শেহজাদী পর্ব ৩২ || Arishan Nur || রোমান্টিক গল্প

শেহজাদী পর্ব ৩২
Arishan Nur

” ইমানের বিয়ে” ঘুম থেকে উঠামাত্র এই দুটো শব্দ কানে আসলো মিরার।শব্দ দুটো লোহার পেরেকের মতো কান ও মনে গিয়ে ঢুকে গেল। তার ঘুম মুহূর্তের মধ্যে উবে গেল। বুকের বাম পাশটা যেন কামড়ে উঠে। সে হতভম্ব হয়ে যায়। চারপাশ ঘুরতে লাগলো তার। মাথায় সুক্ষ্ম একটা ব্যথা আর মনে তীক্ষ্ম একটা ভয় আবিষ্কার করলো সে।

কালকে রাতে সে আর সোনালী আপা একরুমে ছিল। ইমান আর সাদকে মিরার রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তারা যে কয়দিন আছে সেখানেই থাকবে। প্রথম ইরার রুমটা ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ইরা রাজী হচ্ছিল না জন্য মিরাই তার রুম ছেড়ে আপুর রুমে এসে থেকেছে৷
মিরা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে এবং ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, বিয়ে মানে?কিসের বিয়ে? কার সঙ্গে বিয়ে? আর কেনই বা ইমান বিয়ে করবে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাগুলো মিরা মুখ ফুলিয়ে বলে যাচ্ছিল একাধারে৷ ইমানের বিয়ের কথা শুনে তার হাত-পা কাঁপছে।মাথা ভোভো করছে। ভীষণ দুঃখ হচ্ছে তার। কপাল চাপড়াতে মন চাচ্ছে৷
সোনালী আপা তখন মুখে লোশন মাখছিলেন আর তার হ্যাসবেন্ডের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল লাইড স্পিকারে । মিরাকে এতোগুলা প্রশ্ন করতে দেখে সে ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুচকে বলে, কি রে? উঠলি কখন? আর ইমানের ব্যাপারে তুই কিছু জানিস না?
মিরা বলে উঠে, কি জানি না?

সোনালী আপু হালকা হেসে বলে, ইমানের বিয়ে উপলক্ষে ওদের বাসা রঙ করা হচ্ছে।নতুন বৌ আসবে জন্য খাট-আলমারি কেনা হয়েছে৷ এখন খালি বাসর বাকি!
শেষের কথাটা শুনে মিরার নাক লাল হয়ে এলো। ব্যাটা বিয়ে করে ফেলছে এটা মানতে যেন মিরার নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে৷ কি নিষ্ঠুর নিয়তি তার!

সোনালী আপা পুনরায় তার স্বামীর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷ মিরার চোখ ইতিমধ্যেই ছলছল হয়ে উঠেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি তার সঙ্গেই কেন ঘটতে হল? সে নাক টানা শুরু করলো। কিছু ভালো লাগছে না! সে আবার বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না শুরু করে দিলো। বালিশে মুখ গুজা থাকলেও সোনালী আপুর কান অব্দি তার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
আপা অস্থির হয়ে উঠে বলে, তুই কান্না করছিস কেন? কি হলো আবার তোর?

— কিছু হয়নি আমার৷
— তাহলে কাঁদছিস কেন?
— এমনি।
— মানুষ এমনি কাঁদে?
–হ্যাঁ কাঁদে। কান্না করেও সুখ আছে৷
সোনালী আপু তার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, তোর হলোটা কি বলতো? কারণ ছাড়াই ঘুম থেকে উঠে কান্না করার মানে কি?
— আমি কারণবিহীনই কাঁদি! কাঁদতে বড় সুখ! যে ব্যক্তি একবার কান্নাতে সুখ খুঁজে পাবে তার জীবনে আর কোনদিন আধার নামবে না।
— তা জানি। কিন্তু,,,,,,,,

— আপু! আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না। তুমি যাও না তোমার প্রিয় ভাইয়ের কাছে৷
সোনালী মৃদ্যু হেসে বলে, এই মিরু! ইমানের বিয়ে হচ্ছে শুনে তুই কান্না করছিস কিনা!
মিরা ঠোঁট বাকিয়ে বলে, জনাব বিয়ে করছে জন্য বুঝি আমার বয়ে যাচ্ছে! হুহ! তবে হ্যাঁ আমার খারাপ লাগছে! উহু ওনার জন্য না! ওনার বৌয়ের জন্য! বেচারি একটা ভালো মেয়ে হয়েও ওইরকম খাটাশ, বজ্জাত ছেলেকে বিয়ে করবে। এরচেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কি হতে পারে?

