শেহজাদী পর্ব ১৭ || Arishan Nur || রোমান্টিক গল্প

শেহজাদী পর্ব ১৭
Arishan Nur

মিরার ঘুম ভেঙে গেল একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে। অবশ্য দুঃস্বপ্ন সবসময়ই ভয়ংকর হয়! সে ধড়ফড়িয়ে উঠে। চোখ মেলে লক্ষ করল, টেবিলে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে।কাধের বাম পাশটা ব্যথা করছে ঈষৎ। কিন্তু মিরা নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রইল। চোখ মুখ থেকে ঘুমের রেশ কাটেনি সঙ্গে ভয়ংকর সেই দুঃস্বপ্নটার আবেশ কাটেনি। চিন্তা করলেই গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে উঠছে। সে সময় দেখে নিল, দুইটা বাজতে এক মিনিট বাকি। মানে একটা ঊনষাট বাজে এখন। সে একটা দম ফেলে বাথরুমে গিয়ে নিজের চেহারা দেখে নিল।

স্বপ্নে যা দেখেছে সেটার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দাঁড় করলো মিরা। সে স্বপ্নে দেখেছে, এই বাসাতে সে নিজের রুমে বসে বসে অফিসের কাজ করছিল। এমন সময় তার কিছুটা গরম লাগতে লাগলো। সে গরম ভাব কমানোর জন্য এসি অন করে দিলো। এসি অন হতেই কেমন ঘ্যার-ঘ্যার শব্দ শুরু হতে লাগে। মিরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে এসির সামনে গিয়ে হাত উঠিয়ে দেখলো। এসি ঠান্ডা হাওয়া না দিয়ে গরম হাওয়া দিচ্ছে। মিরা ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে থেকে অনুভব করলো, কেমন একটা পোড়া গন্ধ আসছে। এরপর? কিছু বোঝার আগেই বিকট শব্দে বিষ্ফোরণ হলো! সে চেচিয়ে উঠে। কেউ নেই আশেপাশে! সারা শরীর আগুনে ঝলসে যাচ্ছে তার। আর্তনাদ শোনার মতো কেউ নেই পাশে!
এইটুকু দেখেই সে ভয়ে ধড়ফড় করে জেগে উঠে।

চোখ মুখে পানি দিয়ে সে রুমের বাইরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে ঢক ঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নেয়। কিছুটা শান্তি লাগছে। ভেতর পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছিল তার। স্বপ্ন দেখার পেছনের ব্যাখাটা হলো, গতকাল রাজধানীর এক একালায় এভাবেই একটা বিল্ডিংয়ে এসি ব্লাস্ট হয়ে স্পটডেড হয়েছে কয়েকজন। এই দুর্ঘটনা নিয়ে সে আর মা আলাপ-আলোচনা করেছিল দুপুরে । সম্ভবত সেই আলাপ শেষ হওয়ার পরও তার ব্রেইন ব্যাপারটি ভুলতে পারেনি। অবচেতন মন সেই দুর্ঘটনা নিয়ে ভেবেছে এরপর ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন আকারে উপস্থাপন ও করলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমরা জাগ্রত অবস্থায় যে বিষয় নিয়ে ভাবি বা চিন্তা করি সেটাই স্বপ্ন আকারে ঘুমের মধ্যে ফিরে আসে!
মিরা ফিল্টার থেকে বোতলে পানি ভরিয়ে ফ্রিজে রেখে যেই না নিজের কক্ষে ফিরে যাবে, তখনি গানের সুরের আওয়াজ কানে ভাসে। রাত দুটো বাজে কে গান শুনতে পারে? সোনালী আপু? নাহ আপু ঘুম কাতুরে মেয়ে। তাহলে কি ইরা? হতে পারে!

সে এগিয়ে যায় ইরার রুমের দিকে। দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মৃদ্যু গলায় গানের শব্দ ভেসে আসছে। মিরার হৃদপিন্ড অব্দি কেঁপে উঠে এই শব্দে। নিশুতি রাতে গানটা শুনতেই তার মন উদাস হয়ে যায়। এই গায়ককে সে চেনে! খুব পরিচিত কণ্ঠ । মিরার মনে হচ্ছে এই কণ্ঠ শুনেই সে এক জীবন পাড় করে দিতে পারবে। সে চমকে উঠে। আচ্ছা ইরা মধ্যরাতে ইমানের খালি গলায় গাওয়া গান কেন শুনছে?

