প্রণয়ের বিরহ পর্ব ২০+২১

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ২০+২১
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

‘ তাসনিয়া আআআ!’
বেশ জোরেই চিৎকার করে উঠলেন ড. শাওন স্যার। কেবিনের বাইরেই এসিস্ট্যান্ট ময়ূরী নামের মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল, দরজায় কান পেতে শুনছিল ভিতরের সমস্ত কথাবার্তা গুলো। হঠাৎ শাওন স্যারের চিৎকার শুনে চুপচাপ সেখান থেকে কেটে পড়লো ও।ড. শাওন তাড়াতাড়ি করে কেবিনের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে সিস্টারদেরকে ডাকতে শুরু করলেন।

হসপিটালের সিনিয়র ডক্টরের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে প্রায় সব নার্স স্টাফ উনার কেবিনের সামনে এসে হাজির হলো, সবার চোখমুখে উৎকণ্ঠা কাজ করছে।ড. শাওন ইশারায় দুটি মেয়েকে ভিতরে আসতে বলে আর সবাইকে নিজের কাজে যেতে বললেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ময়ূরী এখানে ঘটা সবকিছু নিজের ফোনে ভিডিও করে নিলো, ফোনটা হাফ জিন্সের পকেটে রাখতে রাখতে বলল,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ এবার তুমি একা কি করবে শাওন? তাসনিয়া ও টা টা!’
এক হাত উপরে তুলে ইশারা করে দেখিয়ে হাসতে শুরু করলো।মিশন তাসনিয়া সাকসেসফুল! এবার বসের সাথে দেখা করে বাকি পেমেন্ট আদায় করতে হবে। তাড়াতাড়ি করে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল ময়ূরী।

মহুয়া চৌধুরী পা টিপে টিপে পূর্বের রুমে ঢুকছিলেন হয়তো, এমন সময় পূর্ব পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
‘ সুন্দরী, আমার রুমে কি করতে যাচ্ছো তুমি হ্যা?’
ভ্রু দুটো নাচালো পূর্ব।ভয়ে ঢোক গিললেন মহুয়া চৌধুরী,ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো তার। শুকনো ঢোক গিলে গলা টেনে টেনে বলেন,
‘ কই না তো। আমি তোর রুমে যাবো কেন পাগল! আমি তো ওইদিকে যাচ্ছিলাম, হাঁটাহাঁটি করতে ভালো লাগতেছে তো তাই আর কি!'(মহুয়া চৌধুরী)

‘ আচ্ছা! তুমি সত্যি বলছো তো?'(বেশ সন্দেহের গলায় বলল পূর্ব)
‘হ হ্যা রে দাদুভাই। আমি যাই হ্যা, তুই যা গিয়ে রেস্ট নে।’
তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে পূর্বের রুমের সামনে থেকে সরে এলেন তিনি। অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন আজ। কিন্তু পূর্ব তো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ছিল কোথাও, সেটা দেখেই তো ওর রুমে আসছিলেন তিনি তাহলে এতো তাড়াতাড়ি ফিরলো কিভাবে? এদিকে নাতবউ টা হসপিটালে পড়ে আছে।

একটু আগেই কল এসেছিল হসপিটাল থেকে, একটা বয়স্ক লোকের কন্ঠস্বর।তাসনিয়া নাকি অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে পড়ে আছে। ওকে নাকি বিষ দেওয়া হয়েছে মা’রা’র জন্য আর সেই বিষ ও বাইরের দেশের। ওকে সুস্থ করতে হলে সেই বিষ প্রয়োজন আবার ও আর এই বিষ যে দিয়েছে তার থেকেই শুধুমাত্র পাওয়া যেতে পারে।মহুয়া চৌধুরী টেলিফোনের লোকটার থেকে সব শুনে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন তাসনিয়া কে বিষ টা কে দিয়েছে!তাই পূর্বের রুমে আসছিলেন বিষ টা খুঁজে বের করার জন্য,যাই হয়ে যাক না কেন নাতবউ কে বাঁচাতেই হবে।

