অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ২১

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ২১
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

তরীদের বিল্ডিং এর সামনে দুটো মালবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। তিনতলা থেকে মালপত্র সব টেনে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। মাহমুদ সবকিছু ঠিকঠাক নিয়েছে কিনা তার তদারকি করছে। মাঝেমাঝেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কপালের ঘাম ঝেড়ে ফেলছে। চারতলার ঝুল বারান্দায় টলমল চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তরী।

কষ্ট হচ্ছে তার। চোখেমুখে লালচে আভা। বাবা ওদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা না বললেও পারতেন। পাশেই ছোট্ট অরু ছোটো ছোটো হাত দুটো দিয়ে তরীর কোমর আঁকড়ে ধরলো। সে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। রাজ্যের মন খা*রা*প এসে ভীড় জমিয়েছে তার মনে। রামি আর মাহমুদ ভাইয়ার সাথে ভীষণ রাগ তার। একেবারে আড়ি। আর কথা বলবেনা। অরুর ও অভিমান হলো। তারা কেন এভাবে চলে যাচ্ছে? অরু ঝ*গ*ড়া করবে কার সাথে? বড়োদের মতো গম্ভীর স্বরে তরীকে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ পঁচা লোক ওরা। চলে যাক। আমরা আর কথা বলবো না আপু। তুমিও কথা বলবে না।”
তরীর কান্না ঠেলে আসছে। ঢোক গিলে কান্না রোধ করার চেষ্টা করলো। মাথা দুলিয়ে অরুর কথায় তাল মেলালো। হুট করেই অরু ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে ফেললো। তরী চমকে উঠলো। অরুকে দু’হাতে কোলে তুলে নিয়ে আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

-“আমার অরুপাখি কাঁদছে কেন?”
অরু হেঁচকি তুলে কাঁদছে। তরীর ঘাড়ের সাথে মাথা মিশিয়ে ছোট্ট নরম হাত দুটো তরীর গলা জড়িয়ে ধরলো। কান্না কান্না গলায় বলল,
-“ওরা যাচ্ছে কেন? পঁচা সবাই।”

তরীর মনটা আরও খা*রা*প হয়ে গেল। অরুর পিঠে হাত বুলিয়ে এটা-ওটা বলে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
হাতে হাতে সবকিছু এগিয়ে দিয়ে মাহমুদ ক্লান্ত হয়ে পড়লো। মলিন চোখে একবার চারতলার কাঙ্ক্ষিত বারান্দায় তাকালো। চোখজোড়া আটকে গেল তার। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো।
মিঠু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। রামি ম্লান হেসে তাকে কাছে ডাকলো। কয়েকমাসে দুজনের মাঝে গভীর এক বন্ধুত্বের জন্ম নিয়েছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে দুজনের কতশত পাগলামি, মা*রা*মা*রি, ঝ*গ*ড়া। মিঠু এগিয়ে এলো। আলতো হেসে বলল,

-“ভালো থাকিস।”
মিঠুর এমন অন্ধকার চেহারা ঠিক ভালো লাগলোনা রামির। এখানেও সে দুষ্টুমি শুরু করলো। মিঠুর পেটে গুতা মে*রে বলল,
-“জমিদারের কলিজা ইঁদুর কে*টে ফেলেছে নাকি? এখন থেকে তিনতলার ভাঁড়া হাত ফসকে যাবে, এই দুঃখে না জানি স্ট্রোক করে বসে।”
মিঠু নিস্তেজ। আজ আর রামির দুষ্টুমিতে তার হাসি পাচ্ছে না। বড্ড দুঃখ হচ্ছে তার। মনে হলো কেমন যেন একা হয়ে যাচ্ছে সে। রামি মৃদু হেসে বলল,

