অনুবদ্ধ আয়াস পর্ব ৬

অনুবদ্ধ আয়াস পর্ব ৬
ইফা আমহৃদ

আমার হাত ধরে টেনে তুলেই চ’ড় বসিয়ে দিল গালে। চায়ের কাপটা পড়ে ভেঙে গেল। শব্দ হলো মৃদু। গলা চেপে ধরলেন। শুভ ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল। রৌধিক কে ছেড়ে আমাকে ধরলো। চেঁচিয়ে বলল,
” কে আপনি? সাহস হয় কি করে জোনাকির গায়ে হাত দেওয়ার?”
” আমি তো হাজবেন্ডের অধিকারে ওর গায়ে হাত দিয়েছে। আপনি কোন অধিকারে ওকে সেভ করছেন। প্রেমি’ক নাকি কাস্ট’মার?”

রৌধিকের ত্যাড়া উত্তরে শুভ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। আমার দিকে অসহায় চাওনি দিয়ে বলে,
” এই ছেলেটি কি বলছে জোনাকি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি এবারও আগের মতো চুপ। কি বলার বাকি আছে আমার? শুভ হাত ছেড়ে গালে দুহাত রাখল। রৌধিক সঙ্গে সঙ্গে ছাড়িয়ে নিল। কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে টানতে লাগলেন। গাড়ির ভেতরে এনে ফেলে দিলেন। দরজা লক করে অন্যপাশ দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করতে লাগলেন। ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে বাড়ির সামনে এসে থামালেন। যেখানে বাড়িতে চলে বাড়ি আসতে মিনিট দশেক সময় লাগে, আজ সেখানে চোখের পলকে এলাম। গাড়ি থামিয়ে আবার হাত ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে এলেন।

ততক্ষণে সন্ধ্যায় ঘনিয়ে এসেছে। চারদিকে মাগরিবের আযান পড়েছে। অধিকাংশ মানুষ নামাজ পড়তে গেছে। রৌধিক ড্রয়িং রুম পর্যন্ত আনতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো বাড়ির কাজের লোকেরা। রৌধিক হিংস্র চোখে তাকাতেই ভয়ে পিছিয়ে গেল। দু তিনটা সিঁড়ির উপরে সে। তাই হাতে টান লাগছে বারবার। এনে সোজা বেডের উপর ফেললো। দরজা বন্ধ করে দিলো। এগুতে লাগলো আমার দিকে। ভয়ে সিটিয়ে গেলাম আমি। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

” কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন?”
” এখনো বুঝতে পারছো না, কি করছি? কে ঐ ছেলেটা? বাবা মাকে জানাবো, তার আদরের বউমা। বিয়ের পর ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করছে।”
” আমি ঢলাঢলি করছিলাম?”
” না তো কি, রাস্তার মাঝখানে ছিঃ।
এই চুড়িদার কেন পড়েছো হ্যাঁ। বাড়িতে থাকতে তো দিব্যি, শাড়ি পড়ে ঘুরো।”
ওরনা টা খুলে ফেলে দিলেন।

-” আপনি তো আমাকে শাড়ি পড়তে বারণ করেছেন। তাছাড়া আপনার মনে তো আমার জায়গায় নেই। তাহলে আমি কি করছি, না করছি কি যায় আসে আপনার? ওয়ার্ট?”
গাল চেপে ধরলো আমার। টেনে টেনে বলল,
” তোমাকে আমার বউ হিসেবে মানবো, কি মানবো না। সেটা পড়ে দেখা যাবে। এখন তুমি আমার বউ। আজকের পর যদি কোন ছেলের সাথে কথা বলতে শুনি, জানে মেরে দিবো। মনে থাকবে?”