গান ভেসে আসছে। মিরা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
“কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে–
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।”
মিরার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। হাঁসফাঁস লাগছে তার। আচমকা গান বন্ধ হয়ে গেল। গান থেমে যাওয়ার পর তার মনে হতে লাগে, কি যেন নাই! কি যে হারিয়ে গেল! কি যেন খোয়া গেল! কি যেন স্পর্শের বাইরে উড়াল দিলো। কিন্তু সেই “কি” টা কি এটা মিরা অনুসন্ধান করতে পারছে না। সে দরজার সঙ্গে মিশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

ইরার রুমের ভেতর থেকে গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজে মিরা চকিত দৃষ্টিতে দরজা নামক ঢালটার দিকে তাকালো। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। শুধু এতোটুকুন বুঝলো তাহলো, যে মেয়েটা কাঁদছে তার বুকের ভেতর অনেক যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণার কথা কাউকে বলা যায়না। প্রকাশ করা যায়না। সবার আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হয়। এ যন্ত্রণার অন্ত নেই। সীমা নেই। ইরার কি খুব দুঃখ? ইরা কেন এতো কষ্ট পাচ্ছে?
মিরা খুব করে ইরার নাম ধরে ডাকতে চাইলো কিন্তু মুখ দিয়ে তার কোন শব্দ বের হচ্ছে না।

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছে ইমানের। ফযরের আগে আগেই। সে উঠে বারান্দায় চলে গেল। ভোরের সুমিস্টি বাতাস গায়ে লাগতেই মনটা সতেজ হয়ে উঠলো। এতো নম্র বাতাসের উষ্ণ ছোঁয়া পাওয়ার পর কার মনই বা খারাপ থাকবে? সে বারান্দায় থাকা ফুলের টবগুলোর দিকে তাকালো। সব গাছই মরতে বসেছে। কেউ যত্ন নেয়না। অথচ দুইটা অর্কিডের গাছ আছে, সঙ্গে একটা গোলাপ গাছ। সব কটাই মরে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে।

ফুল ফোটা তো দূরের কথা। ইমান কি ভেবে, বাথরুমের মগ দিয়ে পানি ভরে এনে গাছগুলোতে পানি দিলো।
এরপর আর ঘুমালো না। অফিসের কাজ করা শুরু করলো। এই অবসর সময়ে হাতের কাজ গুছিয়ে রাখা ভালো। আজকে মিস্টার চৌধুরীর সঙ্গে সন্ধায় মিটিং আছে। সেখানেও এটেন্ট করতে হবে। অসহ্য লাগা শুরু করলো তার। সেখানে নিশ্চয়ই মিরাও থাকবে! মিরাকে দেখলেই তার পুরনো ঘা তরতাজা হয়!

সকাল আটটার মধ্যে রেডি হয়ে ইমান ব্রেকফাস্ট খাওয়ার জন্য ডাইনিং রুমে গেল। সে সবসময়ই সকালে একটা পরোটা, সবজি আর ডিম খায়। সঙ্গে এক কাপ কড়া লিকারের চা। তাদের বাসায় যে সাহায্যকর্মী আছে সে ইমানের ফুড চার্ট জানে। সেভাবেই সব আগেভাগে বানিয়ে রাখে। খাওয়ার টেবিলে বসামাত্র তার জন্য খাবার পরিবেশন করা হয়।

ইমান ডাইনিং টেবিলে গিয়ে ভারী অবাক হলো। আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে? সাদ যেই ছেলে কিনা সকাল এগারোটার আগে উঠে না। সে আজকে এতো সকালে নাস্তার টেবিলে?
তার মনে পড়লো, এই ছেলে কালকে সদ্য প্রেমে পড়েছে।
নতুন নতুন প্রেমে পড়লে ভূতে কিলায়!

