রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ১০ || নাফিসা মুনতাহা পরী

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ১০
নাফিসা মুনতাহা পরী

“মাথায় ঢুকিয়ে নাও সর্বদার জন্য; এখনো এক মানুষ তোমায় ভালোবাসে…., প্রচন্ড ভালোবাসে।”
শুভ্রের আবেগ মাখা কথায় পরীর মন গললোনা। তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো শুভ্রর পানে। তারপর ভ্রু জোড়া কুচকে মুখে কঠোরতা এনে কঠোর গলায় বলল-
~” আপনার এসব কথার মানে কি! এসব কথা বলার কি কোন রকম কোন যোগ্যতা আপনার আছে নাকি! তারপরও কানাবাবার মত ছড়ছড় করে কবিতা চর্চা করেই চলছেন। যা আমার জন্য হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। তাই বেহায়া বাচ্চাদের মত আচরন না করে আমার হাত, পায়ের বাঁধন খুলে দিন। এবং সভ্য মানুষের মত এখান থেকে নিজের স্ত্রীর কাছে চলে যান। আর আমাকে কখনো ডিসর্টাব করবেন না। আপনার টাকা আমি শোধ করে দিব। কয়েকদিন একটু সময়ের দরকার। আমার এখন টাকার সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু আমি মোটেও ভিখারী নই।”

পরী পাই টু পাই কথা দিয়ে শুভ্রকে আঘাত করলো। কিন্তু পরীর কথার কোন প্রভাবই পড়লোনা শুভ্রের উপর। বরং পরীর পা মালিশ করতে করতে ঐ পা মুচড়ে ধরে পরীর দিকে চাইলো। পরী প্রচন্ড ব্যাথায় সাথে সাথে কেঁপে উঠলো। চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানিও পড়ে গেল। আর নিচু গলায় ফিকরাতে লাগলো। শুভ্রের এমন ব্যবহার দেখে মনে হবে, পরী ভিষন অন্যায় কথা বলেছে আর শাস্তি হিসাবে পরীর পা মুচরে ধরেছে সে।
আমাকে চিনিস তুই! সবসময় চুপচাপ ভালো ব্যবহার করি বলে এমন কথার দাপট দেখানোর সাহস পাস তুই। একদম আগা থেকে গোড়া অবদি তোরে ছাটাই করবো। আমি সবাইকে আমার কঠিন রুপ সহজে দেখাই না। কিন্তু তোর আচরনে মনে হয় সেটাই দেখাতে হবে। একদম তোর জিবন অতিষ্ট করে ছাড়বো। শুধু মা কষ্ট পাবে বলে আমি কিছু বলতেও পারিনা, করতেও পারছিনা। আর এই সুযোগ নিয়ে তোর মুখে যা আসে তাই বলে আমাকে সর্বদা আঘাত করার জন্য প্রস্তুত থাকিস! কথাগুলো বলে শুভ্র পরীর পা ছেড়ে দিল।
তারপর ওর বাঁধন খুলতে খুলতে আবার বলে উঠলো-

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

~” আমার টাকা তুই শোধ করবি তাই না! তা কত টাকা আছে তোর কাছে হুঁ! অহ্ তোর বাবার তো আবার প্রচুর টাকা আছে তার দম্ভ দেখাস তাই না? এক কাজ করতো! সবাই তো শশুড় বাসা থেকে অনেক কিছু পায়। তোর বাবাকেও বল, তোর বরের ৯কোটি টাকা এখুনি লাগবে। টাকা না নিয়ে আসলে বর তোরে আর কাছেই রাখবেনা।”
দু’হাতের বাধন ছাড়া পেতেই শুভ্রের মিগি হাতা গেঞ্জির গলা দু’হাতে খামচে ধরলো পরী। এমন ব্যবহার শুভ্রের কাছে একদম অপছন্দ। ঐ অবস্থায় পরী জোড় গলায় বলে উঠলো-
~” তোর সংসার করতে কে চায়! এমন সংসার আমি বালেতও কাটিনা।”
পরীর দু’চোখ নিমিষেই লাল টকটকে হয়ে গেল। শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে চটকরেই উঠে দাড়ালো পরী। পায়ের ব্যাথা যেন ওর নিমিষেই ভালো হয়ে গেছে। ওর আচরনে সেটাই বলছে। শুভ্রের ঘোর না কাটতেই পরী আবার রুক্ষ কণ্ঠে কাট কাট গলায় বললো-