সোনালী আপা এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে দম ফাটানো হাসি হাসতে লাগে। মিরা উঠে বসে বলে, আমি সিরিয়াসলি মেয়েটার জন্য স্যাড ফিল করছি। আমি তো আর নিষ্ঠুর নই! মানুষের দুঃখে দুঃখী হই।
একথা শুনেও সোনালী আপুর হাসি থামলো না৷
মিরা উদাস হয়ে বিষন্ন মনে চেয়ে রইল কিন্তু ততোক্ষণে সে কল্পনার রাজ্যে বিরাজ করছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে, ইমান একটা সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুইজনের কুটুর-কুটুর করে গল্প করছে। মেয়েটার কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা কাঁথা দিয়ে মুড়ানো। আচমকা কল্পনায় সে নিজের উপস্থিতি টের পেল। ইমান বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে মিরার কাছে গিয়ে বিনয়ী সুরে বলে, এই মিরা! বেবিকে একটু সামলে রাখ তো! মাত্র দুধ খেয়েছে বাবু। ঘণ্টা-খানেক আর জ্বালাবে না।তোর কাছে রাখ। আমরা একটু যাচ্ছি।

মিরা তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
— বৌকে নিয়ে একটু রোম্যান্স করতে যাচ্ছি। ইউ নো না গ্যাদা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে রোমান্স করা কুয়াইট ডিফিকাল্ট!
কথাটা বলেও ইমানতার সুন্দরী বৌকে নিয়ে রওনা হলো রোমান্স করতে যাওয়ার জন্য। তারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাচ্চা মিরার কোলে থেকেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুড়ে দিলো। কল্পনার সমাপ্তি এখানেই।

ইমান মিরার বিছানায় আষ্টেপৃষ্টে শুয়ে আছে৷ কিছুক্ষণ আগেই ঘুম ভেঙেছে তার। সে মিরার ব্যবহার করা বালিশটা বুকের সঙ্গে লেপ্টে রেখেছে৷ কিছুক্ষণ পরপর বালিশটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকঁছে সে। বালিশটা থেকে মিরা-মিরা গন্ধ আসছে। সে মনে মনে ভেবে নিয়েছে, বালিশটা যাওয়ার সময় চুরি করে নিয়ে যাবে!
“যে প্রেমিক তার প্রেয়সীর নিত্যব্যবহার্য জিনিস চুরি করে নিজের কাছে না রাখে, সে প্রেমিক না বরং ছাই প্লাস কয়লা! ”

সে স্মিত হাসলো আপন মনে। সাদ বাথরুম থেকে বের হয়ে বলে, ভাইয়া তুমি বালিশটা এমন ভাবে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে রেখেছো যেন এটা বালিশ নয় বরং ভাবী৷
ইমান বালিশটা চট করে সরিয়ে দিল। ছোট ভাইয়ের মুখে এসব কথা শুনলে তার কেমন আজব লাগে!
সাদ হেসে বলে, ভাইয়া লজ্জা পেলে নাকি?

— নাহ৷
— ভাবীর বালিশ সরিয়ে রাখলে যে?
ইমান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে, তোর কোন ভাবী আছে নাকি? আমার কি বিয়ে হয়েছে? ভাবী বলে কাকে ডাকছিস?
— মিরা ভাবীর কথা বলছি৷
–মিরা তোর ভাবী হলো কবে থেকে সেটা আগে বল! তারপর ভাবী-ভাবী করে রাম ছাগলের মতো চেচ্যাস!

সাদ হেসে বলে, আমি জানি, তুমি দিনশেষে মিরা ভাবীকেই বিয়ে করবে। এইজন্য প্র‍্যাকটিস করছি ভাবী বলে ডাকার৷ অভ্যস্ত হতে হবে না? নাহলে বিয়ের পর ভাবীকে ভুলে আপু ডাকলে কি অবস্থাটা হবে? তুমি আমার ভাই থেকে দুলাভাই হয়ে যাবে৷

এরপর সে ইমানের পাশে বসে বলে, ভাইয়া! তুমি আর আমি একই ঘরের জামাই হবো! ওহ মাই গড! শ্বশুড়বাড়ি ঘুরতে আসলে দুইজনকে আলাদা করে মিষ্টি নিতে হবে না। একবারে নিলেই চলবে!
ইমান সাদের ছাইপাঁশ কথায় বিরক্ত হয়ে বলে, চুপ কর তো! ইরামনি তো রাজী হয়নি। মনে হয় না বিয়েটা কার্যকর হবে আর আমি চাই না ইরাকে ফোর্স করা হোক র ব্যাপারে।
সাদ বলে উঠে, আমি নিজেও চাই না ইরাকে কেউ জোর করুক। এই যুগে কোন মেয়ের যদি জোর করে বিয়ে হয় ব্যাপার টা হতাশাজনক হবে। ও রাজী থাকলেই আমি কবুল বলব কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?

