অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১০

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১০
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

—তুমি ঐশীর ফোন কেনো ভে*ঙেছো,ধ্রুব??
–যে ফোন কাজের বেলায় অফ থাকে সেটা থাকা আর না থাকা সমান বাবা,তাই ভে*ঙেছি।
আমি তার দিকে তাকালাম, কি সাবলীল তার উত্তর। মনে কোনো অনুতাপ নেই খচ্চর ব্যাটার।মনে হচ্ছে তিনি অনেক মহৎকর্ম করেছেন। তাকে এই জন্য এখানে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।বলি কি তোকে তখন ঝাটা পে*টা করা উচিত ছিলো আমার।নেহাৎ আমি ভালো মানুষ ছিলাম। এরপর বাবা খেতে খেতেই বললেন,

–তুমি দিন দিন অনেক বেশি বদ*মেজাজি হচ্ছো, ধ্রুব। ঐশী বাড়ির নতুন মেম্বার তা তুমি ভুলে গেছো কেনো!ও ভুল করেছে মানলাম তাই বলে তোমার থেকে এই ব্যবহার আমি আশা করি নি নিজের রাগ কন্ট্রোল করা শেখো।সেকেন্ড টাইম এই ভুল যেনো তোমার না হয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–আচ্ছা বাবা। একথা বলে সে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন।
আমি আবার নিজের খাবারে মনযোগ দিলাম। বাবা টেবিল ছাড়ার পর আমার কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বললেন,
–মা ছেলেটা আমার খারাপ না। মনের দিক থেকে সে ভীষণ ভালো। কিন্তু ওর রাগটা একটু বেশি। তুমি কিছু মনে করো না।
–আচ্ছা বাবা।

রুমে এসে দেখি ভাইয়া নেই। ওয়াশরুমের দিকে গিয়ে দেখি সেখানেও নেই। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম,, পুরো রুম জুড়ে হাসনাহেনা ফুলের গন্ধ।
এই কয়দিন তো দেখেছিলাম রুমের টি টেবিলে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ফুলদানিতে রাখা থাকতো। তার ঘ্রাণ পুরো রুম সুবাসিত হয়ে থাকতো। কিন্তু আজকে তো ভাইয়া টেবিল এ লাথি মারায় সেটি ভে*ঙে গেছে।তাহলে কি ঘ্রাণটা বেলকনি থেকে আসছে। বারান্দা কথা মাথায় আসতেই মনে পড়লো আমার এখন পর্যন্ত এই বারান্দাটা ঠিক মতো দেখা হয়নি।সেদিন তো দরজা পর্যন্ত গিয়ে ভাইয়া কে কফি দিয়েছিলাম। কিন্তু বারান্দাটা সব সময় অফ থাকে কেনো? আমার আবার সব বিষয়ে ভীষণ কৌতূহল। তাই নিজের কৌতূহল মেটাতেই প্রবেশ করলাম বারান্দায়..

আলো তার রুমে গিয়ে দেখে নীল তার বিছানায় শুয়ে ফোন এ কথা বলেই যাচ্ছে।এটা দেখে আলোর মেজাজ বিগড়ে গেল। আলো আর নীল প্রায় একই বয়সী কিন্তু ক্লাসের দিক থেকে নীল বড়।নীল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বষের ছাত্র।
–ওই তুই আমার রুমে কেন?জিএফ এর সাথে পিরিতের আলাপ করার জন্য আর কোনো জায়গা পাস নাই? আমার রুম টা তোগে আজাইরা আলাপ এর কারখানা?
–আসতাগফিরুল্লাহ!ছি আলো!! কীসব নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথাবার্তা বলতেছোস এগুলা?আমার মতো এতো মাসুম পোলা রে তুই এগুলো কি শিক্ষাচ্ছোস!আল্লাহ! আমি খা*রাপ হই যাইতাছি এই মাইয়ার এইসব কথা শুইনা,বলেই নীল কানে হাত চেপে ধরলো।

–এ্যাহ!আসছে আমার মাসুম খবিশ। দেখ ভাই,তোর এইসব ড্রামা আমার একদম ভাল্লাগছে না।বাহির হ তুই আমার রুম থেকে।
–দেখ আমি তোর একদিন এর হলেও বড় হই। সম্মান দিতে শিখ।তোর পোলাপাইন কি তোর থেকে এইসব বেয়াদবি শিখবে?
—আমার পোলাপাইন আবার কোথা থেকে আমদানি হইছে?আজব।ধুর বেডি তুই বাইর হ।আলো চোখ মুখ কুচকে বললো
–ওই আমি বেডি!! তুই কি উউল্টাপাল্টা কিছু সেবন করছোস! আর আজ থেকে চার পাচ বছর পর তো কোলে ছয় সাত হালি বাচ্চাকাচ্চা থাকবে। আমি তাদের কথা বলছিলাম আর কি

-আজকে তুই খত*ম, নীল ক্ষেত। এই কথা বলে আলো তেড়ে আসতেই নীল এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেছে।
আলো ঘুমাতে যাবে এমন সময় তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। সে দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে কল টা এসেছে। তাই সে রিসিভ করে নি।কিন্তু সেই নাম্বার থেকে অনবরত কল এসেই চলেছে। বিরক্তি নিয়েই কলটা রিসিভ করলো সে।

– আসসালামু আলাইকুম……… হ্যালো……!হ্যালো….!
ওপাস থেকে কোনো শব্দ এলো না তাই আলো কলটি কেটে দিলো। কিন্তু পুনরায় কলটি বেজে উঠল। এবার সে বিরক্তির শীর্ষ পযার্য়ে। তাই সে কল রিসিভ করেই বলল,,
— এই তুই কে রে?কথাও বলোস না আবার কল দিচ্ছিস তো দিচ্ছিস।ম্যানারলেস মানুষের মতো রাত-বিরেতে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করতেছোস।নাম্বার টা কি তোর শশুড়ের সম্পত্তি নাকি?

