রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৯ || নাফিসা মুনতাহা পরী

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৯
নাফিসা মুনতাহা পরী

বৃদ্ধের কন্ঠ পরীর কানের দোড়গোড়ায় পৌছাতেই ওর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো অজানা এক তীব্র যন্ত্রনায়। শুভ্র বলেই পিছন ফিরলো পরী……….।
তখন শুভ্র ফোন হাতে হতবম্ভ হয়ে সামনের দিকে চেয়ে আছে। সামনে এক ১৬/১৮ বছরের ছেলের আক্সিডেন্ট হয়েছে। সবাই তারে ধরাধরি করে তোলার চেষ্টা করছে।
পরী দু’হাতে চোখের পানি মুছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে দ্রুত পায়ে শুভ্রর কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে ফোনটা খপ করে কেড়ে নিয়ে কঠোর কন্ঠ বলে উঠলো-
~” আমি যেন দেখিনা আপনি আমার পিছনে এসেছেন। সোজা বাসায় চলে যাবেন। রাস্তায়ও যেন না দেখি। আমার একটা জবের এক্সাম আছে। সব বান্ধবীরা আসছে তাই জলদি যাচ্ছি। আশা করি সব ক্লিয়ার করে দিছি তাই একমুহুত্ত্বে জন্যও যেন রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে না দেখি!”
শুভ্রর কাছ থেকে একটু দুরে সরে এসে পরী রিক্সা নিয়ে চলে গেল। শুভ্র শুধু পরীর কথাগুলো শুনে রক্তাক্ত ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেল।

বাসস্টপে অনেক্ষন থেকে দাড়িয়ে আছে পরী। আর কিছুক্ষন পরপর হ্যান্ডওয়াচে টাইম দেখে নিচ্ছে। খানিকবাদে বাস এসে থামতেই ভীড়ের মাঝখান থেকে দিপা পরী বলে দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। দোস্ত কেমন আছিস বলতেই বাঁকি আরও ৭জন নেমে এদের সাথে যোগ দিল। তারপর কিছুক্ষন গল্প করে চারজন রিক্সা নিয়ে যে যার গন্তব্যস্থলে রওনা দিল।
দিপা, পরী, হেনা আর সোয়াদ একটা টাক্সি নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে চলে গেল।
রাস্তায় পরী ওদের উদ্দেশ্য করে জিঙ্গাসা করলো, কিরে তোরা আমার নাম্বার কই পেলি!
পেয়েছি তো অনেক আগেই। তোরে সারপ্রাইজ দিব বলে কল করা হয়নি বলে হেঁসে উঠলো দিপা।
তা বুঝলাম কিন্তু আমাদের চারজনের সিট একই জায়গায় পড়েছে এটা অবাস্তব কাহিনীর মত হয়ে গেলোনা! পরীক্ষার নিয়ন্ত্রন প্রধান কি আমাদের উপর দয়া বর্ষন করেছে নাকি! পরী কথাগুলো ওদের দিকে ছুড়লো।

~”আরে সিস্টেম করা হয়েছে অনেক আগে। এটাই তোর জন্য সারপ্রাইজ ছিল।”
সোয়াদের কথা শুনে পরী ভ্রু কুচকে ওর দিকে চেয়ে বলল-
~” টাকা ছাড়া তো এসব কাজ করা যায়না। তাহলে আমার টাকাও তোরা দিয়েছিস!”
খামোকা তোর টাকা দিতে যাব কেন আমরা! টাকা কি বলদের পাছা দিয়ে পড়ে নাকি! যার জন্য আমাদের টাকা বেশি হয়ে গেছে! আমরা তোর বাসায় গিয়েছিলাম তোরে জানাইতে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম তুই নেই। তাই সব কথা অাঙ্কেলকে বলতেই তিনি টাকাগুলো আমাদের হাতে দিয়ে দিলেন। তোর বাবা কত ভালো রে! একটা কথাও বলল না টাকার ব্যাপারে। টাকা ম্যার যাবে কিনা তা একবারের জন্যও ভেবে দেখলেন না তিনি। আমাদের মত মানুষকে বিশ্বাস করা দেখে তার প্রতি শ্রদ্ধাটা বেড়েই গেছে। কথাগুলো বলে হেনা বাহিরের প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে লাগলো।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

