অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১০

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১০
ইরিন নাজ

কোচিং এর হেড এর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ানা। এই তো কিছু সময় আগেই তাদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। শেষ হওয়ার পর পরই কোচিং এর একজন কর্মী আয়ানা কে জানালো তাকে ডাকা হয়েছে। সে যেনো এখনই গিয়ে দেখা করে হেড এর সাথে। আয়ানা মিথি আর দ্বীপ কে অপেক্ষা করতে বলে হেড এর সাথে দেখা করতে চলে এসেছে। কিন্তু এখন অনেকটাই নার্ভাস ফীল করছে সে। সেই যে আদ্রিশের সাথে ভর্তির দিন উনার এই কেবিনে এসেছিলো এরপর আর কখনো আসা হয় নি আয়ানার। আর না উনি কখনো ডেকেছেন। আজ হঠাৎ উনি নিজের কেবিনে জরুরী তলব করে ডাকলেন কেনো সেটই ভাবাচ্ছে আয়ানা কে।

নিজের নার্ভাসনেস দূর করে দরজায় আলতো করে টোকা দিলো আয়ানা। ওমনি ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসলো। অনুমতি পেয়ে ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো আয়ানা। নম্র কণ্ঠে শুধালো,
— “স্যার আমাকে ডেকেছিলেন?”
— “হ্যা মামুনী। তোমার সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে। তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বসো, বসো…”
আয়ানা একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। এবার উনি পুনরায় বলে উঠলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “যেহেতু আমাদের কোচিং থেকে তুমি সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছো আর আমাদের ও একজন টিচার দরকার, তাই আমি চাচ্ছিলাম তুমি আমাদের কোচিং এ জীববিজ্ঞান এর টিচার হিসেবে জয়েন করো। এখন তোমার কি মতামত?”
চমকালো আয়ানা। এমন কিছুই তো সে চেয়েছিলো। কিন্তু সুযোগ যে এভাবে নিজে নিজে চলে আসবে সেটা ধারণার ও বাইরে ছিলো তার। আনন্দে মন টা নেচে উঠলো আয়ানার। আবার নার্ভাসনেস ও কাজ করতে লাগলো। সে কি পারবে? তার তো কোনোরকম কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। আয়ানা আমতা আমতা করে বলে উঠলো,

— “কিন্তু স্যার আমার তো কোনোরকম কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। আমি কি পারবো?”
স্যার হেসে বলে উঠলেন,
— “শুরু না করলে এক্সপেরিয়েন্স হবেই বা কি করে? আর তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এই কোচিং এ অ্যাডমিশন কোচিং এর পাশাপাশি নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী অব্দি ও পড়ানো হয়। তোমাকে শুরুতে নবম-দশম শ্রেণীর ক্লাস দেয়া হবে। পড়াতে পড়াতে যখন তোমার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে তখন নাহয় বড় ক্লাস বা অ্যাডমিশন ক্লাসে দেয়া হবে।”

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আয়ানা। শুরুতে তাহলে ছোট ক্লাস পড়াতে হবে। শুরুতেই বড় ক্লাস দিয়ে দিলে তাকে কিছু টা সমস্যায় পড়তে হতো হয়তো। আয়ানা কে চুপচাপ ভাবতে দেখে স্যার শুধালেন,
— “এবার তো কোনো সমস্যা নেই। তাহলে তুমি রাজী তো মামুনী?”
আয়ানা উৎফুল্ল মনে ‘হ্যা’ বলতে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেলো। কিছু একটা ভেবে বললো,
— “স্যার আমি আগে এই ব্যাপারে আমার ফ্যামিলির লোকেদের সাথে কথা বলতে চাই। তারপর আপনাকে জানাবো ইনশাআল্লাহ।”

স্যার হেসে বললেন,
— “আচ্ছা, ঠিক আছে।”
— “এবার তাহলে আমি আসি স্যার?”
— “হ্যা, অবশ্যই। আর আরেকটা কথা মামুনী,, আদ্রিশ কে বলো সময় পেলে যেনো আমার সাথে দেখা করে যায়। ঠিক আছে?”