— সেটা তোর ব্যাপার। ওর সাথে ভাব জমা! কথা বল। ফ্রি হওয়ার চেষ্টা কর।
— ইয়াপ!
ইমান উঠে বাথরুমে গেলো। বাথরুম থেকে একেবারে গোসল সেরে রুম থেকে বের হলো। তখন সকাল নয়টা বাজে। রান্নাঘরে ঘুটঘাট আওয়াজ। সকাল দশটার আগে মামারা রুম থেকে বের হন না। নিজেদের ব্যবসা তাদের। এইজন্য দশটার পর অফিসে বসেন। ইমানের নানুর চামড়ার ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসাটা বংশ পরম্পরায় দুই ভাই পেয়েছে। বড় মামা বাবার কাছ থেকে পাওয়া চামড়ার ব্যবসা মালিকানা বাদেও নিজের প্রচেষ্টায় অন্য অনেক ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে ইনভলভ হয়েছিলেন এবং এখনো হচ্ছেন। যেমন আগে মশলা ব্যবসা করতেন।এখন মিরার সঙ্গে ড্রিম এটিয়ারের পাটনার৷

ইমানের বাবার সঙ্গে কি যেন এক প্রজেক্টে কাজ করার সময় মামার তার বাবাকে ভালো পাত্র মনে হলো। বোনের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। অতঃপর বিয়ে সম্পন্ন হয়। ইমান যখন ছোট তার মা অকালে মৃত্যুবরণ করে। তখনই বড় মামা ইমানকে নিজের সঙ্গে আনতে চেয়েছিলেন। ওই সময় বাবা আর মামার মধ্যকার সম্পর্ক অবনতি হয়। জহির খান ইমানকে নিজের সঙ্গে রাখেন এবং পরবর্তীতে হাসনাহেনাকে বিয়ে করেন৷ তার দুই বছর পর সাদ হয়। বাবা সবসময়ই ইমানকে বুঝিয়ে এসেছে যে সাদকে যেন নিজের ছোট ভাই হিসেবে দেখে। কখনোই সৎ ভাইয়ের নজরে না দেখে৷ সাদ ছোট থেকেই ইমানের ভক্ত। ভাইয়াকে খুব স্নেহ, সম্মান ও ভালোবাসে সে। বেচারা ক্লাস সেভেনে উঠে জানতে পেরেছিল যে ইমান তার আপন ভাই না! সেদিন ছেলেটা এতোই কষ্ট পেয়েছিল যে দুপুরে খায়নি অব্দি। পরে ইমান নিজে তাকে খাইয়ে দিয়েছিল৷

ততোদিনে রক্তের সম্পর্কের চেয়ে মনের বন্ধন বেশি মজবুত হয়ে গিয়েছিল, জন্য তাদের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল জন্মায় নি। আর সম্পত্তি বা টাকা-পয়সার ব্যাপারে দুই ভাই-ই উদাসিন! কারোরই জমি-জামা, সম্পত্তি নিয়ে আগ্রহ নেই। বাবা যা দিবে তাই! তবে হাসনাহেনা চান ইমান যেন এক পয়সাও না পায়! এটা তার ব্যক্তিগত মতামত যা প্রকাশ করার সাহস তার নেই। ইমানের সৎমা মানুষ হিসেবে কেমন তা কোনদিন ইমান বুঝার চেষ্টা করেনি। তার সঙ্গে সে তেমন একটা কথা বলেনা।
ইমান ডাইনিং রুমে গিয়ে দাঁড়ালো। ডাইনিংরুম আর ড্রয়িং রুমের মধ্যে কোন দরজা নাই, পর্দা নেই কাজেই সব দেখা যায়। তার চোখ পড়লো, ড্রয়িংরুমের বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো। বারান্দায় আসতেই বুঝতে পারলো, মিরা দাঁড়িয়ে আছে৷
সে মৃদ্যু গলায় ডাকে, মিরা?