হেনার কথা শুনে পরীর চোখ ছলছলিয়ে উঠলো। আমি কল দিলে কখনো কল রিসিভ করে কথা বলেন না আর এদের সামনে কত ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। পরী আর কথা বলতে পারলোনা। এর মধ্য পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে ট্রাক্সি থামলো। প্রচুর মানুষের ভিড়। এত ভিড়ের মধ্য সামনে যাওয়া সম্ভব না। পরীক্ষার্থীর চেয়ে এখানে অভিবাবকই বেশি। সোয়াদ এদের ৩জনকে রেখে ভিড় ঠেলে সামনে দিকে এগিয়ে গেল পরিস্থিতি দেখতে।
~”দিপা, আমাদের কত নম্বর কক্ষে সিট বসেছে! সোয়াদ কি ওটাই দেখতে গেছে!”
পরীর কথা শুনে দিপা মুচকি হেঁসে বলল-
~” আরে নাহ্, সিট কোথায় পড়েছে সেটাতো কালই রিজভীর থেকে জেনে নিয়েছি। সোয়াদ ছেলে মানুষ তাই আমাদের মত এক জায়গায় বসে থাকার মানুষ নাকি সে!”
রিজভী কেডা বলেই পরী চোখ দুটো মার্বেলের মত করে দিপার দিকে তাকালো।
আমার কাজিন, বয়ফ্রেন্ড, হবু স্বামী। যেটা বলবি সেটাতেই পারফেক্ট সে। দিপা কথাগুলো বলে হেনার দিকে চেয়ে ফিক করে হেঁসে উঠলো।

এদের রহস্যময়ী হাসি পরী না বুঝতে পারলেও হেনা বলে উঠলো-
~” তাহলে দোস্ত, পরীক্ষা শেষে জিজুর পকেট ফাঁকা করতে পারবতো! না তুই বাঁধা দিবি হুঁ!”
আগে বিয়ে হোক তারপর তোদের পেট ভরাবো। এখন না বুঝছিস বলেই সামনে দিকে চেয়ে দেখলো সোয়াদ আসছে।
এর মধ্য সব শিক্ষার্থী ভিতরে ঢুকতে শুরু করেছে। সোয়াদ এদের নিয়ে ধীরে সুস্থে ভিতরে ঢুকে পড়লো। ২০৭ নাম্বার রুমে ঢুকে সিটের ব্যবস্থা দেখে সোয়াদ সহ সবাই খুব খুঁশি হলো। মেন মানুষ হলো দিপা। দিপার সামনে পরী। আর পরীর সামনে হেনা। দিপার পিছনে সোয়াদ।
হলে স্যার ঢুকতেই দিপা বলে উঠলো, পরী আমার জান এসেছে। দিপার কথা শুনে সবাই রিজভী স্যারের দিকে চাইলো, রিজভী স্যার দেখতে অনেকটা কুচকুচে কালো। সোয়াদ বলেই ফেলল, দিপা এ তুই কাকে পছন্দ করেছিস! বাসর রাতে ৫হাজার ভোল্টের বাতি জ্বালালেও তো এরে খুজে পাবিনা। ওরে সবসময় দেখার জন্য হ্যাচাক জ্বালিয়ে রাখতে হবে তো! এখন বুঝলাম, মেয়েরা কেন সরকারী চাকুরিজীবী চাচাদের পিছনে ঘুরে। মামা, তারা মাল্লু কামায় করে যে ঢের বেশি!

