রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৩ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৩
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

নীলাদ্রি নিরা কে চেক-আপ করে কিছু ওষুধ লিখে দিলো। তারপর দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,,
“আপনাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে, আচ্ছা আপনি কি দিশানী?”
নীলাদ্রির কথা শুনে দিশানীর মনে হালকা অভিমান জমা হলো,, ও মনে মনে ভাবলো,,
“তাহলে আমাকে ওনার ভালোভাবে মনে নেই, চিনতেও সমস্যা হচ্ছে ”
দিশানী নীলাদ্রির কথার উত্তর দিলো,

—হ্যাঁ আমিই দিশানী
—কেমন আছো তুমি, অনেক দিন পর দেখলাম তোমায়।
নীলাদ্রি মনে মনে বললো,
“তোমাকে আমি প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছি যে কে তুমি, কারণ তোমাকে যে কোনোদিন ভুলতেই পারিনি, কখনো ভুলতে পারবো কি না সেটাও জানিনা”
—-আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
—ভালো আছি,দাঁড়াও তোমাদের জন্য কিছু আনতে বলি কতদিন পরে দেখা হলো বলোতো
—না না তার দরকার নেই, আমরা কিছু খাবো না
—তা বললে তো আমি শুনবো না

নিরা নীলাদ্রি আর দিশানীর কথা শুনে এতক্ষন ভ্রু কুঁচকে ছিলো, এক পর্যায়ে দিশানী কে জিজ্ঞেস করেই বসলো,,
—বৌদি, কে হয় উনি তোমার?
নীলাদ্রি নিরার কথার উত্তর দিলো,,
—আমরা এক পাড়াতেই থাকতাম আর আমি দিশানীর ২ বছরের সিনিয়র ছিলাম
—ওহ আচ্ছা

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীলাদ্রি কথা বলতে বলতেই এক পর্যায়ে দিশানী কে জিজ্ঞেস করে বসলো,,
—তো তোমার হাসবেন্ডের কি খবর বলো, কেমন আছেন উনি?
—ভালো আছে, আচ্ছা কাকিমা মানে আপনার মা কেমন আছেন?
মায়ের কথা শুনতেই নীলাদ্রির মনটা খারাপ হয়ে গেলো, নীলাদ্রি বললো,,
—মা তো আর নেই, উনি গতবছর মারা গেছেন
দিশানীর কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগলো, ছোটোবেলায় নীলাদ্রির বাবা মারা যায়, ওর মা’ই ওকে এতদিন কষ্ট করে একা একা মানুষ করেছে,ওর মা’ও এখন মারা গেলো, বেচারা একা হয়ে গেছে পুরো
এরপর হালকা কথাবার্তা বলে দিশানী আর নিরা ওখান থেকে চলে এলো

নিরা একটা শপিংমলে ঢুকে শপিং করছে, দিশানী বার বার শুধু ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,৮.০০ টা বেজে গেছে। দিশানী কে বাড়ি ফিরে আবার রাতের রান্না করতে হবে,, ওদের কে রাত ১০.০০ টার মধ্যে রাতের খাবার পরিবেশন না করলে সবাই চেঁচামেচি আরম্ভ করে দেবে। দিশানী আর না থাকতে পেরে নিরা কে বললো,,

—নিরা তোমার আর কতক্ষন লাগবে, একটু তাড়াতাড়ি করো প্লিজ।দেখো ৮.০০ টা বেজে গেছে,আমাকে আবার গিয়ে রাতের রান্না করতে হবে
—তো কি হয়েছে?আর এখন তোমার সময়ের কথা মনে হচ্ছে তখন চেম্বারে যখন ডাক্তারের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলে তখন তোমার তাড়া ছিলো না বুঝি?
—-নিরা ওখান তো তোমার চেক-আপ এর পর শুধু মাত্র ১৫ মিনিটই ছিলাম আমরা, খুব একটা সময় তো লাগেনি আর আমরা শুধু টুকটাক কথা বলছিলাম আড্ডা তো মারিনি
—একদম আমার মুখে মুখে তর্ক করবে না বলে দিলাম,, চুপচাপ আমার সাথে সাথে থাকো
নিরা শপিং শেষ করতে করতে ৮.৩০ টা বাজিয়ে ফেললো।

