প্রেয়সী পর্ব ৭৩
নন্দিনী নীলা
” আমার পা ব্যথা করছে।” বলে মধু অসহায় মুখ করে তাকাল ফুয়াদের দিকে।
ফুয়াদ সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল। মধুর কথা শুনে ল্যাপটপ অফ করে উঠে এলো। মধুর পায়ের কাছে বসে পা টিপে দিতে লাগল। মধু মিটিমিটি হেঁসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
” হাসছো কেন?” কপালে কুঁচকে বলল ফুয়াদ।
মধু পা উঁচু করে ফুয়াদের কোলের উপর পা দিয়ে বলল,,” আপনাকে দেখে হাসি পাচ্ছে।”
ফুয়াদ মধুর হাসির কারণ ধরতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল।
মধু তা দেখে বলল,,” কি হলো থামলেন কেন? আমার পা ব্যথা করছে তো ভালো করতে টিপে দিন।”
ফুয়াদ বলল,,” মজা নিচ্ছ আমার সাথে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আপনাকে দিয়ে এমন সিরিয়াস কাজ করাতে পেরে মজাই লাগছে।”
” এখন তোমার পায়ে পেইন হয়নি। মিথ্যা বলেছ?”
মধু বলল,,” তো কি করব? কয়েকদিন ধরে তো নিজের কাজে এতোটাই বিজি হয়ে গেছেন যে আমার কাছে দরকার ছাড়া আসেন না। এজন্য এসব বাহানা বানাতে হয় আপনি শুধু আমাকে নিয়েই যাতে ব্যস্ত থাকেন। আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার দিকে থাকলে আমার ভালো লাগে। যখন আমি পা ব্যথা, মাথা ব্যথা বলি তখনি একমাত্র আপনি আমায় নিয়ে মনোযোগী হোন।”
ফুয়াদ মধুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা শুনল তারপর মধুর পা কোলের উপর থেকে নামিয়ে ওকে ধরে উঠে বসালো।
মধু ফুয়াদের হাত ধরে উঠে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,,” আপনি বউ পাগল না হয়ে কাজ পাগল হয়েছন।”
ফুয়াদ দুহাতে মধুর পিঠ ধরে বলল,,” কে বলছে আমি কাজ পাগল? আমি তো তোমাতেই পাগল।”
মধু মুখ ভেংচি কেটে বলল,,” তাহলে এসব কাজ এখন বন্ধ। আন্টি কথা বলে না। তার রোবটের মতো দেখভাল আমার ভালো লাগে না। তিন্নি ও হোস্টেলে চলে গেছে এখন বাসায় আমি বোরিং হয়ে যাই। আপনিও সারাদিন কাজ নিয়ে থাকেন বাইরে বাইরে।”
” স্যার আমার উপর রেগে আছে। অনেক দিন ধরেই কাজে মনোযোগ দিচ্ছি না। তাই নতুন একটা কাজ দিয়েছে কমপ্লিট না করলে জব চলে যেতে পারে।”
মধু ফুয়াদের মনের অবস্থা বুঝতে পারল তাই আর প্যারা না দিতে চাইল।
ফুয়াদ মধুকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল তারপর নিচে আসলো। মধুর জন্য খাবার নিয়ে উপরে আসলো।
মধু খাবার দেখে বলল,,” এই মাত্র এতো ফল খেলাম এখনি খাবার নিয়ে এসেছেন। আমি এখন খেতে পারব না। আপনার দরদ খালি খাবার খাইয়ে তাই না।”
ফুয়াদ মধুর হাতে প্লেট দিয়ে বলল,,” চুপচাপ খেয়ে নাও বাহানা না করে।”
” এতো খেয়ে আমি মরে যাব মনে হচ্ছে।”
” চুপ বাজে কথা না বলে খাও।”
ফুয়াদ গ্লাসে পানি ঠেলে ফের সোফায় বসল। মধু মুখ গোমড়া করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ফুয়াদ মধুর দিকে চেয়ে বলল,,” খাও।”
” সত্যি পারব না।”
” আমাকে কি জোর করে খাওয়াতে হবে?”
