অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১১

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১১
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

__sorry, বিনা অনুমতিতে আপনার বারান্দায় এসেছি।আসলে রুমে ফুলের ঘ্রাণ পেয়েছিলাম তো তাই কোথা থেকে আসছে তা কৌতূহল বশত যাচাই করতে এসেছিলাম।আমার ভুল হয়ে গেছে।
এ কথা বলেই আমি তাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলাম। প্রতিদিনের মতোই বালিশ নিয়ে সোফায় এলাম ঘুমাতে। ঠিক তখনই উনি বললেন,

— তোমার জন্য নতুন ফোন এনেছি। দেখো পছন্দ হয়েছে কি না?
রাগ লাগলো আমার ভীষণ। ব্যাটা পছন্দের টা তো তুই নিজেই ভা*ঙছোস।এখন আবার আলগা পিরিত দেখাচ্ছোস। তাই বললাম
–লাগবে না। মা একটা দিয়েছে আমায়।দুইটা কি আমি মাথায় দিব নাকি!
–মায়ের টাতে র‍্যাম রোম কম। এটা রেড মি নোট টেন প্রো। মায়ের টা ফেরত দিয়ে দাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–পারবো না। আমি মায়ের টাই রাখবো। আপনার টা আপনি নিজেই রাখেন,, আপনার জিনিস লাগবেনা আমার।
একথা বলেই শুয়ে পরলাম। তার সাথে কথা বলার কোনো মুড নেই আমার।আসছে দরদ দেখাইতে, বদলোক কোথাকার।
আধার হতবিহ্বল হলো। সে ভেবেছিলো ঐশীকে স্যরি বলবে। কিন্তু মেয়েটা কোনো কথার সু্যোগ না দিয়েই ঘুম। কতশত মেয়ে তার উপর রোজ ফিদা থাকে।কত মেডিকেল স্টুডেন্ট বিভিন্ন বায়নায় তার কেবিনে আসে।আর এই মেয়ে তাকে ইগ্নোর করছে!!

আমি ঘুম থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি ই উঠলাম। কারণ আজ ভাসিটি যেতে হবে। উঠে দেখি উনি রুমে নেই। হয়তো নিচে গেছেন।আমি গোসল সেরে নিচে গিয়ে দেখি আলো আপু আর নীল ভাইয়া ব্রেকফাস্ট করছে সাথে আমার ফোনের খুনিও আছে। আমাকে দেখেই নীল ভাইয়া বলল,,
–আরে পিচ্ছি ভাবী রেডি দেখছি। আসেন একসাথে ব্রেকফাস্ট করুন।
–ঐশী,তাড়াতাড়ি করো। আমাদের ক্লাস কিন্তু ৯টায়। অলরেডি সাড়ে সাতটা বাজে। এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারবো কি না সন্দেহ আছে।আর যদি জ্যাম এ পড়ি তাহলে প্রথম ঘন্টা মিস যাবে।আলো আপু বলল।
আপুর তাড়া দেখে মা বললেন,

–এতো দূরে ভতি হওয়ার দরকার কি ছিলো। আমাদের বাসার কাছাকাছি কোথাও একটা তে ভতি হলেই হতো। তোর জন্য এখন মেয়েটারো ঘোড়া দৌড় দিতে হবে।
—চিন্তা করো না মা,,আমার মতো তোমার ছেলে বউয়ের ও অভ্যাস হয়ে যাবে
উনি আমাকে আর আপুকে ভাসিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আপু নিজের ক্লাসে চলে গেলেন। আমি ক্লাসে গিয়ে দেখি অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে।আমাকে দরজায় দাড়াতে দেখে স্যার বলেন,
–এই ক্লাসের তুমি। ভিতরে এসো।হাজিরা দিয়ে যাও
আমি গিয়ে বললাম,

–আমার রোল ১৬৪৭
–তিন মাস ক্লাস শেষ আর তুমি আজকে প্রথম ক্লাসে এসেছো!ইনকোস পরীক্ষার নাম্বার আমি এই প্রেজেন্ট শিট থেকে দিবো।তুমি তো জিরো পাবা।
–আমি এই সপ্তাহে ভতি হয়েছি স্যার
–আচ্ছা যাও। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত ঠিক মতো করো।

আচ্ছা বলে আমি সীটে গিয়ে বসলাম। বাপরে বাপ আসতে না আসতেই বয়ান শুরু এদের।
—ঐ পেটুক টা তোমাকেও তার ভাষণ থেকে মুক্তি দিলো না।রোজ রোজ তার প্রত্যেক কে এসব ডায়ালগ দিতে হবেই।
আমি কথা বলা পাশের মেয়ে টার দিকে তাকালাম।দেখতে সুন্দর সে।
–এই শ্যাম সুন্দরী তুমি কি নতুন নাকি ভাসিটি তে।আগে কোন কলেজ এ পড়তা? নাম কি তোমার?
–ঐশী,আমি ইন্টার পরীক্ষা চট্টগ্রাম সরকারি গালস কলেজ থেকে দিয়েছি।