নাহলে যে এই পাপের নগরীর বিনাশ সম্ভব নয় কোনোভাবেই!স্বামী মাহবুব চৌধুরী বেঁচে থাকতে এই পাপ নগরী প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন তার লীলা এখনও চলছে।এই নগরীতে যে একবার ঢুকে সে আর ভালো ও জীবিত অবস্থায় বের হতে পারে না। এমনকি এটা কোথায় আছে, কোন জায়গায় সেটা ও কেউ জানেনা, শুধু মাহবুব চৌধুরী যাকে জানাতে চায় সেই জানতে পারে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কেউই জানতো না বাবার এই নোংরা ব্যবসার কথা।

সবার মতো তারাও জানতো বাবা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা করে এই চৌধুরী পরিবারের যশ প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছেন।যখন হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক করে মাহবুব চৌধুরী মা’রা যান তখন তার মৃ’ত্যু’র সাথে সাথে এই পাপ নগরীর রহস্য আর এই নোংরা কালো ব্যবসার কথা ঢাকা পড়ে যায়। বহুদিন এইসব নিঝুম ছিল, চুপচাপ ছিলো। দুই ছেলে নিজের চেষ্টায় বাবার রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে অন্য একটা কোম্পানি তৈরি করে,সেখান থেকেই ওদের যশ বাড়ে।

মাঝে মধ্যে মেয়েও সাহায্য করতো ভাইদের কে।এসব দেখে মহুয়া চৌধুরী খানিকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, হয়তো মাহবুব চৌধুরীর পাপ এবার বুঝি আড়াল হলো পৃথিবীর বুক থেকে। মেয়ের বিয়ে দিলেন, ছেলেদের বিয়ে করালেন পুরো নিশ্চিন্ত মনে। সবকিছু ঠিক ছিল কিন্তু যখন পূর্ব আর তূর্য বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে ফিরলো তখনই আবার আতঙ্কের দিন শুরু হলো মহুয়া চৌধুরীর।

কিভাবে যেন পূর্ব আর তূর্য মাহবুব চৌধুরীর গোপন ব্যবসার কথা টের পেয়ে যায় আর তার পিছনেই উঠে পড়ে লাগে।দিন কয়েকের মধ্যেই মাহবুব চৌধুরীর রেখে যাওয়া পাপ আবার টেনে ধরে এরা দুজনেই।যেই পাপ চল্লিশ বছর আগে স্বামী শুরু করেছিলেন সেই পাপের নিষ্পত্তি হয়নি তখনও,তার আগেই এরা এটা আবার উদ্ধার করে।একের পর এক মেয়ে এদের শিকার হচ্ছিল দেখে তূর্য আর পূর্ব কে বিয়ে করাতে প্রচুর ভয় পেতেন মহুয়া চৌধুরী।

এদের বিয়ে ঠিক হলেই কোনো না কোনো ভাবে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতেন কিন্তু একরকম করেই তূর্যের বিয়েটা টিকে গিয়েছিল।সেটা ভাঙতে পারেননি কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন তূর্যের যে বউ হয়ে আসবে তার কাছে সবকিছু বলে তাকেই বলবেন এসব কিছু থামাতে।আর তার বিয়ের আগেই যখন পূর্ব বিয়ে করে বউ নিয়ে এলো তখন তিনি একেবারেই মানতে পারেননি, একটা নির্দোষ মেয়ের জীবন শেষ করে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার।

কিন্তু পূর্ব তাকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে ছু’রি দেখিয়ে হুমকি দেয়,যদি সে তাসনিয়া কে এ বাড়ির বউ হিসেবে মানতে অস্বীকার করে তাহলে ওকে শেষ করে ফেলবে। একরকম বাধ্য হয়েই তাসনিয়া কে মেনে নিয়েছিলেন মহুয়া চৌধুরী,তার সাথে মিশে যাওয়ার ও চেষ্টা করেছিলেন।আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন যে এই দুই নরকের কীট কে শেষ করতে হলে তাসনিয়া ই পারবে এদের শেষ করতে।

কিন্তু এখন সে-ই মেয়েটাকে ও পূর্ব মা’র’তে চাইছে যেন তার সত্যি আড়ালে থাকে, হয়ত পূর্ব বুঝতে পেরে গেছে যে তাসনিয়া ওকে পার পেতে দেবে না!কি করবেন এখন তিনি,বিষ টা কি করে ওর রুম থেকে বের করবেন কিছু বুঝতে পারলেন না।অগ্যতা বারান্দার শেষ মাথায় হাঁটাহাঁটি করছেন আর বারবার খেয়াল করছেন কখন পূর্ব রুম থেকে বেরিয়ে যাবে।নাহ, দরজা ঠাঁয় বন্ধ হয়ে আছে এখনও,কি করা যায় এখন??

সোফায় আলতো করে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল পূর্ব। কিছু একটা প্লান ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়, একটু আগেই ময়ূরী ফোন করে বলল স্নিগ্ধ নাকি সেন্সলেস হয়ে গেছে ড. শাওনের কেবিনে।রাত থেকে ওর উপর রাগ করে আছে স্নিগ্ধ সেটা মেনে নিয়েছিল সে, তার উপর রাগ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে স্নিগ্ধর কাছে। একটা মেয়ে সবসময় তার হাজব্যান্ড কে কাছে চাইবেই আর হাজব্যান্ড যদি তাতে সাড়া না দেয় তাহলে মেয়েটার রাগ হবে এটাই স্বাভাবিক।

স্নিগ্ধ ও তেমনি রেগে আছে, সকালে তো বাড়াবাড়ি করে হাত টাই কাটলো আবার এন্টিসেপটিক ও লাগাতে দিলো না। কাঁটা হাত নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সুড়সুড় করে!এই পর্যন্ত সবটুকু ঠিক ছিল,মানা গেছে এগুলো কিন্তু স্নিগ্ধ রাগ করে নিজের বাড়িতে না গিয়ে হসপিটালে ড. শাওনের কাছে কি করতে গিয়েছে? কোথাও স্নিগ্ধ সবকিছু জেনে যায় নি তো আবার, ওফফফফ শিট! নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মে’রে হো হো করে হেসে উঠলো পূর্ব।
‘ একটু ক্রিমিনাল মাইন্ডে ভাব পূর্ব,কি করছিস তুই? নিজের মনে মনে ও আজকাল টিপিক্যাল স্বামীর মতো চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছিস দেখছি।’

নিজের মনেই কথাগুলো আওড়ালো পূর্ব। এতক্ষণ আর সব প্রেমিক পুরুষ, স্বামীর মতো স্ত্রীর রেগে হসপিটালে যাওয়ার ফালতু লজিক খুঁজছিল সে। একটা বড় শ্বাস নিয়ে আরাম করে হেলান দিল সোফায়।চোখ দুটো এখন ও বন্ধ করা ওর।নাহ সবকিছুই প্লান অনুযায়ী চলছে তার,প্লানের ব্যতিক্রম কিছু হয়নি এখনও। শুধু ওই এন্টিসেপ্টিক এর ব্যাপারটা ইশশ্!আর পাঁচ সেকেন্ড সময় পেলেই লাগিয়ে দেওয়া যেত হাতে কিন্তু এই মেয়ের তেজ খুব বেশি!

ঝাল মরিচের মত ঝাঁঝ ছাড়ে সবসময়, নাহলে হাজব্যান্ড এতো কেয়ার করে হাতে এন্টিসেপ্টিক লাগাতে যাচ্ছিল সেখান থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে যায় কি করে?তবে কোনো ব্যাপার না, এইসব মেয়েদের ঝাঁঝ কিভাবে কমাতে হয় সেটা ওর খুব ভালোই জানা আছে। এতদিন প্রেমিক, ভালো পূর্ব কে চিনেছে স্নিগ্ধ কিন্তু এবার পূর্বের আসল রূপ দেখার সময় এসে গেছে স্নিগ্ধর কাছে।ফাইরুজ গেছে, তাহমিমা ও গেছে।বাকি আছে ওই বুড়ো ডক্টর টা আর স্নিগ্ধ;বুড়ো টাকে তূর্য যে কোনো সময় যে কোন মূহুর্তে শেষ করে দিতে পারে,এর জন্য বেশি কিছু পোহাতেও হবে না ওকে।

হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হবু বউ মা’রা যাওয়ার শকে পাগল হয়ে যাওয়া একটা ছেলে তার ডাক্তারের গলা চেপে ধরে মে’রে’ ফেলেছে, এটা আর এমন কি? পাগল সে,সে তো আর কিছু বুঝে শুনে করেনি, বরং না বুঝেই করেছে। সাধারণ আমজনতা এটাই ভেবে নিবে আর তূর্য কে ছেড়ে দিবে। এরপর ওকেই কোন একটা ডাক্তার ঠিক করে ওই হসপিটালে পাঠাতে হবে তূর্যের মিথ্যে চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করে তোলার নাটকের শেষ দৃশ্যের জন্য।সেই ডাক্তারের বদৌলতে তূর্য খুব সহজেই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

এভাবেই খুব সহজে পথের সবচেয়ে বড় কাঁটা বুড়ো টা দূর হয়ে যাবে কিন্তু! কিন্তু এই স্নিগ্ধ??? ওকে তো ইউনিক ভাবেই সরাতে হবে পথ থেকে। তাহমিমা,ফাইরুজ কে যেভাবে সহজ উপায়ে সরানো হয়েছে এবং শাওন কে যেভাবে সরানো হবে এভাবে এই মেয়েকে সরালে চলবে না।গেমের আসল মজাটা ঠিক আসবে না,স্বস্তি পাওয়া যাবে না এভাবে।এন্টিসেপ্টিকে বিষ মেশানোর ব্যাপারটা বাদ, অন্য উপায় ভাবতে হবে।একে সরাতে পারলেই দুই ভাইয়ের রাজত্ব চলবে সবখানেই। ওদের বিজনেসের মধ্যে আর কেউই বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।

এসব ভাবতে ভাবতেই লম্বা একটা হাই তুলল পূর্ব। মাথাটা হালকা লাগছে এখন, সবকিছু ম্যানেজ করা হয়ে গেছে আর কোনো চিন্তা নেই। এখন শান্তির একটা ঘুম দেওয়া দরকার;সোফা থেকে উঠে বেডের দিকে এগিয়ে গেল পূর্ব। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বেডে উঠতে যাবে তখন হঠাৎ করেই পেটটা গুলিয়ে উঠলো তার। মাথা টা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। হঠাৎ করেই মাথা ঘুরানোর ফলে পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু টাল সামলে দাঁড়াল ঠিক হয়ে।দু হাতে শক্ত করে মাথা চেপে ধরলো পূর্ব, মাথায় এক অসহ্যকর যন্ত্রণা অনুভব করতে পারছে পূর্ব।দু চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখছে, সামনের সবকিছু ধোঁয়াশার আবরণে ঢেকে গেছে।

‘ আহহহহহহহ্ ‘
জোরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল পূর্ব।আর নিতে পারলো না কিছু। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেন্স লেস হয়ে বেডের কিনারা ঘেঁষে পড়ে গেল ফ্লোরে।

কানের কাছে রিন রিন করে কিছু বাজতে চোখ খুলে তাকিয়ে নিজেকে সাদা রঙের বেডে আবিষ্কার করলাম আমি। আশপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম আমি কোথায় আছি।বেডের ডান পাশে ড. শাওন ওরফে শাওন স্যার কে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখে আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না আমি কোথায় আছি। আমাকে চোখ খুলতে দেখে শাওন স্যার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,,

