অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৪

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৪
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

-নিজের হার্টই দূর্ব*ল, এই ভা*ঙ্গাচূড়া দেবদাস মার্কা হার্ট নিয়ে চিকিৎসা করে নিশ্চয়ই রোগীর হার্ট টাও নড়বড়ে করে দেয় তোমার ভাই।
-আরে এভাবে বলো না পাটকাঠি,ভাইয়া শুনলে তোমায় আ*স্ত রাখবে না। ভাইয়া নিজের পেশা নিয়ে খুব সিরিয়াস। এ ব্যাপারে কথা বললে কোনো ছাড় নেই।আর আমার ভাই মোটেও দেবদাস নয় বুঝলে, সুন্দরী!
-আরে পাক্কা দেবদাস তোমার ভাই।এই জন্যই তো প্রেমিকার কাছ থেকে ছ্যাঁ*কা পরটা খেয়েছে। আহা! কি ক*ষ্ট! বেচারা ডাক্তার!

“তোরা কি কর্মাস নিয়ে ডাক্তার হবি নাকি,আলো? হঠাৎ ডাক্তার এর কেমিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা সভা করছিস!”
আমার বরমশাই এর গলা শুনে আমি আর আলো আপু দুজনেই চমকে উঠলাম। ইশরে এই বদলোক টা এখানে কেনো।সব শুনে ফেলেছে নাকি। শুনলে তো তুই শেষ ঐশী। আরো কর জামাই চর্চা।
আলো আপু এবার অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এরপর আমতা আমতা করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-আসলে ভাইয়া আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করছিলাম।ঐশী বুঝতে চেয়েছিলো। তাইনা পাটকাঠি?
আমার হাতে চিমটি কে*টে বললো আপু।আমি বুঝতে পারলাম হয়তো আমরা ধরা পড়ে যাবো তাই বা*চার জন্য বললাম,
-আরে আজকে ক্লাসে স্যার একটা প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন। আমি পারিনি। তাই আপুকে জিজ্ঞেস করেছি আর কি। বাদ দেন না।

-তোমাকে একাউন্টিং টপিকের প্রশ্ন না জিজ্ঞেস করে, হার্ট এর টপিকের প্রশ্ন করেছে! সিরিয়াসলি!প্রশ্নটা কি? শুনি..ভ্রু কুচকে সেই হিটলার জানতে চাইলেন
আমি এবার পুরো দমে ফেসে গেছি। কাদো কাদো ফেইসে আপুর দিকে তাকালাম। আপুরও একই অবস্থা। তাই ভয়ে আমতা আমতা করে বললাম,

-“হার্ট আসার পূর্বে থুক্কু রোগী আসার পূর্বে ডাক্তার মারা গেছে। কারন কি?”
আমি স্যার কে উত্তর দিয়েছিলাম, ডাক্তার এর ব্রেকা*প হয়েছিল তাই হার্ট অ্যা*টাক করে মই*রে গেছে এখানে এতো ভাবার কি আছে। কিন্তু আমার উত্তর ভু*ল ছিল তাই আপুর কাছে জানতে এসেছিলাম। আপনি বা এতো প্রশ্ন করছেন কেনো? আমরা ডাক্তার এর কেমিস্ট্রি বা তার লাভ হিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা সভা করতেই পারি। তাই বলে এভাবে পুলিশ এর মতো জে*রা করছেন কেনো?

উনি কিছু না বলেই চলে গেলেন। উনি যাওয়ার সাথে সাথে আমি আর আপু জোরেই হেসে দিলাম। আপু বললেন,
-তুমি পারোও পাটকাঠি।ভাই মনে হয় তোমার বানানো কাহিনি বিশ্বাস করতে পারেনি তাই তো আর কিছু বলে নি তোমায়।তবুও ভাই রাগ দেখায়নি এটাই অনেক বোন।আর আমার ভাইটার পেশায় স*ন্দেহ কইরো না বোন।
-প্রমিজ করবো না।আজ শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। একথা বলেই আমি হেসে দিলাম।

পরের সপ্তাহে ভার্সিটির গেটে গিয়ে দেখি দিবা আপু, বেলা আর মিম দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখা মাত্র দিবা আপু আমার কাছে এসে বলল,
-তুমি জানো ড. এ আর সি আমার ক্রাশ।তুমি তো তার কাজিন তাই না।পিচ্ছি প্লিজ প্রফেসর এর সাথে আমার সেটিংস করতে আমায় সাহায্য করো প্লিজ প্লিজ।

ভাই এ আবার কোন দেশের পাগল। মানে দুনিয়ার সব পাগলের দেখা আমার সাথেই হতে হবে।নিজের জামাইয়ের লগে আরেক জনের প্রেম করানোর কাজ!আর কতো ঝামে*লা পোহাতে হবে আমার। শা*লা আমি নিজেই একটা ঝামে*লার গোডাউন। আমি আপুকে বললাম