-“বোকা ছেলে। স্কুল তো চেঞ্জ করবো না। তখন দুজনের দেখা হবে।”
এতক্ষণে হাসলো মিঠু। রামির পিঠে কিল বসিয়ে বলল,
-“ভাগছিস না কেন, এখনো? আর কতদিন তোকে আশ্রয় দিয়ে উদার হবো? তাহলে তো আমার জমিদারি লাটে উঠবে।”
রামি হেসে ফেললো শব্দ করে। বুকে জড়িয়ে ধরলো মিঠুকে।
আয়েশা সুলতানা চারতলার বেল দিলেন। তরীর মা এসে দরজা খুলে দিতেই আয়েশা সুলতানা উনার কাছ থেকে বিদায় নিলেন।

-“আসছি ভাবি। তরী আর অরু কোথায়?”
তরীর মা তরী আর অরুকে ডেকে উঠলেন। দুজন আসতেই আয়েশা সুলতানা ম্নান হেসে তাদের কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে নেমে পড়লেন। তরীর বাবা বাসায় নেই। অরুকে কোলে নিয়ে পিঠে বাঁ হাত রাখায় মায়ের নজর পড়লো তরীর হাতে। ভুরু কুঁচকে গেল উনার। জিজ্ঞেস করলেন,

-“তোর রিং কই?”
তরী থমথমে মুখে জবাব দিলো,
-“গোসলের সময় জালে আটকে গিয়েছিল, তাই খুলে রেখেছি। তাছাড়া চুল বাঁধার সময়ও চুল পেঁচিয়ে টা*ন পড়ে।”
-“এমন ভাবে জবাব দিচ্ছিস কেন? বিয়ে ঠিক হয়েছে, রিং হাতে পরে থাকবি। ঘরে গিয়ে পরে নিস।”
তরী বিরক্তি ঝাড়লো মায়ের উপর।

-“সবসময় তোমরা যেভাবে বলবে সেভাবেই করতে হবে? আমার মর্জি বলতে কিছুই নেই?”
মা ধমকালেন,
-“তরী! তুই কী বলতে চাইছিস? সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এতোটা মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন আমাকে?”
অরুকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো তরী। নরম স্বরে বলল,
-“খেলতে যা অরু। আপু এসে চকলেট দেবো।”
অরুর মন ভালো হয়ে গেল। আপুর কথা শুনে চলে গেল খেলতে। তরী ঠান্ডা গলায় বলতে বলতে ক্রমশই উত্তেজিত হয়ে পড়লো,

-“আমি কী বলতে চাইছি, সেটা জানতে চাচ্ছো? আমার মতামতের কোন দাম আছে কি? আমার মতামত না নিয়ে বিয়ে ঠিক করলে, আমার মতামত না নিয়ে রিং পরাতে চলে এলো। অথচ আমি কিচ্ছু জানিনা। রিমোট কন্ট্রোল পুতুলের মতো সামনে বসিয়ে দিলে, রিং পরানো হয়ে গেল। আমি যদি তখন মুখ দিয়ে সামান্য কিছু উচ্চারণ করতাম, তখন শুনতে আমার কথা? বলোনা, শুনতে?

শুনতে না। বরং সেদিনই ধরে বিয়েটা করিয়ে দিতে। তখন যখন মতামত জানতে চাওনি, এখন যেনে কী হবে?”
তরীর কথায় বি*স্ফো*র*ণ ঘটলো যেন। মায়ের চোখের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় বড়ো হয়ে এলো। হতবাক তিনি৷ ছোটোবেলা থেকেই মেয়েটা বাধ্যগত, ভীতু ধরনের। যে যা বলে, সেটাই মেনে নেয়। বাবার শাসন, সিদ্ধান্তে অভ্যস্ত মেয়েটা নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত কী নেবে!

কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়বে সেটা পর্যন্ত বাবার উপর ছেড়ে দিয়েছে। স্কুল, কলেজে থাকাকালীন শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি না পেয়েও বিনা তর্কে বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। সবাই বলতো তরী কাঁচা মাটি। তাকে ইচ্ছে মতো গড়া যাবে। মিঠু হলো ত্যাড়া প্রকৃতির। সে নিজের স্বাধীনতা হাসিল করার জন্য বাবার সাথে না পেরে মাকে খোঁচাবে। বাবার হাতের মা*র তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। তার বড়ো চাচা ঘটা করেই একদিন ছেলের জন্য প্রস্তাব রাখেন।

তরীর মা নিজেও স্বামীর সিদ্ধান্তের উপর কোন মতামত রাখেন না। মূলত উনার মতামতকে গ্রাহ্য করা হয়না। সেদিন তবুও তিনি ইনিয়েবিনিয়ে মেয়ের মতামত জানার কথা বলতেই এক কথায় উনাকে চুপ করিয়ে দিলেন তরীর বাবা।
-“তুমি মহিলা মানুষ সংসার সামলাবে। সিদ্ধান্তের কী বোঝ? তটিনী আমার মেয়ে, তার পেছনে পয়সা ঢালি আমি, তার জীবনে সিদ্ধান্ত আমি নেব না কে নেবে? তটিনীর আবার মতামত কী? ছোটো মানুষ এসবের কী বুঝবে? আমার মেয়ে কখনো আমার সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেনা।”

সেদিনই ঢোক গিলে ফেললেন তরীর মা। আজ যদি মেয়ে বেঁকে বসে, তবে সমস্ত দো*ষ উনার ঘাড়ে এসে পড়বে। এমনিতেও মেয়েরা কোন দো*ষ করলে তার দায়ভার মাকে নিতে হয়। বলা হয় ‘পুরুষমানুষ সারাদিন বাইরে থাকে আর টাকা ঢালে। মেয়েদের মানুষ করে মা। যেমন শিক্ষা দেবে, তেমনই তৈরি হবে। মা শিক্ষা দিতে পারেনি, দো*ষ তার।’
একটা প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে মা কী শেখাবে? সে জগৎ চিনে, মানুষ চিনে। মাকে সংসারের সবকিছু সামলাতে হয়। তিনি চাইলেই প্রতিটি সন্তানের পেছন পেছন লেগে থাকতে পারেন না। আতঙ্ক নিয়ে বললেন,

-“খবরদার তরী! তোর বাবার কানে যেন এসব না যায়।”
তরীর মোজাজ খা*রা*প হলো। গলা চড়িয়ে বলল,
-“বাবাকে আমি আজই নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে চাই। এতে আমাকে মা*রু*ক, কা*টু*ক যা ইচ্ছে তাই করুক। আমি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছিনা।”

মাকে পরোয়া না করেই ঘরে ঢুকে শব্দ করে দরজা আটকে দিলো তরী। সবচেয়ে বেশি রা*গ হচ্ছে নিজের প্রতি। কেন সে চাইলেই সবাইকে নিজের মতামত, সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনা? এখন থেকে নিজের সিদ্ধান্তের বাইরে কারো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত সে মেনে নেবে না। বিয়ের মতো এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত যখন নিতে পেরেছে, তখন বাবাকে কেন জানাতে পারবেনা? আজ হোক বা কাল, সবাইকে তো জানাতেই হবে। এই সপ্তাহের মাঝেই তিয়াসের সাথে বিয়ে, তার আগেই বাবার মুখোমুখি হবে সে। সরাসরি জানিয়ে দেবে সে বিবাহিত। মাহমুদ তার স্বামী।
বাবার আসার অপেক্ষায় রইলো তরী।

নতুন বাসা কলেজের কাছাকাছি। বাসায় মায়ের সাথে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে গিয়ে তরীকে ফোন দেওয়ার ফুরসত মেলেনি। আজ কলেজ থেকেও ছুটি নিয়েছে মাহমুদ। সারাদিনের ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠলো। চেয়েও চোখ মেলতে পারেনি। ঘুমিয়ে পড়লো মাহমুদ। তার ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে। আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। এই বাসার বারান্দাটি তরীদের বাসার মতো ঝুল বারান্দা নয়।