‘ তুমি ঠিক আছো তো মা?'(শাওন স্যার)
মুখে কিছু বললাম না। আলতো করে মাথা নেড়ে হ্যা বললাম,বড় যন্ত্রণা করছে মাথার বাম সাইড টা।যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললাম। শাওন স্যার সেটা খেয়াল করলেন না, আমার হ্যা শুনে বলে যেতে থাকলেন,,

‘ তখন ওভাবে পড়ে গেলে চেয়ার থেকে, আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম পূর্ব বুঝি সত্যিই তোমাকে বিষ টা দিয়ে দিয়েছে আমার কাছে আসার আগেই। পরে তোমার ব্লাড টেস্ট করে শিওর হলাম যে তুমি একদম ফিট আছো। কোন বিষ তোমার ব্লাডে পাওয়া যায় নি। আমার যতদূর মনে হচ্ছে তুমি হয়তো বা পূর্বের আর তূর্যের এতো বড় একটা সত্যি নিতে পারোনি।ব্রেইন সিগন্যাল পাঠাতে পারেনি এসব শুনে আর তাই হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে,অ্যাম আই রাইট ডিয়ার?’

নিজের উপর বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন শাওন স্যার। চোখ মুখে একটা চাপা উৎকণ্ঠা নিয়ে আমার উত্তর শোনার অপেক্ষা করছেন তিনি। আমি মুচকি হেসে হ্যা বললাম।স্যার সঙ্গে সঙ্গেই বললেন,
‘ আমি বললাম না,হ্যা আমি ড. শাওন। এতো বছরের অভিজ্ঞতা আমার,চুল দাড়ি এমনি এমনি পাকে নি আর বয়স ও এমনিই বাড়েনি আমার। আমার অনুমান ঠিক না হয়ে যায় কোথায়,কি বলো মা?'(শাওন স্যার)

‘ হ্যা স্যার। আপনার অভিজ্ঞতা পুরো সত্যি আর আপনার কথাও। আমি সত্যিই নিজের হাজব্যান্ড আর বোনের হবু হাজব্যান্ড এর সম্পর্কে এতসব নোংরা কথা শুনে মস্তিস্কে নিতে পারি নি।যাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে এসেছি তারা যে এতো জঘন্য অপরাধ করে, এতো খারাপ ওরা এটা আমার ধারণার বাইরে ছিল।কাল রাতের বিশ্বাস টা আমার ঠিকই ছিল এখন বুঝতে পারছি। জানেন স্যার, আমি পূর্ব কে এই কয়েক মাসের মধ্যেই খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সবকিছু উজাড় করে দিতে চেয়েছিলাম ওকে কিন্তু আমার পবিত্র ভালবাসা অ পাত্রে পড়লো।

তার সম্পর্কে এতো সব কিছু জানার পরও কেন জানি আমার এসব কিছু মিথ্যা মনে হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে এটা বুঝি স্বপ্ন দেখছি, আমার পূর্ব এতো খারাপ কখনই হতে পারে না। এই মাত্র আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর এই সব কথা মিথ্যে হয়ে যাবে। কিন্তু আফসোস,যদি তা সত্যিই হতো!’

চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।বাম হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নিয়ে শাওন স্যারের দিকে তাকালাম আমি। উনার মনটাও খারাপ হয়ে গেছে বুঝা যাচ্ছে। অমাবস্যার আঁধারে ঢেকে যাওয়া শাওন স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,

‘ আমি আপনার পাশে আছি স্যার।যতোই ও আমার হাজব্যান্ড হোক না কেন,সে একজন অপরাধী।আর আমি কোনো অপরাধী কে প্রশ্রয় দিতে পারবো না!’

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ১৯

বিঃদ্রঃ আগামী পর্বে এই প্রথম খণ্ডের সমাপ্তি হবে, এবং ৮/১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় খণ্ড আসবে।যেটার সম্পর্কে বিস্তারিত একটা পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগেই।

প্রণয়ের বিরহ শেষ পর্ব