অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৫
Mousumi Akter
পূজা ঘর ছেড়ে বের হল। ওয়াজেদ চৌধুরীর ঘরের সামনে এসে দরজায় নক করল।ভেতর থেকে ওয়াজেদ চৌধুরী বলল, ‘ কে?’
পূজা বলল, ‘ জ্যাঠা আমি?’
পূজার কণ্ঠ শুনে ওয়াজেদ বিছানা ছেড়ে উঠল।দরজায় এসে বলল, ‘ তুই? ‘
‘জ্যাঠা চা দিবো।’
ওয়াজেদ কুদৃষ্টি নিয়ে পূজার আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখে বলল,
‘ এইভাবে মিষ্টি করে বললে চা না খেয়ে পারি।’
সহজ -সরজ পূজা সে ওয়াজেদ চৌধুরীকে বাবার নজরে দেখে।ওয়াজেদ এর কু-দৃষ্টি ধরতে পারেনি।এতটা ধূর্ত সে নয়। যে কারো চোখের ভাষা বোঝার মত ক্ষমতা তার হয়নি।মিষ্টি হেসে বলল,
‘ আমি আপনার মেয়েনা। এইজন্য পূর্ণতা দিদির মত মিষ্টি দেখতে হয়েছি।একটু অপেক্ষা করুণ চা দিয়ে আসি চাচা।’
পূজা গুনগুন স্বরে গান করতে করতে কিচেনে প্রবেশ করল।নিচতলায় কিচেন। কিচেনের সাইডে বাগান আছে।পূজার কেমন যেন একটু গা ছমছম করে উঠল।
গ্যাসে পানি গরম করতে দিয়ে কৃষ্ণকে কল করল।কৃষ্ণ ফোন রিসিভ করেই বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘বউ বলো।’
পূজা খুব ভালবাসামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
‘কি করছো কৃষ্ণ?’
‘রাজন দার বিয়ের জোগাড় করছি।তুমি কি করো?’
‘ওয়াজেদ জ্যাঠার জন্য চা বানাতে এসছি।কেমন যেন একটু ভ’য় করছে।তাই তোমাকে ফোন করলাম।’
‘যার র-ক্তে, অস্তিত্বে সব সময় আমি মিশে আছি তার ভ-য় কীসের?’
‘তুমি তো দূরে আছো।’
‘রাজন দাদার বিয়েটা হোক, এইবার আমার বউটাকে সাতপাঁকে ঘুরে, জন্ম -জন্মান্তরের মন্ত্র পড়ে আমার ঘরে নিয়ে আসব।’
‘শোনো আমি কিন্তু তোমার নামে সিঁদূর পরি লুকিয়ে।আমার খুব শখ মাঝে সিঁথি কেটে, লম্বা সিঁথি জুড়ে লাল টকটকে সিঁদূর পরব, কপালে বড় টিপ পরব, হাতে শাখা পরব, কোমরে বিছা পরব, পায়ে আলতা -নূপুর পরব আর সব সময় রঙিন শাড়ি পরব।বলোতো আমাকে কেমন লাগবে কৃষ্ণ। আর শোনো আমি কিন্তু কোনদিন তোমার কাছে পুরণো হবোনা। বুড়ো হয়ে যাবো তবুও এভাবেই সেজে গুজে লাল-শাড়ি পড়ে ঘুরব।সাদা শাড়ি, বাদামি শাড়ি ওসব আমি জীবনেও পরব না।’
কৃষ্ণ ভাবনায় ডুব দিলো।তার চোখের সামনে পূজার অপরুপ রূপ ভেষে উঠল।ভয়ংকর এক সুন্দরী মানবী যেন প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে কৃষ্ণের।পূজা বলল,
‘,কৃষ্ণ রাখলাম,আমার চা হয়ে গিয়েছে।’
কৃষ্ণের ভাবনার ছেদ কাটল।সে বলল,
‘চোখের সামনে রুপের কণ্যা দেখলাম।’
পূজা একটু রেগে গিয়ে বলল,
‘কোন মেয়েকে দেখলে?’
‘আমার পূজা ছাড়া আর কাকে দেখব।এত সাহস আছে আমার বউ।’
‘আচ্ছা রাখছি।’
‘সাবধানে থেকো। রাজন দাদার বিয়ে হয়ে গেলে তোমাকে ওখানে আর রাখব না আমি।তোমাকে অন্য কারো বাড়ি থাকতে হবেনা।আমার কাছে খারাপ লাগে।’
‘এসছিলাম তো অল্প কয়েকদিনের জন্য। কিন্তু এখানে এসে আমি পুষ্পদি আর পূর্ণদির সাথে মিশে তাদের ছাড়া থাকতে পারিনা।’
‘এজন্য জোর দিয়ে কিছু বলিনা।’
পূজার চা করা শেষ হয়ে গেল।চা হয়ে গেলে সে আবার ওয়াজেদের রুমে গেল।ওয়াজেদের রুমের দরজা খোলা আছে।ওয়াজেদ বিছানায় বসে আছে।পূজা চা এগিয়ে দিতেই ওয়াজেদ চৌধুরী পূজার হাত থেকে চা নেওয়ার সময় পূজার আঙুল স্পর্শ করল।পূজা এই স্পর্শ কে স্বাভাবিক ভাবে নিল।হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল,
‘ জ্যাঠা, চা কেমন হয়েছে?’
