আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ৪ || Maishara Jahan

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ৪
Maishara Jahan

আমি কিছু বলার আগেই রিয়ান বলে আমাকে জরিয়ে ধরেছে তাই, তোর কোনো সমস্যা। এটা শুনে অয়ন প্রচুর রাগে রিয়ানকে একটা ঘুষি মেরে মারুর হাত শক্ত করে ধরে টেনে উপরে নিয়ে যেতে থাকে।
রিয়ান অয়নকে আটকাতে যেতে চাই কিন্তু প্রহর রিয়ানকে ধরে ফেলে। সে নিজেও অয়নকে আটকাতে চাই কিন্তু কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। রিয়ান রাগে চিৎকার করে বলছে,,,,,,ঐ মারুকে ছাড় বলছি, ওর কিছু করলে তোর খবর আছে।
প্রহর গার্ডদের ডেকে বলে,,,,তোমরা কোথায় থাকো যে কেও এসে ভিতরে ঢুকে যায়। একে ধরে বাহিরে ছেড়ে আসো।
গার্ডরা রিয়ানকে ধরে বাহিরে নিয়ে যেতে থাকে। রিয়ান গার্ডের ধাক্কা দিয়ে বলে,,,, ছাড় আমি একায় যেতে পারবো। এখন যাচ্ছি পরে আবার ঠিকি আসবো। বলে রিয়ান চলে যায়।

প্রহর উপরের দিকে তাকিয়ে আছে, অয়ন মারুর সাথে কি করছে দেখতে যাবে কি যাবে না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে। অনেক কষ্টে নিজের মনকে বুঝিয়ে সোফায় মাথা নিচু করে বসে থাকে।
অয়ন আমাকে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায়, প্রচুর বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। মূহুর্তেই পুরো ভিজে যায়। ভয়ে ভয়ে অয়নকে বললাম,,,,, কি করছেন কি আপনি, ছাড়েন আমাকে দেখছেন না কি জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। পাগল হয়ে গেছেন নাকি।
অয়ন রাগে আমার বাহু শক্ত করে ধরে বলে,,,,, ভিজার এতো শখ তাহলে এই বৃষ্টিতে ভিজো।
আমি রাগে বললাম,,,, আমার বৃষ্টিতে ভিজার কোনো শখ নেয়, আপনার থাকলে আপনি ভিজেন, আমাকে যেতে দিন।
অয়ন আরো জোরে চেপে ধরে বলে,,,,,, বৃষ্টিতে ভিজতে খারাপ লাগছে তাই না, কিন্তু নিজের প্রেমিককে ভিজা অবস্থায় জরিয়ে ধরতে খারাপ লাগেনি, সেটা তো ভালো লেগেছে অবশ্য।

,,, অয়ন মুখ সামলে কথা বলুন। আপনি কি বলছেন কিছু বুঝতে পারছেন।
,,তুমি কি করেছো বুঝতে পারছো।
,,,কি করেছিটা কি আমি।
,,,ওয়েট আমি বুঝাচ্ছি, কি করেছো।
বলে আমার হাত ছেড়ে ওনি ছাদ থেকে বের হয়ে, ছাদের দরজা আটকে দেয় যাতে আমি বের হতে না পারি। অনেক বার দরজায় ধাক্কাতে থাকি কিন্তু কোনো লাভ হয় না। বার বার বলছি দরজা খুলতে।
একটু পরেই অয়ন এসে দরজা খুলে। তার হাতে সাবান। আমি তার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাই কিন্তু পারিনা,অয়ন আমার হাত ধরে ছাদের মাঝখানে নিয়ে আসে৷
তার গায়ের কোর্টটা খুলে নিচে ফেলে দেয়।আমি বুঝতে পারছি না কি করতে চাইছে ওনি। সাবানটা নিয়ে আমার হাতে, গলায় ইচ্ছে মতো ঘর্ষছে। আমি বার বার বলছি কি করছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি আর সহ্য করতে না পেরে নিচে বসে পড়ি, অয়ন ও আমার সাথে নিচে বসে আমার সারা শরীরে সাবান দিয়ে জোরে জোরে ঘর্ষছে আর বলছে,,, সাহস কি করে হলো তোর অন্য জনকে জরিয়ে ধরার, কোনো অন্য পুরুষের ছোয়া আমি তোর গায়ে লাগে থাকতে দিবো না। সব ধুয়ে মুছে ফেলবো তোর গা থেকে। তোর গা থেকে কোনো অন্য পুরুষের গ্রান আসবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
আমার শরীর প্রচুর জ্বলছে, আমার কান্নার আওয়াজ ওনার কানে যাচ্ছে না মনে হয়, আর চোখের পানি তো বৃষ্টির কারনে ওনার চোখেই পড়ছে না হয়তো। রাগের মাথায় ওনি বুঝতেই পারছেন না আমাকে কতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলছে। আমার হাত পা গলা লাল হয়ে গেছে।
আর সহ্য না করতে পেরে জ্ঞান হারায়। মারু বসা থেকে নিচে শুয়ে পড়ে। মারুকে কোনো নড়াচড়া করতে না দেখে অয়নের হুশশ আসে। অয়ন মারুর মাথা নিজের কোলে রেখে বার বার নীর নীর বলে ডাকছে কিন্তু কোনো সারা না পেয়ে মারুকে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে যায়।

