ভুলতে পারিনি তাকে শেষ পর্ব || নীল ক্যাফের ডায়েরী

ভুলতে পারিনি তাকে শেষ পর্ব 
Mahfuza Akter

বর্তমান
ডায়েরিটা এখানেই শেষ হতেই অশ্রু নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরলো ডায়েরিটাকে। চশমার আড়ালে থাকা চোখ জোড়া অসম্ভব লাল ও জলসিক্ত।
অশ্রু নিজের চোখ মুছতে মুছতে বললো,
—আই মিস ইউ, পাপা। আই মিস ইউ আ লট।
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা হাসিমুখে বললো,
—কেমন লাগলো বার্থডে গিফট টা?
অশ্রু ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বললো,
—আমার চোদ্দ বছরের জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট ছিল এটা, ফুপি।
—তবে আভাস-শ্রুতির কাহিনী কিন্তু আরো বাকি আছে। জুনিয়র ভাবির কাছ থেকে শুনতে হবে সেটা। এই ডায়েরিটা সে পুরো কমপ্লিট করেনি।
অশ্রু ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,

—তুমি বলেই তো পারো! যাইহোক, মামনি কখন বাসায় আসবে?
—লাঞ্চ টাইমে আসবে বলেছিলো। আজ তো একটা কেসের রায় দিবে! সেজন্য এতো লেট হচ্ছে।
স্নেহা কথা শেষ করে অশ্রুর দিকে তাকাতেই দেখলো, ওর চোখে পানি টলমল করছে। স্নেহা মুচকি হেসে অশ্রুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
—কাঁদছিস কেন? হুম? পাপার কথা মনে পড়ছে বুঝি!
অশ্রু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—অনেক মনে পড়ছে। পাপাকে আমি অনেক মিস করি, ফুপি। আজ এই ডায়েরিটা পড়ে জানতে পারলাম, আমার মামনি আর পাপা কতো কষ্ট সহ্য করেছে! তাদের মধ্যে এতো ধৈর্য্য শক্তি কোত্থেকে আসলো, ফুপি? কিন্তু সবকিছুর জন্য আমার গ্রেনি-ই দায়ী! আমি কখনো তাঁকে ক্ষমা…………..
স্নেহা অশ্রুকে থাকিয়ে দিয়ে বললো,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

—স্টপ ইট, অশ্রু। ঐ মহিলার কথা বাদ দিবি তুই। ওনাকে কখনো গ্রেনি বলে ডাকবি না। উনি আমাদের কেউ হন না। উনি একজন পাপী এবং প্রতারক, বুঝেছিস?
তন্ময় স্নেহাকে ডাকতে ডাকতে বললো,
—স্নেহময়ী, তোমার ছেলেকে গিয়ে সামলাও তো! আমি কতো বলছি ঘুমাতে, সে শুনছেই না!
অশ্রু চোখ ছোট ছোট করে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
—- আংকেল+মামা+ফুপা, তুমি একটা বাচ্চা ছেলেকে সামলাতে পারো না! আমার ফুপিকে কীভাবে প্যারালাইজেশন থেকে ঠিক করালে? আমার তো ডাউট হচ্ছে!
তন্ময় অবাক হয়ে অশ্রুর দিকে তাকিয়ে আছে। স্নেহাকে হাসতে দেখে সে বুঝতে পারলো যে, স্নেহাই অশ্রুকে ষোলো বছর আগের সব কাহিনী শুনিয়েছে। তন্ময় বললো,

—আম্মাজান, আপনাকে বলেছি না? আমায় একসাথে তিনটা নামে সম্বোধন না করে শুধু আংকেল বলে ডাকবেন!
অশ্রু কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিচ থেকে কারো চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে।
—পরী, কোথায় তুমি? পরী!! শুনতে পাচ্ছো? পরীইইইই!!!
অশ্রুর চেহারাটা আনন্দে ভরে উঠলো। সে যে কতো খুশি হয়েছে, সেটা তার চোখে মুখে ফুটে ওঠা আনন্দের ঝিলিক দেখেই বোঝা যাচ্ছে। স্নেহা মুচকি মুচকি হাসছে আর তন্ময় ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। অশ্রু লাফিয়ে উঠে ছুটে বাইরে চলে গেল। তন্ময় স্নেহার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
—তোমাকে ও আগেই বলেছিল সবটা, তাই না? তুমি আগেই জানতে ওর দেশে ফেরার কথা?
স্নেহা উত্তরে কিছু না বলে শুধু একটা ক্লোজআপ হাসি দিলো।