আয়ানা মাথা ঝাঁকিয়ে সালাম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। কিছুদূর এগোতেই দেখলো দ্বীপ আর মিথি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিপস খাচ্ছে আর ঝ’গ’ড়া করছে। আয়ানা কে দেখে ঝ’গ’ড়া থামিয়ে দিলো দু’জন। একত্রে উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— “কিরে স্যার কি বললো?”
আয়ানা সবকিছু খুলে বললো ওদের। দ্বীপ আর মিথি দুজনই ভীষণ খুশি হলো শুনে। মিথি খুশিতে লাফ দিয়ে এসে আয়ানা কে জড়িয়ে ধরলো। ফের ছেড়ে দিয়ে বললো,

— “‘হ্যা’ বললি না কেনো?”
— “আগে আম্মু আর উনার মতামত নিয়ে নেই, তারপর বলবো।”
হাসলো দ্বীপ আর মিথি। একত্রে বলে উঠলো,
— “ওহ হো, উনিইইইইইই।”
মিথি আয়ানার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,

— “তোর উনি রাজী হয়ে যাবে দেখিস…”
লাজুক হাসলো আয়ানা। আসলে দ্বীপ আর মিথি আয়ানার ব্যাপারে এখন অনেকটাই জানে। আদ্রিশ কে দেখার পরের দিন যখন তারা আয়ানার কাছে আদ্রিশের ব্যাপারে জানতে চায় তখন আয়ানা তাদের জানিয়ে দেয় যে সে বিবাহিত, আদ্রিশ তার হাসব্যান্ড আর সে শ্বশুরবাড়িতেই থাকে।

লাঞ্চ শেষে অনু বেগমের পেছন পেছন আসলো আয়ানা। আদ্রিশ আজ আসে নি লাঞ্চ করতে। হয়তো চাপ বেশি, সময় পায় নি। তাই আয়ানা ঠিক করেছে আগে অনু বেগম কেই জানাবে। অনু বেগম আয়ানার মুখ দেখেই বুঝলেন কিছু বলতে চাচ্ছে আয়ানা। তাই হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলেন। বিছানায় বসিয়ে দিলেন আয়ানা কে। বলে উঠলেন,
— “এবার বলো কি বলতে চাচ্ছ। সেই তখন থেকে দেখছি কিছু একটা বলতে চাচ্ছ কিন্তু বলছো না।”
অনু বেগম জিজ্ঞাসা করতেই আয়ানা টপাটপ সব বলে দিলো উনাকে। সব শুনে উনি শুধালেন,

— “‘হ্যা’ বলেছো?”
আয়ানা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোঝালো। বললো,
— “তুমি আর উনি পারমিশন দিলে বলবো।”
মেয়ে টা তাদের কথা মাথায় রেখেছে ভেবে মনে মনে খুশি হলেন অনু বেগম। আলতো হেসে আয়ানার মাথায় হাত রেখে বললেন,

— “তোমার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই ‘হ্যা’ বলবে। ডাক্তারি এবং শিক্ষকতা দুটোই সম্মানজনক পেশা। আর প্রত্যেকটা মেয়ের ই উচিত নিজের পায়ে দাঁড়ানো। অন্যের উপর নির্ভর করে না থাকা। আর আরেকটা কথা কি জানো? নিজের টাকা খরচের মজাই আলাদা। তুমি চাইলে তোমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের জন্য কিছু করতে পারো বা তোমার আম্মুর জন্য কিছু করতে পারো। তার তো ছেলে নেই। সন্তান বলতে তোমরা দুই মেয়ে। তোমাদের উচিত তার জন্য কিছু করা। কি করলে সে খুশি হবে, ভালো থাকবে সেটা নজরে রাখা। তাই না?”

