রক্তক্ষরণ অপেক্ষা শেষ পর্ব || নাফিসা মুনতাহা পরী

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা শেষ পর্ব 
নাফিসা মুনতাহা পরী

শাকিলা বেগম পরীকে যখন বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন বিদ্ধ করতে ব্যস্ত তখন নীলিমা চট করে বলে উঠলো-
~” ভাবী, মারিয়ার সাথে শুভ্রর কি আসলেই বিয়ে হয়েছে! না মানে, ইউরোপ দেশগুলোতে আগে বেড তারপর বেবি তারপর গিয়ে বিয়ে। শুভ্রের ক্ষেত্রেও কি এমন ঘটনা ঘটেছে!”
নীলিমার প্রশ্নে শাকিলা বেগম কিছুটা ভড়কে গেল। কারন বিয়ের ব্যাপারে শুভ্র তাকে কোনদিন কিছুই বলেনি। যা বলেছে সব মারিয়া বলেছে। বরং সে ছেলের কোন কথায় শুনতে চায়নি।
শুভ্র একটা টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে পরীর দিকে চেয়ে হাসার চেষ্টা করলো। তারপর সোজা ওর রুমে চলে গেল।

এদের কথা শুনে মারিয়া নীলিমার পাশে বসে মাথা নিচু করে লজ্জিত কন্ঠে বলে উঠলো-
~” আন্টি আমি প্রেগন্যান্ট।”
কথাগুলো শুনে পরী স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু ওর হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো। নীলিমা আর নিঝুম চট করে পরীর দু’হাত দু’জনে শক্ত করে চেঁপে ধরলো।
সব স্বাভাবিক হতেই কাজের মেয়ে বিন্তি সবার জন্য চা নাস্তা নিয়ে এলেন। শাকিলা বেগম আরো কিছু নেওয়ার জন্য রান্না ঘরে চলে গেলেন।
এই সময় শুভ্রর ফুফু সহ ওর চাচাদের পরিবারের অনেকে চলে আসলেন। মারিয়াও কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।
সবাই নাস্তা ও চা খেলেও পরী চুপচাপ বসে ছিল। কারন ও এভাবে খালি চা খায় না। আগে বরফ গলা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করবে দেন খুব কড়া লিকারে চা পান করবে।
অনেকে বলল, সে কেন খাবার খাচ্ছেনা। পরী সৌজন্যতার জন্য নাস্তা তুলে মুখে পুরে চুপচাপ বসে রইলো কিন্তু চায়ে মুখ দিল না।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

রুম থেকে শুভ্র বের হয়ে কাজের মেয়ে বিন্তিকে চা দিতে বলে ডিপ থেকে আইস কিউব দিয়ে গ্লাস ভরে নিয়ে সেখানে অল্প একটু নরমাল পানি মিশাতেই বিন্তি চায়ের মগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। শুভ্র সেখানে আরো দুটা টি-ব্যাগ দিয়ে চিনি ও দুধ মিশিয়ে পান করতে করতে ডাইনিং রুমে এসে পরীর সামনে গ্লাস আর চায়ের মগ রেখে অন্য দিকে চলে গেল।
শুভ্র কাজগুলো এতদ্রুত করলো যে পরী ওর দিকে চাওয়ার সময়টুকু পেলোনা।
সবার চোখ এড়িয়ে এমন কাজ করলেও নীলিমা এবং মারিয়ার চোখে তা ধরা পড়লো, পরীর প্রতি শুভ্রের এমন গভীর ভালোবাসা।
মারিয়া তখন কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে রেগে ফুলে উঠলো। পরীর চোখ শুভ্রকে খুঁজতেই শুভ্র আড়াল থেকে বের হয়ে সবার সাথে এসে বসে আড্ডা দিতে লাগলো। আড্ডার ফাঁকে পরীকে ইশারা করলো চা পান করতে।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঠান্ডা পানি খেয়ে চায়ের মগ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সে। এর মাঝে শুভ্রের ফুফু আরিফা বেগম সবার মধ্যে বলেই ফেলল, নীলিমা তোমার ভাতিজী তো মাশাআল্লাহ অনেক কিউট। তা ওর বিয়ে শাদী দিবেন না তার বাবা-মা! বয়স তো কম হলোনা। আমি স্পষ্ট কথায় বলতে পছন্দ করি। আমাদের আরাফাতের জন্য এমনই টুকটুকে বউ খুঁজছি। তুমি কি নাফিসার বাসায় কথা বলে দেখবে! না হয় আমাকে তার বাবার নাম্বার দাও। আমি নিজেই যোগাযোগ করবো।
এমন কথা শুনে শুভ্র চোখ গরম করে ওর ফুফুর দিকে চাইলো। নীলিমা তার ননদের দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে বলল-
~” আপা, ওর মাস্টার্স শেষ না হওয়া অব্দি বিয়ের কোন কথাবার্তা চলবে না। এটা ওর বাসা থেকে আগেই বলা হয়েছে।”
~” তো কি হয়েছে? বিয়ের পরও তো পড়া লেখা করা যায়। বিয়ের পর না হয় পড়াশুনা চালিয়ে যাবে! আমার ছেলে তো কোন অংশে কম না। বিএসসি কমপ্লিট করেছে। সরকারী জব করছে। এমন পাত্র সবাই পেতে চায়। তুমি বরং ওর বাবার সাথে একটু কথা বলে দেখ।”
কথার ভিতর ফোড়ন কেটে শাকিলা বেগম বলল-
~” আরিফা পরে ওসব আলোচনা কইরো। আমার সাথে আসতো! সবাইকে খাবার দিব। তুমি একটু হেল্প করো। নীলিমা তুইও উঠে আয়।”

