প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৮

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৮
Writer Mahfuza Akter

প্রহর যখন বাড়ি ফিরলো, তখন প্রায় রাত একটা বাজে। ফিরতে এতোটা দেরি হয়ে যাবে ভাবেনি সে। বসার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলো, ড. শাহরিয়ার সোফায় গা এলিয়ে বসে আছেন। হাতে একটা মোটাসোটা বই। চশমার আড়ালে থাকা তাঁর দৃষ্টিদ্বয় সেই বইয়ের-ই কোনো পৃষ্ঠায় নিবদ্ধ। প্রহর বললো,

“বাবা, তুমি এখানে বসে আছো কেন?”
ড. শাহরিয়ার বই থেকে দৃষ্টি সরালেন। প্রহরকে দেখে প্রসন্নের হাসি দিয়ে বললেন,
“চলে এসেছো! এতো রাত হলো কেন ফিরতে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আরেহ্, আর বলো না! ঢাকায় এসেছি সন্ধ্যার পর। এসেই ভার্সিটিতে যেতে হলো। প্রায় মাসখানেকের মতো ভার্সিটিতে যেতে পারিনি। অনেক জবাবদিহি করতে হয়েছে। এই সবকিছু হয়েছে শুধুমাত্র মুগ্ধর জন্য। কতো বার ওকে বলেছিলাম, চল! ঢাকা ব্যাক করি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!!”
ড. শাহরিয়ার চিন্তিত ভঙ্গিতে চোখ থেকে চশমা খুললেন। হাতের বইটা বন্ধ করে টি-টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন,
“তাহলে হঠাৎ কী এমন হলো যে, মুগ্ধ তোমাকে ফেলেই চলে এলো?”

প্রহর চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেল এই প্রশ্ন শুনে। সে কীভাবে তার বাবাকে বলবে যে, মুগ্ধ অরুণীর জন্য-ই এতোদিন গ্রামে পড়ে ছিল? এসব শুনলে শাহরিয়ার প্রচন্ড রেগে যাবেন। প্রহর কোনোরকমে বললো,
“হয়তো কোনো ইমার্জেন্সি পড়ে গিয়েছিল! আমাকে সেভাবে কিছু খুলে বলেনি ও?”
ড. শাহরিয়ার এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ প্রহরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হয়তো প্রহরকে পর্যবেক্ষণ করে কিছু বুঝতে চাইছেন! প্রহর তার বাবার হাবভাব দেখে চিন্তায় পড়ে গেল। শাহরিয়ার হঠাৎ বলে উঠলেন,

“বসো। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
“কিন্তু বাবা! আমি প্রচন্ড টায়ার্ড। অনেক জার্নি করে এসেছি।”
“আমার তোমার সাথে জরুরি কথা আছে। এন্ড ইট’স ভেরী আর্জেন্ট!”
ড. শাহরিয়ারের গলায় প্রচন্ড গাম্ভীর্য। প্রহর তাঁর বিপরীতে আর কিছু বলতে পারলো না। অগত্যা তাকে বাবার মুখোমুখি বসতে হলো,

“আচ্ছা, বলো কী বলবে!”
“তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”
প্রহর হকচকিয়ে গেল এরকম প্রশ্নে। কিছুটা চকিত দৃষ্টিতে ড. শাহরিয়ারের দিকে তাকালো। শাহরিয়ারের চোখ দুটো সন্দিগ্ধ ঠেকছে। প্রহর এলোমেলো চোখে তাকিয়ে বললো,

“না! কিছু লুকাচ্ছি না তো, বাবা! হঠাৎ এরকম প্রশ্ন কেন করছো?”
“প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতি হয়েছে বলেই প্রশ্নটা করেছি। তোমাকে আর মুগ্ধকে আমি বেশ ভালো ভাবে চিনি। তুমি যতটা বুঝদার, মুগ্ধ ততটাই অবুঝ। ওকে নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকি আমি সবসময়। তাই মুগ্ধর ব্যাপারে আমার থেকে কিছু লুকিও না।”

প্রহর সমানে হাত হাত ঘষে চলেছে। আড়চোখে কয়েকবার শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়েছেও। শাহরিয়ার আপাতত ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে আছেন। তাঁর কপালে গভীর চিন্তার ছাপ। তিনি আবারও বললেন,
“মুগ্ধ কি তোমাকে অরুণী নামের কোনো মেয়ের কথা কখনো বলেছে?”
প্রহর অবাক চোখে বাবার দিকে তাকালো। তিনি কিভাবে জানলেন অরুণীর কথা? শাহরিয়ার প্রহরের উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন,