~” নিজের ভালো চাও তো এখুনি এখান থেকে চলে যাও। না হলে আমি ভুলে যাব তুমি কে!”
নম্র স্বভাব থেকে এক নিমিষেই যেন রুক্ষপ্রকৃতির হয়ে গেল পরী। ও নিজেও নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে হয়ত, কিন্তু পেরে উঠছেনা। ওর রাগটা যেন আস্তে আস্তে বেড়েই চলল। শুভ্রও উঠে দাড়িয়ে এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো, বেডে টাওয়াল পড়ে আছে। সেটা নিয়েই দ্রুত পরীর কাছে গিয়ে পিছন দিক থেকে টাওয়াল দিয়ে ওকে চেঁপে ধরে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল-
~” হঠাৎ আমার বউয়ের রাগ অতি তাপমাত্রায় বদ্ধি পেল কিভাবে! বলিনি, নিজের রাগকে কন্টোল করতে! তারপরও সেই একই ভুল তুমি বার কেন করো?”
পরী সহজেই শুভ্রর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কঠোর চোখে শুভ্রের সামনে দাড়িয়ে কিছু বলতেই শুভ্র টাওয়াল দিয়ে ওকে আবার আষ্টে-পৃষ্টে চেঁপে ধরলো। পরীর হাতের নখ প্রচুর তীক্ষ্ণ। একবার আচড় কাটলে সেখানে থেকে রক্ত বের করে ছাড়বে। এটা শুভ্র আগে থেকেই জানতো। তার ভিতর এমন পরিস্থিতিতে ওকে সামলানো অনেক মুশকিল।
পরী সামনের দিকে শুভ্রের বুকে জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে কর্কশ ভাষায় বলে উঠলো-
~” ছেড়ে দিবি আমায়! না অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে!”

ছেড়ে তো দিবই কিন্তু এখন না, আমার ইচ্ছা মত বলে শুভ্র পরীকে নিয়ে খানিকটা জোড়েই ধাক্কা দিল। শুভ্রের ধাক্কায় পরী খাটে যেন আছড়ে পড়লো। পরী নিজেকে স্বাভাবিক করার আগেই শুভ্র গিয়ে ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে আর ওর পা দিয়ে পরীর শরীর আকড়ে ধরলো।
এবার পরীর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু ওর মুখ থেকে নেই। অদ্ভুদ ভাষায় কথার কলরব তুলে ফেলল।
এই থামবি না ঠোট কামড়ে ধড়বো বলে শুভ্র জোড়ে একটা ধমক দিল পরীকে। পরী আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে লাগলো। তবে চোখজোড়া দিয়ে পানি উপচে পড়তে লাগলো। পরীকে কন্টোল করতে শুভ্রের বেশ বেগ পেতে হলো।
এবার পরী একেবারে স্থির হয়ে শুভ্রকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে রইলো। শুভ্র হাফ ছেড়ে বাচলো। ওর শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম নামছে এই এসির ঠান্ডা বাতাসের মাঝেও। শুভ্রর চুল দিয়ে ঘাম বেয়ে পরীর কপালে টুপ করে পড়তেই শুভ্র বেশ মলিন মুখে পরীর দিকে চেয়ে বলল-
~” বরকে তুই তোকারি করে কেউ! এত অসভ্য ভাষায় কথা বলা কবে থেকে শিখলে তুমি! আর হঠাৎ মাঝে মাঝে এত গায়ের শক্তি তোমার কই থেকে আসে?”