অশ্রু বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো হলরুমে দাঁড়িয়ে আভাস এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আর ‘পরী! পরী!’ বলে ডাকছে। পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, পায়ে পলিশ করা চকচকে ব্ল্যাক শ্যুতে নতুনত্বের আভা দেখা যাচ্ছে আর হাতে থাকা কালো স্যুটটা হাত বাকিয়ে পিঠের পেছনে ধরে রেখেছে। অশ্রু ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।
আভাস হন্তদন্ত হয়ে এদিক সেদিক তাকানোর সময় হঠাৎ সিঁড়ির দিকে চোখ আঁটকে যায়। তার পরী সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে নামছে, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে অথচ মুখে সেই অমায়িক হাসি। আভাস একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ তিন বছর পর তার মেয়েকে সামনাসামনি দেখছে সে। অপেক্ষা নামক জিনিসটা বরাবরই কষ্টের, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সবক্ষেত্রেই তাকে এই কষ্টটা দেয়। কেন তার সাথেই এমন হয়, আভাস সেটা বুঝে না!
অশ্রু আভাসের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে পা থামালো। আভাস হাতে থাকা স্যুটটা সোফার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে শার্টের হাতায় চোখ ঘষলো। অশ্রুর দিকে লাল লাল চোখে হাসিমুখে তাকিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে দুই দিকে মেলে দিলো আভাস। অশ্রু এগিয়ে গিয়ে আভাসকে ঝাপটে ধরে।

—পাপা, আমি অনেক মিস করছিলাম তোমায়। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি যে তুমি আসবে!
আভাস হেসে বললো,
—আমার মেয়ের বার্থডে আর আমি আসবো না। এমনিতেও গত দুই বার আসতে পারিনি, এবার একেবারে সব কমপ্লিট করে এসেছি।
অশ্রু মুখ তুলে আভাসের দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বললো,
—সত্যি তুমি এখানে একেবারে চলে এসেছো? আর ইউকে যাবে না?
আভাস হাসিমুখে ডানে-বামে মাথা নাড়ালো। অশ্রু খুশিতে কান্নার গতি বাড়িয়ে দিলো। আভাস ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,
—হোয়াট আর ইউ ডুয়িং, পরী? তুমি তোমার মায়ের মতো কিছু হলেই এভাবে চোখের পানি ছেড়ে দাও কেন বলো তো! এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি এখনি এখান থেকে চলে যাবো।
—এই, না না। আমি একদম কাঁদছি না। দেখো!

হঠাৎ পেছন থেকে একটা পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চা ছেলে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
—এই কে তুমি, হুম? আমার বাড়িতে এসে আমার আপুনিকে জড়িয়ে ধরে আছো কেন? তোমার সাহস তো কম না?
আভাস খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো। স্নেহা ছুটে এসে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে বললো,
—তাসিন বাবাই, এটা তোমার আপুনির বাবা। তুমি চিনতে পারোনি ওনাকে।
তাসিন আভাসের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—তাহলে উনিই আরহাম খান আভাস। তোমার ভাই।
আভাস তাসিনকে স্নেহার কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে বললো,
—ওরে আমার পাকনা বুড়া রে! এতো পাকা পাকা কথা কোথা থেকে শিখেছেন আপনি?
—আমাকে আবার কে শিখাবে? আমি কারো কাছ থেকে কিছু শিখি না, বরং সবাই আমার কাছ থেকে শেখে। আচ্ছা, তোমাকে আমি কী বলে ডাকবো?
তন্ময় কোথা থেকে যেন উদয় হয়ে বললো,