ইমান দেখলো বাবা বসে আছেন আলস্য ভঙ্গিতে। সে নিজের মুখটা পেপারে গুজে রেখেছে।
সাদ পরোটা আর চিকেন ফ্রাই খাচ্ছে। ইমানের বাবা জহির খান সকালে চিঁড়া-গুড় খান। আর কিছু ই মুখে নিবেন না।সঙ্গে রঙ চা থাকে। ফল থাকলে ফল খান। আজকে তার সামনে আম কেটে রাখা হয়েছে। আমের আশেপাশে একটা মাছি ভো ভো করছে। কারো সেদিকে খেয়াল নেই।
ইমান টেবিলে বসতেই সাহায্যকর্মী সঙ্গে সঙ্গে পরোটা আর সবজি দিয়ে গেল। সে খাওয়া শুরু করলো নিঃশব্দে।

তখনই ইমানের সৎমা হাসনাহেনা বানুর আগামন ঘটে। সে স্বামীর পাশের চেয়ারে বসল। ইমানের ওনার সঙ্গে কখনোই কোন সমস্যা ছিল না। না বর্তমানে আছে! তারপরও তিনি ইমানকে।দেখতে পারেন না। ইমানের অবশ্য এতে কিছু যায়-আসে না।দেখতে পারো না তাইলে চোখ বন্ধ করে রাখো!
এই যে খেতে যখন হাসনাহেনা বানু আসলেন, তখন ইমানকে টেবিলে আবিষ্কার করা মাত্র তার মুখ কালো হয়ে গেছে তা দিব্যি টের পেয়েছে ইমান।

ইমান খাওয়ায় মনোযোগ দিল। সবাই নিঃশব্দে খেয়ে যাচ্ছে৷
নিরবতা ভেঙে জহির খান বলে উঠে, ম্যানেজার খবর দিলো, আমাদের নাকি সাত কোটির মতো লোকসান হয়েছে?
ইমান বুঝলো প্রশ্নটা তাকেই করা হচ্ছে। সে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, হ্যাঁ। সাত কোটি সাতচল্লিশ লাখ। প্রায় সাড়ে সাত কোটিই বলা যায়!
জহির সাহেব বলে উঠে, সামনে কি করবে কিছু ভেবেছো?
ইমান খেতে খেতে জবাব দিলো, মিস্টার চৌধুরীর সঙ্গে নেক্সটে একটা ভালো প্রজক্টে কাজ করব৷

— ভালো। অফিসের সবাই ঠিকমতো কাজ করে?
— হ্যাঁ।
হাসনাহেনা বানু এবারে চুপ থাকতে না পেরে বলে উঠে, তুমি সম্পূর্ণ ব্যবসা ইমানের উপর ছেড়ে দিয়েছো কেন?
জহির খান কঠিন গলায় বলে, তাহলে কি দারোয়ানের উপর ছেড়ে দিব আমার ব্যবসা?
উনি থমথমে খেয়ে বলে, নিজেও তো সামলাতে পারো।
— আমি আপাতত নারায়নগঞ্জের গামের্টস নিয়ে ব্যস্ত আছি।
— তুমি নেই জন্যই এতো বড় লস হলো। ইমান পারে নাকি সামলাতে?
হাসনাহেনার কথাটা কর্ণপাত হওয়া মাত্র ইমান একবার তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো। কিছু বললোনা।

জহির খান বলে উঠে, ব্যবসা করলে ক্ষতি আসবেই।
সাদ খাওয়া শেষ করে চলে যেতে ধরলে, জহির খান কড়া গলায় বলে, কই যাচ্ছো?
সাদ আস্তে জবাব দিল, এক ফ্রেন্ডের বাসায়৷
— আর কতদিন গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরবে?

