এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩২

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩২
Fabiha bushra nimu

চৈতালি ভাইকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কান্না করছে।চৈতালির মনে এসে হানা দিয়েছে ভয়।আবির চৈতালিকে মেরেছে,সেই ভয় না।তার ভাই যদি তাকে আবার ভুল বুঝে ভেবেই চৈতালির পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।

–ভাইয়া বিশ্বাস করো।আমি আবির স্যারের সাথে দেখা করি নাই।আমি কলেজে গিয়ে ছিলাম।সামনে আমার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা।তাই পরীক্ষার টাকা জামা দিতে গিয়ে ছিলাম।আমি আমার সাধ্য মতো,আবির স্যারকে ইগনোর করেছি।আমাকে ডেকেছিল।আমি শুনেও না শোনার ভান করে চলে আসছি।আমি জানতাম না। আবির স্যার আমার পেছনে পেছনে আসছে।আবির আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিল।সেটা আমি হারিয়ে ফেলছি।তার জন্য স্যার আমার শরীরে আঘাত করেছে।একদমে কথা গুলো বলে থামলো চৈতালি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈতালির কথা শুনে,ইফাদের চোখ দুটি অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারন করল।রাগে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।ইফাদ আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।পাশে বিল্ডিংয়ের কাজ চলছিল।সেখানে থেকে লোহার রডের কিছু কাটা অংশ পেল।কোনো কথা না বলে,লোহার রডটি হাতে তুলে নিল।একজন শ্রমিক ইফাদ কে প্রশ্ন করলে,ইফাদ কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে,সোজ আবিরের সামনে এসে দাঁড়াল।

–অমানুষের বাচ্চা।সেদিন আমার বউয়ের শরীর আঘাত করেছিস।আজকে আমার বোনের শরীরে কোন সাহসে হাত বাড়িয়েছিস।সেদিন জনগণ তোকে আমার হাত থেকে,বাঁচিয়ে দিয়েছে।আজকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
আবির ইফাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল’ ইফাদ আমার কথাটা একবার শুনো।কথাটা বলার সাথে সাথে ইফাদ আবিরের হাতে বারি মারলো।আবির ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠলো।আবিরের দুই হাতে,পরপর আটটা বারি মারলো।ভয়ংকর রুপ ধারন করেছে ইফাদ।হাত ছেড়ে আবিরের পুরো শরীরে আঘাত করছে।আবির সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।চিৎকার করে ইফাদকে থামতে বলছে।আবিরের চিৎকার ইফাদের কান পর্যন্ত পৌঁছালে-ও হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছাল না।আবিরের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে শুরু করেছে।ইফাদ আবিরকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলছে।অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে,দেখে ফাইয়াজ ইফাদকে সরিয়ে নিয়ে আসলো।

–ভাইয়া হয়েছে থামুন।মরে যাবেন উনি।এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না।দরকার পড়লে উনার নামে,নারী নির্যাতনের মামলা করে দিবেন।
–এই তুমি আমাকে থামতে বলছো।তোমার বউ-বোনকে যদি কোনো অসভ্য ছেলে স্পর্শ করতো।তাহলে তুমি এভাবে বলতে পারতে।বলতে বলতে ফাইয়াজের দিকে ঘুরলো।ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে ইফাদ।ফাইয়াজকে দেখা মাত্রই রাগের মাত্রা দিগুণ বেড়ে গেল।

–ইফাদ ভাইয়া তুমি।ভাইয়া আমাকে চিনতে পেরেছো।আমি ফাইয়াজ পুতুল আপুর..
পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই ইফাদ বলল।
–একজন বেইমানের ভাই।তোমার সাহস কি করে হয়।আমাকে স্পর্শ করার।একদম আমাকে স্পর্শ করবে না।তোমরা ভাই-বোন যার জীবনে যাও।তাকেই খেয়ে ফেলো।চৈতালি বোন আমার দেখে শুনে থাকিস।আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।এখানে থাকলে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবো।

