রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১০ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১০
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

নীলাদ্রি পরেরদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, এমন সময় কেউ ওর পিঠে কিছু একটা ছুড়ে মারে, নীলাদ্রি পেছনে তাকিয়ে দেখে কেউ একজন নীলাদ্রিকে পঁচা টমেটো ছুড়েছে, ও এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। আবার সামনে ঘুরতেই একসাথে অনেকগুলো পঁচা টমেটো নীলাদ্রি কে ছুড়ে মারা হয়, এবারও নীলাদ্রি কাউকে দেখতে পায়না, কিন্তু মনে মনে বুঝতে পারে এটা নিশ্চই দিশানী আর ওর দলবলের কাজ। নীলাদ্রি কোনোরকমে লোকজন এড়িয়ে নিজের বাড়ি চলে যায়।আর এদিকে দিশানী আর ওর দলবল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। মেঘা দিশানী কে জিজ্ঞেস করে,

—এবারেও যদি প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে আমাদের নামে নালিশ করে??
দিশানী বেশ ভাব নিয়ে বলে,,
—করুক না, কি আর হবে তাতে, কিছু তো করতে পারবে না?
নীলাদ্রি বাড়িতে ফিরতেই ওর মা জিজ্ঞেস করে,
—নীলু তোর এই অবস্থা কেনো, দেখে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে টমেটো দিয়ে হোলি খেলে এসেছিস।
—টমেটো দিয়ে আবার হোলি খেলা যায় নাকি মা, একটা লেজ ছাড়া হনুমান আমার এই অবস্থা করেছে।
—-লেজ ছাড়া হনুমান??
নীলাদ্রি উত্তর দিলো,,
—এসব বাদ দাও এখন, আমি জামা পাল্টিয়ে আসি, তুমি আমাকে খেতে দাও, খুব খিদে পেয়েছে আমার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আজকে আবার দিশানী আর নীলাদ্রি প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে দাঁড়িয়ে আছে, প্রিন্সিপাল স্যার বললো,,
—তুমি বলো নীলাদ্রি, দিশানী আবার কি করেছে?
—স্যার এই মেয়ে কালকে আমাকে পঁচা টমেটো ছুড়ে মেরেছে।
নীলাদ্রি এই কথা বলতেই দিশানী ফিক করে হেসে উঠলো। প্রিন্সিপাল স্যার দিশানীকে উদ্দেশ্য করে রাগী গলায় বললো,,
—দিশানী, হাসি থামাও
দিশানী হাসি থামিয়ে বললো,,
—সরি স্যার, কিন্তু না হেসে যে পারলাম না, মানে আমি ওনার গায়ে টমেটো ছুঁড়েছি তার প্রমাণ কোথায়? উনি কি দেখেছেন আমি ওনার গায়ে টমেটো ছুঁড়েছি?
প্রিন্সিপাল স্যার নীলাদ্রির দিকে তাকালে নীলাদ্রি উত্তর দিলো,

—না স্যার আমি দেখিনি, কিন্তু আমি সিউর এই কাজ টা এই মেয়ে ছাড়া আর কেউ করতে পারেনা।
দিশানী প্রিন্সিপাল স্যারকে বললো,,
—স্যার এভাবে সিউর না হয়ে আমার নামে নালিশ করা কিন্তু অন্যায়, এবারের মতো মেনে নিলাম যে ওনার ভুল হয়েছে কিন্তু বার বার এরকম করলে কিন্তু আমি সহ্য করবো না, আপনি ওনাকে বলুন যেনো আমাকে সরি বলে।
নীলাদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিন্সিপাল স্যার নীলাদ্রির উপর রাগীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেন,

—দিশানী কিন্তু ঠিক বলেছে নীলাদ্রি তুমি কোনো প্রমাণ ছাড়া কিভাবে দিশানীর ওপরে দোষ চাপালে যে তোমার গায়ে টমেটো ওই ছুঁড়েছে, এবারের মতো মাফ করে দিচ্ছি তোমাকে যেহেতু এটা তোমার প্রথম ভুল, এরপর এরকম ভুল করলে তোমাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে, কথাটা মনে রেখো।
নীলাদ্রি মাথা নিচু করে বললো,
—ইয়েস স্যার, মনে থাকবে।
—-নীলাদ্রি এখন তুমি দিশানী কে সরি বলবে,যাও ওকে গিয়ে সরি বলো।
নীলাদ্রি মুখ গোমড়া করে বললো,,
—স্যার??
—সে সরি নীলাদ্রি
নীলাদ্রি কোনো উপায় না পেয়ে দিশানীর কাছে গেলো, দিশানী মিটি মিটি হাসছে। নীলাদ্রি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
—আ’ম সরি দিশানী
—ইটস ওকে, মাফ করে দিলাম আপনাকে যান।

