সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৬ || Fatema Khan

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৬
Fatema Khan

গাড়িতে হঠাৎ রেজোয়ান হোসেন তূর্য ভাইয়াকে বলে উঠলো-
রেজোয়ানঃআচ্ছা তূর্য এই ছেলেটা কে?একে তো আগে দেখি নি,নতুন ড্রাইভার রেখছো নাকি?
আমি তাকালাম না কিন্তু তূর্য ভাইয়া বিষম খেলো রেজোয়ানের কথা শুনে।তারপর বললো-
তূর্যঃ হুম নতুন রেখেছি।আগে যেটা ছিলো তাকে তো আরিশ চিনে তাই রিস্ক নেই নি।
রেজোয়ানঃএটা একটা ভালো কাজ করেছো।ওই আরিশের কোনো ভরসা নেই।আচ্ছা এই ড্রাইভার তুমি কি এয়ারপোর্টের রাস্তা চেনো না এইদিকে কেনো নিচ্ছো?
তূর্যঃআসলে আমিই বলেছি অন্য রাস্তা দিয়ে নিতে যাতে আরিশ টের না পায়।
রেজোয়ানঃঅহ আচ্ছা।তাহলে ঠিক আছে
তারপর আর কোনো কথা হলো না।আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে কান্না করেই যাচ্ছি।প্রায় ৩০মিনিট পর গাড়ি ব্রেক করলো।আমার বুক কেপে উঠলো ভয়ে এই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে।একে একে সবাই বাইরে নেমে গেলো আমি ভয়ে নামছি না।আর কেউ নামাতেও আসছে না।বাইরে রেজোয়ান হোসেনের আওয়াজ আসছে কি যেনো বলছে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বাইরের দিকে আবার তাকালাম,তাকিয়ে দেখি এটা তো এয়ারপোর্ট না।তাহলে কোথায় আমরা?তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

আফসানা রহমান সেন্সলেস হয়ে আছেন কাল রাত হতেই।মাঝে একবার সেন্স আসলেও আবার সেন্স হারান তিনি।নীলিমা খান আর তনিমা তার কাছেই বসে আছে।নিচে ড্রয়িং রুমে আরমান,রায়হান,আবির বসে আছে তাদের মুখে চিন্তার রেশ পরে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।
রায়হানঃআরমান তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আবিরঃ হুম কোনো চিন্তা করো না,ওরা তিনজন তো আছেই ওরা সামলে নিবে সবটা।
আরমানঃকি করে শান্ত হবো,আমার ছেলেটার মনটা ছোট থেকে বিষিয়ে রেখেছে ওই রেজোয়ান।তাকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু মনে করতাম তাই ভালো পথে আনতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে কি করলো আমার স্ত্রীকে মেরে ফেললো আর আমরা সারাজীবন এই ভুল ধারণা নিয়ে আছি যে সে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে।তূর্য তো সব মানিয়ে নিয়েছিলো আর ওই রেজোয়ান আমার ছেলেটার মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিলো।
আবিরঃএখন সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি বরং আবার ডাক্তারকে একটা কল দাও ভাবির জ্ঞান ফিরানো দরকার।
রায়হানঃহ্যা সেটাই এখন যা হবার হয়ে গেছে,ভাবির চিন্তা করো তুমি।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

বাইরে বের হয়ে দেখি আমরা একটা পুরোনো বিল্ডিং এর সামনে।আর তূর্য ভাইয়া ও রেজোয়ান হোসেন ভিতরে যাচ্ছে।ওরা কোথায় যাচ্ছে আর আমরা তো এয়ারপোর্টে যাবার কথা ছিলো তাহলে এখানে কেনো।আমার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকলো-
তাহসিনঃকিরে বাইরে দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরেও যাবি।চল
তাহিয়াঃভাইয়া তুমি এখানে কেনো,তুমি তারাতাড়ি চলে যাও না হয় তোমাকে মেরে দিবে ওরা
তাহসিনঃযাওয়ার জন্য বুঝি গাড়ি চালিয়ে এতো দূর নিয়ে এলাম তোদের
তাহিয়াঃতাহলে তুমি গাড়ি চালাচ্ছিলে তাই তখন রেজোয়ান হোসেন বলছিলো তুমি নতুন ড্রাইভার কিনা।কিন্তু সে তোমাকে চিনলো না কেনো
তাহসিনঃকারণ সে এর আগে আমাকে দেখে নি বুঝলি বোকা মেয়ে চল এখন
তাহিয়াঃ ওকে চলো