” বমি হবে খেলেই সত্যি।”
ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,” তুমি আমাকে আজ কাজ করতে দিবে না বুঝেছি।”
ফুয়াদ উঠে সব গুছিয়ে রেখে হাত ধুয়ে এলো তারপর জোর করেই মধু কে খাইয়ে দিল। অর্ধেক ও খাওয়াতে পারল না।
” বেবির ওজন দেখেছ? তুমি ঠিকমতো খাও না বলেই এই অবস্থা। রক্তের পরিমাণ ও ঠিক নাই। খেতে বললেই তোমার বাহানা।”
ধমকে বাকি খাবার ফুয়াদ নিজে খেয়ে নিল। এখন মধু নিচে নামে না ও রুমেই খাওয়া দাওয়া করে। মধুর সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করা কষ্ট। ফুয়াদ প্লেট নিয়ে নিচে নেমে আসলো রাখার জন্য।
এদিকে মধু পানি খেয়ে আস্তে আস্তে পেট ধরে উঠে দাঁড়াল। মধু গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ওর সুন্দর মুখটা কেমন হয়ে গেছে চোখের নিচে কালি জমেছে। গাল ফুলে কেমন বয়স্ক মহিলা দেখা যাচ্ছে।
মধু মুখটা পাংশুটে করে দাঁড়িয়ে আছে। ফুয়াদ রুমে এসে ঢুকতেই ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,”এদিকে আসুন।”
মধু ফুয়াদকে কাছে ডাকল। ফুয়াদ দরজা আটকে এগিয়ে এসে বলল,,” মুখটা ওমন পেঁচার মতো করে রেখেছ কেন? মন খারাপ?”
মধু ফুয়াদকে টেনে নিজের সাথে দাঁড় করিয়ে বলল,,” আপনি দিন দিন ইয়াং হচ্ছেন। আর আমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি। এজন্যেই এখন আগের মতো আদর করেন না এখনতো আমাকে দেখতেও আর সুন্দর লাগে। আমাকে আর আপনার ভালো লাগে না তাই না?”
ফুয়াদ মধু কে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিল। তারপর ওর পা বিছানায় উঠিয়ে বলল,,”আজেবাজে কথা বললে এক থাপ্পড় দেব।”
মধু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,,” দেখছেন এখন আপনি আমাকে মারতেও চাচ্ছেন।”
” উফফ মধু কেন ছেলেমানুষী করছো? বেবি হয়ে গেলে তুমি আবার আগের মতো হয়ে যাবে। এই সময় এমনটা হয়েই থাকে। এটা মাতৃত্বকালীন সৌন্দর্য। আমি তোমার সৌন্দর্য কেও ভালোবাসি অসৌন্দর্য কেও ভালোবাসি। তুমি যেমন আমি সেভাবেই তোমাকে ভালোবাসি।”
একটু থেমে ফের বলল,,” এসব কথা আর কখনো বলবে না। আজেবাজে টেনশন করে নিজের ক্ষতি করবে না।”
মধুকে ফুয়াদ বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল,,” তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
” এতো তাড়াতাড়িই?”
