বিষাক্ত অনুরাগ || Asfiya Zannat Turfa || ধারাবাহিক গল্প

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ১
Asfiya Zannat Turfa

– ” এই বিয়েটা আমার জন্য আবশ্যক নয়, শুধু মাত্র নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য বিয়েটা করছি আমি। আমার শুধু একটা বাচ্চা প্রয়োজন, তুরের গর্ভ থেকেই আমার বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবে। তাই তিনবার কেন তিনশবার বলতে পারি। কবুল!কবুল!কবুল! ”
রোদ্দুর নামক ব্যক্তিটির মুখ থেকে এমন কথা শুনে হতবাক তুর। রোদ্দুর শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীর সুখ আর একটা বাচ্চার জন্য ওকে বিয়ে করছে! আদৌ কি সত্য এটা? জোর করে বিয়ে করছে আবার এতো কথা, এই লোকটা তো রীতিমত সন্দেহজনক! আদৌও বউ আছে কিনা জানে না তুর। কিন্তু এই মুহূর্তে তুরের সবথেকে বড় কাজ হলো নিজের প্রপার্টি সেভ করা, তার জন্য ওকে বিয়ে করতে হবে। সুতরাং এতোকিছু চিন্তা না করে তুরও বলে দিলো,

– ” কবুল! কবুল! কবুল! ”
কাজী সাহেব বিয়ে সম্পন্ন করে চলে যেতেই রোদ্দুর তুরের পাশে এসে বসে ওর কপালে আলতো করে স্পর্শ করে। তুর দ্রুত সড়ে গিয়ে বসে। হাতের ক্যানোলায় টান লাগামাত্র রক্ত বেড়িয়ে আসলো, স্যালাইনের বোতলের ভেতর অবধি রক্ত চলে গিয়েছে। রোদ্দুর তুরকে টেনে ওর ক্যানোলা ঠিক করতে করতে বলে,
– ” মিসেস জান! এতো নড়াচড়া করছেন কেন? সামান্য ছুঁয়েছিই তো, আপনি সুস্থ হলে বাকি যেগুলো করবো সেগুলোর জন্য মেন্টালি প্রিপারেশন নিন। ”
তুর বা’হাতে ফোন চেক করে বললো,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

– ” আমি আমার উকিলের সাথে কথা বলেছি! ছ’মাস পর আমরা ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করবো, দেন আপনি আপনার পথে আর আমি আমার পথে। বাই দ্যা ওয়ে থ্যাংকস এ লট ডক্টর রোদ্দুর জুহায়ের! ”
রোদ্দুর তেতে ওঠে তুরের কথা শুনে,
– ” আমি আপনাকে এমনি এমনি বিয়ে করিনি তুর! আপনি আপনার স্বার্থে আমায় বিয়ে করেছেন এবং আমি আমার স্বার্থে, আপনি আপনার সম্পত্তি চান আর আমি চাই একটা ফুটফুটে সন্তান! আমার সন্তান যে আপনার গর্ভে বেড়ে উঠবে। ”
তুর নিজের রাগ সামলে বলে,
– ” দেখুন রোদ্দুর আপনার সন্তান আসবে! তবে তার মা আমি হবো না, সারগেসির মাধ্যমে আপনি বাচ্চা চাইছেন তার জন্য আরও অনেককে পাওয়া যাবে। এজন্য যত টাকার প্রয়োজন হয়, আমি দিবো। মেয়েও নাহয় আমি খুজে দিবো! ”
রোদ্দুর ক্যানোলা ঠিক করে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে বলে,
– ” আমার সন্তান যার তার গর্ভে বেড়ে উঠতে পারে না মিসেস তুর! আমার স্ত্রী মানবেন না এটা! আপনার কথা অনেকবার বলায় সে রাজি হয়েছে। আমার হাতে আর কিছুই করার নেই। আপনাকেই আমাদের সন্তানের মা হতে হবে। আমাদের সন্তান পৃথিবিতে আসামাত্র আমি আপনাকে ডিভোর্স দিবো। এটা আমার ওয়াদা। ”

