রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৯ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৯
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

দিশানী আর ওর বান্ধবীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে,এই টাইমে রবি এই রাস্তা দিয়ে যায় রাস্তাটা বেশ নিরিবিলি তাই রবি কে শাস্তি দেওয়ার জন্য ওরা এই জায়গাটাই বেছে নিয়েছে। কিছুক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই ওরা দেখলো রবি আসছে, দিশানী রবি কে দেখে এগিয়ে গিয়ে রবির সামনে দাঁড়ালো, রবি দিশানী কে দেখে চমকে উঠে বললো,,

—-দিশানী তুমি এখানে কি করো একা একা?
দিশানী লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো,,
—প্রেমপত্রের উত্তর তো এভাবে একা একাই দিতে দিতে হয়, তাই ভাবলাম তুমি তো এই রাস্তা দিয়েই যাও আর এখানে তেমন একটা লোকজন থাকেনা তাই আমি তোমার প্রেমপত্রের উত্তর আমি এখানেই দেবো।
রবি দিশানীর কথা শুনে ওকে জিজ্ঞাসা করলো,,
—তো কি সিদ্ধান্ত নিলে?
দিশানী মুখ ভার করে বললো,

—তুমি নাকি হাত কেটে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছো,এটা শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি জানো? আচ্ছা হাতের কোথায় কেটে গেছে তোমার,একটু দেখাও না আমাকে?
রবি আমতা আমতা করে বললো,
—কাটা জায়গা তো মিশে গেছে
দিশানী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
—সেকি এতো তারাতারি কাটা জায়গা মিশে গেলো? এই চিঠি তো তুমি আমাকে কালকেই দিলে, তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কাটা দাগ মিশে গেলো কিভাবে?ম্যাজিক নাকি?
দিশানীর কথা শুনে রবি চুপ করে আছে।
দিশানী আবারো জিজ্ঞেস করলো,
—কি হলো চুপ করে আছো কেনো?
রবি তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দিলো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—আব আসলে আমি এটা কয়েকদিন আগেই লিখে রেখেছিলাম, কিন্তু দেওয়ার সুযোগ পাইনি,তাই হাতের কাটা দাগ মিশে গেছে।
দিশানী হাসি হাসি মুখ করে জিজ্ঞেস করলো,
—ওহ তাই?
—হুমম তাই
দিশানী হঠাৎ করেই রবির মাথায় একটা পঁচা ডিম ভাঙলো, রবি চিল্লিয়ে উঠে বললো,,
—এসব কি করছো?
—সবে তো একটা ডিম ভাঙলাম, এরপর আরো ডিম ভাঙবো।
দিশানী ওর বান্ধবীদের ডাক দিয়ে বললো,,
—এই তোরাও আয়।
একে একে সবাই রবির মাথায় ডিম ভাঙলো।তারপর দিশানী বলে উঠলো,,

—আমাকে বোকা ভাবিস তুই?চিঠিটা যে তোর রক্ত দিয়ে লেখা না সেটা আমি ভালো ভাবেই বুঝে গেছিলাম, ওই চিঠি থেকে ছাগলের রক্তের গন্ধ আসছিলো তখনি আমি টের পেয়ে গেছিলাম, আমি ওইসব ধরণের মেয়ে না যে কেউ হাত কেটে রক্ত দিয়ে আমাকে চিঠি লিখলেই আমি তার প্রতি পুরো ফিদা হয়ে যাবো, এসব আলতু-ফালতু কাজ আমার সাথে করতে আসবি না।আর শোন, এখন বাড়িতে গিয়ে মাথায় লবণ, মরিচ, তেল এসব দিয়ে আগুনের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি বুঝেছিস? তাহলে ডিমভাজি খেতে পারবি, যা এখান থেকে দূর হ আর একবার এসব কাজ করলে না তোকে জুতো পিটা করবো, যা ভাগ।

এই মেয়ে তুমি কাকে জুতো পিটা করবে?কথাটা দিশানীর কানে আসতেই দিশানী পেছনে তাকায় আর দেখে নীলাদ্রি দাঁড়িয়ে আছে তারমানে কথাটা নীলাদ্রিই বলেছে, দিশানী নীলাদ্রি কে দেখে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নীলাদ্রির চোখ যায় রবির দিকে, ও রবির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
—তোমার এই অবস্থা কি করে হলো রবি?
দিশানী পেছন থেকে উত্তর দিলো,,
—আমি করেছি, ওর মাথায় পঁচা ডিম ভেঙেছি আমি আর আমার বান্ধবীরা।
নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো,
—এরকম কেনো করেছো তুমি? তুমি জানোনা ও তোমার সিনিয়র।
দিশানী রেগে গিয়ে উত্তর দিলো,,