মা উঠে যেতেই আরাফাত পরীর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। নাহ্ মেয়েটা দেখতে ভালোই। আর সবথেকে বড় কথা সবার সামনে সেই যে মাথা নত করে আছে, এখন অবদি মাথা উচু করে নি। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে একদম পরীর কাছে প্রায় গা ঘেঁষেই বসে পড়লো আরাফাত। অচমকায় এমন কান্ডে পরী লাফ দিয়ে উঠে দাড়াতেই ওর হাত থেকে মগ পড়ে গেল আরাফাতের হাটুর উপর।
অহ্ শীর্ট বলেই আরাফাতও উঠে ওর প্যান্ট ঠিক করতে লাগলো। তারপর পরীর দিকে চেয়ে চাপা গলায় বলল-
~” তোমাকে যতটা স্মার্ট মনে করেছিলাম তুমি ততোটাও স্মার্ট নও। তবে যা আছো তাতেই তুমি পরিপূর্ন।”
আরাফাতের এমন কথায় পরী অসহায়ের মত শুভ্রের দিকে চাইলো। শুভ্র ব্যাপারটা বুঝেই আরাফাতকে কাছে ডেকে ওর সাথে কথায় মশগুল হয়ে গেল।

সবাইকে ডাইনিং টেবিলে ডাকলো নীলিমা। ডাইনিং টেবিলে পরী আর নিঝুম গিয়ে আগে বসল। আরাফাত আবার চান্স নিতে যাবে এমন সময় কোথা থেকে নীল এসে পরীর পাশে বসল। নীলকে দেখে পরী মোটেও অবাক হলোনা। বরং মনে মনে খুশিই হলো। যা হোক ও হয়ত আর রেগে নেই। সবাই বসে খাবারে মনোযোগ দিতেই শুভ্রের মা হঠাৎই বলে উঠলো-
~” আগামী সপ্তাহে শুভ্র আর মারিয়ার আবার বিয়ে দেওয়া হবে। সাথে মারিয়া ইসলাম ধর্মও গ্রহন করবে। সবাইকে নিমন্ত্রন করার জন্য এই আয়োজন। আমি চাইনা আমার ছেলেকে কেউ প্রশ্ন বিদ্ধ করুক।”
কথাগুলো বলে নীলিমার দিকে চাইলো শাকিলা। নীলিমা তাচ্ছিল্যর একটা হাসি দিয়ে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করলো।
মারিয়া ভিষন খুঁশি। সে এতই খুঁশি হলো যে স্থান, কাল ভুলে শুভ্রের বাম হাতে এবং গালে কিস করলো সবার সামনে।
এটা হয়ত মারিয়ার জন্য স্বাভাবিক হলেও বাঙ্গালিদের জন্য মোটেও স্বাভাবিক নয়। সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিলোনা। এমনকি শুভ্রও চয়াল শক্ত করে মারিয়ার দিকে চাইলো।

মা সবার মাঝে এমন আচরন করতে নেই বলে শাকিলা মারিয়াকে আদুরে গলায় বুঝিয়ে দিল। পরিস্থিতি যখন মোটামুটি স্বাভাবিক তখন হঠাৎ পরী খাবার ছেড়ে কাউকে কিছু না বলে রান্না ঘরের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল। পরীর সাথে নিঝুমও উঠে চলে গেল। পরী বেসিনে দ্রুত হাত ধুয়ে শুভ্রদের ফ্লাট থেকে বের হয়ে কিছুক্ষন ভেবে আবার ছাদে চলে গেল।
নিঝুম বের হতেই শাকিলা বেগম বলে উঠলেন-
~” কিরে, তোদের এত জলদি খাবার হয়ে গেল! পাতের খাবার তো সব পড়ে আছে।”
নিঝুম পিছন ফিরে মাথা নিচু করে বলল-
~” আমার খাওয়া হয়ে গেছে বড়আম্মু।”
কথা বলেই ও দ্রুত দরজা খুলে বের হয়ে গেল। প্রথমে ওদের ফ্লাটে গিয়ে দেখলো দরজা লক করাই আছে। আপু কই যেতে পারে বলতেই ওর মাথায় ছাদের কথা এসে যায়। ও দ্রুত ছাদের উদ্দেশ্য লিফটে গেল।
হ্যাঁ তার ভাবনা সত্যি। পরী ছাদের রেলিং ঘেষে বসে মুখে হাত চেপে ধরে অঝোরে কান্না করছে। নিঝুমও বুঝে গেছে আপু কেন কাঁদছে। তাই দ্রুত পরীর কাছে যেতেই পরী চুপ হয়ে যায়।
নিঝুম পরীর গায়ে হাত দিতেই ও শব্দ করে কাঁদতে লাগলো। পরীর কান্না দেখে নিঝুম হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। সে পরীর দু’হাত ধরে ওকে তোলার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা। অঝোড়ে কেঁদেই চলল পরী।