সাদ জবাব দিলোনা। আজকের আবহাওয়া যে ভালো না সেটাই সে অগ্রীম বুঝে গেছে। কিছু বলা মানেই বাঘের সামনে গিয়ে নাচানাচি করার সমান। এর চেয়ে চুপ থাকাই উত্তম।
ইমান একবার সাদের দিকে তাকালো। আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। চা চলে এসেছে। সে চায়ে চুমুক দিল। আজকের চা ভালো হয়েছে। মিস্টি একটু বেশি তাও খেতে ভালো লাগছে।
জহির খান বলে উঠে, সাদ তুমি আজকে থেকে ইমানের সঙ্গে অফিস যাবে। ওর কাছ থেকে কাজ শিখবে। এটাই আমার ফাইনাল কথা।

সাদ মুখ কালো করে বলে, ঠিক আছে আব্বু।
এবারে উনি ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলে, সাদকে তোমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে রাখলাম। ওকে সব কাজ বুঝিয়ে দিবে। পারবে না?
ইমান বলে, পারব৷
হাসনাহেনা বানু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে, আমার ছেলে কেন এসিস্ট্যান্ট হবে? ওকেও এমডি বানাও৷

— একটা রাজ্যে একজনই রাজা থাকে।
— আমার ছেলে কেন অন্য কারো এসিস্ট্যান্ট হবে ?
— অন্য কারো বলতে কি বুঝাচ্ছো? নিজের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ শিখবে। যোগ্যতা ছাড়া বাপের কোম্পানি তেও এমডি হওয়া যায়না। আগে যোগ্যতা অর্জন করুক। এরপর সেও একদিন এমডি হবে।
ইমান উঠে দাড়িয়ে বলে, আমি যাই তাহলে?
সাদ বলে, আমি কি আজকে থেকেই যাব তোমার সাথে?
ইমান সাদের চেহারা দেখে বুঝে গেল, সে মোটেও আজ থেকে কাজ করতে চায়না। অফিসে যাওয়ার চেয়ে ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে আড্ডা দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার জন্য।
সে মৃদ্যু হেসে বলে, আজ থাক। কালকে থেকে শুরু কর । এরমধ্যে তুই প্রিপারেশন নে। কালকে থেকে অফিস যাস।

সাদ বেশ খুশি হয়ে বলে, থ্যাংকস ভাইয়া।
ইমান বের হয়ে যায়। আজকে ড্রাইভার সঙ্গে নিয়েছে। কালকে সন্ধায়ই ড্রাইভার পাঠিয়ে নতুন লুকিং গ্লাস কিনে আনিয়েছে সে।

সন্ধ্যার মিটিংয়ের জন্য মিরা দুপুর চারটা থেকে সাজতে বসেছে। এখন পাঁচটা বাজতে চলল।প্রায় একঘন্টা ধরে সে রেডি হচ্ছে। আজকে সে কালো রংয়ের একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। আই -লাইনার দিতে গিয়ে মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে তার! দু চোখে দু’রকম হয়েছে! ডান চোখের আই-লাইনার খানিকটা থেবড়ে গেছে।

মিরা আর ঠিক করলো না। চশমা পড়লে কিছুই আর বোঝা যাবেনা। সে চোখে চশমা পড়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো। হাইলাইটারটা একটু বেশিই গ্লো করছে কি? সে আয়না আবারো নিজেকে দেখতে লাগে।
তখনই সোনালী রুমে ঢুকে পড়ে। তাকে দেখে বলে, কি রে? নিজেকে এতো দেখার কি আছে? ডেটে যাচ্ছিস নাকি?
আপুর কথা শুনে মিরা বেশ লজ্জা পেল৷ সোনালী আপু বিছানায় বসে বলে, শোন আসার সময় আমার জন্য কাচ্চি আনবি৷

মিরা আরেকবার চুল আছড়ে নিয়ে বলে, ওকে। দুলাভাই কবে আসবে?
— তোর দুলাভাই তো শ্বশুড়বাড়িতে ঘরজামাই থাকতে লজ্জা পায়। এইজন্য আসেনা। কাল বা পড়শু আসতে চাচ্ছে।
— তুমি তো বেবি হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবে তাই না?
— হ্যাঁ। বাবা যেতে দিবেনা। ওই বাসায় সারাদিন আমি একা থাকি। তোর দুলাভাই তো অফিসে চলে যায়। কে দেখাশোনা করবে আমার? এখানে তোরা আমার সেবা করিস এইজন্যই আছি।
মিরা বললো, আপু কাচ্চির সঙ্গে আর কিছু আনব?
— বোরহানি আনিস।
— আচ্ছা। যাই তাহলে?
— যা।