শেষের কথা টা চিৎকার করে বললেন তিনি। কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু সাউন্ড প্রুফ ঘর হওয়াতে বাইরে সাউন্ড যাচ্ছে না। আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলেন তিনি। তিনি যেতেই প্রবেশ করলো আদ্রিতা আর মৌমিতা আন্টি। আমি হাত পা ছড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। এই বলছে, আমি তার কেউ না। এই বলছে, কেউ না মানায় কিছু যায় আসে না। আদ্রিতা আর মৌমিতা আন্টি প্রবেশ করলেন।
আন্টি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” আদ্রিতা তুমি কোণার রুমটা জোনাকি কে দেখিয়ে দাও। আজ থেকে ও ওখানেই থাকবে।”

” কিন্তু বাবা..
” আমি বুঝে নিবো। আজ থেকে জোনাকি এই বাড়ির মেয়ে হয়ে থাকবে। তোর আর জোনাকির ভেতরে কোন তফাৎ হবে না।”
আদ্রিতা আমাকে টেনে টেনে অন্য একটা ঘর নিয়ে এলো। এই ঘর টা রৌধিকের ঘরের মতো আভিজাত্য না থাকলে শান্তি রয়েছে।
চোখের পাতা বড্ড ভারী ঠেকছে। তাই শাওয়ার নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি। চুল মুছারও সময় হয়ে উঠে নি। টাওয়াল পেঁচিয়ে নিদ্রায় পাড়ি জমাই।

মাঝরাতে ফোন বাজতে। ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালাম। বালিশের পাশেই ভাঙা ফোনটা ভাজছে। স্ক্রিনে না চেয়েই ফোন রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম। কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
” দীপ্তিময়ী, আমার দীপ্তিময়ী কি করছে?”

উঠে বসলাম আমি। একমাত্র শুভই জোনাকি পোকা বলে ডাকে। বাকিরা জোনাকি হিসেবে। কিন্তু শুভর কন্টাক্ট নাম্বার নয়। কন্ঠ টাও ওর নয়। সন্দিহান গলায় বললাম,
” কে আপনি? কাকে চাই?”
” আমার ভালোবাসা চাই। আমার দীপ্তিময়ীকে আমি বকেছি, মেরেছি। তুমি কষ্ট পাচ্ছো, দীপ্তিময়ী?”

” ঐ মিয়া, আমাকে কি আপনার দালাল মনে হয়। মাঝরাতে ফোন করে ভালো বাসা চাইছেন? আমি নিজেই মানুষের বাসায় থাকি। আপনারে ভালো বাসা দিমু কোথা থেকে? আশ্চর্য। আর দীপ্তি টিপ্তি কে? আমি চিনি না।”
বলেই ফোন রেখে দিলাম। পুনরায় আবার ভেজে উঠলো। কিয়ৎক্ষণ বসে থেকে রিসিভ করলাম। রুদ্ধ কন্ঠে বললাম,
” কি চাই তোর হ্যাঁ? মাঝরাতে ছেড়’রামি করতে মন চায়। তোরে আমি সামনে পেলে..

” ছিঃ, এভাবে বলছো কেন? ভালোভাবে কথা বলতে হয়। সামনে পেলে কি করতে হ্যাঁ? চু’মু খেতে?”
” আবার ছিঃ বলোস। তোরে সামনে পাইলে। সাহস থাকলে সামনে আয়..

ফোনটা কেটে সাইলেন্ট করে রেখে দিলাম। বালিশ ঠিক করে শুতেই নক পড়লো দরজায়। ঘড়ির দিকে চাইলাম। রাত তিন টা পনেরো। এতো রাতে সবাই তো ঘুমে থাকার কথা। আলো জ্বালিয়ে দরজা খুলে দিলাম। আমার চোখ কপালে। মহাশয় নিজে এসেছে। চোখ মুছে আবার অবলোকন করলাম। না আমার দৃষ্টি ভ্রম নয়। লাভ দিয়ে বালিশের পাশে থেকে ওরনা নিয়ে গায়ে জড়ালাম। ততক্ষণে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে রৌধিক। বেডের উপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো। আমি কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম,

“আপনি এখানে কেন এসেছেন?”
“আশ্চর্য, বউ এখানে তো আমি কোথায় থাকবো? বউ নিজে আমাকে আসতে বলেছে।”
“কে আপনার বউ? আমি কারো বউ না। আমি কাউকে আসতে বলিনি!”
“আমার ফোনে রেকর্ড ফাংশন অন করা। এইমাত্র তুমিই আমাকে আসতে বলেছো!”
“তারমানে একটু আগে আপনি আমাকে ফোন করে ডিস্টা’র্ব করছিলেন?”