তানহাকে কিছু বলার দরকার নেই।শুধু শুধু চিন্তা করবে।বলেই ইফাদ দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।যাওয়ার আগে আবিরকে জোরে একটা লাথি মারলো।ফাইয়াজ বেশকিছু দূর ইফাদের পিছু পিছু গিয়েছে।ফলাফল শূন্য।বাধ্য হয়ে ফিরে এলো।চৈতালির কান্না থেমে গেছে।মন কিছুটা হলে-ও শান্ত হয়েছে।ঘরে বউ রেখে যারা,অন্যের মেয়ের জীবন নষ্ট করে।এইসব জা*নো*য়া*রদের এমন হওয়ায় উচিৎ।বলেই আবিরের নিথর দেহে একটা লাথি দিয়ে অফিসের দিকে এগিয়ে গেল।

আবিরকে সাহায্য করার জন্য কেউ আসছে না।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।আবির যতই খারাপ হোক না কেনো?আবির ফাইয়াজের সাথে পড়েছে।কেনো জানি ছেলেটার জন্য মায়া হলো।দ্রুত আবিরকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল।
অফিসের কেবিনে বসে ছটফট করছে ফাইয়াজ।ইফাদের সাথে কথাটা বলাটা তার খুব জরুরি।কিন্তু ইফাদ তো’ তার সাথে কথাই বলতে চাইছে না।আজ বাবার কারনে,কতগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।বাবা নামক মানুষটাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।কি এমন ক্ষতি হতো।সব অনিয়মের দেওয়াল ভেঙে দিত।তার আগে আমাকে জানতে হবে।চৈতালি সাথে কি হয়েছে।মেয়েটা আজকে বেশ ভয় পেয়েছিল।বলেই চৈতালিকে নিজের কেবিনে ডাকলো।

ফাইয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চৈতালি।মুখটা মলিন হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো।মেয়েটাকে কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে।হাজারো কষ্ট বুকে চেপে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটা।চৈতালিকে যেদিন প্রথম দেখেছিল।সেদিনই ফাইয়াজের চৈতালির জন্য মায়া তৈরি হয়েছিল।কখনো প্রকাশ করেনি।চৈতালি আশেপাশে থাকলে,ফাইয়াজের অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে।কেনো করে ফাইয়াজ নিজেও জানে না।চৈতালির জীবন যেনো নষ্ট না হয়।সেজন্য ফাইয়াজ নিজেই প্রিয়াকে সবকিছু বলে দিয়েছিল।চৈতালিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল।

–দাঁড়িয়ে আছো কেনো?চেয়ার টেনে বসো।চৈতালি ফাইয়াজের কথা মতো চেয়ার টেনে বসলো।
–ইফাদ ভাইয়া তোমার কেমন ভাই হয়।ফাইয়াজের প্রশ্ন কিছুটা ভরকে গেল চৈতালি।নিজেকে সামলে নিয়ে জবাব দিল।
–আমার নিজের ভাই হয়।আপনি কিভাবে চিনেন ভাইয়াকে?
–তোমার ভাইয়ার সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিতে পারবে।উনি না আমার সাথে কথা বলতে চান না।দেখলেই রেগে যায়।আমাকে-ও হয়তো,,
চৈতালি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ফাইয়াজ কি বলবে শোনার জন্য নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।কিন্তু ফাইয়াজের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

–চৈতালি অফিস শেষে,আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসতে পারি।
–না।
–কেনো?
–আমি কেনো আপনার সাথে রেস্টুরেন্টে যাব।তাছাড়া ছেলে মানুষের ওপরে থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গিয়েছে।আমাকে এমন কোনো কথা বলবেন না।যেনো আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হই।
ফাইয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকে গেলে,আর কাউকেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হবে না।এটাই তো স্বাভাবিক।

–আল্লাহ তায়ালার কসম,তুমি কষ্ট পাও।বা তোমার সন্মানে আঘাত আনবে।এমন কিছু করবো না।শুধু কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।
–মাফ করবেন।আমি যেতে পারবো না।
–দশটা মিনিট আমাকে সময় দাও।
–আমি আপনার অফিসে কাজ করতে এসেছি।আপনার সাথে ঘুরতে আসি নাই।
–এই মেয়ে এত বেশি বুঝো কেনো?যা বলছি তাই করবে।যদি ভুল কিছু বলি।তাহলে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে।তুমি বুঝতে পারছো না।ইফাদ ভাইয়ার সাথে কথা বলাটা আমার জন্য খুব জরুরি।

