বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ২ || Asfiya Zannat Turfa

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ২
Asfiya Zannat Turfa

একরাশ বিরক্তি নিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে আছে তুর! রোদ্দুর সুপবোল হাতে নিয়ে তুরের সামনে বসে আছে। তুর যতবার খাবে না বলছে, রোদ্দুর ততবার বিয়ের কথা, সন্তানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। রাগের মাথায় বিয়েটা করে আসলেই বোধ হয় পাপ করেছে তুর। এর থেকে কোনো দারোয়ানকে বিয়ে করলেও চলতো ওর, অন্ততো পাহারা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর কথা তো শুনতো! ‘কি দরকার ছিলো তুর? এই বিবাহিত অসভ্য ডাক্তারকে বিয়ে করার? আবিদ তোকে মারার আগেই এই ব্যাটাই তোকে শেষ করে তোর সম্পত্তি হাতিয়ে নেবে। ‘ কথাটি ভেবে তুরের মুখে বিরক্তির ছাঁপ তীব্র হলো! রোদ্দুর তুরের মুখের সামনে সুপ ধরে বললো,

– ” খেয়ে নিন! আপনি অনেক দূর্বল! রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক! দেখছেন তো ঠিক করে তাকাতেও পারছেন না। ঘুমিয়ে পড়ছেন বারবার, এটা খেয়ে ঔষধ খান, দেখবেন ভালো লাগবে। ‘
তুরের চোখের সামনে শুধু বিয়ের ঘটনাটি ভাসছে। এই তো ঘন্টা দু’য়েক আগে! রোদ্দুর ওর চেকআপ করতে আসার আগে ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে, উকিলের ম্যাসেজ! উকিল কাকু জানিয়েছেন আজকের মধ্যে ওকে বিয়ে করতে হবে এবং সেই বিয়ের কাবিননামাসহ সমস্ত কাগজ সাবমিট করতে হবে। নাহলে সব সম্পত্তি আবিদ এবং অনামিকার নামে হয়ে যাবে! পনের মিনিট পর রোদ্দুর চেক আপ করতে আসে । তুর তখন চিন্তায় হিতাহিত জ্ঞান ভুলে বিবাহযোগ্য একজন পাত্র খুজছে, বন্ধুদের জানিয়েছে কিন্তু তারা তুরের যোগ্য কাউকে পাচ্ছে না বলে ‘ না ‘বলে দিয়েছে। অবশেষে রোদ্দুরকে ফট করে বলে উঠলো তুর,

– ” ডক্টর রোদ্দুর! আমাকে বিয়ে করবেন? ”
রোদ্দুর স্যালাইন পাল্টাচ্ছিলো! তুরের কথা শুনে ও থমকে দাড়ালো! সোজা হয়ে দাড়িয়ে পকেটে হাত গুজে বললো,
– ” আর ইউ কিডিং উইথ মি! মিস আসফিয়া? ”
তুর আহতকন্ঠে বললো,
– “নো, যাস্ট আস্কিং ইউ ডক্টর রোদ্দুর! বিয়ে করবেন আমাকে? এর বিনিময়ে যা চান তাই পাবেন। শুধু আজ এখুনি আমায় বিয়ে করতে হবে। ”

রোদ্দুর বাইরে চলে গেলো, কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরেও আসলো। ফিরে এসেই রোদ্দুর নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
– ” জি! আমার স্ত্রী আমায় অনুমতি দিয়েছে আপনাকে বিবাহ করার জন্য! এবং বিয়েটা এখুনি হবে। ”
বাক্যটি তুরের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তুর হতভম্ব হয়ে যায়। একজন বিবাহিত পুরুষকে সে কিভাবে বিয়ে করতে পারে? অন্যের সংসারে সে কখনই তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে ঢুকতে পারে না, ঢুকতে চায় না। তুর উদাসিন কন্ঠে জবাব দেয়,
– ” আপনি বিবাহিত! স্যরি আমি বিবাহিত কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আসলে আমি জানতাম না আপনার সম্পর্কে, একটা বিপদে পড়ে আপনাকে এমন প্রস্তাব দিতে বাধ্য হয়েছি, মাফ করে দেবেন। ”
রোদ্দুর হেসে বলে,
– ” দুঃখিত মাফ করতে পারলাম না। সব ঠিকঠাক করা হয়ে গিয়েছে। আপনাকে আজ আমায় বিয়ে করতেই হবে। কাজীসাহেব আসছেন, আধঘন্টার মধ্যে ইনশাহ্ আল্লাহ আমাদের বিয়েও সম্পন্ন হবে। আপনি শুধু আমাকে একটা বাচ্চা দেবেন। ”