পরী শুভ্রের কথার জবাব না দিয়ে ওকে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে রইলো। কিন্তু শুভ্র পরীর জবাব না পেয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখলো পরী ওকে শক্ত করে ধরে আছে। পরী ছাড়ো আমায় বলতেই পরী শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে গুটিশুটি মেরে পড়ে রইলো বিছানায়।
শুভ্র উঠে নিজেকে ঠিক করে রুম থেকে বের হতেই পরী শুভ্র বলে ডেকে উঠলো। পরীর ডাকে শুভ্র মুচকি একটা হাসি দিল এবং বেশ খুঁশিই হলো।
পরীর কাছে আসতেই পরী বিছানা থেকে উঠে হাটুর উপর ভর দিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। এমন কিছুরই আশা করছিলো শুভ্র পরীর কাছ থেকে।
শুভ্র উত্তেজিত হয়ে পরীকে কিসের উপর কিস করতে লাগলো। শুভ্রেরও গলা ধরে এসেছে পরীর কান্না দেখে। সে কখনো চায়না পরীর চোখ থেকে এক ফোটাও জল পড়ুক। শুভ্র ঐ অবস্থায় বলে উঠলো-
~” আমার এঙ্গরি বার্ড! দীর্ঘ সময় ধরে তুমি আমার জিবনে অনুপস্থিত। পুরো লাইফটাই আমার অগোছালো হয়ে গেছে। আই প্রমিস, সব ঠিক করে ফেলব আমি। আমার উপর একটু ভরসা রেখ! শুভ্রের যে প্রতিটা শিরায় শিরায় পরী জন্য হাহাকার করে। পরীকে ছাড়া শুভ্র কি করে থাকবে বলো?”
শুভ্র আরো কিছুক্ষন ওভাবেই রইলো। দেন নিঝুম এলে পরীরে মোডিসিন দিয়ে চলে গেল।

আসরের নামায শেষ করে পরী কেবল ডাইনিংরুমে এসেছে, এমন সময় নীল এসে বলল-
~” আপু জলদি রেডী হয়ে নেন তো! আপনাকে আর নিঝুমকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।”
নীলের আশে পাশে থাকা শুভ্র মোটেও পছন্দ করেনা। তাই পরী সাফ ভাষায় জানিয়ে দিল সে বিজি আছে। এই সময় কোথায়ও যেতে পারবেনা। সে যেন নিঝুম কে নিয়ে যায়। পারলে সাথে আন্টিকেও যেন নিয়ে যায়। কথাগুলো বলে পরী টিভি অন করে সোফায় বসে পড়লো।
এদিকে নীল বেশ বিপাকে পড়লো। যেভাবেই হোক পরীকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। না হলে তার ৪ বৎসরের রিলেশন মাঠে মারা যাবে। কোন কিছু উপায় না দেখে ওর মায়ের কাছে গিয়ে বসে মাকে পটাতে লাগলো। এক পর্যায় ওর মা এসে কথাটা পরীকে বলতেই পরী নিরুপায় হয়ে যেতে রাজি হলো। রুমে গিয়ে বোরখা পড়ে নিঝুমকে নিয়ে বের হলো। খুব কাছেই বলে তারা ৩জনে হেটে সাহেব বাজারের শারমিন প্লাজার কাছে এসে দাড়ালো।

নীল ফোন বের করে কাকে যেন কল দিয়ে কথা বলে ফোন পকেটে পুরে ২য় তলার কাপস ক্যাফে এ্যান্ড রেস্তোরা তে গিয়ে দেখল অল রেডি ৩টা মেয়ে টেবিল বুক করে ফেলেছে। নীল এদের নিয়ে সেদিকেই যাচ্ছে। হঠাৎ নিঝুম পরীর হাত চেঁপে ধরে বলল-
~” আপু ভাইয়া আমাদের ওখানে নিয়ে যাচ্ছে কেন?”
~” দেখো গিয়ে, আমাদের কারো সাথে বাজি লাগিয়ে নিজের কার্য উদ্ধার করতে এসেছে।”
~” কি বলো আপু। এই নীল ভাইয়াকে মোটেও বিশ্বাস নেই। চলো ওকে রেখে আমরা চলে যাই।”
~” আরে দাড়াওনা, একটু সার্কাসটা দেখি না! চুপচাপ দেখে নাও, চলো…..।”
নিঝুম কিছু না বলে পরীর সাথে পা চালালো। তারপর তাদের সাথে বসে এটা বুঝতে পারলো, এই ৩টা মেয়ের মধ্য একজন নীলের জিএফ। পরী ও নিঝুম একে অপরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি হেসে নিল। কারন নীল ওদের জোর করে ওদের এনেছে এখানে। তাই তারা দু’জনেই ঠিক করেছে আজ নীলকে পথে বসাবে। নীল কিছু কথা বলতে যাবে এমন সময় নিঝুম বলে উঠলো-
~” ভাইয়া, অতিথীরা বসে আছে, খাবার অর্ডার দাও?”