মিরা তার দিকে ঘুরে তাকাতেই ইমান নাক-মুখ কুচকে বলে, এই মেয়ে এই! এটা কি বাথরুম?
মিরা উত্তর দিলো, এটা বারান্দা।
— তাহলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ কেন করছো?
মিরা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, আমি বাথরুমে ব্রাশ করতে পারি না। বাসায় ঘুরতে ঘুরতে ব্রাশ না করলে আরাম পাই না৷
মিরা মুখে ব্রাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ব্রাশের হ্যান্ডেলে হাত রাখা। মুখের আশেপাশে সাদা ফ্যানে উঠে গেছে৷

ইমান বলে, ইশ! তোমাকে দেখে আমার কেমন জানি লাগছে। যাও বাথরুমে যাও৷ কুলি করো৷
মিরা তার কথা আমলে নিলো না। সে ব্রাশ করায় মনোযোগ দিলো।
ইমান আবারো তার দিকে তাকালো। আজকেও সে ঢিলাঢালা একটা টি-শার্ট পড়েছে। টি-শার্টে লেখা “উই আর অন এ ব্রেক” সঙ্গে কালো প্লাজো। চুল বেনী করা কিন্তু অগোছালো। সে অবাক হলো সামনে থাকা ব্রাশ হাতে নিয়ে, সাবলীলভাবে, ব্রাশ করতে থাকা মেয়েটাকে দেখে !
অবাক হলো আরো একটা বিষয়ে তাহলো, এইজন্য যে মিরাকে ব্রাশ করা অবস্থাতেও কিউট লাগছে! ইমানের একদমই ঘৃণা লাগছে না তাকে দেখে! কি আশ্চর্যের বিষয়!

সকালে নাস্তার টেবিলে ঠিক হলো ইমান আর সাদকে পুরান ঢাকার মজার মজার স্ট্রিটফুড খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হবে। সাদ তো দারুণ এক্সাইটেড। সে পুরান ঢাকার স্ট্রিটফুড নিয়ে অনেক ফুড ব্লগিং দেখেছে কিন্তু টেস্ট করেনি আগে কোনদিন।
ইরা রুটি ছিঁড়ে খেতে খেতে বলে, রাস্তার খাবার আনহাইজেনিক হয়।
সাদ অকপটে জবাব দেয়, বাঙালী আনহাইজেনিক খাবার খেয়েই অভ্যস্ত। এই যে ফুচকাওয়ালা মামার ফুচকা এতো মজা কেন? বাসার ফুচকা ওইরকম মজা লাগে না কেন? বলুন কেন বাসার ফুচকা বাইরের রাস্তার মতো মজা না?

ইরা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলে, আমি কিভাবে জানব?
সাদ বলে, ফুচকা ওয়ালা ফুচকা বানানোর আগে মনের সুখে নাক,কান চুলকে নেয় এইজন্য!
ইরা তার কথা শুনে মুখ কুচকে বলে, ছিঃ! ইয়াক! এসব নোংরা কথা কেন বলেন?
সাদ আর ইরার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো এমনকি সবসময় গম্ভীর থাকা বড় মামাও হাসলেন খুব।

ইরা ঠিকঠাক ভাবে না খেয়েই উঠে গেল। এইসব শুনলে তার বমি পায়। সে ছাদে উঠে গেল। ছাদে উঠে দেখলো গাছ গুলো মরা মরা অবস্থায় আছে। সে সময় নষ্ট না করে পানি দেওয়া শুরু করে। ছাদেই পানি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে৷
সে যখন গাছে পানি দেওয়ায় ব্যস্ত তখন কেউ একজন ছাদের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখায় মগ্ন।
সাদ এগিয়ে এসে বলে, হেল্প লাগবে?
ইরা তার কথায় চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকালো।
সাদ সুন্দর করে মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলে, ভয় পেলেন বুঝি!

