অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৯

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৯
ইরিন নাজ

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দ্রুত দ্রুত চুল চিরুনি চালাচ্ছে আয়ানা। আজ তাকে কোচিং এ যেতে হবে। অনুষ্ঠান আছে। আদ্রিশ শাওয়ার নিতে গিয়েছে। একসাথেই বের হবে তারা দু’জন। আদ্রিশ তাকে কোচিং এ পৌঁছে দিয়ে হাসপাতালে চলে যাবে।
দরজার ঠকঠক শব্দে চুল আঁচড়ানো থামিয়ে দরজার দিকে তাকালো আয়ানা। দেখলো আনিকা মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানা আলতো হেসে বলে উঠলো,

— “আরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভেতরে এসো…”
আয়ানার বলতে না বলতেই লাফাতে লাফাতে রুমে প্রবেশ করলো আনিকা। আয়ানার কাছে এসে ওকে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো। আয়ানা চোখ ছোট ছোট করে বললো,
— “এভাবে কি দেখো, হু?”
— “তোমাকে দেখি আয়ানা পাখি। চুল খোলা অবস্থায় তোমাকে হেব্বি সুন্দর লাগে।”
গালে হাত দিয়ে বলে উঠলো আনিকা। লাজুক হাসলো আয়ানা। চুল বেঁধে হিজাব হাতে নিলো পড়ার জন্য। ওমনি খপ করে আয়ানার হাত ধরে ফেললো আনিকা। শুধালো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “তুমি কি এভাবে যাবে?”
— “মানে?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আয়ানা। আনিকা নাক, মুখ কুঁচকে বললো,
— “আজ এতো স্পেশাল একটা দিন, একটু তো সাজবে নাকি?”
— “আমার সেজে বাইরে যেতে কেমন যেনো লাগে…”

— “এটা কোনো কথা? আজ তোমাদের ফটো তুলবে, এরপর বই এ সেই ফটো ছাপবে। ফটো সুন্দর আসতে হবে না? দেখি এদিকে আসো, আমি সাজিয়ে দেই। একেবারে হালকা করে সাজিয়ে দেবো। দেখবে অন্নেক সুন্দর লাগবে।”
আয়ানা সাজতে না চাইলেও হালকা করে সাজিয়ে দিলো আনিকা। তার মতে পিক সুন্দর আসতে হবে। সাজানো শেষ করে আনিকা বলে উঠলো,

— “দেখো তো কেমন লাগে?”
আয়নায় তাকালো আয়ানা। এতক্ষন চোখ বন্ধ করে পুতুলের মতো বসে ছিলো সে। চোখ মেলে নিজেকে দেখে হাসলো সে। খারাপ দেখাচ্ছে না। সুন্দর ই লাগছে। তার ড্রেস আপের সাথে মানানসই। আয়ানা কে হাসতে দেখে আনিকা ও হাসলো। গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

— “তোমাকে এই গোলাপি ড্রেসে, গোলাপি গোলাপি সাজে মিষ্টি পুতুল লাগছে।”
— “অন্নেক ধন্যবাদ আনিকা আপু।”
আনিকা হেসে আয়ানার গাল টেনে দিলো। বললো,
— “আচ্ছা রেডি হও তবে। আমিও যাই রেডি হই। ভার্সিটি যেতে হবে।”
কথা শেষে যেভাবে লাফাতে লাফাতে এসেছিলো সেভাবেই লাফাতে লাফাতে চলে গেলো আনিকা। সেদিকে তাকিয়ে হাসলো আয়ানা। এর মধ্যেই শাওয়ার নিয়ে বের হলো আদ্রিশ। বাম-ডান না তাকিয়ে সোজা গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। মাথা নিচু করে বলে উঠলো,

— “কেউ কি আমার চুল একটু মুছে দিবে?”
হিজাব পড়া বাদ দিয়ে পেছন ফিরে চাইলো আয়ানা। আদ্রিশ মাথা নিচু করে বসে আছে। তা দেখে গাল ফুলালো সে। ধুপধাপ পা ফেলে আদ্রিশের কাছে গেলো। বিছানা থেকে তোয়ালে উঠিয়ে মাথা মুছে দিতে লাগলো। এখন প্রতিদিন ই তাকে দিয়ে এই কাজ করায় আদ্রিশ। অবশ্য তার খারাপ লাগে না আদ্রিশের কোনো কাজ করতে।

