সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৪ || Fatema Khan

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৪
Fatema Khan

আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথায় যাকে নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসি সে আজ আমার ভাইকে মারতে চায়।কিন্তু কেনো?
আরিশঃতাহিয়া তুমি ভুল বুঝছো।তুমি যা দেখছো তা সম্পূর্ণ ভুল।আমি ইচ্ছে করে এমনটা করি নাই।
তাহিয়াঃতাহলে কিভাবে হলো,তোমার হাতে পিস্তল ভাইয়ার হাতে রক্ত।বলো কিভাবে?
তূর্যঃতাহিয়া আরিশ আমাকে এতোদিন আটকে রেখেছিলো যানিনা কেনো,কিন্তু আজ যখন আমি পালানোর চেষ্টা করি তখনই আরিশ এসে আমাকে গুলি করে।
আরিশঃ তূর্য একদম মিথ্যা বলবি না(কলার ধরে)
তাহিয়াঃআমার ভাইকে ছাড়ো(আরিশ আর তূর্যকে ছাড়াতে ছাড়াতে)
তাহিয়া তূর্যকে ছাড়িয়ে আরিশকে এক থাপ্পড় মেরে বলে-
তাহিয়াঃআমার ভাইয়ের গায়ে আর একটা আঘাত করেছো তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।ভুলে যাবো আমি তুমি আমার কে হও,আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আরিশঃতুমি পাগল হয়ে গেছো,কি সব বলছো তুমি!
তাহিয়াঃআমি একদম ঠিক বলছি মিস্টার আরিশ খান।দূরে থাকবেন আমার থেকে এবং আমার ফেমিলি থেকে।
আরিশঃতাহিয়া তুমি আমার কথা শুনো।
তাহিয়াঃআমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না।যা নিজের চোখে দেখেছি তাই যথেষ্ট।(চোখের পানি মুছে)
তূর্যঃ তারাতাড়ি চল বোন না হলে এই আরিশ তোকে মারতেও এক মূহুর্ত ভাববে না।
আরিশঃতাহিয়া প্লিজ বউ তুমি আমার কথাটা শুনো তারপর না হয় চলে যেও।
তাহিয়াঃআপনার ওই নোংরা মুখে আমাকে বউ বলবেন না।আমার থেকে দূরে থাকুন।
(তাহিয়া আরিশের কোনো কথা না শুনে তূর্যকে নিয়ে চলে গেলো)

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

দুইদিন ধরে তার কোনো খবর নেই।আমি যে তাকে কল করে যাচ্ছি মোবাইলটাও বন্ধ করে রেখেছে।আমি যে পরশু বাংলাদেশ যাবো তার সেদিকে কোনো খেয়াল আছে।(রেজোয়ান রুমে পায়চারি করে নিজেই বলছে এসব।তখনই তার মোবাইলে কল আসে)
রেজোয়ানঃহ্যালো(গম্ভীর হয়ে)
মাস্কপরা ব্যাক্তিঃহ্যালো।আসলে……
রেজোয়ানঃআসলে নকলে শুনতে আসি নাই আমি।এই দুইদিন কই ছিলা তুমি?আর তোমার মোবাইল বন্ধ ছিলো কেনো?
মাস্কপরা ব্যাক্তিঃঅনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।
রেজোয়ানঃকিহ ঝামেলা?
মাস্কপরা ব্যাক্তিঃসে অনেক কিছু জেনে গেছে,আর আমি এইজন্যই এই দুইদিন আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই।
রেজোয়ানঃতাহলে এখন
মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে এই দুই-তিন দিন।
রেজোয়ানঃ হুম বুঝলাম
মাস্কপরা ব্যাক্তিঃপরশু আপনি আসলে আমরা কাজ শেষ করে পরেরদিন প্রথম ফ্লাইটে আপনি দুবাই চলে যাবেন।বাংলাদেশে থাকা খুব রিস্ক হয়ে যাবে।
রেজোয়ানঃঠিক আছে এখন রাখছি।তুমি সাবধানে থেকো।

কেনো করলে তুমি এমনটা আমার সাথে? আমি তো ভালোবেসেছি মন থেকে।নিজের মন প্রাণে শুধু তোমার নাম এতো ভালোবাসার পরও তুমি আমার ভাইয়ের সাথে এমনটা কিভাবে করলে।সবকিছু এতোই তুচ্ছ তোমার কাছে।
আফসানাঃতাহিয়া দরজা খোল মা কি হয়েছে মাকে তো বল(দরজায় নক করে)
তাহিয়াঃকিছু হয়নি মা।
আফসানাঃতুই দরজা খোল আগে
(তাহিয়া দরজা খুলে দিলো)
আফসানাঃএবার বল কি হলো আরিশের সাথে জগড়া হয়েছে।আর তূর্যকে কোথায় পেলি।
তাহিয়াঃকিছু হয়নি মা।ভাইয়া এসেছে তো তাই ভাবলাম কয়দিন থেকে যাই।
আফসানাঃভালো করছিস।কিন্তু ছেলেটার হাতে ব্যান্ডেজ কেনো?তূর্য ঘুমিয়ে গেছে না হলে ওকেই জিজ্ঞেস করতাম
তাহিয়াঃজানিনা মা,ভাইয়ার তো এমনই ছিলো। হয়তো ব্যাথা পেয়েছে।
আফসানাঃঅহ কই ছিলো এই কয়দিন কিছুই বললো না।আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পড়।
তাহিয়াঃআচ্ছা মা।
(তারপর আফসানা চলে গেলেন)

পরের দিন সকালে তাহসিন ও আবির আহমেদ,নীলিমা ও রায়হান খান,তনিমা ও রাসেল তূর্যের ফিরে আসার কথা শুনে তাকে দেখতে আসে।সবাই আসলেও আরিশ আসে নি।সবাই তূর্যকে নিয়ে খুব চিন্তিত।
রায়হানঃকি করে হলো এসব তূর্য? তোমার হাতের এই অবস্থা কিভাবে?
তূর্যঃআসলে আমার একটা এক্সিডেন্ট হয় তাই আর কি
রায়হানঃঅহ আচ্ছা সাবধানে থাকবে তো নাকি
তূর্যঃজ্বি আংকেল
তাহসিনঃকিন্তু ভাইয়া তুমি তো প্রায় ১৫দিনের মত গায়েব ছিলে কিন্তু তোমার হাতের ঘা দেখে মনে হচ্ছে নতুন ঘা
তূর্যঃআসলে হয়েছে কি কাল আরি……
তাহিয়াঃআহা!কত কথা বলো তোমরা?শুধু কি কথাই বলবে নাকি কিছু খাবেও(তূর্যকে কথা বলতে না দিয়ে)
আফসানাঃহ্যা হ্যা আগে খেয়ে নেও সবাই পরে না হয় সব জানা যাবে।
(তাহিয়া আর তূর্যের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে ওরা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কি লুকাতে চায় তারা।)
তনিমাঃচল না তাহসিন খাবি তো
(তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে বিকালের দিকে চলে যাওয়ার জন্য উঠে পরে)
নীলিমাঃতুই যাবি না মা আমাদের সাথে?
তাহিয়াঃহয়েছে কি ভাইয়া আসছে তাই ভাবছি কিছুদিন থেকে যাই।আর আরিশ জানে আমি থাকবো কিছুদিন
নীলিমাঃঅহহ আচ্ছা সাবধানে থাকিস,তাহলে আসি আমরা (সকলে বিদায় নিয়ে চলে গেলো)

“তাহিয়া আর তূর্য কিছু তো মিথ্যা বলছিলো।কিন্তু কেনো?এগুলো ভাবছিলো তখনই তাহসিনের মোবাইলে কল আসে।সে মোবাইল নাম্বার দেখে রিসিভ করে।”
…………..
তাহসিনঃঠিক আছে আমি আসছি।(বলে কল কেটে দিলো)
তাহসিন গাড়ি নিয়ে যাবার সময় জারাকে দেখতে পায়।সে জারাকে দেখে গাড়ি থামায়।দেখে জারার সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ছেলেটা বারবার জারার হাত ধরছে আর জারা রেগে কিছু একটা বলছে।তাহসিন তা দেখে রেগে গেলো গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে যায়।
তাহসিনঃকি হয়েছে জারা কোনো সমস্যা
জারাঃআপনি এখানে
তাহসিনঃআপনাকে দেখলাম এখানে তাই আসলাম।উনি কে
জারাঃআসলে ও আমার ফ্রেন্ড বিহান আমরা একসাথে পড়তাম
তাহসিনঃও আচ্ছা
বিহানঃও কে জারা।আর একে এতো কথার জবাব দিতে হবে কেনো তোকে
জারাঃউনি তাহসিন।
বিহানঃতো চল(বলেই জারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলো)
জারাঃএ কেমন অসভ্যতা ছাড় আমাকে
তাহসিনঃউনি বলছে না যাবে না তাহলে কেনো হাত ধরে টানাটানি করছেন আপনি
বিহানঃকে আপনি যে আমার আর ওর মাঝে কথা বলছেন
তাহসিনঃআমি ওনার হবু স্বামী। ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে
বিহানঃমানে কি
জারাঃকখন থেকে এটাই বলছি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তুই ভাবছিলি আমি মিথ্যা বলছি।
বিহানঃতোকে তো আমি ভালোবাসি তুই তো আগে থেকেই জানতি তাহলে।
জারাঃকিন্তু আমি বাসি না প্লিজ ঝামেলা করিস না।(বলেই তাহসিনের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেলো)
(তাহসিন জারাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে বললো সন্ধ্যার পর আমি আসবো তৈরি হয়ে থাকবেন।তারপর জারাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো)
জারাঃযাহ বাবা কি লোক রে আমি যাবো কিনা একবারও জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।

তাহসিনঃআমি এসে গেছি কোথায় তুমি
……………
তাহসিনঃকি হয়েছে বলো,এতো আর্জেন্ট ডাকলে যে।
…………
তাহসিনঃআচ্ছা ঠিক আছে আমি সব বুঝতে পেরেছি।তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি তোমার সাথেই আছি।আর আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না সে এমন কিছু করতে পারে।
(তারপর তাহসিন ও ব্যাক্তিটি আর‍ও কিছু কথা বলে চলে গেলো)

তাহসিন আর জারা একটা পার্কে পাশাপাশি হাটছে কিন্তু কেউই কথা বলছে না।তাই তাহসিন বলে উঠলো-
তাহসিনঃবিহানকে তুমি পছন্দ করো
জারাঃও শুধু আমার ফ্রেন্ড এর বেশি কিছু না।
তাহসিনঃঅহ বুঝতে পারছি
জারাঃআমি শুধু একজনকে পছন্দ করি আর সেটা আপনি
তাহসিনঃজানি।কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি না
জারাঃবাসেন না বেসে ফেলবেন আর কি।
তাহসিনঃহয়তো
জারাঃতবে আমার না নিজের বাচ্চাদের ফিউচার নিয়ে অনেক চিন্তা হয়
তাহসিনঃকেনো ফিউচার বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তার কি আছে
জারাঃ যে নিরামিষ জামাই কপালে পরছে দেখা যাবে আমার এত্তগুলা কিউউউট বাচ্চাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
তাহসিনঃআমাকে আপনার নিরামিষ মনে হয়।
জারাঃনয়তো কি
“তাহসিন জারার কোমর ধরে হেচকা টান দিলে জারা টাল সামলাতে না পেরে তাহসিনের বুকের উপর পরলো।সাথে একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো তার চোখে।”
তাহসিনঃআমার চোখের দিকে তাকান।

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৩

“জারা ধীরে ধীরে তাহসিনের চোখের দিকে তাকালে তাহসিন জারার দুগালে হাত রেখে তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়।জারা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।তাহসিন জারার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।জারা তো পুরো শকড কি হচ্ছে কি এটা।অনেকক্ষণ পর তাহসিন জারাকে ছেড়ে দিলো।জারা তো তার দিকে তাকাচ্ছেই না লজ্জায়।তাহসিন জারার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উপরে উঠিয়ে বললো-
তাহসিনঃআমি নিরামিষ,হুম।
কাল আমার কাজ আছে দেখা হবে না।
জারাঃকোথায় যাবেন?
তাহসিনঃঅনেক বড় কাজ আছে কাল।নিজের খেয়াল রাখবেন ঠিক আছে।
জারাঃআমি বাসায় যাবো
তাহসিনঃআরেকটু থাকি না রোমাঞ্চ করতে ভালোই লাগছে।কি বলেন
জারাঃদেরি হচ্ছে তো(এই লোকটা ইচ্ছে করে আমাকে লজ্জা দিচ্ছে)
(তাহসিন জারাকে বাসায় পৌছে নিজের বাসায় চলে গেলো)

সকালেই তাহিয়া বেড়িয়ে গেছে কলেজের উদ্দেশ্যে।তূর্য তাকে নিয়ে গেছে কলেজে।
তূর্যঃকলেজ শেষ হলে আমি নিতে আসবো।
তাহিয়াঃনা ভাইয়া আমি চলে যাবো তোমার আসতে হবে না।
তূর্যঃঠিক আছে।আর তুই চিন্তা করিস না আমি সব ঠিক করে দিবো।একদম মন খারাপ করবি না।
তাহিয়াঃ হুম
তূর্যঃআরিশ কল দিছে
তাহিয়াঃনা ভাইয়া
তূর্যঃঅহহ আচ্ছা তুই তাহলে ক্লাস করতে যা।

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৫