নীল নিঝুমের দিকে কটমট করে তাকাকেই পরী দাড়িয়ে উঠে বলল-
~” আমি গিয়ে অর্ডার দিচ্ছি। অামাদের কিছু কাজ আছে, এখানকার কাজ সেরে আমাদের উঠতে হবে।”
পরী চলে যেতেই নীল উর্মিকে বলল-
~” উর্মি বিশ্বাস করো, নাফিসা আপু আমার কাজিন হয়। মাঝে মধ্য ওনাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যেতাম। এর ভিতর কোন ২নাম্বারি সম্পর্ক আমাদের মধ্য নেই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আমার ছোট বোনকে জিঙ্গাসা করে দেখ।”
উর্মি নিঝুমের দিকে চাইতেই নিঝুম তাচ্ছিল্যর একটা হাসি দিয়ে ভাইয়ের সাথে হ্যাঁ মিলালো। যেটা দেখে উর্মি কিছুতেই নীলকে আর বিশ্বাস করলোনা। সে সিদ্ধান্ত নিল সোজা সে নাফিসাকেই জিঙ্গাসা করবে।
এদিকে পরী ওয়েটারের কাছে কিছু খাবার অর্ডার দিতেই বুঝতে পারলো কেউ একজন তার পিছনে দাড়িয়ে আছে। ও চট করে পিছন ফিরে দেখলো শুভ্র দাড়িয়ে আছে। শুভ্রও পরীকে দেখে চমকে গেছে। ওর মুখ থেকে সহসাই বের হলো, তুমি এখানে?
পরী নিজেও ঘাবড়ে গেছে। ও তোতলাতে লাগলো। তারপর বলল-
~” আমি, নিঝুম আর নীল এখানে এসেছি।”
শুভ্র কপট রাগ দেখিয়ে চাঁপা স্বরে বলল-
~” তুমি আবার ওর সাথে ঘোরাঘুরি করছো!”
না মানে আন্টি খুব জোড় করলো, বলেই এখানে আসতে হলো বলতেই শুভ্র পরীর কথা কেড়ে নিয়ে বলল-

~” কাকি আসলে কি করতে চাইছেন তোমাকে নিয়ে! কাকির আলগা ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। যাই হোক সেই কথা। হিযাব যেন খুলতে না দেখি। ”
কথাগুলো বলে শুভ্র দাড়িয়ে রইলো যতক্ষন না পরী ওর আসনে গিয়ে বসলো। তারপর ও নিজে গিয়ে ওর আসনে বসলো। ও ওর কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে এখানেই এসেছে।
পরী বসতেই উর্মির বান্ধবী চট করে বলল-
~” ভাবী কিছু মনে করবেন না! আপনি কি সত্যিই নীল ভাইয়ার ওয়াইফ! নীল ভাইয়ার কথা ঠিক আমরা বিশ্বাস করতে পারছিনা।”
নীল আর নিঝুম ভয়ে যেন চুপসে গেল। এমন কথা তো ছিলোনা। শেষ, সব শেষ। এখন সাইক্লোন এসে সব কিছু ভেসে নিয়ে যাবে। তাছাড়া পরীর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বোমা ফাটলো বলে! পরী আসন ছেড়ে উঠে রাগী স্বরে বলে উঠলো-
~” বাসায় শুধু আসো একবার!”