ছলছল চোখে অনু বেগমের দিকে তাকালো আয়ানা। অনু বেগমের কথার পিঠে কোনো জবাব না দিয়ে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নেত্র বেয়ে দু ফোঁটা উষ্ণ তরল গড়িয়ে পড়লো তার। তবে এই অশ্রু দুঃখের নয় বরং সুখের।

রাতে আদ্রিশ বাড়ি ফেরার পর আয়ানার কাছে জানতে চাইলো আজকের অনুষ্ঠান কেমন গেলো। আয়ানা খুশ মনে বললো,
— “অনেক ভালো।”
নিজের ক্রেস্টটাও দেখালো সে। আয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশ। আয়ানা কিছু টা সময় বিরতি নিয়ে স্যারের বলা কথাগুলো ও বললো আদ্রিশ কে। আদ্রিশ শার্ট খুলতে খুলতে শুধালো,
— “তুমি কি চাও কোচিং এ টিচার হিসেবে জয়েন করতে? নিজে কিছু একটা করতে?”
আয়ানা ধীর স্বরে জবাব দিলো,

— “হু…”
— “তাহলে ‘হ্যা’ বলো নি কেনো?”
— “আপনার আর আম্মুর অনুমতি ছাড়া কিভাবে ‘হ্যা’ বলতাম…”
— “তারপর আম্মু অনুমতি দিলো?”
— “হু দিয়েছে।”
আদ্রিশের এতো এতো প্রশ্নে মুখ টা চুপসে গেলো আয়ানার। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আদ্রিশ বুঝি অনুমতি দিবে না। মাথা ঝুকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে।

— “কাল সকালে স্যার কে ফোন করে জানিয়ে দিও তুমি রাজী।”
ফট করে আদ্রিশের দিকে চাইলো আয়ানা। আঁখি জোড়া আনন্দে চকচক করছে তার। আনন্দে, খুশিতে আদ্রিশকেও ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরলো সে। আয়ানা কে এভাবে হঠাৎ জড়িয়ে ধরতে দেখে অবাক হলো আদ্রিশ। পরোক্ষনেই হেসে নিজেও আয়ানার কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। প্রথম বার বউ নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে বলে কথা। এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যায় না। আদ্রিশ মাথা ঝুকিয়ে আয়ানার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে শুধালো,
— “এতো খুশি?”

আদ্রিশের ফিসফিসিয়ে বলা কথা টা শ্রবণ হওয়া মাত্র হুঁশ ফিরলো আয়ানার। খুশির ঠ্যালায় কি করেছে বুঝতে পেরে লজ্জায় গালজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। দ্রুত আদ্রিশের কাছ থেকে দূরে সরতে চাইলো সে। কিন্তু সম্ভব হলো না। আদ্রিশ আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে। বাধ্য হয়ে আদ্রিশের উম্মুক্ত বক্ষের সঙ্গে লেপ্টে রইলো সে। নীরবে আদ্রিশের হৃদস্পন্দন শ্রবণ করতে লাগলো। কিছু সময় নীরবতা পালনের পর আদ্রিশ ফের ফিসফিসিয়ে শুধালো,
— “তো কি কি করলে বউ নিয়মিত এমন খুশি হবে আর নিজে থেকে এসে জড়িয়ে ধরবে, হু?”

আরও লজ্জা পেলো আয়ানা। আদ্রিশ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বক্ষে মুখ লুকিয়ে রইলো। আদ্রিশ হাসলো আয়ানার কান্ডে। মাথা তুলে আয়ানার চুলের ভাঁজে মুখ ডুবালো সে। অধর স্পর্শ করে সময় নিয়ে চুমু খেলো। আয়ানার শরীরের কম্পন স্পষ্ট টের পেলো সে। কিন্তু ছাড়লো না। জড়িয়ে ধরে রইলো। ভালো লাগছে তার, ভীষণ শান্তি লাগছে। ইচ্ছে করছে আদুরে মেয়েটাকে আরও আদর দিতে। আদরে, আদরে ভরিয়ে ফেলতে।