—তাসিন, তুমি ওকে চাচ্চু+ফুপা+মামা বলে ডাকবা!
আভাস ভ্রূকুটি কুঁচকে বললো,
—কী প্লাস, প্লাস লাগিয়েছিস? যেকোনো একটা বললেই তো হয়!
—তোর মেয়েও তো আমাকে এভাবেই ডাকে! আমার ছেলেও তাই এভাবেই ডাকবে!
তাসিন সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
—আমি তাহলে ওনাকে চাচ্চু বলেই ডাকবো।
অশ্রু অবাক হয়ে বললো
—মামনিকে ফুপি, পাপাকে চাচ্চু! এটা আবার কেমন হলো?
আভাস হতাশ হয়ে বললো,
—দেখলি স্নেহা! তোর ছেলে আমাকে আর আমার বউকে ভাই-বোন বানিয়ে দিলো।
স্নেহা হেসে বললো,
—বেশ হয়েছে। এবার বুঝো ঝগড়ার ঠেলা!

শ্রুতির বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেছে। আজ নারী নির্যাতনের একটা মামলার রায় দেওয়ার কথা ছিল। বরাবরের মতো এবারো আদালতে তর্কাতর্কির লড়াইয়ে বিবাদী পক্ষের উকিলকে শ্রুতির কাছে হার মানতে হয়েছে, তাই কাস্টডি সেই অসহায় মেয়েটার পক্ষেই রায় দিয়েছে যার জন্য শ্রুতি লড়াই করেছে। এজন্য কিছু ফর্মালিটিজ কমপ্লিট করতে করতে বিকেল হয়ে গেল।
গাড়ির পেছনের সিটে বসে বসে শ্রুতি ভাবছে,

—এতোটা ব্যস্ত জীবন তো আমি চাইনি! আজ অশ্রুর জন্মদিন ছিল, দিনটা অন্তত ওর জন্য বরাদ্দ করতে পারতাম! কিন্তু সেটাও আমার ভাগ্যে জুটলো না। আভাস কবে আসবে তুমি? সেই তিন বছর আগে ব্যবসার তাগিদে ইউকে চলে গেলে! যদিও তুমি যেতে চাওনি, আমি জোর করেছিলাম। কারণ ঐটা তোমার বিজনেসের জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিল। দিনশেষে তোমায় বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে! আমাদের মেয়েটাও তোমাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না!
হঠাৎ ড্রাইভারের কথায় ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় শ্রুতির। গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়িতে ঢুকে পড়ে সে। প্রতিদিনের মতো আজও সারা বাড়ি নীরব। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল সে।
রাতে শ্রুতি কপালে হাত চেপে শুয়ে আছে। মাথাটা প্রচন্ড ঝিমঝিম করছে সারাদিনের। ধকল শেষে এমনটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। হঠাৎ খট করে দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকিয়ে দেখে অশ্রু এসেছে। শ্রুতি অপরাধী সুরে বললো,

—অনেক সরি, মা। আজ তোমাকে সময় দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমি পারলাম না।
অশ্রু মায়ের মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
—প্রবলেম নেই, মামনি। আমি জানি, তুমি খুব ইমার্জেন্সি না পড়লে যেতে না। যাইহোক, চলো না ছাদে যাই।
—এখন? এখন তো রাত হয়ে গেছে, অশ্রু!
—তাতে কী হয়েছে? আমি হলাম এক্স প্রফেসর এন্ড প্রেজেন্ট বিজনেসম্যান আরহাম খান এবং রেপিউটেড এডভোকেট অদ্রিতা রুবাইয়াতের একমাত্র মেয়ে আরোহী খান অশ্রু। আমি কি রাতের অন্ধকারকে ভয় পাই নাকি।
বলেই শ্রুতিকে টেনে ছাদের দিকে নিয়ে গেল অশ্রু।
ছাদে থাকা দোলনায় বসতেই অশ্রু জিজ্ঞেস করল,

—পাপার পিঠে গুলি লাগার পর কী হয়েছিল, মামনি?
শ্রুতি চমকে অশ্রুর দিকে তাকালো।
—তুমি এসব কীভাবে জানলে?
অশ্রু একটা ডায়েরি শ্রুতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
—তোমার লেখা এই ইনকমপ্লিট ডায়েরি থেকে!
শ্রুতি কিছুক্ষণ ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
—আসলে ডায়েরিটার পেজ শেষ হয়ে গেছিলো, তাই আর লেখাটা কমপ্লিট করতে পারিনি।
—এখন আমাকে বলো, প্লিজ।
শ্রুতি চোখ বন্ধ করে ডুব দিলো সেই অতীতে।