সোয়াদের কথা শুনে দিপা চাপা রাগে গর্জে উঠলো, আমার সামনে তারে অপমান করিস! সে আমার ব্লাক ডায়মন্ড বুঝেছিস! কার বয়ফেন্ডকে দেখেছিস গার্লফেন্ডের জন্য পড়াশুনা করা! আমাকে সে বসিয়ে রেখে নিজে পরীক্ষার সমস্ত কোর্স কমপ্লিট করেছে। যার দৌলতে তুই পরীক্ষা দিতে আইছোস। কথা আর বাড়াবি না বলে দিলাম।
দিপার কথা শুনে পরী মন ভার করে বলল-
~” দুনিয়ার মধ্য শ্রেষ্ঠ স্বামী তুই পেতে চলছিস দিপা।”
এই শুধু তুই আমায় বুঝলি দোস্ত। বাঁকিরা সবাই শুধু ওর গায়ের রং নিয়ে আমাকে ভর্স্যনাৎ করে।
আর কথা বলার সুযোগ পেলোনা তারা। নিজেদের ফ্রম পুরুনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তারপর প্রশ্নপত্র দিতেই সোয়াদ বলে উঠলো, দেখছিস প্রশ্ন কতো হার্ড হয়েছে!
তাতে আমার কি বলে দিপা মুখ বেঁকিয়ে আবার প্রশ্নপত্রে মনোযোগ দিল। দিপার এমন কান্ডে সোয়াদের অবস্থা, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে। এখন দিপা যে ব্লাকমেইল শুরু করবে সেটা সোয়াদ হারে হারে টের পাইছে।

এদিকে দিপা রিজভীর দৃষ্টি আর্কষন করার ট্রাই করছে। রিজভী প্রশ্ন পড়া নিয়ে ব্যস্ত। হঠাৎ রিজভী দিপার দিকে চাইতেই দিপা চোখ মেরে কাছে আসার ইশারা করলো ওকে। পরিস্থিতি এখনো সেরকম তৈরি হয়নি বলে দিপা কে না বললো রিজভী। তারপর বাহিরে চলে গেল।
পরী পিছন ফিরে দিপাকে বলল-
~” দোস্ত আমি উত্তরপত্র পুরুন করা শুরু করে দেই!”
এতটাকা খরচ করলাম নিজের মেধা ক্ষয় করার জন্য! দাড়া না, এখনো তো অনেক সময় আছে বলতেই রিজভী ওদের লাইনে এসে সিগনেচার করতে শুরু করলো। হেনার উত্তর পত্রে সিগনেচার করে যখন পরীর কাছে আসলো তখন পরীর দিকে চেয়ে বলল-
~” আজব! দু’জনেরই ‘খ’ সেট পড়েছে! দেখি আপনার প্রশ্নপত্র!”
পরী অসহায় ভাবে পিছনে দিপার দিকে চাইতেই রিজভী কিছু একটা বুঝে সিগনেচার করে দিপার কাছে আসলো এবং ওর মুঠোতে একটা কাগজ ধরে দিল। দিপা তো সেই খুশি। তারপর ও সাবধানে প্রশ্নপত্র পুরুন করতে শুরু করে দিল। এভাবে প্রায় ৩০মিনিট পার হয়ে গেল। কিন্তু লাষ্টের ৬টা প্রশ্নর কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই দিপা আবার রিজভীকে ইশারায় ডাকলো। রিজভী না করে দিল। ঐ কটা পুরুন না করলেও চলবে। কিন্তু দিপা নাছোড় বান্দা। রিজভী যখন কাছে আসলোই না তখন দিপা যা করলো তাতে পরী হতবম্ভ হয়ে গেল। নিজের বুকে ওড়না খানিকটা সরিয়ে রিজভীকে দেখিয়ে ইশারা করে বলল-

~” কাছে না আসলে পুরোটাই খুলে ফেলব।”
শেষে বাধ্য হয়ে রিজভী কাছে এসে এদিক ওদিক চেয়ে হাতের ইশারা দিয়ে প্রশ্ন সলর্ভ করে দিয়ে চলে গেল।
পরীক্ষা শেষে ৪জন হাসি খুঁশিতেই বের হলো। হেনা রিজভীর থেকে কিছু খাওয়ার কথা বলতেই দিপা ক্ষেপে গিয়ে বলল-
~” যা পেয়েছিস অনেক হয়েছে। বললাম না বিয়ের পর! চল আমি তোদের খাওয়ায়।”
দিপার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পরী বলল-
~” চল আমার বাসায়। দুপুরের খাবার খেয়ে হয় থাকিস না হয় রেস্ট করে বিকেলের বাসে চলে যাস।”
তুই নিজেই থাকিস অন্যর বাসায় আর আমাদের দাওয়াত দিচ্ছিস! দরকার নেই বলে ওদের সবাইকে নিয়ে সোয়াদ একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।
ফাকা একটা জায়গা দেখে ওরা বসে খাবার অর্ডার দিল। খাবার আসতে দেরী হওয়াতে সোয়াদ দাঁত কেলিয়ে বলল-
~” পরী, দিপার হবু স্বামীর দাঁতগুলো দেখলি! কি চকচকে। হাজার ভোল্টের বাতিতে তাকে না দেখা গেলেও তার দাঁতে ঝিলিকে পুরো রুম আলোকিত হয়ে যাবে।”