চুল ভালো করে মুছে দিয়ে তোয়ালে বেলকনিতে মেলে দিয়ে আসলো আয়ানা। আয়ানা বেলকনি থেকে রুমে ঢুকতেই তার দিকে চোখ পড়লো আদ্রিশের। বেবি পিঙ্ক কালারের একটা ড্রেস পড়েছে সে। মুখে হালকা প্রসাধনীর ছাপ। সামনের বেবি হেয়ারগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, বাতাসে মৃদু উড়ছে। কিছুক্ষন থম মে’রে আয়ানার দিকে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশ। তারপর গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

— “তুমি সেজেছো কেনো?”
পা থেমে গেলো আয়ানার। অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— “কেনো খারাপ দেখাচ্ছে? আসলে আমি তো সাজতে চাই নি। আনিকা আপু জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে।”
আয়ানার প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না আদ্রিশ। সোজা হেঁটে আয়ানার কাছাকাছি চলে আসলো। কিছুক্ষন নীরবে তাকিয়ে থেকে হুট করে নিজের আঙুলের সাহায্যে আয়ানার ঠোঁটের গোলাপি লিপ গ্লোজ টা উঠিয়ে ফেললো। চোখ বড় বড় করে তাকালো আয়ানা। সেদিকে বিন্দু মাত্র নজর দিলো না আদ্রিশ। কাজ শেষে বলে উঠলো,

— “যাও দ্রুত মুখ ধুয়ে আসো। বেশি সময় নেই।”
মন খারাপ হলো আয়ানার। মুখ টা মলিন হলো নিমিষেই। হয়তো তাকে খুব বাজে দেখাচ্ছে তাই আদ্রিশ মুখ ধুয়ে ফেলতে বলছে ভেবে চুপচাপ ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে। আদ্রিশ গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলো আয়ানার যাওয়ার পানে।

কোচিং এর সামনে গাড়ি থামালো আদ্রিশ। সিট বেল্ট খুলে নামতে চাইলো আয়ানা। কিন্তু হাত টেনে ধরলো আদ্রিশ। হঠাৎ এভাবে হাত টেনে ধরায় চমকালো আয়ানা। নিভু নিভু চোখে চাইলো আদ্রিশের দিকে। আদ্রিশ সরু চোখে তাকিয়ে শুধালো,
— “মন খারাপ হয়েছে?”

দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোঝালো আয়ানা। আয়ানা না বললেও যা বোঝার বুঝে ফেললো আদ্রিশ। আলতো হেসে আয়ানার দিকে কিছু টা ঝুঁকে আসলো সে। আদ্রিশের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস চোখে মুখে আছড়ে পড়তেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আয়ানা। মুহূর্তেই হৃদস্পন্দন কয়েক গুন বৃদ্ধি পেলো।

— “বউ….”
আদ্রিশের মুখে ‘বউ’ ডাক শুনে থমকালো আয়ানা। মন খারাপ ভাব টা যেনো কর্পূরের ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। সারা শরীরে মৃদু কম্পনের সৃষ্টি হলো। আয়ানার অবস্থা দেখে হাসলো আদ্রিশ। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
— “লুক এট মি….”

মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় আদ্রিশের দিকে চাইলো আয়ানা। সরাসরি চোখ রাখলো আদ্রিশের চোখে। আদ্রিশ ফের বলে উঠলো,
— “আর কখনো অন্য কারোর সামনে সেজে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবে না বউ। তোমার সজ্জিত অধর, কাজল টানা দু’চোখ…. তুমি জানো, তোমাকে ঠিক কতোটা সুন্দর লাগছিলো!