আভাস চোখ দুটো বন্ধ করার সাথে সাথেই শ্রুতি চিৎকার করে আভাসকে ডাকতে লাগলো । কিন্তু আভাসের কোন সাড়াশব্দ নেই। শ্রুতি আভাসের পকেট থেকে ফোন বের করে ঝটপট তন্ময়ের নাম্বারে কল দিলো। তন্ময় ফোন রিসিভ করতেই শ্রুতি তাকে লোকেশন জানিয়ে তাড়াতাড়ি সেখানে আসতে বললো।
মিনিট দশেক পরেই তন্ময় গাড়ি নিয়ে ছুটে এসে তন্ময় আভাসের পালস চেক করে দেখে, পালস রেট অনেক স্লো। তাই সে দ্রুত আভাসকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
ওটির সামনে বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে শ্রুতি। তানিয়া আহসান আর আরাফ আহসান তার দুপাশে বসে আছে। তন্ময় ‘কীভাবে কী হয়েছে ‘ জিজ্ঞেস করতেই শ্রুতি সবকিছু খুলে বললো।
অপারেশন শেষে ডক্টর এসে বললেন,

—পেশেন্ট ডেঞ্জার জোন থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমরা গুলি এবং পয়জন গুলো সাকসেসফুলি বের করে ফেলেছি। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং হয়েছে আর উনি কয়েকদিন আগেই ওনার বোনকে রক্ত দিয়েছেন। তাই ওনাকে ইমিডিয়েটলি ব্লাড দিতে হবে। কিন্তু এবি নেগেটিভ ব্লাড আমাদের রিজার্ভেশনে নেই।
শ্রুতি হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে বললো,
—আমার ব্লাড গ্রুপ এবি নেগেটিভ। আমি রক্ত দিবো।
আরাফ আহসান প্রথমে বাধা দিতে চাইলোও আর দিলো না। কারণ এখন শ্রুতি কারো কথাই শুনবে না।
পরের দিন, আভাসের জ্ঞান ফিরতেই চট করে উঠে বসে। নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে দেখে তার গত রাতের কথা মনে পড়ে। আশে পাশে তাকাতেই দেখলো, শ্রতি তার পাশে বসে ঝিমাচ্ছে। চেহারাটা পুরোই শুকিয়ে গেছে। হয়তো সারাদিনে কিছুই খায়নি।

আভাস মলিন হেসে শ্রুতির গালে হাত রাখতেই শ্রুতি চমকে উঠে ফট করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো, আভাস বসে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি আভাসের বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—কে বলেছিলো আপনাকে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে বাঁচাতে? আর কতো ভাবে নিজেকে প্রেমিক পুরুষ বলে প্রমাণ দিবেন? এতো ভালো কেন বাসেন আমায়? আমায় কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে, তাই না? আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি কী নিয়ে বাঁচতাম?
আভাস নিজের প্রেয়সীকে বুকের সাথে জোরে চেপে ধরে বললো,
—প্রমাণ তো ততোদিনই দিয়ে যাবো, যতো দিন বেঁচে আছি! আর তোমাকে ছেড়ে কীভাবে যেতাম আমি? ঐ একটা সামান্য গুলির ক্ষমতা নেই আমাদের আলাদা করবে! তবুও আমি তো আমার মিষ্টিপাখিকে কষ্ট পেতে দেখতে পারি না!