কিছুসময় পর শুভ্রও এলো ছাদে। শুভ্রকে দেখেই পরী ক্ষিপ্ত হয়ে বসা থেকে উঠেই শুভ্রের দিকে ছুটে গেল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল-
~” তুমি আবার কেন এসেছ! আমি চাইনা তুমি আমার জিবনে আর ফিরে আসো।”
পরীর এমন পাগলামো দেখে শুভ্র ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু বেশিক্ষণ রাখতে পারলোনা। পরী শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে ওখানেই হাটু ভাঁজ করে বসে পড়লো নিজের মাথার চুল নিজেই খামচে ধরে। তারপর চিৎকার দিয়ে বলল-
~” নিঝুম, তোমার ভাইয়াকে এখানে চলে যেতে বলো। সে শুধু চুপ করে তামশা দেখতে শিখেছে। ন্যায় অন্যায় বিবেচনার শক্তি তার ভিতর নেই। তাকে চলে যেতে বলো।”
পরীর হৃদয় বিদারক কান্না দেখে নিঝুম আরো জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলো। দুটা মেয়ের করুন কান্নায় মনে হয় আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে যাচ্ছে।
শুধু দুটো মেয়ে কাঁদছেনা, কাদছে শুভ্র নিজেও। সেও দাড়িয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। ৩জন ৩প্রান্তে কান্না করছে। ঘন্টাখানেকেরও বেশি এখানে তাদের অবস্থান। শুভ্র নিঝুমকে নিচে যেতে বলল। নিঝুম যেতে চাইলোনা পরীকে ছাড়া। কিন্তু শুভ্র আবার বলতেই নিঝুম চলে গেল। শুভ্র পরীকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় পরী ছুটে ওখান থেকে বের হয়ে গেল।

তিনদিন পর এক বিকেল বেলায়,
পরী নিজের রুমে বসে ওর বাবাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর বাবা রিসিভ করছেনা। লাষ্টে ওর নাম্বার ব্লাক লিষ্টে রেখে দিয়েছে। এমন কান্ড দেখে পরীর চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝড়তে লাগলো।
নীলিমা পরীর রুমে উকি দিয়ে দেখলো পরী কাঁদছে। তিনি দরজায় কয়েকটা টোকা দিয়ে বললেন-
~” মা, আসবো!”
পরী দ্রুত চোখ মুছে মুখে মিথ্যার হাসি ফুটিয়ে ভিতরে আসতে বললো।
নীলিমা রুমে প্রবেশ করে পরীর ডান হাতটা কাছে টেনে নিয়ে বলল-
~” মা শুভ্রকে ভুলে যাও। এখন ওর নিজের সন্তান পৃথিবীতে আসতে চলেছে। তার জিবনে ফিরে যাওয়া মানে একটা মেয়ের সর্বনাশ করা। তুমি ওমন পথে আর হেটো না।”
পরী হাসার চেষ্টা করলো একটু। তারপর বলল-
~” আন্টি আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাসায় চলে যাব। আমিও অনেক ভেবে চিন্তে এই ডিসিশন নিয়েছি। আপনাদেরও ঝামেলায় ফেলতে চাইনা। মাস্টাস্ না হয় পরের বছর কমপ্লিট করবো।”
পরীর কথা শুনে চমকে উঠলো নীলিমা। তখনি তার মুখের দৃশ্যপট এমন করে চেঞ্জ করলো, যেটা দেখে যে কেউ বলবে তার সমস্ত প্লানে কেউ জল ঢেলে দিল। তিনি ভ্রু কুচকে মুখে কঠোরতা এনে জিঙ্গাসা করলো-

~” এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারন কি শুধু শুভ্রই!”
পরী অবাক হয়ে আন্টির দিকে চেয়ে রইলো। তাহলে শুভ্র কি ঠিকি বলতো! আন্টি কোন খেলায় আমাকে নিয়ে মেতে উঠেছেন? আমি কি তাহলে তা খেলার চ্যাল। বাবার সাথে কি তার আগে থেকেই দন্দ আছে! এসব কথা ভাবতেই নীলিমা হঠাৎ পরীর কাছে একটা প্রস্তাব রাখলো। পরী তুমি যদি নীলকে বিয়ে করো তাহলে তুমি শুভ্র আর ওর পরিবারকে শায়েস্তা করতে পারবে।
এবার পরী বুঝতে পারলো কিছু একটা চলছে আন্টির মনে। তাই ও চট করে বলল-
~” আন্টি নীল আমার বয়সের ছোট। আপনি এমন কথা কিভাবে বললেন? আর আমি কখনো বিয়ে করবোনা।”
বয়স তো কোন ফ্যাক্ট না মা। আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলব। তুমি শুধু রাজি হও। তারপর দেখ শুভ্র আর ওর মায়ের কি হাল করি। কথাগুলো বলে নীলিমা উঠে চলে গেল পরীর কাছ হতে। পরীকে কোন কথা বলার আর সুযোগই দিলোনা।
নীলিমা যেদিন পরীকে ওর আয়ত্বে আনতে পেরেছিল সেদিন থেকে ওর মাথায় একটা প্লান ঘুরছিল। পরীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কামরুল সাহেবের চরম ক্ষতি করা। আজ মেয়ের সাথে মিল নেই কিন্তু একটা সময় অবশ্যই মিল হবে। তারপর সে তার খেলা দেখাবে।

নীলিমা চলে যেতেই পরী অস্থির হয়ে উঠলো। এখন সে কার কাছে যাবে! না বাবার কাছে না কোন আত্বীয়-স্বজনের কাছে। এসব ভাবতে ভাবতে সে ব্যালকোনিতে চলে গেল।
নীলিমা গিয়ে নীলকে পরীর কাছে পাঠিয়ে দিল। নীল রুমে এসে দেখলো পরী নেই। এদিক ওদিক খুজতেই ব্যালকোনিতে পরীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও পরীর কাছে এগিয়ে গেল।
কারো আসার শব্দ পেয়ে পরী চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হয়ে চুপ করে রইলো।
নীল পরীর পাশে দাড়িয়ে কিছু বলতেই পরী নীলের কথা কেড়ে নিয়ে ওকে প্রশ্ন করলো, আন্টি কি তোমাকে কিছু বলেছে?
নীল খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল-
~” হ্যাঁ সব কিছু বলেছে।”
~” তোমার কি অভিমত!”
~” আপনার খুঁশি। আপনি খুশি হলে যেকোন কাজই আমি করতে পারি। আম্মু বলল, আপনি নাকি রাজি হয়েছেন। আমার দিক থেকে কোন আপত্তি নেই।”
এমন কথায় সপাটে নীলের গালে একটা থাপ্পড় আছড়ে পড়লো। তারপর পরী চিৎকার দিয়ে বলল-
~” তোমরা মা ছেলে চাইছোটা কি! রক্ষক হয়ে আমাকে ভক্ষন করতে চাইছো তোমরা!”
নীল গালে হাত দিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল-

~” কি করবো আপু! আমি হয়ত আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আপনাকে ভালোবাসি বলেই বাসার বাহিরের রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকি আপনার কান্না দেখার জন্য। আপনি আপনার ব্যালকোনিতে কান্না করেন আর চোখ মোছেন। আর আপনার উপরে শুভ্র ভাইয়াও মলিন চেহারায় দাড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যালকুনিতে । আপনি রুমে ঢুকলে আরো লং সময় কাটিয়ে উনিও রুমে ঢোকেন। তখন বুঝে যাই আপনার সাথে শুভ্র ভাইয়ার কিছু একটা আছে। আর তার কিছুদিন পর সেটার প্রমানও পাই। আপনার কষ্ট দেখে নিজেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, যেই পরিস্থিতে পড়িনা কেন! আমি কখনো আপনার হাত ছাড়বোনা। আল্লাহ্ যদি কখনো সুযোগ দেয় তাহলে এর পূর্ন ব্যবহার আমি করবো। আজ খুব খুশি হয়েছিলাম আম্মুর কথা শুনে। হয়ত আল্লাহ্ আমার উপর রহম করেছেন।”
বাহ্ ৪বছরের রিলেশন এক নিমিষেই যে ভাঙ্গতে পারে তার উপর সবাই বিশ্বাস করলেও আমি পরী কখনো বিশ্বাস করতে পারবোনা। আর আমি কখনো বিয়ে করছিনা। আমি সর্বোঅবস্থায় নিজেকে আয়ত্বে রাখতে জানি। কথাগুলো বলে পরী অন্য দিকে চাইলো।
আপনার জানার ভিতর অনেক ভূল আছে। হয়ত আপনি শুভ্র ভাইয়াকেও এমন ভুল বোঝেন বলে নীল দ্রুত পায়ে পরীর রুম থেকে চলে গেল।

পরী জানতোনা শুভ্রও ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে থাকে প্রতিদিন। শুভ্রর তো জানার কথা নয় আমি কি করি না করি! এমনকি আমাদের ফোনেও কথা হয়না। নাহ্ আর ভাবতে পারছিনা। এই বাসায় থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আকাশে অনেক মেঘ জমেছে।
পরী রুম থেকে বের হতেই নীলিমা পরীর হাতে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল-
~” এই ছেলে মানুষদের কোন কায়া নাই বুঝলে মা! শুভ্রের বিয়ের কার্ড দিয়ে গেলো শুভ্রের বোন আনহা। আজ নাকি মারিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে। তার প্রসংসায় প্রঞ্চ মুখ আনহা। এরা পারেও বটে অন্য সংসার জ্বালাতে।”