–আচ্ছা আগে ভাবির থেকে ফোন দিয়ে অনুমতি নেই।
ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো চৈতালির দিকে,চৈতালি সোজাসাপটা উত্তর দিল।দেখুন ভাববেন না।আমি ন্যাকামি করছি।আমি আমার পরিবারকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।আমি চাই না।আমার জন্য আমার পরিবার নতুন করে কষ্ট পাক।আপনার সাথে আমাকে দেখে,অন্য কেউ বাসায় বলবে,তখন সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না।ভাবিকে ফোন দিব।ভাবির থেকে অনুমতি নিব।আম্মুর থেকে অনুমতি নিব।ভাইয়া রেগে আছে।তা-না হলে,তার থেকে অনুমতি নিতাম।আপনার সাথে আমার যেতে একদমই ইচ্ছে করছে না।আর মন যেখানে সায় না দেয়।সেখানে না যাওয়ায় উত্তম।বলেই চৈতালি বেড়িয়ে চলে গেল।

দুপুরে ইফাদ বাসায় এসে,কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে এসে হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে পড়ল।রাগে পুরো শরীর এখনো কাঁপছে।রাস্তায় এভাবে থাকলে,যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।তানহার জন্য হলে-ও তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হবে।ইফাদ চিৎকার দিয়ে তানহাকে ডাকলো।তানহা এসে ইফাদের সামনে হাজির হলো।
–সারাদিন কোথায় থাকো।আমি এসেছি দেখতে পাও নাই।নাকি চোখ কপালে নিয়ে হাঁটো।আমি যতক্ষণ বাসায় থাকবো।সব সময় আমার সামনে থাকবে।

তানহা একবার ইফাদকে পরখ করে নিল।ঠান্ডার দিনে-ও মানুষটা ঘামছে।কি হয়েছে মানুষটার।শরীর খারাপ করছে।কোনোদিন তো’ এই সময় বাসায় আসে না।এত রেগেই বা আছে কেনো?তানহা গিয়ে ইফাদের পাশে বসলো।শাড়ির আঁচল দিয়ে,কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে দিল।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
–কি হয়েছে তোমার।এভাবে ঘামছো কেনো?তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে।ডক্টরের কাছে যাবে তুমি।খুব শান্ত হয়েই বলল।

–কথা বলবে না।চুপচাপ বিছানায় এসে,আমার বুকে মাথা রাখো।আমার জ্বলন্ত হৃদয়কে,শীতল করে দাও।
তানহার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।এখন ইফাদকে কোনো প্রশ্ন করে-ও লাভ নেই।মাথা ঠান্ডা হলে,আস্তে ধীরে সুস্থে শুনে,নেওয়া যাবে।কিন্তু অবাধ্য মনটা মানছে না।শোনার জন্য আকুল হয়ে আছে।তানহা কথা না বাড়িয়ে।চুপচাপ ইফাদের বুকে মাথা রাখলো।এটাই তোর তার শান্তির স্থান।তার দলিল করা সম্পত্তি।ইফাদের বুকে মাথা রাখলে,তানহার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

ভেতর থেকে অদ্ভুত একটা শান্তি অনুভব করে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আরো শক্ত করে ইফাদকে জড়িয়ে ধরলো।বেশ কিছু সময় অতি বাহিত হয়ে গেল।দু’জনেই নিরবতা পালন করছে।দু’জন দু’জনকে অনুভব করছে।ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে যে,শান্তি পাওয়া যায়।তা পৃথিবীর কারো কাছে থেকে পাওয়া যায় না।তানহা হালকা করে উঠে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদের কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে,ইফাদের এক গালে হাত রেখে বলল।

–আমরা শরম আলা জামাইয়ের কি হয়েছে।আজকে এত রেগে আছে কেনো?বাহিরে কোনো সমস্যা হয়েছে।তানহার কথায় ইফাদ উঠে বসলো।কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে তানহার কোলে শুইয়ে পড়ল।মানুষটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,খুব যত্ন সহকারে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।তানহা ইফাদকে বিরক্ত করল না।ইফাদের মাথায় বুলিয়ে দিতে লাগলো।একটু পরে ইফাদ বলে উঠলো।

–আমার কাজ আছে।আমি কাজ রেখে বাসায় চলে এসেছি।
–দুপুরে বেলা এসেছো।না খেয়ে কোথাও যেতে দিব না।
–দেখো বউজান।অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলছি।বিকেলে এসে একবারে খাব।বলেই ব্যাগ নিয়ে হাঁটা শুরু করল।তানহার মনটা খারাপ হয়ে গেল।ইফাদ দরজার আসতেই তানহা বলে উঠলো।
–শুনো”