— হুট করে কথার আওয়াজে চমকে গিয়েছি৷ সত্য বলতে আপনাকে এখানে আশা করিনি৷
আপনার জীবনে আমি আপনার পারমিশন ছাড়া ঢুকে গেছি ইরাবতী! সেই আশাও আপনি করেননি, তবুও ঘটে গেছে। কথাটা মনে মনে বলে সে। এরপর প্রকাশ্যে বলে, আপনি এতো চুপচাপ থাকেন কেন? কথা বলার জন্য কি ভ্যাট দিতে হয়?
ইরা হালকা হাসলো। ওইসময় একটা নরম বাতাস এসে দোলা দিয়ে গেল৷ বাতাসে ইরার চুল হালকা এলোমেলো হয়ে গেল সঙ্গে কাঁধে ঝুলতে থাকা ওড়নাটা ঈষৎ সরে গেল। এতে ভীষণ অস্বস্তিবোধ করতে লাগে সে। এখন যদি সে হুড়মুড়িয়ে ওড়না ঠিক করতে লেগে পড়ে তবে ছেলেটার নজর সবার আগে ওদিকেই যাবে৷

সাদ বোধহয় কিছু বুঝলো সে দৃষ্টি সরিয়ে, অন্য দিকে তাকিয়ে পরিবেশ হালকা করার জন্য বলে, আপনাদের ছাদটা অনেক সুন্দর! কতো গাছ! দোলনাও আছে। আপনি দোলনায় বসেন না?
ইরা ওড়না ঠিক করলো। কেন যেন তার সাদের এই এক্টিভিটিটা পছন্দ হলো! জেন্টেলম্যানের মতো কাজ ছিল বটে!
সে রিনরিনে গলায় বলে, না উঠি না। আমার দোলনায় ঝুললে মাথা ঘুরে। আপুর দোলনা ভীষণ পছন্দ! দোলনায় বসে ও গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে৷

— আপনার আপুকে ত ভালোবাসেন অনেক তাই না?
— খুব৷ কিন্তু আপুর কিছু কাজ-কর্ম আমার পছন্দ হয়না।
— একটা মানুষকে হান্ড্রেট পারসেন্ট কারো পছন্দ হবে না। মনো করো, কোন ব্যক্তির সেভেনটি পারসেন্ট ভালো লাগবে বাকি থার্টি পারসেন্ট মানিয়ে নিতে হবে৷
এই কথাটাও ইরার পছন্দ হলো। বুদ্ধিমানের মতো কথা ছিল৷
সে উত্তরে চুপ রইল৷ সাদ তার দিকে ফিরে এসে বলে, আমরা কি বন্ধু হতে পারে?
ইরা সাদের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

শেহজাদী পর্ব ৩১

সাদ তার প্রতিক্রিয়া দেখে বলে, রিল্যাক্স! ফ্রেন্ড হতে চেয়েছি জাস্ট আর কিছু না। আর তাছাড়া আমার নতুন নতুন ফ্রেন্ড বানাতে ভালো লাগে। সোনালী আপুও কালকে রাত থেকে আমার ফ্রেন্ড! আপনার কি কোন ছেলেকে ফ্রেন্ড বানাতে অসুবিধা?
— আসলে হাতে-গোনা কয়েকজনই আছে যাদের আমি বন্ধু হিসেবে মানি। আমার ফ্রেন্ড হতে হলে আমাকে বুঝতে হবে!
সাদ মনে মনে বলে, আপনাকেই তো বুঝতে চাই! শুধু বুঝতে না মুখস্থ ও করে ফেলতে চাই।
সাদ কিছুটা ভাব নিয়ে বলে, আমার ফ্রেন্ড হতে হলে আমার সঙ্গে ফ্রি হতে হবে। এবার বলুন! ক্যান ইউ বিকাম ফ্রেন্ডস?

ইরা কিছুটা ভাবলো। বন্ধু হওয়াই যায়। এর আগে তাকে কেউ এভাবে ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করেনি। সত্যি বলতে সে এমনই একজন বন্ধুর অভাবে ছিল! তাই হালকা মাথা ঝাকিয়ে বলে, ফ্রেন্ডস৷
সাদ তড়িঘড়ি করে টব থেকে একটা টকটক লাল একটা জবা ফুল ছিঁড়ে ইরার সামনে মেলে ধরে।
ইরা অদ্ভুত নজর নিক্ষেপ করলে, সে বোকা হেসে বলে, ফ্রেন্ড হিসেবে ফার্স্ট গিফট। টেক ইট ইজি মাই ফ্রেন্ড। আমাদের ববন্ধুত্ব যেন এই ফুলের মতো রঙিন ও সুন্দর হয়।
ইরা হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিয়ে বলে, থ্যাঙ্কিউ। বাট আপনাকে যে কিছু দিলাম না!
— আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসো! ব্যস এটাই আমার জন্য বেস্ট গিফট৷
ইরা প্রতুত্তরে সুন্দর করে হাসলো।

শেহজাদী পর্ব ৩৩