—আপনার এতো বাজে কেনো, কোনো কারণ আছে তাই ওর এই অবস্থা করেছি, আমি অকারণে কিছু করিনা।
নীলাদ্রি দিশানীকে আর কিছু না বলে রবি কে বাড়িতে দিয়ে আসতে গেলো।
——————
পরেরদিন স্কুলে,
দিশানীসহ ওর বান্ধবীরা,রবি আর নীলাদ্রি প্রিন্সপাল স্যারের রুমে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিন্সিপাল স্যার দিশানী কে জিজ্ঞেস করলেন,
—দিশানী তুমি আর তোমার বান্ধবীরা মিলে রবির মাথায় পঁচা ডিম ভেঙেছো কেনো? এইসব বেয়াদবি আমি আমার স্কুলে বরদাস্ত করবো না।
নীলাদ্রি বলে উঠলো,,
—স্যার ও সিনিয়রদের একটুও সম্মান করেনা।

কথাটা শুনে দিশানী নীলাদ্রির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো তারপর প্রিন্সিপাল স্যারকে বললো,,
—মাফ করবেন স্যার,শুধু এক পক্ষের কথা শুনে বিচার করলে তো চলবে না, অন্য পক্ষের কথাও শুনতে হবে, আপনি শুধু রবির কথা শুনেই বিচার করছেন এটা তো ঠিক না স্যার, কেনো আমরা রবির মাথায় ডিম ভেঙেছি সেটাও আপনাকে জানতে হবে
—-ঠিকাছে তাহলে আমরা আগে দিশানীর কথাই শুনি, দিশানী তুমি বলো
দিশানী রবির দিকে তাকিয়ে বললো,,
—ছেলে-মেয়েরা সব উচ্ছন্নে গেলো স্যার, এই বয়সে পড়াশোনা করবে কি তা না রক্ত দিয়ে প্রেমপত্র লিখে বেড়াচ্ছে।

প্রিন্সিপাল স্যার চশমাটা ঠিক করে নড়েচড়ে বসে বললেন,,
—যা বলতে চাইছো ক্লিয়ার করে বলো।
—-জী স্যার তাহলে শুনুন।
দিশানী রবির করা সব কীর্তিকলাপের কথা প্রিন্সিপাল স্যারকে বললো।
নীলাদ্রি রবির কীর্তিকলাপ শুনে বোকা বোনে গেলো।
প্রিন্সিপাল স্যার রবির ওপর প্রচুর বিরক্তি আর হতাশামূলক দৃষ্টি নিয়ে বললেন,,
—শেষে কিনা ছাগলের রক্ত দিয়ে চিঠি,কোন গ্রহের মানুষ রে তুই?যা ভাগ এখান থেকে,তোর যা শাস্তি পাওয়ার দরকার ছিলো তা দিশানী দিয়ে দিয়েছে আমার আর নতুন করে কোনো শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর শোন এইরকম কাজ করার আগে দশবার ভাববি, এখন তোদের পড়াশোনা করার সময় প্রেম করার নয়, আমার কথা বুঝেছিস?

রবি হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে ক্লাসরুমের দিকে গেলো। ওর সাথে সাথে সবাই প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বের গেলো।
দিশানী রবির পেছন পেছন গিয়ে রবি কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
—-নিজে দোষ করে আবার আমার নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নালিশ করেছো, তোমার সাহস তো কম না, আরেকবার মাথায় ডিম ভাঙানোর ইচ্ছা হয়েছে বুঝি?
রবি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,,

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৮

—না না, আমি নালিশ করিনি, আমার ঘাড়ে কটা মাথা যে আমি তোমার নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নালিশ করবো, ওই নীলাদ্রিই তো আজ সকালে জোর করে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নিয়ে গেলো তোমার নামে নালিশ করার জন্য।
দিশানী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,,
—তোমার সাথে যে ছেলেটা ছিলো ওই নীলাদ্রি?
—হুমম
—আচ্ছা তুমি এখন ক্লাসে যাও।
রবি চলে গেলে দিশানী মনে মনে ভাবতে থাকে,

—এই দিয়ে দুইবার দোষ করলেন আপনি নীলাদ্রিবাবু,এর শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে, এইবার পঁচা টমেটো দিয়ে শাস্তি দেবো আপনাকে দাঁড়ান।
এই কথা বলেই দিশানী অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১০