সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৩ || valobashar bangla story

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৩
Fatema Khan

চোখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে নিতেই দেখি চারপাশ অন্ধকার হয়ে আছে।আরিশকে ডাকছি কিন্তু আরিশের কোনো সারাশব্দ নেই।হঠাৎ আমার চারদিকে আলো জ্বলে উঠলো।হুট করে চারপাশ আলোকিত হওয়ায় চোখ বুজে ফেললাম আমি।আস্তে আস্তে চোখ খুলে তো আমার চোখ ছানাবড়া, যেনো চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে পরবে।এতো সুন্দর করে সাজানো।চারদিকে গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,লাভ শেপের বেলুন দিয়ে সাজানো আর আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও গোলাপের পাপরি দিয়ে সাজানো আমি মাঝ বরাবর।সামনে তাকিয়ে দেখি আরিশ এক হাটুর উপর ভর করে বসে আছে হাতে তার একটা লাল গোলাপ।আমি তো পুরাই অবাক,বিয়ের এতোদিন পর আরিশ আমার জন্য এগুলো করছে।যা সবসময় আমি চাইতাম।
আরিশঃতোমাকে সেদিন থেকে ভালোবাসি যেদিন থেকে ভালোবাসা কি বুঝতে শিখেছি।কিন্তু বলতে পারি নি বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট তুমি।কিন্তু ফাইনালি তুমি আমার হলে।সেটা যেভাবেই হোক না কেনো।নিজের ফিলিংস প্রকাশ করতে পারি না আমি।তুমি আমার জীবনের সেই গোলাপ যার সুবাসে আমি প্রতিদিন তোমার প্রেমে পরি।তোমাকে হারানোর ভয়ও ছিলো মনে।কিন্তু তুমি আমার পাশে ছিলে সবসময়।স্ত্রীর সুখ তোমায় দেইনি আমি নিজেকে সবসময় তোমার থেকে দূরে রেখেছি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি শুধু আজকের দিনের জন্য।খুব ভালোবাসি তোমায় তুমিও কি আমায় #সত্যি_ভালোবাসো? যদি ভালোবাসো তাহলে এই ফুলটি গ্রহণ করো।

তাহিয়াঃতোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি।(গোলাপটি আরিশের হাত থেকে নিয়ে)
আরিশ তার পকেট থেকে ছোট একটি বক্স বের করলো,বক্সটি থেকে একটি ডায়মন্ডের আংটি নিয়ে আমার সামনে ধরলো আর বললো-
আরিশঃতোমাকে আজ আমি আমার করে নিতে চাই।হবে কি আমার?
তাহিয়াঃআমি তো তোমারই।(নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
“আরিশ আমাকে আংটি পড়িয়ে দিলো।তারপর উঠে দাড়ালো।”
আরিশঃএকি তুমি কান্না করছো কেনো?(আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে)
তাহিয়াঃআমি তো খুশিতে কান্না করছি।এতো ভালোবাসো কিভাবে আমাকেও একটু শিখিয়ে দিও।
আরিশ হাসতে হাসতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো চলো ওইদিকে যাই।তারপর আমার হাত ধরে একটা নৌকার সামবে দাড় করালো।নৌকাটি খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।আমি তো একটার পর একটা ঝাটকা খাচ্ছি।সে আমার হাত ধরে নৌকায় উঠালো।আমি আর আরিশ নৌকার একপাশে বসেছি অন্যদিকে মাঝি।আরিশ আমায় পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আর গান গাইছেন।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

তাহসিন আর জারা পাশাপাশি হাত ধরে হাটছে।তাহসিন বারবার হাত ছেড়ে দিচ্ছিলো,কিন্তু জারা বারবার হাত ধরছিলো তাই এখন আর মানা করছে না।অনেকদূর যাওয়ার পর একটা আইসক্রিমের গাড়ি দেখে জারা তাহসিনের হাত আরও চেপে ধরে বলতে লাগলো আমি আইসক্রিম খাবো।তাহসিন তাতে বিরক্ত হলো না বরং হাসলো।
তাহসিনঃচলেন।(মেয়েটা পুরো বাচ্চাদের মত করে।)
(তাহসিন জারাকে আইসক্রিম নিতে বললো।জারা ৩টি আইসক্রিম নিলো।আর খাওয়া শুরু করলো।খাওয়ার সময় তার পুরো মুখে লাগিয়ে ফেলছে।তাহসিন নিজের অজান্তেই জারার ঠোঁটে থাকা আইসক্রিম হাত দিয়ে মুছে দিলো।তারপর একটা টিস্যু দিয়ে পুরো মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে দিলো।জারা লজ্জায় দূরে সরে এলো।তাহসিন বুঝতে পেরে ভাবলো সে করছিলো কি,তার ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে জারার দিকে এগিয়ে গেলো।)
তাহসিনঃবাসায় যাবেন না,চলুন আপনাকে দিয়ে আসি।
জারাঃ হুম চলুন।