আট’ঘন্টা আগে,
কলেজ প্রাঙ্গনে নিজের প্রেমিকের আলিঙ্গনে, নিজের বড় বোনকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় তুর! পা দুটো যেন মাটির সঙ্গে আটকে গিয়েছে, চাইলেও তা নড়ানো অসম্ভব! চারপাশ থেকে করতালির শব্দ ভেসে আসতেই তুরের হুশ ফেরে! সবাই তালি’র সঙ্গে সিটি দিয়ে এই জুটিকে অভিনন্দন জানাচ্ছে!
তুর ওখান থেকে চলে আসে নিজের ক্লাসে! বহুত হয়েছে, আর এসব প্রেমে নিজেকে জড়াবে না সে! শক্ত মনের অধিকারী হিসাবে সে! সে কখনই নিজেকে দূর্বল ভাবতে কিংবা করতে পারে না। সুতরাং অন্যদের মতো হাউ মাউ করে কাঁদবে না সে! কিন্তু ভেতর থেকে একটা চাপা কষ্ট যে বারবার কড়া নাড়ছে তার চোখের কোনে, ঠোটের কোনে! ঠোট কামড়ে নীরবে চোখের পানি ফেলে তুর উঠে দাড়ালো। নয়নযুগল মুছে সবেমাত্র কলেজ গেটের বাইরে এসেছে, তখনই পেছন থেকে কেউ ওর মুখ চেপে ধরে! ক্লোরোফম স্প্রে করে তুরের নাকে। মাথাটা ঘুরে আসে ওর, যখন চোখ মেলে তাকায় তখন সে এক বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ! হাত পা দড়ি দিয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা। মুখে কস্টেপ লাগানো, নিজের এমন অবস্থা দেখে কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকালো তুর। সামনে বসে থাকা মানুষটি তুরের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আছে। তুরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, সে এখনও ভাবছে মাথাটা কার খারাপ এই ছেলের নাকি ওর নিজের? এই ছেলে ওকে টেনে এনে ভুল করেছে নাকি তুর নিজেকে শান্ত রেখে ভুল করছে? তুর মাথা ঝাকাতেই ছেলেটি তুরের মুখ থেকে টেপ খুলে দিলো। তুর ঠোট নাড়িয়ে বললো,
– ” গিভ মি এ গ্লাস অফ মিনারেল ওয়াটার হ্যান্ডসাম! এন্ড ব্রিং সাম রেড ওয়াইন! বিকজ টুডে আই আ’ম নট ওয়েল টু সি মাই সিস্টার & বয়ফ্রেন্ড! ”

তুরের কথায় ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। অদ্ভুত! মেয়েটাকে তুলে আনা হয়েছে সে বিষয়ে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই? সে শুধু মদ আর পানি চাচ্ছে? কারন আজ তার মন খারাপ! ছেলেটার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সে রাগি গলায় বললো,
– ” চুপচাপ এখানে সাইন কর! ”
তুর অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
– ” হাউ ক্যান আই ডু দিস? মাই হ্যান্ডস আর ফুললি টাইড উইথ দিস হেভি রোপ। ”
তুরের ইংরেজি বলা দেখে ছেলেটি মাথা চুলকালো, ও কি ভুল মেয়েকে তুলে এনেছে? ওদের বস তো বলেছিলো একটা খাঁটি বাঙালি মেয়ে লাল থ্রিপিচ পড়ে বের হবে, উচ্চতা ৫ফুট তিন, ফর্সা চেহারার, হাতে কালো ব্যাগ থাকবে, তাকে তুলে আনতে হবে। ভাষা ছাড়া সবকিছুই তো মিলেছে! তাহলে? ছেলেটি হুংকার দিয়ে বললো,