ওয়াজেদ পূজার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তোমার মত মিষ্টি।’
ওয়াজেদের কথা শুনে পূজা খুব খুশি হল।সে ভাবল চা-এর প্রশংসা করল বুঝি।ওয়াজেদ পূজার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলল,
‘ বসো, দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
পূজা বিছানায় বসল।বসে বলল,
‘ জ্যাঠা আপনি চা খান,আমি আসি।’
ওয়াজেদ চৌধুরী পূজার পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
‘ অনেকদিন পর কেউ আমাকে এক কাপ চা খাওয়ালো।’
পূজা ওয়াজেদ এর স্পর্শকে স্নেহের স্পর্শ ভাবছে।ওয়াজেদ চালাক মানুষ সে বুঝতে দিচ্ছে না।পূজা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কেন জ্যাঠা?’
ওয়াজেদ চৌধুরী দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘তুমি দেখোনা এ বাড়িতে আমার আপণ বলে কেউ নেই।আমার কথা ভাবার মত কেউ নেই।আমাকে এক কাপ চা দেওয়া তো দূরে থাক।আমার বউ তাই আলাদা থাকে আমার থেকে।মেয়ে ও কথা বলেনা।আমি অনেক নিঃস্ব পূজা। ভালবাসার মত কেউ নেই।’
পূজা ওয়াজেদ এর ব্যাপার-স্যাপার কিছু বুঝল না।সে জিজ্ঞেস করল, ‘ কেন চাচা?’
ওয়াজেদ চৌধুরী দুঃখী কণ্ঠে বলল,
‘তুমি কাউকে শেয়ার না করলে বলতে পারি।আমার সাথে যে এসব নিয়ে কথা হচ্ছে এসব বিষয়ে কাউকে বলোনা।এ বাড়ির কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে যেওনা কেন তারা আমার সাথে কথা বলেনা।’
‘ আচ্ছা জ্যাঠা।’
‘আমার বউ এর সাথে আমার টুকটাক ঝামেলা চলে।আমাকে তেমন একটা পাত্তা দেয়না। ঘরোয়া ব্যাপার কাউকে বলা যায়না। মেয়েটা ওর মায়ের কথা ছাড়া শোনেনা।আমার বউ সবার কান ভাঙিয়ে আমাকে খারাপ করে রেখেছে সবার সাথে।’
পূজার কেমন যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এসব কথা।এ বাড়ির সবাই-তো ভালো।পূজা কিছু বুঝে ওঠার আগে ওয়াজেদ বলল,
‘ বিশ্বাস হচ্ছে না।’
পূজা আমতা আমতা করে বলল,
‘না মানে।’
ওয়াজেদ বিভিন্ন বাহানায় পূজাকে তার ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করল।বিভিন্ন সুখ -দুঃখের গল্প শোনাতে লাগল।ওয়াজেদ এর উদ্দেশ্য খারাপ।পূজাকে দেখে তার ভেতরের খারাপ উদ্দেশ্য তাকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে।যে কোনো সময়ে খপ করে ধরবে।এমন সময় জাহানের গলার আওয়াজ শোনা গেল।জাহান খুব উত্তেজিত কণ্ঠে ডাকল পূজার নাম ধরে।জাহানের কণ্ঠ শুনে পূজা দ্রুত ওয়াজেদ চৌধুরীর ঘর ছেড়ে বের হল।ঘর থেকে বের হতেই দেখল জাহান দাঁড়িয়ে আছে।পূজা বের হতেই জাহান পূজার হাত খপ করে ধরে জাহানের রুমে নিয়ে গেল।পূজা এসবের কিছুই বুঝল না।জাহান বলল,
‘ তুমি এত রাতে ওই লোকটার ঘরে কি করছিলে পূজা?’
‘জ্যাঠা কে চা দিচ্ছিলাম।’
জাহান পূজার মায়াভরা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তাকে চা দেওয়ার জন্য অনেক মানুষ আছে।তোমার দিতে হবেনা।আমাকে যদি তোমার মায়ের মত মেনে থাকো তাহলে ভুলেও ওই লোকটার আশে-পাশে যেওনা।’
পূজা কিছুই না বুঝে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ আচ্ছা জেঠি মা।’
জাহান পূজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘সারাদিন ছুটে বেড়াও।এখন একটু ঘুমাও মা।’
পূজা জাহানের পাশে ঘুমিয়ে পড়ল।
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৩
পরেরদিন দুপুর। পুষ্পকে পুষ্পের ন্যায় সুন্দর দেখাচ্ছে।তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পুষ্পকে।পরণে হলুদ শাড়ি।ঘরোয়া আয়োজনে গায়ে হলুদ হচ্ছে।মেরি মেয়ের বিদায় হবে সে দুঃখে কান্নার বিপরিতে কেন যেন আনন্দ পাচ্ছে। সেই আনন্দ পুরাটাই যেন রহস্যঘেরা।