পরী কার্ডে চোখ বুলিয়ে দেখলো, শুভ্রের পাশে মারিয়া আদনান নাম শোভা পাচ্ছে। সেটা দেখে পরীর বুক যেন ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। কার্ডটা টেবিলের উপরে রেখে পরী পা বাড়াতেই নীলিমা বলল-
~” এই সন্ধ্যায় কই যাও! আকাশে তো মেঘ জমেছে। একটু পর বৃষ্টি নামবে!”
নিচে যাব, নিঝুমকে একটু পাঠিয়ে দিন বলেই পরী দরজা খুলে চলে গেল। সবাই ছাউনির নিচে আশ্রয় নিচ্ছে বৃষ্টি নামবে বলে। কেউ তাড়াহুড়ো করে বাসার পথে রওনা দিয়েছে। প্রচুর বাতাস হচ্ছে। শরীরের কাপড় অবাধ্যর মত উড়ে চলছে। এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি এলো। এখনই সবথেকে উপযুক্ত সময় কাঁদার জন্য। তাই পরী প্রান খুলে কাঁদছে নিঃশব্দে। এমন সময় পরী বলে কেউ ডাকতেই পরী আরো দ্রুত পা চালালো। কোথায় যাবে সে জানেনা। কিন্তু পিছনের মানুষটার কাছে আর ধরা দিবেনা সে।
শুভ্র একপ্রকার দৌড়েই পরীর হাত ধরে জোড় করে একদিকে টেনে আনলো। একটা সাততলা বাসার ২তলায় নিয়ে গেল পরীকে। বাসাটি এখনো কমপ্লিট হয়নি।

পরী শুভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ওর কাছ থেকে। শুভ্র আবার ওর কাছে আসলে পরী ফের ওকে সরিয়ে দিল পরী। শেষে শুভ্র মলিন মুখে বলল-
~” এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছো তুমি!”
~” আমি যেখানে খুশি সেখানে যাই। তাতে কার কি!”
~” আমার অনেক কিছু।”
এবার পরীর ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল। ও চিৎকার দিয়ে বলল, কেউ শুনছেন! আমি এই ধোঁকাবাজটাকে নিজের জিবনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি। এর জন্য আমি আমার বাসা ছেড়েছি। কিন্তু সে কি করেছে! প্রতিটা মুহুত্বে আমাকে কষ্ট দিয়েই চলছে। শুভ্র পরীকে বার বার থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পরীর গায়ের শক্তি যেন বেশিই বেড়ে গেছে।
সে আরও জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলল-
~” আমি কি তাকে আমার জিবনে আসতে বলেছিলাম! সে জোড় করে এসেছে আমার জিবনে। আর এখন আমাকে মাঝপথে ছেড়ে অন্যর হাত ধরতে যাচ্ছে।”
এবার শুভ্র পরীকে এত জোড়ে একটা ধমক দিলো যে পরী কেঁপে উঠলো। ব্যস অনেক হয়েছে। মুখে যা খুশি তাই আউড়াচ্ছে। আমার কথাতো শুনবে! এই চলো বলে পরীর হাত ধরে টেনে বাসা থেকে বের হলো। চল আজ তোকে সব জানাবো।

শুভ্র পরীকে বাসায় নিয়ে আসলো। নিঝুম দাড়িয়ে ছিল নিচে। পরীকে দেখে কাছে আসতেই ওকে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে পরীকে নিয়ে শুভ্র ওদের ফ্লাটে চলে গেল।
দরজায় কলিং বেল বাজতেই মারিয়া দরজা খুলে দিল। মারিয়া শুভ্রকে ভেজা অবস্থায় দেখে কিছু বলতে যাবে এমন সময় শুভ্র বলল-
~” আসো পরী।”
পরীর নাম শুনে মারিয়ার কলিজা মনে হয় নড়ে উঠলো। শুভ্রের দুই বোন সহ ওদের স্বামী আর ওর মা সোফায় বসে কিছু নিয়ে আলোচনা করছিল। পরী ভয়ে ভয়ে একদম শুভ্রের পিছন গিয়ে দাড়ালো ওর হাত ধরে। মারিয়ার কাছে এমন দৃশ্য বড্ড কষ্টের। এতদিনে সে শুভ্রকে টার্চও করতে পারেনি কিন্তু মেয়েটা না চাইতেও শুভ্র জোড় করে ওকে কাছে টানছে। কি সৌভাগ্য তার। মারিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো।
শাকিলা বেগম শুভ্রের কাছে এসে বলল-
~” ওকে এখানে এনেছিস কেন?”
শুভ্র পরীকে জোড় করেই নিজের পিছন থেকে সবার সামনে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বিন্তিকে একটা টাওয়াল আনতে বলে ওর মাকে লক্ষ্য করে বলল-