“অরুণীকে মুগ্ধ পছন্দ করে, এটা আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম। মেয়েটাকে আমারও বেশ পছন্দ। কিন্তু ও মুগ্ধর থেকে ওয়ান ইয়ার সিনিয়ার। বয়সেও বছর খানেক বড়। যদিও এটা আমার কাছে কোনো সমস্যার ব্যাপার না। তোমার মায়ের মতো আমার তেমন কনজার্ভেটিভ চিন্তাধারা না। কিন্তু সমস্যাটা হলো অরুণী মুগ্ধকে একদমই পছন্দ করে না। কয়েকবার আমার কাছে নালিশও করেছে। এখন আমি তো ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারি না। মুগ্ধকে বুঝিয়েছিলাম। ও আমার কথা শোনেনি। বরং আরও দ্বিগুণ মাত্রায় জ্বালানো শুরু করেছিল মেয়েটাকে। কিন্তু ইদানীং মুগ্ধর ভাবভঙ্গি আমার বেশ উদ্ভট লাগছে।”

“কেন? কী হয়েছে?” প্রহর ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“ছেলেটা বড্ড বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে গ্রাম থেকে আসার পর থেকে। নিজ থেকে একটা কথাও বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হ্যাঁ-না উত্তর দেয়, এক্সট্রা একটা কথাও বলে না। ক্লাস-ল্যাব শেষে নিজের ঘরে পড়ে থাকে। বুঝতে পারছি না আমার হাসি-খুশি ছেলেটা হঠাৎ এভাবে নীরব কেন হয়ে গেল?”

বাবার কথায় এখন প্রহরের নিজেরও কিছুটা চিন্তা হচ্ছে। এক রাতের মধ্যে কী এমন ঘটে গেল যে, মুগ্ধ এমন অদ্ভুত আচরণ করছে? যা-ই ঘটেছে, ব্যাপারটা যে অরুণীকে ঘিরেই হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই প্রহরের মনে। প্রহর মনে মনে অবাক হয়। মানুষ প্রেমে পড়লে এরকম উদ্ভট আচরণ কেন করে? প্রথমে সৌহার্দ্যকে দেখে সে অবাক হতো। আর এখন নিজের ছোট ভাইকে দেখে সে হতভম্ব! প্রহর নিজেকে বেশ ভালো করে চেনে। এভাবে কারো প্রণয়ে নিজের পুরো সত্তাকে আসক্ত করা তার দ্বারা অসম্ভব। আপনমনে বিড়বিড় করে সে আওড়ালো,
“শিক্ষক মানুষ হয়তো অনুভূতিহীন-ই হয়!”

সৌহার্দ্য ফাঁকা রাস্তায়ও বেশ ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। চারিদিকে অন্ধকার। গাড়ির কাচ নামানো থাকায় রাতের হালকা শীতল বাতাস গায়ে লাগছে। গাড়ির ভেতরে অস্বচ্ছ আলো জ্বলছে। তরী অনেকটা অনুভূতিহীনের মতোই বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সে এখনো মেনে নিতে পারছে না। বিশ্বাস-ই হচ্ছে না তার! চোখ ঘুরিয়ে একবার সে সৌহার্দ্যকে দেখলো। সৌহার্দ্যের চোখ, নাক, গাল কেমন লালচে হয়ে আছে। তরী চোখ ফিরিয়ে নিলো। এই মানুষটার দিকে তাকালেই নিজেকে ঋণী মনে হয় ওর।

হঠাৎ সৌহার্দ্য গাড়ির জানালোগুলো লাগিয়ে দিয়ে নাক টেনে বললো,
“একটু ঘুমিয়ে নাও। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে।”
তরী নিস্পৃহ গলায় বললো,
“এতো ধীর গতিতে গাড়ি চালালে তো আমরা কাল দুপুরের মধ্যেও পৌঁছাতে পারবো না।”
“আমি একা থাকলে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে ভোরের আগেই পৌঁছে যেতাম। কিন্তু সাথে তুমি আছো। তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”

তরী অবাক হলো না। বরং শীতল চোখে পাশে বসা মানুষটিকে এক বার দেখলো। এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় যে তার এই মানুষটার কাছেই! তরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”
“ঢাকা।”
“ঢাকার কোথায়?”
“দেখি, কোথায় যাওয়া যায়!”