আর যাবে কোথায়! দিপা স্থান, কাল, পাত্র ভুলে কোমড় বেধে সোয়াদের সাথে ঝগড়ায় লেগে গেল। না হেনা দিপাকে থামাতে পারছে না পরী থামাতে পারছে। তুই সবসময় ওর পিছে লাগিস বলেই দিপা কাঁদতে লাগলো।
শেষে যখন রিজভী ওদের কাছে এসে দাড়ালো তখন দিপা একদম চুপ। ও কোথা থেকে এলো। আর লোকেশান বা কই থেকে জানলো!
এত চিন্তা করছিস কেন লাইলী! তোর মজনুরে আমিই আসতে বলেছি। তার সাথে তো হিসাব এখনো অনেক বাঁকি রয়েছে।
সোয়াদের কথার মাঝে আরও চারজন এসে এদের সাথে যোগ দিল। অনেক আড্ডা দিল সবাই মিলে। শেষে পরী একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এলো।
পরীর মন আজ খুব ভালো। সবার সাথে এমন আড্ডা অনেক দিন পর হলো। অবশ্যই দিপা ওকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিঙ্গাস করেছিল, শুভ্রের কথা। দেখ পরী, এভাবে তো আর জিবন চলে না। বিয়ে করে নে। এভাবে আর কত দিন! আঙ্কেলকে দেখে মনে হলো, উনি তোকে নিয়ে খুব আপসেটে থাকে। আর আন্টি! উনিতো আমাদের সামনে কেঁদেই ফেলেছিলেন। মনে হলো ওনাদের সাথে তোর তেমন একটা যোগাযোগ নেই। বাবা মায়ের সাথে কেউ এমন করে! যার জন্য এসব করছিস সে তোরে পাত্তাই দেয়না। শুধু শুধু জিবন নষ্ট করছিস।

পরী কোন জবাব দিতে পারেনি। জবাব দেওয়ার মত কোন উত্তরই তার জানা ছিলোনা। শুধু কয়েকফোটা চোখের জল ফেলেছে দিপার সামনে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বাসায় এসে পৌছে গেছে তার কোন হুস নেই। রিক্সা চালক আপা বলে দু’বার ডাকতেই পরীর হুস ফিরে এলো। আশেপাশে চেয়ে দেখলো বাসার একটু দুরে রিক্সা থামিয়েছে।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাসার দিকে হাটতেই ওর চোখে পড়লো মেন দরজা পুরোই খোলা আর ভিতর থেকে অঢেল পানি ধারা বের হয়ে এসে রাস্তা ডুবিয়ে দিচ্ছে। দরজার সাধারনত পকেট দরজা খোলা থাকতো। গাড়ী বের করার সময় পুরো দরজা খোলা হত। কিন্তু আজ দরজা হাট করে খোলা আছে এবং ভিতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
অসাবধানতায় হাটতে গিয়ে পরীর পা মোচরে পড়ে গেল আর ও ঐ অবস্থায় রাস্তায় বসে পড়লো। মেন রাস্তা ছিল বিধায় একটা প্রাইভেট কারও সামনে এসে ব্রেক কষলো।
গাড়ীর ডাইভার জানালার কাঁচ নামিয়ে বকাঝকা করতেই পরী অনেক কষ্টে উঠতে গিয়েও উঠতে পারলোনা। তারপর আবার বেশ কষ্টকরে সে উঠে দাড়ালো। বাম পায়ের জুতার ফিতা ছিড়ে গেছে। জুতা জোড়া হাতে নিয়ে খোড়াতে খোড়াতে বাসার গেটের কাছে এসে দাড়িয়ে দেখতে পেল ভিতরে মানুষের জটলা।