~” মা আপনি জানেন সে কে! সে আমার পরী। আমি ডিসিশন নিয়েছি, আপনি যতদিন ওকে ঘৃনা করবেন ততই আমার ভালোবাসা ওর প্রতি বেড়ে যাবে। যেদিন আপনার দু’মেয়ের মত ওকে ভালোবাসতে শুরু করবেন সেদিন যদি আমায় বলেন ওকে ছাড়তে হবে। আমি কোন প্রশ্ন ছাড়া ওর হাত ছেড়ে দিব। এর আগ অবদি আমি আমার পথ থেকে এক পাও পিছু হাটবোনা।”
এমন সময় বিন্তি টাওয়াল এনে শুভ্রের হাতে দিতেই শুভ্র সেটা দিয়ে পরীর চুল মুছে দিতে লাগলো। এমন দৃশ্য দেখে বাসার সবাই ক্ষেপে গেল। কিন্তু কে কি বললো, এতে শুভ্রের যায় আসেনা ।
কে বলে শুভ্র কঠিন হৃদয়ের মানুষ! পরীর প্রতি তার ভালোবাসা, যত্ন নেওয়া যেন অবিশ্বাশ্য এক ঘটনা। মারিয়া এসব কথা ভাবতেই শুভ্রের মা সেখান থেকে তার রুমে চলে গেল। শুভ্রও পিছু পিছু মায়ের পিছে চলে গেল।
ওর বোনেরাও চলে গেল। ডাইনিংরুমে মারিয়া আর পরী। মারিয়া পরীর কাছে এসে আধা বাংলায় বলতে লাগলো, তুমি মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙ্গো কি করে?

এবার পরী মুখ খুললো। আমার শুভ্রের সাথে খুব কম সময় সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু আফসোস, আমি এত কম সময়ে শুভ্রকে চিনতে পারলেও শুভ্রর জন্মদাত্রী মা তার ছেলেকে চিনতে পারেনি। অন্যর অবৈধ সন্তান নিয়ে আমার শুভ্রর উপর চাপাচ্ছো! আমি যদি কোন দিনও জানতে পারি তুমি শুভ্রকে ফাসাইছো তাহলে তোমার ভবলীলা সেদিন আমি শেষ করে দিব। না আমি কোন ছেলেকে স্পর্শ করবো, না আমার শুভ্র অন্য মেয়েকে স্পর্শ করবে। তুমি হাজার বার মাথা ঠুকে যদি বলো ঐ বাচ্চা শুভ্রের, আমি পরী কখনো তা বিশ্বাস করিনিও বা করবোওনা।
এদের কথার মাঝে শুভ্র এসে পরীর হাত ধরে বাহিরে যেতেই মারিয়া পিছন থেকে শুভ্র বলে রাগী কন্ঠে ডেকে উঠলো। শুভ্রও সাথে সাথে পিছন ফিরে চুপপপ বলে একটা ধমক দিল। তারপর বলল-
~” আমি আমার বউকে ছাড় দেইনা সেখানে তো তুমি চুনোপুঁটি। আমি তোমাকে ডাকিনি। তুমি যা করেছ আমার সাথে তা কোনদিনও ক্ষমার যোগ্য না।”

পরীকে নিয়ে শুভ্র নিচে চলে যায়। কিন্তু এর ভিতর শাকিলা বেগম সুইসাইড করার চেষ্টা করে। ঘরে ছেলেমানুষ ছিলো বলে সেদিন রক্ষা পেয়েছে। এর জন্য সবাই শুভ্রকে দোষারোপ করলো। শাকিলা নিজেকে শেষ করে দিবে বলে বারবার হুমকি দেয় আবারো। শুভ্রকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেন তিনি। তার একটাই কথা ঐ মেয়ে এবাসায় আসলে সেদিন সে নিশ্চিত সুইসাইড করবে। কত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি এই দিন দেখার জন্য! আমার ছেলে কোনদিনও আমার মুখের উপর কথা বলেনা। কিন্তু যে দুবার কথা বলেছে তা শুধুমাত্র ঐ মেয়ের জন্য। শুভ্রের পা থমকে দেয় তার মা এসব কথা বলে।
সেদিন নীলিমাও পরীকে অনেক শাসন করে। কি এমন করেছ যার জন্য ভাবী সুইসাইড করতে গেল! কষ্ট যেন পরীর পিছন থেকে সরছেই না।
পরেরদিন শাকিলা বেগম নিজে এসে নীলিমাকে থ্রেড দিয়ে গেল। আজই যেন পরীকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। না হলে সে নিজেই ব্যবস্থা নিবে।