– ” আমার সাথে চালাকি না, যা বলছি সেটা করো। ”
তুর হেসে বলে,
– ” অকে। দেন গিভ মি দ্যা পেন! ”
ছেলেটি কলম তুরের হাতে দিতেই তুর জোরে কলমের খাপ খুললো, সেটা ছিটকে লাগলো ছেলেটির চোখে। ছেলেটি চোখ বুজে, চোখ ডলছে ততক্ষণে তুর নিজের হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছে ছুরি দিয়ে কেটে। এরপর ছেলেটির সামনে গিয়ে দড়ি দিয়ে ওকেই বেঁধে ফেললো চেয়ারে। মুখে কস্টেপ লাগিয়ে পেপার পড়তে লাগলো।
‘ আমি আসফিয়া জান্নাত তুর, সজ্ঞানে নিজের সব সম্পত্তি আমার ফুফাতো ভাই আবিদের নামে লিখে দিচ্ছি! ‘
প্রথমটুকু পড়েই তুর কাগজটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো। সামনে থাকা ছেলেটি ছটফট করছে চেয়ারে বসে। তুর ওর ইশারা দেখেই বুঝতে পারে যে ও জানতে চায় তুর কিভাবে নিজেকে ছাড়িয়েছে। তুর নিজের পায়জামা একটু উচু করতেই ছেলেটি দেখে ওখানে একটা ছুরি গুজে রাখা। গোলাকার রিংজাতীয় একটা শক্ত বন্ধনিতে বাঁধা পা! ওখানে একটা ছোট চাকুও রাখা আছে। তুর মৃদু হেসে বলে,

– ” বোকা ছেলে! জানকে আটকে রাখা এতো সহজ? যদি সহজই হতো তাহলে তোদের ভাড়া করা হতো নাকি? একটু প্রিপারেশন নিয়ে আমাকে তুলবি তা না, কাঁচা মগজের কাঁচা কাজ। এখন বল বাঁচতে চাস নাকি আমাকে মারার শখ এখনও আছে? ”
তুরের কথার তালে মাথা দুলালো ছেলেটি। অর্থাৎ সে বাঁচতে চায়। তুর ছেলেটির হাতের বাঁধন খুলে ওর ব্যাগ থেকে একটা এক লাখের চেক বের করে,
– ” চেক টা নাও, তোমাকে আমার হয়ে একটা কাজ করতে হবে। পারবে? ”
ছেলেটি মাথা নাড়ে। তুর ছেলেটির হাত থেকে পড়ে যাওয়া বন্দুক উঠিয়ে ছেলেটির হাতে দিলো।
– ” আমি কলেজ গেটের কাছাকাছি যেতেই আমার পায়ে এবং হাতে গুলি করবে। কিন্তু সাবধানে, এতে আমার কাজও হবে, আবিদও তোমাকে তোমার পারিশ্রমিক দেবে, শুধু খেয়াল রাখবে হাতের কনুই এর নিচে এবং পায়ের হাটুর নিচে গুলি করতে হবে। ”

ছেলেটি এবার হতভম্ব হয়ে যায় তুরের কথায়। তুর ছেলেটির কাজ বুঝিয়ে বেড়িয়ে আসে ওই বাড়িটি থেকে। ছেলেটির হাতে যে টাকা গুজেছে তাতে ছেলেটি টুঁশব্দ ছাড়াই কাজ করে দিবে, কিন্তু কথা হচ্ছে তুরের পেছনে ঠিক কি পরিকল্পনা করা হচ্ছে? নিজের আপন রক্তই কেন ওর ক্ষতি চায়? তুরের কাছে একবার বলতে পারতো ওরা! তুর হাসতে হাসতে নিজের সবটা দিয়ে দিত ওদের। কিন্তু ওরা সেটা করেনি, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই এই বিশ্বাসঘাতকদের তুর নয়, জান কঠিন শাস্তি দেবে। এতো কঠিন হবে সে শাস্তি যা ওদের কল্পনার বাহিরে।

কথানুযায়ী, তুরকে গুলি করে ছেলেটি। তুরকে যে হাসপাতালে আনা হয়েছে সে হাসতাপালেই সার্জন রোদ্দুর! তুরের অপারেশনের পর ওকে কেবিনে দেওয়া হয়! রোদ্দুর অন্য ডক্টরের অনুপস্থিতিতে রাউন্ডে দেখতে আসে তুরকে! তুরের চোখেমুখে তখন আতঙ্কের ছাঁপ। আগামীকাল তুরের বাইশ বছর পূর্ণ হবে, ওর বাবার রেখে যাওয়া দলিল অনুসারে তুর বাইশ বছরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তুর অটোমেটিক সব জমিজমার মালকিন হবে! তবে শর্ত হলো তুরকে বিবাহিত হতে হবে।

এই গল্পটির ভিডিও দেখতে নিচের দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করুন

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ২