রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

কাজ করতে করতেই নিরা দিশানী কে ডাক দেয়,
—বৌদি একটু শুনে যাও তো, দরকার আছে তোমার সাথে আর আসার সময় আমার জন্য কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো আমার খুব মাথা ধরেছে
দিশানী উত্তর দিলো, “আচ্ছা আনছি।”

দিশানী রান্না ঘরে গিয়ে চুলায় চায়ের জল বসালো, তারপর কড়া করে এক কাপ চা করে নিয়ে নিরার কাছে গেলো।দিশানী নিরাকে চা দিতেই নিরা বললো,,
—শোনো আমি সন্ধ্যায় ডাক্তারের কাছে যাবো, আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে, তাই সময়মতো রেডি হয়ে যেও তোমাকে যেনো কিছু না বলতে হয়
দিশানী উত্তর দিলো,,
—আচ্ছা ঠিকাছে

দিশানী সব কাজ শেষ করে একটু ঘরে গিয়ে বসেছে,, অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা, তার উপর দুপুরে কিছু খায়নি,কিছুক্ষন পরে আবার নিরার সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, তাই দিশানী ভাবলো এইটুকু সময় একটু রেস্ট নিয়ে নেবে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সুজাতা চিৎকার করে দিশানী ডাকতে শুরু করে,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—বৌমা, একটু ড্রইংরুমে এসো তো
দিশানী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে উঠে ড্রইংরুমে গেলো, ড্রইংরুমে সুজাতা আর ওদের পাশের বাড়ির এক মহিলা বসে ছিলো। দিশানী ড্রইংরুমে যেতেই সুজাতা বললো,
—বৌমা দিদির জন্য চা করে নিয়ে এসো তো, আর হ্যাঁ সাথে আমার জন্যও এক কাপ করে নিয়ে আসবে

দিশানী চা বানিয়ে আবার ড্রইংরুমে যেতেই সুজাতা আর ওই মহিলাটির কথোপকথন শুনতে পেলো,মহিলাটি সুজাতা কে বলছে,
—কিগো অনেক দিন তো হলো তোমার বৌমার তো কোনো সুখবরই পাচ্ছি না, ওদের বিয়ের পরে আমার ছেলের বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে গেলো আর তোমার বৌমার কোনো সুখবরই পাচ্ছি না,, ব্যাপার কি?

সুজাতা মুখ বেকিয়ে বললো,
—আর বোলো না দিদি,, কি কুক্ষনে যে ওকে ছেলের বউ বানিয়ে এনেছিলাম,আজও অবধি একটা নাতি বা নাতনির মুখ দেখতে পেলাম না,, কম ডাক্তার তো দেখলাম না, তবুও কিছুই হচ্ছে
মহিলাটি সুজাতার কথা শুনে বললো,,

—আমার তো মনে হয় বিয়ের আগে থেকেই তোমার বৌমার কোনো অসুখ ছিলো, তাই বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে না,,কিন্তু ওর বাড়ির লোক এই অসুখের কথা লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছে।
—আমারও মাঝে মাঝে তাই মনে হয়,, ওকে তো কিছু বললে মুখে মুখে তর্ক করে
—-যাই বলো না কেনো তুমি আমার ছেলের বউ মোটেও ওরকম না,, কি ভালো ওর ব্যবহার আর কিছু বললে একদমই কোনো তর্ক করেনা

—তোমার ভাগ্য ভালো গো তাই এমন ভালো বউ পেয়েছে,, আমার তো পোড়া কপাল।
দিশানী কথাগুলো চুপচাপ সহ্য করে ওদের জন্য চা নিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকলো। তারপর দুজনকে চা দিলো। মহিলাটি চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,,

—তবে তোমার বৌমার রান্নার কিন্তু জবাব নেই,, সেদিন কি সুন্দর চায়ের সাথে পকোড়া বানিয়ে খাইয়ে ছিলো,, পকোড়া গুলো কিন্তু খুব টেস্টি ছিলো
সুজাতা এই কথা শুনে দিশানীকে বললো,,
—সেকি শুধু চা আর বিস্কুট কেনো এনেছো তুমি, সাথে একটু পকোড়া ভেজে আনতে পারতে তো।
দিশানী কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুজাতা বললো,,
—এখনি পকোড়া ভেজে আনো যাও
মহিলাটি বললো,,
—আরে থাক না,দরকার নেই

—সেকি তুমি একটা জিনিস খেতে চেয়েছো আর আমি খাওয়াবো না তা কি করে হয়,, যাও বৌমা পকোড়া ভেজে আনো
দিশানী পকোড়া ভাজতে গেলো, এইদিকে ওর আবার রেডি হতে হবে নিরার সাথে যাওয়ার জন্য, কিন্তু এই কথা সুজাতা কে বললে কোনো লাভই হবেনা উনি বলবেন, “রেডি হতে আর কতক্ষনই বা লাগে তুমি কাজ করার ভয়ে বাহানা দিচ্ছ”

দিশানী পকোড়া ভেজে ওদের কাছে দিয়ে এলো। এদিকে নিরা রেডি হয়ে দিশানীর রুমে এসে দেখে,দিশানী এখনো রেডি হয়নি,,নিরা একটু রেগে দিশানী কে বললো,,
–এখনো রেডি হওনি বৌদি? তোমাকে তো অনেকক্ষন আগে বলেছি আমি তোমার সাথে বের হবো তাহলে এখনো রেডি হওনি কেনো তুমি?
দিশানী নিরা কে বললো,,

—আসলে মা পকোড়া ভেজে দিতে বললেন তো তাই রেডি হতে দেরি হয়ে গেলো কিছু মনে কোরোনা,, আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে নিচ্ছি
—বাহানা দেওয়ায় তো তুমি একেবারে ওস্তাদ,, এখন রেডি হয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
দিশানী রেডি হয়ে নিলো। তারপর দিশানী আর নিরা বেরিয়ে গেলো।

ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছে নিরা আর দিশানী,, নিরার সিরিয়াল আসলে তারপর ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকবে ওরা,, এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে ডাক্তারের চেম্বারের দরজায় চোখ আটকে যায় দিশানীর,, দরজায় বড় বড় করে লেখা আছে “ডক্টর নীলাদ্রি সেনগুপ্ত” নামটা দেখে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয় দিশানীর। এরই মধ্যে নিরার সিরিয়াল চলে আসে,,

নিরা আর দিশানী ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতেই দিশানী থ হয়ে যায়, কাকে দেখছে সে, এই কি সেই ছেলেটাই যে একসময় দিশানীর পেছন পেছন ঘুরতো,, এক গাদা চিঠি লিখে দিশানী কে পাঠাতো, এখনকার সে আর তখনকার সে’র মধ্যে যে অনেক তফাৎ, আগের নীলাদ্রির চেহারার মধ্যে কোনো গাম্ভীর্যভাব ছিলোনা কিন্তু এখনকার নীলাদ্রির চেহারায় অসম্ভব গাম্ভীর্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে,খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, শ্যামলা চেহারা,, চোখে চশমা,কত পাল্টে গেছে,এ যেনো এক অন্য নীলাদ্রি।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১

এদিকে সামনে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলাদ্রি তার দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে, মনে মনে বলে,এটা তো সেই মানুষটাই যার জন্য আমার বুঁকের পা পাশের জায়গাটা এখনো কাউকে দিতে পারিনি আমি,এটা তো দিশানী,যার জন্য পাগল ছিলাম আমি কিন্তু দিশানীর বিয়ে হয়ে গেলেও আজও এই পাগলামিটা ছেড়ে উঠতে পারিনি আমি,,কিন্তু ওর চোখমুখের এমন অবস্থা কেনো, দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত ও,ওর সেই মুগ্ধ করা চেহারার কি হলো,কিন্তু এই চেহারাতেও মন্দ লাগছে না মেয়েটাকে, বরাবরই ও দেখতে মায়াবী ছিলো আর আজও আছে।

নীলাদ্রি আর দিশানী একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরা দিশানী কে ডাক দিতেই দুজনের হুশ ফেরে,, নিরা দিশানী কে ডেকে বললো,,
—বৌদি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো চেয়ারে এসে বসো।
দিশানী গিয়ে চেয়ারে বসলো। নীলাদ্রি ওর চোখের কোণে থাকা জলটা মুছে নিলো, দিশানী কে দেখে অজান্তেই চোখে জল এসে গেছিলো ওর । নীলাদ্রি জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো,, কারণ মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই দিশানী এখন অন্য কারো তাই বেশি মায়া বাড়ালে শুধু কষ্টই পেতে হবে

নীলাদ্রি নিরা কে চেক-আপ করে কিছু ওষুধ লিখে দিলো। তারপর দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,,

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৩