,
—- মামনী এখন খাওয়ার একদম টাইম নেই। নীর বাইরে অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি না গেলে আবার রাগ করবে।
মামনী আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ব্রেডে জ্যাম লাগাতে লাগাতেই বললো,
—- নীর নিজেই বলে গেছে তুই না খাওয়া পর্যন্ত বাইরে বের হতে পারবি না।আর আমাকে টাইম শিখাতে আসিস না টাইম আমি খুব ভালো করেই জানি।আরো দশমিনিট পর বেরোলেও ভার্সিটি গিয়ে একঘন্টার মতো বসে থাকতে হবে।তাই বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেতে বস।
—- আজ অনেক দিন পর ভার্সিটি যাচ্ছি তো তাই একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।তুমি চিন্তা করো না ভার্সিটি গিয়েই কেন্টিনে কিছু একটা খেয়ে নিবো। ওকে বাই।
একটা অযুহাত দেখিয়ে বাই বলে এগোতে না এগোতেই মামনী আমাকে হুট করে হাতটা ধরেই ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে রাগী গলায় বললো,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

—- খবরদার যদি না খেয়ে এক পা বাইরে দিস! একদম চুপ করে বসে সব খাবার আগে শেষ করবি তারপর যেতে পারবি তার আগে না!আজকাল বড্ড অবাধ্য হয়ে যাচ্ছিস।
মামনীর রাগের কাছে আমি চুপসে গেলাম।তাই আর কথা না বাড়িয়ে একটা জ্যাম দেওয়া ব্রেড হাতে নিয়ে খেতে লাগলাম।কোনো রকম একটা খেয়েই টিস্যুতে হাত মুছে দাঁড়িয়ে একটু হেসে বললাম,
—- দেখো মামনী আমি খেয়ে নিয়েছি।এবার আমি যাই।
আমি আবারও যেতে নেওয়ার আগেই আমাকে মামনী বসিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বললেন,
—- খেয়েছিস ?মাত্র একটা ব্রেড খেয়েছিস।ঠিক আছে তোকে আর খেতে হবে না শুধু এই দুধের গ্লাস টা শেষ করে দে আমি আর কিছু বলবো না তুই যেখানে খুশি যাস।
যার ভয়ে এতো অযুহাত দেখিয়ে কেটে পরতে চেয়েছিলাম তাই খেতে বলছে।না আমি কিছুতেই ভয়ংকর দুর্গন্ধওয়ালা এই জিনিস টা খাবো না।এই পৃথিবীর সবচাইতে বাজে খাবারের মধ্যে সেরা হচ্ছে এই খাবার টা।

**এই খাবার টা লেখিকার কাছেও এইরকম লাগে ? তবে কেউ ব্যাপারটা অন্যভাবে নিবেন না আশা করবো**
দুধের গ্লাস টার দিকে তাকিয়ে আবারও একটা শুকনো ঢোক গিললাম। মামনীর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললাম,
—- মামনী তুমি তো খুব ভালো করেই জানো এই জিনিস টা আমার গলা দিয়ে নামবে না।মুখে দিলেই কেমন একটা ওয়াক মার্কা দুর্গন্ধ আছে আর টেস্ট টাও ভিষণ বাজে।মামনী তুমি আমার উপর এতো বড়ো অত্যাচার করতে পারো না!তুমি তো বেস্ট মামনী! প্লিজ আমাকে এতো বড়ো শাস্তি টা দিও না। এই অত্যাচার সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।মামনী তুমি এতো নিষ্ঠুর হয়ে গেলে!
কথা গুলো বলতে বলতেই কপালে হাত ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলাম।আমার এই কান্না দেখে এক ধমক দিয়ে বললো,

—- একদম চুপ!
মামনীর ধমক খেয়ে মুখে আংগুল দিয়ে চুপ করে গেলাম।মামনী নিজেকে শান্ত করে আবার বললো,
—- সামান্য এক গ্লাস দুধই তো খেতে বলেছি।আর তুই এটাকে নিয়ে মহা ভারত বানিয়ে ফেললি।আমি বলে দিলাম আজ যতক্ষণ এই গ্লাস না শেষ হচ্ছে তুই বা আমি এখান থেকে কেউই নড়ছি না।
মামনীও আমার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো। আমি পরেছি মহা বিপদে না পারছি যেতে না পারছি এইটা খেতে।কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে মামনীর দিকে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
—- এখনো না গেলে নীর কিন্তু বকবে!প্লিজ যেতে দেও আমাকে প্লিজ!
—- নীর কিছুই বলবে না কারণ নীর বলে গেছে এই গ্লাসটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে না বেরতে দিতে। এতে যদি আজ ভার্সিটি নাও যেতে পারিস তাতেই কিছুটি হবে না।কিন্তু এই গ্লাস আজ শেষ করতেই হবে।নিজের শরীরের দিকে একবার তাকিয়েছিস দেখে তো মনে হচ্ছে একটা লাঠি চেয়ারের উপর বসে আছে।
নীর কে তো আমি ছাড়বো না। ভেবেছিলাম ওইদিনের জন্য ক্ষমা চাইবো কিন্তু ব্যাটার ক্ষমা টমা কি আর সহ্য হয়!ব্যাটা বদমাশ আমার পিছনে না লাগলে চলে না।দাঁড়া আজকে তোর ব্যাবস্থা করছি একবার শুধু এই বিপদ টা থেকে বেড়তে পারি তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে ততদিন! আমার আমার ভাবনার মাঝে মামনী আবারও বললো,