“ডিস্টা’র্ব কই করছিলাম? বউয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। বউ তোমার মুখের ভাষা এতো বি’শ্রী।”
তিনি ফোন দিয়েছেন ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ফোন করে আমাকে না চেয়ে অন্য কাউকে চাইছিলেন। মুখ ভার করে বললাম,

” মাঝরাতে ফোন দিয়ে দীপ্তিময়ীকে চাইবেন? আর আমি বললেই দোষ। যান, নিজের ঘরে যান!”
আমার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের উপরে রাখলেন। অতঃপর আমার কোমড়ে নিজের হাত রেখে বললেন,
” জোনাকি মানেই তো নিভু নিভু মৃদু আলো। আর দীপ্তিময় মানেও ক্ষুদ্র আলো। তুমি তো মেয়ে তাই ময়ী দিলাম। বুঝতে পেরেছো তুমি?”

নাক ধরে টেনে দিলেন তিনি। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলাম আমি। নিজেকে কোনো রকম সামলে রৌধিককে টেনে বের করে দিলাম ঘর থেকে। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লাম। আমাকে দীপ্তিময়ী বলছে সে। বউ বলে দাবি করছে। বিশ্বাস করতে কেমন কষ্ট হচ্ছে আমার।

দুদিন বাড়িতে বসে থাকার পর উপলব্ধি করার বাবার কথা। যতোই হোক, আদ্রিক আঙ্কেলের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী মাস ছয় পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো। তাছাড়া বাবার ওষুধ পত্র কিনতে এখনো অনেক টাকার প্রয়োজন আছে। তাই অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আদ্রিক আঙ্কেল অনুমতি দিলেন। তবে আমি তার ছেলের বউ সেটা জানাতে বারণ করলেন।

অফিসে ঢুকে ব্যাগটা রেখে টেবিলে বসতেই ম্যানেজার ছুটে এলেন। টেবিলে আঘাত করে বললেন, ” তা ম্যাডাম, এতোদিনে অফিসের কথা মনে পড়লো
আপনার? বলি এতো দিন কোথায় ছিলে তুমি? এই মাসে তোমার সেলারি অর্ধেক কাটবো।”
” আপনার সংসারে আগুন লাগাতে গিছেলাম। কিন্তু আপনার বউকে পাই নি। ভাবছি এবার আপনার বউকে জানাবো। বউ রেখে প্রেমিকা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।”

ফোন বের করতেই দমে গেলেন ম্যানেজার। সৌজন্য হাসি দিয়ে দিলেন। ঠোঁট বাঁকিয়ে জোর পূর্বক হাসি দিলেন। অতঃপর চলে গেলেন। তিনি যেতেই আহির, সারা ঘিরে ধরলো আমায়। আমার মাথা থেকে পা স্ক্যান করলো। ভ্রু কুঁচকে আহির বলল,

” জোনাকি, তোকে কেন জানি বিবাহিত লাগছে?”
” হ্যাঁ! আমারও তেমনই লাগছে। এতো দিন কোথায় ছিলিস তুই। ফোনে পাই নি। তোদের বাড়ি গেছিলাম। বাড়ি ওয়ালা বলল তোরা নাকি হসপিটালে। কার কি হয়েছিল?”
” বাবা অসুস্থ হয়ে গেছিলো।”
বিচলিত হয়ে বলল সারা, ” কি হয়েছে আঙ্কেলের?”
” এই কয়দিনে অনেক কাজ জমে আছে। পরে বলছি।”

কাজে মন দিলাম আমি। কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরে স্টার্ফ এসে বলল, ” স্যার আপনাকে ডাকছে।”
” স্যার! স্যার কখন এলেন। তিনি তো বাড়িতে!”

অনুবদ্ধ আয়াস পর্ব ৫

” বড় স্যারের ছেলে ছোট স্যার। তিনদিন ধরে তিনি অফিসে আসছে। আপনি তো আসেন নি, তাই জানেন না।”
ছোট স্যার মানে বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো আমাকে। দরজা নক করে ভেতরে প্রবেশ করতেই মাথায় বাজ পড়লো আমার। রৌধিক পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। আমাকে না দেখেই বললেন,
” নাম কি আপনার?”

অনুবদ্ধ আয়াস পর্ব ৭