দরজায় টোকা পড়ায় আয়ানা কে ছেড়ে দিলো আদ্রিশ। আদ্রিশ ছাড়তেই উল্টো দিকে ঘুরে গেলো আয়ানা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো সে। বাইরে থেকে ভেসে আসলো আনিকার কণ্ঠ। সে বলছে দ্রুত ডিনার করতে নিচে চলে আসতে।
আদ্রিশ হালকা কাশি দিয়ে আয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— “তুমি নিচে চলে যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
আদ্রিশ ওয়াশরুমে ঢুকতেই দৌড়ে বাইরে চলে আসলো আয়ানা। কিছুদূর যেতেই ধাক্কা খেলো আনিকার সাথে। আনিকা কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— “আরে, আরে এভাবে দৌড়াচ্ছ কেনো আয়ানা পাখি? ওয়েট, ওয়েট তুমি এভাবে লজ্জা পাচ্ছ কেনো?’
আনিকার কথায় থতমত খেলো আয়ানা। আমতা আমতা করে বললো,
— “ক,, কই না তো। কোথায় লজ্জা পাচ্ছি?”
— “থাক, থাক আর বলতে হবে না। বুঝতে পেরেছি। আজ একটা জামাই নাই বলে, শুধুমাত্র আজ একটা জামাই নাই বলে এভাবে লজ্জা পাই না।”
হতাশার সুরে বললো আনিকা। হা করে আনিকার দিকে তাকিয়ে রইলো আয়ানা। কিছু সময় পর কথাটার মানে ধরতে পেরে পুনরায় লজ্জা পেলো সে। ‘ধ্যাৎ’ শব্দ টা উচ্চারণ করে দৌড়ে নিচে চলে গেলো। আয়ানার কান্ডে সশব্দে হেসে উঠলো আনিকা।

পেরিয়েছে দুটো দিন। কোচিং এর স্যার কে ফোন করে নিজের রাজী থাকার বিষয় টা জানিয়ে দিয়েছে আয়ানা। স্যার জানিয়েছেন ক্লাস আগামী মাস থেকে নিতে হবে আয়ানা কে। আয়ানা ও রাজী হয়ে গিয়েছে। মেডিকেলে যেহেতু চান্স হয়ে গিয়েছে সেহেতু এখন আর পড়াশোনার চাপ নেই। ক্লাস শুরু হবে পরবর্তী মাস থেকে। তাই আনিকার কাছ থেকে কিছু গল্প, উপন্যাসের বই নিয়েছে সে। এগুলো পড়েই সময় কা’টা’বে আপাতত।

বেলা এগারোটা। আদ্রিশ হাসপাতালে চলে গিয়েছে আনিকা ও ভার্সিটি তে গিয়েছে। তাই মনোযোগ সহকারে একটা উপন্যাসের বই পড়ছিলো আয়ানা। এমন সময় দরজায় নক করলো কেউ। আয়ানা মাথা তুলে দেখলো দরজার সামনে মীরা দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানা তাকাতেই সে জানালো নিচে দুজন প্রতিবেশী মহিলা এসেছেন। উনারা আয়ানার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন। অবাক হলো আয়ানা। তার সাথে কেনো দেখা করতে চাচ্ছে ভাবতে ভাবতে মীরার সাথে নিচে নেমে আসলো সে। দেখলো অনু বেগম মহিলা দুজনের সাথে কথা বলছেন। আয়ানা কে দেখতে পেয়ে উনি আয়ানা কে নিজের পাশে বসিয়ে দিলেন। মহিলা দুজনের একজন বলতে শুরু করলেন,

— “শুনেছি তুমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছো। আদ্রিশ আমাদের নিজে গিয়ে এই সুখবর জানালো। সাথে মিষ্টি ও দিয়ে আসলো। আমরা অনেক খুশি হয়েছি তোমার সাফল্যে।”
মহিলাটির কথায় মিষ্টি হেসে শুকরিয়া জানালো আয়ানা। এবার অপর মহিলা টি বললেন,
— “আসলে আমরা চাচ্ছিলাম তুমি আমাদের দুজনের বাচ্চা কে পড়াও। এখন তুমি কি বলো?”
চিন্তায় পড়ে গেলো আয়ানা। সে তো কোচিং এ ‘হ্যা’ করে দিয়েছে। মেডিকেলের ক্লাস শুরু হয়ে গেলে সে এতোটাও সময় পাবে না যে কোচিং এ ক্লাস নিয়ে আবার টিউশন ও দিবে। তার নিজের ই পড়ার অনেক প্রেসার থাকবে। আয়ানা কিছু একটা ভেবে বললো,