–মামিমনি,,, মামিমনি।মামা মামা আর আমি লাইচ,,,
আর শুনতে পারে নি আলো তার আগেই কলটা কেটেছে অপর পাশের ব্যক্তি। আলো আবার দু বার কল দিলো কিন্তু রিসিভ করে নি কেঊ।আলো ভাবছে বাচ্চা টা কে হবে? তাকে মামি বা কেনো ডাকলো! এরমধ্যেই তার নাম্বারে একটা এসএমএস আসলো
–নাম্বার টা আমার বউয়ের সম্পত্তি,,,,, বুঝেছো মিস আলো।মাথায় এতো চাপ না নিয়ে ঘুমাও।
মেসেজ টা পড়ে আলোর মাথায় হাত। সে ভাবছে এ আবার কোন পাগলের পাল্লায় পড়েছে সে।পরবর্তীতে সে লিখলো,
–কে?
কোনো রিপ্লাই এলো না। তাই সে আর ভেবে ঘুমাবার ট্রাই করলো।

আঁধার রুমে এসে ঐশী কে খুজলো কিন্তু পেলো না। ওয়াশরুম চেক করলো তাও নেই। বারান্দার দরজা দেখলো খোলা তাই সে বারান্দায় অগ্রসর হলো।
আঁধার বারান্দায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। তার সামনে বারান্দার রেলিং ধারে দাঁড়িয়ে আছে এক শ্যামলা বর্ণের মেয়ে,দেখতে সেই মায়াময়ী কন্যা কে মনে হচ্ছে উনিশ শতকের গল্প থেকে আসা মাধবীলতা ,

আংশিক বিশ শতকের কুচি ভাজে আঁচলে কাঁধে বয়ে নেওয়া কন্যা,শুধু পড়নে একখানা শাড়ির কমতি,,সেই মানবীকে ঘিরে আছে রাজ্যের ভালো লাগা,প্রকৃতি যেন তাকে সাজিয়ে দিয়েছে,, কেশবতী কন্যার দিঘলকালো লম্বা ছাড়া চুল বাতাসে উড়ছে।সে তো তার মাঝে এক অনন্যা। যেন সে মায়া রাজ্যের রাণী।তবে কি আঁধার সেই মায়া রাজ্যে তার মায়ার ভীড় এ হারাতে যাচ্ছে!না চাইতেও জড়িয়ে যাচ্ছে তার মায়ায়।কেন এই মায়াকন্যার মাঝে সে ভীষণ ভালোলাগা অনুভব করছে!আঁধারের মনে হচ্ছে এই বারান্দাটায় এই মায়াদেবীর জন্যই পারফেক্ট। অন্য কাউকে এখানে মানা বে না।
কিন্তু আঁধার তো তার একতরফা অনুভূতি স্বর্ণলতার পছন্দ অনুযায়ী বারান্দা সাজিয়েছিলো।

আমি তখন কৌতূহল বশত বারান্দায় ঢুকলেও ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট হই বারান্দার সাজসজ্জায়।পুরো বারান্দা যেন ফুলের সমাহার। অনেক বড় বারান্দা টা। একপাশ জুড়ে হরেকরকম ফুল গাছ। তিনচার রকমের গোলাপ গাছ। করনার টায় বেলীফুলের গাছ তবে গাছে এখন ফুল নেই। তার পাশের সাড়িতে একটা কামিনীকাঞ্চন গাছে ভতি রয়েছে ফুল।তবে হাসনাহেনা ফুলের সুবাসের জন্য তার ঘ্রাণ অপ্রকাশিত রয়েছে।

নিচের কাঠগোলাপ গাছটার একটা অংশ বারান্দায় এসে পড়েছে তাই সে স্থানে প্রায় দশবারোটা কাঠগোলাপ পড়ে রয়েছে। বারান্দায় বসার জন্য করা সিস্টেম টা নজরকাড়া।হাসনাহেনা গাছটার সামনে বরাবর একটা দোলনা। তার পাশেই দেয়ালের সাথে এটাচড করা বুকশেলফ। বুকশেলফ টার উপর বরাবর একটা দেয়াল বক্স রয়েছে তালাবদ্ধ।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৯

আমি অনেকক্ষন রেলিং এর ধারে দাড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু পড়ে থাকা কাঠগোলাপ গুলো আমায় ভীষণ ভাবে টানছে তাই দেরি না করেই তুলে নিয়ে কানে গুজলাম একটি। আরো কয়েকটি তুলবো এমন সময় চোখ গেলো দাড়িয়ে থাকা মানুষ টির দিকে..

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১১