(তারপর দুইজনে ভিতরে যাই।দোতলা একটা বিল্ডিং আমরা সিড়ি দিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম।ওইখানে গিয়ে দেখি তূর্য ভাইয়া রেজোয়ান হোসেন আর আরিশ দাঁড়িয়ে আছে।আমি আরিশকে দেখে ছুটে আরিশের কাছে যাই,সে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।আমার চোখ দিয়ে আবার পানি গড়িয়ে পরলো।)
আরিশঃআপনি কি ভেবেছেন মিস্টার রেজোয়ান আমি সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে দিবো।কখনোই না
রেজোয়ানঃকিভাবে করলে এসব।আমি সবসময় তোমার পিছনে লোক লাগিয়ে রেখেছি।তোমার প্রতিটি পদক্ষেপের খবর আমি পেতাম।
আরিশঃ হুম সেটা ঠিক আমি নিজে বের হয়ে কিছুই করতে পারি নি কিন্তু সবকিছু তাহসিন করেছে।বাকিটা আজ তূর্য ও তাহসিন করলো
রেজোয়ানঃতূর্য তূমি আমাকে ধোকা দিলে কেনো?

তাহসিনঃআমি বলি।যেদিন তূর্য ফিরে এলো ওর হাতে আঘাত ছিলো,কিন্তু তূর্য আর তাহিয়ার কথায় বুঝতে পারছিলাম ওরা মিথ্যা বলছে।সেখান থেকে আসার পথে আরিশ আমাকে কল দেয় আর দেখা করতে বলে।আমরা দেখা করলে আরিশ আমাকে সব খুলে বলে।তখন থেকেই আমি আড়ালে থেকে সব করি।আর আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ ছিলো তূর্যের চোখ থেকে পর্দা সরিয়ে সত্যিটা ওর সামনে তুলে ধরা।সে সুযোগ টা কাল রাতে আমি পাই যখন তূর্য ভাইয়া তাহিয়াকে আপনার কাছে রেখে যাচ্ছিলো তখন তূর্য ভাইয়ার কথা শুনে বুঝছিলাম যে সে তাহিয়াকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আপনার প্ররোচনায় এমনটা করছে।তাই যখন ভাইয়া চলে যাচ্ছিলো তখন ভাইয়ার সামনে আমি যাই আর ভাইয়াকে আটকে দিয়ে বলি আমার কিছু কথা আছে ভাইয়ার সাথে।তূর্য ভাইয়া আমাকে দেখে খুব চমকে যায় সেখানে আমাকে দেখবে আশা করে নি।তারপর ভাইয়াকে বুঝিয়ে আবার আপনি আর তাহিয়া যেই রুমে ছিলেন সেই রুমের কাছে গিয়ে আড়াল থেকে সব শুনি।আর সবকিছুই আমি রেকর্ড করে রাখি।

তূর্যঃআমার মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়লো কার কথায় নিজের আদরের বোনকে পাচার করে দিচ্ছিলাম আমি যে কিনা আমার মাকে খুন করেছে(কান্না করতে করতে,ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসলো)আমাকে ক্ষমা করে বোন ছোট থেকে এই লোকটার কথায় সবার থেকে দূরে দূরে থেকেছি কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসা কমে নি।তারপরও মায়ের মৃত্যু মানতে পারি নি তাই যারা আমাকে এতো ভালোবাসে তাদেরকে আজ সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
তাহিয়াঃভাইয়া আমি জানি তুমি আমাদের অনেক ভালোবাসো।আর আমি কিচ্ছু মনে করি নি।তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই তো বড় কথা,এখন এই লোকটাকে শাস্তি দিতে পারলেই হবে।(বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম)

তূর্যঃআর ওইদিন আরিশের কোনো দোষ ছিলো না
তাহিয়াঃজানি আমি ভাইয়া(আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখি সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে মানে আমার উপর অভিমান করে আছে)
রেজোয়ানঃ তোমরা চিন্তা করো না আমার লোকেরা এখন এসে তোমাদের সবকটাকে মেরে দিবে।আর আমাকে নিয়ে যাবে
তাহসিনঃএকটু মিসটেক
রেজোয়ানঃমানে
আরিশঃমানে হলো যারা তোমাদের পিছনের গাড়িতে ছিলো তারা কেউ তোমার লোক না রেজোয়ান হোসেন ওরা সবাই পুলিশ।
রেজোয়ানঃতাহলে আমার লোক কোথায়
তাহসিনঃকোথায় আবার সবগুলোকে কাল রাতেই পুলিশ নিয়ে গেছে
রেজোয়ানঃএতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা আমার সাথে তূর্য তুই কি করে করতে পারলি।আর আমিও কিভাবে তোকে বিশ্বাস করে নিলাম তুই তো সেই আরমানের ছেলে যে কিনা আমার সাথে এক সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো

তূর্যঃভুল বাবা শুধু আপনাকে ভালো পথে আনতে চেয়েছিলো কিন্তু আপনি তাকে শত্রু বানিয়ে নিয়েছেন।
আরিশঃতাহসিন পুলিশকে কল করো উপরে আসতে আর এই জঘন্য লোকটাকে নিয়ে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে।যাতে আর কোন মা বোনদের এই লোকটা পাচার করতে না পারে।
তাহসিন ভাইয়া পুলিশকে কল দিলো উপরে আসার জন্য।আমি এখনো তূর্য ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছি।ঠিক তখনই একটা বিকট শব্দে আমরা ঘুরে তাকাই।যা দেখি আমরা উপস্থিত সবাই থমকে যাই।আরিশ নিচে পরে আছেন।তার সাদা শার্ট ভিজে লাল হয়ে আছে।আমি এক চিৎকারে আরিশের কাছে গেলাম।

রেজোয়ানঃতুই কি ভেবেছিস আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিবি আর আমি যাবার আগে এমনি ছেড়ে দিবো তোকে।কখনো না।তোকে মারতে পেরেছি এটাই শান্তি আমার।
আমি আরিশের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছি।কোনো অনুভুতি কাজ করছে না আমার কি করবো।আমার একটু ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিবে আমায়।তুমি বলেছিলে #সত্যি_ভালোবাসো আমাকে তাহলে কেনো আজ সব মিথ্যা করে দিচ্ছো।আরিশের উপর ঢলে পরলাম আর কিছু মনে নেই কি হলো তারপর।জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। মা(নীলিমা) আর আম্মু আমার পাশে বসে আছে।তনিমা আপু সামনে সোফায় বসে আছে।আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম-
তাহিয়াঃমা আরিশ কোথায়?

নীলিমাঃওর অবস্থা তেমন একটা ভালো না।অপারেশন চলছে ওর।
আমি মার কথা শুনে বেড থেকে উঠে চলে গেলাম বাইরে।কারো বাধা মানছি না আমি।গিয়ে দাড়ালাম অপারেশন থিয়েটারের সামনে।বাইরে বাবা,আব্বু,আবির আংকেল,তাহসিন,রাসেল ভাইয়া,জারা ও জারার মা-বাবা দাঁড়িয়ে আছে।একজন নার্স বাইরে এলে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি আরিশের কি অবস্থা।।
নার্সঃদেখুন পেশেন্ট এর অবস্থা খুব খারাপ আপনারা দোয়া করুন।মনে হয়না বাঁচবে
আমি নিচে বসে পড়লাম তার কথা শুনে।

আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ মেলে বাইরে তাকিয়ে দেখি বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার।উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি।স্বচ্ছ আকাশ ধীরে ধীরে রস্তিম বর্ণ ধারণ করছে।পুরোপুরি সূর্যদয় হয়ে গেছে।এ যেন এক নতুন দিনের আগমনের সাথে সাথে যেনো সবার জীবনেও নতুন কিছুর আগমন ঘটে।দূরের এক কৃষ্ণচূড়া গাছে একটি কোকিল ডাকছে।এই কোকিলকে দেখে খুব হিংসে হচ্ছে আজ।জানিনা কেনো এমনটা হচ্ছে কিন্তু খুব হিংসে হচ্ছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের ভিতরে চলে আসি।রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা তনিমা আপুর রুমে চলে যাই।আমি আমাদের বাড়িতে আছি।ওই বাড়ি থেকে এসেছি তিনদিন হলো।আপু সোফায় বসে আছে।আপুর পাশে গিয়ে বসি।হঠাৎ আপুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই,আপুও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি বিসর্জন দেয়।

