অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১২

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১২
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

“মা,,হ,, আমার কোমড়। কোন আ*ন্ধা! শা*লা খাম্বার ছয় নাম্বার বাচ্চা।ধা*ক্কা মারার জন্য আমারেই পাইছোস।
–ঐশী বোন ঠিক আছিস?বেলা আমার ব্যাগ তুলছে।আর মিম আমাকে এ কথা বলে ওঠানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আমি কোমড়ে একটু বেশিই ব্য*থা পেয়েছিলাম তাই ওকে ভর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও ব্য*র্থ হলাম।যার সাথে ধা*ক্কা খেয়েছি সেই ছেলেটা এসে আমার এক হাত ধরে আর মিম এক হাত ধরে আমায় তুলেছে। তখনই আমায় ছেড়ে মিম বলল,,

–ওই পোলা হা*রামি,শয়*তান আমার ফ্রেন্ড রে ধরছোস কোন সাহসে? একে তো ফালাইছোস আবার হাত ও লাগাছ!মেয়ে মানুষ দেখলেই তোগো ছোক ছোক স্বভাব বাইড়ে যায় তাই না।
ধুর আন্টি সরেন। এ কথা বলে ছেলেটা আমাকে কিছু বলবে তার আগেই মিম মাস্ক মুখ থেকে সরিয়ে জোরে বলে উঠলো,,
–সাহস তো কম না একে তো দোষ করছেন। তার উপর আপনার বউয়ের বয়সী মেয়েকে আন্টি ডাকছেন। বলেই মিম জ্বী*ব কাটলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–উপ্সস বউ স্য*রি আসলে আপনি বোরখা পরে থাকায় বুঝতে পারি নি। নয়তো কখনোই বউ কে আন্টি ডাকতাম না।এ কথা শুনে মিম তেড়ে কিছু বলার পূর্বেই দিবা আপু মিম কে আটকায়। আর ভাইয়া টাকে বলে,,
–চোখ কি পায়ে নিয়ে হাটিস!!! উদয় ,, একটু দেখে হাটবি না,, মেয়েটা ব্যা*থা পেয়েছে প্রচুর!
–আমি খেয়াল করিনি দিবা,, ভাইয়াটা এরপর বইগুলো তুলে আমার সামনে দাড়িয়ে বলল,
–সরি ছোট্ট আপু,, আমি এক্সট্রিমলি সরি।আমি দিবার সাথে কথা বলতেই আসছিলাম বাট আনফরচুনেটলি তোমার সাথে ধা*ক্কা লেগে গেছে। এই নেও তোমার বই গুলো। আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি?

–না না। লাগবে না ভাইয়া। আমি ওদের সাথে চলে যেতে পারবো। বই গুলো ভাইয়াটার হাত থেকে নিতে নিতে বললাম।
–তবে ছোট্ট আপু একটা কথা আমি কিন্তু মানুষের এক নাম্বার বাচ্চা,, তোমার বলায় ভুল ছিল
তার কথা শুনে এতো ব্যাথার মধ্যেও হেসে উঠলাম। এমন সময় একটা গম্ভীর গলার স্বরে চমকে উঠলাম
–কি হচ্ছে এখানে!এতো চেচামেচি কেনো! রোগীদের প্রবেশ এ সম*স্যা হচ্ছে। দিবা আপনার সিগনেচার নেওয়ার কাজ তো শেষ তাহলে এখানে ঝামে*লা তৈরি করছেন কেনো?
তখনই দিবা আপু বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,

–আরে ড. এ আর সি এখানে কি করছে! তারপর বলল,
–দুঃখিত প্রফেসর আসলে, পিচ্চিটা পড়ে গিয়ে অনেক বেশি ব্য*থা পেয়েছে তাই ওকে নিয়ে একটু ফাস্ট এইডে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম আমরা। আমাকে দেখিয়ে কথা টা বলল দিবাপু।আমি সেদিকে তাকাতেই হাতের বই গুলো পড়ে গেল। উদয় ভাইয়া আবারও তুলে দিচ্ছেন।

আমি হতবিহ্বল হয়ে প্রফেসর এর দিকে তাকিয়ে আছি। এটা আমি কাকে দেখছি। আঁধার ভাইয়া এপ্রোন পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার আমার উপরই। র*ক্ত চ*ক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছেন।তিনি এবার আমার কাছে এগিয়ে আসলেন তখন আমি বই নিতে দেরি হওয়ায় উদয় ভাইয়া আমার হাত টেনে বই গুলো দিচ্ছিলেন। উনি এসেই উদয় ভাইয়ার হাত আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে দিলেন। আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। আঁধার ভাইয়া সিএমসি হসপিটালের একজন প্রফেসর এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই জন্যই সেদিন তার লাইব্রেরি তে কংকাল দেখছিলাম। সে আমার হাত ধরার সাথে সাথে আমি বললাম,

— আঁধার ভাইয়া, আপনি ডাক্তার !!
–তুমি আলোর সাথে না বাসায় গিয়ে এখানে কি করছো??ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিয়ে গালের সব দাত ফালাই দিতে,ইডি*য়ট। সেদিন বাড়ন করেছিলাম না ভাসিটি থেকে একা বেড় হতে না। তারপর ও কেন বেড়িয়েছো? কথা কানে যায় নি?কি হলো মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না কেনো??
–আপুকে বলে বেড়িয়েছি আমি। আমি আমার ফ্রেন্ড দের সাথে যাবো। দিবাপু কে নিতে এসেছিলো ওরা। আমি আমতাআমতা করে বললাম।