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

তুর রাগে ফেটে পড়লো! মামাবাড়ির আবদার? জোরজবরদস্তি নাকি? তুর কিছুতেই বিয়ে করবে না। ওদিকে রোদ্দুরও নাছোড়বান্দা! বিয়ে সে করেই ছাড়বে। তুরও একসময় ভাবলো ‘আপাতত বিয়ে করাটা জরুরি! নাহলে কোটি টাকার সম্পত্তি খারাপ হাতে চলে যাবে। বাচ্চার ব্যবস্থা নাহয় পরো করা যাবে। টাকার বিনিময়ে কত বাচ্চা পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে কেউ অন্ততো রোদ্দুরের ঘরে আসুক, বাচ্চাটির জীবন সুন্দর করে গড়ে উঠুক। ‘
এরপরই এসে কাজী দুমাদুম বিয়ে দিয়ে দিলো! তুরের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। রোদ্দুর এখনও চামচ উঁচু করে ধরে আছে। তুরের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সে জোরে বললো,
– ” আমি চামচ ধরে আছি! ”
তুরের ধ্যান ভাঙে! ছোট বাচ্চার মতো তুর টুকটুক করে খেতে লাগলো। মাথায় অজস্র চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। হসপিটালে কিভাবে এলো ও? কে আনলো ওকে? রোদ্দুরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ও কি উত্তর পাবে? নাকি রিসেপশন কিংবা যে ওর অপারেশন করিয়েছে তার কাছ থেকে শুনবে? তুরকে খাইয়ে দিয়ে রোদ্দুর ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– ” পুলিশ এসেছে! যেহেতু আপনাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে তাই রাস্তার মানুষজন পুলিশে খবর দিয়েছে। তারাই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে। ”

তুর চোখ বুজে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করলো রোদ্দুরের কথন। চোখের সামনে ভাসছে তিনটা চেহারা, আবিদ, অনামিকা এবং ওর প্রেমিক অনন্ত! বিশ্বাসঘাতকদের লিস্টে আরও তিনটা নাম যোগ হলো! যার অর্থ ওকে মোট আটজনকে শাস্তি দিতে হবে! ভয়ানক শাস্তি।
– ” আপনাকে আজই বাড়ি নিয়ে যাবো আমি। বাড়িতেই চিকিৎসা হবে আপনার। ”
রোদ্দুরের কন্ঠে এক অদ্ভুত উৎকন্ঠা অনুভব করলো তুর। চোখ খুলে তাকালো সে রোদ্দুরের দিকে। খেয়াল করলো রোদ্দুরের চেহারা! বিদেশীদের মতো ধবধবে সাদা গায়ের রং, চোখের মনি নীলচে! গালে চাপদাড়ি, সিল্কি চুল! বয়স অনুমান করা যাচ্ছে না, দেখে ২৫-২৬ বছর বয়সের যুবক মনে হলেও, রোদ্দুরের বয়স ৩৫এর উপরে হবে। কিন্তু তার এই মনকাড়া সৌন্দর্য তুরকে ক্ষনিকের জন্য বিচলিত করে তুললো, তার শুভ্র চেহারা রোদের শুভ্র কিরণে আরও ধাঁধিয়ে তুলছে তুরের নয়ন। ওদিকে তুরকে নির্নিমেষে নিজের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে রোদ্দুর কিছুটা ভড়কে যায়। এভাবে তাকিয়ে আছে কেন মেয়েটা? প্রশ্নটি মনের কোনে উঁকি দিতেই রোদ্দুরের ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হয়ে গেলো।

