সত্যি ভালোবাসো পর্ব ১৩ || Fatema Khan

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ১৩
Fatema Khan

(ছাদ থেকে সোজা রুমে আসলাম।এসে বিছানায় বসে হাপাতে লাগলাম।অনেক ভয় করছিলো আজ তাহসিন ভাইয়াকে।আমি এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।)
আরিশঃকি হয়েছে তোমার এমন করছো কেনো?
তাহিয়াঃও তাহসিন ভাইয়া না আজ কেমন করছিলো।ওনার চোখ লাল হয়ে গেছিলো। আর উনি আমাকে….
আরিশঃতুমি ছাদে গিয়েছিলে নাকি?
তাহিয়াঃ হুম।ভাইয়া এমন কেনো হয়ে গেলো,আর ভাইয়া নাকি কি হারিয়ে ফেলেছে?কি হারাতে পারে সেটাই আমার ব্রেইনে আসছে না।
আরিশঃসেটা আমিও জানি না।তবে তোমাকে একটা ছোট গল্প বলি।
তাহিয়াঃবলো।
আরিশঃআমার কাছে আসো।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলি।

(আমি আর আরিশ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি।আরিশ একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন)
আরিশঃজানো একটা মেয়ে ছিলো না পিচ্চি মেয়ে,১৬বছরের পিচ্চি।আর একটা ২০বছরের যুবক। যুবক ছেলেটা পিচ্চি মেয়েটাকে খুব ভালবাসে।মেয়েটা এতোটাই অবুঝ সে কিছুই বুঝে না।একদিন যুবকটি এক কাজে দূরে যেতে হয় সেই সময় অই পিচ্চি মেয়েটার একটা ২৭বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে হয়ে যায়।এখন যখন যুবকটি জানতে পারে পিচ্চি মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে তার এখন কেমন লাগবে বলো তো।
তাহিয়াঃঅনেক কষ্ট হবে,সে তো তার সবকিছুই হারিয়ে ফেলল।
আরিশঃএইতো তুমি বুঝতে পারলা সব হারিয়ে ফেলেছে যুবকটি।কিন্তু যানো এটি যার গল্প সে এখনো বুঝে নাই যুবকটির কি হয়েছে?
তাহিয়াঃআচ্ছা আরিশ আমার মনে হয় কি তাহসিন ভাইয়া কাওকে ভালবাসে আর তার বিয়ে হয়ে গেছে?।
আরিশঃহতে পারে(পাগলী একটা সে পিচ্চি মেয়েটা যে তুমি নিজেই), চলো এখন ঘুমিয়ে যাই।সকালে উঠতে হবে কাল পিকনিক আছে তো।
তাহিয়াঃআরে হ্যা আমি তো ভুলেই গেছি।চলো ঘুমিয়ে পরি।
(আমি আর আরিশ একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম)

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

(একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে তাহসিন।তার মাথা আজ কাজ করছে না মাথা চেপে ধরে আছে।)
তাহসিনঃকি করলাম আজ তাহিয়াকে নিজের এতো কাছে কিভাবে আনলাম,সে কি ভাববে আমাকে নিয়ে?কাল আমি তাহিয়ার সামনে কিভাবে যাব?আমি এতোটা নিচে কিভাবে নামলাম। কিভাবে তাহিয়ার চোখের দিকে তাকাবো,আর ওকে সরি বলা দরকার।
(এগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে এসে রুমে গিয়ে দেখে তূর্য এখনও জেগে আছে,কি যেনো করছে ওর মোবাইলে।তারপর তাহসিন অন্য সাইড দিয়ে শুয়ে পরলো।)

(সকাল সকাল আরিশের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে পরি।সে মোবাইলে কারো সাথে জোরে জোরে কথা বলছে।)
আরিশঃআপনার সাথে আমি আমার কোম্পানির কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।আর আপনি এমন একটা খারাপ কাজের সাথে জড়িত আছেন জানলে কখনোই আপনার সাথে পার্টনারশীপ করতাম না।আর আজ থেকে আপনার সাথে আমাদের কোম্পানির পার্টনারশীপের ইতি হলো।
তাহিয়াঃকার সাথে তুমি এভাবে কথা বলছিলে?
আরিশঃওই রেজোয়ানের সাথে।
তাহিয়াঃকি হলো ওনার সাথে আবার তোমার, উনি তো ভালো একজন মানুষ।
আরিশঃ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো,কে ভালো কে খারাপ তা আমাকে দেখতে দাও।
তাহিয়াঃ ওকে।
(আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

(নিচে সবাই হাতে হাতে কাজ করছে।আমরা মেয়েরা আজ কাজ করবো না।ছেলেরা রান্না করবে আজ।আরিশ,রাসেল ভাইয়া,তূর্য ভাইয়া আর তাহসিন ভাইয়া রান্নার কাজে।বাবা(আরমান,রায়হান)ও আংকেল(আবির) সবজি,পেয়াজ সব কেটে দিচ্ছেন।আর এইদিকে আমরা পাকোড়া,আর চা খাচ্ছি,আড্ডা দিচ্ছি।হঠাৎ আমার নজর যায় আরিশের দিকে, তার কপালে পরে থাকা অবাধ্য চুলগুলো খুব বিরক্ত করছে তাকে।তা দেখে আমার খুব ইচ্ছে করছিলো চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেই।তার পাশেই তাহসিন ভাইয়া ছিলো তার দিকে চোখ যেতেই দেখি সে আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমি তাকানোর সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে।আবার তাকালে আমি রাগ দেখিয়ে অন্যদিকে ফিরে যাই।)
(প্রায় ৩ঘন্টা পর তাদের রান্না শেষ হলো।তারপর সবাই শাওয়ার নিয়ে একসাথে খেতে বসবে।)

খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে সেই সময় আরিশ বলে উঠলো–
আরিশঃআমার সবাইকে কিছু বলার আছে।
রায়হানঃকি ব্যাপার কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে নাকি?
আরিশঃজ্বি বাবা,অনেক দরকারি কথা।
রায়হানঃকি বলো?
(সবাই আরিশের দিকে অধির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সে কি বলবে তা শোনার জন্য।)
আরিশঃবাবা আমি রেজোয়ানের সাথে সকল ডিল ক্যান্সেল করে দিছি,ইভেন আমাদের মাঝে যে পার্টনারশীপ ছিলো সেটাও শেষ করে দিছি।
রায়হানঃকিন্তু কেনো?এতো বড় একটা ডিসিশন নেয়ার আগে ভেবে দেখেছো তুমি?
আরিশঃবাবা উনি নারী পাচারকারী চক্রের একজন সদস্য।
মানে(সবাই অবাক হয়ে বললো)
আরমানঃতাহলে আমার ধারনাই ঠিক।
রায়হানঃমানে কি বলতে চাইছো তুমি,আর আরমান ভাই আপনি কি ধারণা করছিলেন কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

আরিশঃআমিও জিনিসটা প্রথম খেয়াল করি নাই।কিন্তু যেদিন উনি বাবার(আরমান) নাম আরমান রহমান জানলেন সেদিন উনি আমাদের বলে দিয়েছেন যে বাবাকে(আরমান) যেনো আমরা তার নাম বা তার সম্পর্কে কিছু না বলি।সেদিনই আমার প্রথম সন্দেহ হয়।তারপর আমি আমার লোক রেজোয়ানের পিছনে লাগাই।
নীলিমাঃকিন্তু সেটা তো ওনারা দুইজন বন্ধু,আর আরমান ভাই রেজোয়ান ভাইয়ের সাথে রাগ করে আছে তাই
আরিশঃসব মিথ্যা মা।ওনার সাথে বাবার(আরমান) কি শত্রুতা আছে আমি জানি না তবে যেদিন তাহিয়াদের বাসায় রেজোয়ানের নাম শুনে বাবা(আরমান) ভয় পেয়ে গেছিলো সেদিন আমি কনফার্ম হই কোনো ঘাপলা তো আছেই।
(সবাই তো পুরা শক,কি বলছে এসব আরিশ শুধু বাবা ছাড়া।কারণ বাবাও কিছু না কিছু জানে)
তাহসিনঃএই জন্যই আংকেল এতো ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।আমি তো আংকেলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,কিন্তু তার আগেই তূর্য এসে আমাকে নিয়ে গেলো।
রায়হানঃকি এমন হয়েছে আরমান ভাই যার কারণে আপনি এতো ভয় পেয়ে আছেন?
(বাবা একগ্লাস পানি খেয়ে নিয়ে বলতে শুরু করেন)
অতীত(১৮বছর আগে),,
আমি আর রেজোয়ান খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আমি যেনো রেজোয়ানকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না ঠিক তেমনি রেজোয়ানও আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।