–আমি বেলা,,আর ও হচ্ছে ডিম,,মিম নামের মেয়েটি চোখ গরম করে তাকাতেই বেলা বলল,,,ডিম না মিম।আজ থেকে তুমি ও আমাদের দলের এর নতুন সদস্য হয়ে যাও।হবে ফ্রেন্ড।
আমি হেসেই সম্মতি দিলাম। মেয়েটা আসলেই মিশুক। মিম বললো
–আমার মতো এই মাসুমরেও তুই শয়তান বানাইছোস আর এখন এই নিরীহ মেয়েটারে তোর মতো বানানোর জন্য ফ্রেন্ড বানাইছোস!!শুনো ঐশী ওর থেকে দূরে থেকো। ও হচ্ছে শয়*তান কোম্পানির ম্যানেজার।
–আন্ডা চুপ থাক। তোর হিং*সা হচ্ছে! আমি ওরে আমাদের ফ্রেন্ড হিসেবে এড করে ক্রেডিট পাচ্ছি! বে*য়াদ্দপ তুই নিজেই তো শয়তান এর হাড্ডি! আমি তোর থেকে শিখছি যে।নাহলে আমার মতো মানুষ পুরো সৌরজগতে আর একটাও নাই।

–থাকবে কেমনে! শয়তান তো পৃথিবী তে একটাই।
–ঐ তোমরা থামো স্যার তাকাই আছে আমাদের দিকে। আমি তাদেরকে বলতেই স্যার আমাদের তিন জন বলে,
–এই তোমরা তিন জন দাড়াও। বলো তো আমি এখন কোন টপিক পড়াচ্ছি?

আমরা তিন জনই আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে আছি।সবাই হাসছে।আমাদের মধ্যে কেঊ উত্তর না দিতে পারায় স্যার আমাদের তিন জন কেই দাড় করিয়ে রেখেছে। বুঝলাম এই ফ্রেন্ডশিপ আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় নি।আহারে কপাল আমার প্রথম ক্লাসেই দাড়াই দাড়াই লেকচার শুনতেছি।ঐ দুইডা এখনো ঝ*গড়া করতেছে।একটু পর এক দপ্তরি এসে বলে গেছে আমাদের বাকি ক্লাস গুলো আর হবে না।আমরা এই ঘন্টা পুরোটা দাড়িয়ে ছিলাম।কথায় কথায় জানতে পারলাম ওদের বাসা আর আমার শশুর বাড়ি প্রায় একই জায়গায় শুধু লাইন ভিন্ন।

ক্লাস শেষেই আমি আপুর কাছে গেলাম। আপুর আরো ক্লাস বাকি আছে তাই আমি আপুকে ওদের কথা বললাম।আপু ওদের দেখেই চিনে ফেলেছে। তাই আমাকে বাসায় ওদের সাথেই যেতে দিয়েছে।
আমরা তিন জন তাই অটোতে আর উঠলাম না। সি এন জি নিয়ে নিলাম।সিএনজি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর সামনে থামায় আমি অবাক হলাম।আমি বেলাকে জিজ্ঞেস করলে ও বলে ওর বোন মেডিকেল স্টুডেন্ট। একসাথেই যাবে।
সিএনজি থেকে নেমে দাড়ালাম।৫মিনিটের মধ্যেই বেলার আপু দিবা চলে এসেছে।এসেই বলল,

–দেরি হওয়ার সরি।স্যার এর সাইন নিতে দেরি হয়ে গেছে।
–তোমার ক্রাশকে দেখার জন্য তুমি ইচ্ছে করেই দেরি করেছো। হুদাই সাইন এর দোহাই দিও না।ছোট বেলায় চু*রি করে একটু বেশিই গুড়ো দুধ খাইছিলাম। তাই আন্দাজ করার ক্ষমতা প্রখর বুঝলা আপুই?
দিবা আপু বেলার মাথায় গাট্টি মেরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
–বেলু দেখছিস না এখানে বাচ্চা মেয়ে আছে। উল্টো পালটা বকছিস কেনো? এই পিচ্চি কে রে?পিচ্চি তোমার চোখ গুলো তো অনেক সুন্দর। তো তুমি কোন ক্লাসে পড়?

আমি আপুটার দিকে মুখ কালো করে তাকিয়ে আছি। কিছু বলবো তার আগেই বেলা বলল,,
–আরে ও আমাদের নিউ ফ্রেন্ড। আজকে প্রথম ক্লাস করছিলো।
–কি!! আল্লাহ আমি ভাবলাম স্কুলে পড়ে।এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
–সরি বোন।কিছু মনে করো না।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১০

–ইটস ওকে আপু,, আমার এসব এ অভ্যেস আছে
একথা বলেই আমি সামনে এগিয়ে সিএনজির কাছে যাবো তার আগেই কারো সাথে আমার ধা*ক্কা লাগলো। ধা*ক্কায় আমি সহ হাতের নতুন বই গুলোও সব নিচে পড়ল।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১২