প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বের হওয়ার পর,,,
নীলাদ্রির মুখ রাগে পুরো লাল হয়ে গেছে। দিশানী নীলাদ্রি কে দেখে মুখ থেকে চ-বর্গীয় আওয়াজ করে নীলাদ্রিকে বললো,,

—ইশ বেচারা, হেরে গেলেন তো,আমাকেই উল্টো সরি বলতে হলো তো, শুনুন আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসবেন না আর বেশি মাতব্বরি করতে যাবেন না তাহলেই কিন্তু ফাঁসবেন, রাগ করবেন না আপনার ভালোর জন্যই বলছি,সেইদিন দেখলাম আপনাকে আপনার সিনিয়ররা টিজ করছে অথচ আপনি কিছুই বললেন না, ভয় পেয়ে চুপ করে রইলেন, আমার সাথে তো ভালোই লাগতে আসেন, সিনিয়রদের সাথে পারেন না বুঝি?সিনিয়রদের সামনে ভেজা বেড়াল হয়ে থেকে লাভ নেই ওরা শুধু খাটিয়ে নেয়,ছ্যাচড়া পোলাপাইন সবগুলা।

এই আমাকেই দেখুন কি পরিমাণ গুন্ডি মেয়ে আমি, সিনিয়র দের একটুও ভয় পাইনা, অন্যায় মেনে নেইনা।আপনিও গুন্ডা হয়ে যান দেখি, আপনার চেহারার সাথে এসব ভেজা বেড়াল টাইপ চেহারা একদমই যায়না, একটু স্মার্ট হন।
নীলাদ্রি ভ্রু কুঁচকে দিশানীর কথা শুনছে, দিশানী আবার বললো,,
—আরেকটা কথা বলবো? এটাই শেষ!
—অনেকগুলো কথাই তো বললে, এটা কেনো বাদ রাখবে, এটাও বলে ফেলো, আমি শুনছি।
—আপনার গায়ে টমেটো আমিই ছুঁড়েছি।
কথাটা বলেই দিশানী এক দৌড়ে ওখান থেকে কেটে পড়লো।
নীলাদ্রি ওখানেই হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর ভাবছে,
—এটা মেয়ে না অন্য কিছু।তবে আগের কথাগুলো ভালোই বলেছে।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৯

দিশানী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আর গান গাইছে,
“দস্যি দস্যি আমি দস্যি মেয়ে
ছুটি পাড়ায় পাড়ায় ছুটি বনে বনে”
হঠাৎ করে দিশানী গান থামিয়ে বলতে শুরু করলো,,
—ধুর, এখানে আমি বন পাবো কোথায়,তাহলে গানটা এখন আমার নিয়মে গাইতে হবে,
“দস্যি দস্যি আমি দস্যি মেয়ে
ছুটি পাড়ায় পাড়ায় ছুটি স্কুলে স্কুলে”
হ্যাঁ এইবার ঠিক আছে,কি সুন্দর নিমিষের মধ্যে গান মিলিয়ে ফেললাম,হাউ জিনিয়াস আই আ’ম। হিহিহিহি।
দিশানী বাড়ি ফিরতেই ব্যাগ কাঁধ থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো।তারপর মা মা করে চিৎকার শুরু করে দিলো।
দিশানীর মা বিরক্ত হয়ে বললেন,,

—কি হয়েছে, এমন করে চিল্লাচ্ছিস কেনো?
—খিদে পেয়েছে খেতে দাও।
দিশানী এই কথা বলতেই দিশানীর মা ওর কান টেনে ধরলো আর বললো,,
—কতবার বলবো স্কুল থেকে ফিরে জায়গার জিনিস জায়গায় রাখবি, সারাদিন দস্যিপনা করে শান্তি হয়না যে বাড়িতে এসেও শুরু করে দিয়েছিস।
দিশানী কিউট ফেস করে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
—এরকম করো কেনো মা,পরে গুছিয়ে দেবোনি, এখন খেতে দাও।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১১