মিরা বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে আম্মুর কাছ থেকে বিদাই নিয়েছে সে।
সারা রাস্তা আব্বুর বলা কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগে তার। ইমান কি তাকে বিয়ে করতে রাজী হবে? সে কিভাবে ইমানকে নিজ মুখে বিয়ের কথা বলবে? কিন্তু যা করার তাকেই করতে হবে। বাবার হাব-সাব দেখে সে ইতিমধ্যে বুঝে গেছে যে তিনি মিরাকে সাহায্য করবেনা।
রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি থামে।আজকেও সে লেইট। ইমান আগেই এসে বসে আছে। ইমানের পরনেও কাকতলীয়ভাবে কালো শার্ট। আজকে ইমানকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে কোন কারন ছাড়াই!
কালোতে মানায় ছেলেটাকে বড্ড যে!

মিরা এগিয়ে গেল। সে গিয়ে ইমানের পাশের চেয়ারটাতে বসলো। এতে ইমান কিছুটা বিব্রতবোধ করছে তাও টের পেল মিরা।
মিস্টার চৌধুরী বলে উঠে, একটি বিশেষ ঘোষণা আছে।
ইমান বলে, কি?

— আমাদের এই প্রজেক্টের কাজের জন্য কুয়াকাটা যেতে হবে।
ইমান ভ্রু কুচকে বলে, কুয়াকাটা কেন?
— একটা ফফটোশুট হবে। সো আমাদেরও থাকতে হবে। আজকে রাতের বাসে রওনা দিই?
ইমান বলে উঠে, নো ওয়ে। আমার প্রিপারেশন নেই। এভাবে কিভাবে যাব? সময় লাগবে না প্রস্তুতি নিতে?
মিস্টার চৌধুরী বলে উঠে, ছেলে মানুষের আবার প্রিপারেশন লাগে নাকি? দাঁড়ি সেভ করতে দশ মিনিট, গোসল করতে দশ মিনিট আর দুইটা শার্ট আর দুইটা প্যান্ট ব্যাগে ঢুকাতে পাঁচ মিনিট। টোটাল পঁচিশ মিনিটে খেল খতম।

ইমান বলে উঠে, মিরার রেডি হতে সময় লাগে। ও আজকে রাতে যেতে পারবে না।
মিরা ও তড়িঘড়ি করে বলে, আমার মোটেও সময় লাগে না। আমি এম ইন। আমি অনেক দিন ধরেই টুর‍্যে যেতে চাচ্ছিলাম।
মিস্টার চৌধুরী বলে, কুয়াকাটায় আমার শ্বশুড়বাড়ি। তোমাদের ঘুরে নিয়ে বেড়াব। তিন দিনের প্লান করি তাহলে।
ইমান মনে মনে প্রচন্ড বিগড়ে যাচ্ছে। কাজের মধ্যে আবার ঘুরাঘুরি কেন? অসহ্য! সে জানালার দিকে তাকালো।

শেহজাদী পর্ব ১৬

তখনই মিরা মিস্টি করে ডাক দিলো, ইমান?
ইমান পিলে চমকে উঠে। এরপর সে ঘাড় ঘুরালো। মিরাকে দেখতেও আজো চমৎকার লাগছে। চশমার ভেতরের গ্লাস দিয়ে মায়াভরা চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।
ইমান বলে উঠে, কি?
— আপনি কি আমাকে বাসায় রেখে আসতে পারবেন?
— না।
— ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে গেছে।
বড় আব্বুর লাগবে গাড়ি।
ইমান রাগী গলায় বলে, তোরা এক গাড়ি নিয়ে টানাটানি করিস কেন? টাকার তো অভাব নাই। আরেকটা কিন।

এটা বলেই সে চুপ মেরে গেল। মিস্টার চৌধুরীর সামনে সে চায়না অতীত প্রকাশ পাক।
এরপর থেমে থেকে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে, আসো।

শেহজাদী পর্ব ১৮