—- এতো ভেবে লাভ নেই। আজ গ্লাস শেষ করতেই হবে।
কি আর করার খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি এই গ্লাস থেকে রেহাই নেই।তাই আর কথা না বাড়িয়ে গ্লাস হাতে নিলাম।একহাত দিয়ে নাকটাকে ভালো ভাবে চেপে ধরে এক ঢোকে গ্লাস টা শেষ করলাম।শেষ করার সাথে সাথেই পানির উপর ঝাপিয়ে পরলাম।টানা তিন গ্লাস পানি খেয়েছি কিন্তু তাতেও মুখে ওই বাজে স্বাদ টা লেগে আছে।আর একফোঁটা পানিও খাওয়া সম্ভব না।যেখানে সারাদিনেও এক গ্লাস পানি শেষ করতে পারি না সেখানে এই তিন গ্লাস পানি খেয়ে আমরা অবস্থা খুব খারাপ। একটু মেকি হাসি দিয়ে মামনীর থেকে বিদায় নিলাম।
—- মামনী এবার তাহলে যাই।
—- হুম এবার যা।
বাইরে বেরিয়ে দেখি নীর বাইকের উপর হেলান দিয়ে মোবাইল টিপতেছে।আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে আরাম করে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। যা কথায়ই বলবো না ওর সাথে।ওকে পাস কাটিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি।নীর আড়চোখে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
—- এখন থেকে আদা ঘন্টা জন্য একটা রিকশা পাওয়া যাবে না।তাই কেউ বেশি নাটক না করে বাইকে আসলে তাড়াতাড়ি যেতে পারব।

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৩

কথাগুলো বলেই বাইকে উঠলো নীর।রিকশা না পেলে হেঁটে যাবো তবুও এই বদমাইশ টার বাইকে উঠবো না।ওর দিকে একবার সূক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।একটু এগোতেই ও বাইক নিয়ে আমার সামনে এসে রাগী গলায় বললো,
—- কি শুরু করেছিস কি তুই?একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ তো কয়টা বাজে হেঁটে গেলে ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পরও পৌঁছাতে পারবি কিনা সন্দেহ।
হাত ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি অনেক দেরি হয়ে গেছে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপ চাপ বাইকে উঠে বসলাম।তবে যতোটুকু দূরত্ব রাখা সম্ভব ততোটা দূরত্ব রেখে বসলাম।এটা দেখে নীর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বাইকে একটা জোরে ব্রেক কষলো।আমি টাল সামলাতে না পেরে ওর পিঠের উপর গিয়ে পরলাম।আমি জানি ইচ্ছে করেই করছে ও এমটা।তাও মনে মনে হাজারটা গালাগাল করলেও মুখে কিছু বললাম না।আর এবার ওকে ধরেই বসলাম।নীর এবার চওড়া হাসি দিয়ে মনের আনন্দে বাইক চালাতে লাগলো।

দশ মিনিট পর আমরা ভার্সিটি পৌছালাম। বাইক থামতেই তাড়াতাড়ি নেমে নিজের ক্লাসের দিকে হেটে চলে গেলাম।একটা কথাও বলিনি নীরের সাথে।
নীর তূবার দিকে তাকিয়ে হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো,
—- বউ তো দেখি রেগে আগুন হয়ে আছে।কে বলেছে বেশি বাড়াবাড়ি করতে?নীর বাবু জীবনে অনেক কাজ করেছো এবার বউয়ের রাগ ভাঙ্গানোর কাজে লেগে পরো।
তারপর নীরও ভার্সিটির ভিতর ঢুকে নিজের ক্লাসের দিকে গেলো।

চলবে,,,,,

[পর্বটা ছোটো বলে কেউ লজ্জা দিবেন না।অনেক কষ্ট করে আজকে এইটুকু লিখেছি।আজকে খুব অসুস্থ ছিলাম তাই এর থেকে বড়ো পার্ট আজকে লেখা সম্ভব হয়নি।আর আজকে অনেক দেরিও হয়ে গেছে তাই সরি বলছি।কালকে তাড়াতাড়ি আর বড়ো পার্ট দিবো ইনশাল্লাহ। ]\

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৫