ঠিক দুপুর বেলা পরী কাঁদতে কাঁদতে ওর কাপড় প্যাক করছিল। বাবা-মাকে কয়েকবার কল দিছে কিন্তু রেসপন্স পায়নি। কোনমতে ল্যাগেজটা নিয়ে রুম থেকে বের হতেই নীল বলে উঠলো-
~” এই আপনি কই যাচ্ছেন?”
পরী কোন কথা না বলে দ্রুত বের হয়ে গেল। নীলিমা রান্নাঘরে আর নিঝুম রুমের ভিতর ছিলো। পরী বের হয়েই লিফটে গেল দ্রুত নামার জন্য কিন্তু সেটা বন্ধ বলে বাধ্য হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। নীল দৌড়ে গিয়ে পরীর হাতটা ধরতে গিয়ে পরী পা স্লিপ কেটে হুড়মুড় করে সিড়িতে পড়ে গেল। ৪তলা থেকে সিড়ি দিয়ে গড়তে গড়তে জোড়ে ঠাশ করে দেয়ালে গিয়ে মাথাটা ধাক্কা খেল। পরী একদম স্থির হয়ে গেল।
নীল এমন দৃশ্য দেখে আম্মু বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে নিচে নেমে গেল।
নীলিমা বের হলেও নিঝুম তা দেখে আগে শুভ্রকে কল দিয়ে কথাটা জানালো কাঁদতে কাঁদতে।
পরীকে আম্বুলেন্সে তুলতেই শুভ্র গাড়ী নিয়ে এসে দাড়ালো ওর বাসার সামনে। শুভ্র পাগলের মত ছুটে এসেছে। কিন্তু বাসার নিচে ওর মাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আর না নেমে ওয়েট করতে থাকলো। শেষে অ্যাম্বুলেন্স ওকে নিয়ে রওনা দিতেই শুভ্র গাড়ী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের পিছু নিলো। সেটা শাকিলার চোখ এড়ালোনা।

কিন্তু এর ভিতর আজব ঘটনা ঘটে গেছে। পরীকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কামরুল হাসান ও স্বপ্না বেগম উপস্থিত ছিলেন। হয়তো এমন একটা সময়ের জন্য তারা অপেক্ষা করছিলো।
ভরা মানুষের মাঝে স্বপ্না নীলিমার গালে জোড়ে একটা থাপ্পড় মেড়ে বললো-
~” আমরা আমাদের মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু একেবারে চোখের আড়াল করিনি। তাকে সময় দিয়েছি বাবার ছায়া ছাড়া দুনিয়া কতটা বিপদজনক। সে বুঝেছে তার বাবা-মা ছাড়া কেউ নেই। তোমার সমস্ত খোঁজখবর রেখেছি। আমার মেয়ের সাথে কে কি রকম ব্যবহার করেছে সব আমাদের মাথায় আছে। তোমাদের বাসায় শুধু তোমরাই থাকতে না, আমাদের নিজস্ব লোকও থাকতো। এখুনি এখান থেকে চলে যাও।”
কামরুল হাসান আর স্বপ্না বেগম একদিন আগেই এখানে আসছিলো। লাষ্ট সময় পর্যন্ত মেয়েকে সুযোগ দিয়েছিলো। কিন্তু তার ভিতর এমন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। যা কখনো তারা প্রত্যাশা করে নি। বাসার ২য় নাম্বার দাড়োয়ান ফোন করে জানিয়েছিল সব তাই আগে থেকেই তারা অবস্থান নিয়েছেন এই হসপিটালে।

মেয়ের হাত বুকের সাথে চেপে ধরে আছেন কামরুল সাহেব। কতদিন পর মেয়েকে তিনি কাছে পেয়েছেন। মেয়ে যেভাবে থাকতে চায় সেভাবেই তিনি রাখবেন।
নীলিমা আর সাহস করেনি সেখানে থাকতে। শুভ্রও সেখানে না থেকে ওখান থেকে বের হয়ে পাগলে মত গাড়ী ড্রাইভ করতে লাগলো।
শুভ্র যখন গাড়ী থেকে নামলো তখন ওর ঘাড়ের কাছ থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছিলো আর খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিল।
ওর ফ্লাটে গিয়ে কলিংবেল চাপতেই বিন্তি এসে খুলে দিল দরজা। শুভ্র ভিতরে ঢুকে ওর নিজস্ব একটা রুমে গেল। যেখানে বসে ও অফিসের কাজ করতো। কেউ ওর সাথে কথা বলার মত সাহস দেখাতে পারেনি।
শাকিলা বেগম গিয়ে নম্রভাষায় কেবল শুভ্র বলে ডেকে উঠেছে এমন সময় শুভ্র বসা থেকে উঠেই ডেক্সের উপরের সমস্ত ফাইল ছুড়ে ফেলে দিল। তারপর দেয়ালে গায়ের শক্তি দিয়ে একটা থাবা বসিয়ে দিল। চেয়ারে লাথি বসিয়ে দিতেই চিয়ার ছিটকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়লো। দুইটা ল্যাপটপ ছিলো, সেগুলোও ফ্লোরে ফিকে মারলো। তাতেও তার গায়ের রাগ মিটলো না। ঐ অবস্থায় ডাইনিং রুমে এসে চিয়ারটা তুলো কাচের ডাইনিং টেবিলে দিলো জোড়ে একটা বারি বসিয়ে। নিমিষেই সেটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেল। তারপর নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। আতিকা ভাই বলে ডাকতেই শাকিলা বেগম কঠোর স্বরে বলল-
~” একদিনের কষ্ট সারাজিবনের সুখ বয়ে নিয়ে আসবে। ও এমনি শান্ত হয়ে যাবে।”