তরী অনাগ্রহী ভঙ্গিতে জানালার বাইরে দৃষ্টি মেলে দিলো। সে জানে না কোন গন্তব্যের দিকে সে এগোচ্ছে। জানার ইচ্ছেও তার নেই। বেশ তো এগিয়ে যাচ্ছে তারা! আকাশের গোলাকার চাঁদ, নিকষ অন্ধকার আর তার পাশে ড. সৌহার্দ্য রায়হান।

সকালে যখন জানালার ফাঁক গলিয়ে তপ্ত রোদ ঘরে প্রবেশ করলো, মালিহা চোখ কুঁচকে পিটপিট করে তাকানোর চেষ্টা করলো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই অবাক হলো সে। আজ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমালো কীভাবে? মালিহা ফজরের নামাজ সর্বশেষ কবে কাযা করেছে, তার মনে নেই। এমনিতেও সূর্যোদয় হওয়ার আগেই তার স্বভাবত ঘুম ভেঙে যায়। তাহলে আজ কীভাবে ব্যতিক্রম হলো? বিছানার পাশের টেবিলটাতে চায়ের কাপটা খালি পড়ে আছে। মাথা ধরলেও একটু স্বস্তির সাথে রাতটা সজাগ থাকার জন্য-ই তো চা খেয়েছিল সে! তাহলে চা খাওয়ার সাথে সাথেই চোখ লেগে গেল কীভাবে? হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো মালিহা। ব্যাপারটা তার কাছে স্বাভাবিক লাগছে না, কারণ এসব কিছু মোটেই স্বাভাবিক না।

মালিহা নিজের ঘরের দরজা মেলতেই দেখলো, আজাদ পান চিবোতে চিবোতে ঘরের সামনে পায়চারী করছে। মালিহা অবাক হয়ে বললো,
“আজাদ ভাই? কী হয়েছে? আপনি এখানে কী করছেন?”
মালিহাকে দেখে আজাদ বেশ ভীতসন্তস্ত্র মুখভঙ্গি করে এগিয়ে এলো। বললো,
“ছোট বউ মনি! আপনার জন্য-ই এতোক্ষণ এইখানে দাঁড়াইয়া ছিলাম!”
“আচ্ছা? আমায় ডাকলেই তো পারতে!”

“ডাকছিলাম! কালকে রাতেও ডাকছিলাম৷ কিন্তু আপনি তো কোনো সাড়া-ই দিতেছিলেন না!”
মালিহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“রাতে? আপনি রাতেও এসেছিলেন? কী হয়েছে বলুন তো! এতো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা ভালো লাগছে না আমার!”
আজাদ মুখের পান ফেলে গত রাতের ঘটনা হড়বড় করে বলা শুরু করে দিলো। সবটা শুনে মালিহা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো,

“কী আজে বাজে বকছেন, আজাদ ভাই!! আমার চাঁদ এই বাড়িতেই আছে। ও কী করে এখান থেকে চলে যেতে পারে? সৌহার্দ্য কীভাবে আমাকে না জানিয়ে ওকে নিয়ে চলে যেতে পারে?”
সুজাতা ছুটে গেল সৌহার্দ্যের ঘরের দিকে। আজাদ শুকনো ঢোক গিললো। পুরোনো সেই স্মৃতি মনে করতেই তার গায়ের র*ক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে। আজ কি আবারও আহমেদ-ভবনের মাটি র*ক্তা*ক্ত হতে চলেছে?

ঘুম ভাঙতেই তরী নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। মুহুর্তেই চোখ বড়বড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। বেশ বড় একটা ঘরের এক কোণের সুবিশাল বিছানায় সে কীভাবে বসে আছে? সে তো গাড়িতে ছিল? সৌহার্দ্য কোথায়?
বেশ ভীত দৃষ্টিতে সারা ঘরে চোখ বুলাতে বুলাতে তরী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। দরজার কাছাকাছি যেতেই দেখলো, সৌহার্দ্য এগিয়ে আসছে। তার হাতে একটা প্যাকেট। তরীকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে সৌহার্দ্য চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো,

“ঘুম ভেঙে গেছে তোমার? কখন জাগলে?”
তরীর পাশ কাটিয়ে সৌহার্দ্য ঘরে প্রবেশ করলো। বিছানায় বসে হাতের প্যাকেটটা বিছানার পাশের টেবিলে গিয়ে বসলো। তরী সৌহার্দ্যের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমরা এখন কোথায় আছি?”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“ঢাকায় আছো। কেন? কোথায় থাকার আশা করছিলে তুমি?”
“মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে, আমরা এখন কার বাসায় আছি?”
সৌহার্দ্য সহাস্যে বললো,

“আমার বাড়িতে আছো।”
তরী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
“আপনার বাড়ি মানে?”
সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“মানে আমার নিজের বাড়ি। ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে আপাতত বাবার ডুপ্লেক্সে উঠবো। পড়ে ভাবলাম যে, নাহ্! ওখানে গেলে মা দেখা করতে চলে আসবে। আর আমি এখন মায়ের সাথে দেখা করতে একদম চাই না।”
তরী ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সৌহার্দ্যের পাশে বসলো। তরী কিছু বলতে চাইলে সৌহার্দ্য ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“এই ব্যাপারে আপাতত কোনো কথা বলিও না, চাঁদ! মাকে নিয়ে আমি এখন কোনো ডিসকাশন চাচ্ছি না।”
তরী আর কিছু বলতে পারলো না। মুখ বুজে চুপচাপ বসে রইলো। সেটা খেয়াল করে সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে তরীর দিকে তাকিয়ে বললো,