ইফাদ দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে তানহার দিকে তাকালো।
–কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।আমাকে দ্রুত যেতে হবে।
–আসার সময় আমার জন্য একটা বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে আসবে।
–আমি বিড়ালের বাচ্চা কোথায় পাব।

–আমি জানি না।তুমি না আমাকে ভালোবাসো।নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য এতটুকু করতে পারবে না।
–আর কতবার বলবো তানহা।বিড়ালের বাচ্চা না নিয়ে,তুমি নিজেই একটা বাচ্চা নিয়ে নাও।
ইফাদ কথা শুনে,তানহা চোখ বড় বড় করে তাকালো।ইফাদ তানহার দিকে তাকিয়ে হেসে চলে গেল।
–অসভ্য লোক একটা।বিড়ালের বাচ্চার কথা বললেই,আমাকে বাচ্চার খোটা দেয়।বাচ্চা কি হাতের মোয়া চাইলাম আর পেয়ে গেলাম।আমার বাচ্চা না হলে,আমি কি করবো।আচ্ছা আমার বাচ্চা না হলে,উনি আমাকে দূরে সরিয়ে দিবেন।ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠলো তানহার।

রাতে সবাই মিলে খেতে বসেছে।সবার মাঝে নিরবতা বিরাজমান করছে।নিরবতা ভেঙে চৈতালি বলল।
–জানো ভাবি আজকে কি হয়েছিল?
চৈতালির কথা শুনে,ইফাদ চোখ গরম করে চৈতালির দিকে তাকালো।ভাইয়ের দৃষ্টি বুঝে চৈতালির মাথা নিচু হয়ে গেল।তানহা একবার ইফাদ দিকে,আরেকবার চৈতালির দিকে তাকালো।

–চৈতালি চুপ হয়ে গেলে কেনো?আজকে কি হয়েছিল,বললে না তো’।
–আমাদের অফিসে নতুন বস আসছে।তার হাতে নাকি একটা বড় কাজ আসছে।কয়দিন পরে পাকা কথা হবে।যদি হয়ে যায়।স্যার বলেছে সবাইকে এক হাজার টাকা করে বেতন বাড়িয়ে দিবে।সবার মনের একটা করে আশা পূর্ণ করে দিবে।স্যারের পাগলামি দেখে আমাদের পুরোনো স্যার মানে স্যারের বাবা রাগ করেছিল।কিন্তু স্যার তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি।

–খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই চৈতালি।চুপচাপ খেয়ে নাও।কেউ আর কোনো কথা বলল না।সবাই খেয়ে উঠে চলে গেল।তানহা সব কাজ শেষ করে নিজের রুমে আসলো।
–দুপুরে তোমার কি হয়েছিল।

ইফাদ গম্ভীর মুখ করে শুইয়ে আছে।তানহার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না।মানুষটা অদ্ভুত।যখন খুব রেগে থাকে।তখন কারো কথার উত্তর দেয় না।মাথা ঠান্ডা বলে,আমি চাই না আমার কোনো কথায় কেউ কষ্ট পাক।রাগের মাথায় কাকে দু’কথা শুনিয়ে দিব।কে মনে কতটা কষ্ট পাবে,তাই সে রাগ হলে চুপ করে থাকে।তানহা বুঝে নিল মহারাজ এখনো রেগে আছেন।আর প্রশ্ন করল না।

বিছানায় উঠে গিয়ে ইফাদের পাশে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।ফোন হাতে নিলেই আবির আর আবিরের বউয়ের ছিব তানহার সামনে আগে আসলো।প্রায় দিন-ই আবির বউকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয়।অনেক সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস লিখে দেয়।কি সুন্দর লাগে দু’জনকে।তানহার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে,তাদের মতো করে ছবি আপলোড করতে।নিজের বিকেক আর ইফাদের কাছে বাঁধা পড়ে যায় বারবার।আজকে সাহস করে বলেই ফেলল।

–আমি ফেসবুকে ছবি আপলোড দিব।
তানহার কথা শুনে ইফাদ এবার নড়েচড়ে উঠে বসলো।তানহার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল।
–না।
–কেনো?
–আমি চাই না।আমার বউকে অন্য কেউ দেখুক।আমার বউ শুধু আমি দেখবো।