ফুয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পৌনে দশটা বাজে। ফুয়াদ বলল,,” মাঝ রাতে উঠে বসে থাকো। তোমার কি ঘুম হয়? এখন ঘুমাও।”
ফুয়াদ লাইট অফ করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
মধু দুই মিনিট চুপ থেকে বলল,,” ছোটো বেবিরা রাতে নাকি ঘুমায় না। কয়েকদিন পর থেকে আমাদের রাত জেগে ওকে পাহারা দিতে হবে।”
” আমি বাবুর মাকে পাহারা দিচ্ছি। বাবুকে তুমি একাই পাহারা দিবে আর আমি ঘুমাব।”
” আমি আপনাকে ঘুমাতে দেব না।”
” আচ্ছা দিও না। এখন ঘুমাতে দাও।”
বলে ফুয়াদ শুয়ে পড়ল। মধুর আগে ফুয়াদ ঘুমিয়ে গেল। মধু পেটে হাত রেখে বেবিকে অনুভব করে কথা বলতে লাগল মনে মনে। ওর ঘুম হচ্ছে না। ঘুম ইদানিং হয় না। রাতভর জেগেই থাকে ও। মধু ফুয়াদের দিকে কাত হয়ে ড্রিম লাইটের আলোয় ফুয়াদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ কপালে এক হাত ও একহাতে পেটের উপর রেখে ঘুমিয়ে আছে। মধু ফুয়াদের দিকে এগিয়ে ওর চুলে হাত বুলাতে লাগল।
মধুর ঘুম ধরল অনেকটা সময় পর ও হামি দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল। ঘুম ধরেছে কেবলি মধুর তখনি ফুয়াদ ঘুমের মধ্যে কপাল থেকে হাত সরিয়ে মধুর পেটের উপর ঠাস একটা হাত ফেলে দিল। মধু কাত হয়ে ছিল তাই ওর পেটের ডান পাশে ফুয়াদের হাত পরেছে ও ভয়ে চিৎকার করে উঠেছে। ওর ঘুম ছুটে গেছে। মধুর ভয়টা হলো বাবু ব্যথা পেল না তো?
ফুয়াদ মধুর চিৎকার শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসেছে। ফুয়াদ যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই শুয়েছিল কিন্তু মধু নিজেই ফুয়াদের কাছ ঘেঁষে ঘুমিয়েছে তাই এই কান্ড টা ঘটেছে। হাত পা ভুল ক্রমে মধুর পেটে লাগে যদি সেই ভয়েই দুজনে এখন একটু দূরত্ব রেখে ঘুমায়। ফুয়াদ উঠেই টেবিল লাইট জ্বালিয়ে বলল,,” তুমি ঠিক আছো?”
মধু পেটে হাত বুলাচ্ছে মোটামুটি ভালোই জোরে লেগেছে। ঘুমালে শরীরের ভার দ্বিগুন হয়ে যায়। ফুয়াদের হাত মধুর কাছে পাথর সমান লেগেছে। কিন্তু ফুয়াদের ভয়ার্ত চোখ মুখ দেখে ও আর ফুয়াদ কে ভয় দেখালো না।
ও মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বলল,,” আপনার কোন দোষ নেই। আমিই আপনার কাছে চলে গিয়েছিলাম। বেশি লাগে নি।”
কাঁচা ঘুমের মধ্যে উঠেছে ফুয়াদ ওর চোখ লাল টুকটুকে হয়ে আছে ও চোখ ঠলে মধুর পেটে থেকে জামা সরিয়ে মুখ নিয়ে বলল,,” বাবা ব্যথা পেয়েছ? সরি বাবা তোমাকে ভুলে আঘাত করেছে।”
তারপর পেটে ফুয়াদ কয়েকটা চুমু খেয়ে মাথা সোজা করে বলল,,” তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি সোফায় শুয়ে পরি। ঘুমের মধ্যে কি করি টের পাই না তাই দূরে থাকাই ভালো।”
মধু ফুয়াদের হাত ধরে টেনে বলল,,” আমার ঘুম হয় না কেন জানেন?”
” জানি।”
” আমি আপনাকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুমাতে পারি না। ওর জন্য আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরি না। রাত জেগে আপনাকে দেখি। এখন বিছানা থেকে চলে গেলে আমি রাত পার করব কিভাবে?”
ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূরত্ব রেখে শুয়ে বলল,,” কাছে আসবে না।”
“বাবু হয়ে যাক দেখব তখন কাছে আসেন নাকি। আসলে আমিও বলব তখন।”
” আমি তো বললেও শুনব না।”
” আমি কেন শুনছি?”
” তুমিই জানো।”
প্রেয়সী পর্ব ৭২
মধু পেটে হাত বুলিয়ে বলল,,” দেখছিস তোর পাপা কত পঁচা। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলে আয় আর পাপার সাথে মায়ের হয়ে ফাইট কর।”