পুরোটা ইট-সিমেন্ট আর গ্রিল দিয়ে আবদ্ধ। হুট করেই তরীর কথা মনে পড়ে গেল। তরীর বিয়েটা আটকানো দরকার। সে তাদের বিয়ের ব্যাপারে বাসায় জানিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তরীকে চাপ দিতে চাইছেনা। তরীর বাবাকে যতটুকু চিনেছে, এতে তাদের দেখা হওয়ার রাস্তাটুকু বন্ধ হয়ে যাবে। ভেবে ভেবে মাথায় এলো তিয়াসের কথা। ছেলেটার সাথে একবার কথা বলে দেখা উচিত। সে যদি তরীকে বিয়ে করবে না বলে পরিবারে জানিয়ে দেয়, তবে আপাতত তরী, মাহমুদ দুজনই চিন্তামুক্ত। সময় নিয়ে পরে আবার তার বাবার কাছে প্রস্তাব রাখা যাবে। তিয়াসের কথা মাথায় আসতেই মনে হলো তার কাছে তো নম্বর নেই। তরীর কাছ থেকে নেওয়া যাবে ভেবে ঘরে ঢুকে ফোন হাতে নিতেই চোখ চড়কগাছ। তরীর অনেকগুলো ফোন, মেসেজ জমা হয়েছে। আজকের দিনটা মেয়েটাকে সময় দেওয়া হয়নি।

দ্রুত কল ব্যাক করলো। রিং হচ্ছে, কিন্তু রেসপন্স নেই। পঞ্চমবারে কল রিসিভ হলো। থমথমে গলা শোনা গেল,
-“কী চাই?”
মাহমুদ নিঃশব্দে হাসলো। তার কোমলমতি তরী ঠান্ডা স্বভাবের হলেও বেশ রাগী, সেটা বুঝলো মাহমুদ। আর এটাও বুঝলো তার উপর রা*গ করেই কল ওঠায়নি এতক্ষণ। তবে আফসোস রাগটা সে সঠিক জায়গায় দেখাতে পারেনা। মাহমুদ গলা ঝেঁড়ে স্বর নরম করলো,

-“সরি! ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
ওপাশে দীর্ঘক্ষণ নিরবতা চললো। কোন সাড়াশব্দ নেই। তরী নরম মনের মানুষ। তার অল্পতেই রাগ পড়ে যায়। সরিতে লাজ হলো। নিরবতার ইতি টেনে খানিকটা কোমল হলো,
-“তাই বলে একটা কল ও দেবেন না?”
-“তার জন্য এক বাক্স সরি!”
তরী পূর্বের সেই গম্ভীর রূপে ফিরে গেল। বলল,

-“আমি আজ বাবাকে আমাদের বিয়ের কথা জানিয়ে দেব।”
বাঁধা দিলো মাহমুদ।
-“এখনই নয়। আগে অন্য পন্থা অবলম্বন করে দেখি। আপনি আমায় তিয়াসের নম্বর সেন্ড করুন। আমি উনার সাথে কথা বলে দেখছি, তিনি কী বলেন। যদি মানতে না চান, তবে আমরা আপনার বাবাকে বিয়ের ব্যাপারটা জানাবো।”

-“কিন্তু..
-“কোন কিন্তু নয়, তরী। আমি চাই সবটা শান্তভাবে হোক। কোন ঝড় না আসুক।”
-“ঠিক আছে, আমি পরে সেন্ড করে দেবো।”
-“কাল ক্লাস আছে?”
-“হুম।”
মাহমুদ আবদার করলো,

-“আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। ভিডিওতে আসুন না!”
মাহমুদ স্পষ্ট শুনতে পেল তরীর মায়ের ডাক। তিনি তরীকে ডাকছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-“ডাকছে আপনাকে, যান।”
তরী মাহমুদের সাথে কথার ইতি টে*নে মায়ের কাছে গেল।

মাহমুদের কথা ধরে তরী আর বাবাকে কিছুই বললোনা। নাস্তা করে টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেল। পরনে মিষ্টি কালার একটা জামদানি। চোখে কাজল টানতে ভুললোনা তরী। শাড়ি পরা নিয়ে কেউ কিছু বললোনা। কারণ তরী প্রায়শই বান্ধবীদের সাথে বের হলে শাড়ি পরে। তবে মা জিজ্ঞেস করলেন,

-“শাড়িটি কার?”
তরী মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
-“আমি কিনেছি। সুন্দর না?”