–আবির ভাই কি সুন্দর করে তার বউয়ের সাথে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে।কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখে,আপনাকে আমি যেটাই বলি।সেটাতেই না।বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি আমার নিজেস্ব কোনো স্বাধীনতা নেই।আমার কোন ইচ্ছে টা আপনি পূর্ণ করে দিয়েছেন।এর থেকে ভালো আমার আবির ভাইকে বিয়ে করলেই ভালো হতো।নিজের মন মতো চলতে পারতাম।কথা গুলো বলে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো তানহা।এগুলো সে কি বলে ফেলল।স্বামীকে নিয়ে আক্ষেপ করে ফেলল।এই জন্যই রাগের মাথায় কথা বলা উচিৎ না।

অনেক সময় এমন কিছু কথা আছে।যা আমরা বলতে চাই না।কিন্তু রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে।পরে কথা গুলো উপলব্ধি করার পরে,নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হয়।তানহার করুন দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ স্থীর দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ গুলো মুহুর্তেই লাল হয়ে গেছে।বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে।ইফাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তানহার বুকটা কেঁপে উঠলো।তানহা এখন উপলব্ধি করতে পারছে।

ইফাদকে কতবড় কথা শুনিয়ে ফেলছে।কথাটা ছোট মনে হলে-ও তার ওজন অনেক।যা পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়েই পরিমাপ করা যাবে না।তানহার দু-চোখে অশ্রু এসে ভরে গেল।সে,তো’ তার স্বামীকে আঘাত করতে চায় নাই।একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে দেখে উৎসাহিত হয়।তাই মানুষের ভালো কাজ করে,সকলের উচিৎ ভালো কাজে মানুষকে উৎসাহিত করা।মন্দ কাজে নয়।তানহা ক্ষনিকের আবেগে পড়ে,নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিয়ে ফেলল।তানহা ইফাদ হাতে হাত রাখতে যাবে।ইফাদ দ্রুত বিছানা থেকে উঠে বসলো।শান্ত গলায় বলল।

–আবির ভাইকে যখন এতই ভালো লাগে,তাহলে আবিরে ভাইকে বিয়ে করে নিলে না কেনো তানহা?যাও’ গিয়ে তোমার আবির ভাইকেই বিয়ে করে ফেলো।সে,হয়তো তোমাকে এখনো অনেক ভালোবাসে,আমি হয়তো তার স্ত্রীরর মতো বিলাসিতার জীবন তোমাকে দিতে পারি নাই।কিন্তু তোমাকে তোমার মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করে ছিলাম।আজকে তুমি আমাকে অন্য ছেলের সাথে তুলনা দিলে,রাখবো না আর কোনো অভিযোগ।করবো না কোনো শাসন।নেই কিছুতেই বারন।নিজের মন মতো চলো।ফেসবুক ছবি আপলোড দাও।বাহিরে গিয়ে ঘুরে বেড়াও।যেটা ইচ্ছে হয় খুশি করো।আমি আর কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।বলেই রুম ত্যাগ করল।তানহা দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।

–শুনো আমি এভাবে বলতে চাই নাই।কিভাবে মুখ দিয়ে কথা গুলো বের হয়ে গেল।নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে,আমার মন মানসিকতা কতটা নিচু হয়ে গেছে।আমি এভাবে বলতে চাই নাই।প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।তানহার কথা শেষ হবার আগেই ইফাদ দরজা খুলে বাহিরে চলে গেল।ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা বাজে।এত রাতে মানুষটা কোথায় বেড়িয়ে গেল।তানহার রাস্তায় বেড়িয়ে মানুষটার দেখা পেল না।মুহুর্তের মধ্যেই মানুষটা কোথায় গেল।তানহার দৌড়ে রুমে চলে আসলো।ইফাদের নাম্বারে ফোন দিতেই ইফাদ কল কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩১

(মরি নাই বেঁচে আছি।আমার বিয়ে বাচ্চা কাচ্চা সব বানিয়ে ফেলছেন আপনারা।😐দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য দুঃখিত।আল্লাহ তায়ালা আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে এবং আমি সুস্থ থাকলে,এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ।)

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৩