তাহিয়াঃআপু এমন কেনো হলো,সবকিছু এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।কেনো ও চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।এমন না হয়ে সবকিছু অন্যরকম হতে পারতো।
তনিমাঃআমাদের হাতে কিছু থাকে না।যা থাকে সবকিছু আল্লাহর হাতে।আমরা চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারবো না,যে চলে যাবার সে চলে গেছে।
তাহিয়াঃরাসেল ভাইয়া কোথায়?
তনিমাঃঅফিসে গেছে এই কয়দিন অনেক দৌড়াদৌড়ির উপর ছিলো তাই যেতে পারে নি।আজ কিছু ফরেইনার ক্লাইন্ট আসবে তাই যেতে হলো।
তাহিয়াঃঅহহ।আমি তাহলে যাই তুমি তাহলে রেস্ট নাও।
তনিমাঃঠিক আছে যা।আর আজ তাহসিন আর জারার গায়ে হলুদ মনে আছে তো
তাহিয়াঃ হুম মনে আছে,তুমি যাবে না
তনিমাঃনা আমি যাবো না এই অবস্থায়।আর গেলে রাসেল খুব বকবে।তোরা যা আর তাহসিনকে আমার শুভকামনা জানাতে ভুলিস না।আর ওর সাথে মোবাইলে কথা তো হবেই
তাহিয়াঃআচ্ছা তাহলে আমি যাই

বিকালে আমরা সবাই তাহসিনের বাড়িতে গেলাম।একসাথে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।আমাদের উপর এতো কিছু হয়ে যাবার ফলে ওরা ডেট আরও পরে নেয়ার কথা বলেছিলো কিন্তু আমরাই মানা করে দিয়েছি।কলাপাতা রঙের শাড়ি পরেছে সব মেয়েরা তাই আমিও পরেছি।আর ছেলেরা সেইম কালারের পাঞ্জাবি।তাহসিনকে কোনো রাজপুত্রের চেয়ে কম লাগছে না।কাচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।খুব মানিয়েছে।জারাকেও পুরো রাজকন্যা লাগছে খুব সুন্দর লাগছে ওকে।তাহসিনের সাথে ম্যাচিং লেহেঙ্গা পরেছে।আমার ভাবনার মাঝেই তূর্য ভাইয়া বলে উঠলো-
তূর্যঃআরিশের বাড়ি থেকে কেউ এখনো আসে নি কেনো একটা কল দিয়ে দেখ তো
তাহিয়াঃআচ্ছা ভাইয়া আমি কল করছি।(বলেই এক কোণায় এসে মোবাইল বের করলাম কল দেয়ার জন্য।ঠিক তখনই কেউ আমার হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে আসলো।আর ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।সে আমার গলায় মুখ ডুবালো। একমুহূর্তে খুব ভয় পেয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই পরিচিত সুগন্ধে বুঝতে বাকি রইল না সামনে থাকা ব্যাক্তিটি কে।আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ সে।)

তাহিয়াঃকোথায় ছিলে এতোক্ষন আমি অপেক্ষা করছিলাম তো
আরিশঃরাগ হয়েছে বুঝি আমার বউয়ের
তাহিয়াঃতা নয়তো কি(অভিমানী কন্ঠে)
আরিশঃএই দেখো কানে ধরছি আর কখনো দেরি হবে না।
তাহিয়াঃতুমি জানো না তোমার থেকে একমুহূর্ত দূরে থাকতে পার না আমি তাহলে কেনো দেরি করে আসলে
আরিশঃআর কখনো হবে না বউ(আমাকে জড়িয়ে ধরে)
অতীত,,,,,,
অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছি আমি।এখনো লাল বাতি জ্বলছে।মনে হচ্ছে এক ছুটে আরিশের কাছে চলে যাই।চোখের পানি এখন আর ঝরছে না তারাও হয়তোবা শুকিয়ে গেছে।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে আমরা সবাই তাকে ঘিরে ধরি।
রায়হানঃডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে?