তার ঠোঁটের কোনে লেপ্টে থাকা হাসি দেখে সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়। তরীকে বাবা কমবেশি হাত খরচের টাকা দেন। সে বেলায় কার্পণ্য করেন না। তাই এরকম একটা শাড়ি কেনার টাকা তার কাছে থাকবে এটা আশা করা যায়।
এই শাড়ির প্রতিটি কুঁচি তরী ভীষণ যত্নে দিয়েছে। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে আঁচল টে*নে*ছে। শাড়িটা মাহমুদের দেওয়া। পরশুদিন বাসায় ফেরার পথে এই শাড়িটি পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। সে মাকে মিথ্যা বলেছে। তরী খেয়াল করলো সে দিন দিন কেমন দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলছে। অনায়াসে মিথ্যা বলছে। ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার পূর্বে বাবা বললেন,

-“দাঁড়াও, আমি বাসে উঠিয়ে দেবো। আমার ওদিকে একটু কাজ আছে।”
তরী দ্বিরুক্তি করলো না। বাবার সাথেই বাস স্টপেজ পর্যন্ত গেল। বাবা বাসে উঠিয়ে নিশ্চিন্তে নিজের কাজে গেলেন। লেকচার শেষ দিয়ে তরী সময় দেখলো। মাহমুদের কলেজ ছুটি হয়েছে মাত্র। এখানে এসে পৌঁছাতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। সে ক্যান্টিনে পা বাড়ালো। বান্ধবীদের সাথে কফির সাথে আড্ডা চললো অনেকক্ষণ। মাহমুদের কল পেয়েই সবাইকে রেখে সে বেরিয়ে পড়লো।

ফুটপাত ধরে এগিয়ে গেলো মাহমুদের দিকে। ক্লান্ত ঠোঁটেও তার নিখুঁত হাসি। দুনিয়াতে কেউই নিখুঁত হয়না, কারো হাসিও বোধহয় নিখুঁত হয়না। যার যার কাছে তার ব্যক্তিগত মানুষটাকে সবরকম রূপেই নিখুঁত লাগে, সুন্দর লাগে। তাই তরীর কাছেও মাহমুদের সবকিছুই ভালোলাগছে। তরীও ঠোঁট প্রসারিত করে এসে দাঁড়ালো। মাহমুদের কপালে অল্প অল্প ঘাম জমেছে। ভীড় ঠে*লে বেরিয়ে এলো দুজন। তরী আঁচল টে*নে মাহমুদের কপালের ঘাম আলতো হাতে মুছে দিলো। অপলক তাকিয়ে রইলো মাহমুদ। চোখেমুখে তার মুগ্ধতা। গভীর আবেগ নিয়ে বলল,
-“আজ তোমায় ভয়*ঙ্কর সুন্দরী লাগছে, তরী। একদম বউ বউ।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ২০

(গতদিন বিনা বার্তায় গল্প না দিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলাম। মেহমান ছিল বাসায়। নানুর বড়ো ভাই আর বড়ো বোন আমার অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে এসেছেন ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে। তাদের রেখে লিখতে বসতে পারিনি। আর হ্যাঁ রমজানে দুদিন পর পর গল্প পাবেন। তখন আমার উপর চাপ পড়ে যাবে। স্টুডেন্ট পড়ানোও বাদ দিতে পারছিনা। তাদের মায়েরা ছাড়ছেন না।)

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ২২

2 COMMENTS

Comments are closed.