গেটে দাড়োয়ানও নেই।
অনেক কষ্টে ভিতরে গিয়ে দেখলো শুভ্রের মেঝ চাচা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে আর মাথায় পানি ঢালছে তার ছেলে। পরীকে ঐ অবস্থায় দেখে নীলিমা কাছে এসে উৎকন্ঠা হয়ে বলে উঠলো-
~” মা তোমার কি হয়েছে! জুতা ছিড়লো কিভাবে!”
পা একদম ফুলে গেছে। ব্যাথায় মুখটা নীল হয়ে গেছে মেয়েটার। কিছু বলতে যেতেই শুভ্রের মা শাকিলা বেগম নীলিমাকে ডাক দিল। নীলিমাও পরীকে দ্রুত উপরে যেতে বলে বলল, আমি আসছি তুমি যাও। তারপর ভিড়ের মধ্য হারিয়ে গেল।
পরী আস্তে আস্তে সিড়ির কাছে গিয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো, সিড়ি দিয়ে না গিয়ে লিফ্ট ব্যবহার করলেই ভালো হবে। কথাগুলো ভাবতেই শুভ্র ঝড়ের বেগে নিচে নামতে লাগলো। সামনে যে কেউ আছে সেটা দেখার মত তার সময় হলোনা। শুভ্রের ধাক্কা খেয়ে পরী ফ্লোরে পড়ে গেল। শুভ্র শুধু স্যরি বলে সামনে এগিয়ে গেল। কার সাথে ধাক্কা খেল সেটা দেখারও প্রয়োজনবোধ মনে করলোনা।
এদিকে পরীর অবস্থা যায় যায় আরকি! ব্যাথায় অবশেষে সে কেঁদেই ফেলল। আঘাতের উপর আঘাত।
শুভ্র ওর চাচার কাছে আসতেই চাচা চোখ খুলে বলল-

~”ভাতিজা আমি শেষ। আমি মনে হয় মরে যাচ্ছি। শুভ্র আজরাঈল আসিতেছে। “লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।” আজরাঈল আসিতেছে…….বাপ.!”
~”গাঞ্জা কয় পুরা মেরে দিয়েছিলেন!”
শুভ্রের কথা শুনে ওর মা ছাড়া চাচীরা হতবম্ভ হয়ে গেল। ওর মা তো সবার মধ্যে বলে উঠলো-
~” কি সব উল্টা পাল্টা বকছিস।”
আমি ঠিকি বলছি মা। চাচা গাঞ্জা সেবন করিয়া মিষ্টি খাইছে। সেটার লোড আর নিতে পারছেনা। এই জন্য এমন উল্টা-পাল্টা বকছেন। যারা খাওয়াইছে তারাই দাড়োয়ানকে ব্যাপারটা জানাইছে। ছেলে মেয়ে ওনার বড় হয়ে গেছে তবুও উনি এসব ছাড়তে পারলেন না বলে শুভ্র ওখান থেকে বের হয়ে সিড়ির কাছে আসতেই দেখলো পরী অনেক কষ্টে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।
ওহ গড, আমি পরীর সাথে ওমন করে ধাক্কা খাইছি বলেই দ্রুত পরীর কাছে গিয়ে অচমকায় পরীকে পাজা কোল করে উপরে উঠতে লাগলো।

অচমকায় এমন কান্ডে পরীর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। ততক্ষনে শুভ্র ওকে নিয়ে দ্রুত ৪ তলায় চলে এসেছে। শুভ্র বলে কঠোর স্বরে একবার ডেকে উঠলো পরী। কিন্তু পরীর কথার কোন পাত্তা না দিয়ে ফ্লাটে ঢুকে পড়লো শুভ্র। বাসায় তখন শুধু নিঝুম ছিলো। নিঝুম ভেবেছিল ওর মা এসেছে তাই ওর রুম থেকে বের হতেই পরীকে দেখলো, ও সোফা ধরে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু চোখমুখের অবস্থা বড্ড খারাপ দেখে নিঝুম বলল-
~” আপু তোমার কি হয়েছে!”
~” তোর আপু পরীক্ষা দিতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে হা-ডুডু খেলে পা ভেঙ্গে বাসায় ফিরেছে। তা তোর নাফিসা নামক মুভি দেখা যদি শেষ হয় তাহলে মেডিসিন বক্স নিয়ে ওর রুমে আয়।”
জ্বী ভাইয়া বলে মাথা নিচু করে নিঝুম চলে গেল। নিঝুম চলে যেতেই পরীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার ওকে চট করে কোলে নিয়েই পরীর রুমে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিতেই পরী শুভ্রকে দু’হাতে জোরে একটা ধাক্কা দিল। কিন্তু শুভ্রকে একচুল পরিমানও সরাইতে পারলোনা পরী।
তোর গায়ে শক্তি আছে বলতে হয় বলেই জোড়ে নিঝুমকে ডেকে উঠলো শুভ্র।
নিঝুমকে ডাকতেই পরী অগ্নিমূর্তি হয়ে বলল-
~” আপনার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই! আমি চাইছিনা আপনি আমার সামনে যেন না আসুন। তারপরও আবার কেন বার বার আসছেন?”
~” সব জায়গায় আমার লজ্জা, দম্ভ থাকলেও এই এক জায়গায় আমি একে বারে নিলজ্জ। তাতে তোর কোন সমস্যা আছে!”