— “আন্টি আমার একটু সময় দরকার। আমি ভেবে আপনাদের জানাবো।”
মহিলা দুজন আয়ানার কথায় সম্মতি দিয়ে বিদায় নিলেন।
দুপুরে লাঞ্চ টাইমে বাসায় আসলো আদ্রিশ। আয়ানা আদ্রিশ কে সব টা জানালো। আদ্রিশ সব শুনে বললো,
— “আমার মনে হয় না তুমি সময় পাবে বা এতো প্রেসার নিতে পারবে। শুরুর দিকে স্টুডেন্টরা নিজেরাই পড়াশোনা নিয়ে হিমশিম খায়। আর মেডিকেলে এমনিতেও প্রচুর পড়াশোনার চাপ। এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা।”
আয়ানা বললো,

— “সেটা আমিও বুঝতে পারছি। তাই ‘হ্যা’ বলি নি। আমি ভাবছি টিউশনি দুটো মিথি, দ্বীপ কে করতে বলবো। ওরাও তো যথেষ্ট ভালো স্টুডেন্ট।”
— “ভালো আইডিয়া। এক কাজ করো তুমি ওদের ফোন করে জিজ্ঞাসা করে নাও ওরা টিউশন দিতে ইচ্ছুক কিনা।”
আয়ানা সম্মতি দিয়ে ওদের গ্রুপে ভিডিও কল করলো। দ্বীপ আর মিথি ও জয়েন করলো। আয়ানা ওদের কাছে জানতে চাইলো ওরা টিউশন দিতে চায় কিনা। দ্বীপ, মিথি দুইজন ই ইচ্ছা প্রকাশ করলো। তারাও চায় নিজেদের খরচ নিজেরা বহন করতে। আয়ানা ওদের সবকিছু খুলে বললো। বললো সে মহিলা দুজন কে বুঝিয়ে রাজী করিয়ে ফেলবে।
কথা শেষে আয়ানা ফোন রাখতে যাবে এমন সময় চেঁচিয়ে উঠলো দ্বীপ। বললো,

— “এই, এই রাখিস না। ভাইয়া আছে বাসায়?”
— “হু, কেনো?”
— “ভাইয়ার হাতে ফোন টা দে। তাকেই বলবো।”
আদ্রিশ বেলকনি তে ছিলো। আয়ানা ফোন টা নিয়ে আদ্রিশের হাতে ধরিয়ে দিলো। দ্বীপ হেসে জিজ্ঞাসা করলো,
— “কেমন আছেন ভাইয়া?”
— “এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?”
— “আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
একত্রে বললো দ্বীপ, মিথি। আলতো হাসলো আদ্রিশ। দ্বীপ বলে উঠলো,

— “ভাইয়া এই শুক্রবার আমার জন্মদিন। সন্ধ্যার পর সামান্য পার্টির আয়োজন করা হবে। আমি চাই আপনি এবং আয়ানা দুইজনই এই পার্টিতে সামিল হোন। প্লিজ না করবেন না ভাইয়া। আর আপনার সাথে তো আমাদের সেভাবে পরিচয় ও হয় নি। সেদিন নাহয় ঠিকমতো পরিচিত হবো…”

দ্বীপ থামতেই মিথি ও অনুরোধ করতে লাগলো। আদ্রিশ ওদের থামিয়ে বললো,
— “আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চেষ্টা করবো। জানোই তো কেমন পেশা আমার। ছুটির দিনেও হুটহাট ডাক পড়ে যায়। ফ্রি থাকলে অবশ্যই আসবো।”

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৯

কথা শেষে ফোন আয়ানার দিকে এগিয়ে দিলো আদ্রিশ। আয়ানা কল কে’টে খুশ মনে লাফাতে লাফাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ানার আনন্দ দেখে হাসলো আদ্রিশ।

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১১