মারুকে বিছানায় শুয়িয়ে, ওর পালস চেক করে দেখে অনেক ধীর গতীতে চলছে। অয়ন তাড়াতাড়ি একটা মেয়ে সার্ভেন্ট ডেকে মারুর ড্রেস চেঞ্জ করে দিতে বলে। আর ওয়াশ রুমে গিয়ে নিজেও ড্রেস চেঞ্জ করে বাহিরে আসে। বাহিরে এসে দেখে এখনো মারুর চেঞ্জ করা হয়নি, অয়ন সাথে সাথে নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয়।
একটু পরেই মারুর ড্রেস চেঞ্জ করা হয়ে যায়। তখন তাড়াতাড়ি অয়ন মারুর কাছে যায়। কপালে হাত রেখে দেখে প্রচুর জ্বর উঠেছে। অয়ন মারুর অবস্থা দেখে একটা ইনজেকশন দিয়ে দেয় যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়৷

মারুর গা লাল হয়ে গেছে, মারুর অবস্থা দেখে এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে অয়নের। একটা মলম এনে পরম যন্তে মারুর গায়ে লাগিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,,,,, আম সরি নীর,, নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি। তুমি ঠিক আগের মতো করে আমাকে শান্ত কেনো করাও না। আগে আমি যতোই রাগ করতাম তুমি ঠিক আমাকে ঠান্ডা করে দিতে, তো এখন ও আগের মতো করে কেনো আমাকে বুঝাতে পারো না।

তোমাকে হাড়ানোর কষ্ট এই দুবছরে ভিতর থেকে আমাকে পুরে ছাই করে দিয়েছে। কারন তখন কোনো নীর ছিলো না। একবার তোমাকে হাড়িয়ে বুঝেছি কষ্ট কাকে বলে, তাই এখন আবার তোমাকে হাড়ানোর ভয়টা আমাকে হিংস্র করে দেয়। আমি আবার সেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে চাই না নীর।
তুমিই তো বলতে আমাকে বুঝার জন্য তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসতে হবে আমাকে। আর এক মাত্র তুমিই তো আমাকে বুঝতে তো এখন কি হলো নীর। পিল্জ তোমার মনের জায়গা আমাকে ছাড়া আর কাওকে দিয়ো না, তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।
এসব ভাবতে ভাবতে প্রহর এসে দরজায় নক করে। অয়ন আসতে বলায় প্রহর তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে বলে,,,, মারুর এখন কি অবস্থা।
অয়ন মাথা নিচু করে বলে,,, দেখতেই তো পারছিস।

প্রহর মারুর দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে ওর অবস্থা দেখে রাগে অয়নকে বলে,,,,,, কি করেছিস তুই মারুর সাথে হুমম,,দোষ মারুর না রিয়ানের ছিলো, ও হঠাৎ করে এসে মারুকে ধরে। আর যদি মারু ও রিয়ানকে জরিয়ে ধরতো তাতে ওর দোষ কিভাবে থাকতো। তুই ওর অতীত ছিলি যেটা ওর স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। এখন যদি এই সময় ওর জীবনে অন্য কেও আসে তাহলে এতে ওর দোষ কোথায়।
অয়ন রাগে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,, ওর জীবনে এই অয়ন ছিলো আর থাকবে, আমি আর অন্য কাওকে আসতে দিবো না। ভালোবাসি ওকে আমি, এভাবে কিভাবে আমার জীবন থেকে যেতে দিয়।
প্রহর,,,,,, মনের উপর জোর চলে না অয়ন,, আসল ভালোবাসা মানে বেঁধে রাখা না, স্বাধীন ভাবে উড়তে দেওয়া। সে যদি তোমার হয় তাহলে ঠিকি থেকে যাবে। তুই নিজের অজান্তেই মারুর সাথে অন্যায় করছিস। এতে ওর ব্রেনে প্রভাব পড়তে পারে। তুই না জেনেই ওর ক্ষতি করছিস।