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৮

~” সমস্যা! প্রকট সমস্যা আছে। আমি চাইনা নিঝুমের সামনে আপনাকে অপমান করতে। তাই আমার সামনে থেকে চলে যান বলছি! একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। তা না হলে কিন্তু…….!”
পরীর কথা কেড়ে নিয়ে শুভ্র বলল-
~” তা না হলে কি করবি তুই!”
শুভ্রের কথা শেষ হওয়ার আগেই নিঝুম এসে শুভ্রের দিকে বক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলল-
~” ভাইয়া আর কিছু লাগবে!”
হুম লাগবে তো বলেই শুভ্র বলল-
~” বেডে যে ওড়না আছে সেটা এখানে নিয়ে এসে পরীর দু’হাত পিছন থেকে বেঁধে ফেল তো! তোর আপুর মাথার স্কু এমনিতেই ঢিলা। এই অবস্থায় ও টিটমেন্ট করতে দিবে না। যা জলদি কর।”
এই নিঝুম না বলতেই নিঝুম ওড়না এনে পরীর দু’হাত পিছন দিক থেকে বেঁধে ফেলল। এবার ডান পা টাও বেঁধে ফেল। শুভ্রের কথা শুনে নিঝুম সেটাও করলো। কিন্তু পরী এদিকে চেঁচিয়েই চলছে। তাই শুভ্র বলল-
~” তোর আপুকে বল, বেশি চিৎকার চেঁচামেচি করলে কিন্তু মুখে একদম সুপার গ্লু মেরে দিব। ও আমাকে না চিনলেও তুই তো আমায় চিনিস নাকি! আমি কি কি করতে পারি!”
নিঝুম মাথা নাড়িয়ে বলল-
~” আপু একটু চুপ করো না! ভাইয়া তো তোমার ভালোর জন্যই এসব করছে।”
শুভ্র এদিক ওদিক চেয়ে একটা পেপার আর কলম নিয়ে তাতে একটা মেডিসীনের নাম লিখে নিঝুমের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলল-

~” সামনের দোকান থেকে মেডিসিনটা নিয়ে আয় তো! জলদি আসবি।”
ওকে ভাইয়া বলে নিঝুম দ্রুত চলে গেল। এদিকে শুভ্র কোমড়ে হাত দিয়ে বলল-
~” এবার আয় আমার কাছে! দেখি তোর পায়ের কত জোড়!”
এতক্ষন যা যা করেছে শুভ্র তাও নিঝুমের সামনে। আর এখন তো একা। পরী ভাবতে পারছেনা আর কিছু। তাই কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।
এই তো গুড গার্ল বলে এসিটা অন করেই শুভ্র পরীর হিযাব খুলে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো ওর দিকে। তারপর লম্বা একটা কিস করলো ওর কপালে। দেন ওর পায়ের কাছে বসে পা টান করতেই ও ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো। শুভ্র পরীর দিকে শুধু একবার চেয়েই প্লাজুটা হাটুর উপরে তুলে পা মোচরের জায়গায় ঠান্ডা জেল লাগিয়ে দিয়েই বলল-
~” মাথায় ঢুকিয়ে নাও সর্বদার জন্য; এখনো এক মানুষ তোমায় ভালোবাসে…., প্রচন্ড ভালোবাসে।”

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ১০