তুমি জানো, আমার ঠিক কেমন লাগছিলো তোমাকে ওই রূপে দেখে! আমি বোঝাতে পারবো না ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছিলো আমার। ইচ্ছে করছিলো আমার পুতুল বউটাকে সবসময়ের জন্য বুকের মাঝে পুরে রেখে দেই, কেউ না দেখুক তোমায়। আমি চাই না আমার বউ কে কেউ ওই রূপে দেখুক। তোমার সাজ শুধু আমি দেখবো, আমার জন্য সাজবে তুমি, আমার সামনে যতো ইচ্ছা সেজে থাকবে। না সাজলেও চলবে কারণ আমার তুমি টা এমনিতেই সুন্দর, স্নিগ্ধ।”

হা করে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে আছে আয়ানা। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে এই কথাগুলো আদ্রিশ বলছে। আদ্রিশের বলা প্রতিটা শব্দ যে তার হৃদয়ে ঝড় তুলেছে সেটা কি আদ্রিশ নামক পুরুষ টা জানে! আয়ানার ভাবনার মাঝেই তার কপালে অধর স্পর্শ করলো আদ্রিশ। গভীর চুম্বনের পর দূরে সরে গেলো। সোজা হয়ে বসে বলে উঠলো,
— “এবার যাও দেরি হচ্ছে তোমার আর আমারও।”

ঘোরের মাঝেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো আয়ানা। আদ্রিশ গাড়ির গ্লাস নামিয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। এরপর শো করে গাড়ি টা চলে গেলো আয়ানার সামনে থেকে। আয়ানা অপলক তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের গাড়ির পানে। লোক টা যে একের পর এক চমক দিচ্ছে তা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে তার।

পিঠে জোরদার থা’বা পড়ায় লাফিয়ে উঠলো আয়ানা। বুকে হাত দিয়ে পেছন ফিরে দেখলো মিথি। তার পাশে দ্বীপ ও আছে। চোখ রাঙালো আয়ানা। অন্যমনস্ক থাকায় একটু বেশিই ভয় পেয়েছে সে। মিথি দাঁত কেলিয়ে বললো,
— “কিরে ভয় পেয়েছিস?”
— “শ’য়’তান মেয়ে এমন কেউ করে? আরেকটু হলে তো, উফঃ…”
রে’গে বলে উঠলো আয়ানা। ঠোঁট উল্টালো মিথি। বললো,

— “আমার কি দোষ? সেই কখন থেকে তোরে ডাকতেছি আমরা দুইজন। কিন্তু তোর কোনো হুঁশ ই নাই। একদৃষ্টিতে ঐদিকে তাকায় আসোস। ঐদিকে কি আছে দেখি?”
আয়ানা কে টপকে রাস্তায় উঁকি দিলো মিথি। গাড়ি চলছে, একেকটা শাই শাই করে সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর তো কিছুই নেই। মিথি পুনরায় ঠোঁট উল্টে বললো,

— “কি দেখতেছিলি রে? গাড়ি যাইতেসে একেকটা। এই ছাড়া তো আর কিছুই দেখি না।”
আয়ানা গলা ঝাড়লো। পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
— “আরে কিছু না। এসব বাদ দে। কেমন আছিস তোরা সেটা বল…”
দ্বীপ বত্রিশ দাঁত বের করে বললো,

— “আলহামদুলিল্লাহ, সেই ভালা আছি রে। যেই আব্বা আম্মা সারাদিন প্যাদানির উপর রাখতো এখন তারা পারলে আমারে মাথায় তুইল্লা রাখে। মেডিকেলে চান্স পাইছি বলে কথা।”
কলার উঁচিয়ে ভাব নিলো দ্বীপ। ফিক করে হেসে দিলো আয়ানা। হাসলো দ্বীপ আর মিথি ও। আয়ানা এবার মিথির দিকে তাকিয়ে বললো,

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৮

— “আর,, তোর কি খবর?”
— “আলহামদুলিল্লাহ জোস্। আমারেও আমার আব্বা আম্মা বহুত আদর দিতাছে। কি আর কইতাম! সারাজীবনেও এতো আদর পাই নাই ভাই… তোর কি খবর বল?”
— “আলহামদুলিল্লাহ ভালো….”
হেসে বলে উঠলো আয়ানা। অতঃপর তিনজন বিভিন্ন গল্প করতে করতে বিল্ডিং এ প্রবেশ করলো।

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১০