ডাক্তারঃগুলি টা বুকে লাগাতে অনেক কমপ্লিকেটেড হয়ে গেছিলো প্লাস অনেক রক্ত ক্ষরণ হওয়ার ফলে আমরা রুগির বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।এখন উনি আশংকা মুক্ত।
তাহিয়াঃআমি দেখা করতে পারি আরিশের সাথে
ডাক্তারঃজ্ঞান না ফিরা অবদি কেউ দেখা করতে পারবে না।জ্ঞান ফিরলে আপনারা সবাই দেখা করতে পারবেন।
ছয় ঘন্টা পর আরিশের জ্ঞান ফিরে আসে।একে একে সবাই আরিশের সাথে দেখা করেছে।কিন্তু আমি যাচ্ছি না।কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে।কি করে তাকে ভুল বুঝলাম।আবার না দেখেও থাকতে পারছি না।তাই অনেক ভেবে ভিতরে গেলাম।আরিশ চোখ বন্ধ করে আছে।আমি ভিতরে আসছি টের পাইনি হয়তো।না হয় এতোক্ষনে চোখ খুলে তাকাতো একবার হলেও।
আরিশঃএই সময় হলো তোমার আমার কাছে আসার।এই ভালোবাসো আমাকে
তাহিয়াঃআসলে আ আমি

আরিশঃআ আমি কি,তোতলানো বন্ধ করে সোজা কথা বলতে পারো না
তাহিয়াঃআমাকে দেখে কেমন রিএক্ট করবে তাই আসতে ভয় করছিলো
আরিশঃকেনো রিএক্ট করবো
তাহিয়াঃআমি তোমার সাথে এমন করেছিলাম,ভুল বুঝেছি,তোমার কোন কথা না শুনেই সবকিছু বিচার করেছি তাই
আরিশঃএমন করাটাই কি স্বাভাবিক ছিলো না।তূর্য তোমার ভাই তাকে যদি কেউ আঘাত করে তুমি তার বিরুদ্ধে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না।
(আমি আরিশকে জড়িয়ে ধরি আরিশও আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।আমি সত্যিই ভাগ্যবতী যে আরিশের মত স্বামী পেয়েছি)
আরিশঃআচ্ছা রেজোয়ান হোসেনের কি হলো?
তাহিয়াঃওনাকে জেলে নিয়ে গেছে।আর ওনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরিশঃঅহ ভালোই হলো
(দুইদিন আরিশকে হসপিটাল থাকতে হলো।তারপর আমরা আরিশকে বাসায় নিয়ে এলাম।সবার সেবা-যত্নে এখন সে অনেকটাই সুস্থ।সবকিছু ঠিক হওয়ার ফলে তাহসিন ভাইয়া আর জারার বিয়ের দিন ফেলা হয় এক সপ্তাহ পরে)

দুইদিন পর,,
রাসেলঃতনিমা তারাতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বের হউ।তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আমি অফিস যাবো।
তনিমাঃআসছি তো
রাসেলঃআর পাঁচদিন পরে তো বিয়ে তাই আজ শপিংয়ে যেতে হবে।আজ তো মেয়েদের শপিং সারাদিনে শেষ হবে কিনা আল্লাহ ভালো জানে।
তনিমাঃহয়ে গেছে আমার
(হঠাৎ তনিমা চিৎকার দিয়ে উঠলো। রাসেল ভাইয়া তারাতাড়ি দরজায় কড়া নাড়তে থাকে কিন্তু আপুর কান্নার বেগ বাড়তে থাকায় রাসেল ভাইয়া দরজা ভেঙে ফেলে।আর ভিতরে আপুকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।আপুকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হলে জানা যায় আপুর মিসকেরেজ হয়েছে।আপু খুব ভেঙে পরে তাই আপুকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়।সাথে আমি আর রাসেল ভাইয়াও চলে আসি।এখন আপু অনেকটা সুস্থ কিন্তু কষ্ট তো আর শেষ হয়ে যায় না।)
বর্তমান,,,,

তাহসিনঃআজ আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে
জারাঃথ্যাংকস।আপনাকেও খুব ভালো লাগছে
তাহসিনঃধন্যবাদ(তখন আরিশ আর তাহিয়া তাহসিন আর জারাকে হলুদ পরাতে আসলো)
তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া আজ থেকে কিন্তু তুমি জারার আচলে বেধে গেলে।এখন থেকে জারার কথাই শেষ কথা তোমার কথার কোনো মুল্য নেই বুঝলে।(সবাই হাসলো)
তাহসিনঃসবসময় ভালো থাকিস।তোকে এভাবেই হাসি খুশি দেখতে ভালো লাগে।
জারাঃভাইয়া আপু দোয়া করবে আমাদের জন্য
আরিশঃঅবশ্যই,আমাদের দোয়া সবসময় তোমাদের সাথেই থাকবে
(আমি আর আরিশ হলুদ দিয়ে উঠে আসলাম।তাহসিন ভাইয়া স্টেজ থেকে উঠে গেলো তার পিছনে জারাও উঠে কোথায় যেনো গেলো)

তাহসিনঃভালো থাকো প্রেয়সী ,আমার বাস্তবে তুমি আমার নও কিন্তু আমার দিক থেকে একান্ত ব্যক্তিগত অস্তিত্বে তোমার বসবাস থাকবে চিরকাল।কারণ তোমার স্থান আমি অন্য কাউকে দিতে পারবো না প্রেয়সী।কিন্তু কথা দিলাম জারাকে খুশি রাখবো আর নিজেও সুখি হবো জারার সাথে।তাকে যে আমি একটু হলেও ভালোবাসি।তবে তোমার স্থানটা তোমারই থাকবে।বাকিটা জুড়ে জারা থাকুক।(আকাশের দিকে তাকিয়ে এগুলো বলে চোখের কোণের পানিটুকু মুছে ফেললো,তবে তা জারার দৃষ্টিগোচর হলো না কারণ তাহসিনের পিছনেই জারা ছিলো।)
জারাঃখুব ভালোবাসেন তাই না(কাধে হাত দিয়ে)
তাহসিনঃ হুম অনেক।প্রথম ভালোবাসা নাকি ভুলা যায় না।হয়তো কথাটি সত্যি।কিন্তু আবারও ভালোবাসা যায়।মন থেকে চাইলে বাসা যায়।
জারাঃমানে
তাহসিনঃআপনাকে আমি ভালোবাসি।তাহিয়াকে ভুলা আমার পক্ষে পসিবল না।কিন্তু আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকতে চাই।বৃদ্ধ হতে চাই আপনার সাথে।হবেন কি আমার সাথে
জারাঃ আমিও যে খুব ভালোবাসি আপনাকে।হবো আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকবো।এত্তোগুলো বাচ্চার মা হবো আবার বুড়োও হবো।?
(তারপর দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো)

সত্যি ভালোবাসো  পর্ব ২৫

তূর্য আর আরিশ বসে কথা বলছে।
তূর্যঃতুই একলা এসেছিস,আংকেল আন্টি আসে নি কেনো
আরিশঃকাল বিয়েতে আসবে আর আমি একলা আসি নাই
তূর্যঃতাহলে কে এসেছে তোর সাথে
আরিশঃদাড়া ডাকছি তাকে(মুখে বাকা হাসি দিয়ে)
তূর্যঃকাকে ডাকছিস
আরিশঃসামনে আসলেই দেখতে পাবি।(পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেনো কল করল আর ওরা যেখানে আছে সেখানে আসতে বললো)
কিছুক্ষণ পর একটা মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠলো -ভাইয়া ডাকছিলে আমায়।তূর্যের যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না সে ঠিক শুনছে তো।
আরিশঃ হুম রোজা এইদিকে আয় দেখ কে এসেছে।
তূর্যঃরোজা তুমি(অনেকটা অবাক হয়ে)
রোজাঃ……..
(কিছুক্ষণ পর তাহিয়া সেখানে আসলে সবাই বিভিন্ন কথা বলে।কিন্তু তূর্য আর রোজা একে অপরের সাথে কোনো কথা বলছে না দেখে আরিশ তাহিয়ার হাত ধরে উঠে অন্য সাইডে চলে গেলো।)
তূর্যঃকেমন আছো তুমি

রোজাঃযেমন রেখে চলে এসেছিলে তেমন(রোজা আর তূর্যের আগে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো।যা তূর্য নিজের ভেঙে দেয়।কারণ সে তার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চায় নি।তাহিয়াকে কিছু করলে তার জীবন অনিশ্চিত ছিলো।কিন্তু এখন সব ঠিক আছে।)
তূর্যঃএখনো রেগে আছো আমার উপর।সবকিছু কি আগের মত ঠিক করক যায় না
রোজাঃআমার দেরি হচ্ছে, আমাকে যেতে হবে।
তূর্যঃকাল বিয়েতে আসবে তো
রোজাঃবলতে পারছি না(আমাকে যে আসতেই হবে।তোমাকে দেখার তৃষ্ণা কি আমি মিটাতে পারবো না আসলে)
তূর্যঃঅহহ
রোজাঃআচ্ছা আসছি।(আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো এখান থেকে)

সত্যি ভালোবাসো শেষ পর্ব