হয়ে গেল। নীল করুন চোখে নিঝুমের দিকে চাইতে নিঝুমও উঠে পরীর সাথে চলে গেল। নীল তো রেগে গিয়ে উর্মির মুখের উপর বলে উঠলো-
~” ফালতু মেয়ের দল কোথাকার! তুই কি ব্রেকআপ করবি! আমিই তোর সাথে ব্রেকআপ করলাম। তোর মুখ যেন আর দেখতে না হয় আমার!”
সাথে সাথে উর্মি উঠে নীলের হাত ধরে স্যরি বলে বলল-
~” স্যরি ও বুঝতে পারেনি।”
স্যরি মাই ফুট। আজ থেকে নিজের রাস্তা নিজে মাপবি। আর যা বিল হবে সব মিটিয়ে দিয়ে এখান থেকে দফা হয়ে যাবি। আমারে আর কল দিবিনা বলেই নীল গটগট পায়ে বের হয়ে গেল।
দুর থেকে শুভ্র শুধু সব ব্যাপারগুলো দেখলো কিন্তু কিছু বললোনা।
এরই মধ্যে আকাশ হতে বৃষ্টি নামতে শুরু করে দিয়েছে।পরী নিঝুমকে নিয়ে রাস্তায় হাটছে। ওর চোখ ছলছল করছে। হয়ত পানিও ঝড়ছে চোখ হতে কিন্তু বৃষ্টির কারনে সেটা বোঝার উপায় নেই। নিঝুমও ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা। নিরব হয়ে পরীকে অনুসরন করছে। নীল আধা দৌড়ে পরীর কাছে এসে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলোনা।

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৯

বাসায় আসতে আসতে মাগরিবের আযান পড়ে গেল।
পরী এসে চেঞ্জ করে নামাযে দাড়িয়ে পড়লো। নামায শেষে মোনাজাত তুলে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ জানালো, আল্লাহ্ আর কত! মানুষের বাসায় থাকার কারনে আমার গলা দিয়ে যে ভাত আর নামে না। নিজের বাসায় যাওয়ারও কোন মুখ নেই। কেউ আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। কবে সব কিছুর সমাধান করে দিবে আমায়!
নামায শেষ করে উঠে দাড়াতেই দেখলো, নীল দাড়িয়ে আছে। আপু স্যরি বলতেই সামনে রাখা স্লিপার জোড়া তুলেই নীলের দিকে ছুড়ে মারলো পরী। নীলও সাথে সাথে স্লিপার ক্যাচ করে ধরলো।
এবার পরীর মুখ ছুটলো। তোমার সাহস কিরে হয় এমন কথা বলার! আমার চোখের সামনে একদম তুমি আসবা না। তোমাকে যেন আমি না দেখি বলে ফুসতে লাগলো পরী।
নীল আর কিছু না বলে রুম হতে চলে গেল।
পরী আর রুম থেকে বের হলোনা। এভাবে সে খানিক বাদে এশার নামাযও পড়ে নিল।
নামায শেষ করে ওর বোরখা আর জামা ধুতে গেল। তারপর সেগুলো ধুয়ে রুমে আসতেই দেখলো নীলিমা আন্টি খাটে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
নাফিসা আসো! আজ শাকিলা ভাবী দাওয়াত করে গেছে। ওখানে আজ আমরা ডিনার করবো। সুন্দর করে রেডী হও। বেশি সময় নেই বলে উনি চলে গেলেন।
আন্টির কথা শুনে পরী বেশ ঘাবড়ে গেল। শুভ্রদের বাসায় যেতে হবে! যদি কিছু উল্টা পাল্টা কাজ করে
বসি তাহলে! অহ্ আল্লাহ্ আর কি চাও তুমি বলে পরী রেডী হতে লাগলো।

পরী, নিঝুম আর নীলিমা সোফায় বসে আছে শুভ্রদের ফ্লাটে। নীল আসেনি অযুহাত দেখিয়ে। পরী চোখ বুলিয়ে এক নজর দেখে নিল পুরো ডাইনিংরুমটা। একদম রাজকীয় ভাবে সাজানো ডাইনিংরুমটা। কি নেই এখানে! সব জিনিসপত্র বাহিরের দেশের।
পরীর দু’চোখ শুভ্রকে খুঁজছে। ও কি এখনো বাসায় আসেনি! বাসায় থাকলে অবশ্যই কাছে আসতো। এসব ভাবতেই শুভ্র বাসায় ফিরে কাক ভেজা হয়ে। মারিয়া গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে। ভিতরে পরীকে দেখেই বেশ অবাক হয়ে গেল। সে এসবের কিছুই জানতো না। শুভ্রের মা এসে নিলীমার সামনে বসে পরীকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে লাগলো তার বিষয়ে। শুভ্রের মায়ের মুখে যেন ছাত্র জব্দ করা বিজয়ের হাঁসি। সে কি জেনে ফেলেছে, সামনে বসা মেয়েটিই তার ছেলের হৃদয়ের রক্তক্ষরন ভালোবাসা….!

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা শেষ পর্ব