অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৩

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৩
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

ঐশী,উদয় তোমার সাথে দাড়িয়ে কিসের কথা বলছিলো?
_ঐশী কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়।
_ঐশীইইইই
আঁধার ভাইয়ার চিল্লানি তে আমি আমার ভাবনা জগৎ থেকে বিতা*ড়িত হলাম। আরে মিয়া ঠিক মতো ভাবতেও দিবে না ।সব জায়গায় ব্যা*ঘাত ঘটাতে হবে তার। শান্তি নাই।তাই বিরক্তি নিয়েই বললাম,

_কি স*মস্যা আপনার? আপনার জন্য কি আমি একটু শান্তি মতো চিন্তা ও করতে পারবো না!অদ্ভুত
_প্রশ্নের উত্তর দাও আমার।তাড়াতাড়ি
_কিন্তু কি বলবো?? কিসের প্রশ্ন? ভাই!
_উদয় তোমার সাথে কি কথা বলছিলো? তোমরা কি পূর্ব পরিচিত নাকি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

___না না।পূর্ব পরিচিত কীভাবে হবো!আমি তো আজই তাকে প্রথম দেখলাম।আসলে আমি আজকে বেখেয়ালি তে উদয় ভাইয়ার সাথে ধা*ক্কা খেয়েই ব্য*থা পেয়েছিলাম। উনি আমাকে স্য*রি বলেছিলেন আর পড়ে যাওয়া বইগুলো ফেরত দিচ্ছিলেন বাকিটা আপনিই দেখলেন।কিন্তু ভাইয়াটা অনেক ভালো আর কিউট ওও…
আমার কথায় ভাইয়া সাথে সাথে ব্রেক কষলো। সীট বেল্ট না বাধার দরুন আমি বা*রি খেলাম। কিন্তু ব্য*থা পাইনি। ব্য*থা না পাওয়ার কারন অনুসন্ধান করতেই দেখতে পেলাম ভাইয়া তার হাত রেখেছিল তাই কপাল তার হাতে গিয়ে ঠেকেছে। আমি তার দিকে তাকাতেই তিনি প্রশ্ন করে,

_ছেলে মানুষ দেখলেই ক্রাশ খাইতে ইচ্ছা করে তাইনা??
__নাউ*জুবিল্লাহ!ক্রাশ কোন সুখে খাইতে যাবো।উনি আমার ভাইয়ের মতো। এক্কেবারে টুরু ভাই।আপনার মাইন্ড খা*রাপ।
_কিউট বলেছো কেনো?

_আজব,,ভাইয়াটা অনেক সুইট দেখতে।আমার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বলেছে।তাই কিউট বলেছি।তাতে আপনার কি! আপনি কি কোনো কারনে উদয় ভাইয়া কে নিয়ে জেলাস ফিল করতেছেন নাকি?
____তোমার মতো পাগল হলে জে*লাস ফিল করতাম। একথা বলে উনি আবার গাড়ি স্ট্রার্ট দিলেন।
আমাকে আবার এই অ*ভদ্র ছেলে অপ*মা*ন করলো।আরে হাবারাম তুই পাগল। তোর দ্বিতীয় বউয়ের ১৪ গুষ্টি পা*গল।আমি যখন তার বউয়ের গুষ্টি উদ্ধার করতেছিলাম তখন দেখি উনি গাড়ি অন্য এক জায়গায় থামিয়েছেন।তাই বললাম,,

___আরে আমার ফ্রেন্ড দের সাথে গেলে আমি এতোক্ষণে বাসায় থাকতাম।আপনি একেতো এতো লেট করছেন তারপর এখন আবার অন্য জায়গায় আসছেন। আমার খুব খিদে পাইছে,, আমি সেই সকালে ব্রেকফাস্ট করছিলাম। প্লিজ আগে বাসায় চলুন না।
উনি আমার কথার কোনো প্রতিউত্তর না করে বের হলেন।আমার সীটের পাশের দরজা খুলে বললেন,

_____বেরিয়ে আসো। কুইক
_____আরে আমি বাসায় যাবো ত,,,তো
_____তুমি সোজা কথার মানুষ না!!
এ কথা বলে ভাইয়া আমার হাত টেনে নামালেন। সামনে তাকিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টের সামনে আমি। যাক উনি তাহলে আমার পেটের খাদ্য পোকাদের আন্দোলন শুনতে পেয়েছেন।

ভীষণ খিদে পেয়েছিল তাই আমি কোনো রকম কথাবার্তা ছাড়াই খাবার শেষ করেছি। এবার দেখি উনি নিজের জন্য আরো অর্ডার করছেন। কিরে ভাই দেইখে তো তারে তেলেরড্রাম লাগে না তাহলে আবার কেনো খাবার অর্ডার করছেন উনি!
কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমানিত করে ওয়েটার এক প্লেট মিষ্টি আমার সামনে রেখে তার সামনে দই রাখলো।আমাকে আর থামায় কে মিনিটের মধ্যে পুরো প্লেট মিষ্টি শেষ করে ফেললাম।তাকিয়ে দেখি আঁধার ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন।তাই বললাম,