অশ্রু সবটা শুনে বললো,
—তারপর ‌!
—তারপর আর কী? দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিলো। স্নেহা আপুকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করা হয়। আভাস তার বাবার গুটানো ব্যবসায়ে আবার হাত দেয়। ভার্সিটির ক্লাস আর ব্যবসা একই সাথে চালাতে থাকলো। আমার পড়াশোনাও চলতে থাকে। দুই বছরের মাথায় তুই এলি আমার কোল জুড়ে। আমরা কতটা খুশি হয়েছিলাম তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। শুধু মাত্র তোর কথা ভেবেই আমি প্লাস্টিক সার্জারি করতে রাজি হই।
অশ্রু অবাক হয়ে বললো,

—আমার কথা ভেবে?
—হ্যাঁ। কোনো সন্তানই চায় না তার মায়ের চেহারা ঝলসানো দেখতে! আর সেজন্যই………
—উফ, এনাফ মামনি। আমার তোমার চেহারা নিয়ে মোটেও কোনো সমস্যা থাকতো না। তোমরাই বেশি বুঝেছো। তবে,
অশ্রুর কথা শেষ হতেই আভাস পেছন থেকে বলে উঠলো,
—পরী, স্পেস চাই। একটু প্রাইভেট টক ছিলো। তোমার চৌদ্দ বছর উপলক্ষে চৌদ্দটা গিফট তোমার খাটে রেখে এসেছি। যাও গিয়ে দেখো তো!
শ্রুতি চোখ বড়বড় করে পেছনে তাকিয়ে দেখে, আভাস পকেটে দুই হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে। অশ্রু মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেল।
শ্রুতি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আভাস শ্রুতির কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। শ্রুতি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সেই আগের মতোই রয়েছে মানুষটা। একটুও বদলায়নি। কেউ দেখলে বলবে না যে, ওনার একটা চোদ্দ বছর বয়সী মেয়ে আছে।
আভাস শ্রুতির কানে ফিসফিস করে বললো,

—ওভাবে তাকিয়ে থেকো না! ঐ দৃষ্টিতে যে আমি আবার ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি!
শ্রুতি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো। থমথমে গলায় বললো,
—আমাকে একবার জানালে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?
—একেবারেই চলে এসেছি তো! এবার শাড়ির আঁচলে আজীবনের মতো বেঁধে ফেলো না আমায়!!
শ্রুতি ছলছল চোখে আভাসের দিকে তাকালো। চোখে পানি টলমল করছে যেন পলক ফেললেই গড়িয়ে পড়বে!
আভাস শ্রুতির দুই গালে হাত রেখে বললো,
—উহুম, আজ একদম আমি চোখের জল দেখতে চাই না। আমাকে একদম ইমোশনাল বানাবে না। তাড়াতাড়ি একটা কিউট হাসি দাও তো!
শ্রুতি হেসে দিতেই আভাস ওকে কাছে টেনে বললো,

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ২০

—আমার এডভোকেট বউটা এতো কিউট হয়ে গেছে! কী বলবো? এতো সুন্দর হয়ে গেছো কেন তুমি? আমাকে কি মেরে ফেলতে চাও? তোমাকে দেখে এখন কয়জন ক্রাশ খায়, হুম?
শ্রুতি হেসে দিয়ে বললো,
—আপনাকে দেখেও তো কতো মেয়ে ক্রাশ খায়! তারা কী জানে, এর বড়সড় একটা মেয়ে আছে?
—কিন্তু আমার যে মিষ্টিপাখিকেই চাই!
—আমারো যে ধলা বিড়ালটাকেই চাই!
অশ্রু নিজের ঘরে বসে বসে ভাবছে,

“সময়, পরিস্থিতি, বাস্তবতা সবই বদলে যায়। কিন্ত ভালোবাসার মানুষটা কখনো পুরাতন হয় না; অনুভুতি গুলো কখনো শেষ হয়ে যায় না; ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায় না। দিনশেষে জিত তাদেরই হয়, যারা সত্যিকারের ভালোবাসতে জানে!
অশ্রু আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
—আমার মামনি আর পাপাকে তুমি অনেক ঝড়-ঝাপটার পর এক করেছো, আল্লাহ! তাদেরকে আর কোনো কষ্ট দিও না, প্লিজ।
সাথে সাথেই আকাশ থেকে একটা তারা খসে পড়লো। অশ্রুর মুখেও হাসি ফুটে উঠলো সেটা দেখে।

সমাপ্ত

1 COMMENT

  1. Khub Khub Khub Khub Khub Khub Khub Khub valo legeche Khub Khub Khub Khub Khub Khub Khub Khub sundor hoeache

Comments are closed.