–ওর বই গুলো আমার কাছে দাও,উদয়। এ কথা বলে ভাইয়া দিবা আপুর দিকে তাকায়
–জি ভাইয়া সরি প্রফেসর,, আসলে বাসায় ভাইয়া ডাকতে ডাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে।একথা বলে উদয় বই গুলো ভাইয়ার হাতে দিচ্ছিলেন তখন দিবা আপু বলে,,
—-ওরা আমাকেই নিতে এসেছিলো প্রফেসর কিন্তু পিচ্চিটা পড়ে ব্য*থা পাওয়ার জন্য আমরা এখনো যেতে পারি নি। প্রফেসর পিচ্ছিটা আপনার কাজিন নাকি?
–তোমরা যাও। ঐশী আমার সাথে যাবে।

এ কথা বলে ভাইয়া আমায় নিয়ে দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করলেন। যদিও পড়ে যাওয়ার কারণে হাটতে সমস্যা হচ্ছিল তারপর ও ভয়ে কিছু বলি নি।
আমার কনুই এর ব্য*থা স্থান ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দিয়েছে ভাইয়া। আমি বসে বসে তার কেবিন দেখছি।গোছানো কেবিন পুরো শুধু তার এপ্রোন টাই তার বসার চেয়ারে অসহায় ভাবে পড়ে আছে।
উনি সব জিনিসপত্র এখানেই রেখে জান তাই রুমে কিছু দেখি নি আমি।

–আর কোথায়ও ব্য*থা পেয়েছো??
তার প্রশ্ন শুনে আমার দেখায় ব্যাঘাত ঘটালো।
— কোমড়ের ডান পাশে ব্য*থা পেয়েছি। স্প্রেটা দিন আমি লাগিয়ে নিচ্ছি। এ কথা বলে তার হাত থেকে ব্যথার স্প্রে টা নিয়ে নিলাম।কিন্তু লাগাবো কিভাবে এখানে তো রুম একটাই। তখনি তার রুমের ওয়াশরুম টা দেখলাম।
—কি সমস্যা! কোন জায়গায় আমাকে দেখাও। আমি দিয়ে দিচ্ছি।
–লাগবেনা। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে দিচ্ছি।

আলো ভাসিটির সামনে দাড়িয়ে তার বয়ফ্রেন্ড রবিন এর সাথে অনেকক্ষন কথা বলল।শুধু বয়ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে এখন তার উডবিও। তিন বছর রিলেশন এর পর ধ্রুব যখন জানতে পারে তখন পারিবারিক ভাবেই রবিন এর সাথেই তার বিয়ে ঠিক হয়।

আলো নিজের ডিপার্টমেন্টের নিচ তলায় যেতেই কেউ তার পিছন থেকেই মুখ চে*পে নিচ তলার স্টোর রুমে নিয়ে গেলো। আলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ব্যক্তি রুমের দরজা আটকিয়ে দিল।অন্ধকারে আলো অগ্যত ব্যক্তির চেহারা দেখতে পারছে না।তাই জড়তা নিয়েই সে বলে উঠলো,,
____আরে আপনি কে? এভাবে আমাকে স্টোর রুমে এনে দরজা বন্ধ করেছেন কেনো??আশ্চর্য!!
লোকটা আলো কোমড় ধরেই তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,

___বাসর করতে,বউ
আলো লোকটা কে তার কাছ থেকে দূরে সড়াতে গিয়েও ব্যর্থ হলো,তাই জোর গলায় বলল,
___আরে কি উল্টো পাল্টা কথা বলছেন। কে আপনি?অস*ভ্যের মতো বিহেভিয়ার করছেন কেনো?
____নিজের জামাইকে চিনতে পারছো না অথচ ভাসিটি গেইটে অন্য ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলে।এটা তো মানায় না বউ।জামাই অ*সভ্যতামি করবে না তো ওই ছেলেটা করবে বুঝি??
আলোর এবার রা*গ লাগলো। এক ঝ*টকায় লোকটা কে সড়িয়ে দিয়ে বলল,

___কিসের বউ!পাগল নাকি আপনি!আমি আপনাকে চিনি না। আর কিসের ছেলে ছেলে করছেন,হ্যাঁ?? ও আমার উডবি। আমাদের একবছর পরে বিয়ে হবে।সরুন তো যেতেদিন আমাকে।একথা বলে আলো চলে যেতে চাইলো
লোকটা আলোর হাত চেপে ধরে এতো জোরে চেয়ারে একটা লাথি দিলো শব্দে আলো কানে হাত দিয়ে ফেলল,,
__আশ্চর্য! পাগল নাকি আপনি এভাবে ভাং*চুর করছেন কেনো? আমাকে এভাবে আটকে রেখে কি চাইছেন আপনি??কেউ চলে আসবে রুমে। ছাড়ুন,,, প্লিজ আমায় যেতে দিন। এভাবে কেউ আমাদের দেখলে সমস্যা টা আমার হবে,বদ*নামি টাও আমার হবে। ছাড়ুন।।।কেনো এমন করছেন?

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১১

লোকটা আলোকে তার সাথে মিশিয়ে ধরলো। এভাবে বে*খাপ্পা কারও স্পর্শ পাওয়ায় আলো ও কিছুটা কেপে উঠলো। আলোকে এভাবে দেখে অগ্যত ব্যক্তি মুচকি হেসে আলো গালে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে কানের কাছে ক্ষীণ স্বরে বলল,
___তোমাকে চাই আমার,ভালোবাসি তোমাকে।শীগ্রই তোমায় নিজের কাছে নিয়ে আসবো।মনে রেখো বউ,,,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৩