দু’দিন পার হয়ে গেছে। পরীকে ওর পরিবার বাসায় নিয়ে গেছে। এর মধ্য একদিন শুভ্রের সাথে কামরুল হাসানের প্রচুর ঝগড়া হয়। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। পরী যেখানে দাড়িয়ে থাকতো ছাদে সেখানেই দাড়িয়ে থেকে কথা কাটাকাটি হয় শুভ্রের সাথে পরীর বাবার। বিয়ের আর মাত্র ৪টা দিন বাঁকি। শুভ্রের মাথা হ্যাং হয়ে আছে। পরী হয়ত আশা ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু শুভ্র এক মুহুত্ত্বের জন্যও আশা ছেড়ে দেয়নি। তাই সে পরীর বাসায় উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
রাত ১১টা বাজে,
পরী ওর রুমে বসে আছে। অনেকটা সুস্থ। শুভ্রর চিন্তা সে সত্যিই বাদ দিয়েছে। সে দুনিয়া চিনেছে। বাবা-মা ছাড়া কেউ কারো আপনজন নয়। এমন সময় পরীর ফোনে কল আসে। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো শুভ্রের কল। কল না রিসিভ করেই ছুটে ও ব্যালকোনিতে এসে দাড়ায়।

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ১০

রাস্তার ধারে শুভ্র দাড়িয়ে আছে। শুভ্র হাত ইশারা করতেই পরী ওর হিতাহিত বোধটুকু ভুলে ব্যালকোনি থেকেই নিচে ঝাঁপ দেয় শুভ্রের কাছে দ্রুত যাওয়ার জন্য। পরীর এমন পাগলামো কান্ডে শুভ্র প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। শুভ্র দৌড়ে এক লাফে দেয়াল টপকে পরীর কাছে গিয়ে দেখে গাছের ডাল সহ ভেঙ্গে ও নিচে পড়ে কাতরাচ্ছে। শুভ্র ওকে দ্রুত তুলে সামনে পানির কলের কাছে নিয়ে গিয়ে আজল ভরে পানি নিয়ে পরীর মুখে এবং মাথায় দিতেই পরী ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। শুভ্র আমি ভেবেছি তোমার সাথে আর আমার দেখা হবেনা।
পরীর কথা শুনে শুভ্র নিচু গলায় বলে উঠলো-
~” এত পাগলামো কেউ করে! তোমার কিছু হলে আমি মরেই যেতাম।”
কথাগুলো বলে পরীকে পাগলের মত কিস করতে লাগলো শুভ্র। তারপর ও নিজেই পরীকে ওর বুকে টেনে নিয়ে বলল-

~” আমাদের বিয়ের কাবিন নামা এনেছি। এটা নিয়ে কাল থানায় যাবা। নারী নির্যাতন আর স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বে ২য় বিবাহ করার অপরাধে আমার নামে শক্ত সামর্থ মামলা করবা। এই একটাই উপায় খোলা আছে। কথায় আছেনা, এক দরজা বন্ধ হয়ে গেলে আল্লাহ্ হাজার দরজা খুলে দেওয়ার সামর্থ রাখেন।”
পরী শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে কান্না কন্ঠে বলে উঠলো-
~” না না আমি পারবোনা। তোমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।”
~” যা খুঁশি তাই হোক। আমার কিছুতে যায় আসেনা। আমার শুধু মাত্র তোমাকে চাই। আর শোন, অবশ্যই বাবাকে নিয়ে যাবা। তিনি সাহার্য্য করবেন ইনশাআল্লাহ্। আমার বিশ্বাস আছে তার উপর। আমি তোমার চোখে আর পানি চাইনা পরী। আমি চাইনা কোন বেদনা তোমাকে স্পর্শ করুক”
আরও বেশ কিছুক্ষন পরীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শুভ্র চলে গেল। আর পরী শুভ্রের চলে যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তখন শুধুমাত্র অন্ধকারের মধ্য একজোড়া চোখ ছলছল করে উঠলো। নিজে যা পারেনি মেয়ের বেলায় তা তিনি শতভাগ করে দেখাবেন।

সমাপ্ত

বিদ্রঃ অসামাপ্ত এক প্রেম কাহিনী। মাথা ব্লক হয়ে আছে। লিখতেই পারছিনা। ৩দিনের চেষ্টা এতটুকু লিখলাম। দুঃখিত অপেক্ষা করানোর জন্য।
কিছু মানুষের জেদ সব থেকে বড় মনে করে। শাকিলার মত এমন শশুড়-শাশুড়ী এই সমাজে অনেক আছে।