অয়ন প্রহরের কথা শুনে বারান্দায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। প্রহর মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মারুর দিকে, প্রহর মারুর কাছে গিয়ে একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই। সে মারুর দিকে হাত বাড়িয়েও কিছু একটা চিন্তা করে হাতটা সরিয়ে নেয়৷
মারুর ঘুমন্ত চেহেরা দেখে সে মনে মনে ভাবে,,, তুমি আমার সেই লেখা গল্প যাকে পড়ার অধিকার আমার নেই। তুমি আমার মন জুরে থাকলেও তোমাকে ছুঁয়ে দেখার অধিকার আমার নেয়।
প্রহর অয়নের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। দরজা বন্ধ পাওয়ার আওয়াজ পেয়ে অয়ন পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে প্রহর নেয়। অয়ন উঠে গিয়ে মারুর পাশে শুয়ে মারুকে জরিয়ে ধরে। মারু ঘুমের মধ্যে অয়নকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে, মারুর অনেক ঠান্ডা লাগছিলো তাই।

রাতে আমার চোখ খুলে, মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, কোনো রকমে উঠে বসি। আশেপাশে কেও নেয়। সকালের কথা মনে পড়তেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে এক পা যেতেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিয় অয়ন এসে ধরে ফেলে।
ওনাকে দেখে আমি একটু ধাক্কা দিয়ে সরে যায়। ওনি আবার ধরে বলে,,,তুমি এখনো অনেক দূর্বল, পুরোপুরি ঠিক হওনি, চলো আমার সাথে, বিছানায় শুবে।
আমি একটু মোচড় দিয়ে বললাম,, না আমি যাবো না, শুবোও না।
অয়ন আমাকে কোলে নিয়ে বলে,, তুমি বিছানা থেকে উঠবে না।
আমি একটু নড়াচড়া করে বলি,,,আরে এখন কি আমি একটু ওয়াশ রুমেও যেতে পারবো না নাকি।
,,,ওহহহ ওয়াশ রুমে যাবে?
আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বলি,,,,, হুমম।

অয়ন আমাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দেয়। আমি কোনে ভাবে ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি। অয়ন এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি ব্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,, আপনি এখনো এখানে কেনো।
,,, না ভাবলাম যদি কোনো দরকার পরে তাহলে।
,,,,,, থাক আমার জন্য আপনার আর ভাবতে হবে না, আপনি যে আমার জন্য কতো ভাবেন সেটা আমার দেখা হয়ে গেছে।
অয়ন মাথা নিচু করে বললো,,,,, আম সরি নীর।
আমি রাগে বললাম,,,,, আপনার সরি আপনার কাছে রাখেন, কেও কারো সাথে এমন আচরণ করে। আমার কি মনে হয় জানেন আপনার মাথায় প্রবলেম আছে।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ৩

অয়ন নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে,,,, নীর পিল্জ, আর কিছু না বলে, গিয়ে রেস্ট করো।
,, কেনো বলবো না, শুনতে খারাপ লাগছে বুঝি। কিন্তু সত্যি এটাই, আপনি রিয়ান এর সাথে যা করেছেন আমার সাথে যা যা করেছেন তা একটা সুস্থ মানুষ কোনো দিন করবে না। আপনি একটা পাগল, আগে নিজের চিকিৎসা করান।
অয়ন মারুকে কোলে উঠিয়ে নেয়, মারু ভয়ে চুপ হয়ে যায়। অয়ন মারুকে বিছানায় নিয়ে বসি জোর করে শুয়িয়ে বলে,,, চুপচাপ শুয়ে থাকো।

বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। মারুও মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। একটু পরে অয়ন সুপ নিয়ে আসে। এসে আমার সামনে ধরে, প্রচুর ক্ষুধা লাগলেও আমি খেতে মানা করে দিয়। অয়ন বার বার খেতে বলছে, আমি বার বার মুখ ঘুড়িয়ে নিচ্ছি।
অয়ন এবার আমার মুখ চেপে ধরে সুপের চামচ ভিতরে ডুকিয়ে দেয়।না চাইতেও আমার গিলতে হয়। কয়েক বার এমন জোর করে খায়িয়ে দিচ্ছে, তাই বাকিটা নিজের ইচ্ছেই খেয়ে নিলাম।
তারপর কি ঔষধ দিয়েছে ঘুমে কিছু চোখে দেখছি না, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে। আশেপাশে কাওকেই দেখলাম না। টেবিলে একটা চিঠি রাখা ছিলো। যেটা পড়ে আমার খুশি হওয়া উচিত কিন্তু খুশি হতে পারছি না।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ৫