“একটা ব্যাপারে কথা বলতে নিষেধ করেছি মানে এই না যে, কথা বলা-ই বন্ধ করে দেবে! ”
তরী অবুঝের মতো তাকিয়ে বললো, “আর কী বলবো?”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো। তরী অবাক হলো সৌহার্দ্যের হাসি দেখে। সৌহার্দ্যকে সে কখনো এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেনি। মানুষটার হাসি তো খুব সুন্দর! কিন্তু সৌহার্দ্য হঠাৎ এভাবে হাসছে কেন? নিজের কষ্টকে লুকিয়ে রাখতে? নিজের মাকে ছেড়ে আসার কষ্টটা আড়াল করতেই কি সৌহার্দ্যের এতো হাসি? কিন্তু তরী তো সৌহার্দ্যের হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। সৌহার্দ্য হাসতে হাসতে বললো,

“কিছু বলা লাগবে না। আমার কথা শুধু শোনো।”
তরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আচ্ছা, বলুন।”
“এই ফ্ল্যাটটা আমি মাসখানেক আগে বুকিং দিয়েছিলাম। মেডিক্যালে তোমার চান্স হলে তো ঢাকায়-ই থাকতে হবে আমাদের! ঢাকার বাইরে চান্স হলেও এখানে থাকতে হবে কয়েকদিন। যা-ই হোক! আপাতত এখানেই থাকবো আমরা। ফ্ল্যাট কেনার সময়ই এটা ওয়েল-ফার্নিশড্ ছিল। কিন্তু রান্নার জিনিসপত্র নেই এখানে। ওগুলো আমি আজ-ই কিনে আনবো। তুমি রান্না করতে পারো তো?”

“পারি।”
সৌহার্দ্য কিছু একটা ভেবে বললো,
“থাক! আজ আমি খাবার অর্ডার করেই চালিয়ে নেবো। প্রহরকে জানিয়েছি একটা কাজের লোকের ব্যবস্থা করতে। সম্ভবত কাল থেকে সে-ই সব কাজ করে দিয়ে যাবে।”
তরী ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললো,

“নাহ্! রান্না আমি-ই করবো। বাকি সব কাজ কাজের লোক করলে সমস্যা নেই। কিন্তু রান্নাটা আমিই করবো।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”
“এমনি।”
সৌহার্দ্য কী বলবে বুঝতে না পেরে বললো,
“আচ্ছা, ঠিক আছে।”

বেডসাইড টেবিল থেকে প্যাকেটটা তরীর হাতে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“সকালের খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম। যাও, টেবিলে গিয়ে গোছাও। আমি আসছি।”
তরী প্যাকেটটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে সৌহার্দ্য ডেকে উঠলো,
“শোনো!”

তরী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। সৌহার্দ্য বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো,
“আজ জিজ্ঞেস করলে না যে, তোমাকে গাড়ি থেকে ঘরে কীভাবে নিয়ে এসেছি?”
তরী হকচকিয়ে গেল। বিষয়টা তো তার মাথায়ই আসেনি! তরী অবাক হয়ে তাকালো। সৌহার্দ্য হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে বললো,

“কোলে করে নিয়ে এসেছি। তুমি বেশ আরামে ঘুমাচ্ছিলে। ভাবলাম জাগানোটা ঠিক হবে না। তাই কোলে-ই নিতে হলো। ভোরের দিকে একটু শীত পড়েছিল। জানো, কোলে নেওয়ার পর তুমি আমার বুকে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছিলে। তখনই ভেবে নিয়েছিলাম তোমার থেকে অনুমতি নেবো। এরপর থেকে যখনই তুমি ঘুমিয়ে পড়বে আর তোমাকে জাগানোর দরকার হবে, আমি তোমাকে জাগাবো না। কোলে তুলে নেবো। পারমিশন দেবে? এইটুকু অধিকার তো আমি ডিজার্ভ করি!”

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৭

তরীর গাল গরম হয়ে আসছে। সে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো, সৌহার্দ্য মিটমিট করে হাসছে। তাকে লজ্জায় ফেলার কি নিখুঁত কৌশল! তরী দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে আসার সময় সে স্পষ্ট শুনতে পেল, ঘরের ভেতর সৌহার্দ্য সশব্দে হাসছে।

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৯