___এভাবে নজর দিচ্ছেন কেনো!আমার পেট ব্য*থা করবে তো! আমাকে আরো এক প্লেট মিষ্টি দিতে বলুন না প্লিজজ
আমার কথায় সে ভ্যাবাচেকা খেলেন। অবাকের দৃষ্টিতে উনি বললেন,
_ what!তুমি আরো খাবে!
_এতো অবাক হচ্ছেন কেনো। প্লিজ বলুন না। বেশি না জাস্ট আর এক প্লেট খাবো। বলুন না। আমি একপ্রকার “এক প্লেট ” বলে তার কাছে যিকির করেই চলছি। এবার উনি গ*ম্ভীর কণ্ঠে বললো,
_প্লেটে আট টা মিষ্টি ছিলো, ঐশী।আর খেতে হবে না।বাসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। আজকের জন্য এটাই এনাফ। বেশি সুগার হেলথ্ প্রব্লেম ক্রিয়েট করবে।

___দেখুন একদম ডাক্তার গিরি করবেন না। আমি একসাথে তিন প্যাকেট মিষ্টি খেতে পারি। আপনার টাকায় খেয়াছি তাই খোটা দিচ্ছেন। বাসায় গেলে আপনাকে মিষ্টির বিল আমি দিয়ে দিবো।
এরপর আঁধার ভাইয়া আমায় এক প্রকার ধরেই নিয়ে গেলো।বিল পে করে সোজা বাসায় চললেন। এতো বার করে বললাম তাও ওই প্যাকেট থেকে একটাও নিতে দেয় নি। বজ্জাত টা কোনো কথা শুনে নি।ড্রাইভ করতে করতেই বললেন,
-মুখটাকে একরকম পেত্নীর মতো করে রেখেছো কেনো?কালকে খেতে পারবে।বাসায় গিয়ে আজ প্যাকেট এ একদম হাত লাগাবে না।

-আমার মুখ, আমি যেমন ই রাখি তা আমার ইচ্ছে। আপনার কথা আমি কোন সুখে শুনতে যাবো।আমার যখন ইচ্ছে আমি খাবো। আমার উপর একদম জামাই অধিকার দেখাতে আসবেন না। পরে আমি যখন বউগিরি করবো তখন স*হ্য করতে পারবেন না।থমথমে স্বরে আমি বললাম।
-তুমি আর বউ গিরি! তোমার মতো বাচ্চার দ্বারা বউগিরি সম্ভব নয়।তুমি সামলাবে আমাকে!এই ধ্রুব কে টে*ক্কা দেওয়ার মতো মানুষ এখনো পৃথিবীতে আসে নি।
অ*সভ্য লোকটা আবার অপমান করলো আমায়। আরে ব্যা*টা তুই ঐশীর বউ গিরি নিতে পারবিনা। একদিনেই তোর অবস্থা নাজেহাল করে দিবো।ব্যাটা তোর ডেয়ার ঐশী এক্সেপ্ট করে নিয়েছে। অপমানের প্রতি*শোধ আমি নিবো ইইই

বিকেলের দিকে রুমে একা একা ভাল্লাগছিলো না তাই আলো আপুর রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আপু চিন্তায় মগ্ন। তাই বললাম,
-এতো গভীর ভাবে কী চিন্তা করছো তুমি,আমি যে এলাম তুমি টের পাচ্ছো না।
-আরে পাটকাঠি, দরজায় কি করছো!ভেতরে এসো।আলো আপু হেসেই কথাটা বলল।
আমি গিয়ে তার বিছানায় বসলাম। গালে হাত দিয়ে চিন্তার ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করলাম,

-রবিন ভাইয়ার কথা ভাবছিলে বুঝি?আজকে তো ভাইয়ার সাথে মিট করার কথা ছিল।কোথায় নিয়ে গিয়েছিল তোমায়?
-বাবা,থামো। এতো প্রশ্ন!আরে আমি রবিনের কথা ভাবছিলাম না।আজ নাকি তার কাজ ছিল তাই ভার্সিটিতে দেখা করে চলে গেছে।
-তো এতো গভীর ভাবে কী ভাবছিলে?কৌতূহল নিয়েই আপুকে জিজ্ঞেস করলাম।
এরপরে আপু আমাকে তার সাথে ঘটে যাওয়া আজকের ঘটনা ও সেদিনের এসএমএস গুলোর কথা খুলে বললো।সব শুনে আমার ও অবাক লাগলো। তাই জিজ্ঞেস করলাম

-তুমি লোকটা কে দেখলে চিনতে পারবে?
-আরে না।আমি দেখি নি।অন্ধকার ছিলো রুমে।আপু নিরাশ হয়ে বললো।
-আরে তোমার যদি বিয়ে ঠিক না থাকতো তাহলে আমি এই লোকটার সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিতাম।কি রোমান্টিক মানুষ।আহা! বিয়ে না করেই বউ ডাকছে!
-তুমি বেশি পেকে গেছো পাটকাঠি। ভাইয়ার কাছে বলতে হবে।আপু হেসেই বললো কথাটা
-তোমার রা*গীচন্ডী উট মার্কা ভাইকে আমি ডরাই না বুঝলা।
-তাই বুঝি! তাহলে তার সামনে কথা বলতে এতো না’র ভাস হও কেন?হাত পা কাপাকাপি করে কেনো,তোমার, সুন্দরী? বলো..বলো..

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১২

আপুর কথা ঘুরানোর জন্যই বললাম,
-তোমার ভাই যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালের ডাক্তার, আমায় বলো নি কেনো তুমি।আমি আজ সেখানে না গেলে তো জানতেই পারতাম না এই রা*গী ষাড়টা আবার রো*গীর চিকিৎসাও করায়।
-তোমায় পরিবারের সবাই তো জানতো ভাইয়া একজন হার্ট সার্জন। তাছাড়া ভাইয়ার রুমেও কিছু সর*ঞ্জাম ছিল তুমি হয়তো খেয়াল করোনি।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৪