-আমি পারবোনা আপু।উনি অনেক রা*গী মানুষ। তাছাড়া উনি তো আপনাদেরই প্রফেসর তাই আপনি নিজেই কাজটা করতে পারবেন। (আমি যে উনার স্ত্রী তা আর বললাম না।যেখানে ছ’মাস পর দু জনের রাস্তা আলাদা তাই এই ক্ষনিকের জন্য তার নামের সাথে নিজের নাম জুড়ালাম না)
– প্রফেসর আমাদের সাথে কাজের বাইরে কোনো কথা বলেন না তাছাড়া তার রুমে স্টুডেন্ট রা এলাও না। তুমি জাস্ট এই চিরকুটটা ড.এ আর সি এর যেকোনো ফাইলের মধ্যে রেখে দিও প্লিজ পিচ্চি।

–কিন্তু আপু আম..মি
-আমি কোনো না শুনবো না।এটা আমার অনুরোধ তোমার কাছে। তোমাকে এই সামান্য কাজটা করতেই হবে প্লিজ।
এবার আমি সত্যিই ফ্যাসাদে পড়লাম। বেলার দিকে তাকালাম তার মনোভাব দেখে বুঝলাম সেও চায় যেন আমি কাজটা করি।তাই আপুর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বললাম,
-আমি এটা আপনার ক্রা*শের কাছে পৌঁছে দিবো।কিন্তু পরবর্তীতে কোনো ঝামেলা হলে তার দায়*ভার আমি নিতে পারবো ন আপু।

এবার আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন
-অনেক ধন্যবাদ পিচ্চি।
কাল থেকে ভাসিটি অফ। রোজা প্লাস ঈদের বন্ধ একসাথে দিয়ে দিয়েছে। আহ শান্তি! এখন সকালে একটু ঘুমানো যাবে।ক্লাস শেষে বেলা আর মিম থেকে বিদায় নিয়ে আলো আপুর সাথে বাড়ি ফিরেছি।আজ বরমশাই নিতে আসেন নি আমাদের।

আমি রুমে গিয়ে চিরকুটটা ল্যাপটপ এর পাশে থাকা অনেক গুলো ফাইলের মধ্য থেকে ব্লু কালার এর ফাইলে রেখে দিয়েছি।ভাবছি হিটলার কাগজটা দেখার পর কি করবেন। নিশ্চয়ই আপু এখানে উনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন। উনি কি এক্সেপ্ট করবেন?করতেই পারে আপু অনেক সুন্দর। কতদিন পর এম.বি.বি.এস কমপ্লিট করবেন। পারফেক্ট মানাবে। তাহলে হিটলারের প্রাক্তন এর কি হবে!ধুরররর আমি এতসব ভাবছি কেনো! জা*হান্নামে যাক! আমার কি!কিন্তু ঐ ব্যাটায় আমার উপর ইদানীং একটু বেশি অধিকার দেখায়।আমারও উচিত একটু প্র*তিশোধ নেওয়া।

এরই মধ্যে কেটে গেলো ২৮টা রোজা কিন্তু আমার প্রতিশোধ আর নেওয়া হলো না। আমার শপিং নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। হিটলার আর মা তাদের পছন্দ করে এনেছে সবারটা।কাল চাঁদরাত।
আমি রাতে অনেক পরিকল্পনা করলাম কিভাবে হিটলারকে জব্দ করা যায়।মধ্যরাত থেকে এই প্রসেস এপ্লাই করা যাবে। চা*ন্দু তোমার শান্তির দিন খত*ম। এবার তুমি দেখবা বউগিরি। এসব ভাবনার মাঝেই সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
মধ্যরাতে দরজার বারির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। আপু সেহেরি খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে। আমি উঠে দরজা খুলে দিলাম। আপু হিটলার মশাই কে ডাকতেই যাবে তখন আমি বললাম

-আপু তুমি যাও, ব্রাশ রেখে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও। আমি উনাকে ডেকে দিচ্ছি।
–আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসো।আম্মু নাহলে আমারে বকবে।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৩

একথা বলে আপু চলে গেলেন। এখনি পারফেক্ট টাইম। টি-টেবিলের ওপর থেকে পানির জগ থেকে পানি নিয়ে হাফ গ্লাস পানি বনমোরগ টার মুখে ছেটালাম। বেচারা ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন তাকে এভাবে উঠানোর মহান কাজটা আমিই করেছি।তিনি এবার আমার দিকে র*ক্তিম চোখে তাকালেন। আমি কিছুটা ভ*য় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৫