তারপর আবার হাটা শুরু করলো দুইজনে তবে এবার জারা হাত ধরে নি কেমন লজ্জা লাগছিলো তার।হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।তাহসিন জারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।একটা ছাউনির নিচে দুইজন দাঁড়ায়।তাহসিন নিজের চুল ঝাড়তে ঝাড়তে দেখে জারা তার পাশে নেই।জারা দুই হাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছে।তাহসিন জারার দিকে তাকিয়ে আছে।তার দিকে তাকিয়ে তাহসিন হেসে দিলো আর বললো পুরাই বাচ্চা একটা মেয়ে।জারার জামা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে যার দরুন জারার শরীরের প্রতিটি ভাজ দৃশ্যমান।জারার ওরনাও অনেকটা সরে গেছে বুকের উপর থেকে সেইদিকে জারার কোনো খেয়াল নেই সে তো বৃষ্টিবিলাশ করতে ব্যাস্ত।তাহসিন জারার মেয়েলি দেহের গরনের প্রতিটি ভাজের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।তাহসিন কিছুক্ষণ পরেই নিজের চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।সে জারার দিকে এগিয়ে যায় আর জারার কাছে গিয়ে জারার হাত ধরে বলে বাসায় যেতে হবে দেরি হচ্ছে তো।জারা তার দিকে তাকিয়ে তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো।তাহসিন তাল সামলাতে না পেরে জারাকে নিয়েই হালকা পিছিয়ে যায়,সে জারার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো
তাহসিনঃ কি হয়েছে?

জারাঃকিছুনা
তাহসিনঃতাহলে চলুন যাওয়া যাক
জারাঃথাকি না কিছু সময় এভাবে ভালোই তো লাগছে আমার।আপনার ভালো লাগছে না?
তাহসিনঃজ্বর আসবে তো
জারাঃআপনি আছেন তো আসলে আসবে আমার জ্বর। আপনার উষ্ণতায় আমার জ্বর সারিয়ে দিবেন।
তাহসিনঃ……….(জারাকে জড়িয়ে ধরে)

আরিশ আর তাহিয়া নৌকা থেকে নামার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হলো।আরিশ তাহিয়াকে নিয়ে পাশে থাকা ছোট ঘরটার কাছে দৌড়ে গেলো।ঘরটাতে ঢুকে তাহিয়া আরও অবাক।ঘরটা পুরো গোলাপ রজনীগন্ধা দিয়ে সাজানো।তাহিয়া লজ্জায় এককোনায় চুপ করে বসে আছে।
আরিশঃকি গো বউ এতো লজ্জা পেও না।একটু পর সব লজ্জা যে বিসর্যন দিতে হবে।এর আগেও একবার তোমার কাছে এসেছি তবে তখন হয়তো অনুমতি নেই নি।কিন্তু আজ যে আমার তোমায় ভালোবাসতে তোমার অনুমতি চাই।দিবে কি আমাকে সেই অধিকার।খুব করে ভালোবাসতে চাই তোমাকে।
তাহিয়া আরিশের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলে-
তাহিয়াঃভালোবাসতে চাই তোমাকে।তোমার ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে চাই।আমাকে নিজের করে নাও।এই জীবনে আমি শুধু তোমার হতে চাই।

আরিশ তাহিয়ার কপালে নিজের ঠোঁটের ছোয়া দিয়ে কোলে তুলে নেয়।তাহিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলো।তাহিয়া তার চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো।তখনই আরিশের মোবাইলে কল আসলো।আরিশ বিরক্ত হয়ে বললো সব আমার শত্রু।তাহিয়া হেসে দিলো আর বললো রিসিভ করতে।আরিশ পকেট থেকে মোবাইল বের করে নাম্বার দেখে তার চেহারার রঙ পালটে গেলো।
তাহিয়াঃকি হলো,কে কল করেছে?
আরিশঃতুমি বসো,আমি কথা বলে আসছি
তাহিয়াঃবাইরে তো বৃষ্টি
আরিশঃআমি আসছি(আরিশ বাইরে বের হয়ে যায়।)
তাহিয়াঃকার এমন কল এলো যে চলে গেলো? সত্যি আমাদের ভালোবাসায় সব শত্রু(বলেই হেসে দিলো)
আরিশ ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো-
আরিশঃচলো আমাদের এখন বাসায় যেতে হবে।
তাহিয়াঃকেনো?
আরিশঃতোমাকে বাসায় দিয়ে আমার একটু কাজে বের হতে হবে।
তাহিয়াঃকি কাজ?
আরিশঃএতো কথা জেনে কি করবা চলো তো।