দিশানী আর নিরা বাড়ি ফিরতে ফিরতে ৯.০০ টা বাজিয়ে ফেললো। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। দিশানী কোনো রকমে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এসে রান্নাঘরে গেলো,, দিশানী সবজি কেটে ময়দা মাখতে শুরু করলো, ঘড়িতে ৯.৩৫ বেজে গেছে অলরেডি কিন্তু ও এখনো কোনো রান্না করে উঠতে পারেনি,,দিশানী চুলায় সবজি বসিয়ে রুটি ভাজতে লাগলো,, কয়েকটা রুটি ভাজতেই ১০.০০ টা বেজে গেলো। এইদিকে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে গেছে। সুজাতা দিশানী কে হাঁক দিলো,

—কি হলো বৌমা সারারাত লাগাবে নাকি খাবার দিতে, এতক্ষন লাগছে কেনো?
দিশানী রান্না ঘর থেকে উত্তর দিলো,
—এইতো মা হয়ে গেছে আর ৫মিনিট অপেক্ষা করুন
দিশানী রুটিগুলো ডাইনিং টেবিলে এনে রাখলো।নিরা জিজ্ঞেস করলো,,
—আমরা কি শুধু রুটি চিবোবো নাকি,, সবজি কোথায়?
—এখুনি সবজি টা রান্না হলো,, আমি নামিয়ে নিয়ে আসি।
নির্ঝর দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,,

—১০.২০ বাজে, তোমার খাবার দেওয়ার কথা ১০.০০ টায়,, এতক্ষন কি করেছো তুমি?
—-আসলে নিরার সাথে আজ বেরিয়ে ছিলাম তো, নিরা ডাক্তার দেখানো শেষে শপিং করছিলো তো তাই দেরি হয়ে গেছে
নিরা দিশানী কে উদ্দেশ্য করে বললো,,
—এই একদম আমার দোষ দেবে না,, দেরি আমার জন্য হয়নি দেরি তোমার জন্য হয়েছে, তুমিই তো ডাক্তারের চেম্বারে ডাক্তারের সাথে গল্প জুড়ে দিলে, সেজন্যই তো দেরি হয়ে গেছে।
দিশানী কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিশানীর শশুরমশাই বললো,,

—আজ কি খাবার পাবো নাকি পাবো না?
সুজাতা দিশানী কে বললো,,
—যাও তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এসো,, তোমার শশুরমশাই এর আবার ওষুধও খেতে হবে।
দিশানী গিয়ে খাবার নিয়ে এসে সবাইকে বেড়ে দিলো। খাবার খেতে খেতেই সুজাতা নিরা আর নির্ঝর কে বললো,,
—তোরা দুজন খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমার ঘরে আয়।
নিরা আর নির্ঝর একসাথে বলে উঠলো,,
“আচ্ছা ”
ওরা সবাই খাবার শেষ করে উঠে চলে গেলো। এবার দিশানী খেতে বসলো।

সুজাতার ঘরে,,,
নির্ঝর সুজাতা কে বললো,,
—এখন বলো ডাকলে কেনো মা?
—নিরার কাছেই শোন, ডাকলাম কেনো
নির্ঝর নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,,
—হ্যাঁ বল কি বলবি, আর তখন কি যেনো বলছিলে ডাক্তারের সাথে গল্প মানে?
নিরা উত্তর দিলো,,
—সেটা বলার জন্যই তো তোকে এখানে ডাকা,, আজকে যে ডাক্তারের কাছে গেছিলাম, ডক্টর নীলাদ্রি, উনি তো বৌদির চেনা, ওরা নাকি প্রতিবেশি।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২

—তো প্রতিবেশি যখন গল্প করতেই পারে,তাতে কি হয়েছে।
—তাতে কিছুই হয়নি,, চেনা মানুষ গল্প করতেই পারে,, কিন্তু আমার কেমন জানি একটা লাগলো
—কেমন লাগলো?
—-চেম্বারে ঢুকতেই দেখি দুজন দুজনের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে,, আমার কিন্তু খুব একটা ভালো লাগলো না, আশা করি তুই আমার কথা বুঝতে পারছিস, কি বোঝাতে চাইছি আমি?
—হুমম,, আমি দেখছি

দিশানী খাওয়া শেষ করে একটা শান্তির নিঃশাস ফেললো,, দুপুরে এমনিতেই কিছু খাওয়া হয়নি, এখন খাবার খেয়ে দেহটা শান্তি পেলো।দিশানী সব কাজ শেষ করে জিনিসপত্র গুছিয়ে রুমে গেলো। রুমের ভেতরে ঢুকতেই নির্ঝর দিশানীর হাত মুচড়ে পেছনে নিলো। দিশানী খুব ব্যথা পেলো,, ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই নির্ঝর বলতে শুরু করলো,,

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৪