– ” কি দেখছেন? ”
তুরের হুশ ফিরলো রোদ্দুরের ডাকে। তুর নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়! এভাবে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকাটা বোধ হয় উচিত হয়নি ওর। রোদ্দুর কি ভাবলো? তুর নিজেকে সামলে বললো,
– ” বাড়ি যাবো। কিন্তু আমার বাড়িতে তো এখন কেউ নেই। আজ এখানে থাকি, আম্মুরা আজই ফিরে আসবে। কাল সকালে আমাকে নিয়ে যাবে বাড়িতে। ”
রোদ্দুর ক্রোধান্বিত চোখে তাকালো তুরের দিকে। তুর কপালে ভাঁজ রেখেই তাকিয়ে রইলো, রোদ্দুর দাঁতে দাঁত ঘসে বললো,
– ” আপনি আমার বিবাহিত স্ত্রী! বিবাহের পর স্ত্রীর বাড়ি ঘর, আশ্রয় সমস্তকিছু তার স্বামীর বাড়ি হয়! এটা কি আপনার জানা নেই? আপনি এখন থেকে আমার বাড়িতে থাকবেন। তাছাড়া বাড়িতে আমি একাই থাকি! সুতরাং আপনার থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না। ”
তুর সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করে,
– ” একা থাকেন মানে? আপনার বউ কোথায় থাকে? ”
রোদ্দুর অকপটে জবাব দেয়,
– ” গ্রামের বাড়িতে। সে শহরে থাকতে পছন্দ করে না। তাই গ্রামে আমার পরিবারের সঙ্গে থাকে। আমি এখানে একাই থাকি। বাড়িতে বেশি যাওয়া হয়না, হসপিটালে কাজের চাপ থাকে অনেক। কেন বলুন তো? ”
তুর স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দেয়,

– ” ওহ আচ্ছা! এমনি জিজ্ঞেস করলাম। দু দুটো বউ একছাদের নিচে থাকবে। ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। আমার এতোটা উপকার করলেন তার বিনিময়ে আপনার সম্মানে দাগ লাগবে এটা চাইনা আমি। ”
রাতে তুরকে নিয়ে বাড়ি ফেরে রোদ্দুর। অন্ধকারে বাড়ির বাইরের পরিবেশ দেখা না গেলেও, ভেতরে প্রবেশ করে তুর এক সুবৃহৎ দোতলা বিশিষ্ট অট্টালিকা আবিষ্কার করলো, শৌখিন, সাজানো গোছানো বাড়িটা দেখতে চমৎকার।তুর সামনে এগোতেই ওর পায়ে টান লাগে। ব্যান্ডেজ করা অংশটুকুতে আবারও আঘাত লাগে গাড়ির দরজায়। মুহূর্তেই রক্ত গলগল করে বের হতে লাগলো। তুর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়। রোদ্দুর গাড়ি গ্যারেজে রেখে তুরের পাশে এসে দাড়ায়। তুর সামনে হেটে যেতেই রোদ্দুর মাটিতে রক্ত দেখতে পেলো।
– ” দাড়ান! ”
হুংকার দিয়ে উঠলো রোদ্দুর। তুর চমকে দাড়িয়ে যায়। রোদ্দুর এসে আচমকা তুরকে কোলে তুলে নিলো। তুর কিছু একটা বলবে তার আগেই রোদ্দুর বললো,
– ” জানি আপনি নিজেকে সামলে নিতে জানেন! নিজেকে ভালো রাখতে জানেন। কিন্তু সেটা বিয়ের আগের কথা। বিয়ের পর আপনাকে ভালো রাখা, সামলে রাখা এবং আগলে রাখার দায়িত্ব আমার। একান্তই আমার! ”
এই লোকটার মতিগতি কিছুতেই বুঝতে পারছে না তুর। এতোটা যত্নশীল একটা মানুষ কিভাবে নিজের বউকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? আর এতটা সহজভাবেই বা কিভাবে নিচ্ছে? চেনে না জানে না অচেনা একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলো, এখন আবার এতোটা যত্ন! তুরকে নিজের ঘরে এনে শুইয়ে দিলো রোদ্দুর।

– ” একটু অপেক্ষা করুন। আমি ফার্স্টএইড বক্স আনছি। দেখেশুনে চলতে পারেন না তাইনা? দেখছেন পা থেকে কিভাবে রক্ত বের হচ্ছে? কেয়ারলেস মেয়ে কোথাকার। ”
তুর তেতে উঠে বলে,
– ” এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলবেন না! আমি পছন্দ করি না কেউ আমার উপরে চেচাক! আমি অভ্যস্ত নই ধমক শোনায়। ”
– ” না, চেচাবো না! ওনাকে কোলে নিয়ে বসে চুঁমু খাবো। নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে আপনি বোঝেন না? ”
তুর বিরক্তির সুরে বলে,
– ” পাগল নই, সেজন্য বুঝি না। এবং এডাল্ট কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন। অসহ্য লাগে আমার। বউ বাচ্চা, চুঁম্বন, হ্যানত্যান। উফ ইরিটেটিং। ”
রোদ্দুর মৃদু হাসে! তুরের পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে আবার ব্যন্ডেজ করে দিলো ও। হাতের ব্যান্ডেজটাও পাল্টানো উচিত ভেবে সে তুরের হাত ধরতেই তুর ছ্যাত করে ওঠে,
– ” আপনি কথায় কথায় গায়ে হাত দেন কেন ভাই? মুখে কথা বলা যায় না? আল্লাহ মুখ, বাকযন্ত্র দিয়েছে কিসের জন্য? ”

রোদ্দুর চট করে তুরের কপালে নিজের ঠোট ছুঁইয়ে দিলো। তুর রোদ্দুরের এমন কান্ডে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! হতবাক হয়ে বসে আছে সে। রোদ্দুর হেসে বলে,
– ” জানি! উদাহরণসরূপ, এই মনে করুন ঠোট! ঠোটের অন্যতম কাজ নিজের বউকে চুঁমু খাওয়া, বাকিটা নাই’বা বললাম। এখন বউকে চুঁমু খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে, বাকযন্ত্র তো সেগুলো বলার জন্যও রয়েছে! এই ধরুন বউকে চুঁমু খাওয়াও কিন্তু একটা কলা! প্রথমত চুঁমু খেতে হবে নিজের বিয়ে করা বউকে, যেকোনো বউ হলেই চলবে না। পাশের বাড়ির ভাবি আই মিন পাশের বাড়ির ভাইয়ের বউকে চুঁমু খেলে আমার ঠোট, নাক, মুখ, চেহারা কোনোটাই ঠিক জায়গায় থাকবে না। তাইনা? তেমনই”
তুর রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে। বা’হাতে ও রোদ্দুরকে ইশারা করলো থামার জন্য। রোদ্দুর থেমে হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো। তুরের ফোনে ম্যাসেজ আসে। আবিদের ম্যাসেজ,

– ‘ বোন কেমন আছিস? কোন হসপিটালে আছিস? আমাকে কাইন্ডলি জানা, আমি যাবো তোর কাছে। তুই একদম চিন্তা করবি না । ঠিক হয়ে যাবি তুই। তোর কিচ্ছু হতে দেবে না তোর আবিদ ভাইয়া। ”
তুর ম্যাসেজটা দেখে রোদ্দুরের দিকে তাকালো, এরপর ম্যাসেজের রিপ্লাই দিলো,
– ” আমার জন্য চিন্তা করিস না ভাইয়া! আমি ঠিক আছি। এখন বাড়িতে আছি। কাল সকালে এসে দেখে যাস আমাকে। ”
– ” সাবধানে থাকিস! নিজের খেয়াল রাখিস।”
তুর ম্যাসেজটা সিন করে গালি দিলো ‘শুয়োরের বাচ্চা’।তুরের গালি শুনে রোদ্দুর চকিত দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকালো। তুর রোদ্দুরের চাহুনি দেখে থতমত খেয়ে বললো,

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ১

– ” আপনাকে বলি নি। ”
– ” আমি জানি আমাকে বলেন নি। কিন্তু কাকে বললেন? কে ম্যাসেজ দিয়েছে। ”
তুর ফোন বন্ধ করে পাশে রাখলো। রোদ্দুরের চোখে চোখ রেখে বললো,
– ” কোনো এক বিশ্বাসঘাতককে। যে আমার বিশ্বাসের দাম দেয়নি, ”
– ” প্রেমঘটিত কোনো কিছু? ”
– ” নাহ! আচ্ছা বাদ দেন এগুলো। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন! আমিও ঘুমাবো। ঘুম আসছে আমার। ”
রোদ্দুর নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দেয়,
– ” আপনি ঘুমান। আমি সচরাচর রাতে ঘুমাই না। ঘুমাতে পারি না, কারন আমার ঘুম আসেনা। ”
তুর কিছু একটা ভেবে বললো,
– ” আমার পাশে শুয়ে পড়ুন, আপনি আমার সেবা করেছেন সারাটি দিন, এবার নাহয় আমি করি। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
রোদ্দুর চটজলদি উত্তর দেয়।
– ” না, না! আপনার হাতে ব্যাথা। আপনি ঘুমান। আমি আছি এখানে কিছু লাগলে আমাকে বলবেন। ”
তুর হেসে উত্তর দেয়,
– ” ডান হাতে ব্যাথা! বাম হাতে নয়। আপনি শুয়ে পড়ুন।”
– ” যদি ঘুমিয়ে পড়ি? ”
– ” ঘুমাবেন! ”

– ” নাহ, আসলে ঘুমিয়ে পড়লে সেটা কোনো ব্যাপার না। তবে আমার বউ বলে ঘুমের মাঝে নাকি আমি দেখতে বেশি সুন্দর হয়ে উঠি, তখন আমাকে যে দেখবে তারই নাকি আমাকে আদর করতে ইচ্ছা করবে। আর আপনি যদি বাই এনি চান্স আমাকে আদর করেন, তাহলে তার তালে তাল মেলাতে আমার দুসেকেন্ডও সময় লাগবে না। আমি যথেষ্ট উদার এবং মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তি। আমি চাইনা আপনার এই অসুস্থ শরীরে আপনাকে কিছু করতে। সময় তো আর শেষ হয়ে যাচ্ছে না। সুস্থ হন তখন নাহয় পুষিয়ে দিবো সকল আদর। ”

তুর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো! এই লোকটা এতোটা লুচ্চা দেখে বোঝাই যায়না। মনে হয় যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারেনা। কিন্তু ব্যাটা যে আস্ত মাছটাই গিলে খেতে পারে সে খবর জানে ক’জন? এর উত্তর দেওয়া আর বিদ্যুৎস্তম্ভের সঙ্গে আলাপ করা একই ব্যাপার। ফুললি এনার্জি ওয়েস্ট! তাই আর একটাও বাড়তি কথা না বলে তুর চুপচাপ শুয়ে পড়ে! রোদ্দুর তুরের মাথায় এক হাত রেখে অপর হাত দিয়ে তুরের নরম হাত ধরে রাখলো। তুর টের পায় রোদ্দুর ওর হাতে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। হাতে কিছুটা আরামবোধ হতেই চোখে ঘুম ভর করলো তুরের। ঘোরের মধ্যেই ও রোদ্দুরের হাত চেপে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৩