তাহসিনঃআপনার বাড়ি এসে গেছে।(গাড়িতে ব্রেক কষে)
জারাঃ হুম।ভিতরে আসুন
তাহসিনঃনা আজ না,দেরি হয়ে গেছে এমনিতেই।
জারাঃআচ্ছা।
(জারা ও তাহসিন গাড়ি থেকে নেমে।জারা ভিতরে ঢুকতে যাবে তাহসিন তাকে ডাক দেয়।)
তাহসিনঃতারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিবেন না হয় জ্বর আসতে পারে রাতে।
জারাঃঠিক আছে,আর আপনিও তারাতাড়ি যান না হলে আপনারও জ্বর আসবে।
(তাহসিন জারাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো)

(আরিশ কোথায় যাবে আর কে কল করলো,আমাকেই বা কিছু বলতে চায় না কেনো কিছুই মাথায় আসছে না।আর কল আসার পর থেকেই কেমন অস্থির হয়ে গেছে সেখানে যাবার জন্য।)
আরিশঃকি ভাবছো?গাড়ি থেকে নামো আমরা এসে গেছি।
তাহিয়াঃতুমি ভিতরে আসবে না?
আরিশঃনা আমার কাজ আছে। (বলেই তাহিয়াকে নামিয়ে চলে গেলো)
তাহিয়াঃমা,বাবা কেউ যানে না আমাকে আরিশ বাসায় দিয়ে গেছে,তাহলে আমি আরিশের পিছনে যাবো আজ আমাকে যে জানতেই হবে আরিশ কি এমন লুকানোর চেষ্টা করছে আমার থেকে।
(একটা সি.এন.জি. তে উঠে যায় তাহিয়া,তারপর আরিশের গাড়ির পিছনে।অনেক দূরেই আরিশের গাড়ি তবু্ও রাস্তা ফাকা হওয়ায় আরিশের গাড়ি তাহিয়া ঠিক চিনতে পারছে।তাহিয়া যেদিকে বলছে সি.এন.জি. চালকও সেদিকেই নিচ্ছে।)

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২২

তাহসিন ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে আসলো।আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে আর জারার করা বাচ্চামোর কথা ভাবছিলো আর আনমনে হাসছিলো-
তাহসিনঃপাগলী একটা।কিন্তু মনটা অনেক ভালো।আমি চেষ্টা করবো ওর মুখে সবসময় হাসি ফুটিয়ে রাখার।
(এদিকে জারাও তাহসিনের কথা ভেবে লজ্জায় লাল হয়ে আছে।)
জারাঃছিঃ কি করে পারলাম তাকে জড়িয়ে ধরতে,আর কিসব বলছিলাম।কি ভাববে আমাকে নিয়ে কে জানে।আবার দেখা হলে তো আমাকে নিয়ে অনেক মজা করবে।না না আমি আর তাহসিনের সামনেই যাবো না।

তাহিয়া একটা বড় বিল্ডিং এর সামনে আরিশের গাড়ি দাড় করানো দেখলো।সে টাকা দিয়ে সি.এন.জি. বিদায় করলো।
তাহিয়াঃআরিশের এখানে কি এমন কাজ,আর বিল্ডিং এর কাজও অসম্পূর্ণ।
তখনি গুলির আওয়াজ কানে আসে।তাহিয়া গুলির আওয়াজ শুনে একমুহূর্তও ব্যয় না করে উপরে ছুটে গেলো।

তাহিয়াঃআমার আরিশ ঠিক আছে তো, কে গুলি চালালো,আর আরিশের এখানে কেনো আসা লাগলো।
তাহিয়া গিয়ে দেখে দুইজন লোক সেখানে আছে।একজন নিচে বসে আছে একহাত দিয়ে অন্য হাত চেপে ধরে, আরেকজন একটা পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া আরেকটু এগিয়ে গিয়ে যা দেখলো সে পুরাই অবাক।সে বলে উঠলো-
তাহিয়াঃতূর্য ভাইয়া তুমি এখানে!(বলেই বসে পড়লো।তার চোখের সামনে যা দেখছে তা যেনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না)
তূর্য একহাত দিয়ে যেখানে রক্ত পড়ছে সেখানে চেপে ধরে আছে আর আরিশ তার সামনে পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে

সত্যি ভালোবাসো পর্ব ২৪