সত্যি ভালোবাসো শেষ পর্ব || Fatema Khan

সত্যি ভালোবাসো শেষ পর্ব 
Fatema Khan

সকাল থেকেই একদন্ড বসার সময় পাইনি।তাহসিন ভাইয়ার সব কাজ আমি,মা আর আম্মু সামলাচ্ছি।তেমন একটা মহিলা না থাকায় আমাদেরই করতে হচ্ছে।এছাড়া গেস্টরাও করছে টুকটাক।সকালেই আমরা চলে এসেছি তনিমা আপু সোফায় বসে সব দেখছে।তার নড়াচড়া একদম মানা রাসেল ভাইয়ার আদেশ।তাই সেও নড়ছে না সোফায় বসেই দেখছে।একটু পর বরযাত্রী বের হয়ে যাবে।উপরে আরিশ আর তূর্য ভাইয়া তাহসিন ভাইয়াকে তৈরি করছে।আজ এসব দেখে নিজের বিয়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে বারবার।কি একটা অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল আমার।ভালোবাসতাম না এই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটাকে।কিন্তু আজ এই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটাকে ছাড়া আমার চলেই না।১৬ বছরের একটা কিশোরী থেকে এখন ১৮বছরের যুবতী আমি।ভালোবাসা কি সেটা বুঝি এখন।তখন অল্পতেই বড্ড মন খারাপ হতো অভিমান হতো।এখন জীবনে এতো কিছু দেখে বুঝে গেছি প্রতিটা মুহূর্ত খুব ইম্পর্ট্যান্ট এগুলো হারিয়ে যেতে দেয়া নিছক বোকামি ছাড়া কিছুই না।

জারাকে তার কাজিনরা একটা রুমে বসালো।সাদা পাতলা কাপড়ের একপাশে জারা আরেকপাশে তাহসিন ভাইয়া।লাল রঙের বেনারসি শাড়ি সাথে সোনার গয়না ভারি মেকাপ অপুর্ব লাগছে জারাকে।তাহসিন ভাইয়াকে অনেক সুন্দর লাগছে।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন প্রথমে জারাকে কবুল বলতে বলা হলো,জারা তিনবার কবুল বলার পর তাহসিন ভাইয়াকে বলতে বললে সে একপলক আমার দিকে তাকিয়ে তিনবার কবুল বলে ফেললো।তারপর সাইন করে বিয়ে সম্পন্ন হলো।তারপর দুইজনকে স্টেজে নিয়ে পাশাপাশি বসানো হলো।অনেকক্ষণ ফটো তোলা হলো বর-বউয়ের।আমরাও সবাই তাদের সাথে ছবি তুললাম।তারপর আসলো বিদায়ের পালা।জারা তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করতে থাকলো।আর আমি আমার বিদায়ের সময় অভিমান করে চলে আসছিলাম।জারা আর তাহসিন ভাইয়ার গাড়ি ছেড়ে দিলো,উদ্দেশ্য এক নতুন ভালোবাসার গল্পের সূচনা।
আরিশঃকি হলো আমাদের বিয়ের কথা মনে পরছে বুঝি
তাহিয়াঃ হুম।অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তোমাকে পেয়েছিলাম আমি।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

তাহসিনঃআচ্ছা বাবা আর কান্না করো না তো।তোমার চোখের পানিতে সব মেকাপ চলে যাচ্ছে আর তোমার যে পেত্নী মার্কা চেহারা আছে ওইটা সামনে এসে যাচ্ছে।
জারাঃকিহ আমার চেহারা পেত্নীর মত(কান্না থামিয়ে রেগে বললো)
তাহসিনঃসে তুমি মানো আর না মানো তুমি তো দেখতে পেত্নীর মত।এখন বাবা যখন তোমার সাথে আমার বিয়ে দিয়েই তাহলে এই পেত্নী মার্কা চেহারাটা আমিই দেখি আর কাউকে দেখাইও না
জারাঃকি আমি পেত্নী,আমার চেহারা পেত্নীর মত(বলেই তাহসিনের বুকে মারতে শুরু করলো)
তাহসিনঃ হুম পেত্নীই তো।আমার পেত্নী,তাহলে এই পেত্নী রূপটা অন্য কেউ দেখবে কেনো এটা তো শুধু আমার অধিকার(জারাকে জড়িয়ে ধরে)
জারাঃ হুম এই পেত্নীটাকে সারাজীবন আগলে রাখতে হবে বলে দিলাম।একটুও কষ্ট দিলে ঘাড় মটকে দিবে(জারাও তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো আর তাহসিন জোরে হেসে উঠলো)
জারাঃকি একটা অবস্থা আস্তে হাসুন ড্রাইভার চাচা কি ভাববে
তাহসিনঃএটাই ভাববে যে আমি বিয়ে করে পাগল হয়ে গেছি
জারাঃএটা ভাবার কি আছে আগে থেকেই পাগল ছিলেন
তাহসিনঃতাই নাকি
জারাঃ হুম
তাহসিনঃআচ্ছা তাহলে আজ পাগলের পাগলামি দেখবে,দেখতে প্রস্তুত তো মিসেস তাহসিন আহমেদ(ঠোঁটে বাকা হাসির রেখা টেনে আর জারা তার কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় চুপসে গেলো)

আরিশঃতূর্য এইদিকে শোন না ভাই
তূর্যঃকি বল
আরিশঃআসলে হয়ে কি মা বাবা চলে গেছে অনেক আগেই।আর এখন আমি তাহিয়াকে নিয়ে বের হবো তুই যদি রোজাকে একটু বাসায় পৌছে দিয়ে আসতি ভালো হতো
তূর্যঃঠিক আছে,ওকে বল তারাতাড়ি আসতে।আমি গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছি।আর মা বাবা,তনিমা আর রাসেল চলে গেছে একটু আগে তুই তাহিয়াকে তারাতাড়ি দিয়ে আসিস
আরিশঃজ্বি দিয়ে আসবো আর কিছু বড় ভাই।
তূর্যঃ না আমি আসছি(তারপর সে চলে গেলো)
আরিশঃআমার বউয়ের সাথে সারারাত থাকবো না দিয়ে আসবো সেটা তোকে বলতে হবে শালা,তারাতাড়ি দিয়ে আসিস
তাহিয়াঃতুমি তো আমাকে বলো কোথায় যাবো
আরিশঃআরে বোকা বউ আমার তোমার ভাইয়ে সেটিং করাতে পাঠালাম বুঝলে
তাহিয়াঃ তার মানে রোজার সাথে ভাইয়ার
আরিশঃ হুম সোনা।এখন চলো

(নির্জন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে।পাশাপাশি দুইটি মানুষ থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।হঠাৎ একটা ব্রিজের ওপর এনে গাড়িতে ব্রেক করলো তূর্য)
রোজাঃকি হলো গাড়ি থামালে কেনো?
(তূর্য কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে রোজাকে নামালো)
রোজাঃএ কি ধরনের অসভ্যতা।আর এভাবে রাস্তায় গাড়ি থামিয়েছো কেনো,আমি বাসায় যাবো চলো
তূর্যঃরোজা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
রোজাঃআমাদের মধ্যে এখন কোনো কথা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়না,কারণ সবটা তুমি নিজেই শেষ করে দিয়েছো
তূর্যঃএই মেয়ে আমার চোখের দিকে তাকাও আর বলো আমায় এখন আর ভালোবাসো না
রোজাঃবাসি না
তূর্যঃআমার দিকে তাকিয়ে বলো(দুইগালে হাত দিয়ে আর সাথে সাথেই রোজার চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে)
রোজাঃকেনো করলে এমন আমার সাথে,একটুও কষ্ট লাগে নি যে মেয়েটা তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে তাকে এভাবে কষ্ট দিতে
তূর্যঃসরি জান,আর কখনো এমন হবে না।তোমার কি মনে হয় আমি খুব সুখে ছিলাম ওই সময়টাতে।বাসায় যেতাম না সারাদিন বাইরে বাইরেই থাকতাম।(রোজাকে জড়িয়ে ধরে)
রোজাঃআর কখনো দূরে যাবে না তো
তূর্যঃযতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন না।অনেক ভালোবাসি তোমায়
রোজাঃ #সত্যি_ভালোবাসো আমায় এতোখানি
তূর্যঃ হুম সত্যি ভালোবাসি।
রোজাঃআমিও খুব ভালোবাসি
(তারপর তূর্য রোজার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো)

(রাসেলের বুকে মাথা গুজে শুয়ে আছে তনিমা।)
তনিমাঃআচ্ছা আমাদের সাথে এমন কেনো হলো।আমরা কত কিছু ভেবেছিলাম বেবিকে নিয়ে।ও কি ওর মাম্মা আর পাপার কথা একবারের জন্যও ভাবে নি।কিভাবে স্বার্থপরের মত আমাদের ছেড়ে চলে গেলো(কাদতে কাদতে)
রাসেলঃএমন করে বলো না,আমাদের বেবি উপর থেকে সব শুনতে পাচ্ছে।তুমি যদি এভাবে বলো ওর তো কত কষ্ট হবে বলো।
তনিমাঃ সত্যি সে আমাদের দেখতে পাচ্ছে।তাহলে তার মাম্মা যে কষ্ট পাচ্ছে তা দেখতে পাচ্ছে না
রাসেলঃহয়েছে আর কান্না করে না আবার আরেকটা বেবি নিবো আমরা কিন্তু এখন না তুমি একটু সুস্থ হও তারপর।আর কান্না করলে কিন্তু খুব রাগ করবো(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
তনিমাঃতুমি আমার উপর রেগে নেই
রাসেলঃকেনো
তনিমাঃআমার জন্যই তো এমন হলো।তোমার কত শখ ছিলো একটা রাজকন্যার সব আমার বাচ্চামোর জন্য শেষ হয়ে গেলো
রাসেলঃএখানে তোমার কি দোষ বলো,তুমিও তো কত এক্সাইটেড ছিলা নিজের রাজপুত্র নিয়ে।আসলে যা আমাদের কপালে থাকে না তা নিয়ে আফসোস করতে নেই।আর তুমি এভাবে ভেঙে পরলে আমার কত কষ্ট হয় তুমি বুঝতে পারো না
তনিমাঃতুমি আমাকে এতোটা #সত্যি_ভালোবাসো
রাসেলঃ হুম অনেক যা তোমার ভাবনার বাইরে।বাঁচতে পারবো না তোমায় এভাবে দেখে
তনিমাঃআমিও যে খুব ভালোবাসি তোমাকে(তারপর দুইজন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো)

(বাসর ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো খাটের মাঝ বরাবর বসে আছে জারা।মনে ভয় ও লজ্জা দুটোই যেনো তাকে ঘিরে ধরেছে।তখনই তাহসিন দরজা খুলে ভিতরে আসলো।জারাকে দেখে এক ভুবন ভুলানো মিষ্টি হাসি দিলো।যা জারার মনে ভালোবাসার ঢেউ খেলাতে সক্ষম।)
তাহসিনঃতুমি এখনো চেঞ্জ করো নি।
জারাঃ হুম করছি
তাহসিনঃ ওকে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি বরং অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।
জারাঃঠিক আছে
(প্রায় ৩০মিনিট পর জারা ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বের হলো।তাহসিন বিছানায় বসে মোবাইল দেখছিলো।জারাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়)
তাহসিনঃএকি গোসল করলে যে
জারাঃআসলে খুব টায়ার্ড লাগছিলো তাই
তাহসিনঃঅহহ চলো
জারাঃকোথায়
তাহসিনঃচলো তো(জারার হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলো।তারপর জারাকে দোলনায় বসালো,তাহসিনও জারার পাশে বসলো)

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৬

তাহসিনঃআজ আমাদের দুইজনের জন্য খুব স্পেশাল রাত।তাই আমি আর তুমি সারারাত এইখানে বসে চাঁদ দেখবো আর মনের যত কথা আছে সব বলবো।
জারাঃআপনি আমার পাশে থাকলে আমি সারাজীবন এভাবে কাটাতে রাজি আছি
তাহসিনঃকেনো,আমি তো তোমাকে কখনো খুশি করি নি আমার কথায়।সবসময় কিভাবে আমার থেকে দূরে ঠেলে দিবো সে চিন্তায় ছিলাম
জারাঃআমি যে ভালোবাসি আপনাকে।আর দূরে ঠেলে দেয়ার চিন্তায় ছিলেন দূরে ঠেলে দিতে পেরেছেন কি?দূরে ঠেলে দিলেও আমি যেতাম না ঠিক পিছনে চলে আসতাম
তাহসিনঃতুমি আমাকে #সত্যি_ভালোবাসো এতোটা আমি ভাবতেই পারিনি
জারাঃ হুম এতোটাই ভালোবাসি কেনো আপনি বাসেন না
তাহসিনঃতোমাকে ভালো না বেসে থাকা যায়
(তারপর দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো আর তাদের ভালোবাসার স্বীকারোক্তির স্বাক্ষী রইল চাঁদ)

আরিশ আর তাহিয়া হাত ধরে রাস্তায় হাটছে।কিছুদূর একটা নদী আছে।তারা সেখান গিয়ে নদীর পাড়ে বসে।
আরিশঃআজ চাঁদটা কেমন জোৎস্না ছড়াচ্ছে তাই না
তাহিয়াঃ হুম।
আরিশঃএকটা কথা বলবো?
তাহিয়াঃজিজ্ঞেস করার কি আছে তুমি বলো
আরিশঃআমাকে কখনো অবিশ্বাস করো না,অবিশ্বাস করে দূরে ঠেলে দিও না।তাহলে আমি মরে যাবো
তাহিয়াঃকখনোই না।যে ভুল একবার করেছি তা আর দ্বিতীয় বার করার ভুল করবো না।
আরিশঃতাই
তাহিয়াঃ হুম।আগে তোমার সব কথা শুনবো তুমি কি বলতে চাও
আরিশঃঅনেক ভালোবাসি তোমায় তুমি ভুল বুঝলে আমার কত কষ্ট হয় তুমি জানো
তাহিয়াঃআমায় ক্ষমা করে দাও আর কখনো তোমাকে ভুল বুঝবো না
আরিশঃ #সত্যি_ভালোবাসো তো আমায়
তাহিয়াঃ সত্যি অনেক ভালোবাসি,নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি
আরিশঃআমিও
এমনি ভালো থাকুক সবাই তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে।সবাই এই চার জুটির জন্য দোয়া করবেন।

(সমাপ্ত)

[ফাইনালি শেষ হলো গল্পটা।আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।আপনাদের সাপোর্ট না পেলে এতোদূর আসতে পারতাম না।আর যারা গল্পটা আরও বাড়াতে বলেছেন তাদের সরি বলছি।এর বেশি বড় করলে স্টার জলসা টাইপ লাগতো।আমার নিজেরই ভালো লাগতো না।আর সবাই গল্পের রিভিউ দিবেন।নেক্সট গল্প তারাতাড়ি দেয়ার ট্রাই করবো।সবশেষে জারা ও তাহসিনের বিয়ে তো খেয়ে নিলেন এখন গিফট দিয়ে যান।গিফট হলো বড় বড় করে কমেন্ট করবেন।সবাই ওদের চারজনের সাথে সাথে আমার জন্যও দোয়া করবেন।সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,সবাই আমার ভালোবাসা নিবেন।সবাই ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।]