তূর্যের তখন ৬বছর,তূর্যের মা তখন প্রেগন্যান্ট, তনিমা ছিলো তার গর্ভে।
রেজোয়ানের সাথে কয়েকদিন হলো দেখা হয়না।এদিকে ভাবিও(রেজোয়ানের স্ত্রী) প্রেগন্যান্ট, তাই হয়তো তেমন একটা সময় দিতে পারে না।তাই ভাবলাম আমি যে আবার বাবা হতে চলছি তা রেজোয়ানকে তার বাসায় গিয়ে বলে আসি।তাহলে ও অনেক খুশি হবে।যেই ভাবনা সেই কাজ।বের হই রেজোয়ানের বাসার উদ্দেশ্যে।
রেজোয়ানের বাসার দরজা খোলাই ছিলো তাই আমি বাসায় ঢুকে যাই।আর রেজোয়ানের স্টাডি রুমে চলে যাই।এই সময় তাকে ওইখানে ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
রুমের দরজার সামনে আসার সাথে সাথে আমি শুনতে পাই সে নারী পাচারকারী চক্রের সাথে কথা বলছে আর ডিল ফাইনাল করছে।রেজোয়ান আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে আমি দাঁড়িয়ে আছি।সে ঘাবড়ে গিয়ে বলে
রেজোয়ানঃকিরে আরমান তুই কখন এলি?আয় বস।
আরমানঃতুই কার সাথে কথা বলছিলি?
রেজোয়ানঃওই এমনি আর কি

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ১২

আরমান ঃতুই নারী পাচারকারী চক্রের সাথে কথা বলছিলি আর ডিল ফাইনাল করার কথা বলছিলি।
(রেজোয়ান বুঝতে পারে আমি সব শুনে নিয়েছি)
রেজোয়ানঃতুই যখন জেনেই গেছিস তোর থেকে আর লুকাবো না।তুই চাইলে আমি তোকেও এই কাজে আনতে পারি।অনেক টাকা আয় করতে পারবি।
আরমানঃথাম তুই ছিঃ। তুই এই ধরনের কাজ করে আবার আমাকেও এই কাজে নেয়ার জন্য বলছিস।তুই নিজে থেকে পুলিশের কাছে যাবি, নাকি আমার গিয়ে বলতে হবে।
রেজোয়ানঃদুইটার একটাও না। না আমি বলবো না তুই বলবি বুঝলি।
(পরে আমি সেখান থেকে রাগে চলে আসি।৩দিন রেজোয়ানের সাথে কোনো কথা নাই।সে কি করে খারাপ পথে যেতে পারে।)
(৪দিন পির আমি তাকে কল করে জিজ্ঞেস করলাম সে পুলিশের কাছে সব বলে দিছে কিনা।)
আরমানঃদেখ ভাই কেনো এমন করছিস বল।তাই বলছি নিজ থেকে ধরা দে।ভালো পথে আয়।
রেজোয়ানঃআমার যা ইচ্ছে আমি করবো তাতে তোর কি,এই বলে রাগে কল কেটে দিলো।
(তারপর আমি পুলিশের কাছে সব বলে দেই।পুলিশরা রাতে রেজোয়ানের বাসায় যাবে আর তাকে এরেস্ট করে নিয়ে যাবে।)

[ইনশাল্লাহ কালকের মধ্যে রেজোয়ানের রহস্য পুরোপুরি বের হয়ে আসবে।আর মাস্ক পরিহিত লোকটি কে সেটাও জানবো তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে।একসাথে সব জেনে গেলে তো আমাকে দুই পর্বের মধ্যে শেষ করে দিতে হবে।তাই সবাই একটু ধৈর্য ধরুন আমি সব ক্লিয়ার করে দিবো।আর নায়ক নিয়ে টেনশন নেয়ার কিছুই নাই,আমি আগে থেকেই সব ভেবে নিয়েছি কিভাবে গল্প এগিয়ে যাবো।তাই সবাই পড়তে থাকুন আশা করি ভালো লাগবে। অনেক বড় করে দিছি তাই বড় বড় কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হয়েছে আজকের পর্বটা]

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ১৪